অনুভবী_হিয়া,১৭,১৮,১৯

0
963

#অনুভবী_হিয়া,১৭,১৮,১৯
#মাইশাতুল_মিহির

১৭.

রাতে পড়ার টেবিলে বসে মিহির কলম কামড়াচ্ছে আর ম্যাথ আবিষ্কারক কে গালি শুনাচ্ছে। ম্যাথ কিছুতেই মিলাতে পারছে না। কি একটা জ্বালা। কে বলেছিলো ম্যাথ জিনিস টা আবিষ্কার করতে? আজাইরা থাইকা যখন পাগলা কুত্তার কামড় খায়।

বিরক্তির মাঝে যখন বিরক্তকর মোবাইলের আওয়াজ কানে আসে তখন রাগ আরো তুঙ্গে উঠে। নিশ্চয় মিতুর কাজ। মেয়েটা রাতের বেলায় কল দেয় খালি। মিহির মোবাইলের দিকে না তাকিয়েই কল রিসিভ করে বলে,

‘মিতুনির বাচ্ছা। এতো রাতে কথা বলতে ইচ্ছে করলে আদিল ভাই কে কল দে না। আমাকে ডিস্টার্ব করিস না। এমনিতেই বিকালে আম্মুর চিল্লানী, এখন আবার ম্যাথের প্যারা। ভাইটাও কাছে নাই বা’ল। পরে ভার্সিটিতে কথা বলবো বাই।’

‘মিহি ওয়েট! আমাকে কথা বলার সুযোগ তো দিবে!’ ব্যস্ত হয়ে বলে শুভ। মিহির চোখ বড় বড় করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আবার কানে মোবাইল রেখে বিস্মিত হয়ে বলে, ‘আপনি? এতো রাতে কল দিলেন কেনো?’

‘কেনো আমি কল দিতে পারি না। এতো রাত কোথায় মাত্র ১১ টা বাজে। দুই দিন অফিসে আসো নি কেনো?’

‘এমনি! আমার ইচ্ছে হলে যাবো না হলে না। আপনাকে কেনো বলতে যাবো?’ রুক্ষ কন্ঠে বলে মিহির।

শুভ অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে, ‘ বাহ্! আমার অফিসে আসবে যাবে আর আমি জানতে চাইবো না? আসো নি কেনো?’

‘বলতে বাধ্য নই!’

‘আগামীকাল আসবে নাহলে তোমার বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসবো। গট ইট!’ শেষের কথাটা আদেশ স্বরে বলে শুভ।

‘আসেন দেখি কত বড় সাহস আপনার। এমন আবার না হয় যে আমার বাসায় এসে আপনার মাথার থুলি টাই উড়ে যায়।’ বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো মিহির।

মিহিরের হাসি আওয়াজে শুভও মৃদু হাসে। আনমনে বলে উঠে, ‘আমাকে পুড়াতে ভালো লাগে তোমার? তোমাকে এক পলক দেখার তৃষ্ণনায় কাতরাচ্ছি মিহি। আমার এই উষ্ণ অলিঙ্গন বাহু শুধু তোমাকে জড়িয়ে ধরতে চাই। একটু গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে চাই। শুভর ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চাই তোমাকে মিহি। সেই সুযোগ টা কি আমার হবে না মিহি? দিবে না আমাকে এই অধিকার?’

মিহির নিরবতা পালন করছে। এই মুহূর্তে তার কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে আছে। শুভকে ঘীরে থাকা সকল অনুভূতি অনেক আগেই মুছে দিতে চেয়েছিলো। সেই অনুভূতি জাগরণে আর দ্বিতীয় বার সুযোগ দিবে না মিহির। সে তার ভাইয়ের মতের বিরুদ্ধে এবার যাবে না। কিছুতেই না।

‘আমাকে আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না মিহির?’ শান্ত স্বরে বলে শুভ। মিহির কিছু বলতে যাবে তার আগে দরজার পাশ দাঁড়িয়ে মাহিন বলে,

‘কিরে আসবো?’

