অনুভবে
২৩তম ও শেষ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
কিছুক্ষণের মধ্যে চট্টগ্রাম পৌঁছে গেলো। আরোহীর বাড়িতে বাবাকে নামিয়ে দিলো। ভাগনেকে নেওয়ার জন্য জোর করছিলো হিমেল। কিন্তু আগামী ওর পরীক্ষার জন্য ওকে পাঠাতে রাজি হলোনা আরোহী।
,
এতোক্ষণে মুহিতের জ্ঞান ফিরেছে। এদিকে মিহি তার সামনের সিটে বাবুকে বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে গেছে। হিমেল আবার গাড়ি চালানো শুরু করলো। এযেন এক থমথমে পরিবেশ, তুফান শুরু হওয়ার ঠিক আগে আবহাওয়া যেমন শান্ত হয়ে যায় তেমন কিছুর জানান দিচ্ছে যেন!
,
মুহিত আর রিতা টুকটাক কথা বলছে। রিতা মুহিতকে জানাচ্ছে কিভাবে তারা হেল্প পেলো হিমেলের।
,
মুহিত দেখলো হিমেল খুব মন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে তাই তাকে এখন ডিস্টার্ব করতে চাইলোনা। একটা ধন্যবাদ দেওয়া খুব জরুরি যদিও হিমেলের হেল্পের ঋণ ধন্যবাদ দিয়েও শোধ হবে না।
,
হঠাৎ মুহিতের ফোন বেজে ওঠে। মিস্টার মালেক কল দিয়েছে। রিতা কলটা ধরে,
,
– বাবার মর একজন মানুষ হয়েও আমাকে মারার লোক পাঠিয়েছিলেন এতোবড় কাপুরষ আপনি। আর কত নিচে নামবেন আপনি? পশুর থেকেও একধাপ নেমে গেছেন আপনি।
,
ওপাস থেকে মিস্টার মালেক কোনো কথা বলল না।
রিতা আবার রাগে রাগে বলল,
,
– কথা কেন বলছেন না? নাকি পাপবোধ উথলে পড়ছে। অবশ্য কোনো পাপীই তার পাপ দেখতে পায়না।
,
ওপাস থেকে ভিন্ন কন্ঠে কেও বলল,
,
– মিস্টার মালেক মারা গেছেন। কিছুক্ষণ আগে।
,
কথাটা শোনার সাথে সাথে রিতার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।
মুহিত রিতাকে জিজ্ঞাসা করলো,
,
– কি হয়েছে রিতা তোমার হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো কেন? আর এভাবে কাপছো কেন?
,
– মালেক আংকেল, মালেক আংকেল……
,
– হ্যা, কি হয়েছে বলো!
,
– আংকেল মারাগেছে।
,
মুহিত তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে কানে ধরে, তারপর বলে,
,
– কিভাবে মারা গেছে?
,
– এখন থেকে বাংলাদেশের কাওকে ফোন দেয় আপনাদের সাথে কথা বলার পর আর বলে আপনাদেরকে মেরে ফেলতে।
,
– সেটা তো আমরা বুঝতেই পেরেছিলাম, তারপর বলুন।
,
– এরপর স্যার নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর আমি নক দিলে উনি দরজা খোলেন না। ইভেন উনি দরজা আটকিয়েই রাখেন না কোনোদিন। আমি আরো কয়েকবার ডাকার পর দরজা না খুললে আমি অন্য একটা ঘরের চাবি দিয়ে দরজার লক খোলার চেষ্টা করি। ভাগ্যক্রমে দরজা খুলে যায়। দরজা খুলেই দেখি ওনার মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছে। আমি তাড়াতাড়ি ওনার কাছে গিয়ে৷ বুঝতে পারি উনি এখনো জীবিত আছে। এরপর ওনাকে হাসপাতালে নেবো সে জন্য ঘরের বাইরে এসে ফোন দিতে চাই। কিন্তু উনি আমার হাত চেপে দাড়াতে বলেন শান্ত এবং ভাঙা গলায়।
,
মুহিত চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। আবার অপর পাশ থেকে বলা শুরু করলো,
,
– একটা নাম্বারে কল দেয় আর বলে আপনাদেরকে যেন ছেড়ে দেয়।
,
মুহিত একটু নড়েচড়ে বলে,
,
– ওনার মারা যাওয়ার কারণ?
