অনুভবে
পর্ব–৪০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
“কী ব্যাপার ম্যাডাম? এখনো বাড়ি পৌঁছান নি?” প্রশ্ন করে সভ্য।
“এসে পৌঁছেছি। আপনাকে কল দিতে নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম বাসায় মেহমান এসেছে।” খানিকক্ষণ চিন্তা করে ইনারা। জোহানের কথা বলবে কি? বাসায় কে এসেছে না এসেছে তা সভ্য জেনে কি করবে? তারপরও কিছু একটা ভেবে সে বলল, “জোহান এসেছে। সাঈদ ভাইয়ার সাথে।”
সভ্য গিটার বাজাচ্ছিল। তা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল ফোন দিয়ে। কিন্তু জোহনের নাম শুনতেই শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল। সভ্যের কণ্ঠ মৃদু হয়ে আসলো, “জোহান এসেছে?”
“হুম।”
পরক্ষণেই কিছু এটা হলো। সভ্য স্বাভাবিক গলাতেই বলল, “আসতেই পারে। সৌমিতা আন্টি তোমাদের পরিচিত।”
কোন এক কারণে ইনারার বুকে ভয় ভয় করছিল। সভ্য জোহানের কথা জানতে পেরে যদি বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায়? কিন্তু তার এই কথাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইনু। হেসে বলে, “হ্যাঁ, আমি তো জানতামই না সে আসবে। হঠাৎ করে এসে দেখে অবাক হয়েছি। তারপর আমার পেটেও ইন্দুররা কাবাডি খেলছিলো তাই খেয়ে নিলাম। এতেই কল দিতে আরও দেরি হলো।”
“তোমার পেটে তো সারাক্ষণই ইঁদুররা কাবাডি খেলে। আরে তোমার বন্ধু হয় না? ফ্রী তে পার্মানেন্ট থাকে আর খায়।”
“এত অসভ্য কেন আপনি? জানেন না মেয়েদের এসব কথা বলতে নেই?”
হাসে সভ্য। তারপর বলে, “আচ্ছা শুনো, একটা কথা ছিলো।”
“বলুন।”
“হয়েছে কি…ওই তোমার… ”
হঠাৎ করে সাইদকে দেখতে পায় ফোনে ফিসফিস করে বলে, “একটু অপেক্ষা করুন।”
বলেই সে ফোনটা পিঠের কাছে নিয়ে গেল। লুকিয়ে নিল। যেভাবে লুকাল যেন কেউ তার বড় চুরি ধরে ফেলবে। আচ্ছা ভালোবাসায় কি এই খেলা খেলতে মজা লাগে?
সাইদ এসে সামনে দাঁড়ায় তার। ইনারা জিজ্ঞেস করে, “ভাইয়া কিছু লাগবে?”
“না, কিছু লাগবে না। একটা কথা বলতে এসেছিলাম। আজ জানলাম সভ্য না’কি তোমাকে কাজ থেকে বাদ দিতে চাইছে। এর বিশেষ কারণটা ধরতে পারলাম না। শেষ কয়েকদিন ধরে তুমি অনেক বেশি পরিশ্রম করেছ। যাই হোক তুমি চিন্তা করোনা, আমি নতুন এক চাকরি খুঁজে দেব।”
কথাটা শুনে ইনারা বড়োসড়ো ঝটকা খায়। অন্য কেউ হলে সে মানতে পারতো। কিন্তু সভ্য করবে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। তবুও সে বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তার মুখের রাগ এবং কষ্টের মিশ্রণটা লুকিয়ে রাখল। নিজেকে সংযত রেখে মাথা নাড়াল।
সাইদ বলে, “তুমি আসলেই চিন্তা করও না। এখন তো দেখেছি কত মন দিয়ে কাজ করো তুমি। তা ভালো চাকরি পেতে সমস্যা হবে না। আর তুমি শুনেছ আইজার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে যে প্রিয়কে রেখেছি?”
