অনুভবে
পর্ব-৩০,৩১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
৩০
সভ্য বুঝতে পারল না, সে কি ফিরে ইনারাকে জড়িয়ে ধরবে? নিজের দ্বিধাবোধের উপর জয় করে সে ইনারার পিঠে হাত রাখতে গেল। তখনই ইনারা উঠে দাঁড়ায়। আর সভ্য তার হাত সরিয়ে নেই। কিন্তু ইনারা সরে না। সে সভ্যের বুকে থুতনি রেখে উপরে তাকায়, “আপনি আমার প্রশংসা করেন নি কেন আজ? দেখেন আমি আজ কত সুন্দর করে সেজে এসেছি।”
“তুমি কি খেয়েছ ইনারা? আমি এলকাহোল এর গন্ধ পাচ্ছি।”
ইনারা সাথে সাথে দূরে সরে যায় সভ্যের। বাচ্চার মতো মাথা নাড়িয়ে বলে, “ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ ছিঃ! আমি মদ খাব। একদম না। আমি তো… কোক খেয়েছি। হ্যাঁ কোক। বাজে ছিলো কিন্তু আমার ভালো লেগেছে।এমন কোক আমাকে আগে দেয় নি কেন? আমি কোকাকোলা কোম্পানির উপর কেস করব। তারপর তারা আমাকে প্রতিদিন এ কোক দিয়ে যাবে। হি হি। আমার কত বুদ্ধি দেখেছেন?”
ইনারা এদিক থেকে ওদিক হয়ে দুলে দুলে কথাগুলো বলছিল। হঠাৎ করে সে পরে যেতে নিলেই সভ্য তাকে ধরে নেয়। চিন্তিত সুরে জিজ্ঞেস করে, “ঠিক আছো তুমি? আর তোমার কি জ্ঞান বুদ্ধি এতই কম যে কোক আর এলকাহোল এর পার্থক্য বুঝতে পারো না?”
ইনারা শব্দ করে হাসে। সে সভ্যের গলা জড়িয়ে বলে,
“আপনি জানেন আপনি এত্তগুলা খারাপ। বারবার আমাকে বকা দেন। বকা দেন কেন? দেখেন না আমি কত কিউট? আমাকে বকা দিতে বুক কাঁপে না আপনার। আমার মতো মিষ্টি মেয়েকে কেউ বকা দিতে পারে?”
“তাহলে তোমাকে কি করা উচিত?”
“আদর করবেন আমাকে।”
ইনারা সভ্যের হাত নিজের কোমরে রাখে। আবার বলে, “আমি আপনাকে কিসসি দিয়েছি না। এবার আপনি আমাকে কিসসি দেন দেখি।”
সভ্যে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ইনারার দিকে, “কি!”
“কি কি কেন করছেন? আপনি না কোনো ঋণ রাখেন না। তাহলে আমি আপনাকে কিসসি দিলে আপনাকেও দিতে হবে। তাও আমার ঠোঁটে।”
সভ্য যেন আকাশ থেকে পড়ে। ইনারার কথা শুনে সে নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে, “ইনারা তুমি এখন হুঁশে নেই। তাই তুমি কি বলছ বুঝতে পারছ না। আসো, আমি তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসি।”
“না, আপনি আমাকে চুমু না দিলে আমি কোথাও যাব না।”
ইনারা উচ্চস্বরে বলতে শুরু করে, “আমি বাহিরে সবাইকে যেয়ে বলব আপনি কত খারাপ। আমার থেকে চুমু নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। অসভ্য!”
ইনারা আসলে যেতে নিলেই সভ্য তার হাত ধরে নিলো। চোখ দুটো বড় বড় করে বলল, “ইনারা এমন করো না। আমার কথা শুনো…”
“না, ইনু কোনো কথা শুনবে না। আজ ইনু যা বলবে কেবল তাই হবে।”
বড্ড বিপদে পড়ে যায় সভ্য। বুঝতে পারে না কি করবে। এখন যদি ইনারা সকলের সামনে যে আসলেই এসব আজেবাজে কথা বলে তাহলে তো তার সাথে এই ইনারার সম্মানও যাবে। তারা তামাশার পাত্র হবে তা আলাদা কথা। না, ইনারাকে এখানে এই অবস্থায় রাখা যাবে না। সে ইনারাকে মিষ্টি গলায় বলল, “আচ্ছা চলো। প্রথমে বাসায় যাই তারপর তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ তবে পথে কোনো কথা বলতে পারবে না ওকে?”
