অনুভবে (২য় খন্ড) পর্ব ৩১

0
1213

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৩১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

নড়াচড়ায় ঘুম ভেঙে গেল ইনারার। ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখে সভ্যর বাহুডোরে সে। তাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে সভ্য। সবে লিফট থেকে নামল তারা। তাদের পিছনে একজন বডিগার্ড উপস্থিত ছিলো। ইনারা আধো খোলা চোখে তাকিয়ে ছিলো সভ্যর দিকে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে। হঠাৎ সভ্য তার দিকে তাকায়। সাথে সাথে সে চোখ বন্ধ করে নেয়। ঘুমানোর ভান করে।

সভ্য ইনারার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সে সবে চোখ বন্ধ করেছে। সে বিরক্ত হয়। মেয়েটার সম্ভবত তাকে জ্বালাতে একটু বেশিই ভালো লাগে। একজন গাড়ির দরজা খুলে দেয় তাদের জন্য। গাড়িতে বসে দেখে ইনারা এখনো নড়ছে না। উলটো নড়েচড়ে তার গলা জড়িয়ে ধরল। সে বিরক্তির ভাব নিয়ে বলল, “নাটক শেষ হলে এবার আমাকে ছাড়ো। গাড়িতে এসে বসেছি।”
ইনারা নড়ে না।
সভ্য আবার বলে, “তুমি ঘুমাচ্ছ না আমি জানি। এবার সরো, নাহলে যখন গাড়ি স্টার্ট হবে তখন ব্যাথা পেলে আমার দোষ নেই।”
ইনারা নাছোড়বান্দা। সে নড়ে না। সেভাবেই বসে থাকে সভ্যকে ধরে। কিন্তু সভ্য তাকে ধরে না।
গাড়ি চালু হয়। ইনারাও সভ্যর গলা ছেড়ে দেয়। সে পড়ে মাথা জানালায় লাগতে নিলেই সভ্য তাকে ধরে নেয়। তার মাথায় হাত রেখে নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে ধরে। আতঙ্কিত কন্ঠে বলে, “পাগল হয়ে গেছ তুমি? এখনই তো মাথায় ব্যাথা পেতে।”
ইনারা কিছু বলে না। সভ্যের বুকে মুখ লুকিয়ে মৃদু হাসে। বিজয়ের হাসি। আর চোখ বন্ধ করে শুনতে থাকে সভ্যের হৃদয়ের স্পন্দনের সুর।

সারারাস্তা ইনারাকে এভাবে আগলে নিয়ে আসে সভ্য। কোলে করে বাসায় এনে তার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়াতে নিলেই ইনারা তার গলা জড়িয়ে রেখে চোখ খুলে, “কি মিস্টার এত রেগে থাকা সত্ত্বেও আমাকে এত যত্নে আনলেন যে?”
সভ্য রাগ করে খুব, “আমি জানতাম তুমি জেগে ছিলে৷ এখন এসব নাটক করে কী প্রমাণ করতে চাও তুমি?”
“যে আপনি হাজার রেগে থাকলেও আমার কথা প্রতিমুহূর্ত ভাবেন।”
সভ্য তার হাত ছাড়িয়ে বলে, “ইনাফ ইনারা। অনেক হয়েছে। তোমার এসব করার প্রয়োজন নেই৷ আমার এসব নাটক একটুও পছন্দ না।” কথা বলে সে চলে যেতে নিলেই ইনারা বলে উঠে, “একটা ব্যাপার নিয়ে এতরাগ করার মানে হয়। আমি তো মানছি ভুল করেছি আমি তাই বলে এত…”
সভ্য পিছনে ফিরে ইনারার দিকে তাকায়, “এই ভুলটা আমি করলে তুমি কী করতে? যদি আমি তোমার চরিত্রের উপর প্রশ্ন তুলতাম তখন কী করতে? আমি উওরটা দেই তুমি আমার চেহেরাটাও দেখতে না। কারণ তোমার চরিত্র, তোমার সম্মানের উপর প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তুমি মনে করো তোমার এক সরিতে আমি তোমার সব আঘাত ভুলে যাব? কেন তুমি মেয়ে আর আমি ছেলে বলে? তুমি তো নিজের এক ছেলে বন্ধুর সম্মানের জন্য এত কিছু করেছিল। নিজের চোখে দেখেছিলে তার উপর মিথ্যা অপবাদের পরিণাম কি হয়েছিল। তুমি যেমন আমার ও ঐশিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলে তেমন আমিও তোমার সাথে প্রিয়র সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারতাম। আমি এমন করলে তুমি কী করতে?”
ইনারা সভ্যের কোনো প্রশ্নের উওর দিতে পারে না। সভ্য যেতে নেয়। এর পূর্বে কেবল ইনারাকে বলে, “এখন তোমাকে বলা এবং না বলাটা একই। তবুও বলছি, ঐশি আমার বোনের মতো। আমি সবসময় ওকে নিজের ছোট বোন মনে করে এসেছি। আর সেদিন এতবছর পর ও আমাকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে সে কথাগুলো বলেছিল। যেমন সুরভি তোমাকে এতবছর পর দেখে জড়িয়ে বলেছিল। কিন্তু আমি নিজের সীমা জানি৷ প্রথমবার হয়তো হঠাৎ দেখা ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে যা আমার কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিলো কিন্তু তা দ্বিতীয়বারের জন্য আমি মানা করে দিতাম।”
সভ্য চলে যায়। শব্দ করে দরজা বন্ধ করে।
এত জোরে দরজা আটকানোর শব্দে কেঁপে উঠে ইনারা।
.
.
পরেরদিন সকালেই দেখা যায় ইনারার পোস্ট করা ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। চারদিকে ভিডিওটা ছড়িয়ে যায়। ইনারার পুলিশের কাছে একটা মামলা করার দেরি ছিলো। তা করতেই মুশতাককে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ইনারার দৃশ্যটা নিজের চোখে দেখার ভীষণ ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু তা হলো না।

