#অদ্ভুত_সেই_বাড়িটি_?[ ৫ ]?
#লেখনীতে_মুসাফফা_মারহামা_মিম।
____________________
আর ক্ষানিকটা পরেই ঊষারবির আগমন ঘটবে পৃথ্বীতে। এরই মধ্যে ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছে।সাদিয়া ঘুম থেকে সকলকে জাগিয়ে তুললো। এক এক করে সবাই উঠে পড়লো।সাদিয়া জায়নামাজ বিছিয়ে বসে আছে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সকলকে দেখছে।কাল সবাইকে সে বলেছিলো ওই বাড়িটিতে যেতে চায়। পরবর্তীতে কারো মধ্যেই তেমন কোনো পতিক্রিয়া দেখতে পায়নি।তাই আজ সাদিয়া একাই সেখানে যাবে।সবাই নামাজ পড়ে আবারো ঘুমাবে।ঈষৎ নিদ্রা শেষে সকলে প্রাতঃকালের নাস্তা করবে। এরপর তারা পাহাড় দেখতে বের হবে।গতকালই তারা পাহাড় দেখতে যেত।আকস্মিক সাদিয়া অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে তাদের আর যাওয়া হয়নি।এবং আলাদা করে গ্রামের কারো কাছ থেকে রাস্তা সম্পর্কেও জানা হয়নি।সেদিনের স্বপ্নে সাদিয়া প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলো।যার ফলস্বরুপ হালকা জ্বরও এসেছে । সাদিয়া নামাজ শেষ করে জায়নামাজ টি ব্যাগে ভরে রাখলো। সানজানা তার পাশেই ছিলো।সে তার ললাটে হাত দিয়ে বললো।কিরে তোর জ্বরের কি অবস্থা।সাদিয়া কিছুই বললোনা।সে সজোরে সানজানার হাতটি তার ললাট থেকে সরিয়ে দিলো।এর কারন অবশ্য সেই স্বপ্ন।সাদিয়া সেদিনের পর থেকেই সানজানাকে উপেক্ষা করে চলে।সানজানা যদিও সাদিয়ার পরিবর্তনকে তার অসুস্থতার কারনেই ধরে নিয়েছে।কিন্তু এখনের ব্যাপারটিতে সে খুব আহত হলো।সানজানা শুকনো দৃষ্টিতে সাদিয়ার দিকে তাকালো।ফিজা পাশে বসে পুরো বিষয়টি অবলোকন করছে।সানজানা ফিজার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো।সাদিয়া আমার সাথে এমন কেন করে বলতে পারিস?
“ও অসুস্থ তাই এমন করে।তুই এসব ধরে বসে থাকিসনাতো?
” আমি কখনো তোদের খারাপ চাইনি। তাই তোরা যখন আমার সাথে এমন করিস আমার খুব খারাপ লাগে।
“আরে বাদ দে তো এসব।সাদিয়াকেতো চিনিসই ও খুব ভালো একটা মেয়ে।হয়তো অসুস্থ তাই মন মেজাজ ভালো না।নে শুয়ে পড়।
সানজানা বিষন্ন মন নিয়ে শুয়ে পড়লো। সাদিয়া খাটের এক পাশে শুয়ে আছে।সে হয়তো সকলের ঘুমানোর অপেক্ষা করছে। জানালা দিয়ে সূর্য উদয়ের সূক্ষ্ম আলোকরশ্মি কক্ষে প্রবেশ করছে।সাদিয়া উঠে গিয়ে জানালা লাগিয়ে দিলো।সে চায়না তপ( সূর্য) থেকে প্রভাতের স্নিগ্ধ আলো তাদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাক।সাদিয়া জানালা লাগিয়ে দিয়ে খাটের পাশে এসে দণ্ডায়মান হলো। এবং সবার কর্ণের সম্মুখে দুই আঙুল দিয়ে তুড়ি মেরে শব্দ উৎপাদন করতে থাকলো।সে হয়তো এরমাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করছে সবাই ঘুমিয়েছে কিনা।যে ঘুমাবেনা সে নিশ্চিত কাথার ভিতর থেকে মুখ বের করে সাদিয়ার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাবে।এবং বিরক্ত গলায় বলবে।কিরে তোর কি হয়েছে?
