#অনুভবী_হিয়া,০৩,০৪,০৫
#মাইশাতুল_মিহির
৩.
ভোরে সূর্যের সেই মিষ্টি আলো চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে। পাখিরা ডানা মেলে মিষ্টি সুরে গান গাইছে। ইতিমধ্যে মানুষ বাড়িতে থেকে বের হয়ে গেছে যে যার কাজে। ঘুম থেকে উঠে লম্বা শাওয়াল নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো শুভ। পরনে অফ-হোয়াইট কালার টি- শার্টের উপর ব্লু কালার ব্লেজার, ব্ল্যাক জিন্স। চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা। হাতে ব্রেন্ডের ঘড়ি। লম্বা পাঁচ ফুট নয়, ফর্শা গায়ের রঙ, চোখের মনি গাঢ় নীল। খুব একটা বুঝা যায় না, গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলে চোখে পরবে মনির আসল রঙ।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখে নিলো শুভ। টেবিলের ড্রয়ার থেকে মানিব্যাগ হাতে নিলো। তার থেকে বের করলো ছোট একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ছবিতে ভেসে উঠেছে হাস্যউজ্জল একটা মেয়ে। কালো হিজাব পরে মাঠে এক পাশে ফ্রেন্ডদের কথা বলে হাসছিলো মেয়েটি। হাস্যউজ্জল চেহারায় তাকে আবেদময়ী লাগছিলো। কাজল টানা চোখে যেনো মায়াবিনী। ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে ক্যামেরা বন্দি করে এক প্রেমিক পুরুষ। সেই থেকেই ছবিটি তার ওয়ালেটে জায়গা করে নিয়েছে। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগের ছবি। মুচকি হেসে ছবিটা আগের মতো ওয়ালেটে রেখে দেয়। প্রয়োজনীয় জিনিষ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো শুভ।
‘বাব্বাহ্! অফিসেই তো যাচ্ছো ভাইয়া মেয়ে দেখতে নয়। এতো সাজার কি আছে? আমি মেয়ে হয়েও তো এতো সাজি না।’ সুহার কথা শুনে ভ্রুঁ কিঞ্চিত বাঁকা করে তাকালো শুভ।
‘তুই এমনিতেই পেত্নি তার উপর আবার সাজলে আরো কালো পেত্নির মতো লাগে তাই না সেজে হাবলার মতো থাকিস। আমি যেহেতু সুন্দর তাই সাজতেই পারি। ইট’স নরমাল।’ ভাব নিয়ে বললো শুভ।
‘এ্যা, যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা।’ ভেংচি দিয়ে বললো সুহা। ভাই বোনের এমন ঝগড়া বেশ উপভোগ করছে মিথিলা। কত দিন পর ছেলেটা ফিরে এসেছে, ঠিক আগের মতোই ব্যবহার করছে। ভাবতেই দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।
‘শুভ, আমি অফিসের সবাইকে বলেছি তোমার কথা। রায়হান আছে সে তোমাকে সব বুঝিয়ে দিবে আর সাথে তোমার এসিস্টেন্ট তো আছেই। আশা করি তুমি সব সামলে নিবে।’ খাওয়া থামিয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো আয়াজ।
শুভ বাবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে আশ্বাস দিয়ে বললো, ‘তুমি চিন্তা করো না আব্বু। আমি সব সামলে নিবো। ভরসা রাখতে পারো।’
‘তোমার উপর আমার ভরসা আছে। কানাডা গিয়ে তুমি যেভাবে আমার ওই ব্যবসা টা সামলালে আই’ম জাস্ট ইম্প্রেসড।’
প্রতি উত্তরে শুভ কিছু বললো না শুধু মৃদু হাসলো। খাওয়া দাওয়া শেষে গ্যারেজ থেকে গাড়ি নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো শুভ। উদ্দেশ্য অফিস!
