অনুভবে (২য় খন্ড) পর্ব ৩৫

0
1158

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৩৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“আপনি যাই বলেন না কেন? আমি বিয়ে করব, করব, করব। এভাবে ধুমধাম করে বিয়ে করেই ছাড়ব।” জেদ ধরে ইনারা।
এমন সময় সামি ডাক দেয় তাদেরকে। সভ্য উঠে দাঁড়ায়। ইনারাকে বলে, “যা ইচ্ছা করো।”
তারপর সে বেরিয়ে যায়। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে সামি তাকে জানায়, “ঐশি কিছু সময়ের মধ্যে এন্ট্রি নিবে। ইরফান না’কি নিজে উঠে ওকে দরজা থেকে আনতে যাবে। ওরা যখন হলের ঠিক মাঝে আসবে। তখন তুই গান শুরু করবি। আমি ফুলের ব্যবস্থা করেছি। তুই গান শুরু করার পর ওদের উপর ফুল বর্ষণ হবে। সব প্লান তো পার্ফেক্ট। কেবল মামা কিছু না করলেই হলো।”
“ডোন্ট ওয়ারি, উনি এমনিতেই ভয়ে আছে। আমার বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস পাবে না। আর সবার সামনে তামাশা করে নিজেকে আর ছোটও করবে না।”
“আচ্ছা তাহলে আমি ঐশিকে নিতে যাই।” সামি চলে যায়। যাবার পূর্বে তাকে আবার সব বুঝিয়ে দিয়ে যায়।

ঐশির চোখ আশেপাশে জোহানকে খুঁজছে। তাকে আসার পর থেকে দেখতে পারছে না ঐশি। কেবল সামিই তাকে নিতে এলো। দরজার ভিতরে ঢুকেও কেবল জোহানকে তার চোখ খুঁজছিল। দেখা পেল না সে জোহানের।

ইরফান স্টেজ থেকে উঠে এসে দাঁড়ায় ঐশির সামনে। হাত বাড়ায় তার দিকে। ঐশি হাসে। ইরফানের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। তার হাতে হাত রেখে প্রবেশ করে হলের ভেতরে। ঠিক যখন দুইজনে হলের মাঝ বরাবর এসে পড়ে তখন চারপাশের বাতির আলো কমে যায়। একটি গোলাকৃতির লাইট এসে পড়ে তাদের উপর। গানের মধুর কন্ঠস্বর ভেসে উঠে,

“বন্ধু, কবে পাব তোদের দেখা?
কত স্মৃতি জড়ানো আছে আদর মাখা!
এক মুঠো রোদ রোজ বিকেলে
আড়ালে দিয়েছে ডাক
ভাঙা দেয়ালে, মনের খেয়ালে,
ফিরেছে পাখিদের ছাঁক
বন্ধু, আমার বন্ধু,
বন্ধু, আমার বন্ধু….”

কন্ঠটা শুনে সকলে চমকে উঠে। সিঁড়ির দিকেও জ্বলে উঠে এক গোলাকৃতি আলো। সভ্যকে দেখে সবাই অবাক হয়। ঐশি তো লাফিয়ে উঠে। এমন সময় তাদের উপর ফুলের বর্ষণ হয়। সভ্য সিঁড়ি দিয়ে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। আর ঐশি ছুটে যেয়েই তাকে জড়িয়ে ধরে। তার হাতের মাইক পড়ে যায়। গানও বন্ধ হয়। সভ্য হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “তুই একাই যথেষ্ট এত সুন্দর এক মোমেন্ট নষ্ট করার জন্য। কী সুন্দর করে গান গাচ্ছিলাম! দিলি তো স্যারপ্রাইজের বারোটা বাজিয়ে?”
ঐশি তাকে ছেড়ে লাফিয়ে বলে, “আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না তুই সত্যি এসেছিস?”
আশেপাশে সকলের তালির শব্দ শুনে চমকে উঠে সভ্য।
নিজেকে সামলে মৃদু হেসে ঐশির চোখের কোণার জল মুছে দিয়ে বলে, “এই কান্নাকাটি নিজের বিদায়ের জন্য বাঁচিয়ে রাখ। এখন কান্নার ট্যাঙ্কি শেষ হলে যদি বিদায়ের সময় চোখ দিয়ে পানি না বের হয় তখন লোকজন আবার নিষ্ঠুর বলবে।”
ঐশি হাসে, “ইনারার সাথে থাকার প্রভাব ভালোই পড়েছে তোর উপর।”

