অনুভবে পর্ব-২৪,২৫

0
1251

অনুভবে
পর্ব-২৪,২৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
২৪

“ও প্রিয়তমা, শুনোনা, শুনোনা আমার এই বায়না
ও প্রিয়তমা, তোমার মাঝে আমার আয়না
এই অবেলায় মন যে হারায়,
এই অবেলায় তোমার সাথী হতে চায়,
এই নিঝুম রাতে হবে তোমার আমার প্রেমকথন…”

থেমে যায় সভ্য। ইনারাকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন লেগেছে? এতটুকুই লেখা হয়েছে।”
“হুম, গানটা সুন্দর। কিন্তু আপনি হঠাৎ করে প্রেমের গান লিখলেন কেন? ওটা তো অন্যদের কাজ তাই না? আপনি না বেশিরভাগই অন্য ধরনের গান লিখেন?”
“অন্যকিছু চেষ্টা করলাম। ভালো লাগে নি?”
“না না লেগেছে। কিন্তু সত্যি বলতে আপনাদের গানের স্টান্ডার্ড যত হাই এতটা ভালো হয় নি। আপনি যেগুলো
ভালো লিখেন তার উপরই ধ্যান দেন। প্রেমের গান বেস্ট লিখে জোহান আর ঐশি। দুঃখের গান বেস্ট হয় ইরফানের। এটাই তো আপনাদের দলের বিশেষত্ব যে সকলের গানের জগতের পাঁচ ধরণ আমরা একত্রে পাই।”

সভ্য চুপ করে রইলো প্রথমে। ইনারার কথাটা কটু শোনালেও সত্য। সে জানে। সাধারণত তার এমন সত্য উওর শোনাটা পছন্দের। কিন্তু আজ তার সত্যটা শুনতে তেমন ভালো লাগে নি। বিশেষ করে ইনারার মুখ থেকে। তাও জোহানের সাথে তার তুলনা করে। সে পণ নিলো একদিন ইনারাকে প্রেমের গান শুনিয়েই ছাড়বে। তাও তাদের লেখা সবচেয়ে সুন্দর প্রেমের গান।

“হ্যালো হ্যালো ফোন টেস্টিং। ওয়ান টু থ্রি…” ইনারা ফোনেই দুষ্টুমি করতে থাকে। সভ্য বিরক্ত হয়ে বলে, ” কি শুরু করলে?”
“আপনি কথা বলতেছিলেন না তাই দেখছিলাম ফোনে আছেন না-কি হাওয়া হয়ে গেছেন?”
“তুমি একটু আস্তে কথা বলতে পারো না? কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলে।”
“আপনার কন্ঠ শুনতে না পেলে কি করব?”
“কেন তোমার কি আমার কন্ঠ শুনতে ইচ্ছা করছে?” সভ্য বলল। তার গিটারটা বুকে জড়িয়ে ধরে। তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।
“কারও সাথে কথা বলার সময় সামনের জন চুপ থাকলে আমার খুব বিরক্ত লাগে।”
“তাই? আর তুমি যে সারাক্ষণ সবাইকে বিরক্ত করো তার কি?”
“আমার জীবনে যাকে থাকতে হবে তার আমার বিরক্তি সইতে হবে। সইয়ে যারা থাকতে চায় তারা সারাজীবনের জন্য আমার সাথে থাকবে। আমি কখনো কারও জন্য চেঞ্জ হবো না। বুঝলেন?”
“বুঝলাম।”
“আচ্ছা আপনার এত রাত জাগার অভ্যাস কবের থেকে হলো? আপনি যেয়ে ঘুমান। আমি গোপাল ভাড় দেখি। আপনার জন্য আমার আজকের এপিসোড শেষ হয় নাই কিন্তু কেক শেষ হয়ে যাইতেছে। কাল সকালে এসে কথা হবে।”
বলেই সে সভ্যের মুখের উপর কল কেটে দিলো।