__________
‘এই মাইয়া উঠ। দেখ ৮:৪০ বাজে। কিরে উঠবি নাকি এক বালতি পানি ঢালবো মাথায়?’ মিহির কে ঘুম থেকে তোলার জন্য জুরে জুরে ডাকতে লাগলো মাহিন। মিহির সাধারনত দেড়ি করে উঠে না।
‘আল্লাহ একটা মাইয়া এতো কেমনে ঘুমাই তোরে না দেখলেই জানতেই পারতাম না। দুনিয়া এক দিকে ভাই তো ওনার ঘুমা আরেক দিকে। এই মাইয়া উঠ নাহ ভাই।’ বিরক্ত নিয়ে ডাকছে মাহিন।
‘উফফ, ভাইয়া ভালো লাগছে না তো ঘুমাতে দাও।’ ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে ওপাশ ফিরে আবার শুয়ে পরে মিহির।
‘হুহ, একটু পর ৯ টা বাজবে তুই এখনো ঘুমা।’
মাহিনের কথা কানে যেতেই লাফ দিয়ে উঠে মিহির।
‘কি???? নয়টা বাজে। আমাকে আরো আগে ডাকো নি কেনো।’
‘এই তোরে এক ঘন্টা যাবত ডাকতে ডাকতে গলা ব্যাথ্যা ধরে গেছে আর এখানে আসছো বলতে ডাক দেই নাই কেনো। তুই যে কানে কালা শুনবি কেমনে। যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়। তোর জন্য বসে আছি আমি।’ বিরক্ত নিয়ে বিছানার এক পাশে বসে বললো মাহিন।
‘ইশ, আজই অফিসে নতুন স্যার আসবে আর আমার আজই লেট হতে হলো। ভাল্লাগে না। তুমি খেয়ে নিতে আমার জন্য কেনো শুধু শুধু অপেক্ষা করতে গেলে। একটু দাঁড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’ বিছানা থেকে নেমে কাভার্ড থেকে ড্রেস নিতে নিতে বললো মিহির। ড্রেস নিয়ে দেড়ি না করে ওয়াসরুমে গিয়ে চটজলদি তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হলো। এক সাথে নাস্তা করেই বের হলো দুজন। মিহির অফিস আর মাহিন কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলো।
_________
‘RS Company’ গেইট দিয়ে শুভর গাড়ি ঢুকলো। গাড়ি থেকে নেমে একবার উপরে তাকিয়ে বড়বড় ক্যাপিটাল ওয়ার্ড দিয়ে লিখা ‘RS Company’ নাম টা দেখে নিলো শুভ। অফিসে ভিতরে ঢুকার পরই রায়হান ফুল দিয়ে ওয়েলকাম জানালো শুভকে। এক এক করে সবাই ওয়েলকাম জানালো তাকে। সবাই তাকে আরএস বলেই সম্মোধন করছে। অফিসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে নিদিষ্ট কেবিনে নিয়ে গেলো রায়হান। কেবিনে বসে কিছু ফাইল ঘাটাঘাটি করছে রায়হান কে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে শুভ। সামনেই রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ রায়হানের উদ্দেশ্যে শুভ প্রশ্ন করলো,
‘সবার সাথেই কথা হলো। কিন্তু এখনো এসিস্টেন্ট কে দেখলাম না। কোথায় সে?’
‘স্যার, এখনো আসে নি।’ কিছুটা আমতা আমতা করে বললো রায়হান।
‘অফিস শুরু হয় ৯:০০ টায়। এখন বাজে ৯:২০! এতো লেইট কেনো? এটা কি অফিসের রুলসে পরে? অফিসের রুলস সম্পর্কে কি কেউ অবগত নয়?’ রেগে গম্ভীর কন্ঠে বললো শুভ। ফের গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘ওনি আসলে কেবিনে পাঠিয়ে দিবেন। আপনি এখন আসতে পারেন।’
কথা না বারিয়ে চুপচাপ কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। রায়হানের বুঝতে বাকি নেই স্যার অনেক গম্ভীর আর রাগী। সাবধানে কাজ করতে হবে ভেবে আগেই সতর্ক হয়ে গেলো সে।
_________
মিহির অফিসে তড়িঘড়ি করে ঢুকে নিজের কেবিনের চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমেই একপ্রকার দৌড়ে এসেছে সে। পানির বোতল হাতে নিয়ে ঢক ঢক করে অর্ধেক বোতল শেষ করে ফেললো। তখুনি রায়হান কেবিনে ঢুকে জানালো স্যারের কেবিনে গিয়ে দেখা করে আসতে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯:৪৫! মিহির আর বিলম্ব না করে স্যারের কেবিনের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো।
কেবিনে গিয়ে দরজা হাত দিয়ে নক দেয় মিহির। শুভ ভিতরে ফাইলে চেক করছিলো। আওয়াজ শুনে গম্ভীরভাবে বলে, ‘ কাম ইন।’
অনুমতি পেয়ে কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
‘গুড মর্নিং স্যার। ওয়েলকাম টু আওয়ার অফি..’ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি টিকে দেখেই স্তব্ধ হয়ে যায় মিহির। কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। এই মুহূর্তে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পরেছে সে। যেই মানুষটিকে সে নিজের সব টা দিয়ে ভালোবেসেছে, যাকে একবার দেখার জন্য মন পাগলপ্রায় এখন সেই মানুষ টি তার সামনে দাঁড়িয়ে। কিভাবে সম্ভব এটা? এতো দিন পরেও কেনো আমার এমন অনুভূতি হচ্ছে। তবে কি আজও তাকে আমি??? আচ্ছা সে কি আমাকে ভুলে গেছে? নতুন করে তার যোগ্য কাউকে ভালোবাসে? এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার? এখন কি বলা উচিত তাকে? কি করবো আমি?
