অনুভবে তোমার ছোঁয়া?,সূচনা_পর্ব

0
2808

অনুভবে তোমার ছোঁয়া?,সূচনা_পর্ব
লেখিকা_আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)

এলাকার কিছু বাচ্চাদের সাথে খেলতে এসে কারো গাড়ির যে তেরোটা বাজাবো জানলে কোনোদিনও আসতাম না। গাড়ির মালিক আমার কাছে এসে বলে,’স্টুপিড গার্ল এটা কি করলেন আপনি?’

আমি কিছু না বুঝার ভান করে বললাম,’কই কি করলাম আবার আমি? অন্য কেউ করছে আর এখন আমার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন তাই তো?’

ছেলে বলে,’হোয়াট?আমার কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই আপনার ঘাড়ে শুধু শুধু দোষ চাপাবো?’

আমি দাঁত কেলিয়ে বলি,’সেইসব আমি কিছুই জানি না।’

এই বলে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বলি,’এই টুনোমুনো তোরা থাক আমি যাই নাহলে পরে আম্মু আমাকে বকবে।’

সব বাচ্চারা একসাথে বলে উঠে,’আচ্ছা আপু আবার এসো।’

ওইসব বাচ্চাদের বিদায় দিয়ে আমি নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এই এলাকায় নতুন আমি তাই বেশি কিছুই চিনি না। হঠাৎই আমার সামনে কিছু ছেলে এসে পড়ে আমি তাদের দেখেও না দেখার ভান করে যেতে নেই তখনই একটা ছেলে আমার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,’ ফুলটুশি কোথায় যাও আমাদেরও সাথে নিয়ে যাও।’

এই বলে বাকি সদস্যের সাথে উচ্চস্বরে হেসে দেয়।ওদের এক একটা কথা আমার কানে বিষের মতো লাগছে আমি ওইগুলা আর না কানে নিয়ে যেতে নেই তখনই একটা ছেলে আমার ওড়না ধরে বলে,’এই মেয়ে আমাদেরও সাথে নিয়ে যাও মোটা অংকের টাকা দিবো।’

আমি নিজের ওড়না ওদের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলি,’ছাড়ুন দয়া করে!’

তখনই ছেলেটার মুখ বরাবর কেউ একজন ঘুষি দেয়। মুখ থুবড়ে ছেলেটা মাটিতে পরে যায়। বাকিরাও ভয়ে পালিয়ে যায়। ছেলেটা মাটি থেকে আমার ওড়না উঠিয়ে আমার হাতে দিয়ে বলে,’এই নিন আমার ওড়না মিস।’

আমিও চুপচাপ উনার হাতের থেকে ওড়না নিয়ে ভালো করে গলায় জড়িয়ে নিলাম অতঃপর উনাকে বললাম,’আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’

ছেলেটা আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলে,’আপনি এই এলাকায় নতুন রাইট?’

আমি দুদিকে মাথা নাড়ালাম অর্থাৎ হ্যা। উনি বলেন,’তাই তো ওরা আপনাকে জ্বালিয়েছে। আপনি নাহয় আমার সাথে আসুন আপনার বাড়ি পৌছিয়ে দেই নাহলে ওদের আবার আপনাকে জ্বালানোর চান্স আছে।’

আমি বললাম,’না লাগবে না আমি একাই যেতে পারবো।’

‘ওহ আপনি নিশ্চয়ই আমাকে ভয় পাচ্ছেন?’

এই বলে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আবার বলেন,’আমি আয়রান শেখ এই এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে।’

আমি হাত না বাড়িয়েই বললাম,’ওহ আচ্ছা। আপনার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে ভালো লাগলো স্যার।’

‘আপনি আমাকে স্যার বলছেন কেনো জানতে পারি?’

আমি হেসে বললাম,’চেয়ারম্যানের ছেলেকে স্যার বলবো না তো কি বলবো?’

