অনুভবী_হিয়া,১২,১৩

0
891

#অনুভবী_হিয়া,১২,১৩
#মাইশাতুল_মিহির

১২.

‘North And Coffe Roasters’ এর দু তলায় বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে শুভ। এগারো টা বাজতে আর দুই তিন মিনিট বাকি। অপেক্ষা করছে আগন্তক ব্যক্তিটির জন্য। কে এই ব্যক্তি? পাক্কা বিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর দেখা মিলে আগন্তক ব্যক্তির। পরনে কালো টি-শার্টের ওপর কালো ব্লেজার, কালো প্ল্যান্ট, হাতে কালো ঘড়ি।চেহারা দেখার সৌভাগ্য হয়নি শুভর কারণ চোখে সানগ্লাস আর মুখে কালো মাক্স।

‘সরি ব্রাদার একটু লেট হয়েছে।’ চেয়ারে বসতে বসতে বলে আগন্তক ব্যক্তি। এতোক্ষন তাকেই প্রখর করতে গভীর দৃষ্টিতে দেখছিলো শুভ। কথা শুনে ধ্যান ভাঙে তার। শান্ত স্বরে বলে, ‘ইট’স ওকে!’

‘তো কেমন আছেন মিঃ রাফিদ?’ চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে বলে ব্যক্তিটি। ভাব এমন যেনো শুভকে সে আগে থেকে চেনে। শুভ বলে, ‘আছি ভালো। আপনার পরিচয় কি জানতে পারি?’

‘আরে ক্লাম ডাউন ব্রো। এতো তাড়া কিসের? আগে কিছু অর্ডার করে নেই তারপর নাহয় কথা বলা যাবে। বলুন কোন কফি খাবেন?’ চোখ থেকে সানগ্লাস নামিয়ে বাকা হেসে বলে যুবক। শুভ ব্যক্তিটির এমন ব্যবহার মোটেও নিতে পারছে না। নিজের মাঝে রাগ দমিয়ে দুই কাপ ব্ল্যাক কফি অর্ডার দিলো শুভ। ওয়েটার কফি দিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পর শুভ শান্ত স্বরে বলে, ‘খেয়ালী না করে নিজের পরিচয় আর কি জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন।’

‘আমাকে এমআর বলে ডাকতে পারেন। আপাতত এটুকু জেনে রাখুন পরে নাহয় আস্তে আস্তে জানতে পারবেন।’ মাক্সের ভিতর বাকা হেসে বলে মাহিন যা শুভর নজর এড়ায় নি। শুভ গভীর চোখে প্রখর করছে সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে। মাহিন এবার চোখে মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে ‘সবুজকে মারতে চেয়েছেন কেনো?’

আগন্তুক ব্যক্তির মুখে সবুজের কথা শুনে কিঞ্চিৎ পরিমানের অবাক হয় শুভ। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে, ‘আপনি কোন সবুজের কথা বলছেন?’

হেসে ফেলে মাহিন। তারপর বলে, ‘আপনি যার কথা ভাবছেন।’ শুভ ভাবছে এই ব্যক্তি কিভাবে সবুজের কথা জানে? তাহলে সে কি সবুজের লোক? ভাবনার মাঝে শান্ত স্বরে বলে শুভ, ‘তাহলে আপনি ওদের মে:রেছেন?’

‘বাঁচিয়ে রেখেছি যে এটাই অনেক। আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর পাই নি মিঃ রাফিদ।’ গম্ভীর কন্ঠে বলে মাহিন। শুভ ভ্রুঁ উঁচিয়ে কপালে ভাজ ফেলে বলে,’সেটা জেনে আপনি কি করবেন?’

তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় মাহিন। তারপর ফিচেল গলায় বলে, ‘দেখুন মিঃ রাফিদ, আপনি বেশ সুনামধন্য লোক। ব্যবসা সামলাচ্ছেন তো সামলান। মাঝখান থেকে ঝামেলায় জড়াতে যাবেন না। সবুজের সাথে আপনার কিসের শ:ত্রু:তামী, ওকে কেনো মা:রতে চেয়েছেন? ব্যাপার টা এখানেই স্টপ করতে চাচ্ছি আমি। তাই আমি আমার মূল্যবান সময় ব্যয় করে এসেছি আপনার সাথে দেখা করতে।’

‘ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে?’ শুভর কথা শুনে মৃদু স্বরে হাসে মাহিন। তারপর আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,’পলিটিশিয়ানের সাথে লাগতে গেছেন ভাই অবস্থা কিন্তু গুরুতর হতে পারে।’

‘সবুজ কে, কি করে সেটা জেনে আমার লাভ নেই। আমার প্রিয় জিনিসের দিকে কেউ নজর দিলে তাকে আমি ছাড়বো না।’ শান্ত হয়ে বলে শুভ। কিঞ্চিৎ পরিমানের অবাক হয়ে কপালে ভাজ পরে মাহিনের। শুভর প্রিয় জিনিসের দিকে সবুজ কেনো নজর দিবে? যেখানে সবুজ শুভকে চেনা তো দূর দেখেনি অব্দি। কিছুক্ষন ভাবনায় মশগুল থেকে মাহিন বলে, ‘আপনার প্রিয় জিনিস বলতে ঠিক কি বুঝাতে চাইছেন?’

‘এতো কিছু বলতে পারবো না। ওয়ার্ন হিম এন্ড জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মাই গার্ল!’ দাঁতে দাঁত চেপে কড়া গলায় বলে শুভ। গটগট আওয়াজ করে বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। শুভর চলে যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মাহিন। শুভর প্রিয় জিনিস? এওয়ে ফ্রম মাই গার্ল? তার মানে মিহিরকে শুভ এখনো… মাহিন বিরক্ত হয়ে আপন মনে বিড়বিড় করে বলে, ‘জেলাস!’

***
শুভর সম্পর্কে মিহির তাকে সব বলেছিলো। কুমিল্লা থাকা শর্তেও মাহিন বোনের সম্পর্কে সব খোঁজ খবর রাখতো। শুভ আর মিহিরের ব্রেকআপ হওয়ার পর মিহির অনেক ভেঙে যায়, মাহিন ব্যাপার টা নরমাল ভেবে বোন কে তখন শান্তনা দিয়ে আগলে রাখে। যখন মিতুর কাছে ব্রেকআপের কারণ জানতে পারে তখন শুভর উপর মাহিন প্রচুর রেগে যায়। তখনি তাদের বাবা মা:রা যায় কার এক্সি:ডেন্টে। সেই সুবাধে মা আর বোনকে কুমিল্লা রেখে দেয় মাহিন। তারপর একদিন রাতে শুভ আর তার বন্ধুরা মিলে কার ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরছিলো। ইচ্ছে করে শুভর গাড়ির সাথে মাহিন নিজের গাড়ি ধাক্কা লাগায়। মাহিনের সাথে সবুজ ছিলো। গাড়ি থেকে নেমে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায়। তখনি মাহিন নিজের রাগ মিটায় শুভর ওপর। শুভ মাহিনকে চিনে না কারন মিহির কাছে শুধু শুনেছে তার একটা ভাই আছে আর সে কুমিল্লা তে থাকে ঢাকা আসে না। মুখে মাক্স থাকার কারনে মাহিন আর সবুজকে দেখতে পারে নি শুভ। টানা ১৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলো শুভরা। হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাওয়ার পর মিহিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে শুভ কিন্তু পারেনি। মিহিরের বাসায় এসে জানতে পারে তারা বাসা ছেড়ে দিয়েছে। মাহিন জানতো শুভ মিহিরের খোঁজ নিচ্ছে তাই কুমিল্লা থেকে মিহির দের ঢাকা যেতে দেয়নি। প্রায় ছয় মাস পর যখন শুভ কানাডা চলে গিয়েছিলো তখন মাহিন ঢাকা আসে মা-বোন নিয়ে। এতো সব কথা কেউ জানে না মাহিন ছাড়া। যদিও ওই দিন শুভকে মারার জন্য সবুজ ছিলো সাথে কিন্তু সবুজ শুধু এতো টুকু জানতো গাড়ি ধাক্কা লাগায় কথা কাটাকাটি তে মা:রা:মা;রি হয়। একা রেস্টুরেন্টে বসে বাহিরে তাকিয়ে ভাবছে মাহিন। তার বোনকে যে বা যারা কষ্ট দিবে তাদের কাউকে ছাড়বে না সে। কাউকে নাহ!!
__________________

