অনুভবী_হিয়া ❤️,৯,১০,১১

0
923

#অনুভবী_হিয়া ❤️,৯,১০,১১
#মাইশাতুল_মিহির

৯.

সাপ্তায় এক কি দুই দিন কলেজে যায় মিহির। মিতু আর আয়নার কাছ থেকে নোট গুলো কালেক্ট করে। তাছাড়া তার ইন্টেলিজেন্ড ভাই মাহিন তো আছেই। মিহির ভেবে পাই না ছেলেটা তো ভালো করে পড়তেও বসে না তাও কিভাবে পড়াশোনায় এতো ফাস্ট। মিহির আর মাহিন যমজ। মাহিন মিহিরের থেকে পাঁচ মিনিটের বড়। তবে দেখলে কেউ বলবে না তারা যমজ। গম্ভীর পকৃতির মাহিনের বডি, হাইট, কথা বলার ধরন চলাচল সব মিলিয়ে মিহিরের চেয়ে কয়েক বছরের বড় মনে হয় মাহিন কে। হবে না কেনো মিহিরের ওয়েট মাত্র ৪৫! ব্যাপার টা মিহিরের বেশ মজা লাগে। মাহিনকে মিহির সব সময় বড় ভাইয়ের মতো ট্রিট করে এসেছে, মাহিনও শাসনে রেখেছে বোনকে। মাহিন যথেষ্ট এডাল্ট আর বুদ্ধিমত্তা ছেলে। মাহিন কুমিল্লা অর্থাৎ দাদু বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতো। মিহিরের বাবা মা চাচাতো ভাই বোন ছিলো। মাহিন ঢাকা আসতো না বললেই চলে। মিহিদের মামা রা পলিটিক্স করে। সে সুবাধে মামাদের কিছু গুন মাহিনের মধ্যেও আছে। সেও হয়তো এসবের সাথে জড়িত। সেবার একটা এক্সিডেন্টে মাহিন এসএসসি দিতে পারেনি। মিহির সে কি কান্নাকাটি সেও তার ভাইকে রেখে পরিক্ষা দিবে না। মাহিন তাকে বুঝানোর পর রাজি হয় সে। মাহিন ঢাকা আসতে চাইনি। বাবা মারা যাবার পর মিহির আর মায়ের জন্য আসে সে। তাও মাঝে মাঝে কুমিল্লাতে পাড়ি জমায়। কুমিল্লাতে কি আছে মিহির বুঝতে পারে না। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো মিহির। ভাবনার ইতি হয় মাহিনের ডাকে, ‘কিরে ভাবুক কুমারী কি ভাবছিস?’

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মাহিন দুই কাপ কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিহির মুচকি হেসে কফি হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বলে, ‘ভাইয়া তুমি কিন্তু খুব ভালো কফি বানাও।’

‘কি ভাবছিলি বললি না তো?’ এক হাত ব্যালকনিতে ভর দিয়ে বলে মাহিন। মিহি ফট করে উত্তর দেয়, ‘তোমাকে নিয়ে গবেষণা করছিলাম। তুমি পড়াশোনা না করেও ফাস্ট ক্লাস হোও কিভাবে? ভাইয়া আমাকেও টিপস দাও।’

মিহিরের কথায় ফিক করে হেসে ফেলে মাহিন, ‘মাথা, মাথা কাজে লাগাতে হয়। তোর মাথায় তো গোবর তোর দ্বারা হবে না। বাদ দে।’ মিহির মুখ কালো করে কফি খেতে থাকে। হঠাৎ মাহিন বলে উঠে, ‘মিহু? আমি কিছু দিনের জন্য বাহিরে যাচ্ছি। মাকে ম্যানেজ করিস।’

‘কোথায় যাবে?’ চিন্তিত হয়ে বলে মিহির। কফি মগে শেষ চুমুক দিয়ে বলে মাহিন, ‘প্রথমে যাবো কুমিল্লা, সেখান থেকে যাচ্ছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কিছু কাজ আছে আমার। ব্রাহ্মাণবাড়িয়া যে যাচ্ছি সেটা মাকে বলিস না। ট্রিপে গেছি বলে চালিয়ে দিস। আমাকে তখন ফোনে পাবি না।’

‘ভাইয়া, প্লিজ সাবধানে থেকো। এসব সিক্রেট ফিক্রেট বাদ দাও না। এগুলো অনেক রিক্স। ভয় হয় আমার।’ অনুরোধ করে বলে মিহির। মাহিন মৃদু হেসে শান্ত স্বরে বলে, ‘আমার ওপর বিশ্বাস নেই?’