সভ্য থতমত খেয়ে যায়। সে অবাক হয়ে তাকায় ফোনটার দিকে। মেয়েরা তার সাথে কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে থাকে আর ইনারা তাকে দুই পয়সার পাত্তাও দেয় না। আজ পর্যন্ত তার পরিবারের কেউ তার ফোন কাটার সাহস পেল আর এই মেয়ে এভাবে তার মুখের উপর ফোন কেটে দিলো। মানুষ ঠিকই বলে কতগুলো মানুষের শান্তি ভালো লাগে না। সে সাথে সাথে মেসেজ দিলো ইনারাকে, “কাল আমার বাসায় আসবে। সকাল ৭ টায়। কাজ আছে।”
মেসেজটা দিয়ে উঠতে দেরি কিন্তু ইনারার কল আসতে দেরি নেই। কিন্তু এইবার সে ফোন ধরল না। সাইলেন্ট করে পাশে রেখে দিলো। গিটার বাজাতে শুরু করে। বারবার তার চোখ যাচ্ছে সে ফোনের উপর। মনটা আকুপাকু করছে একটিবার তার কল রিসিভ করার জন্য। ইনারার কন্ঠ শোনার জন্য। কিন্তু তার ইগোটা বেশি। তাই হাজার চাওয়া সত্ত্বেও কল রিসিভ করে না সে।
.
.
সকাল সকাল সভ্য কফি বানাচ্ছিল। এমন সময় কলিংবেল বাজে। সভ্য জানে ইনারা এসেছে। দেরি করার শাস্তিটা ইনারার ভালো করে জানা। তাই এই ভুল সে করবে না। তবুও সে আরামে কফিটা বানিয়ে যেয়ে দরজা খুলে। যেয়ে দেখে ইনারা মেঝেতে বসে আছে গালে হাত রেখে। তা দেখেই চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল তার।
“এ’কি? নিচে বসে আছো কেন?”
“হয়রান হয়ে আছি দেখেন না?” কাঠখোট্টা গলায় বলল ইনারা। সকাল সকাল তাড়া দিয়ে ডেকে নিজে আরাম করেন। এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?”
“তাই বলে তুমি মেঝেতে বসে পরবে? আমি পাগল ছাগল মানুষ দেখেছি। তোমার মতো দেখি নি।”

“এহ নিজে তো ঘরে বসে থাকেন। আমার সে কত দূর থেকে আসা লাগে। এসেও আপনি দাঁড় করিয়ে রাখবেন। আমার আইলসামি খারাপ মনে করবে না? তাই বসে পরেছি।” ইনারা উঠে দাঁড়িয়ে সভ্যের কফিটা তার হাত থেকে নিয়ে ভেতরে যেতে যেতে বলল, “এটা এখন আমার। আপনি নতুন বানিয়ে নিন।”
সভ্য চোখ দুটো বড় বড় করে বলে, “এভাবে কাওকে না জিজ্ঞেস করে তার থেকে জিনিস নেওয়াটা বেয়াদবি। ”
ইনারা তাকে পাত্তা না দিয়েই বেডরুমের দিকে যেতে যেতে বলল, “এভাবে কারও ঘুম নষ্ট করে ডাকাটাও বেয়াদবি। আপনি করছেন, আমিও করেছি। বেয়াদবি, বেয়াদবি কাটাকাটি। হিসাব বরাবর। চাপ্টার ক্লোজ।”

সভ্য দরজা লাগিয়ে ইনারার পিছনে যায়। যেতেই দেখে মেয়েটা আসতেই বিছানার উপর ব্যাগ রেখে নিজে যেয়ে বারান্দার দোলনায় বসে আরামে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। সভ্য বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে ব্যাগ উঠিয়ে টেবিলে রাখে এবং বিছানার ভাঁজ ঠিক করে। তার অগুছালো জিনিস একদম অসহ্যকর লাগে। অথচ সে এই অগুছালো মেয়েটাকেই মন দিয়ে বসলো।

সে ইনারার সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে বলে, “তোমার কি একটু জ্ঞান বুদ্ধি নেই এভাবে কে বিছানায় ব্যাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।”
“আমি।”
“তোমার মাঝে আদব কায়দা বলতে কিছু নেই।”
“উফফ! আপনি যেয়ে কফি খান তো। আপনার মাথা ঠান্ডা হবে। যান যান।”
“আমার কফি তো তুমি চুরি করে নিয়ে নিলে।”
“এখন আমি আয়েশ করে খাব আর আপনি আহত চোখে তা দেখেন।”
বলেই ইনারা সভ্যকে দেখিয়ে চুমুক দিলো কফিতে। সভ্যও কম কীসের? তার মাথায় এক দুষ্টুমি বুদ্ধি এসে হাজির হলো। সে ইনারার দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ হাসে। আর দ্রুত তার দিকে এগিয়ে যায়।

হঠাৎ এভাবে সভ্যের কাছে আসায় চমকে যায় ইনারা। ভয়ে খানিকটা লাফিয়ে উঠে। সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে সভ্যের দিকে। সভ্য তো বহু কষ্টে তার হাসি থামায়। তার ইনারার এমন অবস্থা দেখে হাসিই পাচ্ছে। কিন্তু সে তা প্রকাশ করে না। সে ইনারার হাতের উপর হাত দেখে তার মগটা ঠোঁটের কাছে নিয়ে এক চুমুক দেয়। আজ কেন যেন তার হাতে সভ্যের হাতের ছোঁয়া পেতেই কেঁপে উঠে ইনারা। এর কারণ কি একটি পুরুষের তার এত কাছে থাকাটা, না এই শুভ্র সকালের মাতাল হাওয়ার। কেন যেন সে শিউরে উঠে। তার হৃদয়ের স্পন্দন বেগতিক হয়। সভ্যের এমন চাহনি দেখে নড়তেও ভুলে গেছে সে।