মাহিনের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে মিহির বলে উঠে, ‘পারমিশন নেওয়ার কি আছে আসো!’

মাহিন মৃদু হেসে বলে, ‘তা ভাবুক কুমারী কি করছে?’

‘কিছু নাহ! তুমি সবসময় পারফেক্ট টাইমে আসো। এই মুহূর্তে তোমাকে ভিষণ দরকার ছিলো আমার!’

মিহির কান থেকে মোবাইল নামিয়ে কল কেটে দেয়। মাহিন এগিয়ে এসে বোনের পাশের চেয়ারে বসে।

অন্যদিকে মিহির কল কেটে দেওয়ায় মোবাইল স্বজোড়ে ফ্লোরে আছাড় দেয় শুভ। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। কে এই ছেলে? তাকে এতো রাতে কি দরকার মিহিরের? ভাবুক কুমারী বলার সাহস হয় কি করে ওর? মে:রে ফেলবো তাকে। জ্যা:ন্ত পু:তে ফেলবো! [শুভ বেচারার জন্য এক বালতি সমবেদনা ?]
_________

‘কি হয়েছে তোর?’ মিহিরের কাছ থেকে খাতা নিয়ে দেখতে দেখতে বলে মাহিন। মিহির আমতা আমতা করতে থাকে।

‘আমতা আমতা না করে বলে ফেল!’ বইয়ের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে মাহিন। মিহির ইতস্ততবোধ করে বলে, ‘ভাইয়া! ওই শুভ…” আর বলতে পারে না মিহির। মাথা নিচু করে ফেলে সে।

‘কিছু বলেছে তোকে? সত্যি করে বল? জানে মে:রে ফেলবো ব্লাস্টার টাকে।’ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে মুখ শক্ত করে বলে মাহিন।

‘না ভাইয়া আমাকে কিছু বলে নি। সরি বলছে আমাকে। মানে আরেকটা সুযোগ দিতে বলছে শুভ!’ মিন মিন গলায় বলে মিহির। ঘার কাত করে মিহিরের দিকে তাকায় মাহিন। মিহিরকে বুঝার চেষ্টা করছে সে। শান্ত স্বরে বলে মাহিন, ‘ভালোবাসিস?’

মিহির চোখ তুলে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে বলে, ‘নাহ!’

‘তো বাদ দে! এর চ্যাপ্টার ক্লোজ কর!’ স্বাভাবিক ভাবে বলে মাহিন।

‘একটু একটু খারাপ লাগে!’ ছোট গলায় মাথা নিচু করে বলে মিহির। মুখ শক্ত করে বলে মাহিন,’মায়া করে লাভ নেই মিহু। ওই ব্লাস্টার কে কখনোই মেনে নেবো না। আর জলদি রিজাইন কর।’

‘রিজাইন কেনো করবো?’ অবাক হয়ে বলে মিহির। বাঁকা হেসে মাহিন বলে, ‘তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু জানি না? তোর থেকে অনেক বেশি জানি আমি।’ অবাক হয়ে তাকায় মিহির। তার পর চোখ ছোট ছোট করে বলে মিহির, ‘গোয়েন্দাগিরি কি এবার বোনের সাথেও শুরু করে দিয়েছো নাকি?’

আওয়াজ করে হেসে ফেলে মাহিন। এক হাতে মিহিরের চুল এলোমেলো করে বলে, ‘যেদিন তোরা ঢাকা এসেছিলি সে দিন থেকেই তোর উপর আমার নজর ছিলো!’

চোখ ছানাবড়া করে ফেলে মিহির। অবাক স্বরে বলে, ‘তার মানে আমি যা যা করতাম তুমি সব জানতে?’

‘উহুম সব না। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস গুলা জানতাম!’

‘ওহ!’