যদিও বা সাদিয়া চায়না তারা জাগ্রত থাকুক।সাদিয়া একেক করে সবার সাথেই এমন করলো।কারো পক্ষ থেকেই সে কোনো প্রকার সাড়া পেলোনা।বুঝাই যাচ্ছে সকলে নিদ্রা দেশে পাড়ি দিয়েছে।সাদিয়া টিপটিপ করে হেটে দ্বারের সম্মুখে এসে দাড়ালো।খুবই সাবধানতার সহিত সে দরজা খুললো। দরজা খুলেই সে পুনরায় তার বান্ধবীদের দিকে দৃষ্টি দিলো।না সকলেই ঘুমাচ্ছে।কাওকে নড়াচড়া করতে দেখা যাচ্ছেনা।সাদিয়া কক্ষ থেকে বের হয়ে দ্রুত পদব্রজে বাড়ির শেষ কক্ষটির সম্মুখে চলে আসলো।এক হাত দিয়ে দরজাটির এক পাশ শক্ত করে ধরে সেথায় প্রবেশ করলো।এবং জানালা দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসলো।অরণ্যের সমস্ত তরুপালা গুলো যেন সাদিয়ার দিকে চেয়ে আছে।সবাই সবুজ রঙে সুসজ্জিত। তাদের দেখে একদমই মনে হচ্ছেনা তারা অনেক অনেক ভয়াবহ ধ্বংসলীলার স্বাক্ষী।সাদিয়া ধীর পায়ে উত্তরের বাড়ির পিছন দিকটাতে এগিয়ে যাচ্ছে।স্বপ্নের কথা মনে হতে তার গা ছমছম করে উঠছে। কিন্তু সাদমানের কথা ভাবতেই সে আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচ্ছে। সে এখন ঘন গাছপালার মধ্যে অবস্থান করছে। ঘন কারন, তাদের দেখে মনে হচ্ছে অনেকজন মিলে তাদের একটি পরিবার,অদুরে অদুরে মিলে তারা গগনের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন মৃত্যু ছাড়া তারা কখনোই আলাদা হবেনা।এবং কখনো হয়নি।এর অবশ্য শক্ত প্রমান হলো।মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতা।সাদিয়া সেথায় কদম ফেলতেই তাদের মর্মর
ধ্বনি কানে ভেসে আসছে।সাদিয়া পুরোনো ভবনের পিছন দিক টাতে এসে দন্ডায়মান হলো।সে মাথা উঁচু করে ভবনটিকে ভালো মত অবলোকন করলো।কংক্রিটের এই বিল্ডিংটি যে পুরোনো আমলের দেখেই বুঝা যাচ্ছে। বিল্ডিংয়ের দেয়ালে বড় বড় ফাটল ধরেছে। বৃষ্টির জলে সিক্ত হয়ে দেয়ালে শেওলা পড়ে গেছে।বটবৃক্ষের এক ঝাঁক ঝুরি ভবনটিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।সাদিয়া প্রথমত পিছন দিকের সব গুলো কক্ষ হেঁটে হেঁটে দেখলো।তাও অবশ্য বাহির থেকে, ভিতরের যাওয়ার সদর দরজা সামনের দিকে অবস্থিত।পিছনের দিকে কোনো দরজা নেই।পুরো বাড়িটিতে শুধু একটিই দরজা এটা ভেবে সাদিয়া খুব অবাক হলো।বাড়িটিকে দেখে অবশ্য এটাই মনে হচ্ছে।হতে পারে গুপ্ত দরজা রয়েছে।এ সমস্ত বাড়ি গুলোতে গুপ্ত দরজা থাকে ঢের।সাদিয়া অত কিছুতে মাথা ঘামালোনা।সে পিছন দিকের সমস্ত কক্ষ দেখে ফেলেছে।কিন্তু কোথাও সে সাদমান কে দেখতে পায়নি।শুধু একটি কক্ষে কিশোর বয়সের একটি ছেলেকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছে।ছেলেটির পা শিকল দিয়ে বাধা। সাদিয়া এক পলক ছেলেটিকে দেখেই আর সেখানে উঁকি দেয়নি।সে এবার বিল্ডিংয়ের পাশের কক্ষ গুলোতে উঁকি দিচ্ছে।এ কাজ টি করা হয়ে গেলেই সে ফিরে যাবে।কারন বাড়ির সম্মুখে যাওয়ার সাহস হচ্ছেনা তার।সানজানা একবার বলছিলো।একটি মেয়ে বাড়ির সম্মুখে চলে গিয়েছিলো এরপর মেয়েটিকে বাড়িটি খেয়ে ফেলেছে।যদিও পুরো বিষয়টি তার কাছে বানোয়াট ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি।তবুও সে সেখানে যাওয়ার সাহস করতে পারছেনা।