অনুভবে (২য় খন্ড) পর্ব ১১,১২

0
1341

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ১১,১২
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
১১

সভ্য স্তব্ধ হয়ে যায়। তার হৃদয়ের স্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়। এতবছর পর তার হৃদয়ে অদ্ভুত এক শান্তি ছড়ায়। আচ্ছা এই মুহূর্তটা কি স্বপ্ন বা বাস্তব? আচ্ছা এই মুহূর্তটা বাস্তব
হলে কি ইনারা তার হৃদয়ের এমন করুণ অবস্থা অনুভব করতে পারছে?

সভ্যের যেন এই মুহূর্তটা অবিশ্বাস্য লাগছে। সে নিজের হাত ইনারার পিঠে রেখে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলো। নিজের বুকের ভেতর মিশিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এর পূর্বেই ইনারা সরে গেল। তাকে অস্থির দেখালো। সে এদিক ওদিক অশান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “সরি, আসলে একটু আবেগী হয়ে গিয়েছিলাম। তাই অজান্তেই…. কিছু মনে করবেন না।”

“মনে করব না? এত বছরের অশান্ত মনকে মুহূর্তখানিকের জন্য শান্তি দিয়ে আবারও অশান্ত করার অপরাধে তোমাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। শাস্তিটা হওয়া উচিত সারাজীবন আমার হয়ে থাকাটা।” মনে মনে বলল সভ্য। কিন্তু কথাটা মুখে আনলো না। তবে একটি দুষ্ট বুদ্ধি তার মাথায় এসে ভার করল। সে মিটিমিটি হেসে নাটকীয় ভঙ্গিতে ইনারাকে বলল, “তুমি কি করেছ তুমি জানো? তোমার সাথে তো দুই বছর পর আমার ডিভোর্স হয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে কার সাথে বিয়ে করব আমি? কী জবাব দিব ওকে? দেখ ইনারা তোমার জন্য যদি আমার ভবিষ্যতে বিয়ে না হয় তোমার জন্য ভারী সমস্যা হবে দেখে নিও।”

ইনারা হতভম্ব হয়ে গেল। খুশির চোটে সে সভ্যকে ছুটে যেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। কিন্তু পরে যখন তার ধ্যান এলো তখন নিজেকে সামলে নিয়ে মুখ তুলে নিলো। আজ আইজাকে ছোট করে যেমন খুশি হলো সে, তার থেকে বেশি স্যারপ্রাইজটা পেয়ে খুশি হয়। বিশেষ করে সভ্যের উপর তার রাগের কথাটা আর মনেই ছিলো না। কিন্তু সভ্যের শেষ কথা শুনে তার খুশিটাই হাওয়া হয়ে যায়। রাগ উঠে যায় তার। শখ কী লোকটার! সবে বিয়ের একমাস হলো এখনই অন্যকাওকে বিয়ে করার চিন্তায় আছে। এই মুহূর্তে তার মন চাইছে সভ্যের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।

ইনারা আবারও দোলনায় বসে বলে, “আমার কি সমস্যা হবে শুনি।”
সভ্যও তার পিছু পিছু যাচ্ছিল। সে বসতে না বসতেই দেখতে সভ্য তার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তার দিকে ঝুঁকে বলে, “পরে যদি অন্যকেউ আমাকে বিয়ে না করে তাহলে তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে থাকতে হবে।”
সভ্য এতটা কাছে আসায় ইনারা এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। সভ্যের চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি আটকে যায় তার দৃষ্টির মাঝে। তার মনে হলো তার হৃদয়ের অবস্থা করুণ হয়ে যাচ্ছে। তার চক্ষু লজ্জায় ঝুঁকে গেল। সাথে সাথে এক তীব্র হাওয়ায় তার চুল বাতাসে উড়ে গেল। কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে ঝরে তাদের এই মুহূর্তটা আরও মাতোয়ারা করল। বর্ষণ হলো তাদের উপর।

ইনারার থলথলে চুলগুলোর দিকে তাকায় সভ্য। হাত বুলিয়ে দিলো। কিছু কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে তার চুলে লাগিয়ে বলল। আবারও তার চোখের দিকে তাকাল। ইনারার নীল গভীর সাগরের মতো চোখ যেন তার হৃদয়টাকে ছিন্নভিন্ন করতে যথেষ্ট। ইনারার স্বর্ণোজ্জ্বল চুলে যে সারাজীবনের জন্য বন্দী হতে পারে। তার মাঝে বিলিন হতে পারে। হঠাৎ তার চোখ পরে ইনারার লালচে রঙের ঠোঁটে। কী নিঁখুত গড়ন! ইনারা আগে লিপ্সটিক দিতো না। দিলেও হাল্কা রঙের। আজ তাকে লাল রঙের লিপ্সটিক দেওয়ায় ঠোঁটের দিকে আকর্ষণ যাচ্ছে। তার হৃদয়টা লালায়িত হয়ে গেল। সে এক ঢোক গিলে।

