অনুভবে (২য় খন্ড) পর্ব ৩০

0
1300

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৩০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

দরজা খুলতেই ইনারা বামদিকে ঝুঁকে একগাল হেসে বলে, “আপনি কি আমাকে মিস করেছেন?”
ইনারাকে দেখে সভ্য অবাক হওয়ার থেকে বেশি বিরক্ত হয়। সে কঠিন মুখের ভঙিতেই তাকায় ইনারার দিকে।
ইনারা জোরপূর্বক হাসে, “আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন যে? বেশি রেগে আছেন?”

সভ্য উওর দেয় না। সে বিরক্তির ভঙ্গিতে ফিরে যায় ভেতরে। বেড রুমে যেয়ে আবারও ল্যাপটপে নিজের কাজ করতে বসে।
ইনারাও তার পিছু পিছু যায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে মিষ্টি গলায় বলে, “আমি আপনার ফেভারিট রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনেছি। আজ আমরা একসাথে খাই?”
সভ্য তার দিকে তাকায় না। কেবল উঠে আলমিরা থেকে একটি খাম বের করে ইনারাকে দেয়।
ইনারা খামটা উল্টেপাল্টে দেখে জিজ্ঞেস করে, “এটা কী?”
“ডিভোর্স পেপার।”
ইনারা চকিতে তাকায় সভ্যের দিকে, “কী!”
“এত অবাক হওয়ার কী আছে? তুমিই তো বলেছিলে তুমি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাও। তো তোমার মুক্তির কাগজ এখানে।”
“আমি তো রাগের মাথায় বলে ফেলেছিলাম তাই বলে আপনি সিরিয়াসলি ডিভোর্স পেপার তৈরি করাবেন? দেখুন আই এম সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি হঠাৎ ঐশির সাথে দেখে ভেবেছিলাম আপনাদের মধ্যে কিছু… দেখুন আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। সামি আমায় সব বলেছে। ঐশি আপনাকে বিয়ের কার্ড দিতে এসেছিল।”
“ও তাহলে এ কারণেই ফিরে আসা হয়েছে তোমার। ডিভোর্স পেপারে সাইন করো আর যাও।”
ইনারা সাথে সাথে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে, “আমি কোথাও যাব না। এখানেই থাকব। এই রুমেই থাকব। এটা আমার বাড়ি।”
সভ্য বিরক্ত হয়ে তার ল্যাপটপ নিয়ে অন্যরুমে যাবার পূর্বেই ইনারা তার সামনে এসে দাঁড়ায়। কান ধরে বলে, “সরি তো। ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না।”
সভ্য তাকে উপেক্ষা করে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে সে আবারও সামনে এসে দাঁড়ায়, “এমন করছেন কেন আপনি? ভুল তো মানুষেরই হয় তাই না? আপনার বুঝি কখনো ভুল হয় না?”
“হয়। আমারও ভুল হয়। তাই বলে আমি অপরপক্ষের কথা না শুনে কারও চরিত্রহীন হবার সার্টিফিকেট দেই না। সিদ্ধান্ত নেবার আগে অপর পক্ষের কথাও শোনা উচিত।”
“তাহলে আপনি যখন চারবছর পূর্বে জোহানের কথা শুনে এই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তখন আমার কথা শুনেন নি কেন?”
সভ্য কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “কোন বিষয়ে কথা বলছ?”
“সামি আমাকে সব বলেছে। আপনি আমাকে প্রাপোজ করতেন কিন্তু জোহানের কথায় আপনি মেনে নিয়েছিলেন আমাদের দুইজনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এই নিয়ে আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজনবোধ করেছেন আপনি?”
কথাটা শুনে সভ্য রেগে যায়, “সামিকে আমি মানা করেছিলাম কথাটা বলতে কিন্তু ও…” সে গভীর নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে ইনারাকে বলে, “ও যা বলেছে সব ভুলে যাও।”
“ভুলে যাব যে আপনি আমাকে ভালোবাসতেন?”
“হ্যাঁ, ভুলে যাও। আর আমার রাস্তা ছাড়ো।” কঠিন ভাষায় বলল সভ্য। সে ইনারাকে সরিয়ে অন্যরুমে চলে যায়।