‘আমার কুমিল্লা যেতে হবে ওখানে কাজ আছে।’

‘তোমার কি কুমিল্লার কাজ এ জীবনে শেষ হবে না?’ ভ্রুঁ কুঁচকে বলে মিহির। মাহিন চেয়ার হেলান দিয়ে আপন মনে বলে,

‘জন্মস্থানের প্রতি আলাদা এক টান থাকে মিহু! ওখানের মাটির ঘ্রান খুব করে কাছে টানে। এক অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা আছে সেখানে। আমার শেষ নিশ্বাস যেনো সেখানেই ফেলি!’

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১৮.

প্রভাতের স্নিগ্ধ বাতাস। শুভ্র শিউলি ফুল ফুটে চারদিকে বিলিয়ে দিচ্ছে শুভ্রতা। পাখির কিচিরমিচির, হালকা মৃদু মাতাল করা বাতাস, রাস্তায় পরে থাকা শিউলি কৃষ্ণচূড়া ফুল, রংবেরঙের স্নিগ্ধতার আহাজারি যেনো আজকের প্রভাতকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিচ্ছে। গায়ে পাতলা শাল পেচিয়ে ফুটপাত ধরে আনমনে হাটছে মিহির। ভোরের এই স্নিগ্ধতা উপভোগ করার পরম ইচ্ছা পোষণ করছে তার মন। বেনী করা চুল এক পাশে, বেবি হেয়ার গুলো উড়ে চোখে মুখে পরছে। হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা বাইক তুমুল বেগে ছুটে গেছে। মনে পরে যায় তার সেই দিনের কথা……


~ প্রায় চার বছর আগের কথা!

দিনটা ছিলো ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক তারিখের প্রভাত। সকাল ছয়টা বাজে বোধহয়। স্নিগ্ধতায় ভরা ভোরে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে সাদা থ্রি-পিসের সাথে হিজাব পরা এক মেয়ে। পাশে থাকা বান্ধুবীর সাথে কথোপকথনে মেতে আছে আর মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে খিলখিল করে হাসছে। হাতে থাকা পাথরের ব্যাসলেট ছিড়ে আওয়াজ করে রাস্তার মাঝে পরে যায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে পুথিগুলো। প্রিয় ব্যাসলেট পরে যাওয়ায় মন বিষন্ন হয় তার। পাথর গুলো অনুসরন করে রাস্তায় বসে কুঁড়োতে থাকে সে। একমনে পাথর হাতে নিচ্ছে যে এটাই তার একমাত্র কাজ। হঠাৎ মেয়েটির পাশে তুমুল গতিতে ব্রেক কষে একটি বাইক। মেয়েটি ভয়ে চোখ বন্ধ করে মুখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে।

বাইকে থাকা ছেলেটি বাইক থেকে নেমে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে, ‘ইউ স্টুপিড গার্ল! রাস্তার মাঝে কেউ বসে? এখন যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো?’

মুখ থেকে হাত সরিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তি টির দিকে তাকায় সে। মেয়েটির চেহারা দেখে স্থব্ধ হয়ে যায় ছেলেটি। কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেছে। মেয়েটির মায়াবী কাজল টানা চোখ, স্নিগ্ধতায় ভরা মুখ, হালকা গোলাপি ঠোঁটে লিপ জেল দেওয়ায় ঝিলিক দিচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে মেয়েটির মুগ্ধতায় পরে যায় ছেলেটি। চোখের পলক পরছে না তার। বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায় মেয়েটি।

‘দোস্ত, তুই ঠিক আছিস?’ পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির কথায় ভাবনার রেশ কাটে ছেলেটির।

‘ঠিক আছি!’ নরম গলায় বলে মেয়েটি।

মুগ্ধতা নিজের ভিতরে দমিয়ে রেখে বাহিরে গম্ভীরতা বজায় রেখে ছেলেটি বলে, ‘নাম কি তোমার? রাস্তার মাঝ খানে কি করছিলে?’

