#অনুভবী_হিয়া,২০,২১
#মাইশাতুল_মিহির
২০.
একদিন পুরো কলেজের সামনে শুভ মিহিরকে প্রপোজ করে বসে। মিহির কিছুক্ষন স্থব্ধ হয়ে থেকে রাজি হয়ে যায়। শুরু হয় এক প্রনয়ের প্রেমকাহিনী।
তারপর থেকে দেখা করা, রাত জেগে কথা বলা, বাইক দিয়ে ঘুরতে যাওয়া সব মিলিয়ে ভালোই চলছিলো তাদের দিনকাল।
রিলেশনের ৩ মাসে মাহিন কে সব জানায় মিহির। আসলে মাহিন মিহিরকে জিজ্ঞেস করলে মিহির সব বলে দেয় মাহিনের প্রথম রাগ হলেও পরে বোনের খুশীর কথা ভেবে চুপ হয়ে যায়। শুধু এতোটুকুই বলেছিলো মাহিন, ‘ওই ছেলে যদি তোকে ধোকা দেয় মিহু, আই সোয়ার মে:রে ফেলবো একদম।’
মিহির এইসএসসি পরিক্ষা দিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। শুভরা অনার্স ফাইনাল দিয়ে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। অনার্স ফাইনালের পর শুভর মধ্যে পরিবর্তন আসে। অবসর সময় কাটাতে ফ্রেন্ড, বিভিন্ন গ্রুপের সাথে ট্রিপে যায় সে, যার ফলে মিহিরকে সময় কম দেওয়া হতো তার। মিহির প্রথমে নিজেকে বুঝাতো কিন্তু সময়ের সাথে এই অবহেলা টা বাড়তে থাকে। মিহির কল দিলে ব্যস্ত বলে, ঘুরতে যাওয়ার কথা বললে শুভ বলে ফ্রেন্ডদের সাথে বাহিরে যাবে তাই পারবে না। সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরে রাতে ক্লান্ত শরির নিয়ে ঘুমিয়ে পরতো শুভ। যার জন্য রাতেও কথা কম হতো। এক সময় শুভর মাঝে বিরক্ত এসে পরে। মিহির শুভকে কল দিলে বিরক্ত হয়ে বলতো শুভ, ‘আমি ফ্রি হলে কল দিবো তো, বার বার কল করে ডিস্টার্ব করো কেনো?’ মিহিরের তখন কান্না পেতো। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলতো সে। মিহিরের বাবা ব্যবসার কাজে বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাহিরে থাকতো, মাঝে মাঝে মাঝরাতে আসতো।
শুভর এমন আচরনে তার বন্ধুরা বেশ বিরক্ত হয়ে যায় শুভর উপর।
‘মেয়েটা তোকে ভালোবাসে শুভ! তুই ওর সাথে এমন ব্যবহার করিস কেনো? একটু সময় তো চেয়েছে বেশী কিছু চায় নি।’ বলে আদিল। আদিলের কথায় শুভ বিরক্তি নিয়ে বলে, ‘আরে ভাই, আমি তো ওরই আছি অন্য কোনো মেয়ের সাথে তো যায়নি। ওকেই বিয়ে করবো আমি। ভালোবাসি মিহিকে। আর এখন লাইফ এঞ্জয় করার সময় ইয়ার। কিছু দিন পর বাবার ব্যবসায় বসলে সময় পাবি না আর। জাস্ট এঞ্জয় কর এখন।’
‘যখন থাকবে না তখন বুঝবা মামা। আছে তো এখন তাই কদর বুঝো না।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে সামির।
মিহির প্রায় কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যেতো। শুভর অবহেলা তাকে বড্ড পুড়ায়। মিহির অবস্থা দেখে মিহির মা রাশেদা বেগম জিজ্ঞেস করলে বলতো, ‘আম্মু পড়ার প্রচুর চাপ তাই এমন লাগছে।’
যখন তাদের সম্পর্কের প্রায় দুবছর হতে চলেছে তখন মিহির শুভকে কল দিয়ে বলে, ‘শুভ কালকে দেখা করতে পারবে? তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’ উল্লাসিত মুখে বলে মিহির।
‘মিহি কালকে আমি একটু ব্যস্ত। কাল বের হতে পারবো না। তোমাকে অন্য দিন ঘুরতে নিয়ে যাবো।’
