#অনুভবী_হিয়া,৩৯,৪০
#মাইশাতুল_মিহির
৩৯.
সন্ধ্যা ৭:০০.
লাল সুতি শাড়ি পরে বিছানায় বসে আছে সুহা। তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে মিহির। বেশি ভারী মেক’আপ করাচ্ছে না। শুধু শাড়ির সাথে ম্যাচ করে হাল্কা প্রসাধনী। মিথিলা মিহিরের কাছে কিছু গয়নাগাটি দিয়ে যায়। মিহিরও আনন্দের সাথে সুহাকে সব পরিয়ে দিচ্ছে। এক পর্যায়ে সুহা বলে উঠে, ‘মিহু ভাবি?’
মিহির সাজাতে সাজাতে বলে, ‘হুম!’
‘আজকে থেকে আমিও তোমার ভাবি হবো।’ বলেই এক গাল হাসে সুহা। মিহিরও হেসে উত্তর দেয়, ‘আর আমি তোমার ননদ।’
‘হুম! আমাদের সম্পর্ক টা দেখেছো? এদিক দিয়ে তুমি আমার ভাবি আমি তোমার ননদ। আরেক দিক দিয়ে আমি তোমার ভাবি, তুমি আমার আমার ননদ। ননদ ভাবি দুজন।’
তখন শুভ দরজায় হেলান দিয়ে বলে, ‘মিহি? বিয়ে পাগলী মেয়েটাকে দেখছো? আমি সারা বাড়ি খুঁজেও পাচ্ছি না।’
সুহা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ভাইইই?’
হেসে ফেলে শুভ। এগিয়ে এসে সুহার গলায় ডায়ামন্টের লকেট পরিয়ে বলে, ‘কিছু দিনের জন্য ধার দিছি।’ সুহা আয়নায় দেখতে দেখতে বলে, ‘আর ফেরত পেলে তো।’
মিথিলা রুমে আসে তখন। মেয়ে কে বউ সাজে দেখে বিস্মিত চোখে তাকায়। ছলছল চোখে মেয়ের গালে হাত দিয়ে বলে, ‘মাশা’আল্লাহ!’
পাশ থেকে রাশেদা বলে উঠে, ‘ভাবি, চিন্তা করবেন না। সুহা আমার নিজের মেয়ের মতো থাকবে। আর আমার মেয়ে তো আপনাদের কাছেই।’
আরো কিছুক্ষণ কথা হলো তাদের মাঝে। আয়াজ রায়হানের ডাকে সুহা কে নিচে নেওয়া হলো। ড্রয়িংরুমে সকলে উপস্থিত। আদিল রাহুল সামির আর শান্ত। ওদের দেখে সুহা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ভাবা যায় কত বড় বেহায়াপনা করলো সে বিয়ের জন্য? না করেও বা কি করবে? মাহিন শুধু তার। কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
সোফার মাঝামাঝি জায়গায় শুভ্র রঙ্গের পাঞ্জাবি পরে বসে আছে মাহিন। সুহা কে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে চোখ আটকে যায় তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার সুহারানীর দিকে। আজ তার জন্য লাল শাড়ী পরে বউ সেজেছে সুহা। আনমনে মৃদু হেসে ফেলে মাহিন। পাশ থেকে শান্ত মাহিনের হাতে কুনই দিয়ে গুতা দিয়ে বলে, ‘ওয়াহ্ ব্রো, আমাদের কথাওও তো চিন্তা করতে পারতি? এভাবে একা রেখে মিঙ্গেলের দলে যোগ দিচ্ছিস। ভালো করলি কাজ টা?’
মাহিনও ফিশফিশ করে উত্তর দেয়, ‘তুই চাইলে সোজিতার কথা ফুপিকে বলতে পারি!’