,
– পোস্টমর্টেম চলছে। কারণ জানাগেলে আপনাদের জানাবো। আর হ্যা আমি ওনার এসিস্টান্ট।
,
– হম, আমি কন্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছি। রাখছি এখন
,
মুহিত ফোনটা রেখে দিয়ে। রিতার দিকে তাকায়৷ মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
,
– রিতা, ওই লোকটার জন্য তুমি কাদছো যে তোমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছিলো।
,
রিতা চোখের পানি মুছে বলে,
,
– শেষ সময় যে তার ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে শুধরে নিতে পারে তার উপর ঘৃণা রাখা যায়না। যদিও সে অনেক দোষী তবুও ছোটো থেকে আমাকে নিজের সন্তানের চেয়ে একটুও কম ভালোবাসে নি। হ্যা লোভের জন্য সে অনেক ভুল করেছে পাপ করেছে। আমার সাথেও অন্যায় করেছে। তবুও আমি তাকে ঘৃণা করতে পারছিনা মুহিত। আমার চোখ দিয়ে জল বের হবেই মুহিত। আমাকে কাদতে দাও।
,
নিজের অজান্তেই মুহিতের বুকে মাথা রাখলো রিতা। মনের যন্ত্রণার জন্য কারো বুকে মাথা রেখেছে এটা যেন ভুলেই গেছে রিতা। মুহিতও রিতাকে সরিয়ে দিচ্ছেনা। একটু কাদতে দিতে চায় মেয়েটাকে। মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
,
কক্সবাজার পৌঁছে যায় আরো কিছুক্ষণ পর।
,
মুহিত এবং রিতাকে তাদের হোটেলে নামিয়ে দেয় হিমেল। মিহি বাবুকে নিয়ে এখনো ঘুমিয়ে আছে সিটে হেলান দিয়ে।
,
মুহিত এবং রিতা গাড়ি থেকে নেমে যায় কিন্তু ভাগ্যের কি খেলা মুহিত একবারো মিহি দিকে তাকায় না। একবার তাকালেই অনেক কিছু ঘটতে পারতো। ভালোবাসা, অবাক, অভিমান কিন্তু তার কিছুই ঘটলো না।
,
হিমেল গাড়িটা নিজেদের বুক করা হোটেলে নিয়ে গেলো।
,
সারারাস্তা ঘুমালেও আজকে আর বাইরে যেতে ইচ্ছা করছেনা মিহির। মিলিও এতো এক্সাইটেড থাকলেও এখন সে বিচে যাবেনা। অজ্ঞতা হিমেল নিজেই ফ্রেস হয়ে বের হলো।
,
,
বিচে গিয়ে দেখলো মুহিত বালির উপর বসে কিছু একটা লিখছে আর বারবার সমুদ্রের ঢেউ এসে সব কিছু মিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
,
হিমেল মুহিতের পাশে বসে বলল,
,
– যার নাম মনে লিখেছেন তার নাম এই বালুতে লিখে কি লাভ।
,
মুহিত ঘাড় গুড়িয়ে দেখলো তার পাশে হিমেল বসে আছে।
,
– যে এখন আমার মনটাকে ভেঙে দিয়ে চলে গেছে তার নাম মনে আর বালি, যেখানেই লিখি মুছেই যাবে।
,
– হাহাহা। এসব আপনার ওয়াইফ জানে?