মুখ ভার করে বসে আছে মিহির। বিকাল পাঁচটা বাজে প্রায়। ইতিমধ্যে অফিসের সবাই চলে গেছে। আর মাত্র দুইটা ফাইল বাকি চেক করার। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। লাঞ্চ টাইমে মাত্র একটু ফ্রি হয়েছিলো। মা’কে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তার ফিরতে দেড়ি হবে টেনশন যেনো না করে। শুভকে ইচ্ছে মতো গালাচ্ছে মিহির। তাকে একগাদা কাজ দিয়ে নিজে লাপাত্তা হয়ে গেছে। অসভ্য লোক বাথরুমে গিয়ে আছাড় পরবি তুই। ইতুর কোথাকার। বেশ কয়েকবার হাই তুলে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মিহির। এমন সময় ম্যাসেজের টংটাং শব্দ হয়। মোবাইল চেক করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে পাঠিয়েছে,

‘আর কাজ করতে হবে না। অফিস থেকে বেরিয়ে আসো!’

ম্যাসেজ টা যে শুভর সেটা বুঝতে দেড়ি হয়নি মিহিরের। ভাই কাজ শেষে বলোস আর কাজ করতে হবে না। আরো আগে ম্যাসেজ টা পাঠাতে পারিস নি? উগান্ডার কচ্ছপ কোথাকার। রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে ব্যাগ নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে মিহির। অফিসের বাহিরে শুভ কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় সে। মিহির কে দেখে এগিয়ে আসে শুভ।

‘মিহি এসো আমার সাথে তোমাকে বাসায় পৌছে দিচ্ছি।’

‘নো থ্যাংকস!’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় মিহির। শুভ মিহিরের কথায় রেগে হাত ধরে ফেলে। মিহির হাত ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে বলে, ‘এটা কি ধরনের অসভ্যতামি? আমার হাত ধরেছেন কেনো?’

‘কি বলেছি শুনতে পাও নি? আমার সাথে এসো।’ কড়া গলায় বলে শুভ। মিহির ক্ষোভ নিয়ে বলে, ‘যাবো না মানে না!’ শুভ মিহিরের হাত ধরে জোর করে টেনে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। শুভর এমন কাজে বিস্মিত হয় মিহির। গাড়ির দরজা খুলে বের হতে চাইলে দেখে ডোর লক করা। শুভ এগিয়ে এসে মিহিরের সীটবেল লাগিয়ে দিয়ে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে, ‘বড্ড জেদী তুমি। ভালো কথায় শুনো নি তাই জোর করতে হলো।’ বলেই গাড়ি স্টার্ট দেয় শুভ। মিহির রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে,’সমস্যা কি আপনার? যাবো না আমি আপনার সাথে। শুনতে পান নি আপনি?’

শুভ চুপচাপ সামনে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করছে যেনো আশেপাশে কিছুই হয়নি। তেলে বেগুনে জ্বলে মিহির বাহিরে তাকায়। অনেকক্ষন পর খেয়াল করে মিহিরের বাসার ওল্টো পথে গাড়ি যাচ্ছে। মিহির তখন অস্থির হয়ে চেঁচিয়ে বলে,’আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এইদিকে আমার বাসা না। আমি যাবো না আপনার সাথে। নামিয়ে দিন আমায়।’

