অনুভবে (২য় খন্ড) পর্ব ১৩

0
1252

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ১৩
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

সামি দাঁড়ানো। সে চোখদুটো গোল গোল করে তাকিয়ে আছে দুইজনের দিকে। তারপর নিজের চুলে হাত বুলিয়ে হতবাক গলায় বলল, “ভুল সময় এলাম না’কি?”

সভ্য ও ইনারা দুইজনে লজ্জায় একে অপরের দিকেও তাকাচ্ছে না। কেবল এক বেমানান অবস্থা! ইনারার তো লজ্জায় এখনই কোথাও লুকিয়ে যেতে মন চাইছে। কোনো ভূত ধরেছিল তাকে যে সে এমন করতে গিয়েছে।

সভ্য মেজাজ খারাপ করে সামিকে বলে,”তুই নক করে ভেতরে ঢুকবি না?”
“আরে আমি কী জানতাম না’কি যে ইনারা…আই মিন ভাবি আছে রুমে। জানলে তো নক করেই আসতাম। এছাড়া আমি কি জানতাম না’কি যে তোরা অফিসে এমন রোমেন্স শুরু করে দিবি। আর তুই বলবি না ভাবি আসছে। ভাবির জন্য বিয়ের কোনো গিফট নিয়ে আসতাম।”
সে আবার ইনারার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, “তো ভাবি কেমন আছেন?”

ইনারার মনে পড়ে অতীতের কথা। সে যখন সামির সাথে কথা বলতে যায় তখন সামি তার সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলো। ব্যাপারটা ভুলে নি সে। সামির সাথে তার এক ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। তার জীবনে খুব কম মানুষকেই সে গুরুত্বপূর্ণ রেখেছিল। সামি ছিলো তার মধ্যে একজন। তাই তার এমন খারাপ ব্যবহারে খুব কষ্ট পায় সে। এমনিতেই তখন ছিলো সভ্যকে হারানোর দুশ্চিন্তা, এর উপর সামির এমন ব্যবহার তার অশান্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলো। তাই এত সহজে সামির ব্যবহার ভুলতে পারে নি সে।

সে আশেপাশে তাকিয়ে সামিকে বলে, “আমাকে বলছেন? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমার সাথে আর কথা-ই বলতে চান না।”
সামি জোরপূর্বক হাসে, “আরে পার্টনার তা তো অতীত ছিলো। অতীতের কথা এত মনে রাখতে নেই।”
ইনারা ভেংচি কেটে বলে, “আমি মনে রাখি।”
সামি সভ্যের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, “ভাবি আমার জন্য না হলেও আপনার স্বামীর জন্য ভুলে যান।”
ইনারা সভ্যের দিকে তাকায়। তারপর মুখ বানিয়ে বলে, “এখন তো আরও ভুলব না।”
সামি সভ্যকে একপাশে সরিয়ে নিজে ইনারার সামনে এসে তার গাল টেনে বলে, “ভাবি গো… ও আমার সুইট ভাবি এভাবে নিজের দেবরের সাথে রাগ করে থাকতে নেই।”
ইনারা সামির হাতে মেরে বলে, “তোমাকে না বলছিলাম আমার গাল টানবে না। আমি বাচ্চা না’কি?”
সামি হতাশার সুরে বলে, “তোমার গুলুমুলু গালটা শুকায় গেছে। টেনে মজা পেলাম না। ভাবি মাফ করে দেও না, প্লিজ।”
সভ্য সামনের চেয়ারে পা’য়ের উপর পা তুলে বসে। আর দুইজনের কান্ড দেখে হাসে সে।

“আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে, মাফ করলাম।” ভাব নিয়ে বলে ইনারা। আরও যোগ করে, “কিন্তু ভাবি হবে ডাকবা না। আমি তোমার কোন ভাবি টাবি নই।”
“সভ্য আমার ভাইয়ের মতো। ও তোমার বর। এ সম্পর্কে তো তুমি আমার ভাবি।”
“এই অসভ্য আমার বর না।”
“দুইজনের বিয়ে হলো না প্রায় একমাস আগে?”
“ওটা আসল না।”
“তাহলে দুইজনে এইমাত্র কী করছিলে?”
এ প্রশ্ন শুনে ইনারা হতভম্ব হয়ে গেল। লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে সভ্য কে জিজ্ঞেস করে, “এখানে আমার কাজ শেষ না? সবাইকে তো দেখালেন?”
সভ্য মাথা নাড়ায়, “সবাইকে দেখালাম।”
“তাহলে আমি যাই।” বলে এক দৌড়ে সোফা থেকে তার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে বাঁচে।