ইনারা মাথা নাড়ায়। কিছু না বলে সভ্যের পিছিয়ে যেতে থাকে।
হলে সকল মানুষ উপস্থিত আছে বলে সভ্য ইনারাকে ব্যাকডোর দিয়ে নিয়ে যায় গ্যারেজে। সেখান থেকে গাড়িতে উঠে সভ্য বুঝতে পারে না কি করবে। এই অবস্থায় ইনারাকে তার বাসায় নিয়ে গেল সমস্যা হতে পারে। এর উপর সে ইনারার বাসার ঠিকানাটা ও জানে না। একারণে সভ্য তাকে নিজের এপার্টমেন্টে এ নিয়ে যেতে বলে ড্রাইভারকে। গ্যারেজে গাড়ি থামিয়ে ইনারাকে দরজা খুলে দিয়ে বলে, “এবার আসো।”
“না। আমি আসবো না।” মুখ ফুলিয়ে বলে ইনারা।
“কিন্তু কেন?”
ইনারা দুই হাত ধরে বলে, “আমাকে কোলে করে নিয়ে যান।”
সভ্য লজ্জিত ভাব নিয়ে ড্রাইভার এর দিকে তাকায়। সে মিটিমিটি হাসছে। সভ্য লজ্জিত হয়ে বলে, “ইনারা প্লিজ। বিল্ডিংয়ের মানুষ দেখলে কি ভাববে বলো?”
“আপনি আমার থেকে বেশি সবার কথা ভাবেন। যান আপনার সাথে কাট্টি। এই জীবনে আর কখনো আপনার সাথে কথা বলবো না।”
কথাটা মূল্যহীন। এই মুহূর্তে ইনারা তার হুঁশে নেই। কিন্তু এতটুকু কথা সভ্যের বুকে আঘাত দিলো। তার ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল ইনারা আর তার সাথে কথা বলবে না। সে এক দুই না ভেবে গাড়ির দিকে ঝুঁকে ইনারার সে নীল সায়রের মতো চোখদুটোয় চোখ মিলিয়ে বলল,” এই কথাটা বলেছ ঠিকাছে কিন্তু এমন কথা আর কখনো মুখেও আনবে না।”
বলেই সে ইনারাকে কোলে তুলে নেয়। ইনারা মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। মৃদু হাসে। সভ্যের কাঁধে হাত আবদ্ধ করে মুখ রাখে তার বুকের উপর।
সভ্য ড্রাইভারকে আদেশের সুরে বলে, “গাড়ি লক করে চাবি আজকের মতোই নিজের কাছে রাখুন। কাল সকালে সময়ে আসবেন।”
এরপর লিফটে উঠে যায় সভ্য। সারারাস্তা ইনারা শান্ত থাকে। জলের মতো শান্ত। কোনো কথা বলে না। সভ্য তাকে বাসার সামনে এসে নামায়। দরজার লক খোলার জন্য। লক খুলতেই ইনারা ভেতরে ঢুকে তুফান বয়ে আনে। সে পায়ের জুতা পরেই সারাঘরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। সভ্য অবাক হয়ে যায়। খানিকক্ষণ সময় পূর্বে যে মেয়েটা এত শান্ত ছিল তার হঠাৎ কী হলো? কিন্তু এখন ভাববার সময় নেই। ইনারার পিছনে ছুটে বেড়ায় সে। ইনারা যেন ভারী মজা পায় এসবে। সে লাফিয়ে লাফিয়ে সারা ঘর ঘুরে বেরায়। অবশেষে সে উঠে দাঁড়ায় সোফাতে। সভ্য বিরক্ত এবং হয়রান দুটোই হয়। সে বলে, “ইনারা দেখো ভালো মেয়ের মতো এসে রেস্ট নেও। আমি তোমার জন্য লেবুর শরবত বানিয়ে আনছি। একটু নেশা কাটবে তোমার। তারপর ঘুমিয়ে পরো।”
“না, আমি এখন দৌড়াব, লাফাব, খেলবো আপনার সাথে।”
“ইনারা ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আমাকে জোর করতে বাধ্য করো না।”
“আমি শুনবো না আপনার কথা। এখন আমি খেলব।”
ইনারা ভেঙিয়ে যেতে নিলেই সভ্য তার হাত ধরে নেয়। বলে, “তুমি এভাবে মানবে না।”
আর কোলে উঠিয়ে নেয় ইনারাকে। বেডরুমে নিয়ে যেয়ে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কঠিন গলায় আদেশ করে, “আমি যা বলছি তা শুনো, ভুলেও এখান থেকে নড়বে না। আমি আসছি।”
সভ্য উঠে উঠতে নিলেই ইনারা তার শার্টের কলার ধরে তাকে নিজের দিকে টান দেয়।
সভ্য হতভম্ব, “কী করছ?”