একদিন পর,
অপ্রত্যাশিতভাবে শুটিং এ আসে ঐশি। ঐশি তাকে দেখেই দৌড়ে এসে তার হাত ধরে নেয়, “কতবছর পর দেখা হলো তোমার সাথে!” আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ইনারা প্রথমে দ্বিধাবোধ করছিলো। লজ্জা লাগছিলো তার। ক’দিন পূর্বে কত কি না বলেছিল সে সভ্য এবং তার সম্পর্ক নিয়ে। কিন্তু পরে সেও ঐশিকে জড়িয়ে ধরে। ঠোঁটের কোণে হাসি আঁকে, “আপনাকে দেখেও খুব ভালো লাগলো।”
ঐশি তাকে ছেড়ে জিজ্ঞেস করে, “সেদিন না’কি তুমি সভ্যের অফিসে এসেছিলে? আমার সাথে দেখা না করে চলে গেলে কেন?”
“একটু কাজ ছিলো আপু তাই। এসব বাদ দিন আপনার খবর বলুন।”
“আমার খবর তো ভালোই। সভ্য তোমাকে নিশ্চয়ই বলেছে আমার এবং ইরফানের বিয়ের কথা। তোমাদের কিন্তু আসতে হবে। সভ্য আসতে চাইবে না, ওকে আনার দায়িত্বটা কিন্তু তোমার।”
“কিন্তু আপু…”
“কোনো কিন্তু না। সভ্য আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ। ও আমার জন্য অনেক করেছে। যে সময় আমার ভাইকে হারিয়ে ফেলছিলাম তখন ও এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমার জন্য স্ট্যান্ড নিয়েছে। সবসময় আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলো ঢাল হয়ে। আমি চাই সামি এবং জোহান ভাইয়ের সাথে ও আমার বিয়েতে উপস্থিত থাকুক। প্লিজ।”
ঐশির কথা শুনে তার মুখের উপর মানা করতে পারে না ইনারা, “চেষ্টা করব আপু। সৌমিতা আন্টি কেমন আছেন?”
“একটু অসুস্থ। এখন বিদেশে গেছে চিকিৎসা করাতে। এনগেজমেন্টের আগে এসে পড়বে।”
“তাকে অনেক মনে পড়ে।”

