অনুভবী_হিয়া,৩১,৩২

0
731

#অনুভবী_হিয়া,৩১,৩২
#মাইশাতুল_মিহির

৩১.

হাসপাতালে শুভর মোবাইলে কল আসায় সে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে সুহা কল দিয়েছে। কল রিসিভ করার পর সুহা বলে, ‘ভাইয়া কোথায় তুমি? তোমার রুম তো ফাঁকা।’

‘আছি এক জায়গায়। চিন্তা করিস না।’

‘কোথায় আছো তুমি?’

ছোট করে উত্তর দেয় শুভ, ‘হাসপাতালে!’ আৎকে উঠে সুহার বুক। অস্থির হয়ে বলে, ‘হাসপাতালে কেনো ভাইয়া? কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো?’

সুহা কে এখন এসব বলা ঠিক হবে ভেবে শুভ বলে, ‘আরে রাহুল আদিল ব্লাড দিতে এসেছে। ওদের সাথেই এলাম। তুই ঘুমিয়ে যা আমার আসতে দেড়ি হবে।’ সুহা আচ্ছা বলে কল কেটে দেয়। স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে শুভ।

অপারেশন শেষে ডক্টর বলে ভয়ের কিছু নেই। আর সকালে প্রেশেন্টের জ্ঞান ফিরবে। রাশেদা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। আধ ঘন্টার পর শান্ত সবুজ আসে। এর মধ্যেই সামির, রাহুল রক্ত দেওয়ায় আদিলের সাথে তাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে শুভ। সবুজ এসে মিহির আর রাশেদা কে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। মিহির আর রাশেদা বাসায় দিয়ে সবুজ হাসপাতালে আসবে। আপাতত কেবিনের সামনে শান্ত আর শুভ বসে আছে। শান্তর নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে। পারছে না শুধু কাঁদতে।
________________

এর মাঝে কেটে গেছে প্রায় সাপ্তাহ খানেক। মাহিন এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে হাতে এখনো প্লাস্টার করানো আছে। হাত ঠিক হতে আরো কিছু সময় লাগবে। মাহিনকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়। শান্ত সবুজ এতোদিন এখানেই ছিলো। মাহিনকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে দিয়ে সবুজ কুমিল্লা চলে যায়।

এই কয়েকদিন সুহা মাহিন কে কলে না পেয়ে কেঁদে কেটে অস্থির। সে এখনো জানে না মাহিন কোথায়? ঠিক আছে কিনা। ভাইয়ের কাছ থেকে মিহিরের নাম্বার নিয়ে ভয়ে ভেয়ে কল দিয়েছিলো। মিহির স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে কেটে দিয়েছিলো। মাহিনের খোঁজ এখানেও পাই নি সুহা। কলেজেও আসে না।

হাসপাতালে থাকা কালীন তাদের ডিপার্টমেন্টের হেড এসে দেখা করেছিলো মাহিনের সাথে। পুলিশ কেস করা হয়েছিলো কিন্তু অপরাধীর কোনো হদিস পাওয়া যায় নি। মাহিনও নিশ্চুপ ছিলো কারণ সে জানে এটা কার কাজ। সুস্থ হওয়ার পর নাহয় মুখোমুখি হওয়া যাবে।

মাহিনকে মা:রার ঘটনার পর থেকে রাশেদা বেগম ছেলে মেয়ের জন্য বেশ চিন্তিত আর অস্থির হয়ে যান। তার উপর যখন জানতে পারে মাহিন সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিচ্ছে সব। রাশেদা কিছুতেই মাহিনকে এসবে জড়িত থাকতে দিবে না। রাশেদা কে শান্ত করতে মাহিন আর মিহিরের বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। মাহিনকে বাসায় এনেই কুমিল্লা একেবারের জন্য যেতে জোড় ধরেন। অজ্ঞাত মা’য়ের জোড়াজুড়িতে মাহিন মিহির রাজি হয় কুমিল্লা যেতে। সামনের মাসে মিহিরের অনার্স ফাইনাল তাই পরিক্ষা দিয়ে একেবারেই চলে যাবে কুমিল্লা বলে ঠিক করে সবাই।
______________

