অনুভবী_হিয়া,৬,৭,৮

0
1032

#অনুভবী_হিয়া,৬,৭,৮
#মাইশাতুল_মিহির

৬.

স্নিগ্ধ সকাল! চারদিকে পাখির কোলাহল। ভোরের আলো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাতাসে বইছে হাসনাহেনা ফুলের ঘ্রান যা মাতোয়ারা করে তুলছে মন। এমন একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এক কাপ চা আর হুমায়ন আহমেদের ‘অপেক্ষা’ বই বেশ মানানসই বটে। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বই বন্ধ করে উঠে মিহির। চুল গুলো হাত দিয়ে খোঁপা করে গায়ে ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে রাশেদা রুটি বেলছে। ‘আমাকে দাও আম্মু।’ বলে মায়ের হাত থেকে খুন্তি নিয়ে রুটি বেলতে শুরু করে। নাস্তা তৈরি শেষে মাহিনের রুমে গিয়ে দেখে মাহিন বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।

‘বাব্বাহ্! আজকে কোন দিকে সূর্য উঠেছে শুনি?’ মাহিনের পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বললো মিহির। মাথা তুলে বিরক্ত হয়ে বলে মাহিন, ‘ফাজলামি করিস না তো। পড়তে বসছি দেখছিস না?’

‘সেটা তো আমিও বলতেছি। কেমনে কেমনে তুমি নিজে থেকে বই নিয়ে পড়তে বসলে তাও আবার সকাল বেলা। এইসময় তো তোমাকে ঘরে বেধেও রাখা যায় না। কাহিনী কি ভাইয়া?’ ভ্রুঁ নাচিয়ে বলে মিহির।

‘এমন করে বলছিস যেনো আমি কখনো পড়তে বসি না। হারামির গুলার জন্য বাহিরে যেতে ভাল্লাগছে না। তাই ম্যাথের এই থিউরি গুলো পড়তেছিলাম।’

‘তোমার ফ্রেন্ডরা আবার কি করেছে?’

‘কাহিনী আছে অনেক। এখন বলতে পারবো না। যা।’

‘না এখনি বলো!’

‘আর বলিস না! গতকাল কলেজে…..

ফ্লাশ ব্যাক.!

মাহিন কলেজে ঢুকার সময় হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। মাহিন দাঁড়িয়ে থাকলেও মেয়েটা নিচে পরে যায়। মেয়েটি ‘ওহ আল্লাহ গো আমার কোমড়।’ বলে কোমড়ে হাত দিয়ে উঠে মাহিনের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বলে, ‘এই ছেলে চোখ কি হাতে নিয়ে হাটেন নাকি? মেয়ে মানুষ দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছে করে হ্যাঁ? আপনার নামে আমি মাম:লা করবো। জেলের ভাত খাওয়াবো আমি। কানা কোথাকার আমার কোমরের বারো টা বাজালেন।’

মাহিন কিছুটা বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায় ক্লাসে ]

‘ছ্যাঁচড়া মেয়ে ইচ্ছে করছিলো ঠাটিয়ে দুই টা থা:প্পড় মা:রি। ইডিয়ট মেয়ে কোথাকার।’

মিহির হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পরার অবস্থা। হাসি কোনোমতে থামিয়ে বলে, ‘তো এর সাথে বাহিরে না যাওয়ার কি সম্পর্ক?’

‘হারামি গুলা ওই মেয়েকে নিয়ে বার বার ক্ষেপাচ্ছে আমাকে বলছে একটা মেয়ে তোকে ধুলাই দিলো। জাস্ট অসয্যকর। আর তুই এইভাবে হাসছিস কেনো ফাজিল। যা ঘর থেকে বের হ।’ বিরক্ত নিয়ে বলে মাহিন।

‘নাস্তা রেডি খেতে আসো।’ বলে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলো মিহির। বোনের এই পাগলা হাসি দেখে নিজেও হেসে দেয় মাহিন। সবার সাথে গম্ভীর থাকলেও বোনের সাথে বেশ ফ্রি। একে অপরের কাছ থেকে সব কিছু শেয়ার করে তারা। কলিজার বোন বলে কথা।
__________________

সকালে ব্রেকফাস্ট শেষ করে শুভ সুহাকে কলেজে নামিয়ে অফিসে চলে গেলো। সুহা প্রাইভেট কলেজে পড়ে, এখানে কলেজ আর ভার্সিটি এক সাথে। কলেজের গেইটে লারা আর মারিয়া অপেক্ষা করছিলো সুহার জন্য। সুহা তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই লারা বললো, ‘সুহা বেবি, ছেলেটা কে রে? উফফ কত্ত কিউট। ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি। নাম কিরে?’