‘তুমি সবসময় ব্যস্ত থাকো শুভ। আমার জন্য কি তোমার একটু সময় হয় না? সবার সাথে তো দিব্যি ঘুরে বেড়াও আমাকে একটা কল দিয়ে কিছুক্ষন কথা বলতে পারো না?’ নরম গলায় বলে মিহির। মিহিরের কথায় রেগে যায় শুভ। চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘কি বললে আমি সব সময় ব্যস্থ থাকি? তোমাকে সময় দেই না? রাতে বাড়িতে ফিরেই তো তোমাকে কল দেই। কি দেয় না? ঘুম থেকে উঠেই কল দেই তোমাকে। একটু কথা কম বলি বলে সময় দেয় না তোমাকে? ওকে ফাইন, আমি সবসময় ব্যস্ত থাকি তাহলে আমাকে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করো কেনো? দিও না আর কল, দিবো না তোমাকে সময়।’ বলেই কল কেটে মোবাইল বিছানায় ছুঁড়ে মারে শুভ। এমনিতেই বাবার সাথে রাগারাগি হয়েছে তার উপর মিহিরের এসব কথা রাগ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
শুভ কল কেটে দিতেই কান্নায় ভেঙে পরে মিহির। আগে তো শুভ এমন ছিলো না তাহলে এখন এমন করে কেনো? তাহলে কি শুভ আমাকে ভালোবাসে না? আমি কেবল তার মোহ ছিলাম?
পরের দিন মিতু মিহিরকে জোর করে বাহিরে নিয়ে যায় মন ভালো করার জন্য। তখন প্রায় বিকাল চারটা বাজে। ঘুরা শেষে কফিশপে যায় মিহির আর মিতু। কফিশপের ভিতরে গিয়ে শুভকে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখে মিহির। কেনো যেনো তার প্রচুর রাগ উঠে যায়, অন্য সময় হলে কেঁদে চলে যেতো কিন্তু আজকে রেগে শুভর সামনে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলে উঠে, ‘তুমি না আজকে ব্যস্ত থাকবে বলেছিলে? এই তোমার ব্যস্ততা?’
হঠাৎ মিহিরকে দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় শুভ। পরোক্ষণে শান্ত স্বরে বলে, ‘মিহি এটা রেস্টুরেন্ট আস্তে কথা বলো।’
মিহির দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বলে, ‘আগে বলো এখানে কি করছো তুমি?’
ইতিমধ্যে সবার নজর তাদের দিকে চলে এসেছে। মিহিরের চেঁচানোর আওয়াজে শুভ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বলে, ‘আমি যেখানে খুশি সেখানে যাবো তাতে তোমার কি? তোমাকে বলতে যাবো কেনো?’
‘অবশ্যই আমাকে বলতে হবে। মিথ্যে বলেছিলে কেনো তুমি?’
‘আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নয়!’ খাপছাড়া ভাব নিয়ে বলে শুভ।
‘তুমি বাধ্য, বাধ্য তুমি বুঝেছো? আমাকে টাইম না দিয়ে তুমি ওদের সাথে আড্ডা দিচ্ছো কেনো?’
‘মিহি তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো!’
‘বাড়াবাড়ি আমি করছি? বাড়াবাড়ি তো তুমি করছো শুভ। মিথ্যে বললে কেনো তুমি আমাকে?’
‘হ্যা বলেছি আমি মিথ্যে। কারণ তোমার সাথে দেখা করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই। বিরক্ত করো না আমাকে যাও এখান থেকে!’ রেগে বলে শুভ।
‘দেখা করার ইচ্ছে থাকবে কেনো এখন তো আমাকে আর ভাল্লাগে না তোমার, আমাকে বিরক্ত লাগে তোমার। করবো না আর বিরক্ত তোমাকে।’
‘মিহি চুপচাপ চলে যাও এখান থেকে। পরে কথা বলবো তোমার সাথে।’
‘পরে কেনো? যা বলার এখানেই হবে। তোমার এমন খাপছাড়া ভাব আমি নিতে পারছি না। সব সময় আমাকে ব্যস্ততা দেখিয়ে বন্ধুদের সাথে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছো। সত্যি করে বলো তো তুমি কি আদৌ রিলেশনটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছো?’
