অনুভবী_হিয়া,২৭,২৮

0
857

#অনুভবী_হিয়া,২৭,২৮
#মাইশাতুল_মিহির

২৭.

কেবিনে এক প্রকার বিরক্ত নিয়ে বসে ফাইল ঘাঁটছে মিহির। ঠিক বসে আছে না জুরপূর্বক বসিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। সামনের চেয়ারে বসে টেবিলে ভর দিয়ে দুই গালে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে শুভ। এই জীবনে এমন অস্বস্থিতে কখনোই পরেনি মিহির। সকালে অফিসে এসেই কিছু ফাইল চেক করে শুভর কেবিনে দিতে এসেছিলো সে। ব্যাস! নিজে না এসে যদি রায়হান কে পাঠাতাম। উফ কেনো যে আসতে গেলাম। বেলা সাড়ে ১২টা বাজে। ভিতরে রাগ দমিয়ে শান্ত গলায় বললো মিহির,

‘শুভ! এই নিয়ে ছয় থেকে সাত বার ফাইলটা চেক করেছি। সব এমাউন্ট ঠিক আছে কোথাও ভুল নেই। আপনি আর একবার চেক করে দেখেন।’

‘উহুম!’ গালে হাত রেখেই ছোট করে উত্তর দিলো শুভ।

‘উহুম মানে কি? ফাইলে কোনো ভুল নেই। বাহানা দিয়ে আপনি ইচ্ছে করে আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছেন তাই না?’ রেগে ঝাঁঝালো গলায় বললো মিহির। মিহিরের কথা যেনো শুভর কানে যায় নি আগের মতোই বসে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

‘সমস্যা কি আপনার? এইভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেনো? জীবনেও মেয়ে মানুষ দেখেন নি?’ বিরক্ত নিয়ে বললো মিহির। শুভ আগের মতোই ভাবলেশহীন ভাবে নেশাক্ত গলায় বললো,

‘মেয়ে দেখেছি কিন্তু তোমার মতো সুন্দর অপ্সরী কাউকে দেখিনি। তোমাকে আজীবন দেখলেও মন ভরবে না। তোমার এই চোখের চাহনি বার বার আমাকে গায়েল করে।’

শুভর কথা শুনে মিহিরের গায়ে শীতল হাওয়া শিরা উপশিরায় বয়ে গেলো। শুভর এই নেশাক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাধ্য তার নেই। চোখ নামিয়ে নেয় মিহির। নিরবতায় চলে যায় কিছুসময়।

‘মিহি?’

চোখ তুলে শুভর দিকে তাকায় মিহির। তখন শুভ আহ্লাদী কন্ঠে বলে, ‘তুমি এতো কিউট কেনো? লাইক রেড স্ট্রবেরী। একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।’ রসগোল্লার মতো চোখ করে তাকাই মিহির। খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আপনা আপনি মুখ থেকে বের হয়ে আসে, ‘অসভ্য।’

‘অসভ্যের হবু বউ।’ বলেই জুড়ে জুড়ে হাসে শুভ। হাসলে তার ডান গালে ছোট একটা টুল পরে। যা মিহির খুব পছন্দ। সেই টুল পরা হাসির দিকে তাকিয়ে আনমনে মুচকি হাসে সে।
______________

লাইব্রেরী তে কাচুমুচু হয়ে বসে আছে রাহুল আর সামির। তাদের ঠিক সামনে বসে আছে মাহিন। বইয়ের পাতায় মুখ ডুবিয়েও তাদের আড় চোখে প্রখর করছে মাহিন। রাহুল সামির কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না। গলা ঝেড়ে বলে মাহিন, ‘কিছু বলার থাকলে নির্ধিদায় বলতে পারেন।’

সামির ঠোঁটে হাসি টেনে এক আঙুলে থুতনি চুলকে বলে, ‘আসলে ভাইয়া আমরা কিছু বলতে এসেছিলাম। আমাদের তো চিনেনই। মানে হচ্ছে..’ সামিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই মাহিন বাঁকা হেসে বলে, ‘বন্ধুর হয়ে উকিলাতি করতে আসছেন?’ সামির কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। পরোক্ষনে নিজেকে সামলে বলে, ‘আসলে ব্যাপার টা তেমন না আবার এমনি। কিভাবে বুঝাই বুঝতেছি না। সরাসরি বলে ফেলি রাগ করবেন না ভাই। শুভ মিহিরকে অনেক ভালোবাসে। আমরা চাই ওরা এক হয়ে যাক। আর সেটা ফ্যামিলি থেকে পারমিশন নিয়েই।’

