অনুভবে ১৬তম পর্ব

0
2068

#অনুভবে
১৬তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– আপনি গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে গেছেন মিস্টার মুহিত।
,
রিতার কথা শুনে পুরো অবাক। যে মেয়ে ১ মিনিট আগে রাকিব মানে ডাকছে সে এখন মুহিত বলছে কারণটা কি! আর গোলকধাঁধায় বা কিসের!
,
– আপনি কি আমার কথা শুনছে মিস্টার মুহিত?
,
মুহিত একটু নড়েচড়ে বসলো,
,
– আমি মুহিত সেটা আপনি কিভাবে জানলেন?
,
– এটাও জানি আপনার প্রেমিকার নাম মিহি।
,
– কিন্তু কিভাবে জানলেন এসব?
,
– এবং এটাও জানি তার সাথে বিয়ে না করেও আপনারা একে অপরের কাছে এসেছেন।
,
মুহিত এবার দাঁড়িয়ে গেলো রিতাকে ধমক দিয়ে বলল,
,
– স্যাট আপ মিসেস…….!!!
,
– রিতা।
,
– রিতা হন আর ফিতা হন আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাটা মানে আমার ডায়েরি পড়া। কেন অপরিচিত একজনের ডায়েরি পড়েছেন।
,
– ডায়েরি পাবলিক প্লেসে রাখলে তো যে কেও পড়বে তাইনা!
,
– মোটেও পাবলিক প্লেসে ছিলোনা আমার ডায়েরি। ওটা আমার গাড়িতে রাখা ছিলো।
,
– এক্সিডেন্টের পর আপনার গাড়িটা সার্ভিসিংএ দেওয়া হয়েছিলো। গাড়ির ভিতর যা কিছু ছিলো সেসব ওরা আমাদের কাছে দেয়। তার ভিতর আপনার ডায়েরিটাও ছিলো। কৌতুহল বশত কখন সেটা পড়ে ফেলেছি নিজেও জানিনা।।
,
– এটা মোটেও আপনি ঠিক করেননি মিস রিতা। আর হ্যা কি যেন বলছিলেন আমি গোলকধাঁধায় আছি। কিসের গোলকধাঁধা একটু বলবেন প্লিজ!
,
– আপনাকে মালেক আংকেল তার স্ত্রীর জন্য তার ছেলের চেহারা দেয়নি।
,
– কি বলছেন এসব?
,
– আমি ঠিকই বলছি। আপনি আমার সব কথা শুনুন। মালেক আংকেলের ওয়াইফ মারা গেছে রাকিব মারা যাওয়ার এক বছর পর।
,
– তাহলে কালকে যে মহিলাকে দেখলাম উনি কে? আর আজকে সকালেও তো ওনাকে দেখলাম।
,
– সব আপনাকে ধাধায় ফেলার জন্য করা হয়েছে যাতে আপনি ইমোশনালি মালেক আংকেলের ফাদে পড়ে যান।
,
– কিন্তু আমালে ফাদে ফেলে উনি করবেন টা কি?
,
– বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় লোক নিয়ে আসতো রাকিব ওর বাবার কম্পানিতে চাকরি দেবে বলে। কিন্তু….
,
– কিন্তু কি?
,
– রাকিব জানতো না যে ওর বাবা এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যাবসার আড়ালে মানুষের অঙ্গ বিক্রির ব্যাবসা করতো।
রাকিব বারবার মালেক আংকেলকে বলতো যে বাংলাদেশ থেকে যেসব লোকজন নিয়ে আসা হয়েছে তারা কোথায়। তখন আংকেল উত্তর দিতো, তাদেরকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে সেখানকার অফিস দেখাশোনার জন্য, কিনবা মালয়েশিয়া পাঠিয়েছে।
,
– এসব কি বলছেন আপনি?
,
– হ্যা ঠিকই বলছি। আপনার আর রাকিবের গাড়ির যেদিন এক্সিডেন্ট হয় সেদিন রাকিব প্রচুর ড্রিংকস করে গাড়ি চালাচ্ছিলো। কারণ সেদিন ও ওর বাবার সব কুকির্তি জেনে গেছিলো। একজন ডাক্তার হয়েও মানুষের জীবন নিয়ে এমন নোংরা কাজ তার বাবা করেছে সেটা জানতেই পাগলের মত করছিলো। আমি ওর সাথেই ছিলাম সেদিন। ভাগ্য সেদিন আমাকে বাচিয়ে দিয়ে আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিয়েছে।
,
– কিন্তু আপনি সব কিছু জানেন তাহলে তবুও কেন এখান থেকে চলে যাননি এতোদিনে? আর জেনেশুনেই বা কেন আপনি সেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরলেন?
