অনুভবে (২য় খন্ড) পর্ব ৩৭

0
1230

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৩৭
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

পরেরদিন অফিসের অল্প কিছু ফাইল সাইন করে সভ্য রহমানের সাথে এলো ইনারার শ্যুটিং এর জায়গায়৷ সে ঢুকে জানতে পারে ইনারার সিন শ্যুট হচ্ছে। সে চুপচাপ যায় সে রুমে। যেয়ে দেখে ইনারা গোলাপি রঙের একটি সাধারণ গাউন পরে আছে। চারপাশে গোলাপি রঙের ফুল। পিছনে একটি দোলনা। সে কতগুলো ফুলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। তলোয়ার নিয়ে ক্যামেরার সামনে শট দিচ্ছে। সভ্য তার দিকে তাকিয়ে রইলো মুগ্ধ দৃষ্টিতে। তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছিল এই পোশাকে, তোলায়ার চর্চায়, অভিনয়ে। মুখটায় যেমন মিষ্টি ভাব তেমনি কঠিন।

দৃশ্যট শ্যুট শেষ হওয়ায় সকলে হাত তালি দেয়। আজমল সাহেব বলে, “ভেরি গুড ইনারা। পার্ফেক্ট সট ছিলো।”
এর মধ্যেই সকলের নজর যায় সভ্যের উপর। মুহূর্তে হৈচৈ -এ মেতে উঠে জায়গাটা। আজমল সাহেব এসে হাত মেলায় সভ্যের সাথে, “কেমন আছো?”
দুইজনে একে অপরকে আগের থেকেই চেনে। বিভিন্ন পার্টিতে দেখা হতো তাদের। আজমল সাহেবের বেশিরভাগ ছবির জন্যও সভ্য গান গেয়েছিল।
“ভালো, আপনি?” সভ্য জিজ্ঞেস করে।
“ভালোই। এতবছর পর তোমাকে দেখে ভালো লাগল। আমি তো আগে জানতামই না ইনারা তোমার ওয়াইফ। ও কখনো বলে নি। কিন্তু সেদিন নিউজ দেখে তোমাদের জন্য খুশি হয়েছি। আজ হঠাৎ করে এখানে?”
“শুটিং দেখতে এসেছিলাম। আপনি অনুমতি দিলে থাকব।”
“আরে এখানে অনুমতির কী আছে? অবশ্যই আসো। আমার পাশে বসে দেখো।”
সভ্য ইনারার দিকে তাকাল। তাকে দেখে জোরপূর্বক হাসে ইনারা। সভ্য অবাক হলো। কারণটা বুঝল না। ইনারা কী তাকে দেখে খুশি না?

নতুন দৃশ্য স্যুট শুরু হবে। গ্রিন স্ক্রিনের সামনের দোলনায় ইনারা বসল। সে সভ্যের দিকে তাকিয়ে আজব মুখের ভাব করছে। সভ্য কিছুই বুঝতে পারছে না। পরিচালক আজমল তার পাশে বসতে বললেও সে পাশে বসে না। তারা নিজেদের মতো কাজ করুক। সে এককোণে চেয়ার নিয়ে বসে যেখান থেকেই ইনারার মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। রহমান তার পাশে দাঁড়ানো।

সিন শ্যুট কিছু মুহূর্ত পূর্বেই সেখানে উপস্থিত হলেন ওয়াসিন খান। তাকে দেখিয়ে মুখ বানায় সভ্য। রহমানকে জিজ্ঞেস করে, “উনি এখানে কি করছে?”
“স্যার উনি তো সিনেমার নায়ক উনি তো থাকবেই।”
সভ্য আরও বেশি করে মুখ বানায়।

ওয়াসিন যেয়ে বসে ইনারার পাশে। হেসে কিছু একটা বলে। সে কথা শুনে ইনারাও হাসে। সভ্য রহমানকে আবারও জিজ্ঞেস করে, “ওরা কী এমন কথা বলছে যে এমন খি খি করে হাসতে হচ্ছিল।”
“স্যার আমি তো আপনার পাশেই দাঁড়ানো। আমি কীভাবে জানবো।”
“কোনো কাজেরই না তুমি।” সে আবার তাকাল ইনারার দিক্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে।
তাদের শুটিং শুরু হয়েছে। ওয়াসিন খান ইনারার হাত নিজের হাতে নিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে, “জ্যোৎস্না, তুমি চিন্তা করো না। আমি নিজের পিতাকে আমাদের সম্পর্কের জন্য রাজি করিয়েই ছাড়ব। আর সে তো রাজি হচ্ছে না। কিন্তু তোমার জন্য আমি আমার সব ছেড়ে দিতে পারব। নিজের সব।”