সভ্য ইনারাকে এতটা কাছে থেকে দেখে নিজেও হারিয়ে যায়। কেমন মাতাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইনারার দিকে।ছোট একটি দুষ্টুমি করতে যেয়ে সে নিজেই নিজের হৃদয় আবারও হেরে বসলো। দূরের থেকে বুঝা যায় না। কিন্তু কাছের থেকে দেখতে পেলে যে কেউ ইনারার চোখে তাকিয়ে নিজেকে হেরে বসবে। তার নীলাভ চোখদুটো গভীর। সাগরের মতো গভীর। যেন মায়ার সমুদ্র। এ সমুদ্রতে ডুবে যাওয়াটাও ভাগ্য। হঠাৎ তার বুক কেঁপে উঠে। অন্তরের ভেতর জ্বালাতন শুরু হয়। এক ঘোরে হারিয়ে যায় সে। ইনারার কন্ঠে ঘোর ভাঙে তার, “কী কর..করছেন আপনি?”

কেমন জড়োসড়ো কন্ঠ তার। কন্ঠটা শুনে হুঁশ ফিরে তার। সে নিজেকে সামলে বলে, “আমার সবটা কীভাবে আদায় করতে হয় আমি ভালো করেই জানি।”
বলেই চোখ টিপ মেরে উঠে পড়ে সে।

ইনারা থমকে যায়। এতক্ষণে নিশ্বাস আসে তার। সভ্য এই কফিটার জন্য এমন করল? আর সে কি উলটাপালটা কথাই না ভাবছিলো! ভাবছিলো সভ্যের হঠাৎ তার এত কাছে আসার ব্যাপারটা। নিজেকে সংযত করে সে রাগে কটমট করতে করতে সভ্যের হাতে কফিটা দিয়ে বলে, “আপনার কফি আপনিই রাখেন।” বলে সে ভেতরে চলে যায়। তার ব্যাগ থেকে কিছু কাগজ বের করতে করতে বলে, “আমি কাজের সব কাগজপত্র নিয়ে এসেছি। একবার দেখে নেন।”

সভ্যের তো কাজে ধ্যান নেই। তাই সে এসব কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মতলবের কথাই বলে, “আচ্ছা তুমি না গতকাল রাতে বললে যে তুমি কারও জন্য চেঞ্জ হবে না? দহরো জোহানের দীপার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু ও যদি তোমার অন্যরূপে তোমাকে পছন্দ করতো তাহলে কি করতে তুমি? উদাহরণসরূপ তুমি যেদিন আমাদের কনসার্টে এসেছিলে।”
ইনারা তাকায় সভ্যের দিকে, “হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
“গতকাল রাতে যে বললে তুমি কারও জন্য চেঞ্জ হবে না। কিন্তু জোহানের জন্য তো ভালোই পাগল ছিলে তুমি তাই প্রশ্ন জাগলো মনে।”
“আমার যতদিন মন চাইতো ততদিন আমি এমনই থাকতাম। আমি যেমন সে আমাকে সেভাবে ভালো না বাসলে তাকে কি ভালোবাসা বলা যায়? কাকে জিজ্ঞেস করছি। যে না’কি কখনো ভালোই বাসে নি। আচ্ছা আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ বলেন তো। তেমন মেয়ে খুঁজে দিব।”
“যে যেমন নিজেকে তেমনই প্রদর্শন করে। চোখে লাগা বা মনে লাগার জন্য নিজেকে অন্যকেউ না বানিয়ে নেয়। আজ পর্যন্ত আমার জীবনে যত মেয়ে এসেছে সকলেই তাদেরকে আসলভাবে প্রদর্শন করতো না। জানো তো এই মিডিয়া জগৎ দুই মুখী। সকলে মুখোশ পরা থাকে। কেউ ভালো হবার, আর কেউ সুখী হবার। আর যারা নিজেকে আসলেই সামনে রেখেছে তাদের মনে ধরে নি। আমার সম্ভবত সাধারণ মেয়ে পছন্দ। যে মন খুলে হাসতে দ্বিধাবোধ করে না, নিজেকে প্রদর্শন করতে দ্বিধাবোধ করে না, অন্যদের ভালোবাসতে দ্বিধাবোধ করে না।”
সভ্য একটানা কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