“কি কথা ছিলো? আপনি না আমাকে আমার দেওয়া চুমু ফেরত দিবেন? জলদি দিন।আমার প্রথম চুমু আপনার কাছে রাখতে দিব না।”
সভ্যের চোখ যেয়ে আটকায় ইনারার চোখে। তার নীল আভা মাখানো চোখটা এমনিতেই কোনো গভীর মায়ার সমুদ্রের মতো দেখায়। এর উপর আজ সে আরও নীল কাজল মেখে এসেছে তার মায়ার সমুদ্রে। এই সমুদ্র না ডুবে পারে সে? সভ্য সে চোখে ডুবে এমনিতেই নিজেকে হারায়। এর উপর ইনারার কথায় তার চোখ যেয়ে আটকায় তার ঠোঁটের উপর। তার নিখুঁত ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙের লিপ্সটিক মাখা। তার ঠোঁটজোড়া দেখে অন্য একরকম আকর্ষণ কাজ করে সভ্যের। সে এক ঢোক গিলে। তার চোখ আটকে থাকে সেখানেই। নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারায় সে। সে এগোয় ইনারার দিকে। তার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে তার মাঝে হারানোর পূর্বেই তার মনে পড়ে ইনারা এখন নেশায় আছে। সে নিজের হুঁশে থেকে এসব বলছে না। তাই এই কাজটা করা অন্যায় হবে। ইনারা সত্যি এমনটা চায় না, সে কেবল নেশায় এমনটা করছে।
এতটুকু কথা মাথায় আসতে উঠে দাঁড়ায় সভ্য। সে ইনারার দিকে পিঠ করে দাঁড়ায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গভীর নিশ্বাস ফেলে সভ্য। আর বলে, “বিরক্ত করো না তো ইনারা। জেদ বন্ধ করো। তুমি রেস্ট নেও, আমি শরবত বানিয়ে আনছি।”
সে যেতে নিবে তখনই ইনারা আলতো করে তার হাত নিজের দু’হাত দিয়ে ধরে নেয়। সভ্য পিছু ফিরে। দেখে ইনারা ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কাঁদোকাঁদো গলায় বাচ্চামো সুরে বলল, “আমি সবাইকে বিরক্ত করি বলে সবাই আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়। আপনিও আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন তাই না?”
উঠে দাঁড়ায় ইনারা। আবার বলে, “আমি জেদ করে স্কুলে পিকনিক এ গিয়েছি বলে মা আমাকে সবসময়ের জন্য ছেড়ে চলে গেছে। বাবাও আমার দূরে রাখে। এই’যে… এই’যে আজ জেদ করেছি বলে আমাকে আঘাত দিয়েছে।” ইনারা তার হাত দেখিয়ে বলল।
সভ্য অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকাল ইনারার হাতের দিকে। তার বাবা! তার বাবা এমনটা করেছে? ইনারাকে আঘাত দিয়ে এভাবে তাকে ফেলে চলে গেছে?
ইনারা সভ্যের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাকে শক্ত করে ধরে বলে, “আপনি আমাকে ছেড়ে যেয়েন না। আই প্রমিজ, আমি আর জেদ করব না। আজ বাবা…বাবা বলেছে আমি অনেক খারাপ তাই সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমি খুব জেদি। সবাইকে বিরক্ত করি। কিন্তু কি করব বলেন আমার ভালোবাসা পেতে ইচ্ছা করে। খালাজান, ফুফা, আইজা আপু, আনিফা আমাকে অনেক ভালোবাসে। সুরভি আর প্রিয়ও। কিন্তু কেউ তার মতো ভালোবাসা দেয় না। কেউ আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমায় না, খাইয়ে দেয় না, সারারাত জেগে আমার অহেতুক কথা শুনে না। আমার অনেক ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে। মা যাবার পর বাবা আমাকে আর ভালোবাসে না। ঘৃণা করে। অনেক ঘৃণা। আপনি ঠিক বলেছেন সে আমাকে ব্যাথা দিয়েছে, হয়তো আমাকে আর ভালোবাসেও না। আমি তা জানি। কিন্তু মানতে ইচ্ছা করে না। একথাটা ভাবলে না আমার বুকে অনেক ব্যাথা হয়। ভালো লাগে না। আমি আপনাকে এত বিরক্ত করি, আপনিও কি আমাকে ছেড়ে দূরে চলে যাবেন?”