সভ্য হেসে তাকায় তার পিছনের ইরফানের দিকে। সে বলে, “তুই কী এখনো আমার উপর রাগ?”
ইরফান উওর দেয় না। মুখ গম্ভীর করে তাদের পাশ কাটিয়ে স্টেজে যেতে নিলেই সভ্য তার কাঁধে হাত রেখে আটকায়, “আমি জানি আমার জন্য তোর অনেক সমস্যা হয়েছে। তোর এত বছরের কষ্টগুলো মুহূর্তে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি। সরি বন্ধু।”
ইরফান তার দিকে এক মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে নিলো। ধরে বলল, “তোর কী মনে হয় আমি যাস্ট আমার ক্যারিয়ারের জন্য তোর থেকে নারাজ ছিলাম? তোকে হারিয়ে নয়?”
ঐশিও তাদের মাঝে ঢুকে বলে, “সেন্টি মোমেন্ট তো আমারও কিন্তু তোরা আমাকে ভুলে গেলি।”
সামিও দৌড়ে এসে তাদের উপর ঝাপটে পড়ে। একটুর জন্য কেউ পড়ে যায় না। ঐশি তাকে মেরে বলে, “শয়তানের হাড্ডি আমি এত কষ্টে পার্লার থেকে তৈরি হয়ে আসছি। যদি পরে কিছু নষ্ট হয়ে যেত?”
“লাগছে তো ওই ভূতই নষ্ট হলেও বা কি বিশেষ পরিবর্তন এসে যেত?”
এই কথা শুনে ঐশি আরও মারতে শুরু করে সামিকে।
সভ্য ও ইরফান হাসে।
সভ্য এত বছর পর তাদের আগের সে কান্ডগুলো দেখে পুরনো সে দিনগুলোর কথা মনে করে। আর আশেপাশে তাকায়। জোহানকে কোথাও না দেখে ভীষণ অবাক হয় সে।

ইরফান ও ঐশিকে স্টেজে বসানো হয়। সামি ও সভ্য তার পাশেই থাকে। কিছুক্ষণ পর আসে ইনারা। সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতেই চারপাশে গুনগুন শব্দ শুরু হয়। তাকে নিয়েই কথা হয়। সামি হেসে সভ্যেকে বলে, “সবাই তোর বউকে নিয়েই কথা বলছে। আর ওদিকে দেখ বরও কীভাবে তাকিয়ে আছে তোর বউয়ের দিকে।”
কথাটা ঐশিও শুনে। সে পাশে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান আসলেই হা করে দেখছিল ইনারাকে। ঐশি কনুই দিয়ে জোরে মারল তার পেটে। ব্যাথার ইরফানের দম আটকে এলো। সে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় ঐশির দিকে, “তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
“আমাকে ছাড়া অন্যকোনো মেয়ের দিকে তাকালে চোখ উঠায় ফেলবো।”

সভ্য ইনারার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এমন সময় সামি বলল, “ব্রো ইরফানকে তো ঐশি সামলে নিবে। কিন্তু এখানে সকলের দৃষ্টি পার্টনারের উপর আটকানো। ওকে বলিস এত সুন্দর করে সেজেগুজে না আসতে। নাহয় সবাই তোর বউয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকবে।”
কথাটা শুনে সভ্য তাকায় সামির দিকে, “এমন তো না যে ও খারাপ ভাবে ড্রেসাপ করছে। সভ্যতা বজায় রেখেই পোশাক পরে, তাহলে ও কিভাবে সেজে আসবে তা আমি বলার কে? মানুষ তাকিয়ে থাকলে এটা তাদের সমস্যা। ওর যা পছন্দ ও তাই পরবে। আর সেভাবেই থাকবে।”
“কে কীভাবে থাকবে?” ইনারা স্টেজে উঠে জিজ্ঞেস করে। উওর না নিয়েই সে ঐশীর কাছে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে, “কনগ্রেটস ঐশি আপু।”
তাকে ছেড়ে আবার ইরফানকে বলে, “কনগ্রেটস ইরফান ভাইয়া।”
“থ্যাঙ্কিউ ইনারা।”
ঐশি আবারও মারে ইরফানের পেটে। চোখ রাঙিয়ে বলে, “ভাবি বল।”
ইরফান আমতা-আমতা করে বলল, “থ্যাঙ্কিউ ভাবি।”