পুরো রেস্টুরেন্টের মানুষ আগ্রহ নিয়ে দেখছে তাদের। কিন্তু সে দিকে বিন্দু মাত্র ধ্যান কারোর।
শুভ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘হ্যা আমি ব্যস্ত থাকি কারন এইসব ফালতু ডেটিং ফেটিং করার মতো আজাইরা সময় আমার নাই।’
‘ভাই চুপ কর, বেশি বলছিস তুই!’ রেগে বলে আদিল। আদিলকে থামিয়ে মিহির বলে, ‘এতোই যখন ব্যস্ত তাহলে রিলেশন টা রেখেছো কেনো?’
বিস্মিত কন্ঠে বলে শুভ, ‘মিহি বাড়াবাড়ি করছো। রিলেশন রাখা না রাখা নিয়ে কথা উঠাচ্ছো কেনো?’
মিহির তার জেদ বজায় রেখে বলে, ‘তোমার এই ভাবলেশহীনের কারণে। রিলেশন টা নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে। তোমার গাছাড়া ভাব রিলেশন ভেঙে দিচ্ছে। এতোই যখন ব্যস্ত তুমি তো রিলেশন রেখো না।’
শুভ এবার রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে, ‘হ্যা যা যা! তোর মতো মেয়ের সাথে আমার রিলেশন করা সব থেকে বড় ভুল হয়েছে। ভুলেই গেছিলাম তুই আমার লেভেলের না। তুই যেমন তোর ম্যান্টলিটিও তেমন। লাইক থার্টক্লাস কালচার।’
‘শুভ তুমি আমাকে তুই করে বলছো?’ অবাক হয়ে নরম স্বরে বলে মিহির। শুভ ফের রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘হ্যা তুই করে বলেছি। তুই এটারই যোগ্য। একটু পাত্তা দিয়েছি বলে মাথায় উঠে যাস নি। তোর মতো মেয়েকে আসলে আমি ডিজার্ভই করি না। তুই আমার নখেরও যোগ্য না।’
‘শুভ তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো!’
‘করেছি বেশ করেছি। তোর মতো মেয়েকে এইভাবেই বলতে হয়। কখন থেকে বলছি পরে কথা বলবো না তুই তোর মতো প্যাঁচাল বাড়াচ্ছিস।’
‘শুভ! বাড়াবাড়ি হচ্ছে এবার। সরি বল!’ রেগে বলে রাহুল। শুভ রাহুলের দিকে তাকিয়ে মিহিরকে দেখিয়ে বলে, ‘সরি মাই ফুট। এই ফালতু থার্টক্লাস মেয়েকে কিনা আমি সরি বলবো? ও তো আমার যোগ্যই নয়!’
‘দুই বছর রিলেশনে এসে তোমার এখন মনে হচ্ছে আমি তোমার যোগ্য নয়? আমাকে তোমার থার্টক্লাস লেভেলের মেয়ে লাগছে?’ কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে মিহির।
‘হ্যা লাগছে। আমার জাস্ট তোমাকে বিরক্ত লাগছে, অসয্য লাগছে। সামনে থেকে যাও মাথা আর গরম করো না। পরে কথা বলবো যাও এখন!’
‘আমি যখন তোমার যোগ্য নয়, আমাকে যখন বিরক্ত লাগে তাহলে রিলেশন রেখে কি লাভ?’ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মিহির।
মিহিরের বার বার রিলেশন ভাঙ্গার কথা বলায় শুভ প্রচুর রেগে যায়। তাই রেগে শক্ত গলায় বলে ফেলে, ‘ওহ কাম টু দ্যা পয়েন্ট। যেখানে তোমার মতো থার্ট ক্লাস লেভেলের মেয়ে কে আমি ডিজার্ভ করি না সেখানে রিলেশন রেখে কি লাভ? ব্রেক’আপ! আজকের পর থেকে লজ্জা থাকলে আমাকে আর কল দিবি না।’ শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে শুভ।
‘মনে রেখো! সবার সামনে তুমি আমাকে অপমান করেছো। কখনো ক্ষমা করবো না তোমাকে। আসবো না তোমার সামনে।’ কান্নায় ভেঙে বলে মিহির।
‘আসিস না, তোর মতো মেয়েকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই। এখন এখান থেকে যা! গেট আউট!!’ চেঁচিয়ে বলে শুভ।
চলবে..!!