রাহুলও সম্মতি দিয়ে বলে, ‘হ্যা ভাই! ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে তো আমরা বাধা দেওয়ার কে বলুন? ওরা হ্যাপি থাক এটাই তো চাই তাই না।’

মাহিন চেয়ারে গা এলানো অবস্থায় থুতনিতে হাত রেখে স্বাভাবিক ভাবে বলে, ‘আমি যতটুকু জানি মিহু শুভকে ভালোবাসে না!’ সামির বললো, ‘মিহু ভালোবাসে সেটা খুব ভালো করেই জানি আমরা। আপনি রাজি থাকলেই সে সম্পর্কে এগোবে।’

রাহুল পারে না হাত জুর করে বলে, ‘ভাইয়া প্লিজ রাজি হয়ে যান। আপনি যা বলবেন আমরা তাই করবো। না করবেন না প্লিজ!!’

মাহিনের এবার হাসি পাচ্ছে। বয়সে বড় ভাইদের সামনে নিজেকে এভাবে দেখে হাসিতে তার লুটিয়ে পরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তা মনে দমিয়ে রেখে বাহিরে গম্ভীর্য বজায় রেখে বলে, ‘একটা প্রভাত আছে – যার বিয়ে তার হুশ নাই পাড়াপড়শির ঘুম নাই! যাই হোক, ভেবে দেখবো। আমি আমার বোনের মুখে হাসি দেখতে চাই। কেউ মিহুকে কষ্ট দিলে তার জান কেড়ে নিতে দ্বিতীয় বার ভাববো না। মনে রাখবেন কথাটা!’ বলেই বেরিয়ে যায় সে।

সামির রাহুল একে অপরের মুখে চাওয়া চাওয়ি করছে। রাহুল অসহায় ফেসে বলে, ‘ভাই তো নয় যেনো বাংলা মুভির নিশা। আসলেই শুভর কপাল পুড়া।’
_______________

আরএস কোম্পানি বড় একটা প্রজেক্ট পেয়েছে যার জন্য কোম্পানির স্টার্ফ এমপ্লয়দের নিয়ে ছোট খাটো একটা বার্বিকিউ পার্টি হবে। পার্টি সাধারনত অফিসেই সন্ধ্যার পর হবে। অফিসের ছাদে আয়োজন করা হয়েছে। নরমাল কোল্ড ড্রিংকস, চকলেট, চিপ্স ছাদের এক পাশে লম্বা একটা টেবিলে সাজানো হয়েছে। ছেলে এমপ্লয়রা বার্বিকিউ বানাতে ব্যস্ত। মেয়েরা পাশাপাশি বসে আড্ডা দিচ্ছে তো তাদের সাহায্য করছে। মিহিরের এখানে আসার ইচ্ছে ছিলো না, শুভর জুড়াজুড়িতে আসতে হয়েছে। এখন একপাশে দাঁড়িয়ে মেয়ে দের সাথে গল্প করছে সে।

খাওয়া দাওয়া শেষে গোল হয়ে বসে আছে সবাই। ছেলেরা এক পাশে মেয়েরা সবাই একপাশে। মিহির শুভ একেওপরের সামনে বসে আছে। হাসি আড্ডার মাঝে সবাই শুভকে জোর করে গান গাওয়ার জন্য। একজন এমপ্লয় তো গিটার এনে রেখেছে। বাধ্য হয়ে গিটারে আওয়াজ তুলে শুভ। চারদিকে নিরবতা বিরাজ করছে তার গান মনোযোগ দিয়ে শুনার জন্য।

মিহিরের দিকে তাকিয়ে গান গাওয়া শুরু করে শুভ,

~ আমি তোমার সাথেই আমাকে খুঁজে পাই
এখনো যত্ন করে যায়,
যদিও তুমি বহুদূরে..
আমি আজও পাগল তোমারি ওই প্রেমে
গেছি হারিয়ে রাতের আকাশে
তবে কি কাহিনী শেষ আমাদের?
আমি ভাবি, যদি আবার
ছুতে পারতাম তোমাকে
সত্যি বা স্বপ্নই হোক
এ দূরত্ব শেষ হয়ে যেতো যে।