কলিং বেল বাজায় দরজা খুলে মিহির। দরজার সামনে সুহাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। সুহা মিষ্টি হেসে বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম আপু। আমি সুহা।’

এবার অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় মিহির। মুখ হা হয়ে যায় তার। উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘আরে সুহা তুমি? এসো এসো তাড়াতাড়ি ভেতরে এসো।’ বলেই সুহার হাত ধরে বাসায় ঢুকায়। চেঁচিয়ে বলে উঠে, ‘মা ওহ মা দেখো কে এসেছে। কোথায় তুমি?’

শান্ত সোফায় বসে ছিলো। বিরক্ত হয়ে বলে, ‘চেঁচাচ্ছিস কেনো ইডিয়ট।’

উল্লাসিত হয়ে বলে মিহির, ‘ভাই দেখো ভাবি এসেছে’ শান্ত অবাক হয়ে সুহার দিকে তাকিয়ে আছে। সুহা কিছুটা বিব্রতবোধ করছে।

রান্না ঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে ‘কে এসেছে রে?’ বলে বের হলেন রাশেদা। সুহাকে দেখে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। মিহির মিষ্টি হেসে বলে, ‘তোমার বউমা। বরন করবে না বুঝি?’

রাশেদা অবাক হয়ে তাকায় সুহার দিকে। সুহা কি বলবে বুঝতে পারছে না। বহুত কষ্টে মুখে হাসি এনে বলে, ‘কেমন আছেন আন্টি?’ রাশেদা এগিয়ে সুহার গালে হাত রেখে বলে, ‘ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?’ সুহা প্রতিত্তরে হেসে বলে, ‘ভালো আছি।’

রাশেদা সুহা কে সোফায় বসিয়ে গল্পে মশগুল হয়ে পরে। হঠাৎ তরকারি ঘ্রান আসতেই রান্নার ঘরের কথা মাথায় আসে তার। সুহা আর মিহিরকে বসিয়ে রান্না ঘরে যায়।

শান্ত হেসে বলে, ‘মাহিনের চয়েজ আছে বলতে হবে।’ মিহির হেসে বলে, ‘দেখতে হবে না ভাইটা কার?’ সুহা লজ্জায় মাথা নুইয়ে আছে। আসে পাশে তাকিয়ে মাহিনকে খুঁজছে শুধু। মিহির খেয়াল করে বলে, ‘কাউকে খুঁজছো?’ সুহা ইতস্ততবোধ করে বলে, ‘আসলে মাহিন..’

হেসে বলে মিহির, ‘আরে লজ্জা পাচ্ছো কেনো? ভাই তার রুমে ঘুমিয়ে আছে বোধহয়। যাও দেখা করে এসো।’

উঠে দাঁড়ায় সুহা। মাহিনের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছে ভিতরে যাবে কিনা। দরজায় দু-বার টোকা দেওয়ার পর কোনো সাড়াশব্দ আসে নি। তাই দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখে দরজা খুলা। পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে। হাত বারিয়ে লাইটের সুইচ খুঁজে লাইটা অন করে। বিছানায় তাকিয়ে দেখে মাহিন উপুড় হয়ে খালি গায়ে শুয়ে আছে। লাইট অন করায় চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠে মাহিন, ‘মিহু লাইট অফ কর বেয়াদব।’

সুহার কেনো যেনো লজ্জা লাগছে খুব। ইতস্ততবোধ করে বলে, ‘আমি সুহা!’

চট করে উঠে বসে মাহিন। সুহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হয়ে যায়। হঠাৎ করে উঠায় শরিরে পেটে ব্যাথ্যা অনুভব করে কিন্তু সেটা প্রকাশ করেনি। দুইবার চোখ কঁচলে বলে, ‘তুমি সুহা? সত্যি এখানে আছো? নাকি এটা কোনো ভ্রম?’