ইনারা আবারো মাথা নাড়ায়। সে শুনেছে।”
সাইদ এবার হাসে, “আমিও কাকে কি জিজ্ঞেস করছি! প্রিয়’র চাকরি হয়েছে এটা তো সবার আগে তোমাকে এবং সুরভিকেই জানাবে। আচ্ছা তাহলে আমি যাই। কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলো।”
সাঈদ চলে যায়। ইনারা ফোন থেকে অনেক শব্দ শুনতে পায়। সম্ভবত সভ্য ডাকছে। কিন্তু সে ফোন কানের কাছে নেয় না। কেটে দেয়। তার এখন আর এ চাকরির প্রয়োজন নেই। সে সেখানে কেবল সভ্যের জন্যই ছিলো। আর যে মানুষটার জন্য ছিল সেই তাকে এভাবে বিনা কারণে বের করে দিয়েছে? ব্যাপারটা ভাবতেই তার দেহে শিরায় শিরায় রাগ অতিবাহিত হতে শুরু করে। ইনারার রাগ প্রচন্ড বেশি। তার ছটপট করে রাগ উঠে যায়। আর একবার রাগ উঠলে তা সহজে যায় না।
সভ্য নিজেই ইনারাকে চাকরি থেকে বাদ দেবার কথা জানাতে চাচ্ছিল। কিন্তু তা হলোনা। সে হয়তো নিজ থেকে বললে বুঝিয়ে বলতে পারতো। গুছিয়ে বলতো। কারণটা জানাতো।কিন্তু এর পূর্বে সাঈদ সব বলে দিল। এখন নিশ্চয়ই ইনারা তাকে ভুল বুঝবে। সে আবার কলব্যাক করল। ইনারা তা কেটে দেয়। এরপর বারবার কল করতেই থাকে। ইনারা একটিবারও কল রিসিভ করে না।
.
.
রাত প্রায় এগারোটা বাজে। হঠাৎ সুরভির কল আসে। ইনারা তখনও রাগে কটমট করছিল। তার মেজাজ চওড়া ছিলো। এর মধ্যেই সুরভি বলল, “কি’রে শুনলাম তোকে না’কি চাকরি থেকে বের করে দিছে।”
“হ্যাঁ তাইলে এখন নাচ। ব্যান্ড বাজা নিয়া আসব?”
“আরে ব্রো সেন্টি খাস কেন?”
“কে বের করেছে এটা শুনিস নি?”
“কে?”
“ওই অসভ্য। আর তুই বলছিলি তোর মনে হয় সে আমাকে পছন্দ করে। কচু করে। তারে…তারে আমার কি করতে মন চাইতেছে জানিস? পাটায় রেখে ছেঁচতে মন চাইতেছে। তারপর… তারপর ভূত বাড়িতে ভূতের কাছে ফেলে আসতে মন চাইতেছে। এরপর তাকে বটগাছের সাথে উলটা লটকিয়ে ইচ্ছামতো মাইর…..”
এরমধ্যে সুরভি তাকে থামাল। সে ভীত গলায় বলল, “কুল ডাউন জান। এভাবে বলিস না। আমারই ভয় লাগছে। আচ্ছা তার কোনো কারণও তো হতে পারে তাই না? কথা বলে দেখ।”
“কারণ? কি কারণ হতে পারে ওই অসভ্যের?”
“হয়তো কোম্পানি থেকে বলেছে। জোহান এক্টিং ক্যারিয়ার শুরু করবে জানিস তো?”
“হঁ”
“এছাড়াও দলীয় কাজ এখন আর তেমন হবে না।হয়তো এ কারণেই গ্রুপের কাজও কমে যাবে।”
“বলিস কী!”
“হ্যাঁ। আমার তো শুনে গা জ্বলছিলো। ওই মিঃ হকের তো এমনিতেই চুল কয়টা। তার ওই চুলগুলো টেনে ছিঁড়তে মন চাইছিলো। তারপর ভাবলাম আমরা তাইলে আর কি করতে পারব।”
বলে আফসোসের নিঃশ্বাস ফেলল সুরভি। কিন্তু তার কথা শুনে ইনারা হেসে দেয়। সুরভি বলে, “হয়তো কোম্পানি থেকে মানা করেছে। তুই খুলে কথা বল সভ্যের সাথে।”
“আচ্ছা কাল অফিস যেয়েই কথা বলব। এতক্ষণে হয়তো জনাব ঘুমিয়ে গেছেন।”
কিন্তু সে কি জানে মানুষটা তার জন্য চিন্তা করে সারাটারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে।
.
.
