অনুভবী_হিয়া,২৫,২৬

0
703

#অনুভবী_হিয়া,২৫,২৬
#মাইশাতুল_মিহির

২৫..

‘প্রেম করা শেষ তাহলে?’

হাটতে হাটতে বলে শান্ত। মাহিন মৃদু হাসে শুধু। হঠাৎ সামনে চোখ যেতে থেমে যায় সে। শান্তও দাঁড়িয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় মাহিনের দিকে। ‘মাক্স পরে নে!’ বলে নিজে মাক্স পরে সামনে এগিয়ে যায় মাহিন। শান্তও মাক্স পরে পিছু নেয় তার। মাহিন বাড়ির গেইটের কাছে চারজন ছেলের সামনে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। শান্ত শুভদের এখানে দেখে অবাক হয়ে একবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে তাদের দিকে তাকায়। মাহিন হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১১:৪২! শুভর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে, ‘এতো রাতে এখানে কি করছেন আপনারা জানতে পারি?’

সামনে মাক্স পরিহিত দুজন যুবক কে দেখে শুভ কিছুক্ষণ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্পষ্ট দেখা না গেলেও কেমন চিনা চিনা লাগচে তার। তখন সামির ফট করে বলে ফেলে, ‘আসলে বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড রাগ করছে তাই তার রাগ ভাঙাতে এখানে এসেছি। আমাদের কোনো খারাপ মতলব নাই ভাই।’

শুভর থেকে চোখ সরিয়ে সামিরের দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকায় মাহিন। শুভ কটমট চোখে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সব সময় বেশি কথা না বললে হয় না তোর?’

শান্ত বলে, ‘মাঝরাতে নিশ্চয় কোনো ভদ্রঘরের ছেলেরা কারোর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে না। খারাপ মতলব আছে কিনা সেটা না হয় পুলিশ বুঝবে!’

‘না ভাই আপনারা ভুল বুঝছেন। আমরা চলে যেতামই।’ আদিল কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলে। মাহিন ঘাড় ঘুরিয়ে তিনতলায় মিহিরের বারান্দায় তাকায়। মিহিরের রুমের লাইফ অন করা দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তার। সামনে শুভর দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে, ‘নেক্সট টাইম যেনো এইদিকে না দেখি।’

স্বাভাবিক ভঙিতে শক্ত গলায় বলে শুভ, ‘থ্রে:ট দিচ্ছেন?’ মৃদু আওয়াজে হেসে ফেলে মাহিন। শান্ত এক কদম এগিয়ে বলে, ‘ ঠিক থ্রে:ট নয়। সাবধান করে দিচ্ছি। আসলে কি বলুন তো এইবার অক্ষত থাকলেও পরের বার থাকবেন না।’

এবার শান্তকে চিনে ফেলে শুভ। দুপুরেই তো এই ছেলে মিহিরের হাত ধরেছিলো। বুকে হাত গুঁজে শান্তর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে, ‘ আপনি খুব সাহসিকতা দেখিয়েছেন দুপুরে। এখন আমাকে এইসব বলার কারণ ভালো করেই বুঝতে পারছি। যত যাই হোক না কেনো মিহিকে আমি ছাড়বো না। সি ইজ মাইন।’ শেষের কথা গুলো দাঁত চেপে কড়া গলায় বলে শুভ। এবার মাহিন শুভর সামনে দাঁড়িয়ে শুভর কাধে এক হাত রেখে বলে, ‘কখনোই সম্ভব না মিঃ শুভ। ভালো চান তো নিজেই দূরে থাকুন। আপনাকে অনেক টলারেট করেছি কিন্তু এবার আর না। সাবধানে থাকবেন বলা তো যায় না কখন কি হয়। লাষ্ট একটা কথা, মিহু থেকে দূরে থাকবেন গট ইট?’ বলেই মাহিন শান্ত বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরে।

ওদের যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ। রাহুল এগিয়ে এসে বলে, ‘এই দুইজন ছেলে কে? দেখে তো মনে হচ্ছে মিহিরের কাছের কেউ নাহলে তোর কথা জানার কথা না।’

