অনুভবে ১ম পর্ব

0
7996

একপা দুইপা করে ব্রিজের প্রান্তের দিকে যাচ্ছে মিহি। এখান থেকে লাফ দেবে তবে একা না, সঙ্গে লাফ দেবে ওর গর্ভের সন্তানও। ধীরে ধীরে শেষ প্রান্তে এসে গেছে মিহি। গর্ভের বাচ্চাটার সাথে শেষ বারের মত কথা বলে নিচ্ছে।
নিজের পেটে হাত দিয়ে মিহি বলে,
,
– আমাকে মাফ করে দিস সোনা। তোকে কোন পরিচয়ে এই দুনিয়ায় আনবো?
আজকে আমার করা ভুলের শাস্তি তোর আর আমার জীবন দিয়ে শোধ করতে হবে আমি জানতাম না রে। তোর এই খারাপ মা টাকে মাফ করে দিস।
,
?
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছে হিমেল। সাথে ১০ বছর বয়সী ভাগনে টা আছে। বোনের বাড়ি থেকে ফেরার সময় ভাগনে কে হিমেলের বড় আপু আরোহী ওর গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে আর বলেছে,
,
– তোর ভাগনে একদম তোর জেরক্স কপি হয়েছে। তুই ছোটো বেলায় যেমন মাকে জ্বালিয়েছিস এইটা এখন আমাকেও জ্বালায়। কয়দিন নিয়ে রাখ তোর কাছে।
,
হিমেল ও দেখতে চায় ছোটো বেলায় ও কেমন দুষ্টু ছিলো তাই ভাগনেকে সাথে নিয়ে চলে আসে।
,
গান চলছে আর হিমেল ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে। রোহান ঘুমিয়ে পড়েছে পাশের ছিটে৷ হঠাৎ বাইরে চোখ যেতেই হিমেল দেখলো একটা মেয়ে কেমন অস্বাভাবিক ভাবে ব্রিজের প্রান্তের দিকে এগোচ্ছে। তাড়াতাড়ি গাড়ির গ্লাস নিচে নামিয়ে,
,
– হেই ইউ!
,
মিহি একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে এবার ব্রিজের রেলিংয়ে হাত দিয়ে লাফ দিতে যাবে তৎক্ষনাৎ কেও তার হাত ধরে হেচকা টান দিতেই তার বুকে গিয়ে পড়লো মিহি। নিজেকে লোকটার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার ভাবালেশহীন ভাবে লাফ দেওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু আগের মত আবার মানুষটি তার হাত টেনে ধরে।
,
এবার লোকটার চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে সেই লোকটা যে একটু আগে ওকে ডাক দিয়েছিলো।
,
– আপনি কি পাগল হয়েগেছেন? এই ব্রিজ থেকে লাফ দিলে তো আপনি বাচবেন না!
,
মিহি একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
,
– মরার জন্য লাফ দিচ্ছি, বাচার চিন্তা করার প্রশ্নই আসে না।
,
– কিন্তু কেন আপনি কেন মরতে চান?
,
– কারণ আমার পেটের সন্তান।
,
– ও এবার বুঝতে পেরেছি। আসলে কি জানেন আপনারা মেয়েরা খুবই বোকা। খুব সহজে প্রেমের ফাদে পা ফেলে দেন আর তার ফলাফল এই যে আপনার পেটে।
,
মিহির কথা বলার ইচ্ছাটুকু নেই এখন একটাই চিন্তা যত দ্রুত সম্ভব মরতে হবে। হিমেল আবার বলতে শুরু করলো,
,
– কে সেই কাপুরুষ? অমানুষের বাচ্চা, একটা মেয়েকে প্রেগন্যান্ট করে কোথায় চলে গেছে। ইচ্ছা তো করছে বদমাইসটাকে ধরে এনে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলি।
,
কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মিহি হিমেলের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় দিলো।
,
– এই যে মিস্টার অনেক বলেছেন আপনি হ্যা! আমার মুহিতের নাম আর একটা বাজে কথা বললে আপনার জ্বিব টেনে ছিড়ে ফেলবো।
,
– যা বাবা! যার জন্য করলাম চুরি সে বলে চোর। যে আপনার সাথে এমন কাজটা করলো তার জন্য আপনার মনে তো মায়ার সাগর রয়েছে এখনো। বাহ বাহ!
