অনুভবে
পর্ব-৩৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
“ইশশ ছেলেটার সাথে এত ঝগড়া করলে কেন? এক আঁচার নিয়ে এত ঝগড়া করে মানুষ?” সৌমিতা আন্টি ইনারার পাশে বসে বলে। তারা বসে আছে ব্যাকইয়ার্ড-এ। আন্টি সবে যেয়ে ইনারার মা এবং তার একটি এলবাম নিয়ে এসে বসেছে। ইনারাও বলে, “আন্টি একদম ওই ব্যাঙের সাইড নিবেন না। কী বলল শুনলেন? আমাকে দেখে না’কি মানুষ ভয় পাবে। আমার মতো কিউট মেয়ের নামে এমন বদনাম করে। ভাবতে পারেন?”
সৌমিতা আন্টি হাসেন। ইনারার কথা থেকে তার মুখের ভাব বেশি মজার ছিলো তার কাছে। সে হেসে বলে,, “তুমি আর তোমার কথা! একদম আলাদা কিন্তু আমি সভ্যকে দেখে অবাক হলাম।”
“ওই ব্যাঙের ছাতার আবার কী হলো?”
“এসব বলে না। আমি অবাক হয়েছি কারণ এত বছরে অনেক পাল্টেছে ও। আগে কখনো ওর এমন ব্যবহার দেখি নি। জোহান, সামি এবং ঐশি অনেক দুষ্টুমি করতো। কিন্তু সভ্য এসবের মাঝে কখনো ছিলো না।”
“ধ্যুর এখনও নাই। ওই হনুমানটার মুখ সবসময় পেঁচার মতো ফুলিয়ে রাখে।”
“আহা এসব কি কথা! সভ্যের নামে কী বলছ এসব! ছেলেটার জন্য সারা দেশের মেয়ে পাগল আর তুমি তাকে হনুমান, পেঁচা বানিয়ে দিলে। একদম হ্যান্ডসাম আমার ছেলেটা।”
“এহ হয়েছে। দেশের মেয়েগুলোর টেস্ট খারাপ। এতে আর কী করার!”
কথাটা বলে ইনারা সোজা হয়ে বসল। তার মনে পরে গতকাল রাতের কথা। নেভি ব্লু রঙের স্যুট পরে ছিলো সে। তাকে অসম্ভব আকর্ষণীয় লাগছিলো। তার কথা মনে পড়তেই ইনারা নিজ অজান্তেই লজ্জা পেয়ে গেল।
সৌমিতা আন্টি এলবামটি খুলে বলল, “এই’যে সারু আর আমার ছবি। কত পুরনো ছবি! আজও ছবিগুলো দেখলে পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে। কীভাবে আমরা একত্রে স্কুল জীবন পেরিয়েছি। কলেজ জীবন পাড় করেছি। দিনগুলোতে আবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। আজকালকার জীবন আধুনিক জীবনে তেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। আর সে সম্পর্কগুলোর মাঝের শান্তিও।”
ইনারা এলবাম হাতে নিয়ে নম্র দৃষ্টিতে তাকায় ছবিগুলোর দিকে। তার মা’কে দেখে আবেগী হয়ে যায় সে। তার চোখ ভেজা হলেও ঠোঁটে হাসি আঁকা। সে মুচকি হেসে ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল, “আন্টি সময় বদলাতে পারে। সম্পর্কের মিষ্টি ভাবটা নয়। আমারও এমন দুইটা বন্ধু-বান্ধব আছে যাদের মাঝে আমি শান্তি খুঁজে পাই। সময় বদলে যেতে পারে কিন্তু মানুষের অনুভূতি তো বদলায় না। ইশশ আন্টি আপনারা কী সুন্দর ছিলেন!”
“বিশেষ করে তোমার মা। সকলে পাগল ছিলো ওর জন্য। তুমিও একদম তোমার মা’য়ের মতো হয়েছিস দেখতে। তোমার বাবা সবসময় চাইতো তুমি যেন দেখতে সারুর মতো হও। কিন্তু আবার ভয়ও পেত।”
“ভয় কেন?”