চলবে..!!
#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৪.
শূন্যমস্তিষ্কে দাঁড়িয়ে আছে শুভ। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যাকে সে এতো গুলো দিন ধরে খুঁজেছে সে এখন তার সামনে। হ্যাঁ সে আর কেউ নয় মিহি, তার প্রেয়সী, তার ভালোবাসা। এতো গুলো দিন পর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে চোখ দুটো বেহায়া হয়ে উঠেছে। কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেনো এতো গুলো দিন না দেখা প্রেয়সী কে দেখে সব শূন্যতা পূরণ করছে। খুশিতে তার চোখ দুটো চিকচিক করছে। আচ্ছা মিহি কি আমাকে ভুলে অন্য কাউকে মন দিয়েছে? নাহ, এটা হতেই পারে না। মিহি শুধু আমার আর কারোর নাহ। এতো গুলো দিন পর আমাকে দেখে মিহি কেমন রিয়েকশন দিবে এখন? খুব কান্না করবে আমার কাদুরে পাখিটা?
দু’জনের ভাবনার ইতি টেনে মিহির খুব শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেমন আছেন মিঃ রাফিদ রায়হান শুভ?’
‘ভালো। তুমি?’ ছোট করে উত্তর দিলো শুভ।
‘এইতো বেশ ভালো আছি দেখতেই পারছেন।’ কিছুটা তাচ্ছিল্য ভাবে বলে বুকে হাত গুঁজলো মিহির। শুভ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মিহির নিজেকে শক্ত প্রমান করতে চাইছে। আগে থেকে বেশ ম্যাচিউর হয়েছে। আগের সেই পিচ্চি মিহি এখন বড় হয়ে গেছে আবার জবও করছে বাহ। মনে মনে ভাবতেই মৃদু হাসে শুভ।
‘আপনি তাহলে আয়াজ স্যারের ছেলে?’ নিরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলো মিহির। শুভ ছোট করে উত্তর দিলো, ‘হ্যা।’
‘তারমানে এখন থেকে আমি আপনার…’ অসহায় ভাবে বললো মিহির। মিহিরের মুখ দেখে শুভ খানিকক্ষণ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘কেনো আমার সাথে কাজ করতে কি তোমার কোনো সমস্যা?’
‘নাহ, মোটেও না। কিন্তু..’ আমতা আমতা করে বললো। শুভ গম্ভীর মুখ করে জিজ্ঞেস করলো, ‘কিন্তু কি?’
মিহির এইবার বেশ রাগ নিয়েই মৃদু চেঁচিয়ে বললো, ‘কোনো কিন্তু না। আপনাকে কে বলেছে এখানে আসতে? বলুন। দেশে কি আর কোনো কোম্পানি ছিলো না আরএস কোম্পানিতেই কেনো আসতে হলো আপনার? হ্যাঁ। উফফ অস্বস্থিতে মরে যাচ্ছি আমি আল্লাহ! ইচ্ছে তো করছে আপনাকে এই বেল্ডিং এর ছাদ থেকে ধা:ক্কা মে:রে ফেলে দি। ভাল্লাগে না। আমার সাথেই কেনো এমন হয়। আল্লাহ বাঁচাও!!’ একটানা কথা গুলো বলে দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো মিহির।
এতোক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে মিহিরের কথা গুলো হজম করছিলো শুভ। ঠিক কি রিয়েক্ট করা উচিত বুঝতে পারছে না সে। মিহির বের হয়ে যাবার পরে হালকা আওয়াজে হেসে ফেললো শুভ। মেয়েটা ঠিক আগের মতোই আছে। রেগে গেলে কি বলে হুশ থাকে না। উফফ বুকে থাকা পাথর যেন সরে গেছে। হালকা লাগছে নিজেকে। প্রচন্ড রকমের ভালোলাগা কাজ করছে। তার মানে বাবা এই সারপ্রাইজের কথাই বলছিলো। মিহির কথা তাহলে মা সুহাও জানে। উফফ ইয়ার কেনো যে আগে কানাডা থেকে এসে অফিসে জয়েন করলাম না। ইশ!!’