,
মুহিত বেশখানিকটা অবাক হয়। “তার মানে সারারাস্তা এইলোকটা আমাদের স্বামী-স্ত্রী মনে করেছে!।
,
মুহিত হিমেলকে বলল,
,
– আমার তো বিয়েই হয়নি?
,
– এটা আপনি কি বলছেন? জোক্স, রাইট?
,
– না জোক্স না। যাকে আমার বউ ভাবছেন সে আমার বান্ধবী।
,
এরপর মুহিত বিদেশে যাওয়ার পরের সব ঘটনা বলল।
,
হিমেল শুনে বলল,
,
– তাহলে যার জন্য দেশে ফিরেছেন সে আর এই দুনিয়ায় নেই তাইতো?
,
মুহিত দৃষ্টি শূণ্যে দিয়ে বলল,
,
-হমম। কিন্তু সে বেচে আছে আমার অনুভবে। জানেন হিমেল সাহেব! আমার পাপ আমাকে এই জায়গায় এনে দিয়েছে।
,
– মানে? কি পাপ করেছেন আপনি?
,
– একবার সে আমাকে বারবার বলে বিয়ে করতে। আমি ভাবছিলাম নিজের বিজনেস দাড় করিয়ে তারপর বিয়ে করবো কিন্তু সে বিয়ে করেই ছাড়বে। তারপর আমি তার সাথে বিয়ের অভিনয় করি। আর এটাও মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই যেদিন বিদেশ থেকে ফিরবো সেদিন সত্যিটা জানিয়ে আবার আমরা বিয়ে করে নেবো। কিন্তু বিয়ের পর সে বায়না ধরে এই কক্সবাজার ঘুরতে আসবে।
আমিও তার কথা মত রাজি হয়ে যায়। দুইটা রুম বুক দিতে চাই। কিন্তু ও বলে আমরা স্বামী-স্ত্রী তাহলে ১ রুমেই কেন থাকবোনা। আমি তখন ১টা রুম ভাড়া নিই। ওকে সত্যটা জানাইনা যে আমাদের বিয়েটা আসলেই হয়নি।যদি জানাতাম তাহলে হয়তো আমাকে প্রতারক ভাবতো।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সেদিন রাতে ও আমার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইলো। আমার কন্ট্রোলে আর কিছুই ছিলো। যা হবার হয়েই গেছিলো।
বাড়িতে এসে শুনেছিলাম ওর নাকি গর্ভে সন্তান ছিলো আমার। আর ও আত্মহত্যা করেছে কলংকের দাগ নিয়ে।
,
ওই বলে মুহিত চোখের জমে থাকা পানি ছেড়ে দিলো।
,
হিমেল সব কিছু মিলিয়ে দেখছে ঘটনাটা মিহির সাথেই মিলে যাচ্ছে। তাও সিওর হওয়ার জন্য একবার জিজ্ঞাসা করলো মুহিতকে,
,
-আচ্ছা আপনার সেই মানুষটার নামটাই তো জানা হলো না।
,
– মিহি।
,
,
হিমেল যেন নিজের চোখে নিজের ভবিষ্যৎকে দেখতে পাচ্ছে, ‘হিমেলের ছোট্ট বাবুকে হিমেলের কাছে দিয়ে মিহি মুহিতের হাত ধরবে আর হিমেলকে ছেড়ে চলে যাবে’।
,
– হিমেল সাহেব কোথায় হারালেন?
,
– না কিছুনা।
,
হিমেল উঠে পড়লো আর ভালো লাগছেনা কিছু। নিয়তিতে যা লেখা আছে সেটা হবে। হিমেল হোটেলে ফিরে যায়।
,
পরদিন,
,
মিহি লক্ষ করছে হিমেল তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রাতে ঠিক ভাবে কথা বলেনি, খাওয়ার সময় মাথা নিচু করে ছিলো, আবার এখন বিচেও যেতে চাচ্ছেনা।
,
– হিমেল আমি কোনো ভুল করলে আমাকে বলো কিন্তু এমন কেন করছো তুমি?
