অনুভবে (২য় খন্ড) পর্ব ৩৬

0
1135

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৩৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

ইনারার কথা শুনে সৌমিতা আন্টি এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাকে অবাক দেখায় না। সে যেন তৈরি ছিলো এমন এক প্রশ্নের জন্য। কিন্তু তাকে ভীত দেখাল। সে ভয়ে আশেপাশে তাকায়। তারপর ইশারায় ইনারাকে কাছে আসতে বলে। ইনারা চেয়ার টেনে তার কাছে গেল। তখন সৌমিতা আন্টি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম মুশতাক তোমাকে নিজের মেয়ের মতো রাখে তাই তোমার থেকে সত্যিটা লুকিয়েছিলাম আমি। কিন্তু সামি আমায় সব সত্যি জানিয়েছে। তোমাকে খোঁজার, তোমাকে সত্যি বলার অনেক চেষ্টা করেছি আমি কিন্তু জোহানের বাবা দেয় নি। আমাকে সত্যি জানানোর পর সামিরও আমার সাথে দেখা বন্ধ করিয়ে দিয়েছে। ওর দ্বারা জানানোটাও যে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সারাক্ষণ আমার উপর লোক দিয়ে নজর রাখতো। আজ তোমাকে সব জানিয়ে নিজের বুক থেকে এত বড় পাথর হাল্কা করতে পারলেই আমি বাঁচি। তোমার মা আমার ছোটবেলার বান্ধবী ছিলো। আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী। ছোট থেকেই ওর একটাই স্বপ্ন ছিলো। সে একসময় বড় অভিনেত্রী হবে। আমাদের যুগে তা ভীষণ কঠিন ছিলো। অনেকেই অভিনেত্রী হওয়াটাকে ভীষণ খারাপ কিছু মন করতো। তাই ওর পরিবারও অনুমতি দেয় নি। বিশেষ করে ওর বাবা তো ওকে ঘর থেক বের করে দিয়েছিল। তাই ও পালিয়ে নিজের খালার বাসায় এসে পড়ে। সেখান থেকে নিজের স্বপ্ন পূরণ করে। তার প্রথম ছবির পরিচালক ছিলেন মুশতাক আহমেদ। তখনকার নামকরা পরিচালক। প্রথম ছবিতেই নাম কামায় সাইয়ারা। তার অভিনয় ও সৌন্দর্যের জন্য চারদিকে ওর নাম ছড়িয়ে যায়। এরপর সাইয়ারার বাবা আরও ওর সাথে নিজের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে নেয়। তুমি কী জানো তোমার একটা মামা ও খালা ছিলো?”
কথাটা শুনে ইনারা যেন আকাশ থেকে পড়ে, “আমার? আমি কখনো তাদের দেখি নি। তারা কোথায়?”
“তারা বিদেশে শিফট হয়ে গিয়েছিলো অনেক আগেই। সাইয়ারাই শেষ বয়সে ওর বাবা মা’কে দেখেছিল। একা। সাইয়ারার মৃত্যুর পর তোমার কাস্টাডির জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল কিন্তু কেউ তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে রাজি ছিলেন না। কারণ মৃত্যুর আগে তোমার নানা নিজের সব সাইয়ারার নামে লিখে দিয়েছিলেন। এই রাগ তাদের মধ্যে ছিলো।’
কথাটা শুনে বুকের ভেতর কেমন ব্যাথা করল ইনারার। তার চোখে উদাসীনতা বিদ্যমান। সে করুণভাবে জিজ্ঞেস করে, ” আমাকে কি আমার দাদার পরিবারের কেউও কখনো চায় নি?’
সৌমিতা আন্টি কিছু সময় চিন্তা করে বলল, “কীভাবে চাইবে? তারা জানেই না তোমার কথা।”
“কী!” চমকে উঠে ইনারা৷ সে সৌমিতা আন্টির দিকে ঝুঁকে কথা শুনছিলো। কিন্তু তার শেষ কথাটা শুনে বিস্ময়ে উচ্চস্বরে শব্দ করে পিছিয়ে যায়।