“সারু ওর সৌন্দর্যের জন্য যত ভালোবাসা পেয়েছে তার থেকে বেশি অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। তোমার বাবা কখনো চায় নি তুমি এমন কষ্ট সহ্য করো। তবুও চাইতেন তুমি যেন তোমার মা’য়ের ছায়া হও। তোমার বাবা অনেক ভালোবাসতেন সারুকে। আর তোমাকেও।” সৌমিতা আন্টি শক্ত করে হাত ধরলেন ইনারার। আবার বললেন, “কিন্তু তার থেকেও বেশি তোমাকে। তোমার মাঝে তার জান ছিলো। আমার এখনো মনে আছে, তোমার যখন একবছর পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিলে। অনেক বেশি ব্যাথা পাও নি। কিন্তু দুলাভাই ঘর মাথায় তুলে নিয়েছিলো। তিনটা ডাক্তার বাসায় এনেছিলো তোমাকে দেখার জন্য। সবাই জানাল তুমি ঠিকাছ। কিন্তু তার শান্তি নেই। সারু তো ত্যক্ত হয়ে উঠেছিলো। দুইজনের মাঝে তোমাকে নিয়ে যা খুনসুটি চলতো। তোমার বাবা একবার বাসায় এলে সহজে তোমাকে সারুর কাছে দিতোই না। সারাক্ষণ নিজের বুকের ভেতর ভরে রাখতো।”
কথাগুলো শুনে ইনারার ভালো লাগার কথা কিন্তু তার এসব কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। তার বাবা তাকে এতটা ভালোবাসতো! তাহলে সে ভালোবাসা কেন মা’য়ের সাথেই হারিয়ে গেল? সেদিন কবে আসবে যখন তার বাবা আবারও তাকে সেভাবেই আপন করে নিবে। সেভাবেই ভালোবাসবে।
ভাবনার ঘোর ভাঙে তার যখন তার হাত থেকে এলবামটা টান দিয়ে নেয় সামি। সে সামির দিকে তাকায়। সামি চক্ষু দুটো বড় বড় করে বলে, “মামী এটা অভিনেত্রী সাইয়ারা না? মা বলেছিলো আপনারা দুইজন ভালো বান্ধবী ছিলেন কিন্তু আগে কখনো আপনাদের ছবি একত্রে দেখি নি। এতবছরে আপনি আমাদের দেখান নি, ইনারাকে একদিনে দেখাচ্ছেন? এটা কিন্তু ঠিক না।”
সৌমিতা আন্টি আড়চোখে তাকায় ইনারার দিকে। ইশারায় কিছু একটা বলে। ইনারা সামিকে উওর দেয়, “আরে পার্টনার আন্টির সাথে কথায় কথায় শুনলাম যে অভিনেত্রী সাইয়ারা উনার বান্ধবী ছিলেন। তাই আমিই জিজ্ঞেস করলাম কোনো ছবি আছে না’কি!”
ঐশিও সামির পাশে বসে এলবাম দেখতে শুরু করে। বলে, “আমার ঝাপসা দুই একটা স্মৃতি মনে পড়ে মাঝেমধ্যে। যখন বিদেশে যাই তখন অনেক ছোট ছিলাম তাই না মা?”
“হ্যাঁ।”
ঐশি কিছু একটা মনে করে একবার এলবামের দিকে তাকায়, আবার ইনারার দিকে তাকায়। সে হেসে বলে, “আরে ইনারা তোমাকে তো অনেকটা সাইয়ারা আন্টির মতো দেখায়। এতদিন খেয়াল করিনি। বিশেষ করে এখানে যে আন্টির কিশোরী দিনের ছবি আছে এর সাথে অনেকটা মিলে।”
কথাটা শুনে কাশি চলে আসে ইনারার। সে ঘাবড়ে যায়, “ব…বলেন কী? সে তো কত সুন্দর ছিলো। আর আমি কোথায়?”
জোহান পাশে এসে বসে ইনারার। বলে, “তুমি কোন অংশ দিয়ে কম সুন্দর? কেবল তোমার ড্রেসাপ চেঞ্জ করলেই দেশের কতগুলো অভিনেত্রী, মডেল তোমার কাছে পানিভাত। আমি তোমাকে বলতাম যে তোমার মডেলিং ট্রাই করা উচিত। তুমি চাইলে আমি আব্বুর সাথে কথা বলতে পারি। গতকাল তোমাকে পার্টিতে দেখার পর অনেকেই তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো। আমাদের কোম্পানিতে যোগ করতে পারো।”
“ইনারার অভিনেত্রী হবার ইচ্ছা আছে, মডেল না।” সভ্য ইফরানের সাথে রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে। সে আরও যোগ করে, “এছাড়া ওর এখনো আঠারো বছরই হয় নি। ও প্রথমে নিজের দায়িত্ব নেওয়া শিখুক তারপর নাহয় ও নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিবে।”
“আপনার কি মনে হয় আমি নিজের দায়িত্ব নিতে পারি না?” ইনারা মুখ ফুলিয়ে বলে।
“এমনিতেই একটুখানি তুমি। ইন্দুরনীর মতো পিচ্চি। হাঁটতে গেলে এক মিনিটে দশবার নিচে পরো, সকালে কাজে আসতে হাজার বাহানা তোমার, নিজের একটাও কাজ করতে পারো না। আরও কোনো কিছু বলব?”
