#অনুভবে
১৩তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
আরোহীর চড় হিমেলের গালে পড়লেও ব্যাথা যেন মিহির লেগেছে। একজন মানুষ আর কত স্যাক্রিফাইস করবে মিহির জন্য!
,
আরোহীর এখন হিমেলের সাথে কথা বলার রুচি পর্যন্ত নেই। বিয়ের আগে এতো বড় অন্যায় সে কিভাবে করলো এটা ভাবলেই মাথার শিরা যেন ছিড়ে যাচ্ছে আরোহীর। মা-বাবা আর নিজের দেওয়া শিক্ষ ভাইয়ের কোনো কাজেই আসলোনা!
,
আরোহী হনহন করে হাটতে হাটতে নিচে চলে গেলো।
,
হিমেল মিহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
,
– তোমার চোখে পানি কেন?
,
মিহি কি জবাব দেবে নিজেও জানেনা। কি বলবে! ওই পানি আপনার জন্য!
,
– কি হলো মিহি কথা বলছোনা কেন?
,
মিহি হিমেলকে জপটে ধরে চিৎকার করে কেদে ওঠে।
,
– কেন আপনি বারবার আমার জন্য নিজেকে কষ্ট দেন বলতে পারেন? কি দিয়েছি আমি আপনাকে?
,
– তুমি যে তোমাকেই দিয়েছো তার জন্যই তো সব কষ্টগুলো গুলের মত লাগে।
,
– আমি হেরেযাচ্ছি হিমেল। আমি হেরে যাচ্ছি।
,
হিমেল মিহির পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
,
– সব হারের শেষে একটা জয় থাকে মিহি। তুমি অনেক কিছুই হারিয়েছো কিন্তু বিশ্বাস করো শেষটাতে তুমি জয়ী হবেই।
,
– আমি আপনাকে কিভাবে বোঝাই যে আমি আপনার অনুভূতির কাছে হেরে যাচ্ছি দিনদিন ক্ষণেক্ষণে।
,
মিহির কথা শুনে হিমেল একটু মুচকি হেসে বলে,
,
– আমি পেরেছি মিহি, আমি পেরেছি। মুহিতের জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা থেকে একফোটা ভালোবাসা আমিও পেয়েছি।
,
– উ হুম। ভালোবাসা ভাগ হয় না। অতীত যেমন কোনোদিন মুছে যায়না তেমনি অতীতের ভালোবাসাও মুছে যায়না কিন্তু একটু জায়গা দেওয়াই যায়।
,
– সত্যি বলছো মিহি? তোমার মনে আমার জায়গা দিয়েছো?
,
হঠাৎ মিহির ঘোর কাটে। তাড়াতাড়ি হিমেলের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।
,
– আসলে তখন আমার কি হয়েছিলো নিজেও জানিনা। হুট করে আপনাকে জড়িয়ে ধরার জন্য সরি।
,
হিমেল নিজের দৃষ্টি শূন্যে মিলিয়ে দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে। তার মানে মিহির বলা সব কথাগুলোই আবেগ ছিলো আর কিছুই না!