সৌমিতা আন্টি ঠোঁটে আঙুল রেখে তাকে ধীর সুরে কথা বলতে বলে। ইনারা আবারও জিজ্ঞেস করে, “তারা জানে না কেন? মা তাদের আমার কথা জানায় নি? কেন জানায় নি?”
“আস্তে, আস্তে। সব বলছি। সাইয়ারার তৃতীয় ছবির সময় তার দেখা হয় তোমার বাবার সাথে। তোমার বাবার প্রথম ছবি ছিলো সেটা।”
কথাটা শুনে উৎসুকভাবে তাকায় ইনারা সৌমিতা আন্টির দিকে, “আমার বাবাও অভিনেতা ছিলেন?”
“হ্যাঁ। আর নামকরা অভিনেতা ছিলেন। সকল মেয়েরা তার পিছনে পাগল ছিলো। সে দেখতে যতটা সুদর্শন ছিলেন তার ব্যবহারও তেমনি ভালো ছিলো। সে ব্যবহার দেখেই তো সাইয়ারা তার প্রেমে পড়েছিল।”
“মা আগে বাবার প্রেমে পড়েছিল?” ইনারা আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞেস করে। এমন আগ্রহ সে আর কখনো দেখায় নি।”
“হ্যাঁ। সাইয়ারা আগে প্রেমে পড়েছিল কিন্তু তোমার বাবা, সে তো প্রেমে ডুবেছিল। ওর জন্য নিজের সব ছেড়ে দিয়েছিল। নিজের পরিবারও। তারা সাইয়ারাকে মানতে রাজি ছিলেন না। তাদের ঘরের ছেলে অভিনয় করতে পারবেন কিন্তু বউ না। তোমার বাবাকে ত্যাজ্য করেছিলেন তারা। তবুও সাইয়ারার সাথ ছাড়ে নি। আর যখন তুমি হলে তখন যেন তার থেকে খুশি এই পৃথিবীতে আর কেউ ছিলো না। এই খুশি জানাতে সে নিজের পরিবারকে কল দেয় কিন্তু তার সাথে কথা বলতেও সকলে নারাজ ছিলো। কিন্তু কোনো কথা শুনতে চায় নি। কিন্তু তুমি জানো, তুমি ভাইসাব মানে তোমার বাবার জীবন ছিলে। ভুল বলেছি, নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসতো সে তোমাকে।”
ইনারার চোখে পানি ছলছল করতে শুরু করল। সে কাঁপানো গলায় জিজ্ঞেস করে, “আমার বাবা কী আসলেই এই পৃথিবীতে আর নেই?”
উওরটা ইনারা হয়তো জানে। তবুও সে দোয়া করতে থাকলো তার জানাটা যেন ভুল হয়। তার বাবাকে সে একবার হলেও দেখতে চায় । একবার হলেও।

“না, কাজ থেকে ফেরার সময় অন্য গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছিল। এতে সে আর বাঁচতে পারে নি।” সৌমিতা আন্টি বললন। ইনারার নিশ্বাস আটকা পড়া এলো। এক ঢোক গিলে সে, “তার নাম…..”
সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার পূর্বেই সৌমিতা আন্টি ইশারায় তাকে থামিয়ে দেয়।

ইনারার পিছনে এসে দাঁড়ায় মিঃ হক। তাকে দেখেই ইনারা চুপ হয়ে যায়। মিঃ হক সৌমিতা আন্টিকে বলে,” তোমার কথা শেষ হলে এখন যাওয়া যাক।”
সৌমিতা আন্টিকে খুব ভীত দেখা যায়। সে সম্ভবত কাঁপছিল। মিঃ হক তাকে উঠানোর সময় শক্ত করে তার হাত ধরে। তা ইনারা ভালো করেই দেখে।
সৌমিতা আন্টি ব্যাথা পাচ্ছিলেন তবুও ঠোঁটে হাসি রেখে বিদায় নিলেন ইনারার কাছে।

