অনুভবী_হিয়া,৩৫ স্প্রেশাল_পার্ট ?,৩৬

0
730

#অনুভবী_হিয়া,৩৫ স্প্রেশাল_পার্ট ?,৩৬
#মাইশাতুল_মিহির
#স্প্রেশাল_পার্ট ?

৩৫.

ঘড়িতে সময় ১১ টা ঠেঁকেছে। রাজমির এবার বেজায় রেগে আছে সবুজের উপর। ঝাঁঝালো গলায় বলে, ‘সমস্যা কি সবুজ? প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে এখনো কিছু বলছো না। কে আসবে?’

‘আরে আব্বু আসবে একটু ওয়েট করো না।’

মাহিন হাত ঘড়িতে সময় দেখে সদর দরজার দিকে তাকায়। শুভরা এখনো আসে নি কেনো? তাদের তো দশটা বাজার আগেই আসার কথা ছিলো। চিন্তায় কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পরে তার।

সবুজের নাম্বারে কল আসায় সে বারিয়ে যায় বাড়ি থেকে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সদর দরজা দিয়ে শুভ কে নিয়ে ঢুকে সবুজ। সবাই বুঝার চেষ্টা করছে সবুজ আসলে চাইছে কি। মাহিন বাঁকা হাসে শুধু। কারণ তার বুঝতে বাকি নেই সবুজ কি চাইছে।

শুভর পিছে পিছে আহত আদিল সামির রাহুল ঢুকে। চারজনের শরিরেই ব্যান্ডেজ করা। শুভর কপালে, হাতে, গালে, সামিরের মাথায়, রাহুলের বেশি জখম হয়নি, আদিলের বা হাতে। এদের অবস্থা দেখে সবাই বিস্ময় হয়ে যায়।

সবুজ সবার সামনে দাঁড়িয়ে শুভকে দেখিয়ে বলে, ‘এই যে উনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম এতোক্ষন।’ শুভ অপলক দৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

রাজমির বলে, ‘পরিচয়?’ অতঃপর সবুজ বললো, ‘রাফিদ রায়হান শুভ। আরএস কোম্পানির মালিক আয়াজ রায়হানের একমাত্র ছেলে। আর আজকে মিহিরের সাথে শুভর বিয়ে হবে।’

আজমির অবাক কন্ঠে বলে, ‘মানে?’

‘মানে শুভ আর মিহির একে ওপরকে ভালোবাসে আজ পাঁচ বছর হয়েছে। তোমরা আমার সাথে মিহুর বিয়ে ঠিক করেছো ঠিকি কিন্তু একবারো মিহুকে জোড় গলায় জিজ্ঞেস করোনি মিহু বিয়েতে রাজি কিনা। তোমাদের সিদ্ধান্তের অসম্মান হবে বলে মিহু তখন সরাসরি না করতে পারেনি। আর তার চুপ থাকাটাই তোমরা সম্মতির লক্ষন ধরেছো।’

কিছুক্ষন থামে সবুজ। সামনে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে সবার অবস্থা। তার পর মাহিনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সন্ধ্যায় ছাদে যখন মিহু মাহিনকে বলেছিলো সে শুভকেই ভালোবাসে আর শুভ ছাড়া কাউকে হাসবেন্ড হিসেবে কল্পনা করতে পারবে না শুনেছি আমি। তখন মাহিনকে ডাকতে ছাদে গিয়েছিলাম। ভাজ্ঞিস সব শুনেছি নাহলে মিহুর মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েটা হতো। না আমি সুখী হতাম, না মিহু হতো আর না শুভ ভালো থাকতো।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবুজ। শুভর কাছে গিয়ে বলে, ‘তারপর আমি অনেক ভেবে চিন্তে শুভকে কল দেই। আশ্বাস দিয়ে বলি তাকে আসতে। সে না আসা পর্যন্ত কিছু হবে না। আর কাজিকে আমার নামের জায়গায় শুভর সব ডিটেইলস দিয়েছি আমি।’

এবার সবার দিকে তাকিয়ে বলে সবুজ, ‘তোমাদের কি মতামত? তোমরা কি চাও মিহুর বিরুদ্ধে গিয়ে তার বিয়ে দিতে? বিবেক কি বলে তোমাদের?’

