#অনান
#পর্ব-২
“তোমাদের দাদাজান বংশে একজনই ছেলে ছিলো। তার বাবারা চার ভাই ছিলেন। কারোরই ছেলে ছিলো না। মেয়ে ছিলাম আমরা মেলাজন। সহায় সম্পত্তি কম ছিলো না। মেয়ে বেশি হওয়ার কারনে তোমাদের পরদাদা ভীত ছিলেন সম্পত্তি কম হওয়ার। কারন জামাইরা সবাই পরের ছেলে। কেউ ভালো কেউ মন্দ। যদিও দেখে শুনে ভালো ঘর বর খুঁজলেও জানোই তো হাতের পাঁচ আঙ্গুল কখনো সমান হয় না। কেউ কেউ যথেষ্ট অবস্থাপন্ন হওয়ার পরেও আমাদের পারিবারিক সম্পদের লোভ ছিলো তাদের। পরদাদা কি চিন্তা করেছিলেন জানি না। বংশ রক্ষা নিয়ে তার নানারকম অদ্ভুত ভাবনা ছিলো। তিনি চেয়েছিলেন বংশে অন্তত দু’একজন থাকুক যারা একেবারেই আপন রক্ত। তাই অনেক ভেবেই বোধহয় তিনি বংশ ও সম্পদ রক্ষার জন্য তোমার দাদাজানের সাথে আমার বিয়ে দিলেন। তোমার দাদাজান আর আমি দুজনাই যথাক্রমে তার বড় ও মেঝোছেলের পুত্র কন্যা ছিলাম। আমাদের বাকী বোনদের পারিবারিক সম্পদ থেকে খুব সামান্য অংশ করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় আর কড়াকড়ি আইন করে দেন যেন কেউ এই সম্পদ নিয়ে কোনো টানাহেঁচড়া না করে। তবে হ্যা, মেয়েরা আজীবন তাদের ইচ্ছামতো যতদিন খুশি বাবার বাড়িতে থাকতে খেতে পারবে। এতে কোনো বাঁধা নেই। আমাদের কোনো কোনো বোন দুলাভাই এই আইনে রুষ্ট হলেও দাদার উপর দিয়ে কথা বলার সাহস কারোরই ছিলো না। মৃত্যুর আগে দাদাজান তোমার দাদাজানকে আর আমাকে ডেকে বিশেষ ভাবে বলে গেছেন, আমরা যেন তার এই নিয়মটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। এবং মেয়েদের দায়িত্ব পালনে তোমার দাদাজান যেন কখনো অবহেলা না করেন সে বিষয়ে তার কাছ থেকে কথা আদায় করে নেন। এরপর তোমার দাদাজান এই পারিবারিক সম্পদ বাড়িয়েছেন বহুগুণ। কোনো কারনে তোমার বাবার বিয়েটা আত্মীয়ের মধ্যে দিতে পারেননি তবে তার সে স্বাধ মোর্শেদের বাবাকে দিয়ে পূরণ করিয়েছিলেন। তোমার আর মোর্শেদের বিয়ের সিদ্ধান্তও তোমার বাবা বা চাচা কারোরই নয়। সেটা সম্পুর্ন তোমাদের দাদাজানের সিদ্ধান্ত। পরবর্তী বংশগতি ঠিক থাকবে কিনা সেসব নিয়ে তিনি খুব ভীত ছিলেন তাই হয়তো তোমাদের দাদাজান এই সিদ্ধান্ত নেয়। এটা তার শেষ আদেশ ছিলো আমার প্রতি। আমি কেবল তার ইচ্ছা পূরন করেছি। তোমরা এযুগের ছেলেমেয়ে, এসব নিয়মকানুন হয়তো তোমাদের কাছে কিছু মনে হবে না। কিন্তু তবুও আমি নিরুপায় বুবু, তুমি আমার উপর রাগ কইরো না। এই বুড়ি মানুষটা শেষ বয়সে এসে তোমাদের উপর নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা চাপায় দিচ্ছে বলে রাগ হইয়ো না গো বুবু।”