‘আমার বিশ্বাস আছে তোমার উপর। আমি জানি আমার ভাই খারাপ কিছুতে জড়িত হবে না।’ শেষের কথাটা মুচকি হেসে বলে মিহির। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে গোছালো চুল এলোমেলো করে দেয় মাহিন। মিহি রেগে হাত ঝামটা মেরে ফেলে দেয় মাহিন উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে কফি মগ নিয়ে চলে যায়।
_______________

কেটে যায় কিছু দিন। মাহিন ঢাকা ফিরে এসেছে আজ দু-দিন। কিন্তু এই দুই দিন মাহিন কে খুব একটা দেখা যায় নি। ঢাকা থেকে এসেই রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কিছু করে। আবার হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে বাহিরে চলে যায়। মাহিনকে দেখতে অনেক চিন্তিত লাগে। ভাইয়ের মতিগতি কিছুই বুঝে না মিহির। তাই বেশি ঘাটে না যতক্ষণ না মাহিন নিজে থেকে এসে কিছু বলে।

মিহির রেডি হয়ে নাস্তার পর্ব শেষ করে অফিসে যায়। নতুন প্রজেক্টের জন্য কাজের চাপ প্রচুর। অফিসে গিয়ে বসে ফাইল ঘাটছে আর রায়হানের সাথে প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলছে। আজ ক্লাইন্ড আসবে মিটিং করতে তাই প্রেজেন্টেশনের কাগজপত্র চেক করছে। তখন কেবিনে রায়হান আর মিহিরকে ডাকে শুভ। দুজন কেবিনে যাওয়ার পর শুভ বলে, ‘ক্লাইন্ডদের সাথে অফিসে নয় ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে দেখা করবো। সেখানে লাঞ্চ করা হবে। তোমরা দুজন সব রেডি করে রেখো। আর দশ মিনট পর বের হবো।’

মিহির অসহায় হয়ে শুধু চেয়েই রইলো। যাওয়ার ইচ্ছে একদম নেই তার। কিন্তু কি করার সাধের চাকরী না গেলে তো আর হবে না। দুজনই সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

গাড়িতে বসে আছে শুভ। তার পাশে মিহির বসে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মুগ্ধকর দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে। সামনে ড্রাইভারের সাথে রায়হান। ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামতেই তিন জন গাড়ি থেকে মেনে ভিতরে যায়। মিহির আরো একবার মাহিনের সাথে এসেছিলো এখানে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আসা। শুভর পিছু নিয়ে হাটছে দুজন। শুভ একটা টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই দুই জন লোক দাঁড়িয়ে তার সাথে হ্যান্ডশেক করে। তারপর রায়হানের সাথে। এদের একজন রফিক আরেক জন শান। রায়হানের সাথে পরিচয় হবার পর শান মিহিরের দিকে হাত বারিয়ে বলে, ‘হেই আই’ম শান।’

মিহির কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হাত মিলাবে কিনা ভাবছে। অফিসের ক্লাইন্ড হাত না মিলালে যদি অপমানবোধ করে তো। আর সাতপাঁচ না ভেবে মিহিরও হাত মিলিয়ে বলে, ‘আমি মিহির।’
শান কিছুক্ষন ‘মিহির’ নাম টা আওড়ায়। তারপর বলে উঠে, ‘আমি তোমাকে মিহু বলে ডাকবো সমস্যা নেই তো? আর তুমি আমার থেকে ছোট তাই তুমি করে বলছি মাইন্ড করো না প্লিজ।’

মিহির মনে মনে ঝাড়ছে শানকে। আরে ব্যাটা চিনোস না জানোস না ডাইরেক্ট তুমি। ছ্যাঁচড়া ব্যাটা। কিন্তু মুখে সৌজন্যমূলক হাসি টেনে বলে, ‘সমস্যা নেই তুমি বলতে পারেন আর আমাকে সবাই মিহু বলেই ডাকে।’