ইনারা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। সে বুঝতেই পারে না কি করবে। চিন্তিত হয়ে পায়চারি করতে শুরু করে সারা রুমে। চিন্তা করে কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে কল দেয় সুরভিকে। প্রথমে ব্যস্ত পাওয়ায় আবারও চেষ্টা করে। কল ধরতেই সে ঝারি দেয় সুরভিকে, “এখানে আমি চিন্তায় মরতেছি তুই কার সাথে এত গল্প করিস?”
“আহনাফের সাথে কথা বলছিলাম।”
“আমি এখানে বাঁশ খাচ্ছি আর তুই সেখানে প্রেম করতেছিস? লজ্জা লাগে না?”
“তো দোষ করছ তুমি বাঁশটা খাবে কে? এই তিনদিন কত করে বললাম যেয়ে দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলতে। শুনেছিলি?”
ইনারা বিছানায় বসে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলে, “এবার কি করব তা তো বল। আমার তো কিছুই মাথায় আসছে না। এসব ব্যাপারে আমি একটু কমই বুঝি জানিস তো। কারও ব্যান্ড বাজাতে হলে এতক্ষণে হাজারটা বুদ্ধি একসাথে এসে পড়তো কিন্তু এখানে তো আমারই ব্যান্ড বেজে আছে।”
“আরও কর ঝগড়া। কতবার বলছি রাগ হলে চুপ থাকবি। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমার কথার তো পাত্তাই নেই।”
“আরে মা হইসে তো, এবার বল তো কি করব। কি করে জনাবের অভিমান ভাঙাবো।”
“এক কাজ কর, ভাইয়ার পছন্দের রঙের ড্রেস পর, দুই মগ কফি বানিয়ে ভাইয়ার কাছে যা। আর তোর রেডিও স্টার্ট কর। তোর থেকে বিরক্ত হয়ে ভাইয়া তোকে মাফ করেই দিবে।”
“তুই আমাকে রেডিও বলসোস কেন? আমি কী বেশি কথা বলি?”
“ভাই তুই দুলাভাইয়ের রাগ ভাঙাতে চাস না?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে যা। কেন এখানে বসে আমার মাথা খাইতেছিস?”
“আচ্ছা একটা লাস্ট হেল্প কর।”
“বল।”
“কফি কীভাবে বানায়?”
সুরভি তার কপালে মেরে বলল, “তোকে আমি ব্লাকহোলে
পাঠায় দিব একদিন দেখিস। আমার তেরো বছরের কাজিনও কফি বানাতে জানে। আর তুই বিবাহিত মাইয়া কফি বানাতে পারিস না।”
“আরে মজারটা তো বানাতে পারি। কিন্তু উনি তো খায় কড়াটা। যেটা খেলে বমি আসে ওটা।”
“আচ্ছা তুই রান্নাঘরে যেয়ে আমাকে কল দিস মা।”
.
.
ইনারা গুটিগুটি পায়ে রুমে ঢুকল দুইকাপ কফির মগ নিয়ে। তার অস্থির লাগছে খুব। ভয় করছে। সে সভ্যের দিকে তাকাল। সভ্য ফাইলে কিছু কাজ করছে। ইনারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার সামনে যেয়ে দাঁড়াল, “দেখুন আমি কি এনেছি।”
সভ্য তার দিকে তাকাল না। সে বসে কফির মগগুলো পাশের সাইড বক্সের উপর রেখে বলে, “আপনি কি সত্যি আমার সাথে কথা বলবেন না? আমি জানি আমার ভুল হয়েছে। প্রয়োজনে শাস্তি দিন তবুও এভাবে অবহেলা করবেন না প্লিজ।”
সভ্য অপ্রভিত হয়। সে বিরক্ত হয়ে উঠে সেখান থেকে যেতে নিলেই ইনারা তার কাঁধের দুইপাশে হাত রেখে রাস্তা আটকায়। মুখ ফুলিয়ে বলে, “আমি কিছু বলছি।”
সভ্য সরু দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে, “দেখো ইনারা তুমি এখানে থাকলে থাকো। কিন্তু আমার সাথে কথা বলার বা আমার কাছে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। পরে আবার বলবে আমি তোমার কাছে আসার জন্য তোমাকে ঘরে রেখেছি।”
