অনুভবে পর্ব-১৯,২০

0
948

অনুভবে
পর্ব-১৯,২০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
১৯

“ইনারা শুনো তো।” হঠাৎ সাইদ ডাকে তাকে। ইনারা উঠে যায়, “জ্বী ভাইয়া?”
“আইজাকে এই ইনভেটেশন দিও তো।”
“এটাতে কী?”
“ওহ তোমাকে তো বলাই হয় নি। আইজা এই কোম্পানিতে যুক্ত হচ্ছে। অভিনেত্রী হিসেবে। এখন থেকে এই কোম্পানি তার সকল প্রজেক্ট সামলাবে।”
“কী!” চমকে উঠে ইনারা, “কিন্তু আপু তো আমাকে কিছুই বলে নি। এতকিছু হয়ে যাচ্ছে অথচ আমি কিছুই জানি না।”
সাইদ খামটা ইনারার হাতে দিয়ে বলল, “প্লিজ খামটা ওকে দিয়ে দিও। আপাতত কথা বলার সময় হচ্ছে না। অনেক কাজ বাকি, একটু বুঝো।”
এই বলে সাইদ অন্যদিকে ছুটে গেল।

যেহেতু জোহান পাশেই বসে ছিলো সে সম্পূর্ণ কথা শুনে। মনে মনে অনেক খুশিই হয় সে। তার আর কষ্ট করতে হচ্ছে না। সে যে মেয়েকে এতদিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছে মেয়েটা নিজেই তার কাছে চলে আসছে। হঠাৎ করেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল তার। সে দাঁড়িয়ে ইনারাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার বোন আমাদের কোম্পানি জয়েন করছে?”
“আপনার কী? আপনি থাকুন না নিজের দীপার সাথে।”
ইনারা ক্রোধিত গলায় বলে চলে গেল। সে এই মুহূর্তে দ্রুত বাসায় যেতে চাইছিলো তা আর সম্ভব না। আজ প্রচুর কাজ আছে তার। হঠাৎ এমন প্লানিং পরিবর্তের কারণে সব সিডিউল তাকে নতুন করে করতে হবে। এ কয়দিনে পঞ্চসুরের এলবাম বাছাই করা, তাদের কতগুলো ফটোস্যুট আছে, ইন্টারভিউ আছে৷ আবার তাদের আলাদা আলাদাও অনেক কাজ আছে। এতদিন ধরে তো কেবল রিহার্সালের জন্য ইনারা কাজের চাপ টের পায়নি। কিন্তু এখন সিডিউল তৈরি করতে যেয়েই তার ভয় লাগছে।

সারাদিনে সব কাজ সেরে জলদি বাসায় এলো সে। আগামী কয়দিন অনেক কাজ আছে। তাই আজ আরাম করতে এলো সে। এসে দেখে সোফাতেই যেন এক পার্লার তৈরি হয়ে গেছে। কিছু মহিলা ফুপি এবং আইজা আপুর মেনিকিওর, পেডিকিওর এর কাজ করছে। আইজা আপুর মুখে ফেসমাস্কও লাগানো। এসব দেখে ইনারা চোখ বড় বড় করে নেয়। ফুপি তার দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে, “আরে ইনু, তুই কখন এলি?”
“এইত্তো ফুপি, মাত্র। কিন্তু তোমাদের এই অবস্থা দেখে ভয়ে এক মুহূর্তের জন্য হার্ট অ্যাটাকই করতাম। ভাবলাম এই সন্ধ্যাবেলায় ভূতেরা আমার বাসায় আড্ডা মারতে এলো কেন? আর আপুর হাত পা ভরে এই সাদা কী লাগিয়ে রাখসো?”
“আরে ফিল্মে চান্স পেলো, অভিনেত্রী হবে, একটু সুন্দর লাগতে হবে না ওকে?”
“আমার আপু তো মাশাল্লাহ সবচেয়ে বেশি সুন্দর।” ইনারা আইজার দিকে হেসে বলে। আইজাকেও অনেক খুশি দেখায় তার প্রশংসা শুনে। ফুপি এবার কাঠখোট্টা গলায় বলে উঠে, “হইসে। ওর মন রাখার জন্য আর এসব বলতে হবে না। এতদিন তো কেবল আমরা দেখে এসেছি, এখন তো সারাদেশ দেখবে। এখন আর এই অহেতুক সান্ত্বনা চলবে না। এই ট্রিটমেন্ট এর পর ওর রং তোর মত না হলেও একটু তো ফর্সা হবে।”
“উফফ ফুপি! তুমি আবার শুরু করলে? তোমাকে না বলেছি এই রং টং মেটার করে না। মানুষ কেমন তা মেটার করে। আর আমার আপু সবচেয়ে ভালো।”
“এসব মুখের কথা। সমাজে মানুষ সবার আগে মানুষের চেহারাই দেখে। আর মিডিয়া জগৎ-এ চেহেরাই জরুরী কেবল। তুই বুঝবি না। তোর এসব সহ্য করতে হয়েছে না’কি? ভাগ্য নিয়ে জন্ম নিয়েছিস তুই। তোর মা’য়ের রূপের প্রশংসাও দেশ বিদেশে হতো। যাদের রঙ কালো তাদের কতকি শুনতে হয় তুই কীভাবে বুঝবি? তুই এই’যে এমন এলোমেলোভাবে থাকিস তাও ওর পাশে দাঁড় করালে সবাই তোরই প্রশংসা করবে। এটাই নিয়ম। আমি যেমন মানুষের কথা শুনেছি আমার মেয়েকে তেমন শুনতে দিব না। তুই যা তো। এখানে তোর কাজ নেই। বিরক্ত করিস না।”
ইনারা বিরক্ত হয়ে বলে, “মানুষ তো তখন বলবে যখন তুমি বলা বন্ধ করবে। সারাক্ষণ আপু তোমার মুখ থেকেই খোঁটা শুনে আসছে। মানুষ আর কী বলবে বলো?”
“তুই বের হ তো। বের হ।”