সভ্যের বুকে কেমন ব্যাথা হলো। বুকের ভেতর যেন মুচড়ে উঠলো ইনারার হৃদয়ে এত কষ্ট জমে আছে তা কেউ তার ঠোঁটের হাসি দেখে বুঝতেই পারবে না। তার বুক কেঁপে উঠে। সে কাঁপা কাঁপা হাতে ইনারার পিঠে হাত রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ইনারার কষ্টের কিছুমাত্র অনুভব করার মতোও সাধ্য তার নেই। কিন্তু নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসার সাধ্য তার আছে। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“কোথায় হারাব আমি তুমিবিহীন?
আমার সর্বাঙ্গে তোমার বসবাস।
তুমিতে আমার জীবন
তুমিতে আমার নির্বাসন
তুমি-ই শেষ ঠিকানা
তোমার প্রণয়ে আমি হলাম সর্বহারা
জানো কী, ও আমার প্রণয়ী…”
ইনারা নম্র দৃষ্টিতে তাকায় সভ্যের দিকে। সভ্য মৃদু হাসে। সত্যিই তো এত মায়াভরা মুখ দেখে কে রাগ থাকতে পারে? কীভাবে ছেড়ে যেতে পারে সে এই মেয়েটাকে? যার প্রণয়ের মোহে বেঁধে গেছে সে। এই মোহে সারাজীবনের জন্য হারাতেও সে দ্বিধাবোধ করবে না। এই মোহে নিজেকে শেষ করতেও দ্বিধাবোধ করবে না সে।
সভ্য মৃদুস্বরে বলল, “তোমার প্রথম চুমুটা ফেরত দিচ্ছি। তবে ঠোঁটে নয়…” সভ্য ঝুঁকে ইনারার কপালে আলতো করে চুমু খেল। সভ্যের ঠোঁটের স্পর্শ পাবার সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো ইনারা। সভ্যের শার্ট শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। সভ্য তার কথাটা সম্পূর্ণ করল, “তোমায় সারাজীবন পাশে থাকার আশ্বাস দিলাম, আমার প্রিয় প্রণয়ী।”
চলবে…..
অনুভবে
পর্ব-৩১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
সভ্য তার কথাটা সম্পূর্ণ করল, “তোমায় সারাজীবন পাশে থাকার আশ্বাস দিলাম, আমার প্রিয় প্রণয়ী।”
ইনারা হাসলো, “সত্যি আপনি কোথাও যাবেন না তো?”
“কোথাও যাবো না।”
ইনারার হাসি আরো গাঢ় হলো। সে খুশিতে মেতে উঠে। আহ্লাদিত সুরে জিজ্ঞেস করল,”তাহলে আমি জেদ করব কি?”
সভ্য হাসে, “করো। তুমি না করলে কে করবে শুনি?”
ইনারা সভ্যের হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যায় বারান্দার দোলনার কাছে। বলে, “আমি এখানে বসবো। সারারাত আপনার সাথে গল্প করবো। এত সুন্দর চাঁদমামাটা নেই কেন? আমি চাঁদমামাকে দেখবো। চাঁদমামা কেন নেই? আপনি চাঁদ মামাকে বলুন না আসতে।”
সভ্য বুঝে পেল না কি উত্তর দিবে। সে আমতা-আমতা করে বলল, “প্রতিদিনই তো চন্দ্রিমা উপভোগ করো, আজ নাহয় কৃষ্ণাঙ্গ আকাশের দর্শন করলে।”
“হ্যাঁ তাও হয়।”
ইনারা হঠাৎ করে সভ্যকে দোলনায় বসিয়ে দেওয়ায় সে জিজ্ঞেস করে, “কি করছ? তুমি না বসে আকাশ দেখবে?”
সাথে সাথে ইনারা বসে পরে সভ্যের কোলে। তার বুকে মাথা রেখে বলে, “আমি এখানে বসে দেখব।”
সে সভ্যের দুই হাত নিজের হাতে নেয়।
সভ্য পড়ে যায় লজ্জায়। সে দ্বিধান্বিত হয়ে বলে, “ইনারা কি করছ? তুমি এখানে বসো। আমি একটা চেয়ার এনে বসি?”
