অনুভবী_হিয়া,পর্ব:০১,০২

0
1947

#অনুভবী_হিয়া,পর্ব:০১,০২
#মাইশাতুল_মিহির
ক্যাটাগরি : সামাজিক, থ্রিলার, রোমান্টিক
১.

রাত ২:৪০ মিনিট! অন্ধকারে ব্যস্ত ঢাকা শহর। চারদিকে পিনপিন নিরবতা। কোলাহল মুক্ত রাস্তায় অল্পসংখ্যক গাড়ি চলছে আপন গতিতে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ানো কুকুর ডাকছে করুণ সুরে। আপন মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা যেনো কাতর করে তুলছে। রাতের পোকারা ডাকছে নিজেদের মতো করে। চাঁদ টাও কেমন মুখ গুমরো করে আছে। যেনো আজই সবকিছু উদাস। একাকীত্বে ভুগছে সব। একাকীত্বের জীবন বড় কঠিন। সারা দিন নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রেখে, মুখে মিথ্যে হাসি টেনে সবার সাথে খুশি থাকলেও দিন শেষে তার প্রিয়জনকে মনে করে কাঁদে। হয়তো এতো রাতে কেউ কেউ তার প্রেয়সী কে জড়িয়ে ধরে ঘুমে বিভোর। আর কেউ হয়তো তারই মতো প্রেয়সী কে ভেবে জেগে আছে।

থাইগ্লাসে এক হাত দিয়ে আরেক হাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে আপন মনে ভাবছে শুভ। হারিয়ে গেলো তার প্রেয়সী। কত খুঁজেছে কিন্তু পাই নি। অভিমানে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে তার সাথে প্রায় ২ বছর। কত চেষ্টা করেছে যোগাযোগ করতে। তার ঘুমু ঘুমু কন্ঠ শুনতে প্রেমিক পুরুষটির মন ব্যাকুল হয়ে আছে। মুগ্ধকর হাসিভরা সেই মুখটি দেখার জন্য তৃষ্ণাতুর কাকের মতো হাহাকার করছে মন। পুড়ছে তার হৃদয় প্রেয়সী কে না দেখার যন্ত্রনায়। কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। একাকিত্বের সঙ্গি হিসেবে সায় দিয়েছে নিকোটিন। কানাডা থেকে বাংলাদেশে ব্যাক করেছে আজ দুই দিন হলো। কিন্তু বাহিরে যাওয়া হয়ে উঠে নি এখনো। তার ঘুমপরীকে যদি দেখতেই না পারে তাহলে বাহিরে কি লাভ কি? অবুঝ মন শুধু বার বার বলছে,

‘ফিরে আসো প্লিজ। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসবো তোমায়। এই আমি টাকে তোমাতে বিলিয়ে দিবো। এই অগুছালো জীবনটা গুছিয়ে দিয়ে দাও। তোমাকে আমার আয়নার প্রতিবিম্বে আটকে রাখবো। যেখানে থাকবে শুধু তোমার আমার অস্তিত্ব। শুধু তোমাতে আমার বাস। ভালোবাসি!’

‘তোমাকে দরকার, ভিষন ভাবে দরকার।’

রাফিদ রায়হান শুভ। বাবা আয়াজ রায়হান, মা মিথিলা চৌধুরী। ছোট বোন সুহানা রায়হান, সে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। এই তিন জনকে নিয়েই তার পরিবার।
________________

অন্ধকার কক্ষে মুখে মাক্স পরে মাথায় হুডি দিয়ে বেধড় পি:টাচ্ছে একজনকে। লোকটির আর্তনাদ যেনো চার দেওয়ালেই বন্ধি।