“আপনি এভাবে বলবেন না প্লিজ। আমার কষ্ট লাগছে। আপনি আমার উপর রেগে থাকলে বকা দিন, থাপ্পড় দিন তবুও মাফ করে দিন।” ইনারা সভ্যের হাত ধরে নিজের গালে মারতে নিতে চায়। কিন্তু সভ্য বিরক্ত নিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। উঠে যায় সেখান থেকে। বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে বেরোতে নেবার সময় এক মুহূর্তের জন্য থেমে যাগ। পিছনে তাকিয়ে দেখে ইনারা তার গালে হাত মুছছে। কাঁদছে মেয়েটা? তার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে। প্রচন্ড রকমের ব্যাথার অনুভূতি হয়।
কিন্তু সে ফিরে যায় না। শব্দ করে দরজা লাগিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। দরজার ওপাড়ে দাঁড়ায়। চোখ বন্ধ করে নিজের বুকের বা পাশে হাত রাখে। মেয়েটার চোখের পানিতে কখনো তার বুক কাঁপছে।
.
.
“ইনারা আগামীকালও তোমার এক্সট্রা সিফট আছে। তোমার এবং ওয়াসিনের গানের সিনও স্যুট বাকি আছে।” আজমল সাহেব বললেন। তারা এখন শুটিং এর কাজে ব্যস্ত। ইনারা যে তিনদিন ছুটিতে ছিলো সেদিনের সিনগুলো আবার স্যুট করা হচ্ছে।
“ঠিকাছে স্যার। আপনার শুটিং এর ভিশনটা অনেক সুন্দর। বিশেষ করে কাপল সিনগুলো। আচ্ছা স্যার আপনার কাছে একটা কথা জিজ্ঞেস করি? ভালোবাসার মানুষ আপনার উপর রেগে থাকলে বা অভিমান করলে তাকে কীভাবে মানাতে হয়?”
আজমল সাহেব হাসেন, “এমন কাওকে জিজ্ঞেস করছ যে কখনো বিয়েই করে নি?”
“আপনি তো এত আইকোনিক রোমেন্টিক মুভি বানিয়েছেন তাহলে আপনি কেন বিয়ে করেন নি? কখনো কাওকে ভালোবাসেন নি?”
তিনি গভীর নিশ্বাস ফেললেন, “জানো যারা ভালোবাসে তারা ভালোবাসার গল্প সুন্দর করে বানাতে পারে। কিন্তু যাদের গল্পটা বিচ্ছেদের তারা আরও সুন্দর ভালোবাসার গল্প বানাতে পারে। কারণ তারা সে গল্পগুলোতে নিজেকে এবং নিজের ভালোবাসার মানুষকে দেখতে পায়।”
“আপনি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পান নি?”
আজমল সাহেব মাথা নাড়ায়, “উঁহু, তার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেছে। আমার চোখের সামনেই।”
“আর কখনো কাওকে ভালোবাসার চেষ্টা করেন নি?”
“ভালোবাসা জিনিসটা যত দেখায় ততটা সুন্দর না বুঝলে?” দীর্ঘশ্বাস ফেলে আজমল সাহেব। পা’য়ের উপর পা তুলে বলেন, “এই ভালোবাসা জিনিসটা আমায় ভেঙে দিয়েছে ভেতর থেকে। নিজেকে, নিজের ক্যারিয়ারকে প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম এই ভালোবাসাকে হারিয়ে। কিন্তু যা হারিয়েছি তা তো আর পাবার নয়। যেদিন এই জ্ঞান এলো সেদিন প্রতিজ্ঞা করলাম আর কখনো কাওকে ভালোবাসবো না। আর কেবল আমার কথা নয়। আমার খুব কাছের একজনকে শেষ হতে দেখেছি এই ভালোবাসার জন্য। এরপর থেকে আর ভালোবাসার ইচ্ছা নেই। এই ভালোবাসা মানুষকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।”

