অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৪৪
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
ইনারা তাকাল সভ্যের দিকে। ঘৃণা শব্দটা শুনে তার এই মুহূর্তে সভ্যের মনের অবস্থা জানতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু সভ্যের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।
ইনারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও পড়তে শুরু করল,
পৃষ্ঠা-৮৯ঃ গতকাল তিনমাস পর বলেই দিয়েছি সভ্যকে যে ওকে আমি কতটা ঘৃণা করি। ওকে আমার সহ্য হয় না। ওর সাথে থাকতে দম আটকে আসে আমার। আরও অনেক কথা শুনিয়েছি যে ওর কারণে কীভাবে আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। ওর মুখে বিস্ময় ও পীড়া স্পষ্ট দেখতে পারলাম আমি। কিন্তু ও কিছু বলল না। চুপচাপ শুনলো। রাগ উঠার কারণও আছে আমার। অযথা জ্ঞান দিতে এসেছিল। আমি যা করছি তা ভুল। আজকাল সারাক্ষণ এই কথাই কানের কাছে এসে বিড়বিড় করে। বাবার হয়তো ঠিকই বলতো, সভ্য আমার ভালো দেখতে পারে না, নাহলে আমার এত উন্নতি দেখে ও খুশি হতো না? ওকে এত জ্ঞান দিতে কে বলেছে? আমার বাবার থেকে তো ও আমার বেশি ভালো বুঝবে না তাই না?
কিন্তু কেন যেন ওকে এভাবে কষ্টতে দেখে আমারও কষ্ট হচ্ছে। ওকে তো আমি এখন আর বন্ধু মনে করি না, তাহলে ওর মন খারাপে আমার কি আসে যায়?
পৃষ্ঠা-৯০ঃ সেদিন সভ্যকে আমার মনের কথা বলার পর সে আর আমার সাথে কথা বলে নি। আমাকে আসলে বন্ধু ভাবলে এমনটা করতে পারতো ও? এসে কথা বলার তো চেষ্টা করতো। ও কখনো একটা ভালো বন্ধু ছিলোই না। অন্তত ও ভাবে নি।
পৃষ্ঠা-৯১ঃ আমাদের দুইজনের মধ্যে আজ ঝগড়া হয়েছে, মারামারিও হয়েছে। কারণটা বড় ছিলো না। গানের লিরিক্স নিয়ে ঝগড়াটা হলো। আসলে ঠিক তা না, গানের লিরিক্স তো এক বাহানা ছিলো। আমরা একে অপরের উপর নিজেদের রাগ, ক্ষোভ বের করছিলাম।
পৃষ্ঠা-৯২ঃ রাধিকাও একজন গায়িকা। ওর সাথে নতুন সম্পর্কে আছি। এই এক বছরে কতজনের সাথে এমন সম্পর্কে আছি জানি না। সব বাবার বাছাই করা। এখন আর কারও প্রতি ফিলিংস আসে না। আমার অনুভূতি অনেক আগেই মরে গেছে। কিন্তু মেয়েটা অন্যের সম্মান করতে জানে না। আমার কী? মেয়েরা সুন্দর হলেই চলে। তারা সুন্দর থাকলেই যেকেউ তাদের প্রেমে পড়ে যায়। আর একটি সুন্দর মেয়ে সাথে থাকলে আর কি লাগে। সবাই তোমাকে দেখে হিংসা করবে, জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আমি এই মুহূর্তে ব্যালকনিতে বসে ডায়েরি লিখছি আর সিগারেট খাচ্ছি। রাধিকা বিছানা থেকে উঠে তৈরি হচ্ছে। এখন চলে যাবে। তারপর হয়তো অন্য কাওকে ডেকে নিব বাড়িতে, নাহলে কোথাও যেয়ে বসবো। আর আমি কোথাও গেলে মানুষের অভাব হয় না আমাকে ঘিরে রাখার জন্য। আর আমার একা থাকা পছন্দ না।
ইনারা কয়েক পৃষ্ঠাবাদ দিয়ে গেল ১৭৬ নং পৃষ্ঠায়।