‘ছেড়ে দে ভাই ম:রে যাবে।’ আফসোস স্বরে বলে পাশে দাঁড়ানো মাক্স পরিহিত একজন। চোখে মুখে হিংস্রতা বজায় রেখে মেজেতে শুয়ে থাকা অর্ধমৃত লোকটিকে যুবকটি বলে, ‘সাবধান করেছিলাম তোকে। সাহস কি করে হয় আমাকে মা:রতে আসার? এবার নিশ্চিন্তে উপরে যা!’ বলেই লোহার মোটা রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে যুবক। মুহূর্তেই শেষ নিশ্বাস ফেলে উপরে চলে যায় লোকটি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘এই নর্দমার কীট টাকে গু:ম করে দিয়ে আয়।’

বোতল থাকা পানি দিয়ে হাতের রক্ত ধুয়ে গাড়িতে গিয়ে সীটে হেলান দিয়ে বসে যুবক। পাশে ড্রাইভিং সীটে দ্বিতীয় জন বসে বলে, ‘একেবারে মা:রার কি দরকার ছিলো? থ্রেট দেওয়াও যেতো।’

‘বেঁচে থাকলে এমনিতেও মরতো, আমি না হয় সাপ্তাহ খানেক আগে টিকেট কেটে দিলাম।’ বাকা হেসে বলে যুবক।
________________

সকাল ৮:০০ টা! ব্রেকফাস্ট করার জন্য টেবিলে বসে আছে আয়াজ আর সুহা। মিথিলা ডাইনিং টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে। তাকে সাহায্য করছে রহিমা বেগম। বয়স ৩৫ এর ঊর্ধে। নিঃসন্তান, স্বামী মারা যাবার পর থাকার জায়গা হয় নি বাবার বাড়ি। তিনি এই বাড়িতে থাকেন প্রায় দশ বছর যাবত।

মিথিলা টেবিলে অমলেটের প্লেট রেখেই সুহার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

‘সুহা, যা তো শুভকে ডেকে নিয়ে আয়।’

‘উফফ, ভাইয়া কে ডাকার জন্য কি আমাকেই পাও তুমি? আমি পারবো না ডাকতে। কালকে ডাক দেওয়াই যে জুরে রামধমক দিয়েছিলো তোমার ছেলে। বাবা গো আমি নাই। তুমি ডাকো গিয়ে।’

‘কারোর ডাকার দরকার নেই।’

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো শুভ। এসেই সুহার মাথায় হাল্কা চাপড় দিয়ে বললো, ‘রামধমক কি এমনি এমনি দিয়েছিলাম আমি। বেয়াদবি করেছিস বলেই ধমকটা তোর প্রাপ্য ছিলো ইডিয়ট।’

‘কি বেয়াদবি করেছি আমি ভাইয়া? তোমাকে প্রথমে ভালো করে ডেকেছিলাম। কিন্তু তুমি যে কানাডা গিয়ে বয়রা হয়ে গেছো সেটা কি জানতাম? তাইতো শেষে একটু জুড়ে ডাক দিয়েছিলাম।’ বলেই দাঁত কেলালো সুহা।

‘আহ! থামবি তোরা। খাবার খাওয়ার সময়ও ঝগড়া করিস। সুহা ছেলেটাকে শান্তিতে খেতে দে বেশি কথা বলিস না।’ বিরক্ত নিয়ে বললো মিথিলা।

‘যা বাবা, আমি কখন তোমার ছেলেকে বিরক্ত করলাম?’

‘সুহা, চুপচাপ খাও। খাবার খাওয়ার সময় অযথা কথা আমার পছন্দ না।’ খেতে খেতে বললো আয়াজ। সবাই চুপচাপ নিজেদের খাবার খাওয়াই মনোযোগ দিলো। কিছু সময় বাদে মুখ খুললেন আয়াজ,

‘শুভ, অফিসে জয়েন দিচ্ছো কবে থেকে?’