“এহ আসছে নিজের সব ছাড়তে। দেখতে যে গর্দভ লাগছেতে মনে হয় না বাবার সামনে মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয়।” সভ্য রাগে কটমট করতে করতে বলে। রহমান তাঁর পাশ থেকে হেসে বলল, “যেমন আপনি দাদাজানের সামনে কিছু বলতে পারেন না।”
সভ্য সরু চোখে তাকায় তার দিকে। রহমান আমতা-আমতা করে বলে, “মানে আপনার মতো সাহসী কী সব প্রেমিকরা হয়? আপনি যা বলেন, যা করেন তা তো একেবারে ঠিক হয়। এসব গর্দভরা তা কী বুঝবে?”
সভ্য ভাব নিয়ে নিজের চুলে হাত আঁচড়ায়। রহমান বলে, “স্যার আপনি তো জানেন এটা কেবল শুটিং তাই না?”
“হ্যাঁ জানবো না কেন?”

ওয়াসিন উঠে একটি ফুল নিয়ে ইনারার চুলে গুঁজে দেয় তার কপালে থাকা চুল আলতো করে সরিয়ে নেয়৷ আর তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
“এই লোক আমার বউয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?” বলে সে উঠে তাদের দিকে এগিয়ে যেতে নিলি রহমান তাকে ধরে নেয়। আর বলে, “স্যার উনারা কেবল অভিনয় করছে। এটা আসল কিছু না।”
সে বসায় সভ্যকে। তবুও সভ্য রাগে ফোঁপাচ্ছিল। ইনারাকে ওয়াসিনের কাঁধে মাথা রাখতে দেখে যেন তার মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে ধরে রাখা রহমানের হাত মোচড়াতে থাকে। রহমান বলে, “স্যার এটা আমার হাত ওয়াসিন খানের গলা না যে এভাবে মোড়াচ্ছেন।”

তখনই সিন কাট হয় এবং সভ্য রহানের হাত ছেড়ে উঠে যায় ইনারার কাছে। রহমান নিজের হাত দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
সভ্য ইনারার কাছে যেয়ে সাথে সাথে তাকে দোলনা থেকে উঠায়। ইনারা হতবাক। হঠাৎ করে সভ্যের এমনটা করায়। সে জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে আপনার?”
সভ্য সরু চোখে তাকায়। তার তাকানো দেখে ইনারার গলার পানি শুকিয়ে গেছে। সাথে সাথে সে জোরপূর্বক হেসে চোখ সরিয়ে নেয়। তখনই ওয়াসিন খান উঠে সভ্যের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “ওহ মাই গড সভ্য! আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান ছিলাম। আপনার জন্য কতগুলো কনসার্টেও গিয়েছি। কিন্তু আমার ফিল্মে আসতে আসতে আপনি ব্যান্ড ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাই কখনো সামনা-সামনি দেখা হয়নি। নাইস টু মিট ইউ।”
সভ্য হাত মেলায় ওয়াসিনের সাথে। তার হাত এত জোরে ধরে যে ব্যাথায় সে শব্দ করে উঠে। ইনারা তার হাতটা ছাড়ায়। ওয়াসিন খান হেসে বলে, “আপনার হাতটা একটু বেশিই শক্ত মনে হচ্ছে।”
ইনারা তাকে আগের জায়গায় নিয়ে গেল। রহমানকে বলল, “রহমান ভাই উনাকে বাহিরে নিয়ে যান। আমার আধাঘন্টায় শুটিং শেষ হয়ে যাবে। আজকে আর আমার সিডিউল নেই। আমি কাজ শেষ করে আসছি। ভুলেও উনাকে এখানে ঢুকতে দিবেন না।”
“যো হুকুম ম্যাম।”
“যো হুকুম মানে? আমি কোথাও যাব না।”
“দাদাজানকে কল দিব?”
দাদাজানের নাম শুনে দেবে যায় সভ্য, “কিছুক্ষণ পরপর তুমি দাদাজানের হুমকি আমাকে দিতে পারো না।”
“অবশ্যই আমি পারি। এই মুহূর্তে আপনি বের না হলে আমি দাদাজানকে কল দিব।”
সভ্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে। তার দিকে ঝুঁকে বলে, “এখন দাদাজানের হুমকি দিচ্ছ না? বাসায় আসো বোঝাব।”
“রহমান ভাই উনাকে নিয়ে যান তো, নাহলে নিশ্চিত উনি ওয়াসিনের হাত ভেঙে দিবে আজ।” ইনারা বলে।
রহমান টেনেটুনে সভ্যকে নিয়ে যায়।