‘আমার ভাই রাফিদ রায়হান শুভ।’

‘হারামি তোর এত্তো সুন্দর একটা ভাই আছে আর তুই আমাকে বলিস নি? কুত্তা!’ রেগে বললো লারা। লারার কথায় বিরক্ত নিয়ে বললো সুহা, ‘ক্যান ভাই থাকলেই কি মাইক ডেকে বলতে হবে নাকি?’

‘এমন সুন্দর ভাই থাকলে বলতেই হবে। ইয়ার বড় ধরনের ক্রাশ খাইছি।’ লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে বললো লারা। চোখ বড় বড় করে তাকালো সুহা। মারিয়া বলে উঠলো, ‘লারা! গরুও এতো ঘাস খায় না তুই সেকেন্ডে সেকেন্ডে যত ক্রাশ খাছ। ছ্যাঁচড়া মাইয়া।’

‘আমার ভাই যদি জানতে পারে না মনু তোমার এই সুন্দর সুন্দর গাল দুইটা হাত চালিয়ে লাল করে দিবে। আর ভাইয়ার গফ আছে। ট্রাই কইরা লাভ নাই।’ হাই তুলে বলে সুহা। লারা ঠোঁট উল্টে ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাটা ধরে। হাসতে হাসতে পিছু নেয় সুহা মারিয়া।
_________

ক্যান্টিনে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো মাহিন। হঠাৎ পিছন থেকে ‘এই কানা হ্যান্ডসাম বিলাই!’ বলে কেউ এক জন ডেকে উঠে। কণ্ঠস্বর কানে যেতেই ভ্রুঁ কুঁচকে পিছনে তাকাই মাহিন। গতকালকের সেই মেয়েটিকে দেখে বিরক্তবোধ করে সে। কিছু না বলে ঘাড় ফিরিয়ে নেয়।

‘হাই! আমি সুহানা রায়হান। সবাই আমাকে সুহা বলেই ডাকে।’ মাহিনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে সুহা। মাহিন বিরক্ত হয়ে বলে, ‘তো?’

সুহা মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করে মাহিনের পাশের সিটে বসতে বসতে বলে, ‘কেউ একজন নাম বললে তাকেও নিজের নাম বলতে হয় জানেন নাহ?’

‘আপনাকে কেনো আমার নাম বলবো? আর আপনি আমার পাশে কেনো বসেছেন?’ পাল্টা প্রশ্ন করে মাহিন। সুহা হাসি মুখে বলে, ‘আমি আপনার ছোট। আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন। আই ডোন্ট মাইন্ড।’

‘বাট আই মাইন্ড। অপরিচিত কাউকে আমি তুমি করে বলি না। আর সেটা যদি হয় মেয়ে।’

‘পরিচিত হতে কতক্ষন। তো মিঃ এখন আপনার নাম টা তো বলুন?’

চেয়ারে গা এলিয়ে বললো মাহিন, ‘বলতে বাধ্য নয়। আপনি এখন আসতে পারেন আপু।’ মাহিনের মুখে আপু ডাক শুনে তেঁলেবেগুনে জ্বলে উঠে সুহা। ধপ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে, ‘আপু? কে আপু? আমি তোর কোন জন্মের বইন লাগি? নাম জানতে চাইছি বলে কি ভাব মারতেছোস? থা:প্রা:ইয়া ভাব ছুটামু। ভালোই ভালোই নাম বল নয়তো আজকে তোর একদিন তো আমার দশ দিন।’ একনাগাড়ে কথা গুলো বলে বড় বড় শ্বাস নেয় সুহা। হঠাৎ সুহার এমন আচরণে অবাক হয়ে যায় মাহিন। কয়েক সেকেন্ড অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলে, ‘এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? কোন সাহসে তুই করে বললে? মুখে যা আসছে সেটাই বলছো। মাথায় কি সিট আছে নাকি থাকলে পাবনা যাও আমার মাথা খেও না। এইসব ফালতু পাবলিক কে কলেজে ঢুকতে দেয় কে। স্টুপিড গার্ল।’