ভালোলাগা, ভালোবাসার তফাৎ কি যে হয় জানতাম না,
তবে কি আজ সব দুষটা আমার, দেড়ি করেছি বুঝতে তবু ভয়,
ভয় পেয়ো না, আমি আছি, তোমারি পাশে
দূরে যেও না, রাখবো আমি, জড়িয়ে তোমাকে!!
(SayAn)

পুরোটা সময় শুভ মিহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মিহিরের মনে হচ্ছিলো এই গানটা তাদের জন্যই গাওয়া। প্রত্যেকটা লাইন যেনো তাদেরকে নিয়েই লিখা।

ছাদের কার্নিশ ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে মিহির শুভ। তারা দুইজন বাদে সবাই চলে গেছে পার্টি শেষে। দীর্ঘ নিরবতা পালন করে ‘তোমাকে আজকে সুন্দর লাগছে মিহি!’ হাস্যউজ্জল চেহারায় বলে শুভ। মিহির ঘাড় কাত করে শুভর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘থ্যাংকস!’

শুভ আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে, ‘রাতের আকাশের এই হাজার তারার ভিড়ে যেমন চাঁদ টা বেশি আকর্ষণীয়, তেমনি আমার পৃথিবীর বসন্তে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সেই রক্তিম মোহনীয় আভা তুমিতে আমি আসক্ত!’

আমি অপলক তাকিয়ে আছে তার প্রেমিক পুরুষটির দিকে। বুকের বা পাশের ভারি জায়গাটা হালকা করতে প্রেমিক পুরুষের উষ্ণ অলিঙ্গন দরকার। শুভ মিহিরের পাশে দাঁড়িয়ে ডান গালে এক হাত রেখে শীতল কন্ঠে বলে, ‘ভালোবাসো?’

মিহিরের চোখ ছলছল করছে। এই বুঝি কান্নায় ভেঙে পরবে। ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ। গাল দিয়ে চোখের পানি গরিয়ে পরে। শুভ মৃদু হেসে চোখের পানি মুছে বলে, ‘এই পাগলী কাঁদছ কেনো? থাক ভালোবাসি বলতে হবে না। আমার পাশে থাকলেই চলবে। কেঁদো না প্লিজ তোমার চোখের পানি আমার সয্য হয় না।’

তাৎক্ষণাৎ শুভকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরে মিহির। শুভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আগলে নেয় তাকে। মিহি যে তাকে ভালোবাসে সেটা সে জানে। কিন্তু কেনো স্বিকার করছে না বুঝতে পারছে না। হয়তো তার দেওয়া কষ্টের কারণে। আলতো করে মিহিরের মাথায় চুমু দিয়ে হাত বুলাতে থাকে সে।

রাতে মিহিরকে বাড়িতে পৌছে দেয় শুভ। মিহির গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে হাটা ধরতেই শুভ ডাকে পিছে ঘুরে দাঁড়ায় সে।

পিছে ঘুরেই প্রশ্ন ছুঁড়ে মিহির, ‘কিছু বলবেন?’

শুভ পকেটে হাত গুঁজে বলে, ‘না!’ কথা পিঠে আবার প্রশ্ন করে, ‘তো ডাক দিলেন যে?’

মৃদু হেসে বলে, ‘এমনি দিয়েছি। বাসায় যাও!’

মিহির ভ্রুঁ উঁচিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। গেইটের ভিতরে ঢুকার সময় আবার শুভ ডাক দেয়। পিছে ফিরে বলে মিহির, ‘আবার কি?’

শুভ গাড়িতে হেলান দিয়ে হেসে বলে, ‘গুড নাইট!’ প্রতিত্তরে মুচকি হেসে বলে মিহির, ‘ইউ টু!’ বলেই চলে যায় সে। তার যাওয়ার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে শুভ।

‘এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কবে? কবে ভালোবাসার মানুষটাকে একান্তে নিজের বাহুডোরে পাবো? এই অশান্ত মন যে কিছুতেই অপেক্ষা করতে পারছে না। কাছে চাইছে তাকে খুব করে চাইছে। হারিয়ে যেতে চাইছে সাদা মেঘের ফাকে উকি দেওয়া এক চিলতে মিষ্টি রোদের মাঝে।’

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

২৮.