তার ধারণা বাড়িটির সামনে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রয়েছে।অথবা কোনো কড়াকড়ি গার্ডের ব্যবস্থা আছে। সাদিয়া পাশের সব গুলো কক্ষ ভালো মত দেখলো কোথাও সাদমান কে দেখা গেলোনা।একটি কক্ষের জানালার সম্মুখে নাম না জানা কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে।গাছগুলো জানালাকে ঘিরে রেখেছে। শুধু গাছের উপস্থিতি থাকলেও সেখানে যাওয়া যেত। কিন্তু সেথায় ঝোপঝাড়ে পূর্ণ হরেক প্রজাতির ঘাস মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।বাহির থেকে দৃষ্টি দিলে মনে হয় সেথায় জোঁকেরা রাজত্ব চালাচ্ছে।এমন একটি স্থানের সাথের কক্ষ খালি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।সাদিয়া সে স্থানটির সামনে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলো।মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবনার জগতে মনোনিবেশ করলো।সে গভীর ভাবে দুইটা বিষয় চিন্তা করলো।
১,যদি সে সেখানে যায় এবং সাদমান কে না দেখতে পায়।আর জোঁকেরা তাকে কামড়ে দেয়। তাহলে তার সমস্ত পরিশ্রম টাই বৃথা।
২,সাদমানের বিষয়টি হয়তো শুধুই তার স্বপ্ন।কারন সে এখনো তাকে ভুলতে পারেনি।
সাদিয়া এই দুইটি বিষয় চিন্তা করেই নিজেকে ক্ষান্ত করলো।এবং সিদ্ধান্ত নিলো ফিরে আসবে।সে ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব হলো।তৎক্ষনাৎ তার অন্তরিন্দ্রিয় তাকে অনুরোধ করলো।তোমার একবার সেই কক্ষটি দেখা উচিত। সাদিয়া বুঝে উঠতে পারছেনা সে কি করবে। তাই সে দোদুল্যমান না থেকে যেকোনো একটি সিদ্ধান্তের উপর স্থীর হলো। সে কক্ষটি দেখবে ।সাদিয়া মনের কথা শুনলো।আস্তে আস্তে জোপঝাড়ের ভিতর ঢুকে পড়লো।নাম না জানা কয়েকটি পোকা তার হাতে, মুখে, শরীরের উপর এসে পড়লো।সাদিয়া দু হাত দিয়ে লতাপাতা গুলোকে সরিয়ে সরিয়ে জানালার কাছে এসে উপস্থিত হলো। কিন্তু জানালাটি লাগানো। সে চাপা স্বরে নিজেকে বকা দিলো।কি দরকার ছিলো এখানে আসার যতসব।তবে সে হাল ছেড়ে দিলো না।জানালার নিচের অংশে একটু কাচ ভাঙা আছে।সাদিয়া সেখান দিয়ে কক্ষের ভিতর উঁকি দিলো।সাথে সাথেই তার বুকে কম্পন শুরু হলো।তার ইচ্ছে করছে জোরগলায় চিৎকার করতে। কিন্তু সে নিজেকে সংবরণ করলো। এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব তা বিশ্বাস করার জন্য নিজের গাত্রে চিমটি কাটলো। না এটা বাস্তব। এখন আর সাদিয়া স্বপ্ন দেখছেনা।সাদিয়া জানালার ফাঁক দিয়েই সাদমান কে ডাক দিলো।সাদমান একটি খাটের উপর শুয়ে আছে।তার প্বার্শে একটি হুইল চেয়ার রাখা।কক্ষটিতে তেমন আলো নেই। তবে সূর্যের আলোয় কক্ষটি ঈষৎ আলোকিত হয়েছে।সাদিয়া অনেকটা সময় সাদমানকে ক্ষীন আওয়াজে ডাকলো।কিন্তু সাদমানের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেলোনা।তাই সে জানালাতে মৃদু আঘাত করতেই জানালা খুলে গেলো।জানালাটিতে কোনো গ্রিলের ব্যবস্থা নেই।পুরোটাই ফাঁকা।সাদিয়া দেয়াল টপকিয়ে জানালা দিয়ে কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করলো।সাদমানের ঘুম ভেঙে গেলো।সে সাদিয়াকে দেখেই আতকে উঠলো । কিছুক্ষন সাদিয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বললো।আমি যাকে ধারণা করছি তুমি কি সে?