‘কি বললেন আমি ফালতু পাবলিক? আমি পাগল? তাহলে আপনি কি? আপনি তো একটা আস্তো কানা বিলাই।’ ডান হাতের তর্জনী আঙুল তুলে বলে সুহা। ক্যান্টিনের বাকিরা আপাতত নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ‘তুমি তো একদম শ্যাওলা গাছের পেত্নীর মতো। মর্ডান পেত্নী যাকে বলে। সামনে থেকে সরো ফাজিল মেয়ে কোথাকার।’ বলেই ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো মাহিন। পাশে দাঁড়িয়ে রাগে ফুশছে সুহা। তাকে শ্যাওলা গাছের পেত্নী বলেছে। কত বড় সাহস।

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

৭.

ব্যস্ত শহরে সময় চলছে আপন গতিতে। সময়ের গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলছে মানুষ। এরই মাঝে কেটে গেছে প্রায় সাপ্তাহ খানেক। অফিসের কাজের বাহিরে কথা হয়নি মিহির আর শুভর মাঝে। কথা হয়নি বললে ভুল হবে। শুভ অনেক বার কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু মিহির সুযোগ দেয় নি। এরিয়ে চলেছে সবসময়।

কেবিনের বাইরে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে মিহির। ভিতরে আশফাঁশ করছে। পরনে আকাশী রঙের চুড়িদার জামা, নীল হিজাব। বড়বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে কেবিনে নক করে মিহির। ভিতর থেকে ‘কাম ইন।’ শব্দ শুনে দরজা ঠেলে ঢুকে।

‘কি চাই?’ আগন্তক ব্যক্তি কে না দেখেই ফাইলের দিকে তাকিয়ে বলে শুভ। শুভর খেয়ালিপনায় রেগে যায় মিহির। ঝাঁঝালো গলায় উত্তর দেয়, ‘ফালতু কাজে নিশ্চয় আসি নি। নতুন প্রজেক্টের জন্য কিছু ফাইল রেডি করা হয়েছে সেটা দেখাতে আসছি। দেখুন আর আমাকে উদ্ধার করুন।’ শুভর হাতে ফাইল টা এগিয়ে দেয় মিহির। মিহিরের এমন আচরনে অবাক হয় শুভ। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সে। তাকে আরো রাগানোর জন্য গলা পরিষ্কার করে বলে শুভ, ‘লিসেন মিস মিহির, আমি তোমার বস। সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবে। নেক্সট টাইমে আমার সাথে জুর গলায় কথা বলার চেষ্টা করবে না। গট ইট?’

‘জ্বী!’ ছোট করে উত্তর দেয় মিহির। শুভ ফাইল হাতে নিয়ে ঘেটে দেখছে। আড় চোখে মিহিরের দিকে তাকাচ্ছে বার বার। মিহিরের সাথে কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে সে। ফাইল চেক করা শেষে শুভ বলে, ‘মিহি! তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো। আজকে কি তুমি ফ্রি আছো? নীমতলায় যাবে আমার সাথে?’

‘নাহ! আমি খুব বিজি। কারোর সাথে একান্তে সময় কাটানোর মতো সময় আমার কাছে নেই। ধন্যবাদ!’ বলেই ফাইল নিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। মিহিরের কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় শুভর। অফিসের অন্য এমপ্লয়দের সাথে তো ঠিকই হেসে হেসে কথা বলে অথচ আমার সাথে ঝাঁঝ দেখায়, এভোয়েট করে চলে। রাগে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে শুভ। ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার সব কিছু। গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায় শুভ। এই মুহূর্তে রিফ্রেশমেন্ট দরকার তার।
____________

কাজ শেষ করে দুপুরে অফিস থেকে বাসায় ফিরে মিহির। সোফায় মাহিনের সাথে সবুজ বসে টিভি দেখছিলো। সবুজ মিহিরের বড় মামার ছেলে। মিহির সবুজ কে দেখে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলে, ‘কেমন আছো ভাইয়া? কখন এলে?’

মিহিরের প্রশ্ন শুনে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে সবুজ, ‘এইতো ভালো। ঢাকায় এসেছিলাম একটা কাজে। ভাবলাম তোমাদের সাথে দেখা করে যাই। এগারো টার দিকে এসেছি। তা তোমার কি খবর?’