মাহিনের কথায় খুক খুক করে কাশে শান্ত। পরোক্ষনে নিজেকে সামলে বলে, ‘ওই মেয়ে এখানে আসছে কেনো? আজীবন সিঙ্গেল থেকে মরবো তাও ওই লঙ্কা কে বিয়ে করবো না।’
মাহিন শান্তর কাধে চাপড় দিয়ে বলে, ‘সময় বলে দিবে।’ বিরক্তির শ্বাস ফেলে শান্ত। সোজিতা হলো শান্তর চাচাতো বোন। সোজিতা প্রচন্ড ঝগড়াটে তাই শান্ত ওকে দেখতে পারে না। বলতে গেলে অপছন্দ কিন্তু তাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ের আলাপ হয়েছে। শান্ত বেচারা এই ব্যাপার থেকে যথা সম্ভব নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। যেচে পরে তো আর এমন ঝগড়াটে মেয়ে জীবনে আনবে না। যদিও সোজিতা শান্ত কে পছন্দ করে।
সুহাকে মাহিনের পাশে বসানো হয়। সুহা আসতেই কাজি বিয়ে পরানো শুরু করে। মাহিন সুহার কানের কাছে ফিশ ফিশ করে বলে, ‘সুহারানী, আজকে তোমাকে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে।’ সুহা লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। গাল টুকটুকে লাল হয়ে গেছে।
বিয়ে পরানো শেষে সবাই এক সাথে দো’য়া করে একে অপরকে মিষ্টি খাওয়াই। কাজিকে যথাযথ আপ্যায়ন করে বিদায় দেয় সবাই। রাতের খাবার শেষে একে একে শুভর ফ্রেন্ডরা চলে যায়।
মিহির সুহা কে তার রুমে বসিয়ে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে চলে যায়। সুহার বুক ঢিপঢিপ করছে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর মাহিন রুমে আসে। মাহিন চুপচাপ কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। মাহিন যেতেই সুহা লম্বা দম ফেলে। তার উপস্থিতি এতোক্ষণ সুহা কে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছিলো। সুহা উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরনের ভাড়ি গয়না গুলো খুলে ফেলে। তখন মাহিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলে, ‘সুহা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এসো।’ বলেই বারান্দার দিকে চলে যায় মাহিন। সুহা বাধ্য মেয়ের মতো ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে মাহিনের পাশে বেতের সোফায় বসে।
আকাশে পূর্ন চাঁদ তার পুলকিত আলোর রেশ চারপাশে ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই চাঁদের জ্যোৎস্না গায়ে মাখছে সদ্য বিবাহিত দুজন। দীর্ঘ নিরবতার পর সুহা বলে, ‘আপনি কি খুশী নন?’
ফুশ করে নিশ্বাস ফেলে মাহিন। তারপর আহত গলায় বলে, ‘জানো সুহা? আব্বুর ইচ্ছে ছিলো তার পছন্দের মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিবে। আমার বিয়ে তে নিজ দায়িত্বে সব পালন করবে। ঘরে নতুন বউ এনে তার হাতে বানানো চা রোজ সকালে খাবে। আজ আব্বু নেই, কিন্তু আমি আছি। আব্বুকে অনেক মিস করছি সুহা। এখন আব্বু থাকলে কত খুশী হতো জানো?’
সুহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিনের দিকে। এতো দিনের সম্পর্কে মাহিনকে কখনো এতো টা ভেঙ্গে পরতে দেখেনি সুহা। মাহিন হাল্কা ভাঙ্গা গলায় বলে, ‘জানো আব্বু চলে যাবার পর অনেক বড় দায়িত্ব আমার কাধে দিয়ে গেছে। খুব কষ্টে আম্মু আর মিহিরকে সামলেছি আমি। খুব চিন্তায় ছিলাম মিহিরের ফিউচার নিয়ে। আমি জানি শুভর কাছে মিহু অনেক ভালো থাকবে।’
মাহিনের কথার মাঝে সুহা তার এক হাতে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘চিন্তা করবেন না ভাইয়া মিহু আপুইকে অনেক ভালোবাসে।’
শান্ত হয় মাহিন। নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে সে। তারপর শান্ত গলায় বলে, ‘আই নো!’
সুহা চুপচাপ মাহিনের কাধে মাথা রাখে। নিরবতা নেমে আসে দুজনের মাঝে। কিছুসময় পর মাহিন বলে উঠে, ‘সুহা?’
সুহা কাধে মাথা রাখা অবস্থাতেই ছোট করে উত্তর দেয়, ‘হুম!’
মায়াবী কন্ঠে বলে মাহিন, ‘ভালোবাসো?’