,
– কই মিহি! আমি তো ঠিকই আছি!
,
– তাহলে চলো বিচে যাবো।
,
– তুমি যাও আমি আসছি একটু পর। বাবুকে আমার কাছে রেখে যাও।
,
– ঠিক আছে।
,
এরপর মিহি ভাবলো মিলিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু মিলি এখন বিচে যাবেনা। কার্টুনের নেশায় পেয়েছে তাকে।
,
তাই মিহি একাই হাটতে গেলো।
,
,
রিতার আর মুহিত বিচে হাটছে পাশাপাশি। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ মনকে প্রফুল্ল করে দিচ্ছে। হঠাৎ সামনে একটা মেয়েকে দেখতে পায় মুহিত।
,
– রিতা দেখো ওটা আমার মিহি।
,
হঠাৎ করেই মুহিতের চোখে আনন্দের পানি চিকচিক করতে থাকে। দৌড়ে গিয়ে মিহিকে জড়িয়ে ধরে।
,
হিমেল ভাবলো মিহিকে একা আসতে বলা ঠিক হয়নি তাই সে মিহির পিছনে আসে। কিন্তু মুহিত মিহিকে জড়িয়ে ধরে আছে এটা দেখে হোটেলে ফিরে যেতে থাকে মুখে কষ্টের হাসি নিয়ে।
,
,
যেহেতু মুহিতের মুখে সার্জারী করা তাই এটাই মুহিত মিহি সেটা জানেনা। ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দিলো মুহিতের গালে।
মুহিত নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। এই চড় যেন তার গালেই লাগেনি। মিহির কপালে চুমু দিতে যায়। মিহি একটা ধাক্কা দেয় মুহিতকে।
,
মুহিত পরিস্থিতি বুঝতে পারে তাই বলে,
– মিহি আমি তোমার মুহিত। আমাকে চিনতে পারছোনা?
,
– মুহিত! সেতো মারা গেছে।
,
– আমিই মুহিত।
,
এরপর মুহিত খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু খুলে বলে। আর তাদের যে আসলেই বিয়ে হয়নি সেটাও বলে এবং এই কক্সবাজারেই বিয়ে করতে চায় জানায়।
,
– এক্সকিউজ মি মিস্টার মুহিত, আমার স্বামী আছে। আপনার এই নষ্ট চরিত্রটা আর আমার সামনে আনবেন না দয়া করে। আমার সাজানো সংসারটা ভেঙে দিয়েন না।
,
এই বলে মিহি সেখান থেকে চলে যায়। কাদতে কাদতে হোটেলের দিকে যেতে থাকে। কিছুদুর যেতেই হিমেলের দেখা পায়। দৌড়ে গিয়ে পাবলিক প্লেসেই হিমেলকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিহি।
,
বাবু কোলে থাকায় হিমেল কিছুটা ভারসাম্যহীন হলেও নিজেকে সামলে নেয়। মিহি হিমেলের সামনে গিয়ে কিছু বলবে তার আগেই হিমেলের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে।
,
– তুমি কাদছো কেন হিমেল?
,
– না মানে কিছু না।
,
– বিচে গেছিলে?
,
– ইয়ে মানে, হ্যা।
,
মিহি বুঝতে পারে হিমেল তাকে ভুল বুঝেছে। তাই বলে,
,
– সব চোখের দেখা এক হয়না হিমেল।
,
হিমেল কিছুটা ইগনোর ভাব করে বলে,
,
– হম, হোটেলে চলো।
মিহি কাদতে কাদতে বলে,
,
– এখন শুধু হোটেলে না। সোজা বাসায় ফিরে যাবো।
,
– কি বলছো মিহি! মিলির কক্সবাজার ঘোরা কি হবে?