শুটিং শেষে ইনারা বের হয়। সে বেত দেখে এখনও সভ্য গাড়িতে বসে আছে। বাহিরের বড় প্রবেশদ্বারটা বন্ধ। প্রেবশদ্বারের ওপারে ভিড়। মিডিয়াও এসেছে। ইনারা সবটাকে এড়িয়ে যেয়ে বসল গাড়িতে। বসেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর সভ্যের বকার ভয়ে বলল, “দেখেন প্লিজ রাগ করবেন না। আজ আমাদের প্রথম ও শেষ রোমেন্টিক সিন ছিলো। আর এত আহামরি কিছুও ছিলো না। আপনি যা দেখেছেন ওতটুকুই। এটা তার অতীতের স্মৃতি হিসেবে রাণী মনে করে। এই সিন না দিলে সম্পূর্ণ গল্পের মাধুর্যই শেষ হয়ে যাবে। কেন সে খারাপ পথে গেল তা না দেখালে গল্পটাই যে বৃথা। আপনি আমার কথা শুনছেন? সভ্য আপনি কি শুনছেন?”
সব ধ্যান তখনও তার মোবাইলে ছিলো। সে ইনারার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো, “আমি জোহান ও আইজার কাজ ইন্ডাস্ট্রিতে আটকে দিয়েছিলাম। দেখো আইজা এরপর কি করেছে! তার বাবার বয়সী এক প্রডিউসারের সাথে সম্পর্কে আছে। জলদি নাকি বিয়েও করবে। যার দুইটা ডিভোর্স হয়েছে এবং একটা সতেরো বছরের মেয়ে আছে। অথচ সাইদ মেয়েটাকে কত ভালোবাসতো! মানুষ লোভে এত নিচে নামতে পারে জানতাম না।”
ইনারা মোবাইলটা হাতে নিলো। সে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো সংবাদটার দিকে। আইজার এতকিছু করার পর এই খবরে তার অবাক হবার কথা না। কিন্তু সে হচ্ছে। সে যত ভাবে আইজা তার নিজের ক্ষতির সীমা পাড় করে দিয়েছে, ততই আইজা আবারও নিজের ক্ষতি করে ইনারাকে অবাক করতে পিছ’পা হয় না।

ইনারা নিজেকে সামলে নেয়। ফোনটা পাশে রেখে এমন ভাব করে যেন কিছুই হয় নি। সভ্যকে তার জন্য আর চিন্তিত করতে চায় না । তাই সে হেসে বলে, “এখন আর আমার এসব কিছু আসে যায় না। এই টপিক বাদ দিয়ে অন্য টপিক এ যাই।”
“অন্য টপিকে যেতে চাও?” সভ্য ইনারার দিকে তাকিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসে। তার দিকে ঝুঁকে জানালায় হাত রাখে। জানালা বন্ধ করে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে বলো তো ওয়াসিন খানের কাঁধে মাথা রাখার কী দরকার ছিলো?”
সভ্যকে এত কাছে দেখে ইনারা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে চোখ নামিয়ে নেয়, “ক্রিপ্টে লেখা ছিলো।”
“স্ক্রিপ্টে যদি তাকে ভালোবাসি বলা থাকে তাও বলবে?”
ইনারা অবাক হয়ে সভ্যের দিকে তাকায়। তারপর জোরপূর্বক হাসে। আমতা-আমতা করে, “আপনার আসার পর ওই সিনটাই শুট হয়েছে।”
“ওহ গ্রেট। আর কিছু বাকি আছে?”
রহমান সামনে থেকে কাশে। মনে করায় গাড়িতে তারাও আছে। সভ্য সরে যায়।
ইনারা আরও লজ্জিত হয়। লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে। লজ্জায় নিজের মুখ ব্যাগ দিয়ে ঢাকে।