সুহা লজ্জা পায় কিছুটা। কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থাকে। মাহিন নিশব্দে হেসে ফেলে। তখন সুহা মাথা তুলে বলে উঠে, ‘আজকে একটা গান শুনাবেন?’
মাহিন নির্বিকার ভাবে বলে, ‘আমি গান পারি না।’
সুহা চপাট রাগ দেখিয়ে বলে, ‘মিথ্যে বলেন কেনো? আমি জানি আপনার গানের গলা অনেক সুন্দর। আমাকে একবারো গান শুনাননি। আজ শুনাতেই হবে।’
অবাক চোখে সুহার দিকে তাকিয়ে বলে মাহিন, ‘তুমি কি করে জানো?’ সুহা বলে, ‘মিহু ভাবি বলেছে। শুনাবেন?’
মাহিন হেসে বলে, ‘আচ্ছা!’ সুহা উঠে রুম থেকে গিটার নিয়ে আসে। মাহিন গিটার হাতে নিয়ে মৃদু সুর তুলতে থাকে। সুহার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করে…
#অনুভবী_হিয়া তোমারেই শিহরণ
জোনাকী সন্ধিয়ার সেমেকা এই মন
উজাগরি নিশাত তোমারে আগমন
জোনাকী আকাশত উমলে এই মন
অনুভবী হিয়াত তোমারেই শিহরণ
জোনাকী সন্ধিয়ার সেমেকা এই মন
উজাগৰি নিশাত তোমারে আগমন
জোনাকী আকাশত উমলে এই মন
শরতর প্ৰতিটো সন্ধিয়াত
তোমারেই নাচোন
তোমাৰ হাঁহিতেই জীপাল
এহেজার সপোন
তুমি শরতর অচিনাকী সুর
বিয়পি যাই বহু দূর সুদূর
তোমারেই নাচোন
এহেজার সপোন
তোমারেই নাচোন
এহেজার সপোন
দশোদিশে বিয়পি উভতিবা
হিয়াতে থিতাপি ল’বলৈ
শুনাচোন রোবা কিছু সময়
আছে বহু কথা ক’বলৈ
কিছু কথা প্ৰেমর ভাষার
সাঁচি থোৱা বহু আগরেই পরা
অনুমতি হ’লে তোমার
উতি যাবো মোৰ মনরে পরা! ❤️
পুরো গান শেষ করে চমৎকার হাসে মাহিন। সুহাও প্রতিউত্তরে মুচকি হাসে। তারপর মাহিনের উদ্দেশ্যে ফিচেল গলায় বলে, ‘আপনার কন্ঠ অনেক সুন্দর কিন্তু..’
মাহিন ভ্রুঁ কুঁচকে বলে, ‘কিন্তু কি?’
সুহা বিব্রত হয়ে বলে, ‘গানের আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।’ বিস্মিত হয়ে তাকায় মাহিন। তারপর বলে, ‘মানে কি? এতোক্ষণ তাহলে কাকে ডেডিকেটেড করে গাইলাম আমি?’
সুহা অসহায় চোখে তাকিয়ে বোকা হাসি দেয়। মাহিন মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করে বলে, ‘ঘুমিয়ে যাও। অনেক রাত হয়েছে।’
ভ্রুঁ উচিয়ে সুহা বলে উঠে, ‘মানে আজকে রাতেও ঘুমাতে বলছেন? কই একটু আড্ডা দিবো তা না।’
মাহিন সুহার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে, ‘তাহলে??’ মাহিনের চাহনীতে সুহা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ‘আমি আসলেই ঘুমাতে যাই। গুড নাইট!’
সুহা রুমে এসে কাভার্ড থেকে থ্রি-পিস বের করে ওয়াশরুমে যাবে এমন সময় মাহিন সুহাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর আর জানি না। ?
চলবে??
#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৪০.
সকালের কোলাহলে ঘুম ভাঙ্গে সুহার। চোখ মুখ কুঁচকে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সে রুমে একা। মাহিন উঠে পরেছে ভেবে সুহা নিজেকে গুছিয়ে ওয়াশরুমে যায়। গোসল শেষে লাল রঙের ওয়ান পিস জামা, কালো জিন্স পরে বের হয় রুম থেকে। হাতে থাকা রক্তিম মেহেদীর রঙের সাথে পরিহিত লাল জামা নববধূ লাগছে। শুধু শাড়ি মিসিং আরকি। ডাইনিং টেবিলেং টেবিলে গিয়ে দেখে সকলে উপস্থিত। সুহা চুপচাপ নিজের চেয়ার টেনে বসে পরে। তখন মিথিলা জিজ্ঞেস করে, ‘একা এলি যে মাহিন কোথায়?’