ইনারা সভ্যকে এমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে তার কাঁধে মেরে বলে, “এভাবে কি দেখছেন? চোখ সরান।”
সভ্য খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কিন্তু সে আত্নরক্ষার সুরে বলল, “বাহ তুমি এসে জড়িয়ে ধরতে পারো। আমি তাকিয়ে থাকলে সমস্যা?”
“বললাম না ভুলে করেছি। আর করব না, যান।”
“নিজের বেলায় ষোল আনা। কয়েক বছর আগেও এভাবে আমাকে কিস করে কেটে পড়েছিলে। এখন আবার এ ব্যাপারেও? তুমি না বলেছিলে ঋণ রাখতে নেই। তাহলে তুমি আমার কী ফিরিয়ে দিবে শুনি?”
সভ্য দোলনায় বসতে নেয় কিন্তু ইনারা দেয় না, “খবরদার বসবেন না।”
“আহা কি অবস্থা! আমার ঘরে আমি বসতে পারব না?”
“এটা আমার দোলনা। আমি ছাড়া কেউ বসতে পারবে না।”
“একদম টিপিক্যাল বউদের ধমকানো ছাড়া আর কি পারো?”
ইনারা উঠে দাঁড়ায়। রাগান্বিত সুরে বলে, “আমি টিপিক্যাল বউদের মতো ধমকাই? তাহলে আপনি কী করেন? নিজেও তো আসল স্বামীর মতো ব্যাবহার করেন।”
“আমি কি করলাম শুনি?”
“এই’যে কথায় কথায় কাছে এসে পরেন, রাগ দেখান, বেহায়ামি করেন।”
“কথাটা ফেরত নেও। আমি বিনা দোষের আরোপ নেই না। ফেরত না নিলে আসলে করব এবার।”
“নিব না কি করবেন করেন।”
সভ্য হুট করেই ঝুঁকে ইনারার কাঁধে চুমু খেয়ে বসে। চুমুটা খেতেই দৌড়ে পায়লায় সে।

ইনারা স্তব্ধ হয়ে যায়। শিউরে ওঠে সে। সে নিজের কাঁধে হাত রেখে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সভ্যের যাবার দিকে। তার চোখ দুটো এখনো সভ্যের যাবার দিকে আটকানো। হৃদয়ের অবস্থা করুণ। আর হঠাৎ ঠোঁটের কোণে হাসি এসে হাজির।
.
.
“তুমি আমাকে বলেছিলে এসবের পিছনে কেবল তোমার মামা এবং আম্মু ছিলো। তাহলে সে ভিডিওটা কীসের আইজা?” প্রশ্ন করে সাইদ। আইজা মাথায় হাত ধরে বসে ছিলো। ভিডিওটা কীভাবে ইনারা পেল তাই মাথায় ঢুকছে না। এই ভিডিও একবার বাহির হলে তার কেবল ক্যারিয়ার নষ্ট হবে না তার জীবনও নষ্ট হবে। না, এ ভিডিও কারও সামনে আসতে পারে না। তার যে করেই হোক প্রডিউসারের সাথে কথা বলতেই হবে। সে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। মাথা তুলে সাইদকে রাগান্বিত সুরে বলে, “তুমি আমাকে চিনো না? না চিনলে ভালোবাসো বলে দাবি করো কেন? আমি তোমাকে বলেছি ইনারার সাথে এসব হবার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম বলে ওর মনে হচ্ছে আমি এসবে জড়িত। কিন্তু আমার কি করার আছে? সাইদ তুমি ভুলো না আমার কথাতেই মামা সুরভিকে কিছু করে নি। তার পরিবর্তে আমারও অনেক সমস্যা সহ্য করতে হয়েছে।
মামার বিরুদ্ধে গেলে উনি আমাদেরও ছাড়বে না। আমাদেরও শেষ করে ফেলবে। তুমি যেমন তোমার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য চুপ করে আছো, তেমন আমিও। তুমি কেবল নিজেরটা বুঝো।”
“আর সে ভিডিওর কী?”
“মামা আমাকে বলেছিল ইনারাকে সেখানে ডাকার কথা। হয়তো এজন্যই ভিডিওতে আমার নাম নেওয়া হয়েছে। আমি কি জানতাম যে ওকে সেখানে…. বাদ দেও। আমার আর সাফাই দেবার ইচ্ছা নেই। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তোমার প্রশ্নের উওর দিতে দিতে। আমার ইচ্ছা নেই আর তোমার সাথে কথা বলার। আমি গেলাম।”
আইজা আর এক মুহূর্তও সেখানে থাকে না বেরিয়ে পরে। বেরিয়েই দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সাইদ এবার তার কথা মেনে নিলেই হলো। তার কথাগুলো সম্পূর্ণ সত্য না হলেও মিথ্যাও নয়।