পৃষ্ঠা-১৭৬ঃ এই মুহূর্তে আমি এই বাড়িতে একা। এই স্থানে আমি একাই থাকি। বাসায় যেতে অশান্তি লাগে।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। কান্না পাচ্ছে খুব। কিন্তু আমার কান্না মুছার জন্য কেউ নেই। এই জীবন তো আমি চাই নি। কখনো চাই নি। আমি চেয়েছিলাম সারাজীবন আমার আশেপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে হাসিখুশি থাকতে। কিন্তু আজ আমার জন্মদিনেও আমার পাশে কেউ নেই। না পরিবার, না বন্ধুরা। আর ভালোবাসা তো আমার জন্য কেবল খেলা মাত্র। আমার সামনে কেবল একটি জন্মদিনের কেক রাখা। আর কোলে গিটার। এখন আর সিকিউরিটির জন্য ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল। কাজ থেকে ঘর এবং ঘর থেকে কাজ। এই রুটিনেই বাঁচছি। আমার তো মাঝেমধ্যে সন্দেহ হয় আসলে বেঁচে আছি আমি? সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে। কেন হয়েছে আমি জানি না। কিন্তু আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। মা’য়ের জন্য আমার বাবার সব প্রত্যাশা পূরণ করতে হয়। আমি যত চেষ্টা করি তার প্রত্যাশা আরও বাড়ে। এতটা আমি নিতে পারছি না। আর কী করব আমি? আমার আদরের ছোট বোন আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলে না। আমার বন্ধুদের আগের মতো আর আপন মনে হয় না। তাদের থেক ভিন্ন লাগে নিজেকে, ফ্যানদের জন্য নিজেক পার্ফেক্ট সাজাতে সাজাতে আমি ক্লান্ত, হেটার্সদের কথা শুনে মনে হয় আসলেই আমি নিজের স্বপ্ন গড়তে ব্যর্থ। আমি সব হারিয়েছি কেবল, কিন্তু অর্জন করতে পারি নি। আচ্ছা মরে গেলে কি এসবের সমাপ্তি ঘটবে?
পৃষ্ঠা -১৮০ঃ জানি না আমার কি হয়েছিল। নিজেকে মেরে ফেলে ফেলতে চেয়েছিলাম। বাবা আবারও তার নিরাশা ব্যক্ত করলেন, আমার মতো অযোগ্য ছেলে কেন তার কপালেই জুটল! এই কথা সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। সারাদিন বাসায় থেকে জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করলাম। অবশেষে রাতে হঠাৎ করে কিছু না বুঝেশুনে অনেকগুলো স্লিপিং পিল খেয়ে নিয়েছিলাম। সামি হঠাৎ এসেছিল। ও ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ব্যাপারটা কেউ জানে না। বাবা ও সামি ছাড়া। বাবা আমাকে কেয়ার দেখানোর পরিবর্তে ধমক দিলেন এবং এই কথা কারো কানে না যায় তার ব্যবস্থা করলেন। এরপর মানসিক ডাক্তারের কাছে সামি নিয়ে গেল আমায়। কারণ এমনটা প্রথমবার নয়। যখনই আমি চিন্তায় বা কষ্টে থাকি। আমার এমন এট্যাক আসে। আর আমি নিজের জীবন নিয়ে সব শেষ করার চেষ্টা করি।
ইনারা আবারও ডায়েরি পড়তে শুরু করে। সামনের কি লেখা তা জানার জন্য মনের কৌতুহল জাগছে। এরপর কিছু খালি পাতা পায়। তারপর কয়েকপৃষ্ঠা পর লেখা থাকে,