শান চেয়ার টেনে বসতে বললে মিহিরও মিষ্টি হাসি দিয়ে চেয়ারে বসে। এতোক্ষন চোয়াল শক্ত করে দেখছিলো শুভ। যেই শান মিহিরের পাশের চেয়ারে বসতে যাবে তখনি হুট করে শুভ মিহিরের পাশে বসে পরে। ঘটনাক্রমে সবাই অবাক চোখে তাকায় কিন্তু শুভর মধ্যে কোনো পতিক্রিয়া নেই যেনো কিছুই হয় নি। শান হেসে সামনের চেয়ারে বসে। তারপর তারা অফিসিয়ালি কথাবার্তায় মশগুল হয়। লাঞ্চ শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বাহিরে এসে একে ওপরকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে। যাওয়ার আগে শান মিহিরকে মুচকি হেসে বলে, ‘বাই, সি ইউ এগেইন এন্ড টেক কেয়ার ডিয়ার মিহু!’ মিহিরও সৌজন্যতা বজায় রেখে বলে, ‘ইউ টু মিঃ শান।’

ওপর দিকে শুভ রাগে এটম বোম হয়ে আছে। যেকোনো মুহূর্তে ফেটে যাবে বুঝি। কেনো যে মিহি কে আনতে গেলো। আর এই স্টুপিড মেয়েকে দেখো কিভাবে হেসে হেসে কথা বলছে। যত্তসব ন্যাকামি!
_______________

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১০.

স্নিগ্ধ সকালে পাখির কুহুরব মনোমুগ্ধকর। ঘড়ির কাটা ছয়টায় ছুঁই ছুঁই। মিহির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে আর স্নিগ্ধ সকাল উপভোগ করছে। তখনি পিছন থেকে মাথায় চাপড় পরে। মিহির ‘আহঃ!’ বলে মাথা ঢলতে থাকে। ব্যালকনির রেলিং এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে মাহিন, ‘আস্তেই দিছি ড্রামা করার দরকার নাই। ব্যাথা পাসনি জানি।’

‘কচু জানো তুমি।’ মুখ কালো করে বলে মিহির।

‘আচ্ছা অফিসে সমস্যা হয় তোর? কেউ কিছু বলে? আমাকে বলতে পারিস।’ সিরিয়াস হয়ে বলে মাহিন। হঠাৎ ভাইয়ের এমন প্রশ্নে অবাক হয় মিহির। ভাইকে তো শুভর কথা বলা হয় নাই। আর অফিস নিয়ে এতো চিন্তিত কেনো ভাইয়ার? স্বাভাবিক গলায় বলে, ‘না তো ভাইয়া কোনো সমস্যা নেই।’

‘সত্যি বলছিস তো?’ মিহির এইবার ইতস্ততবোধ করে। আচ্ছা ভাইকে কি শুভর কথা জানিয়ে দেবো? ভাই যদি বেশি সিরিয়াসলি নেয়? এটা কোনো সাবজেক্ট হলো। আমি তো আর শুভর প্রতি দুর্বল না। বলার প্রশ্নই আসে না। মিহির ঠোঁটে হাসি টেনে বলে, ‘হ্যাঁ সত্যি বলছি!’

মাহিন কিছুক্ষন ত্নীক্ষ দৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। লম্বা দম ফেলে বেড়িয়ে যায় সে।

ভাইয়ের মতিগতি বুঝতে পারছে না মিহির। হঠাৎ তার অফিস নিয়ে পরেছে কেনো? মিহির অফিসে জয়েন করা নিয়ে মাহিনের ঘোর আপত্তি ছিলো। তবে সময়ের সাথে মাহিন চুপ হয়ে যায়। কিন্তু কাল রাতে খাবার শেষে মিহির সোফায় বসে টিভি দেখছিলো তখন মাহিন সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘তুই আর অফিস যাবি না। রিজাইন দিয়ে দে।’

ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় মিহির। অবাক স্বরে বলে মিহির, ‘রিজাইন দিবো মানে?’