ইনারা মিটিমিটি হেসে বলে, ” তাহলে হলো আপনার প্রেম। আপনি এত বড় সেলিব্রিটি। এত সাধারণ মেয়ে পাবেন কোথা থেকে শুনি।”
সভ্য পিছনের দেয়ালে হেলান দিয়ে এক হাত পকেটে ভরে কফিতে চুমুক দিয়ে বলে, “কাওকে না পেলে তোমাকে বিয়ে করে নিব।”
“ইশশ আমার তো বয়ে গেছে আপনার মতো অসভ্যের সাথে বিয়ে করতে।”
সভ্যের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় কথাটা শুনে। সে কঠিন চোখে তাকায় ইনারার দিকে, “তাই? তুমি জানো হাজারো মেয়ে পাগল আমার সাথে একবার কথা বলার জন্য। ” ” আমি সে হাজারো মেয়ের মতো না। ইনারা সবচেয়ে বেশি ইউনিক। আচ্ছা শুনেন না আমার খিদু পেয়েছে। কিছু না খেয়ে দৌড়ে এসেছি।”
“তো আমি কি করব? আমি কি তোমার বর হই যে এভাবে আবদার করে বলছ? আমি তো অসভ্য, তাই না?” অভিমানী সুরে বলে সভ্য। কিন্তু এই অভিমান ধরতে পারে না ইনারা। সে বাচ্চাদের মতো মুখ করে আবদারের সুরে বলে, “প্লিজ না, অনেক খিদু পেয়েছে।”

সভ্যের রাজি হবার ইচ্ছা না থাকলেও ইনারার এমন মিষ্টি চেহেরাটা দেখে তার রাজি হতে হলো। সে গেল নাস্তা বানাতে। কিন্তু এসে দেখে ইনারা রুমে নেই। সে নাস্তার ট্রে টেবিলে রেখে বারান্দায় যেয়ে ইনারাকে খুঁজতে যেতেই পিছন থেকে কিছু শব্দ শুনে। সে পিছনে তাকিয়ে দেখে ইনারা ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। তাকে দেখেই অবাক হয় সে। তার পরনে একটি নীল রঙের গাউন। সভ্য তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই ইনারা বলে, “আমরা তো ফাংশনে নাচার সময় আমি গাউন পরব। তাই একবার ভাবলাম পরে প্রাক্টিস করে দেখি। আপনাকে দিয়ে ভরসা নেই। যদিও ফাংশনে এই গাউন পরব না। সুন্দর একটি গাউন অর্ডার দিয়েছি। ওই দীপার বাচ্চা এত অপমান করছিলো না আমাকে? তার থেকে সুন্দর করে সেজে যেয়ে দেখাবো আমি।”

ইনারা নিজেকে একবার আয়নায় দেখে তারপর দৌড়ে সামনে যেয়ে দাঁড়ায় সভ্যের। জিজ্ঞেস করে, “গাউনে কি আমাকে আজব দেখাচ্ছে?”
সভ্য ঝুঁকে দাঁড়ায় তার দিকে। তার চুলের ক্লিপ খুলে দেবার সাথে সাথেই তার লালচে-সোনালী চুলগুলো ঝরে ছড়িয়ে যায় তার পিঠে। ইনারা অনেকটা অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। সভ্য তার কপালে আসা চুল ঠিক করতে করতে বলে, “তোমার কাওকে কিছু দেখানোর প্রয়োজন নেই। তুমি যেমন তেমন-ই সুন্দর।”

খুবই সাধারণ কথাটা। কিন্তু এতটুকুই কেমন মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় ইনারার মনে-তে। তার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি এঁকে উঠে। সে বলে, “সত্যি?”
সভ্য ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি এঁকে উঠে। ইনারার কোমরে হাত রেখে সে একটানে তাকে কাছে টেনে নেয়, “একদম সত্যি।”
ইনারার চমকে উঠে, “কী করছেন আপনি?”
“কেন তুমি না নাচের প্রাক্টিস করবে? তাই করছি?”
“এখন করবেন?”
“হুম, এখনই।”

চোখে চোখ মিলে দুইজনের। সভ্য ইনারার এক হাত ধরে তার কাঁধে রাখে এবং তাকে আরও কাছে টেনে এনে চোখে মিলিয়ে প্রেমের তালে তাল মিলিয়ে নাচতে শুরু করে। নেই কোনো গানের সুর তবুও সভ্য খুব উপভোগ করছে এই মুহূর্তটা। ইনারার বুঝে উঠার পূর্বেই সভ্য তাকে পিছনে ঘুরিয়ে নিজের বুকে তার পিঠ ঠেকায়।
হঠাৎ তার চোখ পরে ইনারার কাঁধের তিলের উপর। তিলটা আগে কখনো তার চোখে পড়ে নি। কেননা ইনারা সবসময় হুডি বা টপ পড়ে থাকে। সহজে তা দেখা যায় না। কিন্তু আজ যখন তিলটা তার চোখে পড়ে কেমন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তার। খুবই আকর্ষণবোধ করে সে। নিজেকে সামলে নিতে পারে না সে। আঙুল দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করে সে স্থানে।

শিউরে ওঠে ইনারা। সভ্যের স্পর্শে কেঁপে উঠে সে। হঠাৎ তার নিশ্বাসটা ভারী হয়ে আসে। এমনটা তো আগে হয় নি। এখনো এমনটা হওয়া উচিত না। তাই না?

চলবে…..

অনুভবে
পর্ব-২৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

শিউরে ওঠে ইনারা। সভ্যের স্পর্শে কেঁপে উঠে সে। হঠাৎ তার নিশ্বাসটা ভারী হয়ে আসে। এমনটা তো আগে হয় নি। এখনো এমনটা হওয়া উচিত না। তাই না?