,
একটা দীর্ঘনিশ্বাস বের হয়ে আসে। মিহিও নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
,
ছাদের রেলিংএ হেলান দিয়ে বসে পড়ি হিমেল।
,
” সময়টা থেকে গেলে কি খব ক্ষতি হয়ে যেতো? এমন কেন হলো না, মিহি আমার বুকে মাথা রাখলো আর সময়টা আজীবনের জন্য থেমে যাবে! তবে আমার কতোটুকু বুঝতে পেরেছি যে মিহি আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। আর কিছুদিন অপেক্ষা, তারপর মিহি নিজেই ধরা দেবে আমার ভালোবাসার শিকলে।
,
,
,
৫ বছর পর,,
,
দীর্ঘ ৫ বছর জেলে থাকার পর আজকে মুক্তি পেলো মুহিত। এটা অবশ্য পুলিশের জেল না, এটা হলো মস্তিষ্কের জেল। অর্থাৎ যেটা হওয়ার না সেটাই হয়েছে। কোমা থেকে বের হয়েছে মুহিত। আয়নায় নিজের মুখখানা দেখে অবাক চরম পর্যায়ে চলে গেছে মুহিত কারণ সেখানে সে তার নিজের মুখ দেখতে পাচ্ছেনা। বরং তার মুখের জায়গায় অন্য কারো মুখ দেখতে পাচ্ছে।
,
– রাকিব বাবা! তুই শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছিস! আমি সবাইকে বলেছিলাম যে মায়ের কান্না আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন। আজকে আমার কান্নার ফল পেলাম।
,
৬০ বছরের একজন মহিলা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কথাটা বলল মুহিতের পিছন থেকে। মহিলাটা মুহিতের চেনা না। আর তার মুখের নামটাও অচেনা।
,
– দেখুন আমি রাকিব নই। আমার অন্য কেও।
,
তখন মহিলাটি কাদতে কাদতে ডাক্তারের কাছে চলে যায়।
,
কিছুক্ষণ পর কেবিনে একজন ডাক্তার আসে।
,
– রাকিব! কি হয়েছে বাবা তোমার? নিজের মাকে চিনতে পারছোনা কেন?
,
– কে রাকিব! আমার কোনো নই।
,
ডাক্তারটি তখন বৃদ্ধ মহিলাকে বাইরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একা কেবিনে প্রবেশ করে। ভিতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে মুহিতের সামনে এসে দাড়ায়।
,
– আমি জানি তুমি আমার ছেলে নও। তবুও পরিস্থিতির কাছে আমি হেরে গেছি। এখন তুমি আমার কথামত চললেই সব কিছু ঠিক থাকবে।
,
– আমি কেন আপনার কথামত চলবো? আমার নিজের একটা জীবন আছে। কেন সেটা আপনি নষ্ট করে দিলেন? কেন আমার চেহারা পালটে দিলেন?
,
– আমার ছেলের নাম রাকিব। আমরা স্বপরিবার এখানেই থাকি। বাংলাদেশে রাকিবের জন্য তবে ওর জন্মের পর এখানেই পারমানেন্টলি চলে আসি। যায়হোক, আমার ছেলে আর তোমার গাড়ির একসাথে ধাক্কা লাগে। আমার রাকিবের স্পট ডেথ হয়ে যায় আর তোমার মুখটাও বিকৃত হয়ে যায়। আমি বুকে পাথর রেখে আমার ছেলেকে তোমার পরিচয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিই এবং তোমার মুখ প্লাস্টিক সার্জারি করে রাকিবের চেহারা দিয়ে দিই।
,
– আপনি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন জঘন্য খেলা খেলবেন আমি ভাবতেও পারছিনা। না জানি আমার মিহি কেমন আছে আমাকে ছাড়া! কত কষ্ট ওকে সহ্য করতে হচ্ছে। আমি এখুনি দেশে ফিরে যাবো।
,
– তুমি আর যেতে পারবেনা কারণ মুহিত নামের কেও মৃত অবস্থায় দেশে চলে গেছে। তুমি যেতে পারবে শুধু রাকিব নাম নিয়ে আর সেটা আমার ইচ্ছা হলে তারপর। আর হ্যা তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমার মিহিকে আমার লোক খুন করে ফেলবে।
,
মুহিত এবার কিছুটা শান্ত হয় কারণ নিজের জীবন গেলেও মিহির ক্ষতি হতে দেবেনা। আজীবন রাকিব নাম নিয়েই থাকবে তবুও মিহি ভালো থাকুক। তবে একটা জিনিস জানতে বড্ড ইচ্ছা হচ্ছে, মিহি কেমন আছে! তাই জড়তা কাটিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
,
– শুধু একবার বলুন আমার মিহি কেমন আছে?
,
– ভালো আছে তবে তুমি আমার কথার অবাধ্য হলে বেশিক্ষণ ভালো থাকবেনা।
,
“আমাকে মাফ করে দিও মুহিত। আজকে না চায়তেও আমি এতো বড় মিথ্যা বললাম একজন মাকে তার সন্তান ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। সেটা হোক ভালো ভাবে কিনবা বেইমানি করে। ”
,
,
চলবে….
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।