“না না না, হবে না। আমি এভাবেই বসবো। আপনার বুকে মাথা রাখলে না আমার খুব ভাল্লাগে। তাই আমি…আমি না আপনার বুকে মাথা রেখেই আকাশ দেখব। এবার ভালো করে ধরে বসুন না। আমি পরে গেলে তো আমার হাড্ডির কাচুম্বার হয়ে যাবে। তারপর আমাকে বিয়ে করবে কে?”
শেষ কথাটা শুনে ফিক করে হেসে দিলো সভ্য। অনেকটা সংকোচ নিয়েই জড়িয়ে ধরলো ইনারাকে। তারপর জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বলো তো তোমার কেমন বর লাগবে?”
“একদম আমার স্বপ্নের রাজকুমারের মতো। যে আমাকে সবসময় সবচেয়ে বেশি ভালোবাসবে, আমার খেয়াল রাখবে, আমার কষ্ট সহ্য করতে পারবে না। আর… আর.. জীবনের প্রতিটি ইচ্ছায়, প্রতিটি লক্ষ্যে আমার শক্তি হয়ে পাশে থাকবে কিন্তু আমার হয়ে আমার ইচ্ছা পূরণ করবে না। আমাকে নিজের মতো করতে দিবে।”
“আর সে দেখতে কেমন হওয়া চাই?”
“দেখতে?” ইনারা চিন্তিত ভাব নিয়ে কিছু মুহূর্ত কাটাল। আর বলল, “একদম আমার স্বপ্নের রাজকুমারের মতো।”
“আর তোমার স্বপ্নের রাজকুমার দেখতে কেমন?”
“আহা, তাকে তো আমি দেখি নি। কীভাবে বলব? কিন্তু আপনি আমাকে একটা কথা বলেন তো।”
“কী বলব?”
“আপনি আর জোহান এত ঝগড়া করেন কেন? সৌমিতা আন্টি আপনাকে আজ এভাবে বলল যেন আপনি তাদের অনেক কাছের মানুষ। আচ্ছা আপনি আর জোহান কী খুব ভালো বন্ধু ছিলেন?” ইনারা সভ্যের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
সভ্যের বুক চিরে বেরিয়ে আসে বিষণ্ণতার দীর্ঘশ্বাস, “অনেক।”
প্রায় নয় বছর পূর্বে দেখা হয়েছিলো জোহান ও সভ্যের। সভ্য থাকতো ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়ায়। তার পরিবার দেশে থাকলেও আট বছর বয়সে তাকে সেখানে পাঠানো হয় পড়াশোনা করার জন্য। স্বভাবতই খুব চুপচাপ সে। সে খুব কম কথা বলতো। তাই কথা বলার মতো কেউ ছিলো না। কেবল বড় ভাইয়ের সাথেই তার টুকটাক কথা হতো। আর রাতে তার মা’য়ের সাথে ফোনে।
সে যেমন পড়াশোনায় ভালো ছিলো, তেমন খেলাধুলায়। কিন্তু তার সবচেয়ে বেশি প্রশংসা হতো মিউজিক নিয়ে। তার কন্ঠে যেন আলাদা জাদু ছিলো, সাথে তার হাতেও। যে ইন্সট্রুমেন্ট লোকেরা বছরের পর বছর শিখেও ভালোভাবে বাজাতে পারতো না তা সভ্য এক সাপ্তাহেই শিখে যেত। স্টাডির পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটিতে মিউজিক ক্লাস করতো সে। হঠাৎ করে একদিন ক্লাসের সময় নতুন শিক্ষার্থীর আগমন হয়। দেখতে এশিয়ানদের মতোই লাগছিলো। খুবই হাসিখুশি ছেলে। এসে নিজের ইন্ট্রোডাকশন দিতে যেয়ে এমন কি যেন বলল যে সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে। কিন্তু সভ্য কথাটায় কান দেয় না। ঠিক কি বলেছিল তাও শুনে না। সে একদিনেই সম্পূর্ণ ক্লাসের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সভ্য ছাড়া। কিন্তু সে ছেলেটার নাম মনে করে, তার নামটা জোহান।