,
– প্লিজ হিমেল। আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। প্লিজ।
,
কাদতে কাদতে মিহি বলে।
,
হিমেল মিহিকে নিয়ে হোটেলে যায়। তারপর সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে চট্টগ্রামে রওনা দেয়।
,
মুহিত দৌড়ে এসে মিহিদের গাড়িটা ধরতে পারেনা। আগেই বের হয়ে যায় হোটেলে এরিয়া থেকে।
,
রিতা মুহিতের কাধে হাত রেখে বলে,
,
– এতো ব্যস্ত হইয়ো না মুহিত। সব ঠিকঠাকই হবে আল্লাহ চাইলে। চলো এই হোটেল থেকে ওদের ঠিকানা নিই। তোমার ভালোবাসাকে তোমার কাছে দেওয়ার অনুরোধ করবো।
,
হোটেল থেকে খুব কষ্টে মিহির বাসার ঠিকানা পায় মুহিত।
,
চট্টগ্রামে গিয়ে বাবাকে নিয়ে ১মিনিটও দাড়ায়না হিমেল। আরোহী বুঝতে পারে মিহির মন অনেক খারাপ তাই জোর করেনা। এমনিতেও আরোহী সামনের মাসে ঢাকায় যাবে।
,
,
মুহিত আর রিতা ১ ঘন্টা পর বের হয়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে।
,
,
পরদিন সকালে,
,
হিমেল অফিসে চলে যায়। ব্যাবহারটা মিহিকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। মিহি অনেক কিছু বলার চেষ্টা করেছে কন্তু হিমেল সুযোগ দেয়নি।
,
মিহি ড্রইং রুমে বসে আছে। মিলি আর তার দাদুর ইয়ারকি আড্ডা দেখছে।
,
হঠাৎ কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে মুহিতকে দেখে আতকে উঠলো মিহি। সে চাইনা মুহিত তার জীবনে আসুক আর।
,
দারোয়ানকে ডাক দিয়ে মুহিতকে বাসা থেকে বের করে দেয়।
,
হিমেলের বাবা জিজ্ঞাসা করলে মিহি বলে,
,
– ওটা একটা ফ্রড কোম্পানির লোক।
,
,
মুহিত সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। অবশেষে চলে যায়।
,
হিমেল রাত ১০ টার দিকে বাসাতে ফিরে আসে।
,
মিহি হিমেলের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু হিমেল মিহিকে এড়িয়ে চলে। যেটা বারবার মিহি খুব যন্ত্রণা দেয়। ওতো বলতে চায় হিমেলকে সব কিছু। তাহলে হিমেল কেন কথা শোনে না।
,
এভাবে ১মাস কেটে যায়। হিমেল রোজ রাত করে ফেরে, ছুটির দিনেও।
,
মুহিত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিহির সাথে একটু কথা বলার অপেক্ষাতে থাকে। কিন্তু মিহির নির্দেশ অনুযায়ী দারোয়ান মুহিতকে বাসায় ঢুকতেই দেয়না। একদিন হিমেল বাসায় আছে। কি কারণ নিজেও জানেনা।
,
মিহি জানালা দিয়ে দেখলো আজকেও মুহিত রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। সিদ্ধান্ত নিলো আজকেই সব কিছু ঠিক করতে হবে। আর ভালো লাগছেনা। তাই দারোয়ানকে দিয়ে নিজের নাম্বার মুহিতকে দিতে বলল।
,
মুহিত নাম্বার পেয়ে কল দিলো কিন্তু মিহি ধরলো না। মেসেজে জানালো বাসার থেকে কিছুটা দুরের একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করবে। মুহিত চলে গেলো রেস্টুরেন্টে।। মিহির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
,
,
মিহি মোবাইল রেখে বাথরুমে ফ্রেস হতে গেলো। হিমেল মোবাইল চেক করে দেখলো মিহি মেসেজ দিয়েছে কাওকে। বুঝতে বাকি রইলোনা এটা কে হতে পারে। নিজের ফোন বের করে একজন উকিলকে ফোন দিলো,
,
-ডিভোর্স লেটার লিখতে কতক্ষণ সময় লাগবে?