ক্যাফেতে বসে আছে মাহিন। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে সামনে বসে থাকা শুভ, সামির, রাহুল আর আদিলের দিকে। শান্ত মুখে এক হাত রেখে ঠোঁট টিপে হাসি আটকে রাখার আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে। এই কয়দিন শুভ আচ্ছা মতো জ্বালিয়ে মারছে মাহিনকে। এমন ভাবে আবদার করছে যেনো কোনো পুতুল পছন্দ হয়েছে আর তার সেটা লাগবেই লাগবে। রাহুল মেঁকি হাসি দিয়ে বলে, ‘কি খাবেন বলেন আজকে আমার পক্ষ থেকে ট্রিট।’

শান্ত চোখে মুখে হাসি রেখে বলে, ‘আমার আপাতত ক্ষিদে নেই। মাহিন তোর কি চাই? না মানে তুই তো আবার..” শান্তর কথার পিঠে বলে মাহিন, ‘ বেশি না বললেই নয়?’

আড্ডা মাস্তিতে মেতে আছে ক্যাফের বাকি সদস্যরা। কথার এক পর্যায়ে শুভ মাহিনের উদ্দেশ্যে বলে, ‘দেখো মাহিন! যা করতে চাইছি সব পারিবারিক ভাবেই করতে চাইছি। তুমি রাজি থাকলে আমি আব্বু আম্মুকে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসবো। আর আমি তো না মেনে নেওয়ার কোনো কারন দেখছি না!’

তীক্ষ্ণ চোখে বলে মাহিন, ‘মানা না মানার কোনো প্রশ্নই এখানে আসছে না। এই বিষয়ে আর না আগালেই ভালো।’ হুট করে রাহুল বলে, ‘কেনো আগাবে না? তারা দুজনই যখন একে অপরকে ভালোবাসে তাহলে আপনি না করার কে?’

বাঁকা হাসে মাহিন। কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে বলে, ‘মিহু কি একবারো বলেছে ভালোবাসে?’ শুভ অসহায় দৃষ্টি দিয়ে বলে, ‘বলেনি বাট সি লাভস মি। বুঝার চেষ্টা করো!’

‘মূল্যবান জিনিস খুব সহজে পেয়ে গেলে সেটার মূল্য কমে যায়। আপনি পেয়েছিলেন ঠিকি কিন্তু মর্যাদা দিতে পারেন নি। এখন না হয় একটু কষ্ট করুন। কষ্টের ফল মিষ্টি হয়!’
________________

ইউকে থেকে বাংলাদেশে ব্যাক করে বনানীর নিজস্ব বড় একটা এপার্টমেন্টে উঠে জিহান। দেশে ফিরেই বিশ্বস্ত সেক্রেটারির কাছ থেকে মাহিন শান্তর সম্পূর্ণ বায়োডাটা জানতে চাই সে।

ছবিসহ কিছু কাগজ প্রত্র জিহানের সামনে রাখে। মাহিনের ছবি দেখিয়ে বলে সেক্রেটারি নিলয়, ‘স্যার, ইনি হচ্ছেন এমআর হাসান উরফে আয়াত হাসান মাহিন! সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। প্রফেশন লাইফে তাকে এমআর হাসান নামে চিনে সবাই। বাড়ি কুমিল্লা, বর্তমানে মা, ছোট বোনকে নিয়ে ঢাকা থাকে।’

শান্তর ছবি এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘ আর ইনি হচ্ছেন এসআর আরাফ উরফে শান্ত আরাফ। উনার বাড়ি কুমিল্লা। সম্পর্কে মাহিনের ফুফাতো ভাই। বাবা মার একমাত্র সন্তান।’

‘দুজনের মাঝে কেসের ইনভেস্টিগেশন করে কে?’ থুতনিতে হাত রেখে শান্ত স্বরে বলে জিহান। নিলয় উত্তর দেয়, ‘আয়াত হাসান মাহিন। ক্যাসটা উজ্জ্বল আহসানের আন্ডারে পরলেও মাহিন সবটা সমাধান করে। উনি নিজেই কোটে প্রমান পেশ করবে।’

‘মম কে আদালতে নেওয়া হবে কবে?’

‘সামনের সাপ্তাহের বুধবার!’