পৃষ্ঠা-১৮১ঃ আজ অনেক বছর পর ডায়েরিটা নিয়ে বসলাম। এ কয় বছরের জীবনে অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু ডায়েরি লেখার ইচ্ছা জাগে নি। আজ বিশেষ এক দিন। তাই ডাইরিতে বিশেষ এক ঘটনা লিখতে বসলাম। একটি মেয়ে আছে, নাম ইনারা। সাধারণ একটি মেয়ে। সাধারণ বললে ভুল হবে, মেয়েটা অসাধারণ। ওকে দেখেছিলাম বহুদিন আগে। মেয়েটা আমার জন্য পাগল ছিলো। সারাক্ষণ আশেপাশে ঘুরত। আমি তাকে পাত্তা দিতাম না। বিরক্ত লাগত আমার। মেয়েটা থাকতও ছেলেদের মতো। মেয়েদের এমন রূপ আমার কাছে বিরক্তিকর। কিন্তু এরপর কেন যেন ও হঠাৎ পরিবর্তন হতে শুরু করে। আমি জানতে পারি সভ্য মেয়েটাকে পছন্দ করে। আর কি লাগে আমার, অপছন্দের থাকা সত্ত্বেও মেয়েটার পিছে ছুটি আমি।
এক স্বপ্নচারিণীকে কনসার্টে দেখেছিলাম আমি। তাকে সেখানেই নিজেকে হারিয়ে ফেলি। এত সুন্দর মানুষ হয়? মানুষ বললে ভুল হবে। ওকে পরীর মতো দেখাচ্ছিলো। সদ্য মেঘ চিরে আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো পরী দেখাচ্ছিলো। প্রথম নজরে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। এর তাকে যেন আমি প্রায় স্বপ্নে দেখতাম। মেয়েটি ইনারাই ছিলো। সে ছেলেদের মতো পোশাক পরিধান করা ইনারা। তাকে এক পার্টিতে দেখে চিনতে পারি আবার। এখন ওকে আমার লাগতোই। কারণ হোক আমার স্বপ্নচারিণীকে পাওয়া, নাহয় সভ্যর কাছ থেকে ওর সব ছিনিয়ে নেওয়ার বাহানা। কিন্তু আজ আমি আর ওকে ওর সৌন্দর্যের জন্য পেতে চাই না। আজ ও ছেলেদের মতো থাকলেও আমার কিছু আসে যায় না। কারণ আজ আমি ওকে চাই। ওকে ভালোবাসি। আজ যখন মা’কে নিথর অবস্থায় দেখে আমি আবারও নিজের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম তখন ও আমার কাছে এলো, নিজের চিন্তা না করে আমার পাশে বসল। সযত্নে আমার হাতের কাঁচটি বের করে দিলো। আমি তাকিয়ে রইলার তার দিকে। ঠিক সে মুহূর্তে হঠাৎ আমার মনে হলো আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠেছে। হৃদয়ের স্পন্দন থেমে গেছে। ইনারাকে নিজ অজান্তেই খুব আপন মনে হতে শুরু করলো। এই প্রথম আমার মনে হলো আমার পাশে বসা মেয়েটাকে সারাজীবন এভাবে দেখে গেলেও তার দৃষ্টি ক্লান্ত হবে না। আমি এভাবে কারও জন্য অনুভব করি নি। কারও জন্য না। এবার ওকে আমার নিজের করে লাগতোই, আজ আর সভ্যকে হারানোর জন্য ওকে চাই না। ওকে ভালোবাসি বলে চাই। আজ ওর জন্য আমার যা আছে সব হারাতেও রাজি আমি।
পৃষ্ঠা-১৮২ঃ সভ্য অস্ট্রেলিয়াতে আছে। আর তার অপেক্ষায় তপস্যা করছে আমার ভালোবাসার মানুষটা। ওর অভিনেত্রী হবার ইচ্ছা। বাবার কথায় আমিও অভিনয়ে যাচ্ছি এই সুযোগে ওর কাছে আসার, ওর সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করছি। কী লাভ? ও তো ভালোবাসে অন্যকাওকে। আমার সাথেই এমন কেন হয়? আমি যা ভালোবাসি, যাকে ভালোবাসি, সব ও সবাই সভ্যের কপালে জুটে?