সভ্য শব্দ করে হেসে ফেলে, “তুই আর আসার সময় পেলি না ভাই? ঘরে তো এত কষ্টে সামনে আসে। এখানে একটু রোমেন্স করতে গেলাম আর তুই এসে হাজির।”
“কেন? তুই বলে ওকে ভালোই বাসা ছেড়ে দিয়েছিস।”
“ছেড়ে দিয়েছিলাম তো।”
“হায় মিথ্যুক। তোরা দুটোই একরকম, পাগল। ভালোবেসেও তুই মানতে রাজি না, বিয়েতে থেকেও ও বিয়ে মানতে রাজি না।”
“ওর প্রতি ভালোবাসাটা নেশার মতো। যত দূরে যেতে চাই ততই আসক্ত করে। দূরে থেকে ভালোবাসা থেকে মুক্তি পাই নি। কাছে থেকে কীভাবে পাব?”
“ওর কাছে ভালোবাসার কথাটা স্বীকার করলেই হয়।”
সামির মুখ থেকে কথাটা শুনে মুহূর্তে সভ্যের মুখ কালো হয়ে যায়। তাকে উদাসীন দেখায়, “উঁহু, একদিন ছিলো যখন ওর কাছে নিজের ভালোবাসার কথাটা স্বীকার করতে চেয়েছিলাম। সেদিন জানলাম, ওর মনে অন্যকারো রাজত্ব। সেদিন আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। ভেঙ্গে পড়েছিলাম। আমার হৃদয়ের তুফানে নিজেকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম। তুই তো সাক্ষী ছিলি আমার সে সর্বনাশের দিনের। সেদিনের কথা ভাবতেই আমার বুক কেঁপে উঠে। সে দিনটা আমি আর মনে করতে চাই না। পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। আমি নিজের ভালোবাসা স্বীকার করার পর যদি ও বলে যে ওর মনে….না। আমি সহ্য করতে পারবো না। এখনো দুইবছর সময় আছে। যদি ইনারার হৃদয়ে আমার জন্য জায়গা হয় তাহলে ভালো, নাহয়…”
“নাহয়?” সামি জিজ্ঞেস করে, “নাহয় কী সভ্য?”
“নাহয় ততদিনে ও নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে এবং নিজের দায়িত্ব নিজে সামলাতে পারবে। ওর অধিকার, প্রতিশোধ সবকিছুই এগোবে। ওর লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। তখন ওকে মুক্তি দিয়ে দিব আমি।”
“সভ্য তুই ওকে ভালোবাসিস। পেয়েও এমন কথা কীভাবে ভাবতে পারিস তুই?”
“কারণ আমার কাছে ভালোবাসা মানে বেঁধে রাখা নয়। ভালোবাসা মানে সামনের জনের শান্তি, ওর সুখ। ও সুখে থাকলে আমিও থাকব। ওর সুখ অন্যকারো মাঝে হলেও।”
সামি গভীর নিশ্বাস ফেলে, “তোকে কিছু বলার নেই। আশা করি সে সময় এলে তুই ওকে পেয়ে যাবি। এখন বল তো হঠাৎ করে এখানে কী কাজে ওকে আনলি?”
“এনেছিলাম তো আমার পরিবারের সবাইকে দেখাতে। যদিও আমার বাড়িতে সহজে কেউ আসে না কিন্তু হঠাৎ করে যদি মা এসে একবার ওকে বাড়িতে দেখে ফেলে তখন তো বড় এক সমস্যা হয়ে যাবে। তাই ওকে বলে রাখতাম কখনো কেউ বাসায় এসে পরলে যেন বলে আমরা একে অপরকে ভালোবাসতাম তাই বিয়ে করে নিয়েছি।”
“আর ও যদি জিজ্ঞেস করে এ কথা কেন বলতে হবে? তোর দাদাজানই তো তোদের বিয়ে করিয়েছি। ”
“তাহলে বলব দাদাজান পরিবারের কাওকে জানাতে মানা করেছেন। দাদাজান তো আর কখনো আমার বাসায় আসবেন না যে সত্যিটা জানতে পারবেন। সিম্পল।”
সামি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, “সবাইকে সত্যিটা বলে দিলেই তো সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু না তোর তো লুকোচুরি খেলার শখ জাগছে। খেল। যখন বাঁশ খাবি তখন বুঝবি।”
.
.
আহনাফ আজ জলদিই বাসায় এসে হাজির হয়। তার বাবা ইমাজেন্সিতে ডেকেছে তাকে। তাই সব কাজ ছেড়ে চল এসেছে। বিদেশে পড়াশোনা করার সময় তার মা মারা যায়। তোর জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো সে সময় তার মায়ের কাছে না থাকা। তাই নিজের বাবা এবং বোনের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল সে।