‘ভিলেন ভাই ভিলেন। মিহু আর শুভর প্রেম কাহিনীর ভিলেন এরা দুজন। পুরা বাংলা সিনেমার কাহিনী।’ হাই তুলতে তুলতে বলে সামির।

বিরক্ত নিয়ে বলে আদিল, ‘এই দুই উটকো ঝামেলা আবার কই থেকে টপকে পরলো বা*।’ সামির সিরিয়াস হয়ে বলে, ‘এদের পরিচয় না জেনে কিছু বুঝা যাবে না।’

রাহুল বলে, ‘ ভাই এরা যে থ্রে:ট দিয়া গেলো? দেখেতো মনে হচ্ছে বেশ কড়া এই দুই জন। আবার সত্যি সত্যি নি মেরে দেয়?’ রাহুলের মাথায় চাপড় দিয়ে সামির বলে, ‘চুপ কর শা:লা। সারা ভার্সিটি কাপিয়েছি আমরা। আর এখানে এই দুইজনকে কিনা টপকাতে পারবো না? এদের ভয়ে হাটু কাপাচ্ছিস? লজ্জা নেই তোর?’ তর্ক শুরু হয় তাদের মাঝে। কিন্তু শুভ চুপচাপ ড্রাইভিং সিটের পাশের সীটে বসে আছে। ভয় হচ্ছে তার। যদি কেউ তার মিহি কে তার থেকে কেঁড়ে নেয় তো? কিছুতেই সে মিহিকে ছাড়তে পারবে না।
______________

কেটে গেছে প্রায় সাপ্তাহ খানেক। শুভ আর ওর বন্ধুরা মিলে যতটুকু জানতে পেরেছে তা হলো এই দুজন ছেলে মিহিরের ভাই হয়। একজন আপন ভাই মাহিন আরেকজন কাজিন শান্ত। এর বেশি কিছু জানা সম্ভব হয় নি তাদের। কৃষ্ণতলায় বেঞ্চে বসে আছে সবাই। সামির শুভর উদ্দেশ্যে বলে, ‘মিহুর বড় ভাই আছে সেটা তো কখনো বলিস নি।’

শুভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘আমি শুধু জানতাম মিহির একজন ভাই আছে আর সে কুমিল্লাতে থাকে। এর বেশি কিছু মিহি বলে নি আমারও জানা হয় নি!’

ঝাঁঝালো গলায় বলে রাহুল, ‘তোকে শা:লা আসলেই থা:প্রাইয়া চান্দের দেশে পাঠানো উচিত। দুই বছর প্রেম কইরা এটাও জানতে পারোস নাই মিহুর ফ্যামিলি তে কে কে আছে? ধিক্কা ভাই ধিক্কা!’ শেষের কথাটা চোখ মুখ কুঁচকে বলে সে। বিরক্ত হয়ে মুখে ‘চ’ উচ্চারণ করে তাকায় শুভ। হতাশার ভঙিতে বলে আদিল, ‘মিহুর বড় ভাই তো ওই দিন রাতে বললো মিহুর থেকে দূরে থাকতে। আমার মনে হয় না উনি সহজে মেনে নিবে। উনাকে রাজি করাতে বহুত কাঠখড় পুড়াতে হবে ভাই।’

সামির বলে, ‘তুই বরং মিহুকে কনভেন্স করার ট্রায় করতে থাক। দেখ কি হয়!’

শুভ জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শীতল গলায় বলে, ‘মিহির সাথে গতকাল কথা বলেছিলাম। মিহি তার সিদ্ধান্তে অনড়। তার মা ভাই যাকে বলবে তাকেই নাকি বিয়ে করবে। ভালোলাগছে না আমার!’ বলেই মাথা নিচু করে দুই হাত দিয়ে চুল মুঠ করে ধরে।

হঠাৎ রাহুল দাঁড়িয়ে বলে, ‘দোস্ত, মিহুর ভাইয়ের সাথে যদি আমরা কথা বলি তো? মানে উনাকে যদি রাজি করানোর চেষ্টা করি। বুঝিয়ে বললে নিশ্চয় বুঝবে।’ রাহুলের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলে সামির, ‘রাহুল ঠিক বলেছে। এবার প্রেম নয় ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিবি ইয়ার!’