সামি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বিড়বিড় করে বলে, “সভ্য দুই। জোহান এখনো শূন্য।”
ইনারা সভ্যের কথা শুনে দ্রুত উঠে বলে, “আন্টি আমি আঁচার রেখে আসছি। খাওয়া শেষ।”
“আরে কিছুই তো খেলে না। আসো আমি খাইয়ে দেই।”
ইনারা সভ্যের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই সভ্য তার মাথার ক্লিপ খুলে দেয়। সাথে সাথে ইনারার সোনালি আভার চুলগুলো পিঠ ছড়িয়ে গেল। সে বিরক্ত হয়ে তাকায় সভ্যের দিকে, “কী সমস্যা আপনার? আমাকে বিরক্ত করতে ভালো লাগে আপনার? আপনি আসলে… আসলে একটা শয়তানের হাড্ডি। কেউ আমার চুলে হাত দেক, আমার পছন্দ না। আপনাকে দেখে নিব আমি।”
“ভালো করে দেখে নেও।”
“উফফ ধ্যুর ভাল্লাগে না আর।”
বিরক্ত হয়ে ইনারা বাচ্চাদের মতো কান্না করার ভাব করে সামির পাশে বসে পরে। সভ্য হাসে তার কান্ড দেখে।
সৌমিতা আন্টি বলে, “তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার আনছি। খাইয়েও দিব।”
ঐশি সভ্যের হাসি দেখে চক্ষু কপালে তুলে নেয়, “ব্রো তুই এভাবে হাসছিস? কত বছর হলো তোকে এভাবে হাসতে দেখি নি। কী জাদু হলো?”
সামি উঠে দৌড়ে সভ্যের পাশে যেয়ে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে, “ওরা কি জানে প্রেমের জাদু চলে গেছে তোর উপর।”
সভ্য তার পেটে কনুই মারে, “চুপ কর।”
ঐশি টেবিলে আরও এলবাম দেখতে পেয়ে একটা তার কোলে নিয়ে বসে। এটা তাদের অস্ট্রেলিয়া থাকার সময়ের এলবাম। এলবামটা দেখে তার ঠোঁটে একগাল হাসি এঁকে উঠে। সে বলে, “এটা কতদিন পর দেখলাম। দেখ দেখ সভ্য, আমি, জোহান ভাই সবাই আছি।”
ঐশি সভ্যের হাত ধরে তাকে জোহানের পাশে বসায়। তারপর এলবাম দেখিয়ে বলে, “দেখ ভাই এটা ছবিটা তখনের যখন প্রথম সভ্যের সাথে আমার দেখা করাতে এনেছিলে।”
“কিন্তু তুই এভাবে মুখ গোমড়া করে আছিস কেন?”
“থাকব না? তুমি সভ্যের সামনে আমার কত মজা উড়িয়েছিলে। সভ্যের সাথে দেখা হবার প্রথমদিনই আমার সম্মানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলে। আমার সব মনে আছে।”
জোহান হাসে, “করব না? ওকে দেখতেই তুই যেভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলি।”
“তো তখন সভ্য দেখতে এত কিউট ছিলো আমার কি দোষ?”
ঐশির মুখে সভ্যকে নিয়ে এ কথা শুনে ইনারা চোখ মুখ কুঁচকে নেয়, “কী ঢঙ! কিউট দেখে তার হা করে তাকিয়ে থাকতে হবে।” ইনারা ভেংচি কেটে গালে হাত রেখে তাদের কথোপকথন শুনতে থাকলো।
সভ্য হেসে বলে, “জোহান আমাকে যেভাবে ধরে বেঁধে বাসায় এনেছিলো। আর আনতেই তোরা দুইজন ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিলি। দুইটাই কী পাগল ছিলি!”