চটে যায় সুহা। মৃদু চেঁচিয়ে বলে, ‘সমস্যা কি আপনার? এমনিতেই তো এই আট দিন লাপাত্তা ছিলেন। এখন আমি সামনে আছি তাও বলছেন ভ্রম? আমার সাথে দেখা করার প্রয়োজন নেই আপনার তাই না? আপনি আসলেই আমাকে ভালোবাসেন না। যদি ভালোবাসতেন তাহলে কষ্ট দিতেন না।’ শেষের কথা গুলো কাঁপাকাঁপা গলায় বলে সুহা। চোখ পানিতে চিকচিক করছে তার। মাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুহা এক হাতের ইশারায় কাছে ডাকে। সুহা মাহিনের সামনে দাঁড়াতেই মাহিন সুহাকে টেনে জড়িয়ে ধরে। সুহা এবার কান্নায় ভেঙ্গে পরে। মাহিন সুহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘মাত্র তো আট দিন। যদি একেবারই চলে যাই তো কি করবে?’ সুনা মাহিনের বুকে ছোট করে কিল বসিয়ে দেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে, ‘খবরদার এইভাবে কখনো বলবেন না। আমার অনেক কষ্ট লাগে। অনেক ভালোবাসি আপনাকে।’

মৃদু আর্তনাদ করে বলে মাহিন, ‘আহঃ আস্তে ধরো সুহা ব্যাথ্যা পাই তো।’ সুহা সরে যেতে চাইলে মাহিন জড়িয়ে ধরেই বলে, ‘আস্তে ধরে বলেছি ছাড়তে নয়।’

লজ্জা লাগছে সুহার। এমনিতেই মাহিন খালি গায়ে তার উপর আবার জড়িয়ে ধরা বেশ অস্বস্তি লজ্জা কাজ করছে তার মাঝে। ব্যাথার কথা মাথায় আসতেই বলে, ‘কিসের ব্যাথ্যা? হাতে কি হয়েছে আপনার? সত্যি করে বলুন তো এতো দিন কোথায় ছিলেন?’

শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় মাহিন। সুহা যে এখনো কিছু জানে না সেটা মাহিন জানে। মিহিরকেই বারন করেছিলো বলতে। ছোট্ট মেয়েটা সবটা শুনলে অস্থির হয়ে যাবে। তাই মাহিন মিথ্যে বলে, ‘সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে হাত ভেঙ্গে গেছে। শরিরেও ব্যাথা পেয়েছি। সুহা তোমার ভাগ্য ভালো আমার কোমড় ভাঙ্গে নি।’

সুহা ঠোঁট উল্টে বলে, ‘আপনি আসলেই অনেক খারাপ। এতো বড় ঘটনা আমাকে জানান নি। আমাকে আপনি আপন কেউ ভাবেন না। আব্বু তো সব কিছুই আম্মুকে জানাই তাহলে আমাকে কেনো জানান নি আপনি?’

এই বাচ্চা মেয়ের অভিযোগ শুনে মাহিন হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ঠোঁট কামড়ে মজা করে বলে, ‘তুমি যদি আজ আমার বউ হতে তাহলে আমার পাশে থাকতে। বউয়ের হাতে স্বযত্নে থাকতাম। তখন সবই বলতাম তোমাকে। বেশি বেশি আদরও করতাম।’

সুহা আড় চোখে তাকিয়ে বলে, ‘এই কথা ছাড়া আপনার কথার গোডাউনে আর কথা নেই?’

ফিক করে হেসে ফেলে মাহিন। তারপর বলে, ‘এমন মিষ্টি একটা গার্লফ্রেন্ড থাকলে এমন কথা এমনি এমনি আসে। এইদিকে আসো!’