‘এমআর হাসানের সাথে কথা বলতে চাই। এজ সুন এজ পসিবল।’ চোখ মুখ শক্ত করে বলে জিহান। নিলয় ‘ঠিক আছে!’ বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

রাগে মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে জিহানের মুখ। দুই হাতে মুখ ঢেকে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নেয় সে। চুল মুঠ করে ধরে মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে, ‘মম তোমার কিছু হবে। আই’ম হেয়ার! আমার মম কে জেল থেকে বের করে আনবো। পৃথিবীর সব থেকে কাছের মানুষ সে তার কিছু হতে দিবো না। শেষ করে ফেলবো সব।’
_____________

এই কয়েকদিন ধরে মাহিনের পিছে শুভসহ তার বন্ধুরা আঠার মতো লেগে আছে। বিকজ ফর মাহিনকে কনভেন্স করার জন্য। অবশ্য তাদের এভাবে ঘুরিয়ে মাহিন প্রচুর মজা নিচ্ছে। নিবে না কেনো? একটা মাত্র বোনের প্রেমিক বলে কথা। একটু নাকানিচুবানি না খাওয়ালেই নয়। ভাবেই হাসি পাচ্ছে তার।

‘এই আপনি হাসছেন কেনো?’ লাইব্রেরীতে মাহিনের পাশে বসে থাকা সুহা ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্ন করে। মাহিন নড়েচড়ে বসে বলে, ‘এমনি!’ সুহা কুঁচকানো ভ্রুঁ আরো গাঢ় করে বলে, ‘ এমনি কেউ হাসে?’ হেসে উত্তর দেয় মাহিন, ‘আমি হাসি!’

‘কাল কখন ঘুমিয়েছিলেন?’

‘তিনটা ঘুম আসে নি তাই।’

সুহা বললো, ‘ঘুম আসে নি কেনো?’ ছোট করে উত্তর দেয় মাহিন, ‘ এমনি।’

সুহা বিস্মিত হয়ে বলে, ‘যা বাবা আপনি দেখছি কলকাতার নায়ক দেবের লাইট ভার্সন হয়ে গেছেন!’ ভ্রুঁ বাঁকা করে জিজ্ঞেস করে মাহিন, ‘মানে?’

সুহা ঠোঁট টেনে হেসে বলে, ‘দেব ফেসবুকে ছবি দিলেই ক্যাপশন দেয় এমনি! আপনিও এখন এমনি এমনি করছেন। আমার জামাই দেবের লাইট ভার্সন ভাবা যায়?’

সুহার মুখে ‘জামাই’ শুনে ঘাড় কাত করে গভীর চোখে বাকা হেসে বলে, ‘জামাই?’ ভ্যাবাচেকা খায় সুহা। এই লোক যেই পরিমানের অসভ্য মুখ একবার ছুটলে থামে না।

একটা মেয়ে এসে মাহিনের পাশে বসে মুচকি হাসি দিয়ে বলে, ‘হাই! আমি আফসানা। তুমি?’

সুহা চোখ বড় বড় তাকায় মেয়েটির দিকে। মাহিন প্রতিত্তরে বলে, ‘মাহিন!’ সুহা চোখ ত্যাড়া চোখে মাহিনের দিকে তাকায়। কিন্তু তার এই চাহনি মাহিন দেখেনি। মেয়েটি মাহিনের হাতে থাকা বইটি নিয়ে বলে, ‘দেখি কি পরছো?’

মাহিন বিরক্তি হয় কিন্তু তা প্রকাশ করেনি। সুহা রাগে কিড়মিড় করছে। কই সে তো কতদিন ঘুরেছে মাহিনের নামটা জানার জন্য, মাহিন তো তাকে নাম বলেনি। আর এই মেয়ে জিজ্ঞেস করতে না করতেই গরগর করে নাম বলে দিলো।

অনেকক্ষণ ধরে মেয়েটা নিজে থেকেই বকবক করছে। মাহিন ভ্রুঁ উঁচিয়ে বিরক্তিবোধ করছে। সুহার রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।

‘এই মাহি তোমার মোবাইল নাম্বার টা দাও তো!’

ধপ করে উঠে দাঁড়ায় সুহা। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে মাহিনের দিকে তাকিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে চলে যায়। সুহা চলে যাওয়ায় মাহিনও উঠে দাঁড়ায়। মেয়েটি বলে, ‘কোথায় যাচ্ছো?’

মাহিন কড়া গলায় ঝাড়ি মেরে বলে, ‘আমার বউয়ের পিছে যাই।’ বলেই বেরিয়ে যায় লাইব্রেরী থেকে। পুরো কলেজে সুহাকে পায় নি। জ্বিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে ভাবে ‘আজকে আমি গেছি’
________________

ফুটপাত ধরে বুকে হাত গুঁজে হাটছে সুহা। তার পাশে হাটছে মাহিন। সেই কখন থেকে সুহার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু সুহা কিছুতেই কথা বলছে না। লাইব্রেরীতে ঘটা ঘটনার পর তিন দিন হয়েছে কিন্তু এখনো সুহার রাগ ভাঙ্গে নি। মাহিন কে পিছে পিছে আসতে দেখে সুহা ঝাঁঝালো গলায় বলে, ‘সমস্যা কি আপনার? পিছে পিছে আসতে বারণ করেছি আপনাকে?’