পৃষ্ঠা-১৮৩ঃ আমি থাকতে পারব না ইনারাকে ছাড়া। যেভাবেই হোক, ওকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ওকে আমার করেই ছাড়ব। যেভাবে হোক।
পৃষ্ঠা-১৮৪ঃ আজ সভ্য বাংলাদেশে এসেছিল। কোম্পানি থেকে জানতে পারি। ওর বাসায় এসে দেখি বাসা সাজানো। ইনারাকে প্রাপোজ করতো। কিন্তু ইনারাকে তো এখানে আসতে দেওয়া সম্ভব না। একবার ও সভ্যর মনের কথা জানলে ও কখনো আমার হতে পারবে না। ইনারার পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই আমি। সেখানে ইনারা ছিলো না, সে ছিলো একটা ফিল্মের অডিশনে। কিন্তু ফোনের মাধ্যমে ঐশি ও ইনারার কথাকে এভাবে শুনালাম সভ্যকে যে ও বিশ্বাস করতে বাধ্য ছিলো ইনারা আমাকে ভালোবাসে। ওকে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার দোহাই দিয়ে সব ছেড়ে দিতে বললাম। ও দিলোও। ওর এত সুন্দর মতো গড়া ক্যারিয়ার ফেলে চলে গেল! আমি ঠিক করেছি তাই না? আই মিন ভালোবাসা ও যুদ্ধে সব সঠিক, তাই না?
পৃষ্ঠা-১৮৫ঃ আচ্ছা আমি কী সভ্যর সাথে ঠিক করেছি? আমি কেবল আমার ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলাম, ওর ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই নি।
পৃষ্ঠা-১৮৬ঃ আমি ভেবেছিলাম সভ্য আমাদের জীবন থেকে চলে গেলেই ইনারাকে আমি পাব। অথচ চারমাস হয়ে গেল, এখনও ও আমাদের বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলেনি। উল্টো অন্যরকম হয়ে গেছে ও, এ তো সে ইনারা না যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম।
পৃষ্ঠা-১৮৭ঃ আজ আমি অনেক খুশি। আজ ছয়পাস পর ইনারা আমার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।
পৃষ্ঠা-১৮৮ঃ আজ, এত বছর পর, আমি বুঝতে পারছি সমস্যা সভ্যের ছিলো না, সমস্যা আমার ছিলো। এতটা বছর আমি আমার নিজের জীবন ধ্বংস করেছে। নিজের বন্ধু-বান্ধব, নিজের পরিবার, নিজের সুখ সব হারিয়েছি। কেবল আমার বাবার প্রত্যাশা পূরণ করতে। সে সবসময় বলতো, সে যা করছে আমার ভালোর জন্য করছে। না, সে আমার জন্য কিছুই করছে না। নিজের জন্য করছে। আমি তো কেবল তার হাতের পুতুল, যাকে সে যেভাবে মন চায় সেভাবে নাচাতে পারে। আমি তার ছেলে না, কেবল সে কাঠের পুতুল। নাহলে নিজের ছেলের খুশি কিছু সম্পত্তির লোভে এভাবে বিসর্জন দেয় কেউ? আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের সময় পাড় করছিলাম আমি। ইনারা আমার সাথে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। এর থেকে সুখের আমার কাছে কি হতে পারে? অথচ বাবা আমাকে ডেকে এমন কিছু করতে বলল যা আমি