এবার বেশ বিরক্ত এসে পরে মেয়েটির মাঝে। ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠে, ‘আপনাকে কেনো নাম বলবো? এইভাবে কেউ বাইক চালায়? পারেন না যেহেতু বাইক চালাতে কে বলেছে? এটলিস্ট হর্ন তো দিবেন? আর কাকে আপনি স্টুপিড বলেছেন? আপনি নিজেই তো স্টুপিড ইডিয়ট ঘোড়ার ডিম। আসছে আবার আমাকে বলতে ননসেন্স কোথাকার।’

চুপচাপ কর্ণপাত করছে ছেলেটি। তার কাছে এই ঝাঁঝালো গলাও কেনো যেনো মিষ্টি মিষ্টি লাগছে। ইশ বুকের পাশে গিয়ে লাগে। উফফ!!

‘এই মিহু তাড়াতাড়ি আয় দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।’

মিহির একপলক রাগী চোখে ছেলেটিকে দেখে বান্ধবীদের সাথে চলে যায়। সকাল ছয়টায় প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো মিহির, মিতু, আয়না। যুবক স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে। ‘শুভ?’ আদিলের ডাকে খুশ আসে তার।

‘মামা সামথিং সামথিং!’ হেসে বলে রাহুল।

‘নাথিং নাথিং ব্রো!.’ আলতো হেসে বলে শুভ।

‘মেয়েটি মনে হয় এইদিক দিয়ে পড়তে যায়। হাতে বই ছিলো আবার সাথে মেয়ে গুলো।’ বলে সামির।

‘যাই বল মেয়েটা সুন্দর ছিলো!’ হেসে বলে রাহুল। শুভ রাগী চোখে তাকায় তার দিকে। ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলে রাহুল, ‘ভাই তোর টার দিকে নজর দেই নাই, পাশের টা রে বলছি।’ হেসে দেয় সবাই।

‘দোস্ত, এই মেয়েটার সম্পর্কে সব জানতে চাই!’ বাইকে উঠতে উঠতে বললো শুভ। ‘পেয়ে যাবেন জাঁহাপনা!’ এক সাথে বলে উঠে রাহুল আদিল সামির। তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় চার জন।
_________________

টং’য়ের দোকানে বসে আছে শুভ, সামির, রাহুল। অপেক্ষা করছে আদিলের জন্য। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আদিল এসে পাশে বসে তাদের। সবাই আগ্রহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আদিল ভাব নিয়ে কলার ঠিক করে চা খেতে শুরু করে।

আদিলের এমন ভাব দেখে বিরক্ত নিয়ে বলে সামির, ‘শা:লা ভাব মারিস পরে আসল কথা বল আগে।’

‘কোন কথা দোস্ত?’ না বুঝার ভান ধরে বলে আদিল। শুভ সাথে সাথে কাঠের বেঞ্চের উপরে থাকা নিউজপেপার আদিলের দিকে ছুঁড়ে মারে। আদিল হেসে বলতে শুরু করে,

‘মেয়েটির নাম মাইশাতুল জামান মিহির। এইসএসসি ক্যান্ডিডেট। আমাদের ভার্সিটির কলেজেই পড়ে। বাবা মার সাথে এখানকার শিমুলপাড়া (কাল্পনিক নাম) ৪ নাম্বার বাড়িতে থাকে। তাদের বাড়ি কোথায় এইসব জানতে পারি নি।’

‘এতোটুকুই যতেষ্ট ছিলো!’ বলে সামির। শুরু হয় চার বন্ধুর আড্ডা।

___________________

ক্লাস শেষে ফুচকার দোকানে বসে ফুচকা খাচ্ছে মিহির পাশে মিতু আয়না।

‘দোস্ত প্রচুর ঝাল রে!’ বলে আয়না। ঝালে হুহু করতে করতে বলে মিহির, ‘আরে ফুচকায় ঝাল না থাকলে ভালো লাগে না।’

হঠাৎ শুভ এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘হাই, আমাকে চিনতে পারছো?’