গাড়ি চালু হয়। সভ্য কঠিন মুখে সামনেই তাকিয়ে ছিলো। কিছুক্ষণ পর ইনারা তার কাঁধে মাথা রেখে তার হাতটা ধরে। সভ্য তার দিকে তাকায় না। ভাব দেখায় একটুখানি। কিন্তু অন্যদিকে তাকিয়ে নিজেও হাসে।
.
.
বাড়িতে এসে দেখে বাহিরে কতগুলো বডিগার্ড দাঁড়ানো। দুই-তিনটা গাড়িসহ। ইনারা দৃশ্যটা দেখে অবাক হয়। আগে বাড়িতে কাউকে আসতে দেখেনি। সে সভ্যকে জিজ্ঞেস করে, “কে এসেছে জানেন?”
“আমার জানা মতে কারো আসার কথা তো ছিলো না। চলো ভিতরে যেয়ে দেখি।”
দুজনে গাড়ি থেকে নামার পর সভ্য দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে, “কে এসেছে?”
“স্যার আপনার বড় ভাই। অভ্র সাহেব।”
অভ্রের কথা শুনে সভ্য যতটা অবাক হয় ইনারা ততই খুশি হয়। সে অভ্রকে আগে কখনো দেখেনি। আজ প্রথম দেখবে।
সভ্য বিস্মিত সুরে বলে, “অভ্র ভাইয়া? উনার তো এখানে আসার কথা না।”

দু’জনে যেয়ে ভেতরে যেয়ে দেখে একটি লোক ড্রইং রুমে বসা। তাদের দিকে পিঠ করে। তার পাশে দাঁড়ানো আরেকটি লোক ইনারা ও সভ্যকে দেখে প্রথম লোকটার কানে কিছু একটা বলল। আর সে উঠে দাঁড়াল। পিছনে ফিরে তাকাল। তাকে দেখেই ইনারার চোখ কপালে উঠে যায়৷ সে লোকটাকে আগে কোথাও দেখেছে। অনেকবারই দেখেছে। মনে পড়ায় সে চোখ দুটো বড় বড় করে সভ্য কে জিজ্ঞেস করল, “উনি কী নেতা অভ্র আহমেদ?”
সভ্য বলে, “হ্যাঁ।”
“আমি উনাকে আগে দেখেছি। উনি যখন প্রথম ইলেকশনে স্পিচ দেয় আমাদের কলেজের সবার ক্রাশ হয়ে গিয়েছিল। সাথে আমারও। উফফ কি হট মামা।” ইনারা খুশিতে সভ্যের বাহুতে মেরে বলে দেয়।
সভ্য কথাটা শুনে তাকায় ইনারার দিকে। চোখ দুটো বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে জিজ্ঞেস করে, “আমার থেকেও বেশি?”
“আবার জিগায়। অনেক বেশি।”
কথাটা বলেই ইনারা নিজের দাঁত দিয়েই জিহ্বা কাটে। সভ্যের দিকে তাকিয়ে দেখে নিজেই ভয় পেয়ে বলে, “না মানে আপনার থেকে একটু কম।”
এরপরও সভ্যের কঠিন মুখ স্বাভাবিক হয় না। ইনারা আবার বলে, “আচ্ছা যান অনেক কম খুশি?”

