অনুভবে ২০তম পর্ব

0
4368

#অনুভবে
২০তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
হিমেল ঘাড় ঘুরিয়ে এটা দেখে বেশ খানিকটা অবাক হয় এবং রেগেও যায়। আজকে মিলিকে একটা চড় মারতেই হবে। ওর এতো বড় সাহস কিভাবে হলো ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও বাবুকে কোলে নেওয়ার।
,
হিমেল দৌড়ে ওখানে গিয়ে তাড়াতাড়ি বাবুকে কোলে তুলে নেয় আর মিলিকে বকতে থাকে,
,
– তোমাকে বারবার বলা হয়েছে এখন তুমি ওকে কোলে নেওয়ার মতো উপযুক্ত হওনি। তো কেন বাড়াবাড়ি করতে গেলে?
,
মিলি হিমেলের কাছে কোনদিন বকা খায়নি। আজকে হিমেল বকেছে এটা ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে তার।
মিলি হঠাৎ করে কেঁদে ওঠে আর বলে,
– আমি কবে ওকে কোলে নিয়ে খেলবো। আমি আরেকটু বড় হলে তো আমার ভাইয়ুও বড় হয়ে যাবে।
,
হিমেল রাগান্বিত স্বরে বলল,
,
– যদি তাই হয় তাহলে কোনোদিন কোলে নেওয়ার দরকার নেই। কি হবে কোলে নিয়ে বলি!
,
মিলি এবার হিমেলের সাথে তর্ক করে বলল,
,
-আমি আমার ভাইয়ুকে কোলে নিয়েছি তো তোমার কি? আমি কি ওকে ইচ্ছা করে ফেলে দিয়েছি নাকি! দেখছো না আমি আগে পড়েছি তার পরে ও আমার গায়ের উপর ও ছিলো!
,
কিন্তু হিমেলের রাগ কিছুতেই কমছে না। আরো কর্কশ কন্ঠে হিমেল মিলিকে বলল,
,
– আগেই বলেছি তোমাকে, ওকে কোলে নিতে কেউ বলেছে?
,
মিলিও কম যায়না,
,
– আমার ভাইয়ুকে আমি কোলে নেবো এর জন্য অন্য কারোর কাছে জিজ্ঞাসা কেন করব?
,
হিমেল রাগের বশে নিজের অজান্তেই হঠাৎ করে মিলিকে চড় মারার জন্য হাত তুলে ফেলে। তৎক্ষণাৎ নিজের ভুল বুঝতে পেরে হাত নামিয়ে নেয়। এতক্ষণে মিলি এতোটুকু বুঝে ফেলেছে যে হিমেল ওকে মারতে যাচ্ছিলো। তাই কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দেয় আর বলে,
,
– আমি তোমার মেয়ে নাই এই জন্যই তো মারতে যাচ্ছিলে।
,
হিমেল যেন ঘোরের মধ্যে আছে। মিলি এটা কি বলছে!
,
-মিলি এটা তুমি কি বলছো?
,
– হ্যা আমি ঠিকই বলছি। আমি তোমার পর সে জন্যই তো তুমি আমাকে মারতে যাচ্ছিলে।
,
কথাটা শুনে হিমেলের বুক যেন দ
ডুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে, প্রতিটা কথা তীর এর মত লাগছে।
,
মিহি তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে এসে এসব কান্ড দেখে নিজেই খানিকটা অবাক।
,
বাবুকে নিজের কোলে নেয় হিমেলের কাছ থেকে। মিহি ছোট্ট বাবুকে কোলে নেওয়ার সাথে সাথেই হিমেল মিলিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
,
– মারে জীবন থাকতে তুই একথা কখনো আমাকে আর বলিস না প্লিজ। তুই শুধু আমার মেয়ে না তুই হচ্ছে আমার কলিজার একটা অংশ। তুই আগে তারপরে তোর ছোট ভাই। এটা তুই কিভাবে বলতে পারলি!
,
হঠাৎ করে হিমেল কেঁদে ফেলে। মিহি বুঝতে পারে যে হিমেল এর কান্নার কারণ কি।
,
মিলি যে আসলেই হিমেলের মেয়ে না। এই কথাটাই মিলির মুখ থেকে শুনে কষ্টের মাত্রাগুলো হাজার গুনে বেড়ে গেছে।। যে কষ্টটা সারা জীবনের জন্য ভুলে থাকতে চায় সেটা মিলি হঠাৎ করে মনে করিয়ে দিয়েছে।
,
মিহি হিমেলের পাশে দাঁড়িয়ে মিলির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,
,
-এমন বলতে নেই মিলি। বাবা কষ্ট পায়।
,
মিলিও এবার হিমেলের বুক থেকে মাথা তুলে হিমেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ও দেখলো হিমেলের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
,
নিজের দুই হাত দিয়ে হিমেলের চোখের পানি মুছিয়ে দিলো তার।
তারপর নিজের চোখের পানি মুছে হিমেলের গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
,
-আব্বু আমি আর কোনদিন বলব না যে, আমি তোমার মেয়ে না। আর আমি আরেকটু বড় হলেই তারপর ভাইয়ুকে কোলে নেবো। তুমি কেঁদো না ঠিক আছে?