সুহার এক হাত টেনে কাছে এনে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে মাহিন। চোখ বন্ধ রেখে বলে, ‘এই কয়দিন অনেক মিস করেছি তোমাকে সুহারানী। মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।’

সুহা আনমনে হেসে ফেলে। পরম যত্নে মাহিনের চুলে হাত বুলাতে থাকে। একরাশ ভালোলাগা কাজ করছে মনে। এই গম্ভীর মানুষটাকেই সে এতো ভালোবাসে। সারাজীবন মাহিনের পাশের থাকতে চায় সে। খুব করে আগলে রাখতে চায় সুহা।

সবার সাথে গল্পগুজব করে বেরিয়ে যায় সুহা। মাহিনের পরিবারের সবাই সুহাকে পছন্দ করেছে। বিশেষ করে রাশেদা। সুহা বাসায় এসে মাহিনের খোঁজ নেওয়ায় উনি বেজায় খুশী। মাকে খুশী দেখে মাহিনও খুশী হয়। এবার মিহিরের ব্যাপার টা সামলানোর পালা।

চলবে??

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

৩২.

রাশেদার কথায় কুমিল্লা যাবে বলে অফিসে গিয়ে রিজাইন দিয়ে দেয় মিহির। তাছাড়া এক্সাম আর বেশি দিন বাকি নেই। মাত্র এক সাপ্তাহ পরে। এখন সব কাজ বাদ দিয়ে ভালো করে পড়াশোনায় মন দিচ্ছে সে। অবশ্য রিজাইন দেওয়ার কথা শুভ জানতো কিন্তু মিহিরের এক্সাম তাই কিছু বলেনি।

ক্যানভাসে বসে বইয়ের পাতা ঘাটছে মিহির। পাশে মিতু, আয়না, আশা। এক্সাম নিয়ে প্রিপারেশনে এক জন আরেক জনকে সাহায্য করছে।

‘হায় হায় এবার আমার কি হবে? এবার ফেল করে বসবো রে। আমার বুঝি রিকশা ওয়ালার সাথেই বিয়ে টা হয়ে যাবে রে।’ কাদু কাদু মুখে বলে আয়না। বিরক্তি হয়ে বলে মিহির, ‘চুপ করবি। পটরপটর না করে মনোযোগ দে না ভাই।’

‘চিন্তা করিস না রিকশাওয়ালা না, তোকে ফুচকা ওয়ালার কাছে বিয়ে দিবো। তাহলে আমরা ফ্রি তে ফুচকা খেতে পারবো।’ মিতু বললো। হেসে ফেলে সবাই।

হঠাৎ কানে গিটারের আওয়াজ আসে। উৎসাহিত হয়ে তাকায় সবাই। ক্যানভাসের মাঝে গিটার হাতে নিয়ে সুর তুলছে শুভ। তার পাশে সামির, আদিল আর রাহুল। ক্যানভাসের সকলের দৃষ্টি এখন শুভর দিকে। শুভ মিহিরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে এসে মিহিরের পাশে বসে। বিস্ফোরিত হয়ে যায় মিহির। অবাক হয়ে বলে, ‘আপনি এখানে?’

এক গাল হেসে বলে শুভ, ‘তোমার জন্য এসেছিলাম। একটা ছেলের হাতে গিটার দেখে ভাবলাম আজ তোমার জন্য একটা গান গায়।’

রাহুল চেঁচিয়ে বলে, ‘রোমিও চুপচাপ না থেকে আমাদের গান শুনার সুযোগ তো দাও।’ ক্যানভাসের বাকি সবাইও একি কথা বলে। শুভ হেসে গিটার বাজাতে শুরু করে।

আমি প্রেমিক, আমি কবি,
তুমি সিরিয়াস ভাবে দেখো সবই।
আমি গেম খেলে সারারাত জাগি,
তুমি পড়ুয়া মেয়ে বেজায় রাগি।
আমি বিড়ি খোর, আমি আড্ডাবাজ,
পড়াশোনা শুধু তোমার কাজ।