ইনারা যেয়ে দাঁড়ায় সভ্যের পাশে।
“পার্ফোরমেন্স শেষ করলাম। সম্পূর্ণ সময় তোমায় কোথাও দেখলাম না। কোথায় ছিলে?” সভ্য প্রশ্ন করে।
“দাদাজানের সাথে কথা বলছিলাম।”
“দাদাজানের সাথে?” সভ্য অবাক হয়, “আমার কল তো দুইদিন ধরে ধরছে না। তোমার সাথে কথা হয়ে গেল? কী কথা বলছিলে তুমি?”
“বিয়ে নিয়ে।”
“কার বিয়ে?”
“আমাদের আর কাদের? আপনাকে না বললাম আমি আবার বিয়ে করব। ধুমধাম করে।”
সভ্য বাঁকা হেসে হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে সামনে তাকায়, “তাহলে দাদাজানের কাছে বকা খেয়ে এবার শান্তি হয়েছে তো? বিয়ের স্বপ্ন দেখা ভুলে যাও।”
“বকা? কে দিবে বকা? দাদাজান তো আমার কথা শুনে খুশিতে ঘরের সবাইকে একত্রিত করেছে। সবাইকে বলায় সেখানেই পারলে সকলে নাচগান শুরু করে দেয়। মা বলেছে আজই আমার জন্য হলুদ, মেহেদীর লেহেঙ্গা বানাতে দিবে।”
“কী!” বিস্ময়ে উচ্চস্বরে বলে ফেলল সভ্য। আশেপাশের সকলে তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। সভ্য তার ধরে তাকে এককোণে নিয়ে বলে, “তুমি মজা করছ তাই না?”
“আমি মজা কেন করব? দাদাজান বলেছে আমার ফিল্মের শুটিং শেষ হতেই আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাও লুকোচুরিভাবে হবে না ধুমধাম করে হবে।”
“এটা ভালো। আমি সবার সামনে আমার পরিচয় বলেছি বলে আমাকে এত ঝারলো, ফোন ধরছে না আর অন্যদিকে আমাদের ধুমধাম করে বিয়ের প্লানিং করছে। আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করে নি।”
“আপনাকে কেন জিজ্ঞেস করবে? আপনি কে?”
“আমার বিয়ে কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করবে না?”
“আপনি এত গুরুত্বপূর্ণ না। আপনাকে তো দাদাজানের এক ধমকেও আনা যাবে।”
সভ্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে।

ইনারা বুঝতে পারে সে সভ্যকে রাগিয়ে দিচ্ছে। তাই জোরপূর্বক হেসে বলে, “মানে… সামি আমাকে ডাকছে। আমি যাই।” বলে আবার স্টেজে দৌড় দেয় ইনারা।তার যাবার পরপরই মিস্টার হক আসে সভ্যের কাছে। আজবভাবে হেসে বলে, “সভ্য বাবা কেমন আছো তুমি?”
লোকটার মুখ থেকে মধুর বাণী শুনে সভ্যর ভ্রু কপালে উঠে যায়, “সভ্য বাবা? আগে তো এত সুন্দর ডাক শুনি নি আপনার মুখ থেকে?”
“অতীত মনে রেখে কি লাভ বলো। তুমি যাওয়ার পর সবাই যা মনে করেছি তোমাকে।”
“তাই? সে খবর তো আমি পাই নি। আপনি তো উল্টো চাইতেন আমি এসব ছেড়ে চলে যাই তাই না?”
“আরে না বাবা, এসব কী বলছ? বাবা শুনো তোমার একটা সাহায্য লাগতো।”
কথাটা শুনে শব্দ করে হাসে সভ্য, “অবশ্যই লাগবে তাইতো কথা বলতে এসেছেন। আমি জানি আমার সম্পূর্ণ নাম শোনার পর আপনার আমার সাথে কথা বলার অনেককিছু আছে। কিন্তু দেখুন আমার সভ্য নামই যথেষ্ট ছিলো আপনার কোম্পানির ক্ষতির জন্য। এখন আপনি নিজের সম্পূর্ণ কোম্পানি ডোবাতে না চাইলে সৌমিতা আন্টি ও জোহানকে বিয়ে পরানোর পূর্বে এখানে আনার ব্যবস্থা করুন। ঐশি আমার বোনের মতো। বিয়ের দিন আমি ওর মুখের উদাসীনতা সহ্য করব না।”
বলে সভ্য চলে গেল সেখান থেকে।