প্লেটে খাবার নিতে গিয়ে থেমে যায় সুহা। কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাজ ফেলে বলে, ‘ঘুন থেকে উঠে তো দেখি নি। তোমরা জানো না?’
তখন রাশেদা বলে উঠে, ‘ছেলেটা এমনই। কখন বের হয়, কখন আসে কিছুই জানি না। হয়তো গোয়েন্দাগিরি করতে গেছে। এসে পরবে ইন’শা’আল্লাহ।’
মিহিরও সম্মতি জানায় রাশেদার সাথে। সুহা চিন্তার ভাজ এক পাশে রেখে খাবারে মন দেয়।
রুমে এসে পায়চারী করছে সুহা। বারবার মাহিনের নাম্বারে ডায়াল করছে কিন্তু মাহিন কল ধরছে না। এবার যেনো তার চিন্তা রিরি করে বেরে গেলো। কাল রাতের কথা মনে পরতেই বুকটা ধক করে উঠে। কু ডাকছে মন। শেষ রাতে সুহা খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখে। কেউ একজন মাহিনকে ধারালো চাকু দিয়ে জখম করে। এমন ভয়ানক স্বপ্ন দেখে তাৎক্ষনাৎ শুয়া থেকে উঠে বসে। পাশে মাহিনকে ঘুমাতে দেখে মন টা একটু শান্ত হয় তার। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে নেয়। মাহিনের পাশে শুয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুহা। রাত থেকেই কেমন কু ডাকছে তার মন। বারবার মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মোবাইলটা বিরক্তি নিয়ে বিছানায় ফেলে বসে পরে সুহা। কিছুই ভালো লাগছে না তার। তখন মোবাইলে টুংটাং আওয়াজ কানে আসে। তড়িৎ শক্তিতে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বারে ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজে মাহিনের কিনা সদ্য নতুন এপার্টমেন্টের ঠিকানা দিয়ে লিখা,
‘তাড়াতাড়ি আসো সারপ্রাইজ আছে। অপেক্ষা করছি তোমার জন্য সুহামনি!’
ম্যাসেজ টা দেখে খুশী হয় সুহা। তারমানে মাহিন আমাকে সারপ্রাইজ দিতে সকাল সকাল কাউকে না বলে বেরিয়ে গেছে? আর কিছু ভাবলো না সে। তাড়াতাড়ি করে কাউ কে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে। বাড়ির গাড়ি নিয়েই বের হয় সুহা। ড্রাইভার কে কাঙ্ক্ষিত জায়গা দেখিয়ে গাড়ি চালাতে বলে। বৃদ্ধ ড্রাইভার করিম আড় চোখে একবার সুহা কে দেখে। তারপর ওখানে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুহা হাসিমুখে উত্তর দেয়, ‘মাহিন আমাকে সারপ্রাইজ দিতে তার এপার্টমেন্টে যেতে বলেছে। আই’ম সো এক্সাইটেড চাচা।’
বিনিময়ে করিম মলিন হাসে। কারন সকালে মাহিন বেরিয়ে যাবার সময় করিম জিজ্ঞেস করতেই মাহিন বলেছিলো ইনভেস্টিগেশনের জন্য একটা জায়গায় যেতে হবে আর সেটা খুব আর্জেন্ট। কিন্তু সুহার কথা শুনে করিম বিশ্বাস করতে পারলো না। মনে সন্দেহের ছাপ রেখেই ড্রাইভে মনোযোগ দেয় সে।
দীর্ঘ ৪০ মিনিট ড্রাইভ করার পর কাঙ্ক্ষিত স্থানে এসে পৌছায় সুহা। ড্রাইভার চাচা কে বিদায় জানিয়ে নয়তলার বিল্ডিং’য়ের ভিতরে ঢুকে সে। সুহা যেতেই করিম মাহিনের নাম্বারে কল দেয়। দুইবার রিং হবার পরেই মাহিন কল রিসিভ করে। তখন করিম জিজ্ঞেস করে, ‘বাবা কোথায় আছো তুমি?’