_______
ওয়াসরুমে দাঁড়িয়ে চোখে মুখে বার বার পানি দিচ্ছে মিহির। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে।কাঁদতে চায় না মিহির। তার জন্য কান্না করা বহু আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। চোখ যে বেহায়া তাই তো মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে পানি এসে পরে। বার বার বিড়বিড় করে বলছে শুধু, ‘এটা কিছুতেই হতে পারে না! নাহ! এই লোকটার আশেপাশে আমি থাকতে পারবো না। অস্বস্থিতে আমি ম:রে যাবো। কাঁদবি না মিহির। তুই অনেক স্টং মেয়ে। ওই লোকের জন্য কান্না করবি না। ওই লোকটা তোকে ভালোবাসে না। কাঁদবি না তুই।’ বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পরে মিহির। মেজেতে বসে হাটুতে হাত জড়িয়ে মাথা ঠেঁকিয়ে বসে কাঁদছে মিহির। অতীত কেনো আবার এলো সামনে। ভুলতে চেয়েছিলাম সব কিন্তু পারিনি। তবে সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। তাহলে কেনো আবার এতো দিন পর এসে সেই অতীতের শুকিয়ে যাওয়া যন্ত্রনা তাজা করে দিলো? কেনো??
অনেকক্ষণ কান্না করার কারনে চোখ জ্বলছে। বসা থেকে উঠে আবার চোখে মুখে পানি দিলো। তারপর টিস্যু পেপার নিয়ে মুখ মুছে বের হয়ে টেবিলের উপর থেকে ব্যাগ নিয়ে রিসিপশনের দায়িত্বে থাকা মেয়েটিকে বলে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে। ভালো লাগছে না আপাতত একটা কোলাহল মুক্ত পরিবেশ দরকার। তার পর বাড়ি ফিরে শান্তির ঘুম।
_______
অনেকক্ষন যাবত মিহিরকে না দেখে অস্থির হয়ে পরছে শুভ। ইচ্ছে করছে তাকে সামনে বসিয়ে রেখে তাকিয়ে থাকতে। আর থাকতে না পেরে বের হলো কেবিন থেকে সে। সোজা রিসিপশনের মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে মিহিরের সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়েটি জানায় শরীর খারাপ লাগায় মিহির অফিস থেকে চলে গেছে। ছোট একটা ধীর্ঘশ্বাস ফেলে কেবিনে ফিরে যায় শুভ। সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে মিহির এখন তার সামনে আসতে চাইছে না তাই বাহানা দিয়ে চলে গেছে। কেবিনের দক্ষিন পাশে বিশাল বড় থাইগ্লাসের সামনে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে শুভ। ভাবছে আজকের কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা। বাহিরে তাকিয়ে আপন মনে বাঁকা হেসে বললো,
‘পেয়ে যখন গেছি তোমায় আর ছাঁড়ছি না। এবার তোমাকে আমার করেই ছাড়বো। যে কোনো মূল্যেই হোক না কেনো তুমি আমারই হবে। আই ওয়ান্ট ইউ ডিপলি বেবি। আই জাস্ট নিড ইউ এট এনি কস্ট। জাস্ট নিড ইউর আর্মস। ইউ আর মাইন আন্ড অলয়েজ বি। ?
চলবে..!!
#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৫.
পার্কের পাশে ছোট পুকুরের কাছে নিমগাছ আছে। সেখানে বসে আছে মিহির। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ। পুরা দুনিয়া বিরক্ত লাগছে তার, পাশে বসে থাকা বাটনফোন বান্ধুবি টাও বিরক্তকর।
মিতু মুখের হাসি আটকে রেখে বলে, ‘কিরে এক্স এর কষ্টে কোন দুনিয়াই হারাই গেলি?’