সে সোজা বাসায় যায়। রুমে যেয়ে কল দেয় ‘রহস্য ঘর’ এর প্রডিউসার মিঃ আনসারিকে। তাকে ইনারার শর্তের ব্যাপারে সব জানায়। সব শুনে মিঃ আনসারি বলে, “কিন্তু আমি তোমার কথা নিজের এত বড় ক্ষতি কেন করব?”
“ইনারা না আসলে আপনার ইনভেস্ট করা সিনেমাও লোকসানে যাবে।”
“কিন্তু পঞ্চাশ লক্ষ টাকা তো কম না। ইনারা আসলে আমার লাভ হবে ঠিক আছে কিন্তু এতটুকুতেই তো চলবে না।”
“তাহলে কি চাই আপনার?”
“আমার ওয়াইফ কিছু দিনের জন্য বাসায় নেই। তুমি আজ রাতে আসতে পারো।”
কথাটা শুনে আইজা চুপ হয়ে গেল। কিছু বলতে পারলো না। তার উওর না পেয়ে আনসারি সাহেব শব্দ করে হাসেন, “এমন ভাব করছ কেন যেন আগে আমার কাছে আসো নি। এত বড় বড় প্রজেক্ট তো আর এমনিতেই পাও নি। এত টেলেন্ট নেই তোমার। আজ রাতে আসবে না’কি তোমাকেই সিনেমা থেকে বের করে দিব তা বলো।”
“আসবো।”
.
.
ইনারা বসে আছে স্টুডিওতে। ফিল্মের রাইটার ও এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এর সাথে। তারা সিনেমার কাহিনী ছোট করে শুনাচ্ছিল তাকে,
“রহস্য ঘর হলো এমন একটি সিনেমা যা জাদুই ঘর হিসেবে মানা যায়। এখানে প্রধান চরিত্রে রিধি এবং রোহান থাকবে। আপনার চরিত্র হলো রিধির বেস্ট ফ্রেন্ড এর। অর্থাৎ মিস আইজার। আপনার চরিত্রের নাম মিথিলা। আপনি রিধিকে সবসময় সাহায্য করেন। গল্পের শুরুতেই সে ভেঙে পড়ে রুহানের সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায়। তখন আপনি রিধিকে সামলান। রিধি ও রুহানের আবার দেখা হয় দুইবছর পর। রুহানের দাদীর বাড়িতে। কিন্তু ঘরটা অদ্ভুত। সেখানে প্রতিদিন রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকে। সে ঘটনার রহস্য উদ্ভবন করতে শুরু করেন আপনি ও রিধি। কিন্তু দিন দিন ঘটনা বিগড়াতে থাকে। এরই মাঝে রুহানের মনে রিধির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায় আবারও এবং তাদের আলাদা হবার কারণ এবং আলাদা হবার পিছনের কারণও প্রকাশ পায়। কিন্তু তারা আবার এক হতে পারে না কারণ এখন রুহানের সাথে চৈতীর সম্পর্ক আছে। চৈতীর কারণে তারা এক হতে পারছে না। আর তাদের সকলের সে ঘরে আসাটাও কোনো নিয়তি ছিলো না। যারা সেখানে ছিলো সেখানের সবারই বিশেষ এক কারণ ছিলো সেখানে থাকার। যেন এসব এক পরিকল্পনা ছিলো। মিথিলার, রিধির, রুহানের, চৈতীর সাথে আরও তিনজনের।”
“সে পরিকল্পনার পিছনেও চৈতী ছিলো তাইতো?”
লেখক অবাক হয়ে তাকায় ইনারার দিকে, “আপনি কীভাবে বুঝলেন?”
ইনারা তাচ্ছিল্য হাসে, “আপনার বলার ধরণে। আমার চরিত্র বুঝাতে মিথিলার নাম নিচ্ছেন বুঝা যায়। প্রধান চরিত্রের নাম নেওয়াও স্বাভাবিক কিন্তু বারবার চৈতীর নাম নিচ্ছেন এটাই কি স্বাভাবিক নয়? একটা উওর দিন, এইসব রহস্যের পিছনেও চৈতীর হাত আছে?”
“কিছুটা।”
“এটা নেগেটিভ চরিত্র?”
“একদম ঠিক ধরেছেন।”
“আমি ওর চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।”