নীরা দাদীর কোলে শুয়ে আছে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো দুফোঁটা। আদৌও দাদীর কথাগুলো তার কানে গেছে কিনা বোঝা গেলো না। নীরা আলগোছে জল মুছে নিলো। জুম্মার নামাজের পর একেবারে অনাড়ম্বর আয়োজনে বিয়ে হলো নীরা আর মোর্শেদের, তারপর থেকে নীরা নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে কেঁদেই যাচ্ছে। সারাদিন না খেয়েই আছে নীরা। বিকেলে না পারতে ফুলবানু নাতি নাতনি দু’জনকেই নিজের কাছে ডেকে পাঠিয়েছেন। নীরার নীরবতায় ফুলবানু নীরার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা তুললো। কেঁদে কেটে নীরার চোখ লাল, ফুলে টসটসে হয়ে আছে। নীরা দাদীজানের দিকে তাকিয়ে বললো-
“রাগ করিনাই দাদীজান। মাথা ব্যাথা করছে খুব।”
ফুলবানু হাসলেন একটুখানি। নাতনির চেহারা দেখে মনে মনে দুঃখ পেলেও তা বুঝতে দিলেন না। উল্টো মোর্শেদ কে হাসতে দেখে ধমক দিলেন-
“এই হতচ্ছাড়া, তুই এতো হাসছিস কেন রে? বউয়ের কান্না দেখে মনে হয় তোর খুশি লাগতেছে?”
মোর্শেদ ফুলবানুর কথায় একটুও বিরক্ত না হয়ে দাদীর গালে চট করে একটা চুমু দিলো-
“আমি ওকে বিয়ে করতে পারছি এই খুশিতে হাসতেছি আর ওর আমাকে বিয়ে করা লাগছে এই দুঃখে কাঁদতেছে। তুমি কি কিছুই বোঝো না, ফুলবানু? এই বান্দরনী ঢাকায় পড়ালেখা করে। কতো সুন্দর পোলাপান দেখে, তার কি আর আমাকে পচ্ছন্দ হয়? আমি না হয় ভালো মানুষ তোমার নাতনি ছাড়া কিছু বুঝি না। সে কি এতো ভালো?”
নীরা অগ্নিদৃষ্টিতে মোর্শেদকে দেখলো। মনে মনে দু’চারটা গালি দিল। নেহাত দাদী আছে বলে বেঁচে গেলো মোর্শেদ। সেটা বুঝেই যেন নীরাকে চোখ মারলো।
“ধুর ছেড়া, বাজে কথা বলিস না। আমার নীরার মতো আর কেউ না। পরিবারের সবার জন্য তার কতো মায়া ভালোবাসা সেইটা সবাই জানে।”
“হ্যা, খালি আমার জন্যই কোনো ভালোবাসা নাই?”
মোর্শেদের কন্ঠে হতাশা।
“বুবু, যা করছি তাতে এখন আমার উপর তোমার রাগ হইতে পারে কিন্তু দেইখো একদিন আমার জন্য তুমি হাত তুলে দোয়া করবা। বলবা, বুড়ি সারাজীবনে একটা উচিত কাজ করছে। আর সত্যি কথা বললে বলতে হয়, তোমাদের দুইজনকেই আমার যোগ্য মানুষ মনেহয়। তোমাদের বাপ চাচাদের পর এই এতোবড় সংসার আর সম্পদ সামলানো সবার দারা সম্ভব হবে না। কেউ কেউ বিরোধিতা করে সম্পদ বিনষ্ট করার চেষ্টা করতে পারে। তিনপুরুষের ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য তাই আমি একটু স্বার্থপর হইলাম। বেশি কষ্ট পাইলে এই বুড়িটাকে মাফ দিয়ো বুবু।”
নীরা উঠে বসে ফুলবানুর হাত চেপে ধরলো-
“ছি ছি দাদীজান, কি করো এইসব? মাফ চায়ে আমাকে অপরাধী বানায়ো না। তুমি দোয়া কইরো আমার জন্য।”
“এই ছেড়া, এইদিকে আয়।”
ফুলবানু নীরার হাত ধরে রেখেই মোর্শেদকে ডাকে। তার হাতে নীরার হাত দিয়ে বলে-