পরের দিন সকাল সকাল ইনারা ঘুম থেকেই উঠে যায় কোম্পানিতে। রিহার্সাল রুমে যেয়ে সভ্যকে পায় না। তারা না-কি রেকর্ডিং রুমে। তার কিছু জিনিসপত্র ছিল রিহার্সাল রুমে। সেগুলো নিতে এসেছিলো। সেখানে ঐশি এবং ইরফানকে পায় ইনু। সেখানে ঐশির ব্যবহারটা তার কাছে অনেকটা অকপটে লাগে। মেয়েটা খুবই মিষ্টি। তার সাথে সব সময় বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করে এসেছে। হঠাৎ মেয়েটার কি হলো সে ধরতে পারে না। কিন্তু আপাতত তার ধ্যান সম্পূর্ণ সভ্যের উপর রাখা উচিত। তাই সে ঐশির কথা মাথা থেকে ঝেরে সোজা যায় সভ্যকে খুঁজতে। সে জানতে পায় সভ্য সামির সাথে রেকর্ডিং রুমে আছে। সে রেকর্ডির রুমের সামনে যেয়ে দরজা খুলতেই সে দেখতে শুনতে পায় সামির কন্ঠ,
“তোর মাথা ঠিক আছে তো? তুই ঐশির কথায় ইনারাকে চাকরি থেকে বের করে দিলি? আমাদের কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না? মেয়েটা কত কষ্ট পাবে বুঝতে পারছিস? ওর ফ্যামিলির অবস্থা এমনিতেই ভালো না এর উপর তুই….”
আর শুনতে পারল না সে। বুকের ভিতরে কেমন ভার হয়ে এলো। তার বুকে চিনচিন ব্যথা করছে কেন? এমন কান্না পাচ্ছে কেন? ঘটনা তো এমন বড় নয়। মন উদাসীন হয়ে গেল তার। বুকের ভেতর জমে গেল এক আকাশ অভিমান। তার চোখ বয়ে অভিমান ঝরার পূর্বেই সে সেখান থেকে চলে যায়।
সামি আবারও জিজ্ঞেস করে, “উফফ কিছু তো বল।”
সভ্য ব্যস্ত ছিলো তার কাজে। রুমটা একটু পূর্বেও ভর্তি ছিলো মানুষে। সকলে বের হতেই সামি তাকে ভালোভাবে ধরল। তাকে তদন্ত করেই যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে অবশেষে সব উত্তর দিলো, “ভাই থামবি তুই? কে বলল আমি কেবল ঐশির জন্য ইনারাকে কাজের থেকে বাদ দিয়েছি?”
“তাহলে আর কি কারণ আছে তোর?”
“ওর পড়াশোনা। শ্রী মঙ্গল থেকে আসার সময় উনার সাথে কথা হচ্ছিল। তখন ও বলল ওর ইউনিভার্সিটি শুরু হবে। ভর্তি হতে হবে। তাহলে ও কখন পড়াশোনা করতো, আর কখন এখানে আসতো? এর মধ্যে ওর পড়াশোনা নষ্ট হতো। যা আমি চাই নি। আর রইলো ঐশির কথা, ওকে বুঝানো কোনো বড় ব্যাপার না।”
“তুই ঐশীর ব্যাপারটা এত হালকা ভাবে নিস না। তোর ওর প্রতি দুর্বলতা আছে। ও যদি পরে তোকে ইনারা থেকে দূর হতে বলে তাহলে কাকে বেছে নিবি তুই? কীভাবে বেছে নিবি?”
কপাল কুঁচকে নেয় সভ্য, “ঐশি কেন আমাকে ইনারা থেকে দূর করবে?”
“তুই বুঝিস না? ও তোকে পছন্দ করে।”
“কে আমাকে পছন্দ করে?”
“ঐশি।”
সভ্য মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে টোকা মারে সামির মাথার পিছনে, “ছাগল তোকে কে বলেছে ঐশি আমাকে পছন্দ করে?”
“সবাই তো বলে।”
“কতজনে তো কতকিছুই বলে। তোর সাথেও তো কত নায়িকার সম্পর্ক তৈরি করে নেয়। তারা তোকে দু’পয়সার পাত্তা দেয়?”
“দেখ সভ্য এভাবে আমার সম্মান নষ্ট করবি না।”
“নষ্ট করার জন্য থাকতেও হবে। এছাড়া ঐশি অন্যকাওকে লাইক করে। একটা ছেলে আর মেয়ে বন্ধু মানে এই নয় তাদের মধ্যে কিছু থাকতে হবে। এটা ফালতু কথা।”
“বুঝলাম।” বলে সামি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর শেষ কথা মনে পড়ে তার। হঠাৎ চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে, “ওয়েট ঐশি কাওকে লাইক করে? কাকে? আমি জানি না কেন?”
“তোদের জানায় নি তাই। আমি ছাড়া কেউ জানে না।”
“মীরজাফরনী কোথাকার। পিচ্চিকাল থেকে সারাক্ষণ আমার সাথে ঘুরে বেরিয়ে আমাকেই বলে নাই। উল্টো আমি ভাবলাম আমিই সবার সিক্রেট জানি। তোর, জোহানের, সবার। ঐশির বাচ্চাকে আমি…আচ্ছা ও কাকে পছন্দ করে?”