ঐশি হাসে। ইনারার হাত ধরে রেখেই তাকে নিয়ে বসলো সোফাতে। বলল, ” সভ্যর উপর কিন্তু আমার অনেক রাগ আছে। একতো হঠাৎ গায়েব হয়ে গেল। এর উপর ও আমাকে কখনো তোমার কথা বললই না। কি সুন্দর মতো বিয়ে করে বসে আছে।” সে এক মুহূর্ত বিরতি নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, “সরি ইনারা।”
“সরি!” অবাক হয় ইনারা, “সরি কেন?”
“আমি একসময় তোমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি। আসলে ইরফানকে আমি অনেক আগের থেকে ভালোবাসতাম। একদিন ওর লেখা ডাইরিতে তোমার নাম দেখি। সে মুহূর্তে ঈর্ষা আমাকে এমন কাবু করে যে মাথা ঠিক ছিলো না।”
“সরি বলবেন না আপু। ভালোবাসার মানুষের কাছে কাওকে দেখলে প্রায়ই এমন হয়। আমি বুঝি।”
“এরপর যখন জোহান ভাই তোমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যায় তখন আবার তোমাকে পছন্দ হলেও হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ায় রাগও হয়। ভেবেছিলাম তুমি জোহান ভাইকে কীভাবে ছেড়ে চলে যেতে পারো। তাও ঠিক এনগেজমেন্ট এর পূর্বে। একারণেই যখন তোমায় মুভিতে দেখলাম রাগেই দেখা করতে আসি নি। কিন্তু কয়েকমাস আগে জানলাম তুমি ভাইকে না, ভাই তোমাকে ছেড়ে আইজার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল। তাদের সম্পর্কটা প্রথমদিকে কেবল গুজব মানতাম আমি। কিন্তু আসলে সে সময়ে এমনটা হয়েছে জেনে তোমার জন্য খারাপ লাগছিলো। কিন্তু যখন শুনলাম সভ্যর সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে সব খারাপ লাগা উধাও হয়ে গেল। তুমি অনেক লাকি সভ্যকে জীবনসাথী হিসেবে পেয়ে। আমি তো অনেক অবাক হয়েছিলাম যখন সামি বলল সভ্য তোমাকে প্রথমে ভালোবেসেছে। কারণ আজ পর্যন্ত সভ্যকে কোনো মেয়েকে পাত্তাই দিতে দেখি নি।” বিরতি নিয়ে হাসে ঐশি। আবার বলে, “আর বিশ্বাস করো এর থেকে বেশি আমি খুশি তোমাকে সাফল্য দেখে। তুমি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছ। তোমার সাফল্য দিকে খে আমারই কেন যেন গর্ব অনুভব হচ্ছে।”
“কিন্তু আপনি গান ছেড়ে দিলেন কেন আপু?”
ইনারার প্রশ্নে ঐশির মুখটা মলিন হয়ে আসে, “আসলে বাবা ছেলেদের সাফল্যটা প্রধান মনে করেছে। মেয়েরা ঘরে থাকবে এটাই তার চিন্তা। আগে সভ্যই কোনো একভাবে বাবাকে বাধ্য করতো আমাকে ব্যান্ডে থাকার জন্য। ও যাবার পর সব শেষ হয়ে গেছে। জোহান ভাই চেষ্টা করেছিল, বাবার সাথে কথা বলেছিল কিন্তু বিশেষ লাভ হয় নি।” ঐশি হাসার চেষ্টা করে বলে, “কিন্তু জোহান ভাই কোনো একভাবে ইরফানের সাথে আমার বিয়ের জন্য বাবাকে রাজি করিয়েছে। যেহেতু আমি তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় সেহেতু বিশেষ সমস্যা হয় নি। ইরফান বলেছে বিয়ের আমি আবার গান শুরু করতে পারব। আমিও না এসে বকবকানি শুরু করে দিলাম। শুনো আগামীকাল আমার এনগেজমেন্ট আর পরের সাপ্তাহে বিয়ে। তোমাকে সব অনুষ্ঠানে আসতে হবে সভ্যকে নিয়ে। বুঝেছ?”
ইনারা হেসে মাথা নাড়ে।
.
.
ইনারা আজও সভ্যের অফিসে এসেছে। এই নিয়ে টানা তিনদিন সে কাজ করে অফিসে আসছে এবং সভ্য তাকে বসিয়ে রেখে আনিকার সাথে প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলছে। ইনারা জানে তাকে ইচ্ছা করে জ্বালানোর জন্য এত কিছু করা হচ্ছে। প্রতিদিন এত কীসের কাজ তাদের? আগে তো এমন ছিলো না। আজ ইনারা খুব জলদি শুটিং শেষ করে এসেছিল, সভ্যের সাথে ডিনার করবে বলে। কিন্তু সভ্য তাকে এড়িয়ে যেয়ে আনিকাকে ডেকে নেয় কাজ করার জন্য।