ইনারা বিরক্ত হয়ে আইজার কাছে যেয়ে তার হাতে সাইদের দেওয়া খামটি দিয়ে বলে, “সাইদ ভাই তোমাকে দিতে বলেছে।”
আইজার মন খারাপ ছিল তার মায়ের কথাগুলো শুনে। কিন্তু সাঈদের দেওয়ার জিনিস দেখেই তার ঠোঁটের কোনে হাসি এঁকে উঠে। সে হাত বাড়িয়ে খামটা নেওয়ার পূর্বেই তার মা ইনারার হাত থেকে খামটা নিয়ে নেয়। আর রাগান্বিত সুরে বলে, “তুই এখনও ওই মিডেলক্লাস ছেলের সাথে কথা বলিস? তুই সেলিব্রিটি হবি আইজা। এসব মানুষের সাথে কথা বলার প্রয়োজন নেই। আর তোকে কী দিয়েছে ও? কেন দিয়েছে?”
ইনারা বিরক্ত হয়ে বলে, “আপু না’কি ‘এইচ এম’ কোম্পানিতে জয়েন করেছে। আগামী সাপ্তাহে তার পঞ্চম বছর বার্ষিকী। তারই ইনভেটেশন কার্ড।”
“বলিস কী! যাক ছেলেটা কোনো কাজে তো লেগেছে।” ফুপির চোখদুটো জ্বলজ্বল করে উঠে। সে উঠে দাঁড়িয়ে পার্লারের মহিলাগুলোকে বলে, “তোমাদের যত ভালো ট্রিটমেন্ট আছে সব ওর উপর করো। আরও সুন্দর করো ওকে। পার্টিতে যেন সবার নজর আমার মেয়ের উপর থাকে।”
বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে ইনারা। চলে যায় নিজের রুমে। তার ফুপিকে কিছু বলা আর পাথরকে মায়া শিখানো এক কথা।
.
.
“দেখ তো এই স্যুট ঠিক আছে না’কি? ” জোহান সামিকে জিজ্ঞেস করে। সামি বিছানায় বসে মোবাইল চালাচ্ছিল। জোহান আজ তাকে সাথে নিয়ে এসেছে কিছু বিশেষ কাজে। অথচ আনার পরপরই সে তার সকল স্যুট দেখাতে শুরু করে। সামনের সপ্তাহের পার্টিতে পরার জন্য। সামি সহজে বিরক্ত না হলেও আজ হলো, “ভাই তুই এ নিয়ে তেরো নাম্বার স্যুট দেখাচ্ছিস। সবই সুন্দর লাগে তোর উপর। এভাবে আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে এখানে ফ্যাশন শো করে দেখানোর মানে হয় না। তুই আগে তো এমন করিস নি।”
“আগে তো কোনো মেয়ের উপর এভাবে আমার মনও আসে নি। আর তাকে আমি এত খুঁজিও নি।”
“কার কথা বলছিস?”
“ওই কনসার্টে যে মেয়ের দেখা পেয়েছিলাম। আবছা আলোতে তাকে ভালো করে দেখতেও পারি নি তবুও মনে তার প্রতিচ্ছবি এঁকে আছে। তাকে এক নজর দেখার পর থেকে তার স্বপ্নই আমাকে জ্বালায়। আমার স্বপনচারিনী।”
“বলিস কী! সে পার্টিতে আসছে?”
“সম্ভবত। আমার সন্দেহ সে ইনারার বোন হতে পারে। আমার স্বপনচারিনীর চেহেরা কিছুটা ইনারার সাথে মিলে। কি! ও আমার স্বপনচারিনী কিছুতেই হতে পারে না। তারপর শুনলাম ওর বোন আছে। মেয়েটা মার্জিত এবং শোভন। নিশ্চয়ই সে আমার স্বপ্নচারিনী হবে। অপরূপ সুন্দরী এবং মার্জিত।”
“ইনারার সাথে চেহেরা মিলে অথচ ও হতে পারবে না। কেন? ভাই ও মারাত্মক সুন্দর। অনেকটা ছেলেদের মতো চলাফেরা করে বলে মেয়ে মেয়ে ফিল আসে না। তাই আকর্ষণীয়ও লাগে না। কিন্তু মেয়েটার চেহেরা অনেক সুন্দর। ওর ছবি মা’কে দেখিয়েছিলাম। মা তো দেখে বলে ওর চেহারা নায়িকা সাইয়ারার মতো। তাদের যুগের সবচেয়ে সুন্দর নায়িকা।”
“বলিস কী! তোর মা’কে দেখাতে গেলি কেন?”
সামি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন কী হলো?”
জোহান পড়ে যায় চিন্তায়। সে তার স্যুট আলমারিতে রেখে বিছানায় এসে বসে সামির সামনে, “আরে ও সুরু আন্টির মেয়ে।”
“সুরুটা কে?”
“সুরু আন্টি মা’য়ের বান্ধবী। তার মেয়েই ইনারা। দুইবছর আগে যার সাথে শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলাম। এক নাম্বারের গাঁধা ছিলাম তখন। না বুঝে শুনে খাতির করে বসলাম। একমাস পর শুনি মা ওর সাথে আমার বিয়ের কথা বলছে। ওর সাথে! বুঝতে পারছিস? ভাগ্যিস মা’য়ের সাথে আর যোগাযোগ হয় নি ওই বেয়াদব মেয়েটার,নাহয় কী হতো! যদিও বাবা কিছুতেই রাজি হতেন না ওর সাথে বিয়ের জন্য। তবুও মেয়েটা পাগলামি করলে আমার রেপুটেশন এর কী হতো? একারণেই তো এখনও ওকে না চেনার ভান করে আছি। দেখিস না চিপকুর মতো কেমন পিছু পিছু ঘুরে।”
“বলিস কী ইনারার সাথে তোর বিয়ে…” কথাটা সম্পন্ন করার আগেই জোহান তার মুখে হাত দিয়ে চুপ করায়। আর বলে, “ভুলেও মা’কে জানতে দিবি না। ওই মেয়ের কথা মা জানলে আবার কাহিনী করবে, ইমোশনাল ড্রামা শুরু করবে।” বলে সে উঠে দাঁড়ায়। আবার আগের স্থানে যেয়ে একটা জ্যাকেট হাতে নেয়।