সভ্যর স্টেজের দিকে যাওয়ার সময় পথে দেখা জোহানের সাথে। তাকে দেখেও এড়িয়ে যাচ্ছিল সভ্য। কিন্তু জোহান তার পথে এসে দাঁড়ায়। তার দিকে না তাকায়েই বলে, “থ্যাঙ্কিউ।”
“কী জন্যে? আমার জন্য আজ তুই এত বড় পর্যায়ে আছিস এজন্যে? না’কি এতকিছু করার পরও তোকে এখনো বরবাদ করি নি এজন্যে?”
জোহান বিরক্তি নিয়ে তাকায় সভ্যের দিকে। তাচ্ছিল্য হেসে বলে, “সামি বলেছে তুই বাবাকে বলে আমাকে বিয়েতে এনেছিস এজন্যে। আর তোর জন্য আমি এই পর্যায়ে এসেছি? আমার ট্যালেন্টের জন্য এসেছি।”
“আমাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে। নিজের ক্যারিয়ার আর ইনারার জন্য আমাকে সরিয়ে। কিন্তু কী লাভ হলো? সত্যি সামনে আসার পর ক্যারিয়ার তো তোর ডুবছেই। আর নিজের কুকর্মের কারণে ইনারাকেও হারালি।”
“ওহ প্লিজ, আমার পছন্দ তো দুইদিন পর পর চেঞ্জ হয়। ওকে নিজের কাছে রাখতে হলে আমাকে কেউ আটকাতে পারতো? আমার মতলব শেষ তাই ওঁকে এত সুন্দর করে সরিয়ে দিলাম নিজের জীবন থেকে।”
রাগে গা জ্বলে উঠে সভ্যের। সে জোহানের কলার ধরে নেয়। রাগান্বিত সুরে বলে, “তোর এই খেলার জন্য আমরা সবাই ভুগেছি৷ ও আমার জীবন ছিলো তুই জানতি। কিন্তু নিজের জেদের জন্য আমার সব খুশি ছিনিয়ে নিয়েছিলি তুই।”
সামি দুইজনকে এভাবে দেখে দৌড়ে এসে সভ্যকে ছাড়ায়। তার কানে কানে বলে, “দোস্ত ঐশি ও ইরফানের বিয়ে। প্লিজ আজ নিজের রাগটা সামলা।”
সভ্য শান্ত হবার চেষ্টা করে। সে জোহানের দিকে তাকিয়ে আবার বলে, “কিন্তু ভাগ্যের খেলার সামনে তুইও পরাজিত হলি। এত চেষ্টা সত্ত্বেও কোনো লাভ হলো না। আজ ও আমার স্ত্রী।”
জোহান বাঁকা হেসে হলের দিকে চোখ ঘুরায়। চোখ দুটো একদিকে আটকে বলে, “তা তো দেখছি। কিন্তু এখন তো দেখি ভুল করলাম। যে সুন্দর হয়েছে। চোখ ফেরাতে মন চায় না।”
সভ্য জোহানেত দৃষ্টি অনুসারে তাকায় পিছনে। দেখে ইনারা এককোণে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ মুছছে। অবাক হয় সে। কিন্তু এর থেকে বেশি জোহানের কথায় তার গা জ্বলে উঠে। সে আবার জোহানকে মারতে যায়। কিন্তু সামি আটকে নেয়। সভ্য তাকে বলে, “ওয়ার্নিং দিচ্ছি ওর আশেপাশে আসবি না। নাহলে তোর জন্য অনেক খারাপ হবে। পরিণাম কল্পনাও করতে পারবি না এমন হবে।”
বলে সে সামিকে সরিয়ে চলে গেল ইনারার কাছে।

সভ্য অবাক হয় ইনারাকে কাঁদতে দেখে। তার গালে হাত রেখে আলতো করে মুছে দেয়। ও জিজ্ঞেস করে, “তুমি কাঁদছ কেন?”
“ইনারা উওর দেয় না। নম্র দৃষ্টিতে তাকায় সভ্যের দিক। আর ঝাপটে পড়ে তার বুকেতে।

দৃশ্যটা দূর থক দেখছিল জোহান। তার মুখটা ভাবহীন। সামি তার কাঁধে হাত রেখে বলে, “তোর নিজ থেকে কী দরকার ছিলো সভ্যের সাথে পাঙ্গা নেওয়ার?”
জোহান বিরক্তি নিয়ে তাকায় সামির দিকে। নিজের কাঁধের থেক তার হাত সরিয়ে বলে, “আমার যা ইচ্ছা আমি তা করব। তোর মাঝখানে আসার দরকার নেই।”
তারপর আবার সভ্য ইনারার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে চলে গেল।
.
.
ইনারার কান্না দেখে সভ্য তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিও য়। সে থাকে শেষ পর্যন্ত। বিদায় হবার সময় খুব কাঁদে ঐশি। নিজের মা ও জোহানের কাছে বিদায় নিলেও তার বাবার কাছে একবারও আসে না। তার পাশ কাটিয়ে যখন যাচ্ছিল তখন মিঃ হক হাত এগিয়ে দিলেন, তার মেয়ে তাকেও এসে জড়িয়ে ধরবে বলে। কিন্তু এমন হলো। ঐশি একবার তার দিকে তাকালও না।