ইনারা আজমল সাহেবকে প্রথম এত উদাস দেখে। তার কথা শুনে ইনারার মনে পড়ে যায় সভ্যের কথা। সে বলে, “সকলের ভালোবাসা তো এক হয় না স্যার। অনেকে তাদের সব হারায় তার ভালোবাসার মানুষের স্বপ্ন পূরণের জন্য।”
“তাই?” আজমল সাহেব হাসলেন, “তাহলে বলব তারা ভাগ্য নিয়ে এসেছে।”
তাদের কথোপকথনের মাঝেই ইনারার ফোনে একটি মেসেজ আসে। যে লোকটাকে সে আইজার পিছনে লাগিয়েছিল তার মেসেজ। একটি উকিলের অফিসের ঠিকানা দেওয়া। এরপর আরেকটি সিন স্যুট হয় তার। স্যুট শেষ হবার পর সে এসে দেখে তার ফোনে কয়েকটা মিসকল এসেছে। আইজার কল। দেখার পরপরই সে দেখতে পায় আইজা আবারও তাকে কল দিচ্ছে। সে কলটা ধরল, “কী চাই?” সরাসরি প্রশ্ন ইনারার।
ফোনের ওপাশ থেকে আইজা বলে, “আমার আর তিনদিন সময় লাগবে। তারপর বাড়িটা তুই পেয়ে যাবি। কিন্তু এতে তোমার এমন দেখাতে হবে যে বাড়িটা তুমিই নিয়েছ। আমার নাম যেন না আসে এতে। মামা যেন কিছুতেই না জানে বাড়িটা আমি তোমাকে দিয়েছি।”
“কেন?”
“কেন মানে কি? তুই তর কাজে মতলব রাখো।”
“আওয়াজ নিচে। আমার সাথে এভাবে কথা বললে কিন্তু ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে আপনার।”
“সরি।” নরম কন্ঠে বলল আইজা, “তোমার কাজ হয়ে যাবে। কেবল তুমি নিজের কথা মনে রেখো।”
“একদম চিন্তা করবেন না। আমার নিজের দেওয়া কথা ভালো করে মনে আছে।”
“আচ্ছা তাহলে ফোন রাখি।”
আইজা কল কেটে দেয়। ইনারা কান থেকে ফোন নামিয়ে হাসে। সে ভিডিওতে যেয়ে তা আপলোড দিয়ে দেয়। এবং বলে, “আমি বলেছিলাম এক সাপ্তাহ পরে কিছু করব না। তাই আগে করে ফেললাম। প্যাক আপ হয়ে গেল। একটু নিজের স্বামীর অফিসে যেয়ে দেখা করে আসি। তার রাগও তো ভাঙাতে হবে।”
.
.
ইনারা শুটিং শেষে আবার যায় অফিসে। দরজা খুলে ভেতরে যাবার পূর্বে একটি বডিগার্ড আটকায় তাকে। ইনারা জিজ্ঞেস করে, “আপনি তো আমাকে আগে কখনো আটকান নি।”
“বাট ম্যাম গতবার যা হয়েছে…”
ইনারা তার কথা সম্পন্ন হবার আগেই বলে, “তা এবার হবে না। চিন্তা করেন না। যেতে দিন।”
যেহেতু ইনারার অনুমতি নেবার প্রয়োজন নেই বলাই হয়েছে তাই বডিগার্ড তাকে যেতে দেয়।