বাসায় ঢুকে দেখে সুরভী তাদের বাসায়। তার বাবা এবং বোন দুজনেই তার সাথে হাসিমুখে গল্প করছে। সে সুরভিকে দেখে অবাক হলেও এটা ঠিকই হতে পারে যে তাকে এখানে আনার কোনো বিশেষ কোনো কারণ নেই। সুরভীর জন্যই তাকে আনা।

তার বোন আরুহী তাকে দেখে বলে ওঠে, “আরে ভাইয়া তুই এসে পড়ছিস? দেখ দেখ কাকে নিয়ে এসেছি। আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম। কাছেই সুরুভি আপুর ভার্সিটি ছিল। সেখান থেকে তাকে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছি। ভালো করেছি না বল?”
“এটা ফোনে স্বাভাবিকভাবে বললেও তো হতো। যেভাবে বলেছিলি মনে হয়েছিল কোন বিপদ এসে পড়েছে। আমার জান আটকে আসছিল। কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে এসেছি, জানিস?”
“বিপদ না আসলেও গুরুত্বপূর্ণ কেউ তো এসেছে। তাই সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই নাম বাবা?”
“একদম।” আহনাফের বাবা উওর দিলেন। সে আরও যোগ করে, “তুই এক কাজ কর, তুই সুরভিকে ঘর ও তোর রুমটা দেখিয়ে আন। আমরা নাস্তা তৈরি করে তোদের ডাকছি।”
সুরভি বাঁধা দেয়, “না না আংকেল কিছু করার প্রয়োজন নেই। আমি কিছু খাব না।”
“কিছু খাবে না মানে?” আরুহি দাঁড়িয়ে বলে, “তোমাকে না খেলে যেতেই দিব না। আর ভাইয়া তুই কি করছিস? তোকে না বাবা বলেছে আপুকে নিয়ে যা। যা জলদি।”
আরুহি একপ্রকার ঠেলে পাঠায় দুইজনকে।

আহনাফ ও সুরভি দুইজনের মাঝেই একপ্রকার অস্বস্তিবোধ কাজ করছিলো। তবুও আহানাফ তার বাবা ও বোনের কথায় সুরভীকে ব্যালকনিতে নিয়ে আসলো। ব্যালকনিটা সবচেয়ে সুন্দর লাগলো সুরভির কাছে। একটি রুমের মতোই। কিন্তু খোলামেলা। ভেতরের দিকে কমলা রঙের সোফা দেওয়া। দেয়ালে আকাশী আর্ট করা। আর সামনের দিকে অনেকগুলো গাছের সবুজালী ভরা। ব্যালকনি থেকে আকাশটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।এত সুন্দর একটা জায়গা দেখে চোখ দুটো বড় হয়ে গেল সুরভীর, “চমৎকার!”
“আপনার পছন্দ হয়েছে?”
সুরভী তাকায় আহনাফের দিকে। মাথা নাড়ায়। তার পছন্দ হয়েছে। সে আরও বলে, “আমরা দোতলায় থাকি তো। চারপাশে বিল্ডিং। মুরগির খাঁচার মতো লাগে।”
আহনাফ হাসে এবং জানায়, “জায়গাটা আমার মা’য়ের শখের ছিলো।”
“আন্টির চয়েজ অনেক সুন্দর। সব অসম্ভব সুন্দর লাগছে।”
দুইজনে সামনা-সামনি সোফায় বসে। আহনাফ বলে, “আমার পরিবার উঠে-পড়ে লেগেছে যেন আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়।”
“কাকে কি বলছেন? আমার কানের পাশে সারাক্ষন এই নিয়ে ঘ্যান-ঘ্যান ঘ্যান-ঘ্যান করতেই থাকে।”
“দেখুন তারাই আমাদের দেখা হোক, কথা হোক এসব চেষ্টা করতেই থাকবে। এর থেকে ভালো আমরা তাদের সামনে প্রিটেন্ড করি যে আমরা একে অপরের প্রতি ইন্টারেস্টেড তাহলে হয়তো তারা আমাদের জ্বালানো বন্ধ করে দিবে। পরে কোনো এক বাহানায় মানা করে দিব।”
“বাপরে আপনি আমার মুখের কথা ছিনিয়ে নিলেন। তারা নিজেদের মতো চেষ্টা করতে থাকুক। এর থেকে ভালো আমরা ফ্রেন্ড হয়ে যাই। কথাও হবে, দেখাও হবে কিন্তু রোমেন্টিক কিছু আসবে না। আর আমাদের পরিবারও খুশি থাকবে। ফ্রেন্ডস?”
সুরভি হাত বাড়ায় আহনাফের দিকে।
আহনাফ হাতের দিকে তাকিয়ে বলে, “কেবল এই শর্তে যে একে অপরের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাটাঘাটি করব না।”
“কার জীবনে কি চলছে এতে আমার কিছু আসে যায় না।”
আহনাফ হাত মেলায় সুরভির সাথে, “তাহলে ফ্রেন্ড হওয়াই যায়।”