সবাই নিরবতায় মশগুল হয়। রাশেদা মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। মিহুর কেমন লজ্জা, অস্বস্থি, অপ্রস্তুত লাগছে নিজেকে। মাহিন তো এবার বেজায় খুশী। আজমির মুখ খুলে বললো, ‘মিহু যদি ভালোবাসে তাহলে আমাদের কিছু বলার নাই। শুভ তুমি এসো মিহুর পাশে বসে পরো। এখানেই বিয়ে হয়ে যাক।’

রাজমির বললো, ‘কিন্তু ভাইজান শুভর পরিবারের কেউ তো এখানে উপস্থিত নেই। তারা ব্যাপার টা কেমন নিবে?’

স্বাভাবিক, শান্ত গলায় বলে শুভ, ‘আব্বু আম্মু সবাই মিহিকে পছন্দ করে। ইনফেক্ট আমি এখানে এসেছি সেটাও তারা জানে।’ আজমির মুগ্ধ হয়ে গেলেন শুভর স্পষ্ট ভাষায়। বিনিময়ে হেসে শুভকে মিহিরের পাশে বসায়। কাজি বিয়ে পরানো শুরু করে।

‘শুভ?!’

সবাই দরজায় তাকিয়ে দেখে আয়াজ রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে সুহা ভাড়ি লেহেঙ্গা পরে হাসি খুশী মুখে দাঁড়িয়ে আছে। মাহিন, রাশেদা সুহাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। মাহিন যেনো এক নতুন সুহা কে দেখেছে। চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গেছে বেমালুম। কারণ এতো ভাড়ি সাজে সুহা কখনো আসেনি তার সামনে।

শুভ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘আব্বু?’

আয়াজ রায়হান গাম্ভীর্য মুখে সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘কি ভেবেছো আমাকে ছাড়া আমার বউমা কে বিয়ে করবে? আমি সহজে মেনে নেবো? কাজ টা ঠিক করো নি শুভ।’ আদিল সামির রাহুল উচ্চস্বরে হেসে ফেলে। ওদের হাসিতে ড্রয়িংরুমে হাসির রোল পরে।

সুহা লেহেঙ্গা দুই হাতে হাল্কা উঠিয়ে মিহিরের পাশে এসে বসে। তারপর বললো, ‘উফফ ভাবি তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। ভাজ্ঞিস ভাইয়া সঠিক সময়ে এসেছে।’

বিনিময়ে মিহির শুধু মুচকি হেসেছে। সুহা আবার বলতে লাগলো, ‘দেখো তোমাদের বিয়ে আমি থাকবো না তা কখনো হয়? আমিও সেজে এসে পরেছি। কেমন লাগছে?’

মিহির মিষ্টি হেসে বলে, ‘মাশা’আল্লাহ ভালো লাগছে তোমাকে।’

‘উহুম তোমাকে ভালো লাগছে। আমি কত্ত এক্সাইটেড জানো। আজ থেকে তুমি আমার ভাবি, আমাদের সাথে সব সময় থাকবে ওয়াও!’

প্রতিত্তরে হাসে মিহির। সিয়া সুহার উদ্দেশ্যে বলে উঠে, ‘আপুই, তুমি অনেক কিউট।’

সুহা হাসে। সিয়া হায়া বলে, ‘বিয়ে পারিবারিক ভাবে বলে কি হয়েছে? আমরা কি সাজ বাদ দিবো নাকি? আমরাও রাতের মধ্যে শপিং করে ফেলেছি।’

রিয়া আফসোস করে বলে, ‘কত ইচ্ছে ছিলো। হলুদ হবে, মেহেন্দি হবে আমরা নাচবো। কিন্তু দেখো মেহেদিই দেওয়া হলো না।’