আদিল বলে, ‘কিন্তু প্রথমে মিহুর ভাইয়ের সাথে কথা বলবে কে?’

হঠাৎ চকচকিয়ে রাহুলের দিকে তাকায় সবাই। রাহুল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। পরোক্ষনে নিজেকে সামলে অস্থির হয়ে আপত্তি জানিয়ে বলে, ‘ভাই আমি নাই। আমারে দিকে তাকাইয়া লাভ নাই। আমি কিছুতেই পারমু না।’
________________

মাহিনের সাথে গল্প করতে তার রুমে গিয়ে দেখে রুম ফাঁকা, ওয়াশরুম থেকে আওয়াজ আসছে। তাই বিছানায় বসে ভাইয়ের অপেক্ষা করছিলো মিহির। তখন মাহিনের কল আসায় মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ‘সুহারানী’! অবাক হয়ে যায় মিহির সাথে খুশিও হয়। মাহিন ওয়াশরুমে থাকায় কল রিসিভ করে কানে দিতেই ওপরপাশ থেকে ভেসে আসে এক মেয়ের মিষ্টি কণ্ঠস্বর। মিহির মুচকি হেসে বলে, ‘কেমন আছো ভাবি? আমি তোমার একমাত্র ননদ হই বুঝেছো?’

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় সুহা। ভাবি ডাক শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে। ছোট করে উত্তর দেয়, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন আপু?’

‘আমিও ভালো আছি। আমাকে তুমি করে বলতে পারো সমস্যা নেই। ইউ নো হুয়াট? ভাবি ননদের তুমি সম্পর্ক সব থেকে বেষ্ট।’ উল্লাসিত কন্ঠে বলে মিহির। সুহা হেসে উত্তর দেয়, ‘জ্বি আচ্ছা!’

‘আচ্ছা ভাবি, আমার এই গম্ভীর প্রকৃতির ভাইটা…” বাকিটা বলার আগেই মাহিন মোবাইল কেড়ে নেয়। মিহিরের মাথায় চাপড় দিয়ে বলে, ‘বেয়াদপ! মোবাইল ধরেছিস কেনো?’ মিহির অস্থির হয়ে বলে, ‘আহ ভাইয়া মোবাইল দাও ভাবির সাথে কথা বলবো।’

মাহিন মিহিরকে চোখ পাকিয়ে মোবাইল কানে রেখে ‘পরে কথা বলছি!’ বলেই কল কেটে দেয়। দুই ভাইবোনের কথা শুনে লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেছে সুহা। ভাবতেই অবাক লাগছে তার ননদ তারই মতো মিশুক। বিয়ের পর বেশ ভাব জমবে তাদের।

মোবাইল টেবিলের উপর রেখে আয়নার সামনে দাঁড়ায় মাহিন। আড় চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে চুল ঠিক করতে থাকে। মিহির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ নাচিয়ে বলে, ‘কি ভাই? আম্মুকে বলবো?’ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে মাহিন, ‘বেশি বুঝিস না!’

ভাব নিয়ে বলে মিহির, ‘হ্যা হ্যা বেশি বুঝি। ভাবির নাম কি?’ স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয় মাহিন, ‘সুহা!’

‘নামটা চেনা চেনা লাগছে খুব।’

‘এটা তো কমন নাম শুনতেই পারিস!’

‘ভাবির সাথে দেখা করাবে ভাইয়া?’ অনুনয় স্বরে বলে মিহির। ভ্রুঁ কুঁচকে বলে মাহিন, ‘ভাবি ভাবি করছিস কেনো? বিয়ে হয়েছে নাকি?’