‘মানে তুই আর অফিস যাচ্ছিস না। কাজ করতে হবে না তোকে। আমি যা ইনকাম করি তাতেই চলবে। পড়াশোনায় মনোযোগ দে শুধু।’ সিরিয়াস ভাবে বলে মাহিন। রাশেদা বেগম এতোক্ষনে মুখ খুললেন, ‘মানে কি মাহিন। মিহু রিজাইন দিবে কেনো? তুই আবার আগের মতো শুরু করছিস। তোর ইনকাম দিয়ে চলবে মানে? তুই কি করিস না করিস, কিভাবে টাকা ইনকাম করিস কিছু জানি না আমরা। আদৌ তুই খারাপ কাজে লিপ্ত আছিস কিনা সেটাও জানি না।’

‘মা, আমার ওপর তোমার ভরসা নেই? তোমরা আমাকে এমন কোনো শিক্ষা দেওনি যে টাকার জন্য আমি খারাপ কাজে লিপ্ত হবো। আমি যা ইনকাম করি সব পরিশ্রম করেই করি।’ গম্ভীর গলায় বলে মাহিন।

‘তোদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। মেয়েটা যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে ক্ষতি কি? এতো দিন তো কোনো সমস্যা হয়নি তাহলে হঠাৎ কেনো রিজাইনের কথা বলছিস?’

‘মা শুধু শুধু কেনো মিহু কষ্ট করবে? আমার যা আছে তাতেই ওকে রাজকন্যার মতো রাখবো। মিহুকে শুধু পড়াশোনা করতে বলো।’ চোখ মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে মাহিন।

মিহির সিরিয়াস হয়ে অনুরোধ স্বরে বলে, ‘ভাইয়া প্লিজ, আমি নিজে থেকে কিছু একটা করতে চাই। তুমি চাওনা তোমার বোন কারোর ওপর নির্ভরশীল না হোক। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াক? তুমি তো এমনিতেই আমার সব চাওয়া পূরণ করো আমাকে অনেক ভালোবাসো। প্লিজ ভাইয়া আমি জব করবো।’

মাহিন শান্ত চোখে কিছুক্ষণ মিহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর ‘ঠিক আছে’ বলে রুমে চলে যায়।

________________

সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো শুভ। পরনে হুয়াইট শার্টের ওপর হুয়াইট ব্লেজার, ব্ল্যাক টাই, ব্ল্যাক প্যান্ট, ব্ল্যাক ওয়াচ। ড্রয়ার থেকে গাড়ির চাবি নিবে এমন সময় গ্রুপ কল আসে। রিসিভ করার পর রাহুল বলে উঠে, ‘মামাহ কাহিনী হইয়া গেছে জানো তো?’
-কি হয়েছে না বললে জানবো কিভাবে?’ শুভ
-সবুজরে মা:রার জন্য যাদের পাঠাই ছিলাম তারাই এখন হাসপাতালে এডমিট।’ ফিচেল গলায় বলে আদিল।
-তো কি হইছে? মা:র:পি:ট করতে গিয়ে দুই-চার টা লাগছে হইতো।’ স্বাভাবিক ভাবে বলে শুভ।
-না তুই যা ভাবছিস তা নয়।’ অসহায় কন্ঠে বলে রাহুল।
-ওই ছেলে গুলারে বেধম কে:লানি দিছে কেউ অবস্থা অনেক খারাপ। ছয় সাত মাস তো হাসপাতালে থাকতে হবে। পোলা গুলারে জ্যা:ন্ত ছাইড়া দিছে যে এটাই বেশি।’ বলে সামির।
-কে মেরেছে ওদের?’ বিস্মিত হয়ে বলে শুভ।
-কে জানি না। তবে ছেলেটা সবুজ ছিলো না এইডা সিউর তারা। ছেলে গুলারে নাকি খালি জিজ্ঞেস করছে কারা পাঠায়ছে। ভাই যে মায়া ছাড়া এমনে মা:রতে পারে হে একবার আমরারে পাইলে ছাড়বো না।’ ভয়াক্রান্ত স্বরে বলে রাহুল।
-আরে নাহ। আমাদের পাবে কিভাবে? আমরা ঢাকা আছি আর ওরা কুমিল্লা। আমাদের ধরা প্রশ্নই আসে না। প্যারা নিস না তোরা। আর ধরতে পারলে নাহয় আমরা আমাদের মতো ক্লাস নিবো। কি বলিস?’ মজার ছলে শক্ত কন্ঠে বলে শুভ। আরো কিছু কথার পর কল কেটে দেয়।

চলবে..!!

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১১.

‘North And Coffee Roasters, 11 am. I will wait for you Mr. Rafid Rayhan Shuvo.’

সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলে আননোন নাম্বার থেকে আসা ম্যাসেজ দেখে খানিকটা অবাক হয় শুভ। কে এই লোক? তার সাথে কেনো দেখা করতে চায় সে? কিছুক্ষন গভীর চিন্তা করে দেখা করতে যাবে বলে মনস্থির করলো শুভ। রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিস চলে যায় সে। অপেক্ষা করছে এগারো টা বাজার। অচেনা ব্যক্তি টি তার সাথে ঠিক কি কারনে দেখা করতে চাইছে সেটা না জানা পর্যন্ত শান্তি নেই শুভর। অফিসে বসেও হাঁসফাঁস করছে সে। তার মাথায় শুধু একটা কথায় কে হবে এই ব্যক্তি?

কেবিনে নক করে মিহির। শুভ ভিতরে আসতে বলে তাকে। মিহির এসে শুভকে কিছু ফাইল দিয়ে বলে, ‘সব গুলা ফাইল আমি আর মিঃ রায়হান মিলে চেক করেছি। আপনি চাইলে আবার চেক করে সাইন করতে পারেন।’ শুভ ফাইল না ধরে মিহির দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর মিষ্টি হেসে বলে, ‘তোমাকে আজকে দারুন লাগছে মিহি!’

মিহির অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কোনো রকমে, ‘থ্যাংকইউ!’ বলে সে। শুভ মিহিরের হাত থেকে ফাইল গুলো নিয়ে ঘাটতে থাকে। ফাইল দেখার মাঝে মিহিরকে প্রখর করছে। মিহি চেয়ারে কাচুমুচু হয়ে বসে আছে। শুভর চাহনিতে সে ইতস্ততবোধ করছে। খানিকক্ষণ বাদে শুভ শান্ত গলায় বলে উঠে, ‘মিহি আজকে অফিসের পর আমার সাথে যেতে পারবে? একটা জায়গায় নিয়ে যাবো তোমাকে। প্লিজ না করো না। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দাও। অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে।’ শেষের কথা গুলো অনুনয় স্বরে বলে শুভ। মিহির শান্ত আর নির্বিকার ভঙিতে তাকিয়ে আছে। মিহির কিছু না বলে নিরবতা পালন করে যার অর্থ সে যেতে রাজি নয়। মিহিরের এমন উপেক্ষা আর সয্য হচ্ছে না শুভর। ঠাস আওয়াজ করে ফাইল বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায় শুভ। শুভর এমন আচরনে মিহির কিছুটা ভরকে যায়। হুটহাট রেগে যায় এই লোক। আগে তো কতো ফাজলামি করতো এখন এমন গম্ভীর মুখু হলো কিভাবে আল্লাহ!

শুভ ড্রয়ার, বুকশেলফ থেকে একগাদা ফাইল এনে মিহিরের সামনে রাখে। ফাইল গুলোর দিকে তাকিয়ে শুভর দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় মিহির। শুভ কড়া গলায় বলে, ‘আজকের মধ্যে সব গুলা ফাইল রিকভার করবে। কোথাও যেনো কোনো ভুল না পাই। পুরনো সব ফাইলের ডিটেইলস সংক্ষেপে নোট চাই আমার। নাও গেট লস্ট!’ শেষের কথাটা উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে বলে শুভ। মিহির কেঁপে উঠে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় শুভর দিকে। শুভ এখনো তার দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে। মিহির ভয়ে নিচু স্বরে বলে, ‘এতো গুলো ফাইল এক সাথে দেখা সম্ভব না। কিছু না হয় বাকি এমপ্লয়..’

মিহির মুখের কথা কেঁড়ে ধমক দিয়ে বলে শুভ, ‘আমি তোমাকে বলেছি মানে তুমি করবে। খবরদার কারোর সাহায্য নিবে না। নাও লিভ!’ মিহি চেয়ার থেকে উঠে ফাইল গুলো হাতে নিয়ে বেড়িয়ে যায় কেবিন থেকে। মাহিন ঠিক বলেছিলো চাকরী টা ছেড়ে দেওয়ায় বোধহয় ভালো ছিলো। অসভ্য লোক, তোর কপালে বউ জুটবে না দেখিস। বিয়ে করলেও আমি গিয়া প্যাচ লাগাই দিমু। শা:লা ইতুর, সাদা বিলাই, খাম্বা! মনে মনে হাজার খানেক গালি দিয়ে মুখ ফুলিয়ে ফাইলে দেখা শুরু করে মিহির।
________________