মেহমানরা কথা বলতে আসায় ইনারা ও সামি আলাদা চলে গেল। ইনারা জিজ্ঞেস করল, “পার্টনার গেইট তো ধরো নাই। জুতা চুরি করে টাকা মারবা?”
সামি ভ্রু নাচিয়ে বলে, “এত বড় নায়িকা হয়ে গেলে, সভ্যর স্ত্রী হয়ে গেলে, ইসমাত পরিবারের বউ হয়ে গেলে তাও জুতা চুরি করে টাকা নিবা?”
“তুমিও তো পঞ্চসুরের সদস্য ছিলে, এখন গান প্রাডিউস করতে শুরু করেছ। মানে তোমার টাকা লাগবে না?”
“কে বলল লাগবে না? ফ্রী এর টাকা কে ছাড়ে? চলো প্লানিং করি। আরও দুলাভাই থেকে।”
দুইজনে প্লান ভাবতে থাকে। এর মধ্যে সামি উৎসুক গলায় বলে, “এসে পড়েছে।”
সে এতটা জোরে বলে যে ইনারা ভয় পেয়ে যায়, “আরে বাবা এত জোরে চিৎকার করে উঠলে কেন? কোন এমন তারকা এসে….”
ইনারা সামনে তাকিয়ে দেখে জোহান এসেছে। তাকে দেখেই ইনারার মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে বিরক্তির স্বরে বল, “তারই আসার বাকি ছিলো।”
“ও ঐশির ভাই।”
“জানি জানি। তাই তো কিছু বলছি না, নাহয় যা করেছে তারপর আমি তাকে কিছুতেই ছাড়তাম না। এত বছর পূর্বে একবার জীবনে অশান্তি ছড়িয়ে শান্তি পায় নি আবার এসেছে অশান্তি করতে। ওদিন কি বলে জানো? আমার জন্য সমস্যা তৈরি করবে। পরেরদিনই খবর ছড়িয়ে ফিয়েছে আমি আজমল সাহেবের আত্নীয়। আমি নিজের যোগ্যতায় ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। তার মতো বাবার কোম্পানি থেকেই ক্যারিয়ার চালু করি নি। সে কম ছিলো এরপরদিন তার বাবাও শুরু করেছে কাহিনী। ছাড়বো না কাওকে। ঐশি আপুর বিয়ে দেখে চুপ আছি। একবার বিয়ে শেষ হোক তারপর বুঝাব। এখন ওর বিরুদ্ধেও আমার কাছে প্রমাণ আছে। ওর এক এসিস্ট্যান্ট আমার কাছে পাঠিয়েছিল আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে। এখন সেই জোহানের বিরুদ্ধে কতগুলো প্রমাণ দিয়েছে আমার কাছে। অন্যান্য যতগুলো অভিনেত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিলো সব ফাঁস করব।” রাগে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলে ইনারা।
সামি তার এমন রাগ দেখে কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকে। এরপর বলে, “পার্টনার তুমি আমাকে বন্ধু ভাবো তাই না?”
ইনারা অবাক হয়ে তাকায় সামির দিকে, “এটা জিজ্ঞেস করা লাগে। তুমি আমার ও সভ্য দুইজনের জন্য অনেক স্পেশাল।”
“তাহলে একটা কথা রাগবে আমার?”
“অবশ্যই বলো।”
সামি করুণ চোখে তাকায় ইনারার দিকে, “প্লিজ জোহানের কোনো ক্ষতি করো না।”
চমকে উঠে ইনারা, “তুমি পাগল হয়ে গেছ? ও আমার এবং সভ্যের সাথে এতকিছু করেছে এরপরও…”
“আমার জন্য।”
“ও তোমার ভাই, তাই বলছ আমাদের সাথে যা করেছে সব ভুলে যাব আমি?”
“প্লিজ ইনারা। তুমি মামার সাথে যা করার করো, সে ডিসার্ভ করে। কিন্তু জোহানের সাথে না। তুমি তো জানো ও মানসিকভাবে চাপে আছে। ঔষধ খায়।”
“তাই বলে মানুষের ক্ষতি করবে?”
“প্লিজ ইনারা, প্লিজ।” জোর করল সামি।
ইনারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, “ঠিকাছে। আমাদের বন্ধুত্বের মান রাখলাম।”
“তাহলে একটু সভ্যকেও ব্যাপারটা বলো। তুমি বললে সভ্য অবশ্যই মেনে…”
“না সামি, একদম না। আমি সভ্যকে কিছু বলতে পারব না। জোহানের জন্য আমাদের সম্পর্কে অনেক সমস্যা হয়েছে। আমি এত বড় গাঁধা না যে ওকে আবারও আমাদের জীবনে টেনে আনব। সরি। আমি ওর কোনো ক্ষতি করব না কিন্তু সভ্য করলে তাকে আটকাবও না। আর সে আবার আমার ক্ষতি করলে আমি নিজেও তোমাকে দেওয়া কথা ভুলে যাব।”