ইনারা চোখ বন্ধ করে জিজ্ঞেস করে, “এই স্টেপ তো প্রাক্টিসে ছিলো না।”
সভ্য তখন তার কাঁধের সে তিলে আকর্ষণ অনুভব করতে ব্যস্ত। ইনারার কথায় ঘোর ভাঙে তার। সে বাঁকা হেসে। হাতটা কাঁধে রেখে ইনারাকে ঘুরায় তার দিকে, “নতুন কিছু ট্রাই করতে মন্দ আছে না’কি?”
সভ্য ইনারার চুল আলতো করে সরিয়ে দিয়ে তার আঙুলে আঙুল ডুবায়। সামনের স্টেপ করার জন্য।
তার স্পর্শে কেঁপে উঠে ইনারা। বাঁধা দেয়। কেন যেন চোখ মিলাতে পারে না সভ্যের সাথে। সে অস্থিরতার সুরে বলল, “আমি একটু ড্রেস চেঞ্জ করে আসি।”
“কেন? প্রাক্টিস করবে না আর? গাউন পরে না প্রাক্টিস করতে?”
“আর প্রয়োজন নেই। আমি আসি।”
ইনারা গাউন তুলে এক দৌড়ে পালায় সেখান থেকে। ওয়াশরুমে যেয়ে দরজা আটকিয়ে তার পিঠ ঠেকায় দরজায়। তার নিশ্বাস কেমন অস্বাভাবিক। হঠাৎ নিশ্বাস আটকে যাবার অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। সে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। সে তো সমসময়ই এমন বিন্দাসভাবে থাকে। তাহলে সভ্য তার কাছে আসলে এমন অনুভূতি হয় কেন তার? প্রতিটি মেয়েরই কি এমন মনে হয়?

হৃদয়ের স্পন্দন থেমে যাবার মতো অবস্থা ছিলো ইনারার। সে গভীর নিশ্বাস ফেলে। কিছু মুহূর্ত পূর্বে সভ্য যে স্থানে স্পর্শ করেছিলো সে স্থানেই সে একটু ছুঁয়ে দেখলো।
.
তার ড্রেস পালটে বের হয় সে। সভ্য বসে ছিলো বিছানায়। তাকে নাস্তা করতে বলে সে। ইনারা একদম চুপচাপ হয়ে নাস্তা করে। কোনো কথা বলে না। এরপরেও বেশি একটা কথা বলে না সে। কেবল সভ্য প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেয়। কিছুক্ষণ পরেই আসে ইরফান এবং সামি। তাদের সাথে সে আগের মতোই কথা বলতে পারে। কিন্তু সভ্যের সাথে নয়। কেমন লজ্জা ভাব তাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।

সকলে একত্রে অফিসে গেল। তারপর ব্যস্ত হয়ে পরলো কাজে। এ সপ্তাহের সম্পূর্ণ শিডিউল ঠিক করা আছে বলে ইনারার তেমন কোন কাজ নেই। সে এমনিতেই তার নোটবুকের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিলো। এমন সময় তার চোখ পড়ে সভ্যের উপর। সামনের সোফাতেই বসে থেকে সে গম্ভীরভাবে কিছু কাজ করছিল। গম্ভীরমুখে তাকে ভীষণ আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিলো। ইনারার ভালো লাগছিল তাকে দেখতে। তাই সে তাকিয়ে রইল। পরক্ষণে সকালের কথা মনে করে সে চোখ নামিয়ে নেয়। লজ্জায় মাখা মাখা হয়ে যায় সে। তার নোটবুকটা মুখের সামনে এনে এক দেয়াল বাঁধে যেন সভ্যকে আর তার চোখে না পরে। কিন্তু তবুও কেন যেন সে নোটবুকটা নিচু করে লুকিয়ে একটিবার দেখে নেয় সভ্যকে।

জোহান গানের প্র্যাক্টিস করছিল। একটু সময় ব্রেক নেবার জন্য সে তার গান বন্ধ করে পাশে ফিরতেই দেখতে পায় ইনারাকে। তার লুকিয়ে সভ্যকে দেখাটাকে।
ভ্রু কুঁচকে যায় তার। এভাবে তো সে কত সহজে সভ্যকে তার পছন্দের জিনিস পেতে দেবে না। তাই সে যেয়ে দাঁড়ায় ইনারার সামনে।

হঠাৎ তার মাঝে এসে দাঁড়ানোর কারণে ইনার একটু চমকে উঠে। সে সামনে তাকিয়ে দেখে জোহানকে। জোহান তার দিকে এক গাল হেসে বলে, “একটু ব্রেক নিব। নিচে যাচ্ছি। তোমারও সম্ভবত বেশি কাজ নেই। তুমি আসবে?”
জোহানের এমন প্রশ্নে কক্ষের সকলের দৃষ্টি যেয়ে আটকায় তাদের দুজনের উপর। সামি সভ্যের পাশে বসেছিল। সে উঠে কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু সভ্যই থামিয়ে দিল তাকে। সে দেখতে চাইল, ইনারা কি করবে এবার!