সামি বলে, “ওর মন কিন্তু অনেক ভালো। ঠিকাছে অনেকটা এলোমেলো ধরনের। তবে খাঁটি মনের মানুষ বুঝা যায়। মামীর যেহেতু পছন্দ একবার ট্রাই করে দেখ।”
“এত পছন্দ হলে তুই বিয়ে করে নে।”
“ওর সাথে আমার ব্রো জাতীয় সম্পর্ক। এসব বলিস না।”
“ওইতো। ওকে তোর মেয়ের মতো লাগে না আর আমি বিয়ে করবো? ইন্ডাস্ট্রির এত সুন্দরীদের ডেট করার পর। আমার স্টান্ডার্ড বুঝে কথা বল।”
“ইনারা কিন্তু সেদিন কনসার্টে গিয়েছিলো।”
“তাই? তাহলে হয়তো ওর বোনও এসেছিলো। সন্দেহটা বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে।”
“মেয়েটা যদি ইনারা হয়?”
“অসম্ভব। আমার নজর কেবল সৌন্দর্য বুঝে। এমন মেয়ে পৃথিবীর চোখে সুন্দর হতে পারে, আমার না।” জোহান তার জ্যাকেট পরে আবার বলল, “আচ্ছা আমি যাই।”
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“দীপার বাসায়। ও না’কি আমার জন্য আজরাতে বিশেষ কিছু করেছে।” জোহান চোখ টিপ মেরে বলে, ” ইউ নো হোয়াট আই মিন রাইট?”
সামি বিরক্তির সুরে বলে, “তুই এক মেয়েকে স্বপ্নচারিণী বলে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটাতে যাস? আর ইউ সিরিয়াস?”
“ব্রো যাকে পাই নি তার জন্য তো জীবনের সব এনজয়মেন্ট বিলীন করতে পারি না। আমি গেলাম।”
বলে আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না জোহান। দৌড়ে যায়। সামি সেখানে বসেই তাকে উঁচু স্বরে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে আমাকে আনলি কোন দুঃখে?”
.
.
সকালে রিহার্সাল, বিকেলে ফটোস্যুট এবং রাতে ইন্টারভিউ। এই সিডিউল পঞ্চসুরের। সারাদিন আজ ব্যস্ততায় ভরা। পঞ্চসুর থেকে বেশি ইনারার। সে এত কাজ আগে কখনো সামলায় নি। বিশেষ করে পাঁচজকে আলাদাভাবে সামলানোটা কঠিন। কেমন দ্বিধায় পড়ে গেল সে। কোনটা ছেড়ে কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। সভ্য তা খেয়াল করে তাই একজন স্টাফবয়কে দিয়ে তার জন্য সিডিউল বানিয়ে পাঠায়। কিন্তু কে দিলো তা বলে না। এরপর দুপুরে খেয়েই সকলে ফটোশুটের জন্য রওনা দেয়। জোহান, সামি এক গাড়িতে আসে। ইরফান ঐশি অন্যগাড়িতে। সকল গাড়িতে তাদের সুরক্ষার জন্য একটি করে বডিগার্ড আছে। যেহেতু তারা আজ এতদিন পর জনগণের সামনে যাচ্ছে। সামনের দুই গাড়ি চলে যাওয়ায় ইনারা দ্বিধায় পরে যায়। সে কী এখন সভ্যের সাথে যাবে? অসম্ভব! গতপুরশু যেভাবে তাকে একা ফেলে রেখে গিয়েছিল তার পর তো কিছুতেই নয়।