জোহান কথার বিরোধ করে বলে, “একদম আমি ধরে বেঁধে আনি নি। নিজেও আসার জন্য মনে মনে লাফাচ্ছিলি। কিন্তু তোর মনের কথা তো মুখে আসবে না। তোর এটাটিউড কমে যেত না? তোকে রোবট থেকে মানুষ করতে আমার যে খাটুনি গেছে। আর সেদিন ওর মুখ দেখিস নি? মজা না উড়িয়ে উপায় ছিলো। আমার এখনো মনে পড়লে হাসি পায়। তুইও সেদিন ওর মুখ দেখে মিটিমিটি অনেক হেসেছিলি। একদম মিথ্যা বলবি না। নাইলে মিস্টার এলেক্সের সে বোরিং ভাষণ এখনো রেকর্ড করা আছে আমার কাছে। চেয়ারে বেঁধে শুনাব।”
“ভাই ওগুলো ভাষণ না, টর্চার। তোর মনে নেই একদিন ক্লাস বাঙ্ক মেরে জোর করে নিয়ে গিয়েছিলি আমাকে। টানা তিনঘণ্টা কিসব শুনাল। আজও ভাবলে মাথা ঘুরায়।”
“এরপরেরদিন যে উনার সাথে কি করেছিলাম মনে নেই?”
“আমি ভুললেও উনার ভুলার উপায় নেই। আজও মনে হয় সেদিনের দুঃস্বপ্ন আসে উনার।”
দুইজনে কথার তালে হারিয়ে গেল পুরনো সে দিনে। হাসতে হাসতে দুইজনে হাই-ফাইভ দিতে নেয় তখনই থেমে যায়। কিছু অস্বস্তিকর ভাব ছড়িয়ে যায় আসেপাশে। তারা দুইজনে হাত সরিয়ে নেয়। দেখে আশেপাশের সকলে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। জোহান সেখান থেকে উঠে যেতে নিলেই ইনারা দৌড়ে এসে সোফার সামনের টেবিলে এসে বসে। তার হাত ধরে একটানে তাকে বসায়। সভ্যের হাত ধরে দুইজনের হাত মিলিয়ে দিয়ে বলে, “আমিও এবার একটা ভাষণ দেই।”
গলা পরিষ্কার করে নেয় ইনারা, “হারিয়ে যাওয়া সময় ফিরে পাবার উপায় নেই। এই সময়গুলো চলে গেলেও হারিয়ে যাবে। তাই ছটফট করে রাগ অভিমান ভুলে নতুন করে পুরাতন বন্ধুত্ব ফিরিয়ে আনেন দেখি। কী আছে এই জীবনে?”
সভ্য কপাল কুঁচকে নেয়, “এতটুকু তোমার ভাষণ।”
“আবার জিগায়? এত গভীরতা সহকারে কথা ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।”
“আহারে কী প্রেশার গেল এতটুকু ব্রেনের উপর তাই না?”
“একদম।” হাফ ছাড়ে ইনারা। পরক্ষণেই সে বুঝতে পারে সভ্য মজা নিচ্ছে তার সাথে, “আপনি আমার মজা উড়াচ্ছেন?”
“না আমার এত সাহস! আপনার মতো মহাজ্ঞানী মানুষের সাথে আমি মজা করব?”
ইনারা কিছুক্ষণ একটানা বকতে চাইলো সভ্যকে। কিন্তু কি বলবে খুঁজে পেল না। সে বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আই হেইট ইউ এত্তগুলা।”
“জোহান…” ভারী কন্ঠ ভেসে এলো ব্যাকইয়ার্ড এর দরজা থেকে। ইনারা দেখে কন্ঠটা শোনার সাথে সাথে সবাই উঠে দাঁড়াল। সভ্য ছাড়া। সে পিছনে ফিরে দেখে মিঃ হক এসেছে। সে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। সালাম দেয় মিঃ হককে। কিন্তু তিনি সালামের উওর দেন না। উলটো ইনারার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়েই তাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত যাচাই করল। আর মুখ বানিয়ে জোহানকে বলল, “এখনই আমার রুমে আসো।”
“জ্বি বাবা।”
জোহান যাবার পরপরই ঐশি উঠে দাঁড়ায়, “বাবা আসছে, আমি রুমে দৌড় দেই।”
সামিও উঠে দাঁড়ায়, “আমি মামীকে জানিয়ে আসি।”
সে যেতে নিয়ে আবার ফিরে আসে। সভ্য এবং ইনারাকে দুইজনকে একসাথে রেখে যাবার ভালো এক সময়। সে ইরফানকেও ধরে নিয়ে যায়।
ইনারা হতভম্ব। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে হতবাক হয়ে বলে, “সবাই ভূত দেখার মতো দৌড় দিলো কেন? আর আংকেল আমার দিকে এভাবে তাকাল কেন?”