,
হিমেল মিলির মাথাটা আবার নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। এ যেন পরম শান্তি, সন্তানকে বুকে নেওয়ার মতো শান্তি একজন পিতা বা একজন মাতায় অনুভব করতে পারে যেটা হিমেল এখন অনুভব করছে।
,
,
প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর দেশের মাটিতে পা দিল মুহিত কিন্তু পরিচয়টা একদম ভিন্ন। রাকিব মাহমুদ এর পরিচয় নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলো মুহিত।
,
সাথে একটা মেয়ে, যার না আছে কোন সুখ না আছে কোন অনুভূতি যেটাকে আকড়ে ধরে বেচে থাকবে। মুহিতের মনে এখন উজ্জ্বল আলো জ্বলছে আজকেই হয়তো তার প্রিয়তমার সাথে দেখা হবে। ভালোবাসা আবার ফিরে আসবে।
,
রিতা এক বিপদ থেকে তো চলে আসলো কিন্তু রাকিব বিহীন দুনিয়ায় কি করে থাকবে! তার ভালোবাসা মাঝপথেই মাটির নিচে ঘুমিয়ে গেছে।
,
এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের সমস্ত কাজ শেষ করে মুহিত এবং রিতা এয়ারপোর্টের বাইরে বের হলো।
,
দুজন বাইরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। একজন ভালোবাসাকে ফিরে পাবে তার উত্তেজনা আরেকজন ভালোবাসাহীন বেচে থাকবে তার বেদনা। রিতা নিজেকে শান্ত করে মুহিতকে বলল,
,
– মুহিত আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
,
– আপনাকে ধন্যবাদ মিস রিতা আমাকে এত সাহায্য করার জন্য। আপনার এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না।
,
– এভাবে বলবেন না মুহিত। আমরা তো এখন বন্ধু তাই না! তাহলে এতো টুকু সাহায্য তো একে অপরকে আমরা করতেই পারি।
,
– ঠিক বলেছেন রিতা। তবে বন্ধুর সাথে আপনি বলতে রাজি না আমি।
,
– হা হা হা। ঠিক আছে তুমি বলবো আমরা। মুহিত আমি তাহলে আসি!
,
মুহিত রিতাকে একা কোথাও ছেড়ে দিতে রাজি না। রিতা একা কোথাও গেলে ডিপ্রেশন ওকে শেষ করে দেবে। তাই রিতাকে আটকে বলল,
,
– সে কি আসি বললে কি হবে? তুমি এখন আমার অতিথি প্লাস বন্ধু কোনোভাবেই তোমাকে আমি একা ছেড়ে দিতে পারবো না।। তুমি আমার সাথেই থেকবে। তাছাড়া আমার মিহির সাথেও তো পরিচিত হতে হবে, তাই না?
,
রিতাও মনে মনে এটাই চাইছিলো। বড্ড একা হয়ে গেছে সে। মুহিতের মত বন্ধুর বড্ড প্রয়োজন যেখানে বিশ্বাস ভরপুর থাকবে, আর থাকবে নিজেকে সোজা রাখার মত হাত।
,
,
মুহিতের প্রধান গন্তব্য এখন তার বাড়িতে যাওয়া। ঢাকা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে যেতে হবে তাই আর দেরি করা ঠিক হবেনা। কার ভাড়া করে রিতাকে নিয়ে রওনা দিলো গ্রামের উদ্দেশ্যে যেখানে হয়তো তার পথ চেয়ে বসে আছে মিহি। কিন্তু মিহির তার জীবন নিয়ে বিন্দাস আছে। মুহিতের স্মৃতিগুলো অনেকটা কুয়াসাছন্ন হয়ে গেছে। মিহি মুহিতকে আগলে রেখেছে মনের কোণে যদিও সেখানে এখন হিমেলের রাজত্ব আর রাজত্ব তার সংসারের।
,
,
সকাল একটু আগে থেকেই মিলি মুখ ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আম্মু বা আব্বুর সামনে পড়লে বড় বড় নিশ্বাস ফেলছে। মিহি বুঝতে পেরেছে মিলির এই হতাশা দেখানোর কারণ কি। যখনই মিলি এমন করবে তখনই মনে করতে হবে একটা বায়না এসে হাজির হবে। এজন্য মিহি যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলছে মিলির থেকে।
,
,
হিমেল একটু বাইরে গেছিলো। বাড়িতে এসেই মিলির এমন বড় বড় শ্বাস ফেলা দেখে হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।
,
– মিলি বলো কি চাও।
,
– কক্সবাজার।
,
হিমেল ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো,
,
– কোন দোকানে কক্সবাজার পাওয়া যায়?
,
– আব্বু তুমি এতো নাদান কেনো? কক্সবাজার কিনবো কেন? কক্সবাজারে ঘুরতে যাবো।
,
– আচ্ছা ঠিক আছে যাও।
,
মিলির সেরা অস্ত্র এবার তৈরি হচ্ছে। ঠোঁট উলটে কাদলেই আব্বু রাজি হয়ে যাবে এটা মিলির জানা। তাই ঠোঁট উলটে কাদা শুরু করে দিলো।
,
,
,
চলবে
,
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here