মেকি হাসি দিয়ে বলে মিহির, ‘হয়নি তবে হবে তো? আমি তো ভাবি বলেই ডাকবো। বলো না কবে দেখা করাবে? বাড়িতে এনো একদিন।’ মাহিন মৃদু আওয়াজে হেসে বলে, ‘দেখাবো একদিন। এখন বের হবো।’ মিহিরও তাড়াহুড়ো করে বলে, ‘আমিও যাবো, আমাকে লাইব্রেরী তে দিয়ে আসো।’

‘তৈরি হয়ে আয়!’ বলে বেড়িয়ে গেলো। মিহির তৈরি ছিলো বিধায় সেও বেড়িয়ে গেলো।

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

২৬.

‘ব্রেকিং নিউজ……
বাংলাদেশের বড় বিজনেসম্যান বিআইবি কোম্পানির মালিক মিঃ হোসাইন কবির হার্ট এট্যাকে মা:রা যায় নি। উনার স্ত্রী মিসেস হোসাইন সম্পত্তির লোভে উনার শরিলে বিষাক্ত পদার্থ পুঁশ করে মা:র্ডার করে। এই মামলার তদন্ত করে রহস্যভেদ করেন উজ্জ্বল আহসান।’

‘মিঃ উজ্জ্বল আহসান এই মামলার ব্যাপারে যদি আপনি কিছু বলতেন!’ রিপোর্টার।

ক্যামেরা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিপোর্টার দের সামনে হাসিখুশি মুখে উত্তর দেয় উজ্জ্বল আহসান, ‘ব্যাপার টা প্রথমে এমন ছিলো যে মিঃ হোসাইন কবির হার্ট এট্যাকে মা:রা যান। কিন্তু আমরা তদন্ত করতে জানতে পারি ডে:ডবডির পোস্ট:মর্টেমে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয় এবং আসল কালপ্রিট হলেন উনার স্ত্রী মিসেস হোসাইন। এই তদন্তে আমাকে সাহায্য করেছিলো ডিপার্টমেন্টের সদস্য এমআর হাসান এবং এসআর আরাফ। সমস্ত ক্রেডিট অবশ্য তাদের। ক্যাসের ইনভেস্টিগেশন করতে তারা দুই জন আমাকে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করেছিলো।’

‘স্যার এই এমআর হাসান এবং এসআর আরাফের আসল পরিচয় কি? তারা সবার সামনে আসে না কেনো? তবে কি আমরা ধরে নিবো তারা দুইজন মানুষ রুপে দেবদূত মতো আমাদের সাহায্য করতে এসেছে? আপনার অভিমত কি জানাবেন!’ রিপোর্টার।

‘তারা দুই জন সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে আমাদের সাথে কাজ করছে। সময় হলে তারা দুইজন ক্যামেরার সামনে এসে নিজেদের পরিচয় দিয়ে আমাদের সকল প্রশ্নের জবাব দিবে। সময় হোক সব জানতে পারবেন। আশা করি আপনাদের সবার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।’
……………

দুপুরে লাইব্রেরী থেকে ফিরে টিভির সামনে বসে নিউজ দেখছিলো মিহির। আনন্দে আত্মহারা সে। এরা আর কেউ না তার দুই ভাই ভেবেই গর্বে মন ভরে যাচ্ছে। পাশে বসে পেয়াজ ছিলছে রাশেদা বেগম। মুখের পপকর্ন শেষ করে এক চুমুকে পানি খেয়ে রাশেদার উদ্দেশ্যে বলে, ‘আম্মু নিউজ টা দেখেছো?’

রাশেদা দির্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘দেখেছি। সার্থ্যের জন্য মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে।’

‘হুম! তবে যারা কেসটার ইনভেস্টিগেশন করেছে তারা বুদ্ধিমান বটে। কি বলো?’