,
– মালেক আংকেল নিজেই জানেন যে আমি সব জেনে গেছি। আমি পালাতে পারিনি। আমাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিলো যে আমি যদি পালানোর চেষ্টা করি তাহলে আমার পায়ের শিরা কেটে দেবে। পরে আমি মনস্থির করি যে ওনার সাথে এমন আচরণ করবো যাতে ওনার মনে হয় আমি ওনারই লোক। প্রথম প্রথম মালেক আংকেল আমাকে বিশ্বাস না করতে পারলেও এখন উনি পুরোপুরি মানেন যে আমি আর কাওকেই কিছু বলবোনা।
,
– তাহলে আপনি সুযোগ বুঝে পালিয়ে কেন যাচ্ছেন না এখন।
,
– সেটা তো আমি চাই। এই খারাপ মানুষের সাথে যে আর থাকতে মন বলেনা। বাবার বয়সী একটা মানুষ উনি, আর কতদিনই বা বাচবেন! তবুও এসব করেই চলেছেন।
,
– লোভের কোনো বয়স লাগেনা মিস রিতা। আমি আপনাকে সাহায্য করবো বাংলাদেশে যেতে। আমাকে একটা কথা বলুনতো, আপনার প্রেমিক আইমিন রাকিব এক্সিডেন্টের পর কেমন অবস্থায় ছিলো?
,
– সমস্ত মুখ বিক্রিত হয়ে গেছিলো।
,
– আমাকে যেমন গোলকধাঁধায় ফেলা হয়েছে আমিও মিস্টার মালেককে গোলকধাঁধায় ফেলবো। উনি নিজে আমাদের বাংলাদেশে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দেবে দেখবেন।
,
– সেটা কিভাবে?
,
– সময় বলে দেবে মিস রিতা। আমারও বড্ড জলদি যে, আমার ভালোবাসার কাছে যেতে হবে। এতো বছরে না জানি আমার মিহি কি অবস্থায় আছে।
,
রিতা বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়ালো।
,
– চলুন হাটতেথাকি অনেকক্ষণ তো বসে থাকলাম।
,
মুহিত রিতার পাশাপাশি হাটতে লাগলো। দুজনই চুপচাপ হাটতেই আছে। যেন দুটি যন্ত্রচালিত পুতুল গুটিগুটি পায়ে চলতেই আছে। নিরবতা ভেঙে রিতা আবার বলা শুরু করলো,
,
– আচ্ছা মিস্টার মুহিত আপনার কি মনে হয় আপনার মিহি এখনো নতুন সংসার না করে আপনার জন্য বসে আছে!
,
– আমাদের শপথ যে আজীবনের। মৃত্যুর আগে আমরা আলাদা হবোনা এমন কথা দেওয়া ছিলো। তাহলে কেন ও সংসার করবে। আমার মিহি এখনো নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
,
,
,
সকালের সোনালী আলো চোখের পাতায় পড়তেই হিমেলে চোখ খুলে গেলো। মিহি এখনো বুকের সাথে লেপ্টে আছে। এখনো ঘুম দরকার অনেক। হিমেল ভাবলো মিহিকে ডাক দেবে, বাকি ঘুমের ঘাটতিটা যাতে ঘরে গিয়ে পুরোন করতে পারে।
,
হালকা নাড়া দিয়ে মিহিকে ডাকতে থাকলো হিমেল,
,
– মিহি এই মিহি ওঠো। চলো ঘরে গিয়ে বাকিটা ঘুম দেবো।
,
মিহি ঘুম কাতুরে কন্ঠে বলল,
,
– উমমম, আমি এই বুকেই ঘুমাবো।
,
হিমেল হালকা একটা হাসি দিয়ে বলল,
,
– আচ্ছা মিহি যদি কোনোদিন মুহিত ফিরে আসে আমাদের জীবনে!
,
হিমেলের কথা শুনে মিহির সম্পুর্ন ঘুম উধাও।
,
– তুমি কি দুনিয়া আর কথা খুজে পাওয়া? খুচড়ে খুচড়ে এক টপিকেই থাকা লাগে সারাক্ষণ?
,
হিমেল গম্ভীর গলায় বলল,
,
– আমি কিন্তু আমার উত্তর পাইনি এখনো!
,
মিহি হিমেলের বুক থেকে মাথা তুলে হিমেলের সামনে হাটু গেড়ে বসে।
,
– আমি জানি হিমেল মুহিত আর ফিরবেনা। কারণ যে বেচেই নেই সে আর ফিরবে কিভাবে! আর যদি ফিরেও আসে তবে আমি আর সেটা চাইনা কারণ এতে করে না তুমি ভালো থাকবে, না আমি আর নাই-বা মুহিত। তার থেকে বরং মুহিত আজীবন আমার মনের মধ্যেই বসবাস করুক।
,
– তুমি সত্য বলছো তো? আমাকে ছেড়ে যাবেনা তো?
,
মিহি এবার উঠে দাঁড়ায়। হিমেলের মাথাটা নিজের পেটে রাখে। তারপর বলে,
,
– তোমার আর আমার দ্বিতীয় শিকল আমার পেটে। তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারিনা। তুমি প্লিজ এটা বলোনা আর। ভাবলেই আমার দম আটকে যায়।
,
হিমেল উঠে দাঁড়িয়ে মিহিকে কোলে তুলে ঘরের দিকে রওনা দেয়।
,
,
,
চলবে……
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here