তখনই সহায়ক পরিচালক বলে উঠে, “কিন্তু এটা তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এর জন্য নিখুঁত অভিনয় প্রয়োজন।”
“প্রধান চরিত্রদেরও ভালো অভিনয় আসা প্রয়োজন। তাদের অভিনয়ও তো এভারেজ। এছাড়া আপনাকে কে বলেছে আমাকে অডিশন ছাড়া নিতে? আমি অডিশন দিব। কারও অভিনয় না দেখে আপনি কীভাবে বলতে পারেন তার অভিনয় নিখুঁত কি-না!”
“আমি…আসলে…”
ইনারার জোর গলায় কথাগুলো শুনে সহায়ক পরিচালক কি বলবেন ভেবে কূল পাচ্ছে না। তাই ইনারা আবার বলল, “পরিচালক আলতাফ আমার অভিনয় দেখে আমাকে তার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে বাছাই করেছিলেন তিনবছর আগে। আপনি নিশ্চয়ই উনার চরিত্র বাছাইয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে সন্দেহ করবেন না। আপনার প্রধান চরিত্ররাও তার চলচ্চিত্রে এক ঝলক আসার সুযোগ পায় নি।”
কথাটা শুনে লোকটাকে একটু অবাক মনে হলো। কিন্তু সে তা প্রকাশ না করে আবার ইনারাকে বলে,
“ম্যাম কথার ধরণটা একটু রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে না?”
“সত্য বলছি। রুক্ষ মনে হলে আমার কি করার?”
“ম্যাম এক কাজ করুন আপনি স্ক্রিপ্টটা নিন। ভালো করে পড়ে সিদ্ধান্ত নিন। ভালো একটা উপদেশ দিচ্ছি। আপনার প্রথম চলচ্চিত্রে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করলে পরবর্তীতেও এমন চরিত্রের অফার পাবেন। তাই আপনার জন্য ভালো…”
“আমার ভালো খারাপ আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। এই চরিত্রের অডিশন কবে তা আমাকে জানিয়েন। আমি এসে অডিশন দিব। বিনা পরিশ্রমে অন্যের কাজ ছিনিয়ে নেবার মতো মানুষ আমি নই। এবার উঠি তাহলে?”
তার সামনে বসা দুটো লোকও উঠে দাঁড়ায় তাকে বিদায় দিতে। ইনারা স্ক্রিপ্ট নিয়ে বিদায় হতেই লেখক বলে উঠে, “আমার তো মনে হয় মিস ইনারাই চৈতী চরিত্রের জন্য পার্ফেক্ট।”
“এমন কেন মনে হলো?”
“তার এটাটিউড দেখেছ? নির্ভয়, এবং সোজাসোজি কথা বলতে পছন্দ করে। তার চোখে তাকাতেই আমার চৈতীর কথা মনে পড়ল। যেন দৃষ্টি দিয়েই শত্রুদের খুন করে দিবে। আমার মনে হয় ওই চৈতীর চরিত্র পাবে।”
“কিন্তু ওর চরিত্রে ভালোই স্ক্রিনটাইম আছে এবং স্যার বলেছে কোনো অপ্রধান চরিত্রই দিবে মিস ইনারাকে। এছাড়া ভাবুন যদি মিস ইনারা আসলেই ভালো অভিনেত্রী হয় তাহলে আসল নায়ক নায়িকাকে দেখবেটা কে? এই ভয়ও তো তাদের আছে।”
লেখক হেসে বললেন, “তা যা বলেছেন।”
.
.
বাহিরে ইনারার জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছিল। গাড়িতে উঠে সে রহমানকে দেখে অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে, “রহমান ভাই আপনি কখন এলেন?”
“একটু আগেই। ড্রাইভারক ফোন দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম সে কোথায়, তারপর এলাম। ছোট স্যার পাঠিয়েছে আপনাকে নিয়ে যেতে।”
“নিয়ে যেতে? কোথায় নিয়ে যেতে?”
“কোম্পানিতে। ছোট স্যার বলল এখন তার সম্পর্কে জানার সময় এসে পড়েছে। আপনার তার সম্পর্কে এবং তার পরিবার সম্পর্কে সবকিছু জানা উচিত।”

চলবে…

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ১২
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

বড় এক ইমারতের ভেতর ঢুকছে গাড়িটি। সে ইমারতের একপাশে কিছু একটা লেখা ছিলো যা ইনারা পড়তে পারে নি। গাড়িটি ঢুকছে ইমারতের পিছন দিক দিয়ে। ইনারা রহমানকে জিজ্ঞেস করে, “আমরা বিল্ডিংয়ের পিছন দিক দিয়ে কেনা যাচ্ছি?”
“ছোট স্যার বলেছে তাই।”
“সভ্য তাহলে এখানে কাজ করে?”
রহমান পিছনে ইনারার দিকে তাকাল মুখ কুঁচকে, “ম্যাম স্যার এই কোম্পানির মালিক।”

ইনারা বোতল থেকে পানি পান করছিলো। রহমানের মুখে কথাটা শুনে তার মুখ থেকে পানি পড়ে গেল। সে অবিশ্বাস্য সুরে বলে, “কী! এই বিল্ডিং সভ্যের? আমি মাত্র যে এত বড় স্টুডিও থেকে এসেছি তার থেকে দশগুণ বেশি বড় এটা।”
“মানে টেকনিকালি এটা বড় সাহেবের। কিন্তু একমাস হবে সভ্য স্যার কোম্পানি সামলাচ্ছেন। যেহেতু উনিই এটা সামলাবেন তাই ভবিষ্যতে উনার নামেই হতে পারে। আর আপনার সে স্টুডিওর থেকে বড় তো হবেই। সে স্টুডিওর বেশিরভাগ শেয়ারই বড়স্যারের নামে। ওই স্টুডিও আমাদের কোম্পানির সাব লেবেল। এমনকি বেশিরভাগ এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানিই আমাদের কোম্পানির আন্ডারে আছে।”