মাহিন স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠে, ‘কাকা আপনাকে না সকালে বললাম?’
থমথমে খায় করিম। ফিচেল গলায় বলে, ‘তাহলে সুহা বললো যে তুমি তাকে সারপ্রাইজ দিচ্ছো।’
মাহিনের কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পরে তখন। তারপর বলে, ‘আমি বলেছি মানে? সুহার সাথে তো আমার এমন কোনো কথা হয়নি।’
‘তাহলে সুহা যে আমাকে নিয়ে এলো এখানে।’
মাহিন চিন্তিত কন্ঠে বলে, ‘কোথায় আছেন আপনারা?’
‘তুমি যেই এপার্টমেন্ট নিয়েছ সেখানে। বাবা আমার কেমন সন্দেহ হইতাছে। তাড়াতাড়ি আসো।”
মাহিন আর এক মিনিটও দাঁড়ায় না। কাউকে কিছু না বলে ছুটে বিরিয়ে আসে সে। বাইক স্টার্ট দিয়ে তুমুল ভেগে চালাতে থাকে।
.
মাহিন কল কাটতেই করিম শুভর নাম্বারে কল দিয়ে সব বলে। শুভর পাশে মিহিরও ছিলো বিধায় সে সব শুনেছে। শুভ চিন্তায় পরে যায়। কারণ মাহিন বলেছিলো সুহা আর মিহিরের লাইফ অনেক রিক্সে আছে। শুভ বেরিয়ে যাবার সময় বাধ সাদে মিহির। সেও যাবে শুভর সাথে। বাধ্য হয়ে মিহিরকে নিয়ে বের হয় শুভ।
________________
লিফটে উঠে চার নাম্বার বাটন চাপে সুহা। মনটা বেশ ফুরফুরে তার। উত্তেজনায় টান টান অবস্থা। চার তলায় লিফট থামতেই বেরিয়ে যায় সুহা। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায় সে। কিন্তু দরজা খুলে না কেউ। পরপর কয়েকবার বাজানোর পরেও যখন দরজা খুলে না তখন সুহা হাত বারিয়ে লক ঘুরায়। দরজা খুলতেই অবাক হয়ে যায় সে। লম্বা দম ফেলে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে। পুরো ফ্লাট ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা। সুহা কয়েকবার মাহিন বলে ডাক দেয়। এগিয়ে যেতেই হঠাৎ কিছু একটার সাথে পায়ে উষ্টা খায়। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে সে। তখন পুরো ফ্লাটের লাইট অন হয়ে যায়। সুহা পুরো ফ্লাট টাতে চোখ বুলায়। সোফায় চোখ যেতেই থমকে যায় সে। কেউ একজন পায়ের উপর পা তুলে আয়েশি ভঙ্গিতে আপেল খাচ্ছে। সুহা ভয়ার্ত গলায় বলে, ‘কে আপনি?’
আপেলে কামড় বসিয়ে রসালো কন্ঠে উত্তর দেয়, ‘জিহান কবির!’
সুহা ভয়ে শুকনো ঢুক গিলে। অতঃপর শক্ত গলায় বলে, ‘আপনি এখানে কেনো? মাহিন কোথায়?’
জিহান নির্বিকার ভাবে উত্তর দেয়, ‘মাহিন এখানে থাকবে কেনো? আমি তোমাকে আসতে বলেছি যেহেতু আমিই থাকবো তাই না সুহামনি?’
বিস্মিত চোখে তাকায় সুহা। অবাক কন্ঠে বলে, ‘আপনি ডেকেছেন মানে?’