“সাদিয়া বললো।জী।
” সাদমান হাত দিয়ে দরজার দিকে ইশারা করলো।এবং সেটাকে লাগাতে বললো।সাদিয়া দ্রুত দরজা লাগিয়ে দিলো।সাদিয়া সাদমানকে ঠান্ডা দৃষ্টিতে দেখলো।ছেলেটা আগের মত নেই।শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।চোখ ভিতরে ঢুকে গিয়েছে।গালের হাড়, গলার হাড় পরিস্ফুট হয়েছে।পা দেখে মনে হচ্ছে তার পায়ের হাড় ভেঙে দিয়েছে মানুষরূপী জানোয়ার গুলো।সাদিয়া সাদমানের পাশে থাকা হুইল চেয়ারটিতে এসে বসলো।সাদমান নরম গলায় বললো।
“এখানে কিভাবে এসেছো।তোমাকে কেউ দেখতে পায়নি?এখানে যারা একবার আসে তাদের কেউই বেঁচে ফিরতে পারেনা।
“আমি জানি।আমি এখানে একটি গুপ্ত স্থান দিয়ে প্রবেশ করেছি তাই কেউ দেখতে পায়নি।আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন বিষয়টি খুব ভালো লাগলো।
” তুমি পর্দা করার পূর্ব পর্যন্ত তোমাকে দেখেছিলাম।এখনো তোমাকে ভুলিনি আমি।আচ্ছা এসব বাদ দাও এটা বলো।তুমি কি এখানে আমার জন্যই এসেছো?
“জী।
” আমার মা কেমন আছে সাদিয়া?
“ভালো নেই।আংকেলও ভালো নেই।আপনার পাঠকরাও আপনার মৃত্যুর খবর শুনে প্রচন্ড ভেঙে পড়েছে।
সাদমানের চোখ ভিজে উঠেছে।অশ্রু কোনা চোখের কার্নিশ বেয়ে বালিশে গড়িয়ে পড়ছে।সাদিয়ার ইচ্ছে হচ্ছে নিজ হাতে সাদমানের অশ্রু মুছে দিবে।কিন্তু সে সেটি করলোনা। সাদমানকে নিরব থাকতে দেখে সাদিয়া নিরবতা ভেঙে বললো।
আপনাকে আর কাঁদতে হবেনা।আমি আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো।
সাদমান সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি দিয়ে আবারো চুপ হয়ে গেলো।
সাদিয়া আবারো বললো।সত্যিই আমি আপনাকে এখান থেকে নিতে এসেছি।
” বড্ড দেরি করে ফেলেছো সাদিয়া এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে তারা অন্য কোথাও নিয়ে যাবে।এবং সেখানে গিয়ে আমাকে মেরে ফেলে আমার শরীরের সমস্ত অরগান বের করে ফেলবে। বেঁচে কি হবে বলো।আমি এখন প্রচুর ক্লান্ত। বাঁচার আগ্রহ আমি হারিয়ে ফেলেছি। তুমি ফিরে যাও।আমি চাইনা আমার জন্য তোমার কোনো ক্ষতি হোক।
“তারা এতদিন কেন আপনাকে মারেনি।এখনই কেন মারতে চায়?
” এতদিন মারেনি কারন তাদের হাতে আরো লোক ছিলো।তাই আমি কিছুদিন সুযোগ পেয়েছি।
“খুব জানতে ইচ্ছে করছে আপনাকে তারা পেলো কিভাবে?