“আজ থেকে তোরা দুইজন এক মানুষ। সবসময় একজন আরেকজনকে দেখে রাখবি। একজন আরেকজনকে বোঝার চেষ্টা করবি। জীবনের সফর অনেক লম্বা, যত ঝড়ঝাপটা আসুক না কেন কেউ কোনোদিন একজন আরেকজনকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববি না। আর আমার বুবুরে কোনোদিন কষ্ট দিবি না, বুঝলি? সে না চাইতেও আমার কথার মান রেখে তোকে বিয়ে করছে। আমার মান রক্ষার দায়িত্ব তাই তোর। বুবুর ভালো মন্দ সব তোর দায়িত্বে দিলাম।”
মোর্শেদ এই প্রথমবারের মতো নীরার হাত ধরার সুযোগ পেয়ে যেন লুফে নিলো। নীরার হাতটি আকরে ধরে আলতো করে চুমু দিলো দাদীর চোখের আড়ালে। নীরা ঝট করে হাত সরিয়ে নিলো। অসভ্য একটা, সুযোগ পেয়েই সদ্ব্যবহার করে নিলো। নীরার রাগ দেখে মোর্শেদ তার স্বভাবমতো বিটকেল হাসি দিলো।
“বুবু, এইবার যাও তৈয়ার হও শশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য।”
“শশুরবাড়ি আবার কোথায় পেলে গো ফুলবানু? রানী সাহেবা কষ্ট করে দোতলা থেকে চারতলায় যাবেন। দূরে বিয়ে হলে বুঝতো মজা, কাছে কাছে তাই কিছু টের পায় না তোমার আদুরী, বুঝলে বুড়ি?”
“ওর টের না পাওয়ার জন্যই তোর সাথে বিয়া দিছি বুঝছোস? ওরে যদি বেশি জ্বালাস না তবে তোর কান ঠিক এইভাবে টেনে ছিড়ে নেবো। মনে রাখিস।”
ফুলবানু মোর্শেদের কান টেনে ধরলো।
“উফফ, বুড়ি ছাড়ো বলছি খুব ব্যাথা পাচ্ছি।”
ফুলবানু কান ছাড়তেই মোর্শেদ দু-হাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালো-
“যেমন দাদি তেমনি তার নাতনি, একেবারে ডাকুরানী।”
নীরার একটু মজা লাগলো না এসব দেখে। ওর বরং চিন্তা হচ্ছে আজ রাতে মোর্শেদ কি করবে। এই ছেলেকে একটুও বিশ্বাস করা যায় না। তবে উল্টো পাল্টা কিছু করলে নীরা নিজেকে শেষ করে দেবে ঠিক করেছে।
★★★
চারতলায় আসার সময় নীরা মুখ কাঠ করে রাখলো। না একটু হাসলো না কাঁদলো। বিরস মুখে বাবা মা চাচা চাচীদের সালাম করলো। চাচাতো ফুফাতো ভাই বোনগুলো দুষ্টমির মেজাজে থাকলেও নীরার মুখের ভাব দেখে কেউ আর কিছু বলার সাহস পেলো না। মজা করতে না পেরে ওরা মনে মনে গালি দিয়ে নীরাকে শাপশাপান্ত করলেও মুখে কিছু বলতে পারলো না। পারিবারিক রীতিনীতি শেষ হতেই মোর্শেদকে ভাইবোনেরা ঘিরে ধরলো।
“ভাইয়া, এ কেমন বিয়ে হলো তোমাদের কোনো মজা নাই।”
সেজো চাচার ছেলে আয়াজ বলে। ছোট চাচার দুই জমজ মৌমি আর সৌমি তাল মেলালো-
“হ্যা, ভাইয়া। নীরা আপুর বিয়েতে কতো মজা করবো ভেবেছিলাম অথচ কিছুই হলো না।”
বাকী সবাই হইহই করে উঠলো। তারা পার্টি চায় আলাদাভাবে কোনো চাইনিজে। মোর্শেদ হাত দেখায়-
“ঠিক আছে, ঢাকায় যাওয়ার আগে তোদের সবাইকে চাইনিজে খাওয়াবো, চলবে? আর তাছাড়া বিয়ের একটা অনুষ্ঠান তো হবেই পরে। এতো অস্থির হচ্ছিস কেন তোরা?”