গাড়ি থামে। এই বিশাল গ্যারেজে কেবল তিনটা গাড়ি আছে। এবং একটা লিফট। লিফটে উঠে রহমান জানায়, “এটা কোম্পানির পিছনের দিকে। বড়স্যার এই দিকটা আলাদা রেখেছেন। এইখানে কেউ আসতে পারে না।”
“কেন?”
“যেন কোম্পানির বসকে কেউ না দেখে।”
“পাশাপাশি কি মাফিয়ার কাজ করে না’কি যে দেখলে সমস্যা হবে।”

দাঁত কেলিয়ে হাসে রহমান, “কি যে মজার কথা বলেন ম্যাম! ও আপনি মজা করছেন না?” এবার রহমান নিজেও গম্ভীর হয়ে বলে, “উনাদের অনেক বড় ব্যবসা তাই জানের ভয়ও থাকে। তাই স্যাররা সকলের চোখ থেকে এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করে। এমনকি একারণেই ছোট থাকতে তাদের দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পড়াশোনার জন্য। কেবল কোম্পানির হেডরা ছোট স্যারের সাথে দেখা করতে পারবে। তাকে কোম্পানির সকল তথ্য দেওয়া, সকল কাজের গবেষণা করা এবং তার থেকে অনুমতি নেওয়ার কাজ তারাই করে। সভ্য স্যারের সাথে কেবল তাদের দেখা করার অনুমতি আছে। আর আমার। আমি তার এসিস্ট্যান্ট বলে। আমার বাবাও বড় স্যারের এসিস্ট্যান্ট ছিলেন।”
“আপনার বড় স্যার অর্থাৎ সভ্যের দাদাজান এই কোম্পানি শুরু করেছিলেন?”
“হ্যাঁ, বড় স্যার যুদ্ধ শেষ হবার পরপর বিদেশে গিয়েছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে একটা ছবিতে স্টাফ বয় হিসেবে কাজ করতেন তারপর আস্তে-ধীরে কাজ শিখেন। তারপর নিজেও সেখানে সহায়ক পরিচালক হিসেবে কাজ করে। পড়াশোনা শেষে এক স্টুডিওতে কাজ নেন। অনেকবছর পর দেশের টানে ফিরে আসে। এখানে এসে নিজের কোম্পানি খুলে। আজ পঁচিশ বছর পর এই কোম্পানি দেশের বড় কোম্পানির মধ্যে একটি।”

ইনারা রহমানের কথাগুলো শুনে আগ্রহ সহকারে বলে, “বাহ উনার এত কথা শুনে তার ব্যাপারে জানার আগ্রহ বাড়ল। কী নাম আপনার বড় স্যারের?”
“শাহরিয়ার ইসমাত। সভ্য স্যারের নাম উনার সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে। ওহ ম্যাম এসে পড়েছি আমরা।”

রহমান লিফট থেকে নেমে একটু এগিয়ে দেখে ইনারা তার পাশে নেয়। পিছনে ফিরতেই দেখে ইনারা লিফটেই দাঁড়ানো। লিফটের দরজা আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সে ছুটে যেয়ে বাটন চাও দিতেই দরজা আবার খুলে যায়। সে আতঙ্কিত সুরে বলল, “ম্যাম আপনি নামেন নি কেন?”
ইনারা এখনো হতভম্ব, “এটা কী ‘ইসমাত এন্টারটেইনমেন্ট’? ”
“হ্যাঁ।”

ইনারার হঠাৎ মনে পড়ে সভ্যের নাম। সাফওয়াত ইসমাত সভ্য। সে নিজের কপালে হাত রেখে বলে, “ওই অসভ্যের নামেও ইসমাত ছিলো তাও আমার মাথায় ঢুকে নি ও এই কোম্পানির সাথে জড়িত হতে পারে। ইসমাত এন্টারটেইনমেন্ট তো দেশের সবচেয়ে বড় এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি। ” ইনারার চোখে উৎসুক ভাব স্পষ্ট।

রহমান তা দেখে সুযোগ বুঝে ইনারাকে আরও খুশি করার জন্য বলে, “আর এখন তো আপনি এই কোম্পানির অংশ। সভ্য স্যারের ওয়াইফ আপনি।”
মুহূর্তে যেন ইনারার সকল উৎসুকভাব হাওয়ায় উড়ে যায়। সে লিফট থেকে বেরিয়ে বলে, “আপনার স্যারের সাথে কেবল দুই বছরের বিয়ে আমার। ভুলে যেয়েন না।”
“তা ভুলি নি ম্যাম। কিন্তু আপাতত তো আপনারও এই কোম্পানিতে অধিকার আছে। আপনি এত কষ্ট না করে সভ্য স্যারকে একবার বললেই স্যার আপনাকে যেকোনো বড় ফিল্মে প্রধান চরিত্রে নিতে পারে।”