‘বাংলাদেশে এসেছি আজ তিন দিন হলো। ভাবছি কাল থেকেই জয়েন দিবো। তুমি আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিও।’ স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো শুভ।

‘ঠিক আছে। তাহলে আমি আজই অফিসের সবাইকে জানিয়ে দিবো। আর হ্যা, অফিসে একটা মেয়ে আছে খুব ভদ্র। আমার পিএ হিসেবে ৭ মাস হয়েছে জয়েন করেছে। তাকে তোমার এসিস্টেন্ট হিসেবে রাখবো। সে তোমাকে সব বুঝিয়ে দিবে।’

‘মেয়ে কেনো আব্বু? আমি কোনো মেয়ে টলারেট করবো না।’ ভ্রুঁ কুঁচকে বিরক্ত নিয়ে বললো শুভ।

‘তুমি নিশ্চয় আমার থেকে বেশি বুঝো না শুভ। আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে। এর বেশি যেনো আর কথা না হয়।’

ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন মিথিলা, ‘সমস্যা কি শুভ? অফিসের কাজে তো ছেলে মেয়ে দুজনই করে। আর মেয়েটা অনেক ভদ্র, মিশুক। একদিন বাড়িতে এসেছিলো আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। মাশা’আল্লাহ রুপে যেমন গুনেও তেমন।’

‘হ্যা ভাইয়া আম্মু ঠিক বলেছে। আপুই টাকে আমার অনেক ভালো লাগেছে। একেবারে কিউটের ডিব্বা উফফ। এমন একটা ভাবি যদি আমার হতো ইসস।’ বেশ আহ্লাদ নিয়ে বললো সুহা।

‘সমস্যা কি তোমাদের? এমন ভাবে বলছো যে এসিস্টেন্ট না আমার জন্য দেখা কোনো পাত্রী। ডিজগাস্টিং।’ দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললো শুভ।

প্রতি উত্তরে কেউ কিছু না বলে মুচকি হাসলো সবাই। যা নজর এড়ায় নি শুভর। কেউ আর কথা না বাড়িয়ে খাবার শেষ করলো। ব্রেকফাস্ট শেষে রেডি হয়ে সুহা বেড়িয়ে গেলো কলেজের উদ্দেশ্যে। ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিলেন আয়াজ আর মিথিলা। বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আসে শুভ। পরনে হোয়াইট কালার টি-শার্টের উপর ব্লু কালারের শার্ট, শার্টের বোতাম খোলা, ব্ল্যাক জিন্স, হাতে কালো নরমাল ঘড়ি, চুল সিল্কি হওয়ায় কিছু চুল কপালে পরে আছে। শুভ কে দেখে মিথিলা জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথায় যাচ্ছিস বাবা?’

‘বাহিরে যাচ্ছি মা। আদিল, সামির, রাহুলের সাথে দেখা করার জন্য।’

‘কাল তোমার জন্য বড়-সড় একটা সারপ্রাইজ আছে শুভ হাহা’ বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বললো আয়াজ রায়হান। বাবার কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্নশোচক দৃষ্টিতে তাকালো শুভ। ছেলের রিয়েকশন দেখে জুরে হেসে দিলো আয়াজ।

‘সারপ্রাইজ টা কি যদি বলেই দেই তাহলে তো আর সারপ্রাইজ থাকবে না বলো। যাও তোমার ফ্রেন্ডরা বোধহয় অপেক্ষা করছে।’ বলেই মুচকি হাসলেন মিথিলা চৌধুরী।

শুভ প্রতি উত্তরে কিছু না হলে বের হয়ে গেলো। মনে মনে শ’খানেক বিরক্ত হলো বাবা মা’র উপর। দেশে আসার পর থেকে সবাই কেমন ব্যবহার করছে, সবাই তাকে দেখেই মুচকি হাসছে। নিজেকেই কেমন সার্কাস লাগছে তার। দেশে আসাই ভুল হয়েছে বোধহয় ধ্যাৎ। ভাবতে ভাবতে গ্যারেজে গিয়ে নিজের বাইক টা বের করলো শুভ। কত দিন পর এই বাইক টা চালাবে আজ। কত অনুভূতি জড়িয়ে আছে বাইক টার সাথে। এর মাধ্যমেই তো প্রেয়সী কে সে পেয়েছিল। তাই হয়তো বাইকটা এতো প্রিয় তার। এইতো পিছনের সিট টার মধ্যেই তার প্রেয়সী তাকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলো। ভেবেই মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিলো শুভ। উদ্দেশ্য চিরচেনা সেই কৃষ্ণতলায়।

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

২.