বিরক্ত নিয়ে মিহির বলে, ‘চুপ কর তুই। কথা বলবি না একদম। কখন থেকে মজা নিচ্ছিস খালি।’
‘আরে যাই বল না কেনো ব্যাপার টা কিন্তু জুশ। তোর অবস্থা ঠিক এমন এক্স বয়ফ্রেন্ড যখন বস গল্পের মতো।’ বলেই খিলখিল ভাবে হাসতে লাগলো মিতু।
‘আমি ওই জব করবো না। কিছুতেই নাহ।’ সিরিয়াস হয়ে বললো মিহির। মিতু অবাক হয়ে তাকালো মিহিরের দিকে। ‘পাগল হয়ে গেছিস নাকি তুই? ছোট একটা কারনে জব ছেড়ে দিবি?”
‘তোর কাছে এটা ছোট কারন মনে হচ্ছে? আমি কিছুতেই শুভর এসিস্টেন্ট হয়ে কাজ করতে পারবো না। আমি জব ছেড়ে দেবো দ্যাট’স ফাইনাল।’
‘মিহু! সামান্য কারনে তুই জব ছেড়ে দিবি? জানি তোদের অবস্থা বেশ ভালোই তার পরেও আত্মনির্ভরশীল বলে একটা কথা আছে। তা ছাড়া তোর এখনো অনার্স কমপ্লিট হয়নি। এতো ভালো জব কোথাও পাবি না।’ শান্ত সুরে বললো মিতু। মিহিরের কাধে এক হাত রেখে আবার বলতে শুরু করলো, ‘অতীত সবার জীবনেই থাকে যা ভুলে সামনে আগাতে হয়। আর শুভর জন্য কেনো তুই পিছিয়ে যাবি? দেখিয়ে দে তাকে ছাড়া তুই কত ভালো আছিস। তার সামনে দিয়ে ঢেং ঢেং করে চলবি। অবশ্য একটা বয়ফ্রেন্ড থাকলে ভালো হতো প্রেম করে দেখিয়ে দিতে পারতি।’ শেষের কথা গুলো মজা ছলে বলে।
‘সিরিয়াস মুহূর্তে মজা করার অভ্যেস তোর গেলো না।’ বিরক্ত নিয়ে বলে উঠে মিহির। দাত কেলিয়ে হাসে মিতু। কলেজ লাইফ থেকে মিতু মিহিরের বেস্টফ্রেন্ড। মিতুকে মিহির বাটনফোন বলে ডাকে।কোনো সমস্যা হলে বাটনফোনে চাপ দিলেই বান্দা হাজির তো সমস্যা সমাধান। কলেজ ভার্সিটি লাইফ দুই জান্টুস মিলে পার করছে।
______________
হাতে হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ। তার সামনেই মাথা নিচু করে জড়সড় হয়ে বসে আছে আদিল, সামির আর রাহুল। জরুরী ভিত্তিতে ডেকে এনে যে এইভাবে বাঁশ দিবে জানা ছিলো না তাদের।
অসহায় ফেস নিয়ে বলে সামির, ‘ভাই, তুই আমাদের মারবি? তোর কলিজা কাঁপবে না?’ শুভ ধমক দিয়ে বলে, ‘অপদার্থের দল। মিহি বাবার কোম্পানিতে কাজ করে প্রায় ৭ মাস ধরে। আর এটা তোরা তিন জনের মধ্যে কেউ আমাকে জানালি না?’
ভ্রুকুচকে বলে রাহুল, ‘আরেহ্ বাল! আমরা কি জানতাম নাকি। জানলে তো তোরে জানাইতাম। তোর সাধু বাপ যে পল্টিবাজ হেইডা কেউ জানতো?’
‘খবরদার আমার বাপরে নিয়া কিছু বলবি না। তোরা যে হাদারাম সেটা বল। কি খাইয়া বড় হইছোস তোরা? এই ছোট একটা খবর আমাকে কালেক্ট করে দিতে পারিস নাই? ইডিয়টের দল।’
রাহুল অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে, ‘ভাইরে ভাই যার লাইগা চুরি করি হেই কয় চুর।’
সামির আড় চোখে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আদিলের বাবার কোম্পানির সাথে তো তোদের কোম্পানির ডিলারশিপ আছে। আদিল নিশ্চয় জানতো। যা করার হেরে কর।’ আদিল দাতে কটমট করে তাকাই সামিরের দিকে। সামির ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে দাত বের করে হাসে।
‘কেমন ফ্রেন্ড তোরা? আমারে মাইনকার চিপায় ফালাইয়া নিজেরা পালাও পালাও করো?’ দাত চেপে বললো আদিল। শুভ গরম চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল ফ্যালফ্যাল চোখে বলে, ‘ভাইরে ভাই, আমার বাপের কোম্পানি দেইখা যে আমি জানমু এইডা কোন ধরনের লজিক। মাসে এক দুই বার অফিসে যাই তাও আবার মা’য়ের ঝাড়ুর বারি খাইয়া। যেই খানে নিজের বাপের অফিসের খবর নাই ওইখানে আমি কেমনে তোর অফিসের খবর জানমু?’