‘জ্বী ভালো।’ হাসি দিয়ে বলে মিহির। ‘যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ক্ষিদে পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।’ পেটে হাত বুলিয়ে বলে সবুজ। মিহির আর মাহিন ফিক করে হেসে ফেলে। ‘আচ্ছা!’ বলে রুমে যায় মিহির। গোসল করে খাবার টেবিলে সাজাতে সাহায্য করে রাশেদাকে। খাবারের পর্ব শেষ এখন ভাত ঘুমের পালা।
_______________

মিহির বিকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে মাহিন আর সবুজ বাহিরে যাবে ঘুরতে। রাশেদার কথায় মিহিরও সাথে তৈরি হয়ে নেয়। কালো ওয়ান পিসের সাথে কালো হিজাব, এক হাতে কাঁচের রেশমি চুড়ি আরেক হাতে ঘড়ি, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, চোখে কাজল ব্যাস রেডি সে। কিছুক্ষন ঘুরার পর ফুচকা খেতে যায় তারা। মাহিন কোক আনার জন্য দোকানে যায়। সবুজের কথায় হেসে হেসে ফুচকা খাচ্ছে মিহির। দূর থেকে গাড়ির থেকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে একজোড়া রক্তিম চোখ। কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে আছে। গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে চলে যায় শুভ। রাগে ক্ষোভে ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। তার সাথে কথা বলার সময় নেই অথচ এই ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে ফুচকা খাচ্ছে। ইডিয়ট!
___________

পরদিন অফিসে গিয়েই মিহির কে কেবিনে দেখা করতে বলে শুভ। মিহির সাত পাঁচ না ভেবে কেবিনে যায়। গিয়ে দেখে শুভ উল্টো ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। মিহির কেবিনের ভিতরে ঢুকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই শুভ বলে উঠে, ‘ছেলেটা কে?’

হঠাৎ এমন প্রশ্নে কিছুটা ভড়কে যায় মিহির। কোন ছেলের কথা বলছে শুভ। কিছু বুঝতে না পেরে বলে, ‘কার কথা বলছেন বুঝতে পারছি না।’ শুভ রেগে মিহিরের এক হাতের বাহু চেপে ধরে বলে, ‘বুঝতে পারছো না তুমি তাই না? নাকি ঢং করছো? রাস্তা ঘাটে ছেলে দের সাথে ঢলাঢলি করতে ভালো লাগে খুব হ্যাঁ?’

মিহির নিজেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে বলে, ‘কি করছেন আমার হাত ছাড়ুন। লাগছে আমার।’ শুভ মিহিরের দুহাত কোমড়ের পিছে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে, ‘আমি ধরলে দুষ আর রাস্তা ঘাটে ছেলেদের সাথে ঘুরাঘুরি করা দুষের কিছু না।’

‘সমস্যা কি আপনার কখন থেকে আজে বাজে কথা বলছেন আপনি। আমি কোনো ছেলের সাথে যায়নি। হাত ছাড়ুন আমার লাগছে।’ বলে নিজেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে মিহির। শুভ মিহির কে দায়ালের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে হাত ধরে রাগ দ্বিগুণ করে বলে, ‘তোমার সাহস কি করে হয় অন্য ছেলের সাথে ঘুরার? আমার সাথে কথা বলার সময় নেই তোমার। আমাকে এভোয়েট করে চলো আর বাহিরে ছেলেদের সাথে ফুচকা খেতে চলে যাও। ছেলে টা কে ছিলো বলো মিহি।’

মিহির এতোক্ষনে টনক নড়লো। সে তো কোনো ছেলের সাথে দেখাতো দূর কথাও বলে না। গতকাল সবুজ ভাইয়ার সাথে ফুচকা খেয়ে গিয়েছিলো। আর সেটাই হয়তো কোনো ভাবে শুভ দেখেছে। তাই এইভাবে রাগ দেখাচ্ছে আমার উপর। মিহি প্রতিউত্তরে কাটকাট গলায় বলে উঠে, ‘বেশ করেছি ফুচকা খেতে গিয়েছি, দরকার পরলে ডেটে যাবো তাতে আপনার কি?’