‘হ্যা! এই দুইজনের সম্পর্কে আমি আরো নিউজ দেখেছি। বেশ বুদ্ধিমান! ওদের আল্লাহ সুস্থ রাখুক দো’য়া করি।’

রাশেদার কথা উল্লাসিত হয়ে বলে মিহির, ‘আচ্ছা আম্মু ভাইয়া যদি সিক্রেট এজেন্ট হয় তাহলে কেমন হবে বলো তো?’ আড় চোখে বলে মিহির।

বিব্রত হয়ে বলে রাশেদা, ‘কখনো না। এদের জীবন অনেক রিক্স। আমি আমার ছেলের কোনো ক্ষতি হোক চাইবো না। মাহিনকে এইসব পুলিশের কাজের ধারে কাছেও যেতে দিবো না।’

‘কেনো আম্মু পুলিশ রা তো আমাদের প্রোটেক্ট করার জন্যই কাজ করে। এই দেখো ওরা যদি এমন রিক্স না নেয় তো সত্তিটা আমরা কিভাবে জানবো বলো তো?’

রাশেদা তার কথায় অনড়। নিজ সিদ্ধান্তে অটুট থেকে বলে, ‘যারা রিক্স নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য দো’য়া করি। কিন্তু মাহিনকে আমি এসবের সাথে জড়াতে দিবো না।’

‘কিন্তু আম্মু?’

‘কোনো কিন্তু নয়। বেশি কথা আমর পছন্দ না তুই জানিস মিহু!’ শক্ত গলায় বলে পেঁয়াজের প্লেট হাতে নিয়ে চলে যায় রাশেদা। মায়ের দিয়ে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মিহির।

ঠোঁট কামড়ে মনে মনে আফসোস করে মিহির। যেখানে তার ভাই অলরেডি সিক্রেট এজেন্ট সেখানে তার মা এসবের ধারের কাছেও যেতে দিবে না। যেদিন সত্তিটা জানতে পারবে সেদিন যে কি হবে ভেবেই ধীর্ঘশ্বাস ফেলে মিহির।
___________

অন্যদিকে ইউকে অবস্থিত এক যুবক নিউজটি দেখার পর কাঁচের টি টেবিলের উপর থাকা ফ্লাওয়ার বেজ স্বজোরে ভেঙে ফেলে। রাগে তার শরির মৃদু কাঁপছে। কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে আছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ তার। কপালে পরে থাকা কালো সিল্কি চুল গুলো হাত দিয়ে পিছে ঠেলে হুংকার দিকে ডাক দেয় গার্ডদের। গার্ডরা ভয়ে ভয়ে তার সামনে দাঁড়ায়।

যুবক রক্তচক্ষু নিয়ে শক্ত গলায় বলে, ‘এমআর হাসান আর এসআর আরাফের সম্পর্কে সম্পূর্ণ বায়োডাটা চাই আমার। যতদ্রুত সম্ভব সব ডিটেইলস চাই আমার। খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে ব্যাক করবো আমি। হারি আপ!’

গার্ডরা সম্মতি দিয়ে কাজের জন্য বেড়িয়ে যায়। দেড়ি হলে তাদের কেউ আস্তো থাকবে না। গার্ডরা চলে গেলেও রাগ কমেনি তার। রাগে মাথায় রক্ত টকবক করছে। এতো রাগ কখনো উঠেনি তার।

প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে থাইগ্লাসের সামনে দাঁড়ায় জিহান। ফোনের রিংটোন বাজতে রিসিভ করে কানে দেয় সে। অপর পাশের ব্যক্তি কিছু বলতেই বলে, ‘ডোন্ট ওরি, যতদ্রুত সম্ভব আমি বাংলাদেশে ব্যাক করবো। যারা আমার মম কে জেলে নিয়েছে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না।’ বলেই কল কেটে দেয় সে। মনে মনে কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে সে। শেষ করে দিবে সবাইকে।
_______________