‘চুপচাপ বসে থাকতে পারো না? এমন ভাবে চিল্লাচ্ছো যেনো তোমাকে আমি কি:ড:ন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি।’ সামনে দিকে চোখ রেখে বলে শুভ। মিহির দিগুণ চেঁচিয়ে বলে উঠে, ‘আপনি তো আমাকে একপ্রকার জোর করেই নিয়ে যাচ্ছেন এটা কি:ড:ন্যাপ না? এই ওয়েট ওয়েট, আপনি কি আমাকে পা:চার করে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন? হায় আল্লাহ বাঁচাও আমাকে। ভাই আমাকে বাচাও প্লিজ।’ শেষের কথা গুলো অস্থির হয়ে বলে মিহির। মিহিরের কথা অবাক হয়ে যায় শুভ।

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১৩.

‘লাইক সিরিয়াসলি মিহির? আমাকে তোমার এমন মনে হয়?’

‘হয় তো! এখন নিশ্চয় আপনি আমাকে নিয়ে পাচার করে দিবেন। জানি জানি আপনি মানুষটা ভালো না দেখেই বুঝা যায়। চোখে মুখে চোরের ভাব আছে।’ বলে চোখ ছোট ছোট করে হাসতে লাগলো মিহির। শুভ এক পলক মিহিরের দিকে তাকিয়ে মজার ছলে দুষ্টু হেসে বলে,’তোমাকে পা:চার করবো না। বিক্রি করে জিলাপি খাবো। অবশ্য তুমি নিজেই জিলাপির মতো মিষ্টি তাই ভাবছি শুধু শুধু কষ্ট করে বিক্রি করবো কেনো তোমাকেই ডিরেক্ট খেয়ে ফেলবো।’

চোখ বড় বড় করে তাকায় মিহির। বিড়বিড় করে বলে, ‘অসভ্য লোক!’ আস্তে বললেও শুভ শুনতে পায়।

‘কোনো প্রকার অসভ্যতামি না করে যখন অসভ্যের ট্যাগ পেয়েছি এখন না হয় অসভ্যতামি করেই অসভ্যের ট্যাগ নেই কি বলো মিহির?!’ দুষ্টু হেসে বলে শুভ। মিহির কড়া চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে বলে,’চুপচাপ ড্রাইভ করুন!’
_______________

সন্ধ্যায় বসে ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলো মাহিন। ইদানীং কাজের চাপ প্রচুর। ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙে তার। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে সিম-২ তে কল এসেছে। এই নাম্বার টা সাধারনত অফিসিয়ালি কাজের জন্য ব্যবহার করে মাহিন। আর এটা ডিপার্টমেন্টের সদস্য আর মিহির ছাড়া কারোর কাছে নেই। ডিপার্টমেন্টের কেউ ভেবে কল রিসিভ করে বলে, ‘হ্যালো ইট’স এমআর হাসান স্পিকিং!’

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ”এমআর হাসান” নাম টা বললো সুহা। তারপর বলে উঠে, ‘হ্যালো মিঃ হালুক। আমি সুহা থানা থেকে বলছি।’

মৃদু হাসে মাহিন। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে, ‘আচ্ছা! তা আমাকে কি দরকার?’

‘আপনার নামে মামলা করা হয়েছে।’

‘আমার অপরাপ?’ সিলিং এর দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে মাহিন। সুহা উল্লাসিত গলায় বলে, ‘মিস সুহানা রায়হানের মন চুরি করার অপরাধে।’

‘ওহ আচ্ছা!’ বলে মৃদু আওয়াজে হাসে মাহিন। তারপর আগ্রহ নিয়ে বলে, ‘তা আমাকে কি শাস্তি দেওয়া হবে ম্যাডাম?’

‘সারাজীবনের জন্য সুহার জেলখানায় বন্ধি হতে হবে আপনাকে!’ মিনমিনে গলায় লাজুক কন্ঠে বলে সুহা।

‘ভেবে বলছেন তো?’ বাঁকা হেসে বলে মাহিন। সুহা নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে, ‘হ্যা!’