অভ্র তাদের আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে, “কী ব্যাপার আমাকে কি এখানে দেখে পছন্দ হয় নি?”
তার কথায় দুইজন এগিয়ে যায়। সভ্য বলে, “এমন কিছু না ভাইয়া। তুমি আসবে জানতাম না তাই একটু অবাক হয়েছি।”
“স্যারপ্রাইজ তো না বলেই দেয়।”
সভ্য অভ্রের সাথে জড়িয়ে ধরে ছাড়ার পর ইনারা দেখিয়ে বলে, “ভাইয়া ওই ইনারা।”
“ওকে চিনব না তা কি হয়? আজকাল নিউজে এবং মা’য়ের কথায় আমাদের থেকে বেশি ও থাকে। কেমন আছো ইনারা।”
“অনেক ভালো। আপনি? আপনার সাথে দেখা করার অনেক ইচ্ছা ছিলো। অভ্র নাম পরিচিত হলেও আপনার সম্পূর্ণ নাম শুনে কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম। আপনাদের ফ্যামিলির সবার নাম ইসমাত আপনার না কেন? আর আপনি…..” সভ্য তাকে থামিয়ে বলে, “এই প্রশ্ন এক্সপ্রেস থামো। ভাইয়া আসছে একটু আগে হালচাল জিজ্ঞেস করে তো প্রশ্ন করবে। না ডিরেক্ট প্রশ্ন শুরু করেছ।”
ইনারা জোরপূর্বক হাসে, “ও হ্যাঁ, সরি ভাইয়া। আপনাকে দেখে একটু এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম।”
“অসুবিধা নেই। আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”
“আমার সাথে?”
“হ্যাঁ, বসে কথা বলি?”
তিনজনে সোফায় বসে। অভ্র ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলার মানুষ নয়। তাই সরাসরি বলে, “আমি দেশের বাহিরে যাচ্ছি কিছুদিনের মধ্যে। তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে সম্ভবত থাকতে পারবো না। তাই ভাবলাম যাওয়ার পূর্বে তোমার জন্য একটা উপহার দিয়ে যাই। সে উপহারের জন্য তোমার অনুমতি লাগতো।”
“অনুমতি?” ইনারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“তোমার খেলার বাজিমাতটা আমি দিতে চাই। অনুমতি।”
“সরি ভাইয়া আমি আপনার কথাটা বুঝতে পারছি না।”
অভ্র বাঁকা হেসে সোফায় হেলান দিয়ে পা’য়ের উপর পা রাখে। বলে, “তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো মোশতাক। তাকে তুমি সোজা রাস্তায় শাস্তি দিতে চেয়েছিলে? লাভ হয়েছে? হয় নি। সে ঠিকই বের হয়ে এসেছে। তাই এই ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দেও। তাকে আজীবন জেলের খাটনি কীভাবে খাটাতে হয় তা আমি ভালো করে জানি।”
মাঝখানে সভ্য বাঁধা দেয়, “ভাইয়া তুমি অন্যায়ভাবে কাজটা করতে চাইলে আমি এর অনুমতি কখনো দিব না। তুমি কতজনকে ভুল কেস-এ ফাঁসিয়েছ তার হিসাব আমার কাছে আছে। আমি জানি তুমি এখানে ইনারারর সাহায্য করতে আসো নি এমন ট্রিকস-এ তোমার মজা লাগে তাই এসেছ অথবা তোমার নিজের কোনো স্বার্থ আছে। স্বার্থ ছাড়া তুমি কিছু করো না।কিন্তু আমি অন্যায়ভাবে কিছু করতে চাই না।”
অভ্র হাসে। তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি চাবির রিং বের করে আঙুলে ঘুরায় ও বলে, “ন্যায় অন্যায় ভালোমানুষদের জন্য করা হয়েছে। মুশতাকের মতো মানুষদের মতো না। যে নিজে সারাজীবন অন্যায় করে এসেছে তার জন্য আবার কীসের ন্যায় অন্যায়? আর আমি তোর অনুমতি নিতে আসি নি,” অভ্র তাকায় ইনারার দিকে, “তোমার অনুমতি নিতে এসেছি। কারণ এটা তোমার মেটার। তুমি কী চাও? এমন একটা মানুষের সাথে ন্যায়বিচার করতে চাও যে তোমার সাথে কেবল অন্যায় করেছে। মনে রেখো, তোমরা দুইবছরেও তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারবে বলে সন্দেহ। কারণ তার হাতের মুঠোয় অনেক পরিচিত লোক আছে। কিন্তু আমি সে শাস্তি তাকে দুইদিন দেবার ব্যবস্থা করতে পারব।”

এবার ইনারা দ্বিধায় পড়ে গেল। সে সভ্যের দিকে তাকাল। আবার ভাবল অভ্রর কথাগুলো। সে ভুল কিছু তো বলছে না। মুশতাকের মতো মানুষ জানোয়ার থেকে অধম। তার জন্য আর কীসের ন্যায় অন্যায়? কিন্তু অভ্রকে হ্যাঁ বললে যদি সভ্য নারাজ হয়? কী করবে সে?

চলবে…

[দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here