সুহা মিষ্টি করে হেসে রিয়ার গাল টেনে বলে, ‘ওলে মন খারাপ করো না। রিসিপশনের আগে হাতে মেহেদি দিয়ে দিও তাহলেই হবে।’

হায়া সিয়া সম্মতি জানায়।

রাশেদা বেগম সুহাকে দেখে অবাক হয়। তিনি মিহিরের দিকে তাকাতেই মিহির হেসে বলে, ‘মা সুহা শুভর ছোট বোন।’

মুখ বাকিয়ে বলে রাশেদা, ‘বাহ্ বাহ্ তোরা সবাই তলে তলে এতো কিছু করছিস আর আমি কিছু জানি না। আমি জানলে কি দুনিয়া উল্টে যেতো?’

আরেক দফা হেসে ফেলে সবাই। পরোক্ষনে কাজি বিয়ে পরানো শুরু করে।

অবশেষে দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালোবাসার পূর্ণতা পেলো আজ। এক হলো চারটি হাত। বিয়ে হয়ে গেলো শুভ মিহিরের। ❤️
_________________

বিয়ে পরানো শেষে মিষ্টি খেজুর দেওয়া হয় সবাইকে। আজমির আর রাজমির চেয়েছিলো শুভরা আজকের রাতটা এখানে থেকে পরদিন সকালে ঢাকা যেতে কিন্তু আয়াজ রায়হান মানতে নারাজ। তিনি তার পুত্র বধূকে নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে নিয়ে যাবেন। তার একদিন পরেই বউভাতের অনুষ্ঠান করবে। অজ্ঞত সবাই রাজি হয়। মিহিকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় সবাই।

একটা রুমে বসে আছে মিহির। তার পাশে বিছানায় বসে আছে রিয়া, সিয়া, হায়া। রুমের সোফায় বসে আছে আদিল সামির রাহুল। শুভ আর আয়াজ আপাতত আজমির আর রাজমিরের সাথে ব্যস্ত।

সুহা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো। হঠাৎ কেউ তার বাহু ধরে টেনে আড়ালে নিয়ে যায়। খানিকটা ভরকে যায় সুহা পরোক্ষনে মাহিনকে দেখে জোরে জোরে কয়েকবার স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। তার পর কড়া গলায় বলে, ‘সমস্যা কি? এইভাবে কেউ ধরে জানেন আমি ভয় পেয়ে গেছি।’

মাহিন সুহার দিকে এগিয়ে এসে বলে, ‘কি করবো বলো। আজকে তোমাকে এতো সন্দর লাগছে তাই কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।’ সুহা কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে ফেলে। সরে যেতে চাইলে মাহিন সুহার এক পাশে হাত দেয়ালে রেখে বলে, ‘এতো সুন্দর কেনো তুমি? এখন তো মনে হচ্ছে শুভর আগে আমার বিয়েটা করা উচিত ছিলো।’

চোখ বড় করে তাকায় সুহা। লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে। দাঁত চেপে বলে, ‘সব সময় অসভ্যতামি করেন কেনো? সরুন কেউ দেখে ফেলবে।’

নির্বিকার ভাবে বলে, ‘আমার তো শুধু তোমাকে দেখতে পারলেই চলে।’ মাহিন এগিয়ে সুহার আরো কাছে চলে যায়। তাদের মাঝে দূরত্ব কয়েক আঙ্গুল। সুহা লজ্জায় এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।

মাহিন অপলক মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সুহার দিকে। এগিয়ে সুহার কপালে গভীর উষ্ণতার পরশ ছুঁইয়ে দিয়ে বলে, ‘আমার দেখা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর নারী তুমি সুহারানী। বারবার যতবার তোমাকে দেখি আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। চোখের তৃষ্ণা যেনো মিটে না। ইচ্ছে করে এই মাহিনের শহরে তোমাকে সারাজীবনের জন্য বন্ধি করে রাখতে। সবসময় চোখের কাছে থাকবে তুমি।’?