সেদিনের মতো ক্লাস শেষে সবাই বের হয়ে গেলেও সভ্য তার এক্সট্রা প্রাক্টিস করার জন্য থেকে গেল। সে বের হলো কিছুক্ষণ পর। বের হয়ে দেখে জোহান এখনো সেখানে। রাস্তার পাশে একজন হোমলেস মানুষের সাথে বসে হাসছে, গল্প করছে। অনেকটা অবাক হয় সে। এমনটা সে আগে কখনো দেখে নি। কিন্তু সে কিছু বলে না। গাড়ি আসায় সেখান থেকে চলে যায়। পরের সাপ্তাহে আবার তাদের ক্লাস ছিলো। সে আসার পথে একজনের গিটারের শব্দ আর গানের কন্ঠ শুনে। সে গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে দেখে জোহানকে। সে মানুষটার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে গিটার বাজাচ্ছে এবং গান গাচ্ছে। আর কিছু মানুষ তার সামনে টাকা দিয়ে যাচ্ছে। অবাক হয় সভ্য। জোহানের অর্থের অভাব থাকার কথা না, অর্থের কমতি থাকলে সে এত ব্যয়বহুল ক্লাস করতে পারতো না। তাহলে সে এমনটা করছিলো কেন? প্রশ্নটা তো বারবার তার মাথায় ঘুরছিল।
সে পথেই জোহানের ধ্যানও তার দিকে যায়। জোহান তার দিকে একগাল হাসতেই সে গাড়ির ভেতর ঢুকে যায়।
ক্লাস শুরু হয়। জোহান ক্লাসে প্রবেশ করে দেরিতে। কিন্তু টিচারকে রাগ করার মতো সুযোগ দেয় না। একগাল হেসে একটি ফুল দিয়ে তাকে মানিয়ে নেয়। তখন তার হাসিটা ছিলো খুব সুন্দর, কেমন পবিত্র। কেউ সে হাসি দেখে রাগ করে থাকতেই পারতো না। সে এসে বসে সভ্যের পাশের সীটে। তাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যালো, আচ্ছা তোমার নাম সভ্য না? তাহলে তুমিও কী বাঙালি?”
সভ্য একবার তার দিকে তাকায়। কিন্তু কোনো উওর দেয় না। জোহান, আবার জিজ্ঞেস করে,” বাঙালি তুমি কি বাঙালি না? ইংরেজি ভাষায় প্রশ্ন করব তামাকে?”
বিরক্ত হয় সভ্য। কঠিন গলায় বলে, “টিচার ক্লাস করাচ্ছে। বিরক্ত করো না।”
“ও মানে তুমি বাঙালি। বাঙালি বাঙালি ভাই ভাই। হ্যালো ব্রাদার।”
জোহান তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় কিন্তু সভ্য তা দেখেও হাত মিলায় না। মুখ ফিরিয়ে নেয়। এরপর সে শুনে কেউ একজন ইংরেজিতে বলছে, তার সাথে কথা না বলতে। কারণ তার অহংকার খুবই বেশি।
সভ্য কষ্ট পায় কথাটা শুনে। সে কেবল চুপচাপ, অহংকারী নয়। কেন যেন সবাই তাকে অহংকারী ভাবে। একারণেই কেউ তার সাথে কথা বলে না।
ক্লাস শেষ হয়। সবাই চলে যায়। প্রতিবারের মতো সভ্য থেকে যায় এক্সট্রা প্রাক্টিসের জন্য। কিন্তু আজ তার সাথে থেকে যায় জোহানও। সভ্য অবাক হয়। কিন্তু কিছু বলে না। নিজের মতো প্রাক্টিস করতে থাকে। কিন্তু তাও বেশিক্ষণের জন্য নয়। জোহান তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে ছিলো যে সে চেয়েও কাজে ফোকাস করতে পারে নি। সে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কী চাই? গানের চর্চা করতে হলে তা করো। আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?”
“প্রাক্টিসের আরও ভালো একটা জায়গা দেখবে?”
“ভালো জায়গা? কোথায়?”
জোহান কোনো কথা বলে না। তার সাথে সভ্যের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তার হাত ধরে তাকে নিয়ে যায় বাহিরে। সে বৃদ্ধ রাস্তার পাশে থাকা মানুষটার কাছে। তারপর সে উওর দেয়, “এখানে।”
“এখানে!”
“হ্যাঁ। এখানে বাজালে মানুষ আমাদের অর্থ দিবে। আর সে অর্থ আমরা উনাকে দিয়ে দিব।”
“না, আমি পারব না। আমার ফ্যামিলি ব্যাপারটা জানলে সমস্যা হবে। আমি গেলাম।”
বলে সভ্য যেতে নিলেই জোহান বলে, “উনার ব্রেন টিউমার আছে। আমরা একটু হলেও উনাকে সাহায্য করতে পারি কিন্তু। তুমি ক্লাসের বেস্ট সিঙ্গার। তোমার গান দিয়ে যদি কাওকে খুশি করতেই না পারো তাহলে এ গানের লাভ কী?”