ইনারা মেজাজ খারাপ করে সেখান থেকে চলে যায়। কাউন্টারে পানি পান করতে যায়। এই মুহূর্তে পানি পান করে নিজের রাগ কমানো উচিত। এমন সময় সে ডাক শুনে, “ইনারা…ইনারা না?”
ইনারা পাশে তাকিয়ে দেখে সৌমিতা আন্টিকে। সে চেয়ার থেকে উঠে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ইনারা একপ্রকার ছুটে যায় তার কাছে। তাকে জড়িয়ে ধরে।
সৌমিতা আন্টিও তাকে পেয়ে কপালে চুমু খেয়ে আদর করেন এবং বলে, “কত বড় হয়ে গেছ তুমি? কী সুন্দরও! মাশাল্লাহ।”
“আপনি কেমন আছেন আন্টি? আপনার শরীর ভালো আছে?”
“আর ভালো! সব রোগ যেন আমাকেই ধরে রেখেছে। কয়দিন আগে বাহির থেকে ডাক্তার দেখিয়ে এলাম। ডাক্তারদের চক্কর কাটতে কাটতেই জীবন কেটে গেল।”
ইনারা তাকে নিয়ে আবার চেয়ারে বসে। নিজেও চেয়ার টেনে বসে সামনে।
সৌমিতা আন্টি বলে, “তোমার সিনেমা আমি দেখেছি। জানো তোমাকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল আমি সাইয়ারাকে সিনেমাতে দেখছি।”
“সেই আবেগ, সেই চোখে নিজের স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছা, সেই অভিনয়। সবটা সাইয়ারার মতো। আর তুমিতো সাইয়ারা থেকে বেশি সুন্দর হয়ে গেছ। আজ সাইয়ারা জীবিত থাকলে তোমাকে দেখে অনেক গর্বিত হতো।”
ইনারা হাসে। সে সৌমিতা আন্টির হাত ধরে বলে, “আন্টি আপনি মা’য়ের খাতিরে আমার একটা ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন?”
“বলে দেখ। নিজের সাধ্য মতো তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করব।”
“আমার বাবার ব্যাপারে আমাকে সব বলতে পারবেন? সে জীবিত আছে? তার পরিবার কোথায়? সে কে ছিলো? এখন কোথায় আছে? আপনিই কেবল এই উওর আমাকে দিতে পারবেন। আপনি ছাড়া এই পরিচয় জানার আর কোনো উপায় নেই আমার। আর আজ সুযোগ ছুটে গেলে আর কবে এই সুযোগ পাব আমি জানি না।”

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here