‘না তো! কে আপনি?’ প্রশ্ন করে মিহির। মিহির কথা শুনে কিছুটা অবাক হয় শুভ। তারপর শান্ত স্বরে বলে, ‘কয়েকদিন আগে রাস্তায় তুমি বাইকের সামনে এসেছিলে মনে নেই? ব্রেক না দিলে যে কি হতো। আরেকটুর জন্য বেঁচে গিয়েছিলে।’

খানিকটা বিরক্ত হয় মিহির। কড়া গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘হ্যা তো?’

‘আসলে তোমাকে খুঁজেছিলাম পাই নি। হঠাৎ এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি তখন তোমাকে দেখলাম।’

‘আমার জানা মতে আপনার কোনো জিনিস আমার কাছে নেই যে আমাকে খুঁজতে হবে! সামনে থেকে সরেন!’ ঝাঁঝালো গলায় বলে মিহির। শুভ কিছুটা ইতস্ততবোধ করে বলে, ‘আব্ আই’ম সরি!’

সরি বলার কারন বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কারন?’

‘ওইদিনের ঘটনার জন্য। আসলে সকালে রাস্তা ফাঁকা থাকে তাই ফ্রেন্ডরা মিলে রেস নিয়েছিলাম। এই জন্যে বাইক স্প্রিডে চালিয়েছিলাম আর তখনই… হুয়াট এবার আই’ম সরি!’

আড় চোখে তাকায় মিহির। কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে। শুভ দাঁড়িয়ে দেখছে মিহিরের যাওয়া। মিহির যেতেই আদিল সামির রাহুল আসে শুভর কাছে। পিছন থেকে রাহুল কাধে চাপড় দিয়ে বলে, ‘কিরে মামা টায়ার পাঞ্চার?’

‘তোর মাথা!!’

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১৯.

কলেজে সামনে মাঠে মানু্ষের ভীর দেখে অবাক হয় মিহির মিতু আয়না। কি হয়েছে দেখার জন্য ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় তারা। সামনে গিয়েই চোখ চাতক পাখির মতো বড় হয়ে যায় তিন জনের। কারণ দুইটা ছেলেকে মাঠের মাঝে ফেলে ইচ্ছে মতো হকিস্টিক হাতে নিয়ে পি:ঠাচ্ছে কয়েকজন। মিতু একজন কে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে এখানে?’

‘এই দুটো ছেলে কলেজের সামনে দুটো মেয়েকে বিরক্ত করছিলো তাই এদের মা:রছে ক্যাপ্টেন।’

ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলে মিহির। অস্পষ্ট স্বরে বলে, ‘ক্যাপ্টেন?’

‘হ্যা! ওই দেখো সবুজ শার্ট পরা ছেলেটা। নাম রাফিদ রায়হান শুভ। ভার্সিটির সিনিয়র। সবাই তাকে ক্যাপ্টেন বলে ডাকে।’

ছেলেটির কথা অনুসরন করে সামনে তাকায় মিহির মিতু। পিছ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। মুখ দেখতে পাচ্ছে না তারা। হঠাৎ মিতু মিহিরের হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।

‘কি হয়েছে? আস্তে ধর না ব্যাথ্যা পাচ্ছি!’ বিরক্ত নিয়ে বলে মিহির। আমতা আমতা করে বলে মিতু, ‘দোস্ত, ছেলে দুইটা কে দেখ। কালকে আমাদের যারা ডিস্টার্ব করেছিলো তারা।’

মিতুর কথা শুনে মিহির তাকিয়ে দেখে সেই ছেলে গুলো যারা কলেজ থেকে যাওয়ার সময় মিতু মিহিরকে বিশ্রী কথা বলেছিলো। মিহির এবার অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে।