ইনারা দেখে লম্বা করিডরের দুইপাশেই কতগুলো বডিগার্ড দাঁড়ানো। তারা মাঝখান দিক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এরই মাঝে সে উওর দেয় রহমানকে,
“আমি যা করব নিজের যোগ্যতায় করব। প্রয়োজনে অপ্রধান চরিত্রই করে যাব সারাজীবন তাও কারও রেফারেন্স এ কাজ করব না। এটা এক ধরনের ঋণ। আমার ঋণী থাকা পছন্দ না। কিন্তু দাদাজান এত কঠিন সময় আমার যা সাহায্য করেছে তার ঋণ আমি কখনো পরিশোধ করতে পারব না। তবে একবার আমি কাজ শুরু করতে পারলে আপনার বড় স্যারের সব আর্থিক ঋণ পরিশোধ করে দিব।”

করিডরের শেষ প্রান্তের কক্ষের সামনে যেয়ে দাঁড়ায় রহমান। সেখানে দাঁড়ানো একটি বডিগার্ড বলে, “স্যার বলেছে কেউ আসলে বসতে। কোনো কথা বলতে না। স্যার কাজ করছে।”
“ঠিকাছে। আর উনাকে দেখে রাখো, উনি আমাদের ম্যাম। অর্থাৎ স্যারের ওয়াইফ। উনার এখানে আসার অনুমতি আছে। সবাইকে তা বলে দিবে।”
“ঠিকাছে।”
রহমান ইনারার দিকে তাকিয়ে বলে, “ম্যাম আপাতত একটু বসতে হবে। আর কথা বলা যাবে না। কাজের সময় শব্দ হলে স্যার ভীষণ রাগ করে। আপনি ভেতরে যান। আমি একটু কাজ সেরে আসছি।”

ইনারা রুমের ভেতর ঢুকে নীরবে। ঢুকেই দেখে সভ্য কাজ করছে। মগ্ন হয়ে। ইনারা দেখে রুমটা বিশাল। রুমটা সম্পূর্ণ মেরুন ও কাঠ রঙের। দেয়ালের রঙ, ফার্নিচার সব। কেবল একদিকে দেয়ালের পরিবর্তে কাঁচ দেওয়া। সেখান থেকে আকাশটা পরিষ্কার দেখা যায়।সে গুটি গুটি পা’য়ে হেঁটে যেয়ে বসে সোফায়। সোফায় বসে অস্থির হয়ে আশেপাশে দেখতে থাকে। তার চোখ যেয়ে আটকায় সভ্যের উপর। তার চক্ষু সেখানেই আটকে গেল। সভ্য কালো শার্ট পরে বসে আছে। তার শার্টের হাতা কণুই পর্যন্ত মোড়ানো। হাতে কালো রঙের একটি ঘড়ি পরা। মুখের ভাব গম্ভীর। আগেও যখন সে কাজ করতো তখন এমন গম্ভীর দেখাত তাকে। এমন গম্ভীরমুখে তাকে সাধারণের চেয়ে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম দেখায়। আর আজ তার মাত্রা যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এমন কেন? তাকে আগের থেকে বেশি ম্যাচিউরড দেখায় একারণে? না’কি ইনারার মনটা জানে দুই বছরের জন্য হলেও এই লোকটা তার একারণে?

ইনারার মনে হলো তার গাল দুটো লজ্জায় ভারী হয়ে গেছে। তার ঠোঁটের কোণে লজ্জামাখা হাসি এসে উপস্থিত হলো। সে গালে হাত রেখে তাকিয়ে রইলো সভ্যের দিকে। অপলক। দেখতে দেখতেই তার মনে খেয়াল এলো, “বাসায় তো ঠিকই সাধারণভাবে ঘুরাফেরা করে। এখানে এত পরিপাটি হয়ে এলো কোন দুঃখে এই অসভ্যটা? কোনো মেয়ে কী কাজ করে নাকি ওর সাথে? মেয়েটার জন্য সেজে আসছে না’কি? আরে ইনু কী ভাবছিস এসব? থাকলেও তোর কী? তোদের বিয়ে তো আসল না। দুইবছরের জন্য কেবল।” নিজের এমন অদ্ভুত চিন্তায় নিজের কপালে মারে সে। আবার ভাবে, “দুই দিনের হোক বা দুইবছরের আপাতত তো আমারই স্বামী। অন্যমেয়ের দিকে নজর দিলে লোকটার হাত পা ভাঙার অধিকার তো আমার আছে। একবারে হাত পা ভেঙে দিব।”