‘জানে মে:রে ফেলবো একদম। আজকের পর থেকে যেনো কোনো ছেলের সাথে না দেখি তোমাকে।’ চোখ মুখ শক্ত করে বলে শুভ। মিহির রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে, ‘আজিব তো। আমি কার সাথে দেখা করবো কি না করবো তা আপনার কাছ থেকে কেনো জানতে যাবো। কে হোন আপনি আমার? কোন অধিকারে এইসব বলছেন? আমার উপর আপনার অধিকার বহু আগেই হারিয়ে গেছে। আর কান খুলে শুনে রাখুন আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার আপনার নেই।’

আবেগভরা চাহনীতে মিহিরের চোখে কয়েক পলক তাকিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে শুভ, ‘তুমিসহ তোমার সব কিছুর উপর একমাত্র আমার অধিকার থাকবে। আমার অধিকারের হস্তক্ষেপ হতে দিবো না আমি। সাবধান করে দিচ্ছি মিহির, আজকের পর থেকে যেনো কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে না দেখি তোমাকে। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তুমি জানো না আমি ঠিক কি করতে পারি। মাইন্ড ইট। নাও গেট লস্ট।’ শেষের কথাটা মিহিরকে ছেড়ে জোরে ধমক দিয়ে বলে শুভ। মিহির কেঁপে উঠে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সব কিছু তার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। অসয্য!

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া’
#মাইশাতুল_মিহির

৮.

নীমতলা.! মিহিরের প্রিয় জায়গা গুলোর মধ্যে একটি। এখন এখানেই বসে আছে সে। সাথে তার প্রান প্রিয় বাটনফোন মানে বান্ধুবি মিতু।

‘জেলাস জেলাস!’ মজার ছলে বলে মিতু। বিস্ময় চোখে তাকায় মিহির। তারপর বললো, ‘জেলাস মানে? তুই কি বুঝাতে চাইছিস?’ মিতু ফিক করে হেসে ফেলে। মিতুর হাসি এই মুহূর্তে মিহিরের শরিলে তেলে বেগুনে জ্বলিয়ে দিচ্ছে। রেগে বলে, ‘মিতু কা বাচ্ছি, হাসবি না বল।’

‘আরে শুভ ভাইয়া জেলাস। তোকে আর সবুজ ভাইয়া কে এক সাথে ফুচকা খেতে দেখে ওনি রেগে মেগে এটম বোম হয়ে আছে। ভাইয়া এখনো তোকে ভালোবাসে। তাইতো অন্য কারোর সাথে তোকে দেখে রেগে গেছে।’

‘ভালোবাসে? হাহ্!’ তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলে মিহির। মিতু কিছুক্ষণ নিরব থেকে স্বাভাবিক স্বরে বলে, ‘দেখ, ওই দিন ভাইয়া রাগের মাথায় এমন করেছিলো জানি তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিলি। ভাইয়া এখন অনুতপ্ত মিহির। আদিলের কাছে যা শুনলাম ভাইয়া নাকি এই দুই বছর তোকে পাগলের মতো খুঁজেছিল। এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে মিহির। আরেকটা সুযোগ দিতেই পারিস ভাইয়াকে। ভাইয়ার সাথে আলাদা দেখা করে দেখ ভাইয়া কি বলতে চাই। ভুল তো মানুষেরই হয়। ভুলে যা সব, দ্বিতীয় সুযোগ তো দেওয়ায় যায় বল?’

‘কখনোই না মিতু। ওই লোকটা আমাকে রেস্টুরেন্টে সবার সামনে অপমান করেছিলো আর তুই বলছিস ভুলে যেতে? তুই অন্তত্য এইগুলা বলিস না। কত অবহেলা সয্য করে তার কাছে একটু সময় চেয়েছিলাম দিয়েছিলো সে আমাকে? ভালোই যদি বাসতো তাহলে অন্তত্য আমাকে একটু সম্মান করতো, সময় দিতো আমাকে। ওনাকে আমি কখনোই ক্ষমা করবো না মিতু। দ্বিতীয় সুযোগ তো দূরের কথা।’ ঠোঁট কামরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে মিহির। আহর্নিশের কোণায় জল চিকচিক করছে। মিতু আর কথা বাড়ায় না। এক হাতে আগলে নেয় মিহির কে। মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বলে তাকে।
__________________

কৃষ্ণতলায় বসে আছে শুভ, সামির, আদিল এবং রাহুল।

‘তোর কি মনে হয়? দুই বছর মিহির তোর লাইগা বইয়া থাকবো? এইডা মিহিরের বয়ফ্রেন্ড নায়তো হবু মিলাইয়া দেখিস।’ রাহুল বলে। আদিল রাহুলের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বলে, ‘শা:লা ক্ষেত সুন্দর করে কথা বলতে পারিস না? মিহিরের কোনো বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নাই আমি হান্ডেট পারসেন্ট সিউর।’