সবুজ শার্ট পরা ছেলেটি ‘স্টপ!’ বলতেই মা:র থামিয়ে দেয় বাকি ছেলে গুলো। মাটিতে পরে থাকা ছেলে দুটোর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাটু তে ভর দিয়ে এক হাত হাটুতে রেখে বসে শুভ। চোখ মুখ শক্ত করে বলে, ‘হাউ ডেয়ার ইউ ডিস্টার্ব মাই গার্ল!’ ছেলে দুটি আতঙ্কে উঠে বলে, ‘ভাই মাফ করে দেন, আমরা জানতাম না ম্যাডামের কথা। মাফ চাই ভাই ছাইড়া দেন।’

বাঁকা হাসে শুভ। ঘাড় ঘুরিয়ে মিহিরের দিকে তাকায় সে। শুভ কে দেখে অবাক হয়ে যায় মিহির। আয়না বলে, ‘দোস্ত সেই ছেলেটা না যাকে তুই ধমক দিছিলি? এবার না তোরে মা:রে।’ মিহির ভয়ার্ত চোখে মিতুর দিকে তাকায়। শুভ হাতের ইশারায় মিহিকে কাছে ডাকে। মিহির কিছুটা ইতস্ততবোধ করে এগিয়ে শুভর সামনে দাঁড়ায়। শুভ মিহিরকে এক পলক প্রহর করে তাকায়। কলেজ ড্রেসের সাথে সাদা হিজাব পরে আছে মিহির। একদম শুভ্র পরী লাগছে তাকে।

কড়া চোখে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে শুভ, ‘Apology to her!’

ছেলে দুটি হুড়মুড় খেয়ে মিহিরের পায়ে ধরে বলে, ‘ম্যাডাম মাফ কইরা দেন। আমরা জানতাম না আপনি শুভ ভাইয়ের কেউ হোন। মাফ কইরা দেন।’

চোখ বড় বড় করে অস্থির হয়ে বলে মিহির, ‘আরে কি করছেন আমার পা ছাড়ুন।’

শুভ ছেলে দুটির কলারে ধরে উঠিয়ে থাপ্পড় দিতে দিতে বলে, ‘তোদের ছুতে বলেছি আমি? কোন সাহসে ওর পা ধরেছিস? আজ তোদের মে:রেই ফেলবো আমি।’ বলেই হকিস্টিক হাতে নিয়ে বেধম পেটাতে থাকে শুভ।

শুভর এমন আচরনে ভয় পেয়ে যায় মিহির। শরির কাপছে তার। মিতু আয়না পাশে এসে তাকে শক্ত করে ধরে দাঁড়ায়। একটা ছেলে মা:র নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পরেছে। আরেকটা ছেলের তো যায় যায় অবস্থা। তখনি সামির আদিল শুভকে আটকে বলে, ‘ভাই ম:রে যাবে। আর মা:রিস না।’

‘মে:রেই ফেলবো। ওদের সাহস কি করে হয় আমার মিহি কে টাচ করার।’ রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে শুভ। আদিল চোখের ইশারায় মিহির আয়না আর মিতু কে যেতে বলে। ইশারা পেতেই একপ্রকার দৌড়ে চলে যায় তারা তিন জন।

কলেজ গেটের বাইরে এসেই বুকে হাত দিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নেয় তিন জন। আয়না ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বলে, ‘দোস্ত লোকটা কত্ত ডেঞ্জারাস ভাইরে ভাই।’

‘আয়না একটা জিনিস খেয়াল করছিস?’ চিন্তায় মগ্ন হয়ে বলে মিতু। মিহির আয়না মিতুর দিকে ইচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকায়।

‘ওই লোকটা মেবি মিহিরের প্রতি ডেস্পারেট।’

মিহির বিস্মিত নয়নে তাকায় মিতুর দিকে। আয়নার মধ্যে যেনো কোনো ভাবান্তর নেই। আয়নাও সাঁই দিয়ে বলে, ‘এটা তো আমি প্রথমেই বুঝেছিলাম।’