#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
২১.
মিহির আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে বেড়িয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। মিতু কড়া চোখে তাকিয়ে বলে, ‘ছিঃ আপনার মন মানসিকতা এতো নিচ আজকে না দেখলে জানতাম না। এমন একদিন আসবে যেদিন আজকের ঘটনার জন্য খুব আফসোস হবে, তখন মিহিরকে পাবেন না। তাকে সরি বলার সুযোগও পাবেন না।’ বলেই মিহিরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় মিতু। শুভ রেগে চেয়ারে ধপ করে বসে পরে। রাগে ফুঁসছে আর জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
‘আজকের কাজ টা তুই ঠিক করিসনি শুভ। মিহুকে এইভাবে বলা উচিত হয়নি তোর। তুই এতো টা নিচ ভাবতে পারি নি। রেগে গিয়েছিস বলেই কি এইসব বলতে হবে তোর? কিছু বলার নাই ভাই!’ বলেই সামির বেড়িয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। সামিরের পিছে রাহুল আদিলও বেরিয়ে যায়। আদিল যাওয়ার আগে বলেছিলো, ‘কাজ টা ঠিক করিস নি। এতো টা অপমান না করলেও পারতি।’
শুভ চোখ বন্ধ করে চুল খাঁমচে ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকে। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মিহি কে বারবার বলছিলো এখান থেকে চলে যেতে কিন্তু না গিয়ে উলটা পাল্টা কথা বলে রাগ উঠিয়েছে স্টুপিড মেয়েটা। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সেও বেরিয়ে যায়।
মিহির নীমতলায় বসে কান্না করছে। তার পাশেই মিতু বসে আছে। মিহিরের কান্না আর সয্য করতে না পেরে ধমক স্বরে বলে,’থামবি প্লিজ? যে লোকটা তোকে এতো কিছু শুনিয়েছে তাকে নিয়ে এতো কান্নার কি আছে? ভুলে যা ওকে। আজকের পর থেকে ওর সাথে আর যোগাযোগ করবি না। দেখি মোবাইল টা দে।’ বলেই মিহিরের কাছ থেকে মোবাইল সিম কার্ড ভেঙে ফেলে মিতু।
‘আঙ্কল আন্টির নাম্বার শুভর কাছে আছে?’
‘নাহ!’ ছোট করে বলে মিহির। মিতু মিহিরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট উল্টে বলে, ‘ইয়ায়ার আর কাঁদিস না আমারো কান্না পাচ্ছে। ভুলে যা প্লিজ।’
সারারাত কেঁদে কাটিয়েছে মিহির। কান্না করতে করতে চোখ ফুলে গেছে তার। চোখের নিচে কালি পরেছে। এমন না হলেও পারতো। অন্যদিকে রাতে শুভ বাড়ি ফিরে নি। সারা রাত গাড়ি নিয়ে যেদিকে চোখ গেছে সেদিকেই ড্রাইভ করেছে। ভোরে বাড়ি এসে দরজা লাগিয়ে লম্বা শাওয়াল নিলে কড়া পাওয়ারের ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।
পরের দিন সকালে মিহিরের বাবা রাহিম হাসান জানাই তাদের পাঁচ তালা বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে বিধায় তারা তাদের নিজেদের বাড়িতে শিফট করবে। তাই মিহির আর রাশেদা কে বলে কুমিল্লা গিয়ে কিছু দিন থাকতে। ওরা কুমিল্লা চলে গেলে মিহির বাবা নিজেদের মালামাল নতুন বাসায় নিয়ে সব গুছিয়ে স্ব-পরিবার সহ বাসায় উঠবে। রাহিম হাসান আর মাহিনের কথা অনুযায়ী মিহির রাশেদা দুপুরের দিকে নিজেদের সব জিনিস পত্র গুছিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কুমিল্লা যাওয়ার কথা শুধু মিতুকে জানায় মিহির।