আরুহি দুইজনের জন্য চা নিয়ে ব্যলকনিতে ঢুকছিল।রুমে ঢুকে দুইজনকে হাত মিলাতে দেখে বলল, “ওহ-হো ভাই একটু আগে তো ঠিকই রাগ করছিলি এখন হাত ধরা হচ্ছে? ভালোই তাও।”
দুইজনে সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিলো। সুরভির মনে হলো চা’য়ের কাপটা হাতে পেয়ে ভালোই হলো। এখানে বসে এত সুন্দর জায়গা দেখতে দেখতে চা’য়ের চুমুক দেওয়া যাবে। বেশি কথা বলতে হবে না।
.
.
ইনারা মনের সুখে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিল এবং স্ক্রিপ্ট পড়ছিলো দোলনায় বসে। সভ্যও সবে অফিস থেকে বাসায় এসে পৌঁছাল। সে ইনারাকে দেখে আর বাসার ভেতরে না ঢুকে ওর কাছে যায়। দেখে ইনারা তার পড়ায় ধ্যানমগ্ন। সে চুপিচুপি ইনারার পাশে বসেই তার এককান থেকে হেডফোন খুলে নিজের কানে লাগায়।

ইনারা চমকে উঠে। চকিতে তাকায় সভ্যের দিকে, “এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি। আপনি আমার পাশে এসে বসলেন কেন? আর হেডফোন নিলেন কেন আমার?”
“হামকো মিলি হে আজ ইয়ে ঘাড়িয়া নাসিব সে
জী ভারকে দেখ লিজিয়ে হামকো কারিব সে,
ফির আপকে নাসিব ইয়ে বাত হো না হো
সায়েদ ফির ইস জানাম মে মুলাকাত হো না হো…..”
সভ্য হেডফোনে বাজা গানটি খালি গলায় গাইবার চেষ্টা করল। তারপর নিজেই হাসলো, “হিন্দি গান গাইবার অভ্যাস নেই। কিন্তু গানটা অনেক সুন্দর। তোমার পছন্দের।”
সে ইনারার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায় আছে। পলকও ফেলছে না। সে ইনারার মুখের সামনে চুটকি বাজাতেই নড়ে উঠে ইনারা। তার ধ্যান ভাঙে। সে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কী বলছিলেন?”
“এই গানটা পছন্দের তোমার?”
“ছোটবেলায় দেখতাম মা অনেক শুনে। আজ হঠাৎ করে মনে পড়ল গানটার কথা।”
“আর এভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন আমার দিকে?”
ইনারা উওর দেয় না। কিন্তু তার গালদুটো লালচে হয়ে আসে। সভ্য তার দিকে ঝুঁকে গালে আলতো করে ছুঁয়ে বলল, “লজ্জার লালিমায় রঙে যাচ্ছো তুমি?”
“না- নাতো।” ইনারা আবার সভ্যের দিকে তাকিয়ে তাকে ঠেলে বলে,”আর আপনি এখানে কি করছেন? বলেছিলাম না আমার দোলনায় বসবেন না। আর আমার পাশে বসেছেন কেন?”
সভ্য ইনারার কোমর ধরে তাকে কাছে টানতেই শিউরে উঠে ইনারা। সভ্য তার কাছে মুখ এনে বলে, “আমার কাছে আসায় এত সমস্যা হলে আজ তাহলে বাঁধা দেও নি কেন?”