ইনারা উঠে দাঁড়ায়। মৃদুস্বরে বলে, “আপনি একা গেলেই হয়তো ভালো হবে। নয়তো আপনার গার্লফ্রেন্ড দেখলে আবার একটা ড্রামা শুরু করবে। যা আমি চাই না।”
জোহান অবাক হয়। সে ভেবেছিল ইনারা একটা সুযোগ পেলেই ছুটে আসবে তার কাছে। কিন্তু এখানে তো উল্টো ইনারা তাকে মানা করছে।

সে নিজের বিস্মিত ভাব লুকিয়ে আবারও প্রশ্ন করে, “”আমি তোমার সাথে এ কয়দিন খুবই রুক্ষ ব্যবহার করেছি। তাই চেয়েছিলাম মন ভালো করার জন্য একটু বাহিরে যাই। এখন না হোক, কাজ শেষে তাহলে সন্ধ্যায় বাইরে যাই? তুমি কফি পছন্দ করলে কফি খেতে যেতে পারি।”
“কফি তো আমার পছন্দ কিন্তু আমার মনে হয় না আপনার আমার সাথে যাওয়া উচিত। আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে। সে আমাকে পছন্দ করে না। আপনি তার থেকে লুকিয়ে আমার সাথে কথা বললে বা বাহিরে গেলে খারাপ দেখা যায়। আর চিন্তা করবেন না। আমি মোটেও মনে কষ্ট রাখে নি। আপনার কোন কথায় আমি বেশিক্ষণ ধরে মনে কষ্ট রাখতেই পারি না। আপনি আমার ফেভারিট এবং সবসময়ই ফেভারিট থাকবেন। কারণ যখন আমার খুব মন খারাপ ছিলো, তখন আপনার গান শুনে আমি খুবই শান্তি পেয়েছিলাম। আমার মন খারাপের দিনগুলোতে আমি আজও আপনার গান শুনি। মন ভালো হয়ে যায়। আপনার কথায় কষ্ট মনে ধরে রাখাটা আমার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু দুইজনের মাঝে আমার জন্য সমস্যা হোক, তা আমি চাইনা।”
একগাল হেসে বলে ইনারা।

জোহান হাত মুঠো বন্দী করে নিল। রাগে তার মাথা গরম হয়ে গেছে। এমন সাধারণ একটা মেয়ে তাকে সবার সামনে রিজেক্ট করছে? ভাবতেই মাথায় রক্ত চড়ে যায় তার। তবুও সে শান্ত গলায় বলল, “ঠিকাছে।”
বলেই সে তাকাল সভ্যের দিকে। সভ্য ইনারার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এরপর তাকাল তার দিকে। তার ঠোঁটের কোণে সন্তুষ্টির হাসি। এই হাসি দেখে কেমন অপমানিত বোধ করে জোহান। সে পিছনে ফিরে রওনা দিলো। যাবার সময় তার ব্যাগ নিয়ে যায়।
সামিও যায় তার পিছনে।

জোহান দ্রুত হেঁটেই যাচ্ছে। সামি ডাকছে তাকে পিছনে। সে শুনছে না। রাগে তার মাথা ঠিক নেই। সামি দৌড়ে এসে তাকে ধরতে জোহান তাকে ধাক্কা মারে, “কি সমস্যা তোর? এখানে আমার অপমান করতে এসেছিস? যে ঐ তুচ্ছ একটা মেয়ে আমাকে সবার সামনে রিজেক্ট করে দিলো।”
সামি চিন্তিত সুরে বলল, “ভাই তুই শান্ত হ। তোর জন্য এত রাগ করাটা অনুচিত। তোর মেডিসিন কোথায়?”
“আমার কথা চিন্তা করার নাটক কেন করছিস এখন? যা, তোর বন্ধুর কাছে যেয়ে ওর সাথে আমি অপমান হবার খুশি পালন কর।”
“তুই শান্ত হ।” সামি জোহানের ব্যাগটা নিয়ে তাকে নিয়ে পাশের এক খালি রুমে নিয়ে বসায় এক চেয়ারে। তার ব্যাগ থেকে একটি মেডিসিন বের করে পানির বোতল দিয়ে আবার বলে, “তুই ঔষধটা খা। তোর মাথা ঠান্ডা হবে। তোকে দিয়ে ভরসা নেই। রাগের চোটে আবার নিজের কোন ক্ষতি করে ফেলিস।”
সামি এক প্রকার জোর করে তাকে ঔষধ খাওয়ায়।

