অনুভবে ২য় পর্ব

0
4091

অনুভবে
২য় পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– সমাজের কথার জন্য মরবেন আপনি? কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন যে আপনি মারা যাওয়ার সাথে সাথে আপনি একটা খুন করছেন?
,
-খুন?
,
– হ্যা খুন। আপনার পেটের সন্তানকে তো আপনি খুন করতে চাচ্ছেন। ও কি চায় যে ও মরবে? নিজের সন্তানের পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য মা কত কিছুই না করে আর আপনি সামান্য কিছু মানুষের কথা শুনে মরতে চাইছেন?
,
– যেটা আমার আশ্রয় ছিলো সেটা এখন আমার জন্য বন্ধ। আমার বাড়িতে আমার অনুমতি নেই তাহলে কিভাবে বেচে থাকার সাহস পাবো আমি। শুনেছি বাবা-মা সন্তানের মনের কথা জানতে পারে কিন্তু আমার বাবা-মা আমার মনের কথা তো দুরে থাকুক আমার মুখের কথাও বোঝেনা। সারাজীবন ভুল বুঝেই গেলো।
,
– শুনন আমি একটা কথা বলি, এই পৃথিবীটা অনেক বড় যেটা আমার আপনার ভাবনারও বাইরে। আপনি এমন কোথাও চলে যান যেখানে কেও আপনাকে কথা শুনাতে আসবে না। আপনি আর আপনার সন্তান ভালো থাকবেন।
,
– শুন্য হাত শুন্য অনুভূতি, বেচে থাকায় দায়। এতো জ্ঞান না দিয়ে এটা বলতে পারছেন না যে আপনি আমাকে আশ্রয় দেবেন?
,
এবার হিমেল একটু ভাবতে লাগলো। আসলেই তো কাওকে জ্ঞান দেওয়া যতটা সোজা সেই কাজটা নিজে সাধন করা ঠিক ততটাই কঠিন। পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,
,
– আপনাকে আশ্রয় দেওয়ার মত আমার জায়গা নেই এমনটা নয় কিন্তু আমি আমার বাবাকে না বলে কিছুই করি না। এখন আপনার বিষয়টা বাবাকে বললে বাবা আপনাকে আশ্রয় দেবেনা আমি নিশ্চিত। অতএব আমার কিছুই করার নেই।
,
মিহি এবার একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
,
– তাহলে আপনি এখন আসতে পারেন। পৃথিবীটা খুব অদ্ভুত বুঝলেন। কেও সব সত্য জেনেও কিছু করতে পারেনা আবার কেও কেও সত্যটা বোঝার চেষ্টায় করেনা। আসল দোষী কারা জানেন? আমার মত মেয়েরা। যারা আবেগ দিয়ে সব কিছু করে, মাথার বুদ্ধি খরচ করে না।
,
হিমেলের কাছে জবাব দেওয়ার মত আর কিছুই নেই। ইশ! আজকে একটা মেয়েকে বাচাতে গিয়েও পারলো না সে। বাবার সিদ্ধান্ত বাইরে সে যাবেনা যাই হোকনা কেন।
তাই পিছু হাটা ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই।
,
,
পিছনে ফিরে নিজের গাড়ির দিকে চলতে লাগলো, মনে মনে, ” না না, এটা কিভাবে আমি হতে দিই। বাবার কঠোরতার কাছে হেরে গিয়ে একটা মেয়েকে মৃত্যু মুখে ফেলে যেতে পারিনা। এমনও তো হতে পারে অসহায় মেয়েটাকে দেখে বাবার দয়া হয়। খুশি মনেই হয়তো আশ্রয় দেবে।”
,
পিছন ঘুরে বলল,
,
– আপনি আমার সাথে যাবেন। আপনাকে আমি আশ্রয় দেবো।
,
– ভেবে বলবেন কিন্তু। একদিন এমন বোঝা হয়ে যাবো যে নিজের মাথা থেকে নামাতে পারবেন না।
,
– সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে। আপনি আসুন আমার সাথে।
,
হিমেল রোহনকে পিছনের সিটে সুইয়ে দিলো আর সামনে মিহিকে বসতে দিলো। সিট বেল্ট বেধে আবার ড্রাইভ শুরু করলো। মনের মধ্য খচখচানিটা বেড়েই চলেছে। আজকে বাড়িতে কি যে অপেক্ষা করছে ওর জন্য সেটা বিধাতায় ভালো জানেন। একটু গান শুনলে হয়তো চিন্তাগুলো দুর হতো কিনবা পাশে বসা মেয়েটার সাথে একটু গল্প করলেও মন্দ হয়না।
তাই হিমেল মিহিকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে গেলো। তার আগেই মিহি জিজ্ঞাসা করলো,
,
– এই ছেলেটা তো আপনার মনে হচ্ছেনা। কে ওটা?