‘যথা আজ্ঞা মহারানী! আপনার দেওয়া শাস্তি আয়াত হাসান মাহিন সাধরে গ্রহণ করেছে!’ মৃদু হেসে গভীর কন্ঠে বলে মাহিন। সুহার মুখে লাল আভা ছড়িয়ে পরে। লাজুকলতা এসে ভর করে তার মনে। ঠোঁট চেপে মুচকি হেসে চুপচাপ বসে আছে সে। বুকের ভিতর টিপটিপ শব্দে হার্ট কাপছে। নিরবতায় যেনো দুজন দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

‘তা মিস সুহানা রায়হান যদি মন দিয়ে দেয় তাহলে তো চুরি করবোই। সামলে রাখার দরকার ছিলো তার!’ নিরবতা ভেঙে হেসে বলে মাহিন।

‘আমি হয়তো সামলে রাখতে পারিনি এখন না হয় আপনি সামলে রাখুন!’ কন্ঠ নিচু করে বলে সুহা। একটু উচ্চস্বরে হাসে মাহিন। সুহার মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। মাহিন আবেগভরা নমনীয় নন্ঠে বলে, ‘আমার জিনিস আমি খুব ভালো করেই সামলাতে পারি। মাহিনের শহরে প্রবেশ করে বড্ড বেশি ভুল করেছো সুহারানী। আমার এই নিষিদ্ধ শহরে প্রবেশ করে আটকে গেছো তুমি চাইলেও এই জীবনে বের হতে পারবে না। মাহিনের এই ভালোবাসার শহর থেকে সুহারানীর বের হওয়া নিষিদ্ধ।’

মাহিনের প্রতিটি কথা শিরা উপশিরায় শীতল স্রোত ভয়ে যাচ্ছে। বুকের বা পাশে থাকা হৃদযন্ত্রটা কেমন দ্রুত গতিতে চলছে। লজ্জায় গালে লাল আভা খেলা করছে সুহার।

‘কি ব্যাপার কথা বলছো না যে? ওয়েট! তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? সিরিয়াসলি সুহা এতো দিন তো বকবক করে আমার মাথা খেয়ে ফেলতে এখন লজ্জায় কথা বলছো নাহ? ব্যাপার কি?’

‘কিছু না!’ ছোট করে উত্তর দেয় সুহা।

‘বাই এনি চান্স, তুমি কি আমার কথায় লজ্জা পাচ্ছো নাকি? তবে শুনে রাখো আমাকে দেখতে যতো টা ভালো মনে হয় আমি কিন্তু ততোটা ভালো নয়। লজ্জা পেয়ে লাভ নেই। আমাকে সারা জীবন সয্য করতে হবে তোমাকে। পারবে তো?’ দুষ্টু হেসে বলে মাহিন।

‘আব্ আমি রাখি আম্মু ডাকছে!’ আমতা আমতা করে বলে সুহা। মাহিন উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলে, ‘ঠিক আছে যাও! আর হ্যা স্বপ্ন কিন্তু আমাকে নিয়ে দেখো।’ শেষের কথাটা শীতল কন্ঠে বলে মাহিন। সুহা কোনো রকমে ‘গুড নাইট!’ বলে রেখে দেয়। এভাবেই মাহিন সুহার প্রণয়ের বিনিময় ঘটে। ❤️
_____________

মাগরিবের আজান পরেছে কিছুক্ষন আগে। অন্ধকারের ছেয়ে গেছে চারদিকে। গাড়িটা ঢাকা থেকে দূরে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। শুভ গ্রামে যাচ্ছে কেনো বুঝতে পারছে না মিহির। ইতিমধ্যে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলো কোথায় যাচ্ছে। প্রতিউত্তরে শুভ বলে, ‘তোমাকে বিক্রি করতে যাচ্ছি!’ মেজাজ তুঙ্গে উঠে আছে মিহির। কিন্তু আপাতত রাগ দেখিয়ে এমন সন্ধ্যার মোহনীয় দৃশ্য মিস করতে চাচ্ছে না সে। তাই চুপচাপ গাড়ির কাচ নামিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে সে। অনেকক্ষন পর একটা বিলের পাড়ে গাড়ি থামায় শুভ। মিহিরকে ইশারায় গাড়ি থেকে নামতে বলে নিজেও নেমে সামনে এগিয়ে যায়। মিহিরও চুপচাপ পিছু নিচ্ছে শুভর। কিছু সময় হাটার পর শুভ একটা ছোট চা’য়ের দোকানে এসে দাঁড়ায়। দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে বলে , ‘দাদু কেমন আছো?’