সামি বুঝতে পারে ব্যাপারটা জটিল হয়ে যাচ্ছে। সে কিছু না করলে আরও বিগড়ে যাবে ব্যাপারটা। সামি জোহানকে নিয়ে খুবই চিন্তায় পড়ে গেল। মাঝেমধ্যে তার এংজাইটি এট্যাক হয়। এরপর সে নিজেই নিজের ক্ষতি করতে শুরু করে। আগে এমনটা ছিলো না। তাদের ব্যান্ড শুরু হবার এক বছর পর থেকেই কেমন বদলাতে শুরু করে জোহান। চুপচাপ থাকতে শুরু করে। কারও সাথে কথা বলে না, কারও সাথে দেখা করতে চায় না। সভ্যের সাথেও তখন থেকেই তাঁর ঝামেলা বাঁধে। এরপর একদিন হঠাৎ তার সামনেই পাগলামী শুরু করে দেয় জোহান। রাগের চোটে নিজের হাত দিয়ে ঘুষি মারে। মুহূর্তে রক্তাক্ত হয়েছে তার হাত। বাজে এক অবস্থা! এরপর অনেক কিছু খেয়াল করে সামি তাকে একবছর পূর্বে এক কাউন্সিলারকে দেখায়। এ জিনিসটা পাবলিকে আসলে খুবই সমস্যা হবে জোহানের। তাই এই ব্যাপার কেবল সামিই জানে। অন্য কেউ জানে না। এমনকি জোহানের পরিবারও না।

সামি পাশে বসে বলল, “ব্রো ওর কথা বাদ দে। এখানে এত চিন্তা করার কিছু নেই। আর তোর কেন সভ্যের জন্য অকারণে এত চিন্তা করতে হবে?”
“তুই তো ওর পক্ষই নিবি। ও তো আমার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তোর জন্য। তাইতো গতকালকে ওর কারণে আমার উপর হাত তোলার পূর্বে একবারও ভাবলি না তুই।”
“আরে ভাই মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তুই এমন কথাই বলেছিল। অকারণে একটা মেয়ের জীবন কেনো নষ্ট করবি তুই। এছাড়া আমি তোর কথাও ভেবেছি।”
“আমার কথা! কীভাবে?”
“হয়তো ইনারার বোনের প্রতি তোর ক্রাশ আছে। তুই না বলেছিলি কনসার্টে যে মেয়েটা এসেছে সেই ইনারার বোন হতে পারে। তুই যদি ইনারার সাথে কিছু করিস তাহলে ওর বোন কখনো তোর চেহেরাও দেখতে চাইবে না।”

জোহানের কঠিন মুখ নম্র হয়। সে চিন্তিত সুরে বলে, “তাইতো। এই মেয়ের পিছনে ঘুরে তারপর আফসোস করতে হতো আমার। ইশশ কি ভুলটাই না করতে যাচ্ছিলাম। ওর কারণে আরও দীপার সাথে ঝগড়া বাঁধালাম।”
“ভালোই তো হলো। ইনারার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে আইজা নিশ্চয়ই তোকে পছন্দ করবে না। এছাড়া দীপাকে তো তুই কদিন পরে ছেড়ে দিবি তাই না?”
“তুই তো আজ ভালোই কথা বলছিস।” জোহান উঠে দাঁড়ায়। আবার বলে, “যাক আমি তাহলে যাই।”
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“স্যুট কিনতে? ওইদিন সবচেয়ে বেস্ট লাগতে হবে না? মেয়ের নাম কি যেন! আইজা, হ্যাঁ আইজা। যেন আইজা এক দেখায় আমার প্রেমে পড়ে যায়। আমার অপেক্ষা করতে কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছা করছে এখনই যেয়ে ওকে দেখে আসি। কিন্তু কথায় আছে না, সবুরে মেওয়া ফলে। অনুষ্ঠানের দিন ওর সাথে দেখাটা বিশেষ হবে।”
বলেই জোহান চলে যায়।
সামি ক্লান্তিময় নিশ্বাস ফেলে বলে, “আমি একটা জান কতদিন যে সামলাই। গুড জব সামি, গুড জব।”
.
.
এলো অনুষ্ঠানের দিন। চারদিক সাজানো হয়েছে অসম্ভব সুন্দর করে। কোনো রাজপ্রাসাদের মতো দেখাচ্ছে সব। মহলটা জমজমাট। দেশের বড় বড় সেলিব্রিটি এবং ধনী ব্যক্তি উপস্থিত। কিন্তু সকলের মধ্যমণি হচ্ছে পঞ্চসুর। তাদের নিয়ে চর্চা চারদিকে। যেমন তাদের গুণের চর্চা তেমন রুপেরও। তাদের সাথে কথা বলার জন্য সকলে অস্থির হয়ে আছে। তারা প্রবেশ করতেই যেন মহলটায় অন্যরকম এক আভা ছড়িয়ে গেল। তাদের নিয়েই চর্চা হতে থাকলো। বিশেষ করে সভ্য এবং ঐশিকে নিয়ে কথা বাড়লো। দুইজনেই আজ নীল পরা। তাই অনেকে বলাবলি করছে যে তারা হয়তো কাপল। তা প্রদর্শন করার জন্যই এমন মিল রেখে পোশাক পরিধান করেছে তারা। অথচ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ কাকতালীয়।