ভোরের পাখির কিচিরমিচির। শিশিরে ভিজে যাওয়া পাতা থেকে চুয়ে পানির ফোটা পরছে। গতকাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি হওয়ায় সকালের পরিবেশটা বেশ মনোরম লাগছে। এখনো রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে ভিজে আছে। ঘুম থেকে উঠেই আড়মোড় ভেঙে ফজরের নামাজ পড়ে গায়ে পাতলা শাল পেঁচিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো মিহির। সাধারনত ভোরে ঘুম থেকে উঠা তার নিত্যদিনের অভ্যেস। ভোরের আলো ফোটার মুহূর্তটা তাকে মুগ্ধ করে। মন ভালো করার এক মহা ঊষুধ মিহিরের কাছে। বারান্দায় থাকা ফুল গাছে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। যেনো তার হাতের ছুঁয়া পেয়েই সকাল শুরু হয় তাদের। বারান্দায় দীর্ঘ সময় পার করার পর রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে গেলো মিহির। উদ্দেশ্য চা বানাবে। এক কাপ চা না হলে এই শুভ্র সকাল টা কিভাবে শুরু করবে? অন্তত্য তার মতো চা’খোরের জন্য তো কখনোই সম্ভব না।

মাইশাতুল জামান মিহির। অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। মা রাশেদা বেগম। ভাই আয়াত হাসান মাহিন, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। মাহিন আর মিহির যমজ ভাইবোন। বাবা রাহিম হাসান গত হয়েছে দেড় বছর আগে। মা-ভাইকে নিয়েই তার সুখী পরিবার।
________________

সকালে নাস্তা বানাতে মা কে সাহায্য করে রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে নিলো মিহির। উদ্দেশ্য অফিসে যাবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাজল দিচ্ছে চোখে। পরনে পিংক কালারের জর্জেট জামা। সাথে সাদা ওড়না, সাদা জিন্স। পিংক কালারের হিজাব পড়া। সাজ বলতে মুখে রেগুলার ব্যবহার করা ক্রিম, চোখে হালকা কাজল, ঠোঁটে লিপজেল। ব্যাস বাহিরে যাওয়ার জন্য তৈরি মিহির।

রুম থেকে বেড়িয়ে টেবিলে বসে মা’য়ের উদ্দেশ্যে বললো,

‘মাহিন কোথায় আম্মু? সকাল থেকে দেখছি না যে।’

‘আমি কি জানি। ছেলেটা দিন দিন কেমন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। আমার কোনো কথা শুনে? সকাল সকাল দেখলাম ব্যাট দিয়ে বাহিরে যাচ্ছে ক্রিকেট খেলতে। এখনো পড়তে দেখলাম না মহাশয় কে। কুমিল্লা থেকে এসে উড়নচণ্ডি হয়েছে। বারণ করলাম তাও শুনলো না। আমার কথার দাম আছে নবাবজাদার।’ রেগে ফুঁশ করতে করতে বললো রাশেদা। মা’য়ের কথা শুনে হেসে ফেললো মিহির। পরোটা ছিঁড়ে মুখে দিয়ে মা’কে বললো,

‘আম্মু, তুমি এতো চিন্তা করো কেনো বলো তো। মাহিন কি এখনো ছোট? ও নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারে। ভাই খেলতে গেছে তো খেলতে দাও। পরিক্ষা এখনো অনেক দেড়ি। চিন্তা করো না তুমি।’

মেয়ের কথা শুনে আর কিছু বললো না রাশেদা বেগম। কিভাবে বুঝাবে মায়ের মন। ছেলে-মেয়ের জন্য তো চিন্তা হবেই।

‘আম্মু, আমার খাওয়া শেষ। আমি বের হচ্ছি।’ চেয়ার থেকে উঠার সময় বললো মিহির।

‘তোর অফিস তো ৯:০০ টায়। বাসা থেকে বের হোস সাড়ে ৮ টায়। আজ এতো তাড়াতাড়ি যাবি যে?’