ছেলেটা একটু স্টাইল নিয়ে বলে,’আমি চেয়ারম্যানের ছেলে হলেও সাধারণ মানুষদের মতোই জীবণযাপন করি তাই আপনি আমাকে শুধু আয়রানই ডাকতে পারেন আমি মাইন্ড করবো না।’

আমি ছোট করে বললাম,’ওহ’ এই বলে চলে আসতে নিলেই উনি বলেন,’আপনার নামটা তো বলে গেলেন না মিস?’

‘আমি অহি।’

‘ওহ আচ্ছা আপনাকে আগায় দেই আমি চলুন।’

আমি আর না করলাম না যেহেতু উনি চাচ্ছেন তাই। উনি আমাকে বাসার কাছে দিয়ে চলে যান আমি ভিতরে যেতেই আমার ভাবীর কথা কানে আসলো,’মা দেখেন আপনার মেয়ে কতো বড় তাও এখন বাচ্চাদের মতো ক্রিকেট খেলতে যায় ওকে কিছু বলবেন?’

আম্মু বাহিরে আসতে আসতে আমাকে বলে,’দেখ মেয়ের কান্ড কয়েকদিন পর বিয়ে দিবো আর সে কিনা এখন ক্রিকেট খেলে এই মেয়ে তোর বাচ্চামো স্বভাব কবে যাবে রে?’

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলি,’এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না আমি।’

এই বলে হনহন করে নিজের রুমে এসে গেট লাগিয়ে দিলাম। প্রতিদিনই বিয়ে বিয়ে করে মেজাজ তখন আমার চোটে যায়!অসহ্য!বিয়ে সংসার ছাড়া কি আর মেয়েরা কিছু করতে পারে না?
___________
আজলান বাড়ি আসতে না আসতেই ওকে কেউ ঝাপ্টে ধরে। ও মানুষটাকে সরিয়ে নিজের জামা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,,’যত্তসব ময়লা-আবর্জনা আমার জামাটাকে দিলো নষ্ট করে।’

অপর পাশের মেয়েটি আহ্লাদি সুরে বলে,’আজলান তুমি এইভাবে বলতে পারলে?’

আজলান মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বলল,’বললাম না আমাকে আজলান ভাইয়া বলবি আইরা?এক কথা কয় বার বলতে হয় তোকে?আরেকবার আজলান বললে আই সোয়ের আমি তোকে পাঁচতলা থেকে কবে যে ফেলে দিবো নিজেও জানি না।’

আজলানের কাছে অপমানিত হয়ে আইরা মুখ গোমড়ো করে চলে যায়। এই আর নতুন কি?ও সবসময়ই আজলানের সাথে আহ্লাদি করতে আসলে এইরকমই অপমানিত হয়ে ফেরত যায়।

আজলান নিজের রুমে এসে বিরবির করে বলে,’অসহ্য আমার পুরা জামাটাই নষ্ট করে দিলো।’

এই বলে টাওয়াল নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে যায়।

( এই হলো আজলান খান। বাবা মায়ের দিত্বীয় সন্তান। সুঠাম দেহের অধিকারী আজলান। শ্যামবর্ণের গায়ের রঙ তবুও মেয়েরা আজলান খান বলতে পাগল কিন্তু আজলান কাউকে ওতো পাত্তা দেয় না।)

আজলান শাওয়ার থেকে বেরিয়ে সোজা বেলকনিতে চলে যায়। নিজের ইজি চেয়ারে বসে পরিবেশ উপভোগ করতে অন্যরকম এক ভালো লাগে ওর। হঠাৎই ওর চোখে এক রমনী পরে যায়। রমনী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিজের চুল শুকাচ্ছে। চুল থেকে টপ টপ করে পানি করছে তা দেখে এক ঘোরের মাঝে চলে যায় আজলান।

‘আজলান নেও তোমার কফি।’

আজলানের মায়ের কথায় আজলান ঘোর থেকে ফিরে। আজলান তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,’কখন আসলে?’