রাত দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ইনারা। তার আসার দুইঘন্টা হয়ে গেছে। এখন খুব বিরক্ত লাগছে তার। ধৈর্য্যের সীমা পেরিয়ে যাবার পর সে উঠে সভ্যকে জিজ্ঞেসই করে নেয়, “আপনি কী আসবেন না’কি আমি একাই চলে যাব?”
সভ্য তার দিকে তাকায় না, “তোমাকে আমি আটকে রাখি নি। যেতে হলে যাও, নাহয় চুপচাপ বসে থাকো। আমার দেরি হবে, কাজ করছি।”
“আচ্ছা, ঠিকাছে।”
ইনারা যেয়ে বসল সোফাতে। সে বুঝতে পারে সভ্যকে এভাবে মানাতে গেলে মানুষটা উল্টো তাকে জ্বালাবে। বিগত তিন চারদিন ধরে এটাই হচ্ছে। তাই সে এবার ব্যাপারটা নিজের মতো করে সমাধান করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সে তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কানে নেয়, “হ্যালো ওয়াসিন….”
ওয়াসিনের নাম শুনতেই সভ্য চকিতে তাকায় ইনারার দিকে। অবাক হয়ে।
ইনারা আসলে তাকে কল করেনি। তবুও নাটক করে। বলে, “তুমি না আজ ডিনারে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলে আমাকে? হ্যাঁ, আগে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এখন আমি একেবারে ফ্রী। কোথায় আসতে হবে বলে দেও। ওহ তুমি আসবে? সো সুইট। আচ্ছা আমি তোমাকে এড্রেস দিচ্ছি। আমি সেখানে তোমার অপেক্ষা করবো।”

রাগে সভ্য জোরে ফাইল অফফ করে দেয়। আনিকা ভয় পেয়ে গেল, “স্যার আপনি কী করছেন? ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
“সরি। তুমি এখন যেতে পারো।”
“স্যার কিন্তু কনসার্টের আয়োজনের ব্যাপারটা নিয়ে কথা তো সম্পূর্ণ হয় নি।”
“কাল বলবো। আজ যাও।”
“আচ্ছা স্যার।”
আনিকা যাবার সময় ইনারার কাছ থেকেও বিদায় নিয়ে গেল।
ইনারাও গুনগুন গান করে তার পিছনে উঠে যেতে নেয়।
সভ্য প্রায় দৌড়ে এসে তার হাত ধরে নেয়, “কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
ইনারা বহু কষ্টে নিজের হাসি আটকায়,
“ওই ওয়াসিন খান আছে না? সে ডিনারে ডেকেছিল।আমি ভেবেছিলাম আপনার সাথে যাবো কিন্তু আপনি দেখি ব্যস্ত তাই ভাবলাম তার সাথেই যাই।”
সভ্য বিচলিত হয়। কিন্তু তা প্রকাশ করে না। অপ্রভিত ভাব নিয়ে তার দুইহাত পকেটে ভরে এবং গলা পরিষ্কার করে বলে, “আমার কাজ শেষ। বাসায় চলো।”
“কিন্তু আমি তো তাকে বলে বলে দিয়েছি। এক কাজ করুন, আপনি বাসায় যান। আমি ওর সাথে দেখা করে আসি।”
সভ্য চোখ রাঙিয়ে তাকায় তার দিকে, “একবার দরজা বন্ধ করলে আর খুলব না আমি। আসলে আসো, নাহয় আজ বাসার বাহিরে থাকতে হবে।”
“আমি হোটেলে রুম বুক করে নিব। নো টেনশন।”
সভ্য এবার রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে, “চুপচাপ বাসায় চলো। কোনো ওয়াসিনের সাথে দেখা করছ না তুমি।”
বলে সে ইনারার হাত ধরে তাকে নিয়ে যায়।
ইনারা মিটিমিটি হাসে। সে তো এটাই চাইতো। তবুও সে বায়না ধরে, “এখন ওখানে না গেলে যে আমার পেটে ইঁদুররা কুস্তি খেলছে তার কী হবে? আপনার কিন্তু আমাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে। আমি পাস্তা, পিজ্জা এবং চকোলেট ব্রাউনি খাব।”
“রেস্টুরেন্ট পেয়েছ না’কি যে আবদার করবে আর পূরণ হবে?”
“তাহলে আমি ওয়াসিনের কাছেই যাচ্ছি।”
“কেবল পাস্তা আর ব্রাউনি করতে পারব।”
ইনারা মিটিমিটি হাসে। সভ্য রেগে থাকা সত্ত্বেও গাড়ি পর্যন্ত তার হাত ধরেই রাখে। গাড়িতে উঠার পর ইনারা সভ্যের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলে, “আপনাকে জেলাস হলে অনেক কিউট লাগে।”
সভ্য কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে। তার হাসি দেখে বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এরপর নিজেই লজ্জিত হয়। ইনারার সাথে ঝগড়া থাকা সত্ত্বেও সে কেন এমন ঈর্ষান্বিত ব্যবহার করতে গেল?
.
.
বাসায় এসে ইনারা প্রথমে লম্বা এক শাওয়ার নিলো। যেখানে সভ্য রান্না করতে জুড়ে গেল। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিজের ফোন দেখেই মাথা গরম হয়ে গেল। মুশতাক সাহেবকে দুইদিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খবরটা দেখে মাথা গরম হয়ে যায় ইনারার। সে এতকিছু করল, প্রমাণ পর্যন্ত দিলো কিন্তু লাভ কী হলো? কীভাবে এত জলদি করে ছাড়তে পারে আইন এক অপরাধীকে? নিশ্চয়ই মুশতাক সাহেব খুব রেগে আছেন। ছাড় পেয়ে বড় এক ঝামেলা করবেন এই বিশ্বাস আছে ইনারার।