“সে কবে হবে তার ঠিক আছে কোনো? আপুর যা মেজাজ, দেখে গেলো কোনো অনুষ্ঠান করতে দেবে না বড় আব্বুকে।”
মোর্শেদের ছোট বোন মিতুল বললো।
“আচ্ছা, ঠিক আছে চাইনিজ খাওয়াবো বললাম তো?”
“ভাইয়া, নীরা আপুকে এসব ব্যাপারে কিছু জানাবে না কিন্তু। আপুর কোনো ঠিক নেই, শেষমেষ দেখা যাবে আমাদের খাওয়াই বাতিল।”
রাতুল ভয়ে ভয়ে বললো। কাল রাতে বোনের হাতের মারটা বেশ জোরেই পরেছিলো। মনে পড়তে গালে হাত ঘষলো রাতুল।
“আচ্ছা, যা বলবো না। এখন তোরা শুতে যা তো, অনেক রাত হয়েছে। ”
ভাইবোনদের বিদায় দিয়ে মোর্শেদ নিজের রুমে এলো। এই প্রথম একটু বুক কাঁপছে তার। এই রুমে কেবল নীরা আর সে থাকবে। না থাকবে কোনো আড়াল না লুকোনোর জায়গা। মেয়ের যা মেজাজ! এতোক্ষণ সবাই ছিলো তাই সামলে নেওয়া গেছে এখন ওকে দেখে কি বলবে কে জানে? দুরুদুরু বুকে ঘরে ঢুকে সাবধানে দরজা লক করে মোর্শেদ। রুমে নীরা নেই। মোর্শেদ বারান্দা দেখে এলো সেখানেও নেই। দাঁড়িয়ে ভাবছিলো কোথায় গেলো তখনই নীরা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো। নীরাকে দেখে পাক্কা দু’মিনিট থম ধরে থাকলো মোর্শেদ। হালকা গোলাপি রঙের শাড়ীতে সদ্য গোসল সেরে আসা নীরা যেন স্নিগ্ধ নদী। চুলগুলো তোয়ালে পেঁচানো তখনো। মুখটা মলিন হলেও ভেজা ভেজা চোখদুটো মায়ার সাগর। ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে আছে। পাতলা ঠোঁট জোড়া শীতে কাঁপছে মৃদু। মোর্শেদ আলমিরা থেকে শাল বের করে নীরার গায়ে জড়িয়ে দিলো।
“সবার রাগ নিজের উপর দেখানোর কি দরকার নীরা? এই শীতের রাতে কেউ গোসল করে?”
নীরা কোনো জবাব দিলো না। আয়নার সামনে বসে তোয়ালে খুলে মাথা মুছতে লাগলো। মোর্শেদের খুব ইচ্ছে করছে নিজ হাতে নীরা চুলগুলো মুছে দিতে। যদি নীরার ভেজা চুল দেখে তার শীত লাগছে কিছুটা। মোর্শেদ বিছানায় আধশোয়া হয়ে নীরাকে দেখতে লাগলো। হঠাৎ আয়নায় চোখ পরতেই নীরা ভ্রু কুঁচকে মোর্শেদের দিকে তাকালো-
“কি দেখছিস?”
“তোকে।”
“কেন? আগে দেখিসনি?”
“সে তো ন্যাংটো কাল থেকে দেখছি।”
ফিক করে হেসে দিলো মোর্শেদ। নীরার মেজাজে যেন ঘি পড়লো। তোয়ালে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো-
“সবসময় এতো বাজে কথা বলিস কেন? আমার চেয়ে মোটে ছয় মাসের বড় তুই। কোত্থেকে আমায় ন্যাংটো কালে দেখলি তুই?”
“ছয় মাসের বড় তবে তো দেখেইছি।”
“কচু দেখেছিস। তুই জানিস, সেম এইজে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে মানসিক ভাবে দু থেকে তিন বছরের বড় হয়?”
“ওহহহ, তাই নাকি? তাহলে তো তুই সবকিছু আমার চাইতে বেশি জানিস। তবে বল আজ তুই আমায় সালাম করলি না কেন?”
“মানে, তোকে কেন সালাম করবো?”
নীরা বিরক্তিকর কন্ঠে বললো।
“করবি না কেন? তুই জানিস না বাসর রাতে স্বামীকে সালাম করতে হয়?”