সুহা লজ্জায় ঠোঁট চেপে মাথা নুইয়ে আছে। মাহিনকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। সুহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু আওয়াজে হেসে ফেলে মাহিন।

চলবে??

[শুভ মিহিরের বিয়েতে দাওয়াত রইলো সকল পাঠিকা দের. খালি হাতে খেতে এলে হবে না গিফট নিয়ে আসবে। আর হ্যা থালা বাসন না এনে টাকা দিয়ে দিলে উপকৃত হবে।?? হ্যাপি রিডিং ?]

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

৩৬.

মিহিরের বিদায়ের সময় কান্না কাটির রেশ পরে। মাহিন রাশেদা কোনো রকম সামলে মিহিরকে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যায়। গাড়িতে উঠার আগে মিহির মাহিনকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদে। মাহিনের ভিতরের কলিজা যেনো কেউ ছিনিয়ে নিয়েছে। চোখ ভিজে আসে মাহিনের। এই প্রথম মাহিনকে কাঁদতে দেখে শান্ত। পুরো টা সময় হাসিখুশি মুখে ছিলো সবুজ।

মিহিরের একহাত শুভর হাতে রেখে বলে শান্ত গলায় বলে মাহিন, ‘ছোট থেকে এখন পর্যন্ত, এমনকি বাবা মা:রা যাবার পর থেকে আমার বোনের চোখে পানি আসতে দেয়নি আমি। আজ তার দায়িত্ব আমি আপনাকে দিচ্ছি। হাসিখুশি, স্বযত্নে আগলে রাখবেন আমার বোনকে। মনে রাখবেন মাহিন কখনো তার বোনের চোখের পানি সয্য করতে পারে না। পুরো দুনিয়া উল্টে ফেলবে সে। কিয়ামত বাধিয়ে ফেলতে দ্বিতীয় বার ভাববে না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।’

রাহুল সামিরকে নিচু স্বরে বলে, ‘ভাই এটা কে বলে ঠান্ডা মাথায় জলজ্যান্ত থ্রে:ট দেওয়া।’ সামির এক হাত মুখের সামনে এনে খুকখুক করে কেশে ফেলে।

মিহিরকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় মাহিন। মিহির কাঁদছে, বার বার বলছে সে যাবে না। মাহিন তার কপালে চুমু একে বলে, ‘লক্ষি বোন আমার। আমি কাল ঢাকা যাবো তো। তখন তোকে নিয়ে আসবো। কাঁদিস না প্লিজ। তুই জানিস তোর কান্না দেখলে তোর ভাইয়ের অনেক কষ্ট হয়। তুই কি ইচ্ছে করে তোর ভাইকে কষ্ট দিচ্ছিস?’

মিহির মাথা দুলিয়ে না বলে। মাহিন আবার বোনকে দুই হাতে আগলে বলে, ‘সাবধানে থাকিস। আই লাভ ইউ মাই লিটল প্রিন্সেস সিস্টার। লাভ ইউ সো মাচ।’?

ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। চলতে থাকে গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে। প্রথম গাড়িতে আছে শুভ মিহির আর সুহা। অন্য গাড়িতে আয়াজ রায়হান, সামির, আদিল আর রাহুল আছে।
_________________