সভ্য কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে গভীর নিশ্বাস ফেলে চেয়ারে মাথা ঠেকায়। মুহূর্তে আবার মাথা উঠিয়ে ভালো করে দেখে ইনারাকে। অবাক হয়ে বলে, “তুমি কখন এলে?”
ইনারা চমকে উঠে। হঠাৎ এভাবে ডাকায় লাফিয়ে উঠে তার ভাবনার শেষ কথাটা বলে ফেলে, “একবারে হাত পা ভেঙে দিব।”
“হোয়াট?” অবাক হয়ে বলে সভ্য, “আমি তোমাকে কি করলাম? আর তুমি এসেছ জানাও নি কেন?”
সভ্য উঠে এগোয় ইনারার দিকে।

কথাটা বলে ইনারা নিজেই লজ্জিত হয়ে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা সভ্যকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। সে উঠে সভ্যের দিকে এগিয়ে এসে বলে, “আপনি বলছেন কখন এলাম? আপনি নিজেই তো বাইরে দাঁড়ানো এক লোককে বললেন ভেতরে ঢুকে কোনো কথা না বলতে। এখন আবার জিজ্ঞেস করে জানি নি কেন? বলি কি না কথা বলতে হলে ডাকলেন কেন?” ইনারা সভ্যের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে বলে।

সভ্য বাঁকা হাসে। ইনারা অবাক হয়, “আপনাকে বকছি আর আপনি হাসছেন? কী অসভ্যরে বাবা!”
সভ্য ইনারার বাহু ধরে তাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। তাকে নিজের কোলে বসিয়ে তার কোমরে হাত জোড়া আবদ্ধ করে।
ইনারা আঁতকে উঠল, “এটা কোন ধরনের বেয়াদবি। ছাড়ুন নাহয় চিল্লাচিল্লি করব আমি।”
“করো। এখানে আমার ছাড়া কারও চলে না। চিল্লিয়ে তুমিই লজ্জা পাবা।”
“মাইর দিব আপনাকে।”
“দেও, কে মানা করেছে? গাল পেতে দিলাম দেও।”
“উফফ বিরক্ত করেন না তো। ছাড়ুন।”
“আগে বলো সেদিনের পর থেকে আমার সামনে আসো নি কেন? এক ঘরে থেকেও তোমাকে ঠিকভাবে দেখি নি। দেখা হলেও দৌড় দেও। লজ্জা পাও না-কি? চুমুটা হৃদয়ে আঘাত করেছে তোমার?”

লজ্জায় লাল হয়ে গেল ইনারা। সভ্যর কাঁধে একের পর এক মারতে থাকে এবং বলে, “আপনার সামনে আসলে কখন কি করে ফেলেন কে জানে? তাই পালিয়ে গেছি?”
“বাহ বাঘিনীও ভয় পায়, আজ জানলাম। আচ্ছা ছেড়ে দিব। মিষ্টি করে বলো।”
“পারবো না।”
“সোজা বললেই তো হয় যে তোমার এভাবে থাকতে ভালো লাগছে।”
ইনারা বিরক্ত হয়, “আচ্ছা বলছি।”
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকায় সভ্যের দিকে। মুখটা কোমল করে। নম্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “প্লিজ, ছাড়ুন না।”

সভ্য চোখ বন্ধ করে নেয়। তার বুকের ভেতর যেন এক তীর এসে লেগেছে। সে মনে মনে বলে, “এভাবে কেই বলে প্রণয়ী। এভাবে বললে তো যেকোনো পুরুষ তার জীবন দিয়ে দিবে।”
ইনারাকে ছাড়তেই সে উঠে দাঁড়িয়ে বকা দেয় সভ্যকে “অসভ্য, বেয়াদব, ফাজিল। আপনার সাহস কত এভাবে আমাকে ধরেন?”

“মুহূর্তে আসল রূপ বেরিয়ে আসলো। আচ্ছা শুনো তুমি এখানে বসো আমি তোমাকে ল্যাপটপে কিছু দেখাচ্ছি।” সভ্য দাঁড়িয়ে বলে।
“আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আবার কিছু করে ফেললে?”
“কিছু করব না, প্রমিজ।”
ইনারা সভ্যের চেয়ার বসে। সভ্য ল্যাপটপের ফোল্ডার পরিবর্তন করে। কয়েকটি ছবি আনে। এর মধ্যে একটি ছবি দেখায়। ছবিতে মোট সাতজন আছে। এর মধ্যে একজন হলো সভ্য। বাকি ছয়জনকে সে চিনল না। সভ্য ছবিটা জুম করল। সোফাতে বসা একটি বয়স্ক লোক। তার দাঁড়ি, চুল সব পাকা। কোট প্যান্ট পড়ে আছেন। হাতে একটি কারুকাজ করা লাঠি। মুখটা গম্ভীর। তাকে দেখিয়ে সভ্য বলল, “এটা আমার দাদাজান। এই কোম্পানির মালিক। তাকে সকলে ভয় পায়।”
“কেন?”
“কারণ তিনি রাগী।”
“বলেন কি! কি কিউট দেখতে।”
“জীবনে আমাকে তো এ কথা বললে না কিন্তু আমার দাদাকে…। থাক বাদ দিলাম। তার পাশে বসা আমার দাদীজান।” দাদাজানের পাশে বসা শাড়ি পরা বয়স্ক মহিলাটি দিকে জুম করে সভ্য। আরও বলে, “উনিও রাগী। কিন্তু আমাদের প্রতি না। বিশেস করে আমাকে অনেক আদর করে। দাদাজান এই পৃথিবীতে কেবল তাকেই ভয় পায়। আর অনেক ভালোওবাসে।”
“ওহ কি কিউট।”