ইনারা শিউরে ওঠে। লজ্জায় ডুবে যায়। চোখ উঠায় না। কাঁচুমাচু করে বলে, “আপনাকে গান গাইবার সময় অনেক আকর্ষণীয় দেখায়।”
সভ্য ইনারার চিবুক ধরে মুখ তুলে, “তাই?”
ইনারার লজ্জা আরও বাড়ে। কিন্তু সে নিজের মাঝে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে সভ্যকে সরিয়ে হাতের স্ক্রিপ্ট দিয়ে মেরে বলে, “শান্তি মতো পড়তে দিয়েন না আমাকে। পড়ে একটু অডিশনের জন্য প্রস্তুতি নিব তা না। এসেছেন জ্বালাতে। আপনি বসে থাকেন এখানে। আমি যাই।”
উঠে যাবার আগেই সভ্য তার হাত ধরে নেয়, “এখানে বসো। তুমি পড়ো, আমি গান শুনাচ্ছি।”
“জ্বালাবেন না তো?”
“না, প্রমিজ।”
ইনারা এসে বসলো।

সভ্য খালি গলাতেই গান ধরে। সে রাতে আর ইনারার স্ক্রিপ্ট পড়া হলো না। স্ক্রিপ্টে থাকা চোখজোড়া বারবার যে সভ্য দেখার জন্য তৃষ্ণার্ত। তার চোখজোড়া বারবার যেয়ে আটকায় সে সভ্যের দিকেই। ক্ষণিকের জন্য কেন সারাজীবনের জন্যও সে সভ্যকে দেখতে দেখতে হারিয়ে যেতে পারে।
.
.
আজ অডিশন দিতে এসেছে ইনারা। আজ সে একটি লেভেন্ডার রঙের ড্রেস পড়েছে। গাড়ি থেকে নামতেই চোখে সানগ্লাস পরে নেয় সে। একটি বডিগার্ড জোর করে সাথে পাঠিয়েছে সভ্য। ইনারা এজেন্সির ভেতরে ঢোকার সময় সকল দৃষ্টি তার উপরই আটকে ছিলো। পথের এমন একজন মানুষ ছিলো না যে মুখ ফিরিয়ে তার দিকে তাকায় নি। তার ফোন আসে। সভ্যের ফোন।
“হ্যালো মেডাম, কী খবর? নার্ভাস?” সভ্য জিজ্ঞেস করে।
“নার্ভাস হবার জন্য এই দিনের অপেক্ষা তো আমি করি নি। আর এত বছর এক্টিং ক্লাসও করি নি। আমার নিজের উপর সম্পূর্ণ ভরসা আছে। এই চরিত্রটা আমিই পাব।”
“তোমার চিন্তা তো করছি না। করছি তাদের যারা তোমার সাথে কাজ করবে। তাদের জন্য আফসোস হচ্ছে।”
সভ্যের কথার ভঙ্গি দেখে ইনারার হাসি আসলো। কিন্তু সে হাসলো না। এখানে তার গম্ভীর ভাব নিয়ে থাকতে হবে। সে বলল, “আপনি এত কাজ ছেড়ে আমার সাথে গল্প করার জন্য ফোন দিয়েছেন? কত স্টক ডুবে যাবে ভাবুন একবার। লোকসান হলে কী করবেন?”
“আমার বউ বেশি না টাকা বেশি?”
“যখন আপনার দাদাজান লোকসান দেখে বকবে তখন বলেন আমার সাথে গল্প করছিলেন।”
“এই বাবারে ভালো কথা বলেছ তো। তাহলে আমি রাখি।”
“এত ভয় পান আপনার দাদাজানকে? বাহ!”
কথা বলতে বলতে সামনে নজর যায় না ইনারার। সে কারও সাথে ধাক্কা খেয়ে তার হাতের ফোন ও চোখে পরা সানগ্লাস দুটোই পরে যায়। ইনারা বিরক্ত হয়ে বলে, “দেখে চলতে পারেন না?”
সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে জোহান দাঁড়ানো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here