দোকানের ভিতরে থাকা ষাট কি পঁয়ষট্টি বছর বয়সের এক বৃদ্ধলোক শুভ দেখে উত্তেজিত হয়ে পরে।

‘বাবাজান! এতো দিনে দাদুর কতা মনে পরছে নি তোমার? আমি ভালা আছি। তুমার শরিল ডা ভালা নি?

‘জ্বী দাদু ভালো। আসলে আমি এতো দিন কানাডায় ছিলাম। এসেছি প্রায় মাস দুয়েক হবে।’ দোকানের সামনে থাকা সিটে বসতে বসতে বলে শুভ। মিহির তখনো দাঁড়িয়ে। সে বুঝতে পারছে না কিছুই।

‘এইডা কেডা? নাতবউ নি? তা নাতবউ তুমি কেরাম আছ? খারাইয়া আছ ক্যান বও এনে বও।’ শুভর পাশে বেঞ্চ দেখিয়ে বলে বৃদ্ধালোক। লোকটির মুখে নাতবউ শুনে বিষম খেলো মিহির। বলে কি ব্যাটা? বিস্ফোরিত চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে দেখে শুভ মুখ টিপে হাসছে। মিহির নিজেকে সামলে মিষ্টি হাসি দিয়ে বসে বলে, ‘জ্বী ভালো আছি দাদু। আপনি কেমন আছেন?’

‘হ আমিও ভালা আছি।’

‘দাদু! অনেক দূর থেকে আসছি তোমার চা খেতে তাড়াতাড়ি দাও তো!’ আহ্লাদী স্বরে বলে শুভ। মিহি আড় চোখে শুভর দিকে তাকায়। মনে মনে ভাবে কি ঢং দেখাইয়া কথা বলে দেখো, আস্তো ড্রামাবাজ।

‘মিহির! আমার মোবাইল টা গাড়িতে ফেলে এসেছি। ওয়েট আমি নিয়ে আসছি!’ বলে গাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে শুভ। মিহির চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ দোকানদার বলে উঠে, ‘নাতবউ তোমার ঘোষা ভাংছে তাইলে। আমার নাতিডারে কষ্ট দিও না। তুমি নাকি গেছিলা গা আমার নাতিরে ছাইড়া? তুমারে কত দিন রাইত এক কইরা বিছারছে নাতি। রাইতের বেলা আমার কাছে আইয়া মেলা কানতো তুমার লাইগা। আমার নাতি ডা তুমারে মেলা ভালবাসে নাতবউ। আগলাইয়া রাইখো জামাইরে। হা হা..!’

দোকানদারের কথায় মিহির রাস্তার দিকে এক পলক তাকায়। শুভ কি সত্যি আমাকে এখনো ভালোবাসে? আমাকে খুঁজেছিলো সে? আচ্ছা যদি এখনো ভালোবাসে তাহলে কি আমার ওর কাছে ফিরে যাওয়া উচিত? না কি ভাবছি আমি। কখনোই সম্ভব নাহ। আনমনে কথা গুলো ভাবছে মিহির। দোকানদার দুই কাপ দুধচা বানিয়ে দেয়। মিহির হাত বাড়িয়ে কাপ দুটো নিয়ে একটা শুভর জন্য বেঞ্চে রেখে আরেকটা নিজে খায়। আহঃ সেই চা টা! শুভ আসে প্রায় মিনিট সাতেক পর। এসে চা কাপ টা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষে বৃদ্ধা কে বিদায় জানিয়ে কিছু দূরে গিয়ে রাস্তা থেকে নিচে নেমে বিলের পাশ ধরে হাটতে থাকে তারা।

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here