“ইরফানকে। ইরফানও না’কি সেদিন পার্টিতে ইনারাকে দেখে ওর ছবি এঁকেছিল। তা দেখে নেয় ঐশি। ইনসিকিউরড ফিল করছিল।”
“কী ইরফানকে! ভাই মামা জীবনেও ওর জন্য মানবে না। আর সবাই ইনারাকেই পছন্দ করতেছে কেন ভাই? প্রথমে জোহান এখন ইরফান।”
“অভিনেতা রোহানকে চিনিস?”
“অফকোর্স। দেশে পপুলারিটির দিক থেকে তোর এবং জোহানের পর আসে। তৃতীয় নাম্বারে।”
“সে পার্টিতে ও আমাকে ইনারার কথা জিজ্ঞেস করছিলো। এছাড়া অনেকেই সেদিন ওকে দেখে ওর তথ্য চাচ্ছে।”
“ভাই তোর প্রতিযোগিতা দেখি দিন দিন বাড়ছে। ভয় লাগছে না তোর?”
“না, আমার ভালোবাসার যদি ওকে পাবার ক্ষমতা থাকে তাহলে এ পৃথিবীর কেউ ওকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। কয়েকটা পরিচালকও এসেছিলো আমার কাছে। ওর সাথে ডান্সের পর। মানা করে দিয়েছি।”
“কেন? ওর অভিনেত্রী হবার ইচ্ছা আছে।”
“ইচ্ছা থাকলেই কেবল হয় না। দক্ষতা, ক্ষমতা, ধৈর্য, বুদ্ধি, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ঘৃণা সহ্য করার শক্তি সব প্রয়োজন। যা এখনো ওর মাঝে নেই। আমি একটি এক্টিং স্কুল দেখছি। ভাবছি ওকে সেখানে ভর্তি হতে বলব। তারপর আরেকটু বুঝ আসার পর ও নিজে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।” সভ্য তাকায় সামির দিকে। তার শান্ত দৃষ্টি এখন তীক্ষ্ণ। সে কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে, “এবার বল জোহানের কি হয়েছে? তুই ওর কোন গোপন তথ্য জানিস?”
“আ…আমি? ওহ ওই ইনারাকে যে পছন্দ করে।”
“সেটা তো আমিও জানি। সম্ভবত ঐশিও। কেবল তুই কোনটা জানিস?”
সামি ঢোক গিলে। সে বলে, “আমার একটু কাজ মনে পড়ে গেছে।”
সামি এগিয়ে যেতে নিলেই সভ্য বলে, “এক’ পা এগোলে ভালো হবে না। আর আমি হাওয়ায় হুমকি দেই না।”
সামি ভয়ে ভয়ে পিছু ফিরে। সভ্যের মুখের কঠিন ভাব দেখ হার মেনে যেয়ে বসে চেয়ারে। সব বলে দেয়, “জোহানের গত তিন চার বছর ধরে মানসিক সমস্যা হচ্ছে। ডিপ্রেশনে একবার সুসাইড করার চেষ্টা করেছিল। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছি। সে ঔষধ দিচ্ছে, আগের থেকে ভালো কিন্তু কিছুতেই সুস্থ হয়ে উঠছে না।”
কথাটা শুনতেই বড়সড় ঝটকা খায় সভ্য। তার দৃষ্টি কঠোর থেকে মুহূর্তেই নম্র হয়ে আসে। চিন্তিতভাব ছড়িয়ে যায় তার মুখে। সে কিছু বলে না। মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেমন অশান্তি লাগছে তার। হাত পা কাঁপছে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না তার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর এ অবস্থা, অথচ সে কিছুই জানে না!
রাত গভীর। আজ কিছুতেই শান্তি লাগছে না সভ্যের। অশান্তিতে যেন দম আটকে আসছে। গানও তার আত্নাকে শান্ত করতে পারছে না। এই মুহূর্তে তার কেবল একজনের কথাই মাথায় এলো। সে মেসেজ দিলো ইনারাকে।
সভ্যঃ ঘুমিয়ে পড়েছ?
ইনারা আড্ডা দিচ্ছিল সুরভির সাথে। তার মন খারাপের দিনগুলোতে তার সুরভি ও প্রিয়কে লাগে। তারাই তার স্বস্তির স্থান। প্রিয় কিছুসময় আগেই বের হলো। সে এবং সুরভী গল্প করছে। সভ্যের মেসেজ পেয়ে সে ফোনটা পাশে রাখতে নিয়ে কি বুঝে যেন রিপ্লাই দিলো। তার উওর দেবার কথা ছিলো না। সে তো অভিমান করেছে। কিন্তু না করে থাকতে পারছে না কেন সে?