‘এই মাত্র। এসে দেখলাম তুই অন্য মস্তিষ্কে ছিলি কিছু কি হয়েছে?চাইলে বলতে পারিস আমায়!’

আজলান ওর মায়ের গালে একটা চুমু খেয়ে বলে,’না আম্মু কিছুই হয় নি শুধু শুধু এত মাথা ঘামিয়ো না তো।’

ছেলের বাচ্চামো দেখে মিসেস আদিবা হেসে বলেন,’তা আর হতে কই দেস আর আইরা কে বলে তুই বকা দিয়েছিস?’

সাথে সাথেই আজলানের মুখ গম্ভির হয়ে যায়। সে মুখ গম্ভির রেখেই বলে,’হ্যা দিয়েছি।’

মিসেস আদিবা বলেন,’কেনো দিয়েছিস?মেয়েটা কত্ত পাগল তোর জন্য আর তুই?’

‘তোমার বোনের মেয়েকে বলবে আমার সাথে ঢলাঢলি না করতে নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউই হবে না।’

মিসেস আদিবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন। এই ছেলেকে বুঝালে কোনো লাভই হবে না উনি জানেন তাই আর নিজের সময় নষ্ট না করে চলে আসলেন।

নিচে আসতেই আইরা উনাকে ধরে বলে,’খালামনি কি বলল আজলান?’

উনি বললেন,’আইরা আজলানের পিছনে থাকা ছেড়ে দে শুধু শুধুই তোর সময় নষ্ট কারণ ও তোকে কখনোই অন্য চোখে দেখেনি সবসময়ই নিজের বোনের সমতুল্য মনে করতো।’

আইরা বলল,’তোমার ছেলে এতোটা নিরামিষ কেমনে হয়েছে খালামনি? আজলানের জন্মের আগে কি তুমি নিরামিষ বেশি খেতে?’

আইরার অদ্ভুত প্রশ্নে হেসে দেন মিসেস আদিবা। আইরা বিরক্তি নিয়ে বলে,’এখন যা করার আমারই করতে হবে।’

‘তাই বরং কর কিন্তু দেখিস উলটা ও রেগে তোকে সত্যি সত্যি পাঁচতলা থেকে না ফেলে দেয়।’

আইরা কিছু না বলে টেবিলে যেয়ে বসলো। আজলান লাঞ্চ করতে আসলেই ও উঠে একটু ভাব করে চেয়ার টেনে দিয়ে লাজুক হেসে বলে,’আজলান ভাইয়া এইখানে বসো।’

আজলান আইরার দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অন্য চেয়ার টেনে বসে পরে। আইরা তা দেখে কিছু না বলে আজলানের প্লেটে খাবার দিতে দিতে বলল,’এইটা নিবে?’

আজলান গম্ভির হয়ে বলল,’আপাতত তোর দেওয়া কিছুই নিতে চাই না আমি।’

আইরা অবাক হয়ে বলল,’কেনো?’

‘তোর ঠিক নেই তুই খাবারে ঘুমের ওষুধ ও মিশিয়ে দিতে পারিস।’

আজলানের কথায় উচ্চস্বরে হেসে দেন মিসেস আদিবা। আইরা মিসেস আদিবার দিকে অসহায় চোখে একবার তাকিয়ে আজলানের দিকে তাকিয়ে বলে,’এতো খারাপ ভাবে অপমান না করলে হতো না?’

আজলান খাবার খেতে খেতে বলল,’না হতো না।’

আইরা আজলানকে আর খাবার না বেরে দিয়ে নিজের চেয়ারে বসে নিজের খাবার খেতে লাগলো। আজলান খেতে খেতে মিসেস আদিবাকে বলল,’আয়জান আর ভাবী কোথায় ওদের দুইজনকে তো দেখছি না?’

মিসেস আদিবা বলেন,’আয়রা আয়জানকে নিয়ে একটু বাহিরে গিয়েছে।’

তখনই…..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here