,
-আমার ভাগনে।
,
– বাহ! বেশ শান্ত তো।
,
– দুষ্টু মানুষ ঘুমালে একটু বেশিই শান্ত লাগে?
,
– মানে ঠিক বুঝলাম না!
,
– ঘুম ভাংলেই বুঝতে পারবেন। এককাজ করি ওকে ডাক দিই। তাহলেই বুঝতে পারবেন ও কি জিনিস!
,
এরপর হিমেল রোহানকে কয়েকবার ডাক দিতেই উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে বলল,
,
– মামু , তোমার কি কাজ কাম নাই? আমারে ঘুম থাইকা তুইলা দিছো।
,
– তুই এসব কোন ভাষায় কথা বলছিস?
,
– রাগের বসে গালি দিবার পারিনো তাই উলটা পালটা ভাষায় কথা কই।
,
হিমেল চোখ দ্বারা মিহিকে বুঝালো, ” দেখলেন তো?”
,
মিহি মাথা নাড়ি সায় দিলো। রোহান আবার বলা শুরু করলো,
,
-মামু তুমি আমাকে পিছনের সিটে রেখেছো কেন? এই এই এই! এটা কে? তাহলে আমাকে ঘুমাতে বলে প্রেম প্রেম চলে?
,
হিমেল একটু চোখ গরম করে বলে,
,
– চুপ! আর একটুও বেয়াদবি না। একজন মানুষকে সাহায্য করছি।
,
– আমাকে চোখ গরম দিলে নানুকে বলে দিবো যে তোমার ছেলে সারাদিন মেয়েদের সাথে কাটায়।
,
– মামা আমার। আমিতো বললাম যে অনাকে সাহায্য করছি।
,
-কেন সাহায্য করলে তুমি উনারে এই সিটে বসাওনি কেন? আমাকে কেন পিছনে রাখবা? তার মানে উনি আমার মামী।
,
রোহানের কথা শুনে হিমেল আর মিহি দুজনেরই চোখ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এই ছেলে বলে কি? কোথাকার জল কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে।
,
হিমেল আবার রাগান্বিত চোখে তাকালো রোহানের দিকে কিন্তু এবার আর কিছু বলল না। গাড়ি চালিয়ে মিহির সাথে গল্প করতে করতে বাসায় পোছালো হিমেল।
,
কলিং বেইল চাপ দিতেই হিমেলের বাবা মুরাদ আহমেদ দরজা খুলে দিলো।
,
– বাবা তুমি দরজা খুললে! কাজের লোকেরা কোথায়?
,
– তোর মা হঠাৎ সিড়ি থেকে পড়ে যায় তাই তারা তোর মায়ের রুমেই আছে। মালিশ করে দিচ্ছে পায়ে।
,
– কি? তুমি আমাকে জানাওনি কেন?
,
– তুই তো আসছিলিই? জানালে যদি আবার গাড়ি হোরে চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করিস সে জন্য বলিনি। তাছাড়া খুব গুরুতর কিছু হয়নি।
,
পিছন থেকে রোহান এসে বলে
,
-নানু!
,
– আরে এটা কে এসেছে? আমার নানা ভাই দেখি। আসেন আসেন আমার কাছে আসেন। হ্যারে তোর পাশের মেয়েটাকে? কথা বলার চক্করে ভুলেই গেছি জিজ্ঞাসা করতে।
,
হিমেল কিছু বলবে তার আগেই রোহান বলে দিলো,
,
– নানু ওটা আমার মামী?
,
হিমেলের বাবা যে শক খেলো,
,
-মানে?
,
– মানে টা খুব সোজা নানু। ওটা আমার মামুর বউ মানে তোমার বউমা।
,
কথাটা শুনেই মুরাদ সাহেব নিজের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
,
– তোকে গত তিন বছর ধরে এই কাজটাই করতে বলে আসছি কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস নি। আমার কোনো রাগ নেই। তবে আহমেদ ইন্ডাস্ট্রি এর মালিকের ছেলে হয়ে কাওকে না জানিয়ে বিয়ে টা করে নিলি কেন?
,
মিহি যেন পাথরের মূর্তির মত দাড়িয়ে আছে। সব কি হচ্ছে ওর চোখের সামনে! এখন কি হবে? উনিতো ছেলের বউ হিসেবে ধরে নিয়েছেন মিহিকে। আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে লোকটাকে এতো বিপদে কেন পড়তে হলো? আমার মরে যাওয়ায় তো ঠিক ছিলো। লোকটা কি পারবে বাবাকে সত্যটা বলতে? নাকি আমার জন্য সব কিছু হারাবে?
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here