সভ্য বলে, “তোমাকে কি নিমন্ত্রণ পাঠাতে হবে? উঠছো না কেন?”
ইনারা হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে ভেংচি কেটে বলে, “কেন সেদিন মতো মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিবেন বলে উঠবো?”
“এখন এখানে ঢং শুরু করবে না। উঠো।”
“আমি ঢং করি? আমি? আপনি আমাকে লাস্ট টাইম রাস্তায় নামিয়ে ঠ্যাংঠ্যাং করে চলে গেলেন। এদিকে আমার সাথে কি হয়েছে তার খেয়াল ছিলো আপনার? আমি উঠব না আপনার সাথে, যান।”

সভ্য আর কথা না বাড়িয়ে ইনারার হাত ধরে তাকে টেনে ভিতরে ঢুকায়। কিন্তু ইনারা তো আরও জেদি। সে আবার নেমে যেতে নেয়। সভ্য না পেরে তার হাত ধরে গাড়ির দরজা বন্ধ করতে নেয়। আর বলে, “এবার দেখি কোথায় যাও। ড্রাইভার, গাড়ি চালু করেন।”
“আপনি এত অসভ্য কেন? ছাড়ুন আমাকে, ছাড়ুন বলছি।”
ইনারা দ্রুত হাত পা নাড়াতে থাকে। এবার সভ্যের ভালোই রাগ উঠে। একতো সেদিন ভুল ছিলো ইনারার তাকে সরি বলে নি। আর এখন ফাজলামো করছে তার সাথে? সে ইনারার পাশে বসা ছিলো। হঠাৎ করে তার সামনের দিকে মুখ এনে তার ঠোঁটের উপর হাত রেখে, চোখে চোখ রেখে বলে, “একদম চুপ। আর একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করলে খারাপ হবে। আর স্থির হয়ে বসো। একদম নড়াচড়া করবে না।”
প্রথমে তো ইনারা ঘাবড়ে যায় সভ্যের হঠাৎ এমন পরবর্তে। সভ্য কাছে আসায় অকারণে লজ্জাও পায়। চোখ নামিয়ে নেয়। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে আগের রূপে চলে যায়। বলে, “দে..দেখেন ভালো হচ্ছে না কিন্তু। সরেন আপনি।”
ইনারা সভ্যের বুকে হাত রেখে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলতে নিলেই সভ্য তার কোমরে হাত রেখে টান দেয়। চমকে উঠে ইনারা। শিউরে ওঠে সে। এক মুহূর্তের জন্য যেন নিশ্বাস ফেলতে ভুলে যায়।

চলবে…..