সভ্য থেমে যায়। কেন যেন সে চেয়েও এগোতে পারে না। হার মেনে সে জোহানের কথায় মেনে যায়। সেখানে জুটি বেঁধে তারা গান গায় এবং ভালোই অর্থ কামায়। সে অর্থ দিয়ে জোহান তিনটা স্যান্ডউইচ কিনে বাকি অর্থ লোকটাকে দিয়ে দেয়। আর আসে সভ্যের কাছে, “নেও বন্ধু, তোমার প্রথম কামাইয়ের টাকার খাবার।”
“লাগবে না। আর আমি তোমার বন্ধু নই।”
“বন্ধু না মানে, এই’যে আমার কথায় তুমি আমার সাথে গান গাইলে তাই আজ থেকে তুমি জোহানের বন্ধু। বন্ধুও না, ভাই।”
সভ্য জোহানের কথায় পাত্তা দেয় না। তার গাড়ি এসেছে। সে তার ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। জোহানও তার পিছনে আসে। সে গাড়ির জানালা দিয়েও তাকে স্যান্ডউইচটা দিয়ে বলল, “ভাই আজ অনেক মজা হয়েছে। আগামী সাপ্তাহেও এমন করব। অপেক্ষায় থাকব কিন্তু।”
গাড়ি চালু হবার পরও জোরে কথাগুলো বলতে থাকে জোহান। বিস্মিত হয় সভ্য, সাথে বিরক্তও। কিন্তু কেন যেন সেদিন খুব শান্তি লাগছিল তার। সেদিন প্রথম কারও সাহায্য করেছে সে। অন্যরকম এক প্রশান্তি পাচ্ছিল। সে সাধারণত বাহিরের খাবার খেত না।কিন্তু সেদিন সে হাসিমুখে স্যান্ডউইচটা খেল।
অতীতের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে সভ্য। ইনারা এখনো তার বুকে। কথা বলতে বলতে কখন যেন মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়লো। আর সে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। এক দৃষ্টিতে। তার কপালে আরেকটিবার চুমু খেয়ে বলল, “এ জীবনে আমি কখনো বেশি সময়ের জন্য আপন মানুষদের কাছে থাকতে পারি নি, তাই তোমাকে নিজ থেকে দূরে যেতে দিতে পারি না। আচ্ছা আমি কী তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি? তোমার প্রণয়ে দিনদিন গভীরে ডুবে যাচ্ছি প্রণয়ী?”
.
.
ইনারাকে আশেপাশে না পেয়ে জোহান সামিকে আলাদা করে ডেকে জিজ্ঞেস করল, “ইনারাকে দেখেছিস?”
“না-তো। সম্ভবত বাসায় গেছে।”
“আর সভ্য কোথায়?”
সামি আশেপাশে তাকিয়ে বলল, “জানি না তো।”
“আমি নিশ্চিত ও ইনারার সাথে।” রাগান্বিত স্বরে বলল জোহান। সামি বুঝতে পারছিল ব্যাপারটা হিতের বিপরীত হতে পারে। জোহানকে এখনই ইনারার থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে সভ্য আর জোহানের মধ্যে যা ঝামেলা আছে তা কেবল বাড়তে থাকবে। একসময় তাদের বন্ধুত্ব ফিরে পাবার আশাটাও আর থাকবে না। তাই সে জোহানকে শান্ত করে বলল,”কুলডাউন ব্রো। ইনারার বন্ধুরাও নেই। ও সম্ভবত তাদের সাথে চলে গেছে। আর তোর কী? ওর বোনের থেকে তো তোর মতলব, ওর থেকে না।”
“ওর বোন? আইজার কোনো দিক ওর সাথে তুলনা হতে পারে না। কোথায় ইনারা, আর কোথায় আইজা। আর বিন্দুমাত্র সৌন্দর্যের অধিকারীও আইজা না। তুই ঠিক বলেছিলি। ইনারাই সে মেয়ে যাকে আমি কনসার্টে দেখেছিলাম। আমার স্বপ্নচারিণী সে।”
“ড্যাম ইট!” সামি বিড়বিড় করে বলে। জোহান তাহলে বুঝে গেছে। এখন কীভাবে সে দুইদিক সামলাবে? না সে জোহানকে কষ্ট পেতে দেখতে চায়, আর না সভ্যকে। আর ইনারাকেও এসব ঝামেলায় পড়তে দিতে চায় না সে। এখন তারই কিছু একটা করতে হবে। সে বলল, “কিন্তু তুই তো বলেছিলি ইনারার এর মতো অভদ্র, অমার্জিত মেয়ে কখনোই তোর যোগ্য না।”
“ওর সৌন্দর্যের কাছে সব মূল্যহীন। একবার ও আমার হোক, তারপর ওকে নিজের মতো করে তুলবো।”
“দীপার কী?”