ঘড়ির কাটা তখন রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই। চারপাশ পিনপিন নিরবতা বিরাজমান। স্থব্ধ হয়ে আছে পরিবেশ। দূরের আকাশের মেঘে ঢেকে থাকা চাঁদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবুজ। কষ্ট হচ্ছে তার। হয়তো ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কষ্ট। মিহির যখন ক্লাস এইটে পরতো তখন লাল শাড়ি গাঁয়ের বধূদের মতো পরেছিলো। সেইদিন থেকে ভালোলাগা কাজ করে সবুজের মনে। আজ পর্যন্ত মিহিরের অজান্তে তাকে খুব করে ভালোবেসে ছিলো সে। সে জানতো শুভর কথা। যখন মিহিরের রিলেশন ছিলো তখন মিহিরের খুশীর কথা চিন্তা করে দূরে সরে যায় সে। যখন ব্রেক’আপ হয় তখন যেনো অন্ধকার গুহায় এক এক চিলতে রোদ এসেছিলো তার মনে। আজমির যখন বিয়ে ঠিক করলো মিহিরের সাথে তখন সবুজ খুব বেশী খুশি হয়েছিলো তার ভালোনাসার মানুষকে পাবে বলে। কিন্তু যখন ছাদে মিহিরকে কেঁদে বলতে শুনেছে তখন যেনো তার পুরো দুনিয়া থেমে গিয়েছিলো। বেড়িয়ে গিয়েছিলো বাড়ি থেকে। রাস্তার পাশে বসে হাউমাউ করে কেঁদেছিল সে। পরে শুভর সাথে যোগাযোগ করে সে।

হাতে থাকা সিগারেট শেষ হওয়ায় পকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে লাইটার দিয়ে জ্বালায় সবুজ। মুখে নিয়ে টান দিয়ে মুক্ত আকাশে ধোয়া উড়ায়। তখন নিশব্দে পাশে বসে মাহিন। কিন্তু সবুজের মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সে আগের মতোই নির্বিকার, নিস্থব্ধ।

‘খুব ভালোবাসতে তাই না ভাই?’

হেসে ফেলে সবুজ। এই হাসির মধ্যে রয়েছে একরাশ চাপা আর্তনাদ। ফিচেল গলায় বলে, ‘এটা কি তোর অজানা?’

মৃদু আওয়াজে হাসে মাহিন। তারপর বলে, ‘তাহলে শুভর সাথে বিয়েটা না দিলেও পারতে।’ শীতল চাহনী দেয় মাহিনের দিকে সবুজ। ছাদে গা এলিয়ে দুইহাত মাথার নিছে রেখে মুক্ত আকাশের পানে তাকিয়ে নরম গলায় বলে সবুজ, ‘ভালোবাসলেই পেতে হবে এমন তো নয় মাহিন। দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। ভালোবাসার মানুষটার সুখটাই সব চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মিহুপরি ভালো তো আমি ভালো, মিহুপরি খুশী তো আমি খুশী, মিহুপরি ব্যথিত তো আমিও ব্যথিত। ভালো থাকুক সে। আকাশের লক্ষ তারার মতো সুখ ভেয়ে আসুক তার জীবনে। আমি দূর থেকেই তাকে দেখে আজীবন ভালোবেসে যাবো।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহিন। অন্তত্য সবুজের মতো এতো ভালো মানুষ, ধৈয্যশীল নয় সে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কেউ বিয়ে করবে আর সে চুপচাপ দেখবে এমন ইহকালে কখনোই হবে না। নিজের জিনিস নিজেই আদায় করতে জানে মাহিন। বাকা হাসে সে। সঙ্গ দেয় সবুজের একাকিত্বের।
_________________

রাত তখন দুইটা পনেরো। শুভর রুমে বসে আছে মিহির। একটু আগে শুভর মা মিথিলা তাকে বরণ করে হাতে একটা সুতি শাড়ি দিয়ে শুভর রুমে দিয়ে যায়। রাত হয়ে যাওয়ায় মিথিলা কথা বাড়ায় নি। সকালে নাহয় জমিয়ে কথা বলা যাবে। লম্বা দম ফেলে মিহির। ভিতরে কেমন জড়তা ভয় কাজ করছে তার। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি বদলায় সে। খয়েরি রঙের শাড়ি লাল পার পছন্দ হয়ে মিহিরের। চোখ ঘুরিয়ে পুরো রুম টা দেখছে মিহির। টেবিলের কর্নারের উপরে তার একটা ছবি দেখে থমকে যায় সে। ছবিটা হাতে নিয়ে দেখে অনেক আগে যখন ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয় মিহির তখনের। পুরো ভার্সিটিতে তো শুভর দাপট ছিলো বেশ। ভার্সিটির সামনে বা পাশে একটা বড় শিমুল গাছ আছে সেখানে শুভরা আড্ডা দিতো। একবার মিহিরকে সেখানে ডেকে একপ্রকার জোড় করে শুভর পাশে বসিয়ে রেখেছিলো। মিহির বিরক্ত হয়ে দুই গালে হাত দিয়ে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে আর শুভ তার দিকে হাস্যউজ্জল চেহারায় তাকিয়ে আছে। হয়তো তখন কেউ একজন তাদের ছবি তুলে ছিলো। আর সেই ছবি শুভ এখনো যত্ন করে রেখেছে। হেসে ফেলে মিহির।