কল্পনাও করতে পারি না। সে আমাকে বলল আমার আইজার সাথে মিথ্যা সম্পর্কে যেতে ভবে। আমি হতবাক। কিছুদিন পর ওর বোনের সাথে আমার বিয়ে আর আমি এই মিথ্যে সম্পর্কে জড়াব? অসম্ভব! কিন্তু ব্যাপারটা আমার চিন্তা থেকে অধিক কঠিন ছিলো। তারা বড় কিছু পরিকল্পনা করছিলো। সম্পূর্ণ ব্যাপার আমি জানতাম না। কিন্তু আজ আমি প্রথম নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। এই প্রথম বাবার বিরোধে কথা বলেছি আমি। কিন্তু আমায় আশ্চর্য করে বাবা আমায় বলল আমি তাদের কথানুযায়ী না চললে তারা ইনারাকে খুন করে ফেলবে। তাদের কথায় বিশেষ ধ্যান দেই নি। অথচ সত্যিই সন্ধ্যায় ইনারা জানায় আজ তার এক্সিডেন্ট হতে নিয়েছিল। অল্পর জন্য বেঁচে গেছে। কাজটা বাবা করিয়েছে। আমি বাবাকে অনেক অনুরোধ করেছি এসবে না জড়াতে। তার পা’য়ে ধরে ভিক্ষাও চেয়েছি। লাভ হয় নি। মানুষের মন গলে, পাষাণের না।
পৃষ্ঠা-১৮৯ঃ আজ শুরু হয়ে গেছে ছলনার আয়োজন। আর আজও আমার কিছু করার নেই। এ কয়দিন রাত জেগে কেবল ভেবেই গেছি কি করব। অবশেষে সামিকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছি সভ্যকে। যাকে ইনারার থেকে দূর করার জন্য এতকিছু করেছি। অথচ আজ আমিই ইনারাকে তার কাছে পাঠাচ্ছি।হয়তো নিয়তিতে এটাই ছিলো। ইনারা কখনো আমার হবারই ছিলো না। সে তো সভ্যের কপালে লেখা ছিলো। আমি চেয়েও সে লেখা মেটাতে পারি নি। এবার সভ্য সময়ে আসলেই হলো। আমি ইনারা থেকে দূরে থাকতে পারব কিন্তু ওর ক্ষতি হতে দেখতে পারব না। ওর জানের বিনিময়ে আবারও বাবার কাঠের পুতুল হতে রাজি হয়েছি।
পৃষ্ঠা-১৯০ঃ আজ সব হয়ে শেষ হয়ে গেছে। ইনারাও চলে গেছে। আজকের দিনটি ইতিহাসের কালোরাতের মধ্যে একটি। আজ একটি নির্দোষ প্রাণ গেল, আমার ইনারার সম্মান নিয়ে সকলে প্রশ্ন তুলছে। আর আমি আজও চুপ করে আছি। আমার সামনে যখন ইনারা আহত অবস্থায় পড়ে ছিলো তখনো চুপ করে ছিলাম। ওর রক্ত দেখে আমার বুকেতে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ও যাবার সময় বলছিল ও সবার থেকে প্রতিশোধ নিবে। আমি চাই ও আমাকে শেষ করে দিক। আমি এরই যোগ্য। যে পুরুষ তার ভালোবাসার মানুষটিকে রক্ষা করতে পারে না, যে নিজের মা ও বোনের জন্য স্টান্ড নিতে পারে না, যে নিজের ভাইয়ের মতো বন্ধুকে এতবছর ধরে কষ্ট দিয়ে এসেছে কেবল ঈর্ষা করে তার আবার বেঁচে থাকার হক আছে?
অবশেষে ও চলে গেছে সভ্যর সাথে। আমি ওর পিছু গিয়েছিলাম। আমার চোখের সামনে সভ্য তাকে কোলে তুলে নিলো। ওকে নিয়ে চলে গেল।
ইনারা কেঁপে উঠে। ডায়েরির এই পৃষ্ঠায় রক্তের মাখামাখি।
চলবে…