বাকা হেসে ফেলে জিহান। তারপর বলে, ‘ইয়াহ্ আমি তোমাকে ম্যাসেজ করেছিলাম কিউটি। আর তুমি? হুরহুর করে এসে পরেছো।”
সুহা তড়িঘড়ি করে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে চাইলেই তার আগে জিহান দরজায় গিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ‘বাহ্ মাহিনের চয়েজ আছে বলো। তুমি তো দেখছি আসলেই অনেক হট বেবস। আসো আজ এঞ্জয় করি মাহিন কিছু জানবে না ট্রাস্ট মি।’
রাগে অপমানে শরিল রিরি করে উঠে সুহার। জিহানের থেকে এমন বাক্য শুনে হাত উঠিয়ে থাপ্পড় দিতে যাবে তখন জিহান সুহার হাত ধরে তাকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। সুহা নিজেকে ছাড়ার চেষ্টা করতেই জিহান বলে উঠে, ‘উহুম বেবি এতো সহজে ছাড়ছি না তোমায়। মাহিনের সাথে সব হিসেব নিকেশ আজ তোমাকে দিয়ে চুকাবো সুহামনি।’
সুহার বুক ধক করে উঠে। তাহলে মাহিনের সাথে শত্রুতামী করে জিহান তাকে ব্যবহার করছে? আজই তাহলে সুহার শেষ দিন? আত্মসম্মান আজই বিসর্জন হবে সুহার? নিজেকে শান্ত করে সুহা হঠাৎ জিহানের পায়ে লাথি দিয়ে সামনে দৌড় দেয়। জিহানও সাথে সাথে সুহার পিছে দৌড় লাগায়। সুহা একটা রুমে গিয়ে দরজা লাগাতে নিলেই জিহান হাত দিয়ে আটকে ফেলে। সুহা দরজার কাছ থেকে দূরে গিয়ে একটা কাচের ফ্লাওয়ার ব্যাজ হাতে নিয়ে বলে, ‘খবরদার একদম কাছে আসার চেষ্টা করবি না।’
উচ্চস্বরে হেসে ফেলে জিহান। তারপর বলে উঠে, ‘দেখা যাক।’ এগিয়ে যায় সুহার কাছে। সুহার হাত ধরতেই সুহা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির কারনে পুরো রুম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। স্বজোড়ে একটা থাপ্পড় দেয় সুহার গালে জিহান। তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায়। জিহান সুহার চুল ধরে বলে, ‘কি ভেবেছিস তোকে বেড পার্টনার বানাতে এনেছি? চাইলেই পারতাম কিন্তু আমি এতো টাও নিকৃষ্ট না। তোকে মেরে আমি আমার মায়ের প্রতিশোধ নিবো। মাহিন যেমন আমার মাকে দূরে নিয়েছে ঠিক তেমনি মাহিনের কাছের মানুষকে মেরে প্রতিশোধ নিবো। তোকে মেরে মিহির কে মারবো।’
তীব্র ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে সুহা। হাতের পাশে থাকা কাচের টুকরো হাতে নিয়ে জিহানের বাহুতে ঢুকিয়ে দেয়। জিহান ব্যাথায় হাত আলগা করে ফেলে। সুহা দৌড়ে অন্য দরজা দিয়ে বের হয়। সামনে এসে দেখে সে বারান্দার এসেছে। শিট কত বড় ভুল করলো সে। পালাতে পিছে ঘুরে দেখে জিহান বাকা হেসে দাঁড়িয়ে আছে। সুহা দুকদম পিছিয়ে রেলিং’য়ের কাছে গিয়ে বলে, ‘প্লিজ আমাকে মেরো না।’
জিহান এগিয়ে এসে সুহার দু পাশে হাত রেখে ঝুকে বলে, ‘বেবি, আজকে তোমাকে কেউ বাচাতে পারবে না। সো সরি কিউটি। সত্যি কি জানো? তুমি খুব সুন্দর কিন্তু মাহিনের বউ। এটাই সবচেয়ে বড় ভুল তোমার।’
বলেই সুহার মুখের কাছে মুখ নেয় জিহান। সুহা মুখ কুচকে ফেলে। এক হাতে সুহার মুখ উপরে তুলে গালে চুমু দিয়ে বলে, “গুড বাই সুহামনি!’ তখন মাহিনের কন্ঠ কানে আসে সুহার। অস্ফুটিত কন্ঠে সুহা কাপাকাপা গলায় ‘মা’হি’ন’ বলে। জিহান দাতে দাত চেপে ধাক্কা দেয় সুহাকে। ‘আ/হ’ বলে চেঁচিয়ে উঠে সুহা।
চলবে??