,
মিহি কাদতে কাদতে নিচে বসে পড়লো, দুইহাত দিয়ে নিজের দুইকান চেপে ধরে বলে,
,
– দয়া করে আপনি চুপ করুন। অচেনা একটা মানুষ আপনি কিছু না জেনেই কেন ওকে এতো কথা বলছেন? ও যে…
,
– আপনার কথা আমার কাছে খুবই রহস্যজনক মনে হচ্ছে। যাকে ভালোবাসেন তার সন্তান আপনার গর্ভে তাইতো! এখন তাহলে মরতে চাচ্ছেন কেন? নিশ্চয় সে আপনার এই সন্তান কে অস্বীকার করছে তাইনা? তাহলে তার উপর আপনার কোনো রাগ নেই কেন? একটু বিস্তারিত বলবেন প্লিজ।
,
– আপনার শোনার কোনো দরকার নেই। আপনি এখান থেকে চলে যান। আমাকে আমার মত মরতে দিন।
,
– একজন মানুষ হিসেবে আমার কর্তব্য এটা। আমি কাওকে এভাবে আত্মহত্যা করতে দিতে পারিনা। আপনাকে বলতেই হবে। নাহলে আমি এখনি পুলিশ ডাকবো।
,
– না না, দয়া করে পুলিশ ডাকবেন না। পুলিশ আমাকে জেরা করবে তখন আমার এই সন্তান পৃথিবীতে আসবে কিন্তু অন্য পরিচয়ে, তাই বলছি দয়া করে আমাকে মরতে দিন।
,
-আপনি আজব মেয়েতো! এখন সব বিষয়ে বলুন আমি শুনবোই।
,
– তাহলে শুনুন,
“আমি আর মুহিত একে অপরকে ভালোবাসতাম। আমি যখন অনার্স ভর্তি হয় তখন আমরা গোপনে বিয়ে করি। ও অবশ্য গোপনে করতে চায়নি। সবাইকে জানাতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমার সাথে ওর বিয়ে ওর বাবা মা কোনোদিন মেনে নিতো না বরং ওকে হয়তো ত্যাজ্যপুত্র করতো তাই আমিই সব লুকাতে বলেছিলাম। আমার বাড়িতেও কাওকে জানাইনি আমি।
আমি সবসময় ভাবতাম ও নিজের একটা পজিশন দাড় করাবে তারপর সবাইকে বলবো আমাদের কথা।
,
ও বিজনেসের কাজে ইউএস যাওয়ার আগে আমরা নিজ নিজ বাড়িয়ে বাহানা দিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যায়। আমি বাড়িতে বলেছিলাম ট্যুরর যাচ্ছি। এভাবে ওখানে তিন দিন একসাথে ছিলাম আমরা।
,
ওখান থেকে ফিরে ও বিজনেসের জন্য ইউএস চলে যায়। ”
,
– এখানে তো আত্মহত্যার কোনো কারণই খুজে পাচ্ছিনা।
,
-” ও যাওয়ার পর কিছুদিন পর আমি জানতে পারি যে এর সন্তানের মা হতে চলেছি। সবাইকে লুকিয়ে একটা মস্ত ভুল করেছি বুঝতে পারি। ওকে সবটা জানানোর জন্য কল দিই কিন্তু ওর নাম্বারে কল যায়না।
কিছুক্ষণ পর মা আমার ঘরে এসে জানায়। মেহরাব চৌধুরীর ছোটো ছেলে মানে মুহিত আমেরিকায় এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। ব্যাস আমার আর কিছু করার থাকে না। আমি সরাসরি ওদের বাড়িতে চলে যায় আমাদের সত্যটা মুহিতের বাবাকে জানাতে আর তাদের উত্তরাধিকারের কথাও বলতে। কিন্তু আমি এসব বলার পর ওরা আমাকে উলটো বদনাম দিয়ে দেয়। আমার মা বাবাও আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পাশের গ্রামের এক বান্ধবীর বাড়িতে থাকি কিছুদিন গতকাল মুহিতের লাশ দেশে ফেরে ১৫ দিন পর। আমি বোরখা পরে দেখে আসি শেষ বারের মত। আর আজকেই আমি ওর কাছে চলে যেতে চাই। আর এই দুনিয়ায় কলঙ্কিনী হয়ে থাকতে চাইনা। কেও বিশ্বাস করবেনা আমার আর মুহিতের বিয়ের কথা। কারণ কোর্টের কাগজপত্র সব ওর কাছে। কোথায় রেখেছে কেও জানে। তাই বলছি দয়া করে আমাকে মরতে দিন।”
,
,
,
চলবে
,

অনুভবে ১ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here