‘মানে? কিভাবে?’ মিতু জিজ্ঞেস করলো।

‘প্রথম দিন যখন মিহির লোকটাকে কথা শুনাচ্ছিলো তখন কেমন মায়াভরা চোখে তাকিয়ে ছিলো মিহিরের দিকে। আমি ভাই চোখের ভাষা বুঝি। ফুচকা খাওয়ার দিন সরি বলতে আসাটা তো কেবল বাহানা ছিলো মাত্র। তাছাড়া ওনাকে মিহিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে প্রায় দেখতাম। তখন অনুমান করেছিলাম বাট সিউর তো আজকে হলাম যখন উনি মাই গার্ল বলেছিলো। আর দেখেছিস? মিহিরের পা ছুঁয়েছে বলে ছেলে দুটিকে কিভাবে মে:রেছে। মা:রতে মা:রতে আবার বলেছিলো আমার মিহি! ওয়াহ ব্রো ওয়াহ!’ বলেই হাই তুললো আয়না।

মিহির মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। কাদু কাদু স্বরে বলে, ‘কুত্তা আগে বলিস নি কেনো?’

‘বললাম তো অনুমান করেছিলাম আর আজ সিউর।’

‘ডেস্পারেট হলে হবে, আই ডোন্ট কেয়ার। এসব পাত্তা দেওয়ার টাইম আমার নাই। বাসায় যায় ভাল্লাগছে না এখানে।’

তিন বান্ধুবী তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।

_____________

ওই দিনের ঘটনার পর মিহিরের সাথে অনেকে কথা বলতে ভয় পায়। ছেলেরা তো তার দিকে তাকায়ই না। সবাই কেমন বড় ভাইয়ের বউ হিসেবে ট্রিট করে তাকে। সিনিয়র জুনিয়র সবাই ভাবি বলে সম্মোধন করে। মিহিরের এই সব বিরক্তি লাগে। তার উপর শুভর হুটহাট করা আজিব ব্যবহার যা মিহিরকে ভাবায়। এই যেমন লোক দিয়ে মিহিরকে ডেকে নিয়ে যায়, ক্যাম্পাসে তার পাশে বসিয়ে রাখে। আবার সবসময় কলেজ থেকে বাসায় যাবার সময় শুভ বাইক নিয়ে সামনে এসে বলে, ‘উঠো পৌছে দিচ্ছি।’

মিহির বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করলে শুভ বারন করে দেয়। বলে, ‘মামা চলে যান। বউ আমার রাগ করছে।’ মিহির শেষে একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাইকের পিছনে বসে। শুভ হেসে বলে, ‘ধরে বসো পরে গেলে ল্যাঙ্গড়া বউ কপালে জুটবে।’

‘আমি ঠিক আছি!’ ঝাঁঝালো গলায় বলে মিহির। শুভ ইচ্ছে করে জোরে বাইক স্টার্ট দেয় ফলে মিহির পরে যেতে নিলে শক্ত করে শুভর কাধ ধরে। আলতো হাসে শুভ। আবার কখনো বা ক্লাসে এসে সবার সামনে দিয়ে মিহিরকে নিয়ে যায়, রাস্তায় হাত ধরে হাটে, চুড়ি কানের দুল বিভিন্ন জিনিস কিনে দেয়। আবার মাঝ রাতে বাসার সামনে এসে মিহিরকে বারান্দায় আসতে বলে। শুভর এসব কাজ মিহিরকে ভাবায়, একসময় মিহিরের কাছেও শুভকে ভালোলাগা শুরু করে। শুভ মিহিরকে ‘মিহি’ বলে ডাকতো কারন সবাই মিহির মিহু ডাকে তাই সে মিহি ডাকে শুধু। এক সাথে সময় কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তারা। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার শুরু।

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here