‘শুধু ছবি দেখে হাসলেই চলবে আমাকেও তো দেখতে পারো।’ পিছে তাকিয়ে দেখে শুভ দরজায় হেলান দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার যেনো ভয়টা মিহিরকে আরো আকরে ধরেছে।

শুভ রুমে এসে বিছানায় বসে। পরনে তার হুয়াইট কালার টি-শার্ট। হঠাৎ শুভর আহত হওয়ার কথা মাথায় আসতেই মিহির শুভর পাশে বসে প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘আপনাদের কি হয়েছে? চারজনই আহত কেনো?’

শুভ মিহিরের দিকে তাকিয়ে ত্যাছড়া ভাবে বলে, ‘বিয়ে তো করতে যাচ্ছিলে। তাড়াতাড়ি কুমিল্লা যাওয়ার সময় ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট হয়।’ মিহির কিছু বলবে তার আগেই ফোন বেজে উঠে। নিশব্দে কল রিসিভ করে বলে মিহির, ‘হ্যালো?’

অপর পাশ থেকে মিতু অস্থির হয়ে বলে, ‘হারামি কুত্তি কি করছিস? বিয়ে করে ফেলছিস তুই? আমাকে জানালি না?’ মিহির চোখ ছোট ছোট করে উত্তর দেয়, ‘ ফাজিল মাইয়া এইসব জিজ্ঞেস করতে কল দিয়েছিস?’

হেসে বলে মিতু, ‘দোস্ত একখান কথা জানাবার লাইগা কল দিছিলাম। আগামী এক সাপ্তাহ ভাইকে তোর আশেপাশে ঘেঁষতে দিস না।’

চোখ ছানাবড়া করে বলে, ‘কি? ফাজিল মেয়ে।’

‘আরে তোরে যে এতো দিন কষ্ট দিছিল তার শোধ নিবি না? যা বলছি তাই কর। বেশি বুঝিস না।’

মিতুর কথায় মিহির আহাম্মকের মতো বলে উঠে, ‘এটা আবার কেমন কথা?’

মিতু হেসে বলে, ‘আরে একটু রিভেঞ্জ নে না ভাই। মজা হবে। আমি আয়না এসে একদিন বাসর ঘর সাজিয়ে তোর জামাইর কাছ থেকে টাকা হাতাবো। ততোদিন পর্যন্ত ওয়েট কর।’

মিহির নাক মুখ কুঁচকে বলে, ‘তুই বেশি নেগেটিভ বইন। এমন কিছুই হবে না। ফোন রাখ।’

মিতু মুচকি হেসে আন্তরিকতার সাথে বলে, ‘আচ্ছা আচ্ছা এবার রাখি। হ্যাপি ম্যারিড লাইফ দোস্ত।’

মিতু কল কাটার পর শুভর দিকে তাকায় মিহির। তারপর শুকনো ঢুক গিলে বলে, ‘আমার ঘুম পাচ্ছে গুড নাইট।’ বলেই তড়িঘড়ি করে বিছানার একপাশে শুয়ে পরে মিহির। শুভ অবাক হয়ে যায়। সেও অপরপাশে শুয়ে পিছন থেকে মিহিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।

চলবে..???

[সবাই কিপ্টুস। কেউ গিফট দেওনি তোমরা। ??]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here