অন্যদিকে জোহানের নয়ন দুটো আজ ব্যস্ত হয়ে আছে আইজাকে খুঁজতে। তার তো আজ আসার কথা ছিলো। এখনো এলো না কেন সে! অস্থির হয়ে খুঁজেই যাচ্ছে সে তার স্বপ্নচারীণিকে।

হঠাৎ করে তার বাবা তার সামনে এসে দাঁড়ায়। এতে অপ্রস্তুত হয়ে যায় সে। সে জিজ্ঞেস করে, “বাবা তুমি সকলের সাথে কথা না বলে এখানে এলে যে?”
“এ প্রশ্নটা তো আমার তোমাকে করা উচিত।”
জোহান খানিকটা ভীত গলায় বলল, “আমি বুঝতে পারছি না বাবা।”
“তুমি দীপার সাথে না দাঁড়িয়ে এখানে কি করছ? আজ চর্চায় তোমাদের থাকা উচিত ছিল। অথচ সভ্য আজও কিছু না করে সবার আলোচনায় জড়িয়ে গেল। তোমার দ্বারা কোনো কাজ সঠিক ভাবে হয় না। তোমাকে নিয়ে কি করবো আমি?”
মন এবং মেজাজ দুটি খারাপ হয়ে যায় জোহানের। সে মুখ কালো করে নেয়। মৃদুস্বরে বলে, “যাচ্ছি বাবা।”
“দাঁড়াও। কারো সাথে পরিচয় করাব আসো। পরিচালক মুশতাক আবসারের কথা নিশ্চয়ই শুনেছ। উনি আজ এখানে এসেছেন। তার ভাগ্নির সাথে। তার ভাগ্নি সিনেমায় ডেবিও করবে। আমাদের কোম্পানিতে যুক্ত হবে এ মাসেই। ওদের সাথে তোমার দেখা করাতে চাই আসো।”

জোহানের না চাওয়া সত্ত্বেও যেতে হলো সেখানে। মুশতাক সাহেবকে দেখে সালাম দেয়। কিছু কথা বলে। তারপর তিনি এবং বাবা কথা বলতে শুরু করে। মুশতাক সাহেবের সাথে একটি শ্যামবর্ণের মেয়ে ছিলো। জোহান ভালো করেই বুঝতে পারে মেয়েটি তাকে দেখে খুবই উৎসুক। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। হয়তো লাজুক। তার দিকে ধ্যান দেবার ইচ্ছা হলো না জোহানের। তার দৃষ্টি তো খুঁজছে তার স্বপ্নচারিণীকে।

হঠাৎ করে সে শুনে মুশতাক সাহেব বললেন, “জোহান বুঝলে আমার ভাগ্নি কিন্তু অনেক বড় ফ্যান তোমার গ্রুপের। এখন কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। এসব মহলে ও কমফোর্টেবল না তো। একটু ওকে আশেপাশে দেখিয়ে আনবে।”
জোহানের ইচ্ছা ছিলো না। তবুও তার বলতে হলো, “অবশ্যই আংকেল। আমি খুশি হবো।”
মুশতাক সাহেব হাসলেন। বললেন, “আইজা যা ওর সাথে।”

আইজা নামটি শুনে চমকে ওঠে জোহান। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় মেয়েটির দিকে। না, এ মেয়ে তো তার স্বপ্নচারিণী নয়। এটাই কী ইনারার বোন? কিন্তু ইনারা তো সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তাহলে? কিছুই মিলাতে পারছে না জোহান। জোহান কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার বাবা বলে, “কী হলো জোহান? যাও ওর সাথে?”
জোহান মাথা নাড়ায়। সামনে এগোয়।

আইজা সামনে এগিয়ে থেমে যায়। সে পিছনে ফিরে আবারো জিজ্ঞেস করে, “মামা তুমি বলোনি তো ইনারাও আমাদের সাথে আসবে এখানে।”
কপাল কুচকানো মোশতাক সাহেব, “কোথায় ইনারা?”
“ওই’যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে।”

আইজার কথায় জোহান সে দিকে তাকায়। দেখতেই তো চক্ষু কপালে উঠে যায়। যেন বড় এক ধাক্কা খায় সে। তার মনে হলো কোনো এক অপ্সরা যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। গোলাপি এক গাউন পরা সে, গোলাপির মাঝে সোনালী কাজ করা। তার স্বর্ণোজ্জ্বল খোলা কেশগুলো যেন হাওয়ায় দুলছে। সএ কেশগুলোতে সাদা ফুল বাঁধা। তাকে সাজে তাকে একদম তার স্বপ্নচারিণীর মতো লাগছে। এ কী করে সম্ভব! তাহলে ইনারাই কী তার স্বপ্নচারিণী?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here