সকাল ৯:০০ টা! লাইব্রেরীতে বসে বই ঘাঁটছিলো মাহিন। উদ্দেশ্য অ্যান্টিমনি, রাইসিন সম্পর্কে তথ্য জানা। পৃথিবীতে থাকা নীরব ঘাতকের মধ্যে দুটি হলো অ্যান্টিমনি আর রাইসিন। অ্যান্টিমনি মূলত ধাতব মৌল। এটি টক ভাবযুক্ত ধাতব স্বাদ অনুভব হয়। এই নিরবঘাতক শরীলে প্রবেশ করলে ৩০ মিনিটের মধ্যে এর বিষক্রিয়ায় ঘাম, বমি আর হৃদযন্ত্রের গতি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যতেষ্ট। চা’য়ের কাপে বিষদাতা হিসেবে অ্যান্টিমনি ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত। রাইসিন মাস্টার্স গ্যাসের ন্যায় রাইসিন সাইটোটক্সিক তথা কোষীয় বিষাক্ততা সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগীর ৭-১০ দিন লাগে মাত্র। এমন নীরব ঘাতক এতো সহজে বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। যেখানে বাংলাদেশের কোনো ল্যাবে সরকার অনুমিত দিবে না সেখানে কিভাবে এই দুটি বিষ সাধারন দু জন মানু্ষের শরিলে পাওয়া গেলো? খুনি যে সাধারন কেউ নয় সেটা ভালোই বুঝতে পারছে মাহিন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে এক হাত থুতনিতে রেখে কনুই চেয়ারে ভর দিয়ে কিছু হিসাব মিলাচ্ছিলো সে। তখনি সামনে এসে বসে সুহা। মুচকি হেসে বলে উঠে, ‘কি করছেন মিঃ হালুক?’

বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সুহার দিকে তাকায় মাহিন। কাজের মাঝে কেউ মনোযোগ নষ্ট করলে মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায় মাহিনের। মাহিন আগের ন্যায় বসে শান্ত স্বরে বলে, ‘ভাবছিলাম!’

‘কি ভাবছিলেন? দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো ব্যাপারে অনেক চিন্তিত। আমাকে বলতে পারেন সমাধান করে দিবো।’ দাঁত কেলিয়ে বলে সুহা। মাহিন এখনো শান্ত দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো কিছুর পরেও মেয়ে টা তার পিছে পরে আছে কেনো? আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছু নেই নাকি? বয়স কম তাই আবেগের বসে এমন করছে। মাহিন কিছু না বলে মোবাইল বের করে গুগলে যায়। সুহা গালে হাত দিয়ে বসে মাহিনকে দেখছে। উফ একটা মানুষ এতো সুন্দর কি করে হতে পারে। কিছু একটা ভেবে সুহা হঠাৎ মাহিনের হাত থেকে মোবাইল ছুঁ মেরে নিয়ে কিছু একটা টাইপ করে। আকর্ষিক ঘটনা বুঝতে মাহিনের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। যখন বুঝতে পারে তখন ধমক দিয়ে বলে, ‘স্টুপিড গার্ল! এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি? কারোর মোবাইল ধরার আগে পারমিশন নেওয়া ম্যানারসে পরে জানো নাহ?’

সুহা মোবাইল টা হাত বাঁড়িয়ে দিয়ে ঠোঁট ওল্টে বলে, ‘সরি আর হবে না।’ সুহার ঠোঁট ওল্টানো মুখ দেখে মনে মনে হাসে মাহিন। মেয়েটা বড্ড ছেলেমানুষি আর কিউটও বটে। কলেজ ড্রেসের সাথে চুল গুলো দুই পাশে জুটি করা। মাহিন শান্ত স্বরে হাসি দিয়ে বলে, ‘তুমি মিষ্টি একটা মেয়ে সুহা। আবেগের বশে এমন করছো। আপাতত পড়াশোনায় মন দাও। আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করবে তুমি।’

‘আমার ভালো কিছু লাগবে না আপনি হলেই চলবে।’ সুহা ফট করে উল্লাসিত কন্ঠে বলে উঠে। কয়েক মুহূর্ত সুহার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মাহিন কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে আসে লাইব্রেরী থেকে। সুহা গালে হাত দিয়ে বলে, ‘জানু, তুমি যেভাবে আমার ঘুম হারাম করেছো সেভাবে আজ রাত থেকে তোমার ঘুমও আমি হারাম করবো হুহ।’

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here