কুমিল্লা যাওয়ার পর মিহিরের চোখ মুখ দেখে মাহিন কিছুটা আন্তাজ করতে পারে কিন্তু মিহির কে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সেখানে দু দিন পর রাতে মিহির ছাদে বসে ছিলো। মাহিন সেখানে বোনকে কান্না করতে দেখে জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘ভাইয়া আমাদের ব্রেক’আপ হয়ে গেছে। শুভ আমাকে ভালোবাসে না। একটুও না।’ কান্না করতে করতে ভাইয়ের বুকেই ঘুমিয়ে যায় মিহির। শুভর উপর প্রচন্ড ভাবে রেগে যায় মাহিন। পরদিনই ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয় মাহিন, সাথে সবুজ আর শান্তকে নিয়ে যায়।
পরপর চারদিন ধরে মিহির আর শুভর মধ্যে কোনো প্রকার যোগাযোগ হয় নি। শুভর এবার কেমন অশান্তি লাগছে। অন্য সময় হলে মিহির একদিন পরেই তাকে কল দেয় কিন্তু আজ চারদিন মিহির একটা কলও দেয় নি। এবার নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে শুভ। মিহির নাম্বারে কল দিয়ে বন্ধ পায় সে। হোয়াট’স এপ, ফেসবুক সব কিছু থেকে ব্লক দেওয়া। শুভর নিজের চুল টানতে ইচ্ছে করছে। কেনো সে ওই দিন নিজের রাগ দমাতে পারে নি। তখন রাত তখন ১০টা বাজে। মিহিরকে সরি বলতে হবে ভেবে আদিল সামির রাহুলকে কল দিয়ে বলে মিহিরের বাসায় গিয়ে ওকে সরি বলবে। প্রথমে রাহুল যেতে চাইনি শুভর সাথে। পরোক্ষনে শুভকে কড়া কথা শুনাই ওই দিনের জন্য। রাহুল যেতে রাজি না হলেও শেষে রাজি হয়।
রাত ১১:২৫!
মিহিরের বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালাচ্ছে সামির। পাশে শুভ, আদিল, রাহুল। ড্রাইভ করার সময় হঠাৎ একটা গাড়ির সাথে শুভদের গাড়িতে ধাক্কা লাগে। রেগে যায় সামির। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেই বলে, ‘চোখে দেখে গাড়ি চালাতে পারিস না?’
আদিল শুভ রাহুলও নেমে যায় গাড়ি থেকে। ওপর পাশের গাড়ি থেকে মাক্স পরা তিন জন ব্যক্তি নেমে পরে গাড়ি থেকে। এগিয়ে এসে সবুজ বলে, ‘হর্ন দেওয়ার পরেও কি তোদের কানে যায় না? তোদের লাইসেন্স দিয়েছে কে? নিশ্চয় মদ খেয়ে মাতলামি করে গাড়ি চালাচ্ছিলি।’
‘জাস্ট সাট আপ! কেন মদ খেয়েছে? পিঠের উপর দু চারগা পরলে ফুঁস হয়ে যাবে। এখন এখান থেকে কেঁটে পর।’ রেগে বলে শুভ। এইভাবেই কথা কাটাকাটি হয় তাদের মাঝে। মাহিন এতোক্ষন চুপ ছিলো কিন্তু এবার রাগ আর দমিয়ে রাখতে পারে নি। সোজা শুভর মুখের উপর ঘুষি দিয়ে এলোপাথাড়ি লাথি ঘুষি মা:রতে শুরু করে। ধস্তাধস্তির এক প্রর্যায়ে আশেপাশের কয়েকটা লোক এসে থামায় তাদের। ঘটনাস্থলে সবাই কম বেশি আহত হয়। আহত শুভ, আদিল, সামির আর রাহুলকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নিজেদের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে চলে যায় মাহিন রা।
গাড়িতে বসার পর সবুজ বলে, ‘ভাই কি দরকার ছিলো মারার। এমনি তে দুইটা থ্রে:ট দিলে চুপ হয়ে যেতো।’ সবুজের কথায় হেসে ফেলে শান্ত। মুখে মৃদু হাসি বিরাজ রেখে বলে, ‘সবুজ ভাই, মনের ক্ষোভ মেটাতে থ্রে:ট নয় আ:ঘাত করতে হয়।’ মৃদু হাসে মাহিন। আফসোস স্বরে বলে, ‘শা’লা ব্লা’স্টা’র কে মেরে ফেলিনি সেটায় অনেক।’ অবাক চোখে তাকায় সবুজ। শান্ত মুখে হাসি রেখে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