তোমার প্রিয় বিড়াল ছানা, আমার প্রিয় কুকুর,
তোমার প্রিয় পাহাড়ি ঝর্না, আমার প্রিয় পুকুর,

গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমায় জবা,
বলো তুমি এইবার কি আমার প্রেমিকা হবা? (২)

এতোক্ষনে শুভ আর মিহিরের আশেপাশে মানুষের ভীড় জমে গেছে। সবাই গোল হয়ে বসে আছে তাদের পাশে। একটা ছেলে বলে, ‘মিহু তুই উনার প্রেমিকা হয়েই যা। ভাই কিন্তু তোকে সরাসরি প্রপোজ করে ফেলেছে।’

‘আহা গো কি প্রেম দেখেছো?’ পিঞ্চ মেরে বলে আয়না। মিহির দাঁতে দাঁত চেপে আয়নার দিকে কড়া চোখে তাকায়। আদিল বলে, ‘ভাই একটা রোমান্টিক গান গেয়ে শুনা। ‘ সামিরও বললো, ‘হ্যা একটা হিন্দি গান গা ভাই!’

শুভ ‘ঠিক আছে’ বলে সুর তুলে…..

Itni muhabbat karo na
Mein doob na jaun kahin
Vaapas kinare pe ana
Mein bhool na jaun kahin

Dekha jabse chehra tera
Mein to hafton se soya nehin

Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Mein kisi se kahunga nehi (2)

Mujhe neend ati nehi hai ekele
Khwabon mein aaya karo
Nehi chal sakunga tumhare bina mein
Mera tum sahara bano

Ik tumhein chahne ke alaawa
Aur kuch humse hoga nehi

Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Mein kisi se kahunga nehi

Humari kami tumko mehsoos hogi
Bhiga dengi jab baarishe
Mein bhar karke laaya hoon
Ankhon mein apni
Adhoori si kuch khwahishe

Ruh se chaahne wale aashiq
Bateein jismo ki karte nehi

Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Mein kisi se kahunga nehi

Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Mein kisi se kahunga nehi..❤️

পুরো টা গান শুভ মিহিরের দিকে তাকিয়ে গেয়েছে। মিহিরও অন্যরকম ভাবনায় চলে গিয়েছিলো। সকলের তালি দেওয়া তে ধ্যান থেকে ফিরে আসে তার। শুভর দিকে তাকাতেই দেখে শুভ তার দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
__________________

রাস্তার পাশে বিরক্তি মুখে দাঁড়িয়ে আছে মিহির। তার পাশে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে শুভ। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে তারা। মিহির রিকশা, সিএনজি থামালে শুভ তাদের বারন করে দেয়। শুভর একটায় কথা তার সাথে যেতে হবে না হলে যেতে পারবে না।

‘সমস্যা কি আপনার? এইভাবে পিছে পরে আছেন কেনো?’ বিরক্ত হয়ে বলে মিহির। ত্যাছড়া ভাবে বলে শুভ, ‘সমস্যা আমার না তোমার মাথায়। আমার সাথে গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?’

ভ্রুঁ কুঁচকে বলে মিহির, ‘যাবো না আমি।’ শুভ গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বলে, ‘তাহলে তোমাকেও যেতে দিবো না।’

‘আপনি ঠিক আগের মতোই আছেন।’ বিরক্তিভঙ্গিতে বলে মিহির। শুভ হেসে বলে, ‘এই আগের আমি টাতেই তো প্রেমে পরেছিলে তাহলে এখন উপেক্ষা করছো কেনো? আমাকে পুড়তে দেখলে ভালো লাগে তোমার? ভালোবাসা যায় না এই অধম টাকে?’