বিরক্তি নিয়ে ফোনটা বিছানার উপর রেখে বের হয় রুম থেকে ইনারা। রান্নাঘরে যায়। সভ্য তার জন্য রান্না করছিলো। তাকে দেখে নিজের মুখের সকল চিন্তার রেখা মুছে ফেলে ইনারা। ঠোঁটে হাসি আঁকে। খবরটা সভ্যকে দেওয়া যাবে না, নাহয় অকারণেই চিন্তা করবে।

সে দৌড়ে যেয়ে সভ্যকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, “রান্না করার সময় আপনাকে সেই লেভেলের হ্যান্ডসাম লাগে। জানেন?”
হঠাৎ এভাবে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠে সভ্য। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে, “এখন হঠাৎ আমাকে তোমার কাছে কিউট, হ্যান্ডসাম লাগছে। আগে তো এতকিছু লাগতো না।”
“আগেও লাগতো কিন্তু তখন ভাব নিতাম। এখন আপনি ভাবে আছেন তাই আমার ভাবটা সাইডে রাখলাম।”
সভ্য কঠিন মুখ নিয়ে আবার রান্না করতে শুরু করে। ইনারা কাউন্টারে বসে প্রশ্ন করে, “আগামীকাল ঐশি আপুর এনগেজমেন্ট। যাবেন তো?”
“না।”
“আপনি যাবেন।”
“আমি না করেছি।”
“আমি তো প্রশ্ন করি নি। বলেছি। ঐশি আপু আজ শুটিং এ এসেছিল। আমাকে অনুরোধ করেছে যেন আপনাকে নিয়ে যাই। তাই আপনি যাবেন।”
সভ্য এবার রেগে ইনারার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। তার পাশের কাউন্টারে জোরে হাত মেরে তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে কঠিন গলায় বলে, “আমার জীবনে দখল দেওয়া বন্ধ করো। সেই অধিকার আর তোমার নেই।”
ভয় পাওয়া তো দূরের কথা, ইনারা উল্টো দুই হাত সভ্যের গলায় আবদ্ধ করে তার কাছে যেয়ে বলে, “হায় এভাবে রাগলে কি কিউট লাগে আপনাকে। এজন্যই তো আমি বারবার আপনার উপর ফিদা হয়ে যাই।”

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here