“এহহহ, শখ কতো? আমার বয়েই গেছে তোকে সালাম করতে।”
“বয়েই তো গেছে। আমি তোর স্বামী তোর গুরুজন, সালাম তো তোকে করতেই হবে। নে এবার সালাম কর।”
মোর্শেদ উঠে এসে নীরার সামনে দাঁড়ালো।
“পারবো না। তোকে স্বামী বলে মানলে তো?”
বলেই নীরা পা বাড়ালো বারান্দার উদ্দেশ্যে। হাতের তোয়ালে টা মেলে দেবে ভাবলো। কিন্তু তার আগেই মাথা ঘুরে গেলো মনেহলো। ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করলো নীরা। কোমরে শক্ত হাতের বন্ধন আর পেটের কাছে অন্য আরেকটা শরীরের অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ খুললো নীরা। দেখলো মোর্শেদ তাকে দু’হাতের বেষ্টনীতে জড়িয়ে ধরে আছে। গভীর চোখে একনজরে তাকে দেখছে। নীরার প্রচন্ড রাগ হলো, সেই সাথে মনে পড়ে গেলো দাদীর রুমে মোর্শেদের কান্ড। এবার রাগের চাইতে অসস্তি আর ভয় ঘিরে ধরলো নীরাকে। মোর্শেদ এখন কি করবে? নীরা কম্পিত কণ্ঠে বললো-
“কি করছিস? ছাড়, ছাড় আমাকে?”
“কেন ছাড়বো? তুই আমাকে বর না মানলেও আমি তো তোকে বউ হিসেবে মানি। তুই তো মানসিক ভাবে আমার চাইতে বড়। তাহলে বল তো আজকের রাতে স্বামী স্ত্রী কি করে?”
মোর্শেদের কন্ঠে মাদকতা যেন নেশা করেছে এমন। নীরাকে আরেকটু কাছে টেনে একহাতে ওর ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে দিলো। নীরা ভয়ে নাকি আবেগে কেঁপে উঠলো বোঝা গেলো না। সে তার মুখটা যতদূর সম্ভব দূরে রেখে দু’হাতে মোর্শেদকে পেছনে ঠেলার চেষ্টা করলো-
“দেখ, মোর্শেদ ভালো হবে না বলে দিলাম। ছেড়ে দে নইলে কিন্তু…”
“কি করবি?”
নীরার মুখের কথা কেড়ে নেয় মোর্শেদ।
“বড় আব্বুকে বলবি? নাকি দাদীকে?”
ফিসফিস করলো মোর্শেদ সাথে মুখের বাঁকা হাসি। ওর মুখ নীরার মুখের একদম কাছে। নীরার মুখে ওর শ্বাস পড়ছে। কি হতে যাচ্ছে বুঝেই নীরা অসহায় বোধ করে। ব্যার্থতার গ্লানিতে চোখ দুটো জলে ভরে ওঠে। জল গড়িয়ে পড়ার আগেই মোর্শেদ আচমকা ওকে ছেড়ে দিলো-
“কি ভেবেছিস? জোর করে তোর সাথে ইয়ে করবো? কোনোদিনও না। এই মোর্শেদ এখনো এতোটাও লোফার হয়ে যাইনি। চাইলে অনেক মেয়েকে বেডে নিতে পারতাম আর তুই তো আমার বিয়ে করা বউ। তোর সাথে সেদিনই কিছু হবে যেদিন তুই চাইবি। বুঝলি?”
কথাগুলো বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো মোর্শেদ। বড্ড অপমানিত লাগছে। নীরা, ছোটর থেকেই তাকে চেনে তবুও ওকে চিনলো না, বিশ্বাস করলো না? ওকে নিয়ে নীরার চোখে ভয়? নিজেকে কেমন হীন মনেহয় মোর্শেদের। ছাদে এসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো অনেকটা সময় তাতে যদি মনটা শান্ত হয়।
আর এদিকে মোর্শেদ বেড়িয়ে যাওয়া মাত্রই নীরা কান্নায় ভেঙে পড়লো। এইপ্রথম তার নিজেকে কেবলই একটা মেয়ে মনেহলো মানুষ না।
চলবে—–
Farhana_Yesmin।