মাহিন অপরাধী ন্যায় বলে, ‘এখনো রেগে আছো কেনো? আর হবে না বললাম তো।’ সুহা মৃদু চেঁচিয়ে বললো, ‘কেনো হবে কেনো? যান না গিয়ে আরো কথা বলুন। একবারে বিয়ে করে বাচ্চার মা বানিয়ে ফেলুন।’

সুহার কথায় বিষম খায় মাহিন। হাল্কা কেশে আশেপাশে তাকিয়ে বলে, ‘আমার বাবুর আম্মু তো হবে তুমি অন্যদের কেনো বানাবো।’ চোখ কুঁচকে বলে সুহা, ‘কে হবে আপনার বাচ্চার মা? বিয়ে করলে তো আপনার বাচ্চার মা হবো।’

‘আর রাগ করে থেকো না প্লিজ।’ অসহায় হয়ে বলে মাহিন। সুহা হাটতে হাটতে ব্যঙ্গ করে বলে, ‘কি টান ওই শাঁকচুন্নির জন্য হ্যাহ। আমি কত দিন ঘুরেছি আপনার পিছে আমাকে পাত্তা দেওয়া তো দূরের কথা নাম টাও বলেন নি। সুন্দর করে কথাও বলেন নি আমার সাথে। আর ওই মেয়ে আসতে না আসতে কি সুন্দর তাকিয়ে নাম বলে দিলেন। আবার অনেকক্ষণ পাশাপাশি বসে কথাও বলেছেন। আহা প্রেম! এই আপনি আবার পিছে আসছেন কেনো? ওয়েট আপনি কি ওই শাঁকচুন্নিকে নাম্বার দিয়েছেন? আই সোয়ের ভাল্লুক মশাই আমি আপনার গর্দান নিবো।’ শেষের কথা গুলো কোমড়ে হাত রেখে কড়া চোখে বলে সুহা।

মাহিন ঠাট্টা করে বলে, ‘নাম্বার চেয়েছে না দেই কিভাবে বলো?’

সুহা স্থব্ধ হয়ে যায়। ঠোঁট ভেঙ্গে আসে তার। চোখ ছলছল করছে। নাক লাল হয়ে গেছে। সুহাকে দেখে মাহিন হতভম্ব হয়ে যায়। ভাবতেও পারেনি তার কথা এতো সিরিয়াস ভাবে নিয়ে নিবে। মাহিন এগিয়ে এসে ব্যস্থ হয়ে বলে, ‘এই সুহারানী কাঁদছ কেনো? আমি তো মজা করছিলাম। কেঁদো না প্লিজ!’

সুহা নাক টেনে বলে, ‘আপনি অনেক খারাপ। আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। দূরে যান আমার থেকে।’ মাহিন দুই হাত দিয়ে সুহার চোখ মুছে বলে, ‘খুব ভালোবাসি আমার সুহারানী কে। মাহিন তো শুধু মাত্র তার সুহারানী, সে তার সুহারানী কে ছেড়ে কোথায় যাবে বলো?’

সুহা কান্না থামিয়ে মাহিনের দিকে তাকায়। চোখ লাল হয়ে আছে তার। মাহিন হাতের আঙুল দিয়ে স্বযত্নে পানি মুছে মৃদু হেসে বলে, ‘আমার এই পিচ্চি সুহারানী যে এতো আমাকে এতো ভালোবাসে জানতাম না তো। ভাবছি খুব তাড়াতাড়ি তাকে আমার ঘরে তুলতে হবে।’

সুহা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মুচকি হাসি দেয়। মাহিন দুষ্টু হেসে বলে, ‘উফ সুহা আমাকে কি দেখালে বলো তো? তোমার কান্নামিশ্রিত গাল নাক লাল হয়ে যাওয়া মুখ প্রচুর এক্টাক্ট্রিভ। আই’ম জাস্ট কন্ট্রোলনেস। এখন তো দেখছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে টা করেই ফেলতে হবে।’

সুহার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। কড়া গলায় বলে, ‘অসভ্য!’

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here