‘তুই সব জানোস। মিহির বেস্টফ্রেন্ড মিতুই তো তোর ফিয়ন্সে। আর তুই হবুবর হয়ে তোকে মিতু কিছু বলে নাই এইটা অসম্ভব। শালা পল্টিবাজ, ধান্দাবাজ!’ বলেই আদিলের মাথায় চাপড় মারলো সামির।
শুভ কড়া গলায় বললো, ‘আদিল কা বাচ্ছা। হারামি তুই রাস্তার পাশে ৩০ মিনিট এক পা তুলে কানে ধরে দাঁড়ায় থাকবি।’
‘ভাই, আমার ইজ্জরের ফালুদা বানানের ধান্দায় আছোস নাকি। খুদার কসম ভাই মিতু আমারে কিছু বলে নাই। আমার থেইক্কা বেস্টফ্রেন্ড আগে তার কাছে। জামাই ফালাইয়া বেস্টফ্রেন্ডের লাইগা মরে বউ আমার। শালা কপাল ডাই ফাডা।’ বিরক্ত সুরে বলে আদিল।
সামির আর রাহুল মিলে হু হা হাসা শুরু করে। শুভ কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, ‘তোরা হাসছিস কেনো? আমি কি তোদের ছেড়ে দিয়েছি? তোদের মতো তিন অপদার্থের আজকে একদিন তো আমার যতদিন লাগে। শাস্তির জন্য রেডি হয়ে যা।’
সামির, রাহুল, আদিল! মুহূর্ত টা এমন যেনো তিন বেচারা অসহায় ভাবে বসে আছে সিংহের গুহায়।
______________
রাতে নিজের রুমে বসে কাপড় গুছাচ্ছে মিথিলা। হঠাৎ করে তার ছেলে কোত্থেকে এসে কুলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। ছেলের এহেন কান্ডে খানিকটা অবাক হয়ে হেসে ফেলে মিথিলা। আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে। ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে শুভ। লম্বা শাওয়াল নিয়ে শর্ট পেন্টের সাথে ব্লাক টি-শার্ট পরেই মা’য়ের রুমে দৌড়। খুশিতে আজ লুঙিড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে তার।
‘কিরে শুভ! আজ এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো তোকে?’
খুশী হয়ে বলে শুভ, ‘উফফ মা! এতো বড় সারপ্রাইজ পাবো কখনোই ভাবিনি। আমি অনেক এক্সাইটেড, অনেক অনেক হ্যাপি আজকে।’ ছেলের কথায় মুচকি হাসলেন মিথিলা।
‘তোকে তো কত আগে বলেছিলাম দেশে এসে অফিসে জয়েন কর। শুনিস নি আমাদের কথা। আরো আগে জয়েন করলে আগেই সারপ্রাইজ টা পেতি।’
‘মিহিরের কথা আমাকে বলো নি কেনো তোমরা তাহলেই আসতাম। জানো আম্মু? মিহির না আগে থেকে একটু মোটা হয়েছে। বেশি না সামান্য একটু। এখন মিচিউর হয়ে গেছে। বাচ্চা বাচ্চা ভাব টা আর নেই। কথাবার্তাও কেমন বড়দের মতো করে বলে। ইশ আমার বাচ্চা বউ টা বড় হয়ে গেছে। কি মিষ্টি লাগছিলো তাকে।’ শুভর চোখে মুখে মুগ্ধতার ছুয়া। মিথিলা বেশ ভালো বুঝতে পেরেছে মিহিরকে তার ছেলে খুব ভালোবাসে। বুঝার কি আর বাকি থাকে? কত পাগলামি কতেছে ছেলেটা। মিহিরকে খুঁজার জন্য পাগলপ্রায়। একপ্রকার বাধ্য হয়ে ছেলে কে কানাডায় পাঠায় তারা।
চলবে..!!