‘তাহলে ছেলেটা কে?’ চিন্তিত হয়ে বলে শুভ। সামির বিরক্ত স্বরে বলে, ‘আরে ভাই এতো সিরিয়াস হচ্ছিস কেনো। এমনও হতে পারে মিহিরের কাজিন ব্রাদার।’

‘ভাই, কাজিনের সাথেও কিন্তু বিয়ে হালাল ভুলে গেলা নাকি? পোলাডা মিহিরের হবু হইলে আমি মসজিদে ৫০০ টাকা দান করমু।’ পকেটে মোবাইল ঢুকাতে ঢুকাতে বলে রাহুল। শুভ কোকের বোতল রাহুলের দিকে ঢিল দিয়ে বলে, ‘শা:লা হারামি, এই দো’য়া করোস তুই? আমার না হওয়া সংসার ভেঙে যাচ্ছে কই সমাধান করবি না ওল্টা পাল্টা কথা বলতেছিস খালি।’

‘আদিল তুই মিতুকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর। আর হ্যা লাউডস্পিকারে দিবি কিন্তু।’ সামির বলে। আদিল পকেট থেকে মোবাইল বের করে মিতুকে কল দেয়। মিতু কল রিসিভ করে ‘হ্যালো!’ বলে।

‘কেমন আছো মিতু?’
‘একটু আগে না কথা হলো এখন আবার জিজ্ঞেস করছো কেনো?’
‘না মানে এমনি। কি করতেছো তুমি?’

পাশ থেকে সামির মাথায় চাপড় মেরে ফিসফিস করে বলে, ‘শা:লা তোরে প্রেম করতে ফোন দিতে বলছি? আসল কথা জিজ্ঞেস কর।’ আদিল সামিরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিতুকে জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা মিতু একটা সত্যি কথা বলবে মিহির কি কোনো বয়ফ্রেন্ড বা হবু আছে?

হঠাৎ আদিলের এমন প্রশ্ন শুনে খানিকটা বিস্ময় হয় মিতু। কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পারে আদিলের সাথে বাকি তিন জনও আছে আর শুভ যে আদিলের মাধ্যমে জানতে চাইছে বুঝতে সময় নেয়নি তার। এই সুযোগে ব্যাটাকে জ্বালানো যাক।

‘কেনো বলোতো? আজ হঠাৎ মিহিরের কথা জিজ্ঞেস করলে?’ মিতু।
‘না এমনি। বলো বয়ফ্রেন্ড আছে মিহির?’
‘উম্মম, নেই বললেও হবে না, আবার আছে যে তাও না।’ ঠোঁট চেপে হাসে মিতু।
একে অপরের দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকায় চার জন। আদিল বলে উঠে, ‘মানে এটা আবার কেমন কথা?’
‘মানে টা স্বাভাবিক। বুঝলে বুঝো না হলে আর বলতে পারবো না।’
‘আচ্ছা ওই দিন মিহির কার সাথে ফুচকা খেতে গিয়েছিলো?’
‘ওহ! ওই দিন তো মিহির মামাতো ভাই সবুজ ভাইয়ার সাথে গিয়েছিলো।’ বলেই জিহ্বে কামড় দেয় মিতু। ইশ তাড়াহুড়ো করে বলে দিলো।
‘তার মানে ছেলে টা মিহির জাস্ট কাজিন ব্রাদার টাইপ আর কিছু নাহ?’
‘না এমন না। আই থিংক সবুজ ভাইয়া মিহিরকে লাইক করে বাট বলে না। না হলে দেখো কুমিল্লা থেকে ঢাকা কিছু দিন পর পর ব্যবসার উছিলায় আসে কি হুদাই? আমার তো এমন মনে হয় না! এমন একটা হ্যান্ডসাম ছেলে থাকলে যে কেউ প্রেমে পরে যাবে আমি হলেও প্রেমে পরে যেতাম, মিহিরও প্রেমে পরবে আই’ম ড্যাম সিউর।’ বলেই হাই তুললো মিতু। শুভ চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠ করে বসে আছে। আদিল কাটকাট গলায় বলে উঠে, ‘তুমি প্রেমে পরবা মানে? আমি থাকতে প্রেমে কেনো পরবা?’
‘আরে না এমনি বললাম। সবুজ ভাইয়া পারসোনালিটি কিন্তু অনেক ভালো। আজকালকার যুগে এমন পারসন পাওয়া ওনেক টাফ।’
‘মিহিরের মামার বাড়ি কোথায় জানো?’
‘কুমিল্লা, সুন্দরপাড়া। কেনো বলো তো?
‘কিছু না, সবুজের মাঝে লাল দাগ বসাবো। এখন রাখছি!’ বলেই ফোন কেটে দেয় আদিল।