অনুভবে
পর্ব-২১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“এতক্ষণ লাগলো তোমার? জোহান কোথায়?” সাইদ ব্যস্ততার মাঝে জিজ্ঞেস করে। হঠাৎ এত কাজের চাপে তার কথার মাঝে বিরক্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগের জোহান এবং দীপার কথায় এমনিতেই তার মেজাজ গরম ছিল। তাই সেও কাঠখোট্টা গলায় বলে, “তিনি প্রেম করছে। সাথে কিচুমিচুও করছে।”

“কিচুমিচু! এটা আবার কী?” সামি জিজ্ঞেস করে আগ্রহের সুরে। ইনারার পিছন থেকেই জোহান আসে। ইনারা তাকে দেখে ভেংচি কেটে বলে, “তাকেই জিজ্ঞেস করো।”
সামিও অবুঝের মতো জোহানকে জিজ্ঞেস করে বসে, “ভাই এই কিচুমিচু কি’রে?”
জোহান রাগী দৃষ্টিতে তাকায় সামির দিকে। তারপর ইনারার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার সাথে আসো। এখনই।”
সাইদ বলে, “জোহান স্যুটের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।”
“হোক।” জোহান আবার ইনারার দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বলে, “শুনো নি কী বলেছি?”
“শুনেছি, তো?”
“আসো।”
“আসব না। কি করবেন শুনি?”

সামি তার পাশে বসা ঐশির দিকে ঝুঁকে বলে, “মেয়েটা কী জিনিস ভাই, যাদের সাথে পাঙ্গা নেওয়া সবচেয়ে বেশি ডেঞ্জারাস তাদের সাথে মুখে মুখে তর্ক করে। জোহান আর সভ্যের সাথে কথা বলতে আমার বুক কাঁপে আর এই মেয়ে তাদের সাথে ঝগড়া করে।”
“ইনারা না জোহানের পাগল ছিলো? কী হলো হঠাৎ?”
“দীপা যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকেই এমন।”
ঐশি হাসে, “দীপার কথা শুনে ওর প্রেম উড়ে গেছে? যাক ভালো, মেয়েটা অনেক মিষ্টি। জোহানের পাল্লায় পড়লে কষ্ট পাবে। দীপাকে ছাড়াও আজকাল না’কি শ্রেষ্ঠার সাথেও কথা বলে।”
“বলিস কী? আমাকে তো বললো নিধির কথা।”
“বাদ দে, আর গুণা লাগবে না।”

সাইদ ইনারার এমন কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়। মেয়েটা নিজের চাকরি তো ডুবাবেই, সাথে তার চাকরিও নিয়ে ডুববে। সে অস্থির হয়ে বলল, “ইনু প্লিজ যাও। এমন করে না।”
ইনারা বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে। আর জোহানের পিছনে যায়। সভ্য এতক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো। তার কাজ করছিলো। এত কথার মাঝেও সে চোখ তুলে তাকায় নি। কিন্তু ইনারার যাওয়ার কথাতেই সে চোখ তুলে তাকায় তার দৃষ্টি ইনারার উপরই আটকে গেল। অনুসরণ করল তার পথ।
.
.
জোহান ইনারাকে একপাশে নিয়ে আসে। এদিকে সচারাচর মানুষ কম আসে। তাই সে নিজের রাগ বের করল, “তোমার সাহস কত বড় দীপার সাথে এভাবে কথা বলার? আচ্ছা তুমি কী ভাবো নিজেকে বলো তো। তুমি সামান্য একটা মেয়ে ইমপ্লোয়ী। এভাবে ওর সাথে কথা বলার অধিকার তুমি কোথায় পাও। ও রাগে আমাদের কোম্পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলে কী করবে তুমি? আমাদের কত বড় ক্ষতি হবে তুমি জানো? এর ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে তুমি? তুমি আজই ওর কাছে ক্ষমা চাইবে। ও তোমার জন্য ভীষণ বাজে মেজাজ নিয়ে বাহিরে গেছে।”

ইনারা হাই তুলে, “হয়েছে? এবার আমি যাব?”
“আমি কী বলেছি কিছু শুনেছ তুমি? তুমি দীপাকে সরি বলবে। নাহলে… ”
“নাহলে কী? কী করবেন আপনি? আর দীপার ফিফা বানায় দিব। তোকে আমার জুতাও সরি বলবে না।”
“তুমি আমাকে পছন্দ করতে একারণে ওর উপর তোমার এত রাগ তাই না? একারণে ওকে তুমি এত শুনালে। নিজের কাজে কাজ রাখো। আর টক্সিক ফ্যানের মতো ব্যবহার করা বন্ধ করো। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে কি করি তাতে তোমার কিছু আসে যায় না।”