পাশাপাশি ক্যাফে বসে আছে মাহিন সুহা। মাহিনের ঠিক সামনের সিটে সুহা। গালে হাত দিয়ে থেমে থেমে কোল্ড কফিতে চুমু দিচ্ছে। প্রেমিক পুরুষের সাথে ঘুরতে এসেও যদি দেখে প্রেমিক কাজে ব্যস্ত হয়ে ফাইল ঘাটে তাহলে কার ভালো লাগে! সুহা দুই গালে হাত রেখেই বলে, ‘আপনি বরং এক কাজ করুন। আপনার এই প্রফেশন কেই বিয়ে করে ফেলুন। মাঝখান থেকে আমি আপনাদের কাবাব মে হাড্ডি না হয়।’

হাতে থাকা ফাইলের দিকে তাকিয়েই মৃদু আওয়াজে হাসে মাহিন। সুহার দিকে তাকিয়ে দেখে গালে হাত রাখার কারনে ঠোঁট গুলো ফুলে আছে। একদম কিউটের ডিব্বা লাগছে। মুচকি হেসে চেয়ারে গা এলিয়ে বলে, ‘এদের বিয়ে করে তো আর লাভ নেই আদর করা যাবে না, রাতে কোলবালিশও বানানো যাবে না। বউ তো তোমার মতো হওয়া উচিত যার টসটসে টমেটো সাইজ গাল গুলোতে টুস করে চুমু দেওয়া যায়।’ সুহা কফি মুখে দিচ্ছিলো মাহিনের এমন লাগামহীন কথায় বিষম খায়। অস্ফুটিত গলায় বলে, ‘আপনি দিন দিন অসভ্য হচ্ছেন। মুখে কিছুই আটকায় না। একদম লাগামছাড়া লোক।’

আওয়াজ করে হেসে ফেলে মাহিন। মুখে হাসি রেখেই বলে, ‘তোমার এই লজ্জা মিশ্রিত মুখখানা দেখার জন্য যদি আমাকে লাগামছাড়া হতে হয় তো আমি তা সাধরে গ্রহণ করবো!’ সুহা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসে আছে। লজ্জায় যেনো লাল নীল বেগুনী হওয়ার উপক্রম। মাহিন টেবিলে দুই হাত রেখে বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে, ‘সারাদিন বকবক করা মেয়েটা এমন সামান্য কথায় লজ্জাবতী গাছের মতো লুকিয়ে যায়! ভাবা যায় এগুলা??’

সুহা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে, ‘কি বললেন? আমি সারাদিন বকবক করি?’ মাহিনের টনক নড়লো বোধহয়। এইকথা টা বলা উচিত হয়নি। ভাগিনী এবার ক্ষেঁপে যাবে। ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘না না একদম না। তুমি সারাদিন বকবক কেনো করবে? !’

‘আমি বেশি কথা বলি তাই না? আমার কথা গুলো আপনার বকবক লাগে? ওকে ফাইন এখন থেকে আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার। সাময়িক ব্রেক’আপ!’ বলেই ব্যাগ হাতে নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে যায় সুহা। মাহিম অসহায় হয়ে বিল পে করে ফাইল হাতে সুহার পিছে পিছে যাচ্ছে।

মুখ কালো করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুহা। তার পাশেই মাহিন। এক হাতে মাথার পিছের চুল গুলো খানিক্ষন চুলকে বলে, ‘সুহারানী! রাগ করো কেনো? কথা বলো আমার সাথে। তুমি কথা না বললে ভালো লাগে না তো।’ সুহা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়। আজ সে কথা বলবে না বলেই পণ করেছে। মাহিন রাস্তার ওপর পাশে হাওয়াই মিঠাই দেখে সেখানে গিয়ে পাঁচটি হাওয়াই মিঠাই আনে। সব গুলো সুহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘হাওয়াই মিঠাই’য়ের মতো ব্যানিশ হয়ে যাক আমার সুহারানীর রাগ। তুমি না আমার না হওয়া বাবুর আম্মু? রাগ করো না প্লিজ.!!!’

মাহিনের এমন বাচ্ছামি তে ফিক করে হেসে ফেলে সুহা। সত্যি হাওয়াই মিঠাই’য়ের মতোই ব্যানিশ হয়ে গেছে সব রাগ!

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here