সভ্য মুখ বানায়। বিড়বিড় করে বলে, “আমি ছাড়া এই মেয়ের কাছে পৃথিবীর সব কিছুই কিউট লাগে।”
বিরক্ত হয়ে সামনের সবাইকে পরিচয় করায়, “দাদীজানের পাশে দাঁড়ানো আমার মা ও বাবা। আমার বাবা মাকে ছাড়া কিছু বুঝেনা। অনেক ভালোবাসে তাকে। আর আমার মায়ের জন্য তার পরিবারই তার প্রাণ। পৃথিবীতে সবচেয়ে সুইট আমার মা।”
ইনারা দুইজনকে দেখে বলল, “দুইজনেই এত সুন্দর। নো ওয়ান্ডার আপনি এত হ্যান্ডসা….” সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার আগেই চুপ করে যায় ইনারা। জিহ্বায় দাঁত দিয়ে কামড় দেয়। সভ্য চেয়ারটা তার দিকে ঘুরিয়ে সেদিকে ঝুঁকে বলে, “কী বললে তুমি? আমি এত কী?”

ইনারার পিছনে হেলান দিতে থাকে। কথাটা ঘুরানোর জন্য জিজ্ঞেস করে, “আপনার ভাই ছবিতে নেই কেন?”
সভ্য ইনারার দিক থেকে নজর সরায় না। ধীরে ধীরে তার কাছে আসতে থাকে। এবং বলে, “সে বিজি ছিলো।”
ইনারা আড়চোখে আরেকবার ভালো করে পরিবারের ছবিটা দেখে নেয়, “আর আপনার দাদাজানের পাশের দুইজন কে?”

সভ্য থেমে যায়। ছবির দিক তাকিয়ে বলে, “উনারা আমার ফুপি এবং তার মেয়ে। মানে আমার কাজিন।”
“আর আপনার কাজিন আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?”
সভ্য জোরপূর্বক হাসে। সরে যেতে নিলেই ইনারা তার কলার ধরে নিজের সামনে এনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, “আপনার ভঙ্গি আর হাসি কোনোটাই সুবিধাজনক লাগছে না। মেয়েটার আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার বিশেষ কারণ?”
“নেই তো।”
“হঠাৎ তাহলে ওর কথায় আসলে সরলেন কেন?”
“তাহলে তুমি চাও আমি তোমার কাছে আসি?”
“কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবেন না খবরদার।”
সভ্য আবার কাছে আসতে থাকে ইনারার, “কেন? তুমি জ্বলাস ফিল করছ?”

ইনারা সভ্যের কলার ছেড়ে দেয়। ভেংচি কেটে বলে, “আপনার জন্য আমি জ্বেলাস ফিল করব কোন দুঃখে?”
সভ্য চেয়ারে হাত রেখে ইনারার একবারে কাছে চলে যায়। জিজ্ঞেস করে, “তাহলে তোমার নাকের ডগায় লাল কি বসে আছে? তুমি জানো রাগ করলে তোমার গাল ও নাক লাল হয়ে আছে। কিউট লাগে তোমায়।”
ইনারা একপলক সভ্যের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। তার গাল আরও লাল হয়ে আসে। সভ্য তার চিবুকে হাত রেখে মুখ তুলে। মৃদুস্বরে বলে, “লজ্জা পেলে মারাত্মক সুন্দর দেখায় তোমায়।”
বলে ইনারার দিকে ঝুঁকে। তার ঠোঁটে চুমু খাবে বলে।

ইনারা চায় তাকে আটকাতে। তার মস্তিষ্ক বারবার বাঁধা দেয়। কিন্তু হয়তো মনের বশে সে স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়৷ ঠোঁটে সভ্যের ঠোঁটের খানিকটা ছোঁয়া পেতেই কারও কন্ঠ শুনে চমকে উঠে সে। সাথে সভ্যও। দুইজনে সরে যায়। ইনারা চকিতে তাকায় দরজার দিকে। সামি দাঁড়ানো। সে চোখদুটো গোল গোল করে তাকিয়ে আছে দুইজনের দিকে। তারপর নিজের চুলে হাত বুলিয়ে হতবাক গলায় বলল, “ভুল সময় এলাম না’কি?”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here