একথায় মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ইনারার, “এক্সকিউজ মি? আপনার সো কলড গার্লফ্রেন্ড আমাকে কি বলেছে তা আপনার কানে যায় নি। আমি আপনাকে পছন্দ করতাম। তো কী? আমি নিজের রাগ অকারণে কারও উপর ঝারি না। আর আমি আপনার ব্যক্তিগত জীবনের সম্মান করি দেখেই চুপ আছি। আর আপনি হয়তো আমাকে ভুলে গেছেন আমি ভুলিনি। আপনার জন্য আমার সাথে কাটানো একদিন খুব তুচ্ছ ছিলো কিন্তু সেদিনটি আমি আজও মনে রেখেছি। কারণ আমার কাছে মা’য়ের ইচ্ছার সম্মান রাখাটা সর্বোপরি। অন্যদিকে আপনি সৌমিতা আন্টির…. ” সৌমিতার কথা আনতেই চুপ হয়ে যায় ইনারা। এ কথাগুলো সে কখনো জোহান কে বলতে চাইনি। সে চেয়েছিলো জোহান নিজ থেকে সবকিছু মনে করুক। কিন্তু এখন দীপার সাথে তার সম্পর্ক জানার পর তার কিছু আসে যায় না। এ চাকরি নিয়েও তার কিছু আসে যায় না। যার কারণে সে চাকরিটা করতে শুরু করেছিলো আজ তার এমন বেমানান প্রতিচ্ছবি তার সামনে ফুটে উঠবে সে কখনো ভাবে নি।
না’কি জোহান সঠিক? হঠাৎ জোহানকে অন্যকারো সাথে দেখেই কী তার জোহানকে অসহ্য লাগছে?

“এতক্ষণ ধরে এখানে কী করছ?” হঠাৎ এক ভারী কন্ঠে ঘোর ভাঙে তার। সভ্য তার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “স্যুটের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমার মাথা ধরেছে যেয়ে কফি নিয়ে আসো।”
“আপনি অন্যকাওকে বলতে পারেন না?”
“তাহলে তুমি কী করবে? আসো।” সভ্য ইনারার এক হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে নিলেই জোহানও ইনারার হাতটা ধরে নেয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সভ্যের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি ওর সাথে কথা বলছি।”
“আই ডোন্ট কেয়ার।”
“তোকে…” জোহান ক্ষেপে সভ্যের দিকে এগোতে নিলেই ইনারা সামনে এসে পড়ে। জোহান সেখানেই থেমে যায়। সে একটা মেয়ের উপর তো তার ক্ষোভ বের করতে পারে না। সভ্য কিছু বলে না। ইনারার হাত ধরে নিয়ে যায় তাকে।

ইনারা সভ্যকে জিজ্ঞেস করে, “আপনারা দুইজন সবসময় এমন কুত্তা বিলাইয়ের মতো মারামারি করেন কেন?”
“ভাষা ঠিক করো।”
“আপনারা এমন ব্যবহার করবেন। আমি বলতেও পারবো না? ঠিক কি হয়েছে আপনাদের মাঝে।”
“নন অফ ইউর বিজনেস। আর এতই জানার ইচ্ছা থাকলে আমাকে আগে বলো, তুমি কে?”
ইনারা বিস্ময় নিয়ে তাকায় সভ্যের দিকে, “আমি কে মানে? আমি ইনারা”
“জোহানের মা’য়ের নাম কেবল তার কাছের কিছু মানুষ জানে। তুমি সৌমিতা আন্টিকে কীভাবে চিনো? আর তোমার মা’য়ের ইচ্ছা বলতে কী বুঝালে তুমি? তুমি আমার সাথে মিথ্যে বলেছ?”

সভ্যের এতগুলো প্রশ্ন একসাথে শুনে হতভম্ব হয়ে যায় ইনারা। তার জন্য কথা বানানো বা ঘুরানো বড় ব্যাপার না। এতবছর ধরে এসব করে অভ্যাস আছে। কিন্তু কোনটা ছেড়ে কোন প্রশ্নের জন্য মিথ্যা বলবে ভেবে পায় না সে। এর উপর সভ্যের দৃষ্টি দেখে আরও ভয় লাগে তার। মিথ্যা বলতে কষ্ট হয়। ইনারা ভীত সুরে বলে, “আমি…আমি আপনার জন্য কফি আনছি। আপনি অপেক্ষা করুন।”
ইনারা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে নিলেই সভ্য তার বাহু ধরে নিজের কাছে টান দেয়।