মাহিন সবুজ শান্ত মিলে রাহিম হাসানকে মালামাল নিয়ে নতুন বাসা গুছাতে সাহায্য করে। সব কিছু গুছিয়ে তারা তিন জন কুমিল্লার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। রাহিম হাসান ব্যবসায়ীক কাজে চট্টগ্রামে যাবে দুদিনের জন্য। তাই মাহিন সবুজ শান্তরা একাই কুমিল্লা চলে যায়।
শুভদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ হয় প্রায় ১৪ দিন পর। আরো আগে চলে যেতে চেয়েছিলো তারা কিন্তু বাবা মা দের জন্য পারে নি। আদিলের হাত আর সামিরের পা ভেঙে গেছে। তাদের হাত পা ঠিক হতে আরো মাস দেড় মাস সময় লাগবে। বাড়িতে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাহুলকে নিয়ে বেরিয়ে পরে শুভ।
মিহিরের বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে শুভ রাহুল। মিহিররা যেই বাসায় বাড়া থাকতো সেটা তিনতলা ছিলো। মিহিররা দ্বিতীয় তলায় থাকতো।
‘আয় দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করি।’ রাহুল দারোয়ানের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে। শুভও পিছে যায়। দারোয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আসসালামু আলাইকুম চাচা। এই বাড়ির দুই নাম্বার তলায় একটা অর্ধ বয়স্ক লোক স্ত্রী আর মেয়ে নিয়ে থাকতো। চিনতে পারছেন?’
‘ওলাইকুমসালাম। তুমরা হাসান ভাইজানের কতা কইতাছো? হেরা তো মেলা আগেই চইলা গেছে। হাসান ভাইজান নিজেদের বাড়ি কইরা ওইহানে গেছে গা আরো দশ দিন আগে।’ পান চিবুতে চিবুতে বলে দারোয়ান। শুভ স্থব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাহুল বলে, ‘চাচা কোথায় গেছে ওরা? ওদের নতুন বাড়ি কোথায় জানেন?’
‘হেইডা জানি না বাজান। লোকটা বহুত ভালা আছিলো। যাওনের আগে আমারে বকশিশ পাঁচ হাজার টেকা দিয়া গেছিলো। মাইয়া ডাও বহুত ভালা যাওনের আগে আমারে সালাম দিয়া গেছিলো।’
‘চাচা ওদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য কোনো নাম্বার বা কোনো ওয়ে আপনি জানেন?’ রাহুল বললো।
‘ না বাজান!’
আর কথা না বাড়িয়ে দারোয়ান কে বিদায় দিয়ে চলে যায় রাহুল শুভ। শুভ বাকশুন্য হয়ে আছে। মিহির চলে গেলো অথচ আমাকে একবারো জানালো না? জানাবেই বা কেনো ওই দিন যা ব্যবহার করেছিলাম এটাই আমার প্রাপ্য ছিলো। অজান্তেই চোখে জল এসে পরে শুভ।
______________
সামিরের বাসায় বসে আছে শুভ, আদিল, রাহুল। সব শুনার পর বিছানায় আধ শোয়া সামির রেগে দাঁত চিবিয়ে বলে, ‘ভালোই হয়েছে। মিহু না থার্ট ক্লাস মেয়ে তাহলে এখন কেনো ওকে খুঁজচ্ছিস? লজ্জা নেই তোর? কোন মুখে বলছিস মিহিরকে খোঁজার কথা? শা:লা সর আমার চোখের সামনে থেকে।’
শুভ অপরাধী ন্যায় চুপচাপ শুনছে সব। হঠাৎ মিতুর কথা মাথায় আসে তার। তারপর আদিলকে শুভ বলে, ‘তোর তো মিতুর সাথে কথা হয়? মিতুকে জিজ্ঞেস কর মিহির কথা প্লিজ।’
‘চুপ কর ব্যাটা, তোর জন্য মিতু এখন আমাকে কথা শুনাচ্ছে। বার বার বলছে আমিও নাকি তোর মতো, এমনিতেই দুইবার প্রপোজ করার পরও পিছে পিছে ঘুরতেছি তার উপর তোর এই কাহিনী এখন আমারে আরো পাত্তা দেয় না।’ বিরক্ত নিয়ে বলে আদিল।
চলবে..!