সভ্য ছোট এক নিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। সে জানে মিঃ হক কত ছোট মানসিকতার মানুষ। সে ইনারার ড্রেসাপ দেখে এভাবে তাকিয়েছিলো এবং জোহানকেও সম্ভবত একারণে ডেকেছে। কিন্তু এ কথা বলে তো ইনারাকে কষ্ট দিতে পারে না সে। তাই সে ইনারার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা আঁচার তার বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছে নিলো। আর বলল, “এভাবে খেয়েছ যেন শেষ না করলে অন্যকেউ ছিনিয়ে নিবে। রাক্ষসীর মতো কেউ খায়?”
“আপনার আজ কি হয়েছে বলুন তো। আমার ইজ্জতের বারোটা বাজাচ্ছেন কোন দুঃখে?”
“আমি কি করলাম?”
“এহ কিছু জানে না। আসার পর থেকে আমাকে পাগল করে ছেড়েছেন আর এখন মনে হয় ভাঁজা মাছ উলটে খেতে পারে না।”
“এখানে ভাঁজা মাছ কোথা থেকে এলো? আর তুমি…তুমিই বা কেন জোহানের সাথে এখানে এসেছ?”
“আমার ইচ্ছা আমি যেখানে যাই। আপনার থেকে পারমিশন নিতে হবে না’কি?”
“একদিনে তোমার জোহানের সাথে এত খাতির হয়ে গেল যে তার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছ!”
“আমি যার সাথেই ঘুরে বেড়াই আপনার জ্বলে কেন?”
সভ্য রাগে ভুল কিছু একটা বলে ফেলতে পারে। স্বীকার করে নিতে পারে ইনারার প্রতি তার অনুভূতি। কিন্তু এখন সঠিক সময় নয়। তাই সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল। কিন্তু ইনারা তো এভাবে চুপ করার মানুষ না। সে আবার জিজ্ঞেস করল, “কী হলো এখন মুখে রসগোল্লা ভরে বসে আছেন কেন? বলেন। আর আপনি চুলে আর হাত দিবেন না। এমনিতেই চুল বাঁধতে কত সময় লাগে। বিরক্তি লাগে।”
“একদম তোমার চুলগুলো নিয়ে খারাপ কিছু বলবে না।”
“বাহরে এখন আমার নিজের চুল নিয়েও আপনার থেকে জিজ্ঞেস করতে হবে?”
“একদম করতে হবে?”
“আর তা কোন দুঃখে?”
সভ্য এক’পা এগিয়ে আসে ইনারার দিকে। তার চোখে চোখ রেখে আলতো করে তার সামনের চুলগুলো তে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, “কারণ তোমায় খোলা চুলে দেখলে আমার এক গানের পঙক্তি মনে পড়ে। তোমার খোলা কেশের জাদুতে আমার প্রাণ জুড়ে, তোমার মাঝে হারাই আমি বারে বারে।”
ইনারা চমকে উঠে। এই সামান্য কিছু শব্দ তার ভেতরটা উলট-পালট করে দেয়। ইনারার রাগ অভিমান মুহূর্তে গলে যায়।
সভ্য ইনারার পিছনে দাঁড়িয়ে তার কেশে হাত বুলায়। তার ঘন কেশের বাহার আটকানোর জন্য কাঁধে স্পর্শ করতেই ইনারা কেঁপে উঠে। তার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। সে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়।অনুভব করে সভ্যের তার দিকে ঝুঁকে আসাটা। অনুভব করে তার উষ্ণ নিশ্বাস তার কাঁধে এসে ছুঁয়ে যাওয়াটা। অনুভব করে সভ্যের এত কাছে থাকাটা। অবশেষে সভ্যের শব্দের মুগ্ধতা ছড়ায় তার হৃদয়ে, “আমি দেখে মন ভরেছি। অন্যকারো দেখার প্রয়োজন নেই। সকলের প্রাণ তোমার কেশে জুড়লে তো সমস্যা।”
চলবে…..