ইনারা কাছে এসে পড়ে তার। তার নয়নে ভয়, বিস্ময়। সভ্য সে নয়নে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়। মৃদু স্বরে বলে, “হাজারোবার ছুটে পালালেও অবশেষে আমার কাছেই তোমার ফিরে আসতে হবে।”
সভ্যের এমন দৃষ্টিতে ইনারার ভয়ের সাথে সাথে হৃদয়ের স্পন্দনও বেড়ে গেল। কেমন যেন তার দৃষ্টি। ভয়ের থেকে বেশি অস্বস্তিটা বেড়ে গেল ইনারার। সে এক মুহূর্তের চোখ নামিয়ে নেয়। আবার একপলক তাকায় তার দিকে। এখনো সে গভীর দৃষ্টি! এমনিতেই সভ্যের চোখদুটো সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় এর মধ্যে এমন দৃষ্টিতে তাকালে যে কোনো নারী তার হৃদয় হেরে বসবে। তাই ইনারা নিজেকে সামলায়, বাঁচায়। সে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। হাত ছাড়িয়ে যেতে নিলেই তার হাতের ব্রেসলেটটা খুলে আসে সভ্যের হাতে। আভাসও পায় না সে।

সভ্য তার হাতে থাকা ব্রেসলেট দেখে বাঁকা হাসে। তার মনে পড়ে তার ও ইনারার প্রথম দেখা। এভাবেই পালিয়ে গিয়েছিলো ইনারা। সভ্যের হাতে বন্দী হয়ে ছিলো কেবল তার চুড়ি। আর আজ ব্রেসলেট। মেয়েটার কী নিজের জিনিসের কোনো কদর নেই?
.
.
ফটোশুট শেষ হবার পর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে ইনারা। এত পরিশ্রম কখনো করা হয় নি তার। এর উপর শুটিং এর এত তীক্ষ্ণ রশ্মিতে এবং এত মানুষের শব্দে তার মাথা ব্যাথা করছে। তবুও সে সভ্যের সাথে শান্তিতে না এসে, সামি এবং ঐশির সাথে তাদের গাড়িতে চাপাচাপি করে বসে আসে। দুইজনে তার মতো কথা বলা পার্টি। এই কথা বলার চক্করে তার মাথা ব্যাথা আরও বাড়ল। সবই সভ্যের থেকে বাঁচার চেষ্টা। সে ভেবেছিলো গন্তব্যে পৌঁছে সে একটু আরাম করবে কিন্তু সেখানে যেয়ে আরও বাজে অবস্থা দেখে সে। গাড়ি ঢুকতে না ঢুকতেই দেখে চারদিকে গিজগিজ করছে। ভিড়ে গাড়িও ধীর গতি করে নিয়েছে। সাথে সাথে ইনারা তার স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়।

গাড়ি থামে। তাদের গাড়ি সবার শেষে ছিলো। বডিগার্ডরা বের হয়ে সবাইকে নিয়ে যাচ্ছিলো। ইনারাই কেবল পিছনে ছুটে গেল। আশেপাশের মেয়েরা ছুটাছুটি লাগিয়ে দেয়।
নিজেকে এত ভিড়ের মাঝে সে সামলাতে পারে না। ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে যায়। উঠে দাঁড়াবে যে অবস্থাও নেই। ছোটবেলা থেকেই সে ভিড়কে ভয় পায়। ছোটবেলায় এমন অবস্থায় তার মা তাকে সামলাতো। আর আজকাল সুরভি এবং প্রিয় সামলায়। আজ তারাও নেই। ইনারা কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।

সভ্য যাবার পথে খেয়াল করে আশেপাশে কোথাও ইনারা নেই। অথচ সে ঐশীর পিছনে ছিল। তাকে না পেয়ে ঘাবড়ে যায় সভ্য। এত ভিড়ের মাঝে মেয়েটার কিছু হলো না তো? তার পিছনে ফিরে যাওয়াটাই মানা। বডিগার্ড সকলে তাকে প্রটেকশন দিয়ে গেছে। কিন্তু ইনারা জন্য সে নিজেকে আটকাতে পারে না। ছুটে যায় পিছনে। ভিড়ের মাঝে অনেকেই তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করা। কতজনে দিশেহারা হয়ে যায় তাকে কাছে পেয়ে। হৈ-হুল্লোড় বেড়ে যায়। বডিগার্ডটা বারবার তাকে ডাকে। সে শুনেনা
এই মুহূর্তে তার নজর কেবল ইনারাকে খুঁজছে। অবশেষে সে ইনারাকে পায়। ভিড়ের মাঝে হাঁটু গেড়ে চুপ করে বসে আছে সে। চোখ দুটো চেপে ধরে, কানে হাত দিয়ে বসে আছে। তাকে দেখে যেন সভ্যের প্রাণে প্রাণ ফিরে। সে শান্তির নিশ্বাস ফেলে ইনারার হাত ধরে তাকে টেনে উঠায়। তারপর তার মাথার ক্যাপ ইনারার মাথায় দিয়ে তাকে নিজের বুকের মাঝারে ভরে কোর্ট দিয়ে তাকে ঢেকে নেয়।