ইনারাঃ উঁহু।
সভ্যঃ এতরাতে কি করো?
ইনারাঃ সুরভির সাথে গল্প করছি।
সভ্যঃ ওর বাসায় তুমি?
ইনারাঃ হ্যাঁ।
এরপর আর উওর এলো না সভ্যের। ইনারা আড়চোখে বারবার দেখতে থাকলো ফোনের দিকে। কিন্তু তখন কোনো মেসেজ আর আসে না। মেসেজ আসে আধাঘন্টা পর।
সভ্যঃ আমি সুরভির বাসার সামনে। একটু বাহিরে আসো।
ইনারা মেসেজ পেতেই ফোনটা দ্রুত হাতে নেয়। তার মনে তখন উড়ু উড়ু ভাব। কিন্তু ভাবটা মুহূর্তে চমকে পরিবর্তন হয়। সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে। তারপর বিছানা থেকে নেমে সুরভিকে জিজ্ঞেস করে, “ঘরে কেউ জেগে আছে?”
“না, কেন? তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
“তুই খেয়াল রাখিস। আমি এই যাচ্ছি, আর আসছি।”
বলেই দৌড়ে যায় ইনারা। রাগ, অভিমান সব পিছনে ফেলে। এই প্রথম। এমনটা আগে কখনো হয় নি। কেউ একবার তাকে কষ্ট দিলে তাকে সহজে ক্ষমা করে না সে। জোহানের উদাহরণও দেওয়া যায়। কি করে এত বছরের পছন্দ মুহূর্তে ভুলে গেল সে। তাকে অপমান করেছে বলে। কিন্তু সভ্যের প্রতি তার রাগ, মান, অভিমান কিছুই ধরে রাখতে পারে না।
ইনারা দরজার বাহিরে যেয়ে দেখে আসলেই সভ্য দাঁড়ানো। তার পিছনে একটি সাদা রঙের গাড়ি। তার হাতে ফোন। কিছু একটা করছে সে। সাথে সাথে তার ফোনে মেসেজ এলো।
সভ্যঃ ইনারা একটু আসো না প্লিজ। কেবল একবার দেখব তোমায়। কেবল একবার।
মেসেজটা দেখে নিজ অজান্তেই হাসি এঁকে উঠে ইনারার ঠোঁটের কোণে। সে সভ্যের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। নিজের ঠোঁটের মুচকি হাসি লুকানোর চেষ্টা করে বলে,”কী ব্যাপার আপনি এখানে কেন?”
সভ্য কিছু বলে না। ল্যাম্পপোস্টের বাতির আলোয় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইনারার দিকে। হঠাৎ করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে।
চমকে উঠে ইনারা। আকস্মিকতায় তার হাত থেকে ফোন ছুটে পরে যায় রাস্তায়। এই নির্জন রাস্তায় সে স্পষ্ট শুনতে পায় সভ্যের নিশ্বাসের শব্দ, অনুভব করতে পারে তার নিশ্বাসের উষ্ণতা।
সভ্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার প্রণয়ীকে। মুখটা লুকানোর চেষ্টা করে তার কাঁধে। তার কেন যেন খুব কাঁদতে মন চাইছে। কিন্তু তার চোখ দিয়ে জল আসে না সহজেই। তবুও তার হাত পা কাঁপছে। তার গলার স্বর কাঁপা-কাঁপা। সে এখন পর্যন্ত ভাবতে পারছে না জোহান সুসাইড করার চেষ্টা করেছে। তার জীবনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল অথচ সে পাশে ছিলো না। অথচ একসময় সে এবং জোহান ওয়াদা করেছে যে সবসময় একে অপরের খেয়াল রাখবে। একে অপরের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না। অথচ যখন জোহান তার জীবন দেবার চেষ্টা করেছিল তখন সে তার সাথেই ছিলো না? ভাবতেই কেমন বুক কেঁপে উঠে তার। অশান্তি লাগে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ইনারাকে জড়িয়ে ধরার পর তার অশান্তি ভাবটা কমেছে।
ইনারার কন্ঠ শুন পায় সে, “কী…কী করছেন?”
“আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকি প্লিজ।” কাঁপানো গলায় বলে সভ্য।
ইনারার পক্ষ থেকে আর কোনো শব্দ আসে না। কিন্তু সভ্য আভাস পায় ইনারা তার একটি হাত সরিয়ে নেয়। সে হাতটা নেয় নিজের হাতে। আঙুলে আঙুল ডুবিয়ে দেয়। আর মৃদুস্বরে বলে, “আপনি শান্ত হন। আমি আছি আপনার সাথে।”
চলবে…..