আড় চোখে শুভর দিকে তাকায় মিহির। চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুভকে তাড়ানোর প্ল্যান আঁটছে মাথায়। শুভকে এখান থেকে তাড়ানোর জন্য মিহির ইচ্ছে করে বলে, ‘পানি খাবো। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।’ আড় চোখে মিহিরকে দেখে বলে, ‘ওয়েট আমি ঠান্ডা পানি আনছি।’ বলে রাস্তার ওপর পাশে যায় শুভ।

শুভ কে যেতে দেখে মিহির বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে যেই পা বাড়াবে তখনি একটা ট্রাক আসে মিহিরের সামনে। শুভ দোকান থেকে পানি কিনে রাস্তায় তাকাতেই চোখে পরে তার। চেঁচিয়ে বলে, ‘মিহি!’ বলেই দৌড় দেয় মিহিরের দিকে।

আচমকা সামনে ট্রাক আসায় মিহির ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। শরিল কাপছে তার। ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগার আগেই কেউ একজন মিহির বাহু ধরে টান দিয়ে জড়িয়ে রাস্তায় পরে যায়। শুভর পা থেমে যায়। মুহূর্তেই তার শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

মিহির মাথা তুলে মাহিনকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে। মাহিন মিহিকে শক্ত করে জড়িয়ে রাস্তায় মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না তার জন্য কেউ তার বোনকে টার্গেট করবে। ভাজ্ঞিস সঠিক সময়ে এসেছিলো।

রাস্তায় মানুষের ভীড় জমে যায়। মাহিন উঠে বসে কিন্তু মিহির এখনো তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। অনেক ভয় পেয়েছে যে সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে। একজন লোক বলে উঠে, ‘শা:লা ড্রাইভারের বাচ্চা চলে গেছে। নাহলে ধরে গণধো:লাই দিতাম।’

‘এইযে ভাই উনি আপনার কে হয়?’ মাহিনকে উদ্দেশ্যে করে বলে এক লোক। মাহিন দম নিয়ে বলে, ‘আমার বোন।’

তারপর মিহিরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘হুশ কাঁদছিস কেনো? এইদেখ কিছু হয়নি। তোর ভাই আছে তো তোর পাশে। মিহু মাই লিটট বার্ড প্লিজ কাঁদিস না। দেখি মুখটা?’ বলে মিহিরের মুখ উঠিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়। শুভর কাছ থেকে পানির বোতল নিয়ে মুখ ধুইয়ে পানি খায়িয়ে দেয় মাহিন।

শুভ এখনো স্থব্ধ হয়ে আছে। ছোট করে বলে, ‘মিহি তুমি ঠিক আছো?’ মিহির মাথা নেরে ‘হ্যা’ উত্তর দেয়।

মাহিনের উদ্দেশ্যে বলে শুভ, ‘মাহিন আমার সাথে এসো আমি তোমাদের পৌছে দেই। মিহি অনেক ভয় পেয়েছে তুমি ওকে ধরে রাখো।’ মাহিন প্রতিত্তরে কিছু না বলে মিহিকে ধরে উঠায়। শুভ গাড়ি আনার পর ব্যাক সিটে মিহিরকে একহাতে আগলে ধরে বসে মাহিন। শুভ গাড়ি স্টার্ট দেয়।

মাহিন জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। মাহিনের মোবাইলে ছোট একটা ম্যাসেজ এসেছিলো। যার মধ্যে লিখা ছিলো পারলে ছোট বোনকে বাঁচাও। মাহিন তখন পুলিশ স্টেশন ছিলো ম্যাসেজ দেখার সাথে সাথে বেড়িয়ে যায়। তাই মিহিরের ভার্সিটিতে আসতে দেড়ি হয়নি তার। এইকাজ টা যে জিহান করেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই তার। আরো একদিন মিহিরকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিলো জিহান। যদিও কেউ জানে না। কারণ মিহিরের কাছে আসার আগেই মাহিন বুঝতে পেরে সব গুলো কে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহিন। মিহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে গেছে মিহির। নিশব্দে আরো ভালো ভাবে আগলে নেয় তাকে।

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here