বিদায় শেষে সকলে আবার হলে ঢুকছিল। কান্নাকাটি হচ্ছিল। মিঃ হক থেমে গেলেন। তার জরুরি কল এসেছে। সে কলটা রিসিভ করতেই যেন অপরপাশের খবর শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সকল শেয়ার হোল্ডাররা তার কোম্পানি থেকে একসাথে নিজের অংশ নিয়ে নিতে চাচ্ছে। এমনটা হলে তার জন্য মহা বিপদ। এত টাকা তাদের ফান্ডে নেই। সে তো বরবাদ হয়ে যাবে। স্তব্ধ হয়ে গেলেন তিনি এই খবর শুনে। হঠাৎ পিছনে থেকে সভ্য বলে, “খবর পেয়ে গেছেন?”
মিঃহক পিছনে ঘুরে। অবাক হয়ে তাকায় সভ্যের দিকে।
সভ্য বলে, “বলেছিলাম না ঐশির বিয়ে বলে আমি আপনার সাথে কিছু করছি না।”
“বিয়েও শেষ, আপনিও শেষ।”
মিঃ হকের হাত থেকে ফোন পড়ে গেল। সে হিংস্র পশুর মতো এসে সভ্যের শেরোয়ানির কলার ধরে। কিন্তু বডিগার্ডরা এসে তাকে সরিয়ে নেয়।

সভ্য তার শেরোয়ানি ঠিক করে মৃদু হেসে তাকায় মিঃ হকের দিকে, “হাত সামলে রাখুন মিঃ হক, নাহয় আপনার পথে বসতে হবে।” তারপর পাশের বডিগার্ডের দিকে তাকিয়ে বলে, “ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলো।”
সভ্য মিঃ হকের দিকে তাকিয়ে হেসে চলে যায়। তার পিছনে যায় তার বডিগার্ডরাও।

মিঃ হক এখনও রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সভ্যের দিকে। রাগে তার চোখ লালচে হয়ে গেছে।
.
.
কিছুদিন পর,
ইনারা সোফায় পা’য়ের উপর পা তুলে শুয়ে ছিলো। চকোলেট খাচ্ছিল এবং তার ফোন ঘাটছিল। তার রিসেন্ট পোস্টে প্রায় সব কমেন্টই সভ্যকে নিয়ে। তা দেখে রাগে চকোলেটে কামড় দিচ্ছে এবং রেগেমেগে কমেন্টগুলো পড়ছে। বেশিরভাগই মেয়েদের কমেন্ট।
একজন লিখেছে, “আমার সভ্য তোমাকে কি ভেবে বাছাই করেছে জানি না। আমি তো আরও কত বেশি সুন্দর। তাও যাই হোক, ওর খেয়াল রাখবে।”
তো অন্যজন লিখেছে, “আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমাদের সভ্য আর আমাদের রইলো না। কারও স্বামী হয়ে গেছে। আমার তো কান্না পাচ্ছে।”
অন্যজন লিখল, “এত বছর পর সভ্যের দেখা মিলল খুশি হব, না এই ডাইনীর সাথে বিয়ে হয়েছে বলে শোক মানাবো?”

ইনারা উঠে বসে পড়ল। তার চোখ কপালে উঠে গেল। সে হা করে তাকাল কমেন্টটার দিকে। তাকে ডাইনী বলেছে? সাহস কত মেয়েটার! আর সবার তার একাউন্টে এসে এসব লেখার কি প্রয়োজন সে বুঝতে পারছে না। বিরক্ত লাগছে তার।