ইনারা ভিতরে যেয়ে দেখে সভ্য একটি মেয়ের সাথে একটি ফাইল নিয়ে আলোচনা করছে। মেয়েটি আনিকা। সেলস ডিপার্টমেন্টের হেড।
দরজা খোলার শব্দ শুনে দুইজনে চোখ তুলে তাকাল। মেয়েটিকে সভ্যের এত কাছে বসা দেখে ইনারা মাথায় রক্ত উঠে গেল। কিন্তু সে গতবারের কথা মাথায় রেখে নিজেকে সামলে নেয় এবং জোরপূর্বক হেসে আনিকাকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছেন আপনি?”
“ভালো। আপনি?” অপ্রভিত ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে আনিকা।
“ভালো।” ইনারা এসে বসে সামনের সোফায়।
তখনই সভ্য বিরক্তির সুরে বলে, “আমার দেরি হবে। তুমি যেতে পারো।”

সভ্যের এমন করে বলায় আনিকার সামনে খুবই অপমানবোধ করে সে। অন্যসময় হলে নিজের ইগোতে কথাটা নিয়ে তুমুল ঝগড়া বাঁধাত ইনারা। কিন্তু এইবার তো তারই ভুল। তাই বেহায়ার মতো বলল, “আমি অপেক্ষা করব।”
সভ্য তাকায় ইনারার দিকে। তাচ্ছিল্য হেসে আবার তার কাজে মনোযোগ দেয়।
সে হাসিটা যেন তাকে এতটুকুই মনে করার জন্য ছিলো যে গতবার এই কক্ষেই একটা মেয়ের সাথে তাকে দেখে সে বড় একটা ঝগড়া বাঁধিয়েছিল। অথচ আজ একটি মেয়ের সাথে তাকে দেখে চুপ করে বসে দেখতে হচ্ছে তার। বাধ্য হয়ে।

ইনারা আসলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে। সভ্য মেয়েটির খুব কাছে বসেছিলো। দুইজনে কেবল কাজের কথা বলছিলো। অথচ ইনারার এতেও অশান্তি লাগছিলো। সে সহ্য করতে পারছিল না। তার ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যকারো কাছে কীভাবে সহ্য করে সে?

মনে হলো কাজটা আরও আগে শেষ হতো। কিন্তু সভ্য তাকে জ্বালানোর জন্য কাজটা লম্বা টানলো। কিন্তু ইনারা উঠলো না। সেখানেই বসে রইলো। কোন সময় তার চোখ লেগে এলো তাও বুঝল না।

কাজ শেষ করে সভ্য উঠে দেখে ইনারা সোফাতেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল তার উঠার। কিন্তু ইনারা উঠে না। সভ্যতার কাছে যায়। পাশে বসে। সে দেখে ইনারা চোখের নিচে দাগ পরে গেছে। মেয়েটা কী আজকাল ঠিকভাবে ঘুমায় না? তার মুখটা শুকিয়ে গেছে। নিজের খেয়াল রাখে না?
চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের উপর ছড়িয়ে আছে। সভ্য আলতো আঙুল তার কপালে ছড়িয়ে থাকা অবাধ্য চুল সরিয়ে দেয়। সাথে সাথে তার বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। সে বিষণ্ণ সুরে বলে, “তোমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা বুকের বাঁ পাশে জমিয়েছিলাম। কিন্তু আমারও তো মন ভাঙে, কষ্ট হয়, সে ভালোবাসা ঢেকে যায় অভিমানের পর্দায়। তোমায় কষ্ট দিয়ে নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি। তোমাকে ভালোবাসার শাস্তি।”

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here