” সাদমান এবারো সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে এক প্রকার শুকনো হাসি দিলো। এবং নিরব থাকলো।
“সাদিয়া বললো।জানবো সবই জানবো আগে আপনাকে উদ্ধার করবো এরপর।
” সাদিয়া ছেলে মানুষি করোনা আমি হাঁটতে পারিনা দেখতেই পাচ্ছো।এরকম মানুষকে কি সাহায্য করা যায়? যদি একবার তাদের কাছে ধরা পড়ো তবে তোমার পুরো পরিবারকে তারা মেরে ফেলবে।এর থেকে বরং তুমি চলে যাও।আমি তোমাকে সব সময় মনে রাখবো। মরে গিয়েও মনে রাখবো কথা দিচ্ছি।
“আমি পারবো কারন এখানে আমার ৩ জন বন্ধু রয়েছে। আমার ভাই এসেছে।তাদের সাহায্যেই আপনাকে আমি এখান বের করে নিয়ে যাবো।
” তোমরা কি এখানে ঘুরতে এসেছো?
“হ্যাঁ আমার এক বান্ধবী আছে সানজানা নামে ওর সাথে এসেছি।যদিও এখন ওর সাথে আমাদের সম্পর্ক তেমন ভালো না।কারন এই বাড়িটির সাথে ওদের যোগসূত্র রয়েছে।আমরা এটা জানতে পেরেছি।
সাদমান সানজানার নাম শুনতেই উঠে বসলো। সাদিয়াকে বালিশের দিকে ইশারা করে বললো।বালিশটিকে উঁচু করে দিতে। সে বালিশে হেলান দিতে চায়।সাদিয়া তাই করলো। সাদমান বালিশে হেলান দিতে দিতে বললো।
সানজানাকে ভুল বুঝোনা।সে নিতান্তই নিরুপায় এবং অসহায়। খুব ভালো একটা মেয়ে। শুধু মাত্র সেই একমাত্র ব্যক্তি যে আমাদের নিয়ে চিন্তা করে।কখনো সুযোগ পেলে আমাদের মধ্য থেকে অনেককে পালাতে সাহায্য করে। আগের দিন রাতেও সে একজন কে পালাতে সাহায্য করেছে।
” আপনার ধারণা ভুল সানজানা আগের দিন রাতে একজন কে কবর দিয়েছে।আমি নিজ চোখে দেখেছি।
“তুমি শুধু কবর খনন করতে দেখেছো কাওকে সেথায় কবর দিতে কি দেখেছো?
” না।
“তাহলে শোনো আমি তোমাকে বলছি। এখানে আমি ছাড়াও অনেকে রয়েছে। সকলকে দুজন মানুষ দেখাশোনা করে যেন কেউ কখনো পালাতে না পারে।একজনের নাম মজনু মিঞা আরেকজনের নাম রফিক।তারা সব সময় এখানেই থাকে। শুধু রফিক সাহেব এক মাস পর পর তার বাড়িতে যান।এর কারন হলো তিনি সদ্য বিবাহিত। আর মজনু মিঞা বৃদ্ধ মানুষ তাই তিনি এখান থেকে কখনো বের হননা।যখন রফিক সাহেব বাড়িতে যান তখনই সানজানা এখানে আসে।আর সকলের মধ্যে যার বয়স কম তাকে সে পালাতে সাহায্য করে।এবং আফজাল সাহেবকে নিয়ে পিছনের দিক টাতে কবর খনন করে।আর রফিক আসলে তাকে জানায় একজন মারা গিয়েছিলো তাকে কবর দিয়ে দিয়েছি।যদিও আমাদের অরগান গুলো তারা নিতে চায়।কিন্তু রফিক মারা যাওয়ার খবরটি লিডারকে জানায়না।এর পিছনেও বড় একটা কারন রয়েছে। সেটা হলো।একবার নাকি এখানের একজন মারা গিয়েছিলো।এরপর রফিকের ছোট ভাইকে জানোয়ার গুলো মেরে ফেলেছে।তাদের অভিযোগ হচ্ছে রফিক তার কাজের ব্যপারে সচেতন না।আবারো যদি একই কাজ করে তাই রফিক বিষয় গুলো লুকিয়ে যায়।আর এই সুযোগ নিয়েই সানজানা কম বয়সের মানুষগুলোকে মুক্ত করে দেয়।যারা এখান থেকে একবার বের হবে তারা যতদিন বেঁচে থাকবে তাদের আসল পরিচয় সবসময় লুকিয়ে রাখতে হবে।কারন তারা তাদের পুনরায় খুজে পেলে তাদের পরিবারকে,সানজানাকে, এবং আফজাল সাহেবের পরিবার কে মেরে ফেলবে।তাই এখান থেকে যারা বের হয় তারা বেঁচে থাকার জন্য একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়।এইগুলোই হচ্ছে বাড়িটির ভিতরের রহস্য। কিন্তু বাহির থেকে সবাই
এই বাড়িকে ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবেই চিনে।আমি তোমাকে এখনো যেতে কেন বলছিনা জানো? কারন রফিক এখানে নাই সে বাড়ি গিয়েছে।আর মজনু মিঞা তেমন সচেতন না।সানজানা যখন রাতে এখানে আসে তখন মজনু মিঞা ঘুমিয়ে থাকেন। চোখেও তেমন দেখেননা। আমরা যেন রফিকের অবর্তমানে পালাতে না পারি তাই আমাদেরকে ইঞ্জেকশন দিয়ে পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার সব কিছু বুঝতে পেরেছো?