‘আসলে আম্মু লাইব্রেরিতে যাবো কিছু কেনার আছে।’

‘আচ্ছা সাবধানে যা।’

মা’কে বিদায় দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ালো রিকশার জন্য। প্রথমে লাইব্রেরী তে যাবে তারপর অফিস। মিহিরের বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব প্রায় ২০-৩০ মিনিট। হাত ঘড়িতে সময় দেখে ডাক দিলো রিকশাচালক কে।

______________________

কোলাহলপূর্ণ শহর। অলিগলি তে মানুষের ভীড়। যে যার উদ্দেশ্যে নিজেদের গতিতে চলছে রাস্তায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুল গুলো আপন মনে ঝরে পরছে নিচে। বড় কৃষ্ণচূড়ার গাছটির নিচে কাঠের ব্যঞ্চে বসে কয়েকজন যুবক অপেক্ষা করছে তাদের প্রানপ্রিয় বন্ধুর জন্য। কারোর তর আর সইছে না কখন আসবে তাদের জানের জিগার। অবশেষে বিরক্ত নিয়ে বললো রাহুল,

‘কিরে শা:লা, আর কতক্ষন অপেক্ষা করতে হবে?

‘আরে আইবো তো একটু ওয়েট কর না ভাই।’ প্রতি উত্তরে বললো আদিল।

‘হু, হের লাইগা দেড় বছর ধইরা ওয়েট করতে করতে আমরা শহিদ হইয়া যাইতাছি দেখোছ না।’ বিরক্ত নিয়ে বললো সামির।

হঠাৎ বাইকের ব্রেক কষে নামলো শুভ। মাথা থেকে হেমলেট নামিয়ে এগিয়ে গিয়ে ব্যঞ্চে বসে বললো,

‘হেই গাইস, ওয়াট’স আপ?

প্রতি উত্তরে তিন জনই ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো শুভর দিকে। শুভ কিছুটা ইতস্ততভোধ করে বললো,

‘আরে ইয়ার, এমন ভাবে তাকাই আছোস যেনো ডাকাতি কইরা আসছি। একটু লেইট হইছে বেশি কিছু হয় নাই তো। এইভাবে তাকানোর কিছু নাই। অন্য দিকে তাকা।!

‘এই তোর একটু খানি লেইট? পাক্কা ১ ঘন্টা ১২ মিনিট পরে আসছেন আবার বলেন একটু?’ সামিরের কথা শেষ হতেই রাহুল বললো,

‘মামাহ্, তোমার বাড়ি থেইকা এইখানে এইতে ৪০ মিনিট লাগে। বাকি ৩২ মিনিট কই আছিলা তুমি? হাছা কইরা ক? আমি কাউরে কমু না।’ বলেই ভ্রুঁ নাঁচিয়ে দাঁত কেলালো রাহুল।

‘গাঞ্জা খাইতাম গেছিলাম। তুই খাইবি? দেই?’ স্বাভাবিক গলায় বললো শুভ।

শুভর স্বাভাবিক উত্তর ঠিক হজম হলো না রাহুলের। ভ্রুঁ কিঞ্চিত বাঁকা করে ব্যঞ্চে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো রাহুল। এতো দিন পর দেখা হওয়াই চার জনই কুষল বিনীময় করলো। কথার মাঝে চোখ ছোট ছোট করে শুভর দিকে তাকিয়ে সামির বললো,

‘কিরে ভাই, তুই দেখি দিন দিন ফর্শা হইতেছোস। সত্যি কইরা কো রুপের রহস্য কি। মাইয়া গো মতোন কি মাখোস মুখে? আমারেও ক ক্রিম মাইখা ফর্শা হইয়া মাইয়া পটাই’