হঠাৎ করে এক টান অনুভব করে ইনারা। কারো হাতের উষ্ণতা পেয়ে নরম দৃষ্টিতে উপরে তাকায় সে। বুঝে উঠার পূর্বেই সভ্য তাকে বুকের মাঝে ভরে নেয়। তাকে সকলের থেকে লুকিয়ে, তার কাঁধে হাত রেখে সামলিয়ে তাকে নিয়ে যেতে থাকে বিল্ডিং এর ভেতরে।

“ভয় পাবার কিছু নেই, আমি আছি তো।” সভ্য বলে। চারদিকে হৈ-হুল্লোড়। তবুও এই সাধারণ কিছু শব্দ তার সকল ভয় মুহূর্তেই দূর করে দেয়। কেমন শান্তি ছড়িয়ে দেয় তার মাঝে। তার মনে পড়ে ছোটবেলায় তার মা’ও এই কথা বলেছিলো একবার তাকে। এমন ভিড়ের মাঝে তার কান্না থামানোর জন্য এ ক’টি শব্দই যথেষ্ট। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সভ্যের দিকে। কত গম্ভীর দেখাচ্ছে তাকে! আচ্ছা গম্ভীরমুখে কী যেকোনো পুরুষের প্রতি আকর্ষণীয়তা বাড়ে? না’কি এটা কেবল সভ্যের প্রতিই প্রযোজ্য?

বডিগার্ডরা এতক্ষণে এসে তাদের আশেপাশে খালি করে ভেতরে নিয়ে যায়। বিল্ডিং-এ ঢুকতে পারে তারা। দলের সবাই আগের থেকেই ভেতরে চলে গেছে।। বাহিরে চেঁচামেচি বেড়েছে। সাইদ ভাইয়াকে কেমন ভীত দেখাচ্ছে। সে কিছু বলতে নিলেই সভ্য তাকে থামিয়ে দেয়। এবং একজন স্টাফ মেম্বারকে বলে, “ওকে আমার ভ্যানিটি রুমে নিয়ে যাও। আমি আসা পর্যন্ত ওকে বের হতে দিবে না এবং কাওকে ঢুকতেও দিবে না।”
স্টাফকে এত কঠিন গলায় কথাগুলো বলার পরে সে ইনারার দিকে তাকিয়ে নরমসুরে বলল, “তোমার শরীর খারাপ দেখাচ্ছে। তুমি যে আরাম করো। খিদে পেলে ওকে বলবে, ও খাবার এনে দিবে বুঝলে?”
ইনারা তার এত বড় কাণ্ডের পরে মুখ খুলে কিছু বলতে পারেনা। তার জন্য সভ্যের এক ক্ষতিও হতে পারতো এই ভীড়ে। তাই সে বাচ্চাদের মতো আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় কেবল।
.
.
ইন্টারভিউ শেষে এক মুহূর্তও সভ্য অপেক্ষা করে না। দ্রুত আসে তার রুমে। এসে দেখে ইনারা সোফায় বসে বসে ঘুমিয়ে পরেছে। এ ক’দিনে তার উপর দিয়ে অনেক চাপ গেছে। নিশ্চয়ই ক্লান্ত সে। সভ্যের হঠাৎ করে তাকে কাছে থেকে দেখার শখ জাগলো
। ইনারার পিছনে যেয়ে দাঁড়িয়ে সোফায় হাত রেখে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে। তার দিকে তাকিয়ে গভীরভাবে পরীক্ষণ করতে থাকে তার চোখের পাঁপড়ি, কপালে ছুঁয়ে থাকা ছোট চুলগুলো, গালের লালচে আভা, গোলাপি ঠোঁট জোড়া। তাকে নিদ্রার জগতে হারিয়ে যাওয়া রাজকন্যা লাগছে। আরও সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। ইনারার ক্লান্তি দূর করার জন্য সে আলতো করে তার কপালে হাত রেখে মাথা টিপে দিতে থাকে। কয়েক মুহূর্তই কাটে। হঠাৎ মাথা টিপে দিতে দিতে তার প্রচুর ইচ্ছা জাগে ইনারার কপালে একটু চুমু খেতে। ইনারা তো ঘুমন্ত। নিদ্রার জগতে হারানো। তার কপালে একখানা চুমু খেলে কী বিরাট বড় কোনো অপরাধ হয়ে যাবে?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here