“হু।
” কান্না করোনা। এটাই আমাদের জীবন।
“আমার সানজানার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।
” স্বাভাবিক।
“সানজানা যাদের লুকাতে সাহায্য করে।তাদের সংখ্যা গুলো লিডার কি জানেনা?কারন যারা এখানে প্রবেশ করে তাদের একটি লিস্টতো তাদের কাছেও থাকবে তাইনা? তাদের কি কখনো এ ব্যাপারে সন্দেহ হয়না?
” এটা হয়তো সানজানাই বলতে পারবে।যেহেতু তার পরিবারও এসবের সাথে জড়িত আছে।
তবে সানজানা যেহেতু তোমার বন্ধু তাই আমার মন বলছে আল্লাহ আমাকে আরেকটি সুযোগ দিবেন।তুমি সানজানার সাথে কথা বলে দেখতে পারো।
“আমি অবশ্যই কথা বলবো।আপনাকে আমি এখান থেকে নিয়ে যাবো।
” এখন চলে যাও সাদিয়া।মজনু মিঞা জাগ্রত হয়ে যেতে পারেন।
“হু যাচ্ছি।আপনাকে দেখে খুব খারাপ লাগছে।কতটা দুর্বল হয়ে গিয়েছেন।
” কষ্ট পেওনা।আমি এসবের জন্য একবারও আল্লাহর কাছে অভিযোগ করিনি।তিনি চাইলে আবারো সব ঠিক হয়ে যাবে।ইন শা আল্লাহ।
“ইন শা আল্লাহ।
তাদের কথপোকথনের ইতি টেনে সাদিয়া কক্ষের দরজা খুলে দিলো।এবং জানালার সম্মুখে এসে দাড়ালো। সাদমান সেদিকেই তাকিয়ে আছে।তার চোখ অশ্রুতে টলমল করছে।সাদিয়ার উপস্থিতি যেন তাকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে পুনরায় আশ্বাস দিয়ে গেলো।সাদিয়া জানালা থেকে নেমে সাদমানের দিকে তাকালো।সাদমান চাপা গলায় বললো।বাঁচতে চাই সাদিয়া।সাদিয়া ঈষৎ মাথা নাড়ালো ।তার দু-চোখও নীর দ্বারা পরিপূর্ণ। সে ঝোপঝাড় থেকে বের হবে। এহেন সময় সেখানে কারো পদধ্বনির আওয়াজ শুনা গেলো।সাদিয়া সেখানেই চুপ করে বসে পড়লো।মজনু মিঞা এসেছেন।নিচটা ঘুরে ঘুরে দেখছেন।ঝোপঝাড়ে থাকা গাছ পালা গুলোকে নড়াচড়া করতে দেখে সেদিকেই এগুচ্ছেন।সাদিয়া দু হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে আছে।তার পায়ে ক্ষুদ্র এক বিছা উঠেছে।সে সাদিয়াকে স্থীর দেখে কামড় বসিয়ে দিলো।সাদিয়া ব্যাথায় করুণ অবস্থা।সে শক্ত করে মুখ চেপে ধরলো।বিচ্ছুটাকে সরাতেও পারছেনা।কারন মজনু মিঞা আর সাদিয়ার দুরুত্ব মাত্র এক হাতের।তিনি হাত দিয়ে গাছগুলো সরালেই সাদিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে যাবেন।তিনি লতাপাতা গুলোকে সরাতেই যাবেন এহেন সময়ে কেউ পিছন থেকে মজনু মিঞার নাম ধরে ডাক দিলো।মজনু মিঞা সেদিকে মাথা ঘুরিয়ে দাড়ালেন।
আসছে।