এমন সময় সভ্য দরজা খুলে নিজেই ভেতরে ঢুকে পড়ল। সবে অফিস থেকে এলো। ড্রইংরুমে ঢুকে দেখে ইনারা মূর্তির মতো সোফাতে বসে তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সভ্য কিছুই বুঝল না। সে ভাবল, কিছু ভুল করেছে সে? কিন্তু সবে তো সে এলো বাসায়। তাহলে এমন কী হলো? সে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ঠিক আছো?”
ইনারা তবুও নড়ে না। একইভাবে তাকিয়ে থাকে সভ্যের দিক।
উওর না পেয়ে সভ্য এগিয়ে যায় ইনারার দিকে। সে ঝুঁকে ইনারার সামনে বাতাসে হাত নাড়ায়। সাথে সাথে ইনারা লাফ দিয়ে সোফায় উঠে দাঁড়ায়। কোমরে হাত রেখে বলে, “আপনার কি মনে হয় আমি চোখে দেখতে পাই না? এভাবে সামনে এসে হাত নাড়ছেন কেন?”
সভ্য তাকে এভাবে উঠে দাঁড়াতে দেখে ভয়ে পিছিয়ে যেয়ে পড়ে সোফায়। অবাক হয়ে বলে,”তো এভাবে মূর্তির মতো বসে ছিলে কেন?”
“আপনার জন্য।”
“আমি কী করলাম?”
“কী করেন নি? আমার একাউন্টের পোস্টে সব আপনার কমেন্ট। মেয়েরা জানু, মানু কত কানুই না বানায় নিচ্ছে আপনাকে। একজন তো আমাকে ডাইনীও বলেছে। আমাকে ডাইনীর মতো দেখা যায়?”
ঘাবড়ে সভ্যের মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়, “হ্যাঁ।”
“হে?” ইনারা চোখ দুটো বড় বড় করে নেয়।
সাথে সাথে সভ্য মাথা নাড়ায়, “না, না। কি বলো? তুমি কোথায় আর ডাইনি কোথায়?”
“আপনাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি। ওই মেয়েরা আপনার দিকে বদনজরে তাকালে আপনার চোখ তুলে ফেলব।”
সভ্য চোখমুখ কুঁচকে নেয়, “ওরা তাকালে আমার চোখ তুলবে? এটা কেমন লজিক।”
ইনারা পা ভাঁজ করে সোফায় বসে পড়ে, “এত লজিক আমি বুঝি না। কেউ আপনাকে নিয়ে কিছু বললে আমার জ্বেলাস ফিল হয়। আর জ্বেলাস ফিল হলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আমার মেজাজ খারাপ হলে আপনারই ক্ষতি। তাই মেজাজ খারাপ করবেন না।”

সভ্য মুখ বানিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে উঠে বসে। শেষ কথাটা শুন আসলে ভয় পায় সে। বিড়বিড় করে বল, “বাহিরে সকলে আমার ভয়ে কাঁপে আর এদিকে ওর ভয়ে আমার কলিজায় পানি শুকিয়ে যায়।”
ইনারার মেজাজ ভালো করার জন্য সে জানায়, “মিঃ হকের কোম্পানির শেয়ার ক্র‍য় করার ব্যবস্থা করছি। তাকে এমন পর্যায়ে দাঁড় করাব যেখানে এমন নিম্নদামে কোম্পানি ক্রয় করব যে শেয়ার হোল্ডারের টাকা পরিশোধ করতে করতেই সে ফকির হয়ে যাবে। তার লোভ আমি বের করছি।”
কথাটা শুন যে আসলে শান্তি হয় ইনারার, “একদম ঠিক আছে। ওদিন আমাকে তো জ্বালালোই। আবার দেখি ওদিন সৌমিতা আন্টিকে কীভাবে ধরে নিয়ে গিয়ে ল। সৌমিতা আন্টি অনেক ভয় পাচ্ছিল তাকে। আমার মনে হয় তার সাথেও অনেক খারাপ ব্যবহার করছিল। টাক্কু ব্যাটা। ওদিন আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল বলে, নাহলে তার টাক ফাটায় দিতাম আমি।”

“আমি কাল তোমার শুটিং দেখতে যাব।” সভ্যের কথা শুনে চমকে উঠে ইনারা। তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। সে আমতা-আমতা করে বলে, “আগামীকাল? কেন?”
“এত বছর পর স্বাধীনতা পেয়েছি। তাই ভাবছি মন মতো সব ঘুরেফিরে দেখি। কাল আমার জরুরী কোনো কাজ নেই তাই। কাল যাচ্ছি তোমার সেটে।”
“কালই যাওয়া লাগবে পুরশু গেলে হয় না?”
“কেন কাল কি হয়েছে?” সভ্য তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে।
“না না কিছু না।” জোর করে হাসে ইনারা।
“আচ্ছা তাহলে আমি যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।”
সভ্য উঠে যেতেই ইনারা কপালে হাত রাখলো। আগামীকাল ওয়াসিনের সাথে তার রোমেন্টিক একটা সিন শুট হবে। কেবল আগামীকালই তাদের এই দৃশ্য স্যুট হওয়ার আর আগামীকালই সভ্যের শুটিং দেখতে আসতে হলো!

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here