“ওকে ছেড়ে দিয়েছি।”
“ভাই মামা অনেক রাগ করবে।”
“করবে না। সে নিজে ওকে ডেট করার পারমিশন দিবে আমাকে।” বাঁকা হাসে জোহান। মনে মনে ভাবে, “ইনারার মা-বাবার কথা শুনলে আব্বুর এক সেকেন্ডও লাগবে না রাজি হতে।”
সামি বলতে নিলো, “আর…” জোহান সেখানে তাকে থামিয়ে দেয়, “অনেক হয়েছে। আমি জানি তুই কি জন্য আর কার জন্য আমাকে ইনারা থেকে দূরে থাকতে বলছিস। কিন্তু এমন কিছুই হবে না। যে করেই হোক আমি ইনারাকে পেয়েই ছাড়বো। আর এখন তো আমাকে তাকে পাবার দুটো কারণ আছে। একতো সে আমার স্বপ্নচারিণী, আর দুই সে সভ্যের ভালোবাসা। আর তাকে সভ্য থেকে ছিনিয়ে নেবার থেকে সুখময় মুহূর্তে আমার কাছে আর হবে না।”
“ভাই তুই আমার কথা শুন…”
সামি জোহানকে ডাকলেও সে কোনো কথা শুনে না। চলে যায়।
.
.
সকালে মিষ্টি সোনালী রশ্মি এসে মুখে লাগে ইনারার। সে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসে। সে আধবোজা চোখে তাকিয়ে দেখে তার সামনের এক সোফায় সভ্য বসে বই পড়ছে এবং কাপে চুমুক দিচ্ছে। সে মাথা চুলকে বলে, “এই ব্যাঙেরছাতা আপনি আমার রুমে কি করেন?”
সভ্য আড়চোখে তাকায় তার দিকে। মেয়েটার জন্য সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে সে। সারারাত ভরে কত আজেবাজে বকছিলো ঘুমের তালে। সে উঠে ইনারাকে বলে, “অবশেষে উঠলে? তোমাকে লেবুর শরবত এনে দিচ্ছি। সাথে নাস্তায় কী খাবে?”
“নাস্তায়? আমার খালাজান কই? আর আপনি খালাজানের জায়গায় নতুন কাজ নিয়েছেন না’কি?”
সভ্য বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে, “এখনো মনে হয় তোমার নেশা কাটে নি।”
বলে সে যেয়ে বিছানা থেকে ইনারাকে কোলে তুলে নিলো। ইনারা তো হতবাক, “কি করছেন? নামান আমাকে, নামান বলছি।”
সে ইনারাকে ওয়াশরুমে নিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়।”
সাথে সাথে কেঁপে উঠে ইনারা। লাফাতে শুরু করে। এর জন্য পা পিছলে পরে যেতে নেয় সে। চিৎকার করে উঠে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সভ্য তাকে ধরে নেয়। ইনারাও তার শার্ট আঁকড়ে ধরে চোখ চেপে ধরে রাখে। ভয়ে তার জান চলে যাচ্ছিল প্রায়। নিজেকে সামলে নিয়ে সভ্যের কাঁধ থেকে মুখ তুলে সে। তার দিকে তাকায়। ঝর্ণার পানির শব্দ পাচ্ছে সে। পানিতে ভিজে গেছে তার সাথে সভ্যও। তার পরা গতকালের নেভি ব্লু রঙের শার্ট। তাকে ভীষণ আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে। সে কিছু মুহূর্তের জন্য এই আকর্ষণে হারিয়ে গেল। পরক্ষণে তার মনে পড়লো। এই মুহূর্তে সে সভ্যর কতটা কাছে। ভাবতেই তার হৃদয়ের স্পন্দন যেন গতিহীন হয়ে যায়।
চলবে…..