‘ভাই অনেক দিন ধরে অপারেশনে নামি না। কি বলিস তোরা।’ আড়মোড় ভেঙে বলে রাহুল। প্রতি উত্তরে বাঁকা হাসে শুভ।
_________________

লাইব্রেরীতে বুকশেলফের দিকে তাকিয়ে বই খুঁজছে মাহিন। হঠাৎ পিছন থেকে ‘মিঃ হালুক!’ ডাক কর্ণগোচর হলো তার। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে সুহা দাঁড়িয়ে আছে। চুল গুলো দু পাশে বেনী করা, চোখে চশমা, গায়ে সাদা কলেজ ড্রেসে দারুণ লাগছে। কিছু সময়ের জন্য থমকে যায় মাহিন। নিজের অবস্থা দেখে নিজেকে কয়েক দফা গালি দিয়ে ফের বই খুঁজায় মনোযোগ দেয়। মাহিনের এমন খাপছাড়া ভাবে খানিকটা অপমানিতবোধ করে সুহা। ফ্যালফ্যাল ভাবে তাকিয়ে থেকে বলে, ‘আমি আপনাকে ডাক দিলাম কথা বলতে অথচ আপনি না দেখার ভান করছেন কেনো?’

‘আমি কোনো হালুক ভাল্লুক নয়। আমার একটা নিদিষ্ট নাম আছে। এইসব আলতু ফালতু নামে ডাকলেই আমাকে সাড়া দিতে হবে নাকি। আজিব পাবলিক।’ বুকশেলফ থেকে বই নামাতে নামাতে বলে মাহিন। সুহা মুখের হাসির রেখা বড় করে বলে, ‘আপনি তো আবার ভাবওয়ালা লোক তাই নাম বলেন নি। যেহেতু আমি আপনার নাম জানি না তো মিঃ হালুক বলেই ডাকবো। উম্ম নয়তো হ্যান্ডসাম কানা বিলাই!’ বলেই উচ্চস্বরে হাসিতে মেতে উঠে সুহা। মাহিন বিরক্ত হয়ে কড়া গলায় বলে, ‘এই মেয়ে সমস্যা কি হ্যা? আমার পিছে কেনো পরে আছো? এইসব নামে আমাকে ডাকবে না খবরদার।’

‘নাম না বললে ডাকবোই। কি করবেন আপনি?’ ঠায় দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে সুহা। মাহিন কিছু একটা ভেবে আশেপাশে তাকায়। তারপর ঘাড় কাত করে এক পা দু পা করে সুহার দিকে এগোতে থাকে। মাহিনের এমন আচরনে খানিকটা ভরকে যায় সুহা। ভয়ে পিছিয়ে বুকশেলফের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়ায়। পিছানোর আর জায়গা নেই। এখন নিজেকেই শ’খানেক গালি দিচ্ছে কেনো এখানে একা আসতে গেলো। মাহিন একহাত বুকশেলফে রেখে সুহার দিকে ঝুকে দাঁড়ায়। সুহা ভয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। মাহিন গভীর দৃষ্টি দিয়ে সুহাকে প্রখর করছে। অসাধারন মোহনীয় লাগছে সুহাকে। কিছুই হচ্ছে না দেখে সুহা চোখ খুলে মাহিনের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায়। শুকনো ঢুক গিলে সুহা।

‘অনেক কিছুই হতে পারে যা তোমার এই ছোট মস্তিষ্কে ঢুকবে। তুমি মেয়ে বলে বেঁচে গেছো। ফারদার আমার সাথে লাগতে আসবে না। এটা কেবল মাত্র টেইলার ছিলো মুভি কিন্তু আমি নিজেই লিখতে পারি।’ বলেই বই হাতে নিয়ে বেড়িয়ে যায় মাহিন। সুহা স্থব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনার কথা মনে পরতেই গালে লাল আভা ভেসে উঠে। উফফ এ কেমন অনুভূতি।

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here