‘চোখ সরা। তোর নজর ভালো না। আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেইখা তোর হিংসা হইতাছে বুঝছি। মাশা’আল্লাহ বল।’ ভাব নিয়ে বললো শুভ। আদিল শুভর সাথে পিঞ্চ মেরে সামিরকে বললো,

‘মামাহ, খালি রাতের বেলা ভূতের ছবি দেখা বন্ধ করে দাও তাহলেই সব ঠিক হইয়া যাইবো’ উচ্চস্বরে হাসে দিলো আদিল রাহুল শুভ। সামির রেগে আদিলকে বললো,

‘নিজের মতো সবাইকে ভাবিস নাকি। তাও তো ভালা, তুমি যে মিয়াহ তলে তলে টাংকি চালাও। গার্লফ্রেন্ড নিয়া যে রুম ডেটে ধরা খাইছিলা তার বেলা?’ লাস্ট কথা কিছুটা খোঁচা মেরে বললো সামির। সামিরের কথা শুনে চোখ বড় বড় আদিলের দিকে তাকালো শুভ। আদিল অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,

‘তোদের মতো হারামি থাকলে লাইফে আর কি লাগে ভাই।’

‘ভাই, তোরে আমি সৎ পুরুষ ভাবতাম। ছিঃ দূরে যা, দূরে যা, উপ্রে উপ্রে ভালো সেজে ভিতরে ভিতরে এইসব চালাও তাহলে। ইয়াক।’ ইচ্ছে করে নাকমুখ কুঁচকে আদিল কে পঁচিয়ে কথা টা বললো শুভ। সামির রাহুল হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি করার অবস্থা। শুভ কাহিনী কি জানতে চাইলে আদিল বললো,

‘ভাই আর বলিস না। মিতু কে মা দেখতে চাইছিল তাই বাসায় নিয়ে গেছিলাম। মা’য়ের সাথে দেখা করানোর পর ওরে আমার রুম দেখাচ্ছিলাম। তখনই এই সামির আর রাহুলের বাচ্ছার আগমন ঘটেছিলো। মহিলাদের মতো তিল থেকে তাল বানিয়ে আমার কাছ থেকে যে কতো বার টাকা মারছে তার হিসেব নাই।’ শেষের কথা গুলো দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললো আদিল। তখন হাসি থামিয়ে সিরিয়াল ভাবে শুভ বললো,

‘ভাইই, আমিও কিন্তু পাই। তখন ছিলাম না তাই মিস করলাম। এখন যেহেতু আছি তাই এখন সব সুদে আসলে পূরণ কর।’

‘তোরা সব হারামি সব। কষ্ট কইরা টাকা কামাই আমি, সব মারো তোমরা। বাহ জীবন বাহ!’ আরেক দফা হাসির রুল পরলো চার বন্ধুর মাঝে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে আদিলের পকেট খালি করতে তারা তিন জনই যতেষ্ট ছিলো। অসহায় ভাবে গালে হাত দিয়ে সামনে বসে থাকা রাক্ষসদের দেখছিলো আদিল। এইভাবেই খুনসুটির আড্ডায় দিন পার করলো তারা।

_____________________

বিকালে বাসায় ফিরে লম্বা শাওয়াল নিয়ে ঘুম দিলো মিহির। খুব টায়ার্ড আজ। হবে না কেনো প্রথমে লাইব্রেরি থেকে অফিস, তার পর অফিস থেকে ভার্সিটি গিয়েছিলো নোট আনার জন্য। খাবার খাএয়ার জন্য রাশেদা বেগম অনেক বার ডাকাডাকি করেছিলো কিন্তু মিহির উঠেনি। এত্ত ঘুম মিহিরের যে মা’য়ের ডাক কান পর্যন্ত যায় নি। হয়তো এতো ঘুমের কারনেই কেউ একজন তাকে ঘুমকাতুরে ঘুম কুমারী ডাকতো।

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here