,
– স্যার সব লেখায় আছে জাস্ট নাম বসাইলেই হয়ে যাবে।
,
হিমেল তার আর মিহির নাম বলল। ওদিক থেকে বলল ২০ মিনিটে লেটার পাঠিয়ে দিচ্ছে।
,
এই অধমরা সম্পর্কটাকে আর এগিয়ে নিতে চাইনা হিমেল। এটার শেষ এখানেই হয়তো! জানালা দিয়ে দেখলো বাইরে মুহিত নেই। ভাবলো অপেক্ষা করতে চলে গেছে রেস্টুরেন্টে।
,
ঘর থেকে বের হয়ে নিচে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে লেটার দিয়ে যায় একজন।
,
হিমেল লেটারটা হাতে নিয়ে ঘরের দিকে আসে। তখন দেখে মিহি খুব সেজেগুজে ঘর থেকে বের হচ্ছে।
,
– কোথায় যাচ্ছো মিহি?
,
– ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। তুমি বাবুকে দেখো একটু।
তোমার হাতে ওটা কি?
,
– কিছুনা যাও।
,
হিমেল দৌড়ে ঘরে চলে যায়। লেটারটা টেবিলের উপর রেখে। সার্ভেন্টকে বাবুকে দেখতে বলে মিহির পিছু নেই। মাথায় একটা টুপি পরে নেই যাতে চেহারা লোকানো যায় সে জন্য।
,
বাসা থেকে হেটে ৫মিনিট পর রেস্টুরেন্টে পৌছালো মিহি। সেখানে মুহিত বসে অপেক্ষা করছে অধীর আগ্রহে।
,
মিহি গিয়ে সামনের চেয়ারে বসলো।
,
হিমেল গিয়ে ঠিক মিহির পিছনের চেয়ারে বসলো। মিহি বা মুহিত কেও সেটা খেয়াল করেনি।
,
,
মুহিত বলল,
,
– আমি জানতাম মিহি তুমি আমার ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারবেনা।
,
মিহি হঠাৎ করে মুহিতকে অবাক করে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে মুহিতের পা ধরলো।
,
– একি মিহি! তুমি পা ধরছো কেন?
,
– হিমেল আমি তোমার ভালোবাসায় ধরা দিতে আসিনি। আমি হিমেলকে কতটা ভালোবাসি সেটা বলতে এসেছি।
প্লিজ তুমি আমার লাইফ থেকে চলে যাও। একবার তো হারিয়েছো। আমি আমার মনের সব জায়গা হিমেলকে দিয়ে দিয়েছি। তুমি শুধু আমার অনুভবে আছো। আমি শুধু হিমেলকে ভালোবাসি। প্লিজ চলে যাও। আমি হিমেল আর আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখে আছি। তুমি যদি আমাকে ভালোবেসেয় থাকো চলে যাও।
,
-পা ছাড়ো মিহি। আমি চলে যাবো আর কোনোদিন তোমার সামনে এসে তোমাকে অসুবিধায় ফেলবোনা। একটা কথার উত্তর দাও। তোমার গর্ভে আমার যে সন্তান ছিলো সেটা কি ওই মেয়েটা যেটা কক্সবাজারে দেখেছিলাম।
,
– না তোমার সন্তান আমার গর্ভেই নষ্ট হয়ে যায়। ওটা হিমেলের মেয়ে। অল্প বয়সেই অনেক বড় হয়েগেছে।
,
– আমার সব উত্তর পেয়েগেছি মিহি। ভালো থেকো।
,
এরপর মুহিত চলে যায়।
,
মিহিও যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আজকে হিমেলকে সব শুনতে হবে।
,
মিহি তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা দেয়। হিমেল কিছুটা পরে বের হয় রেস্টুরেন্ট থেকে।
,
,
মিহি ডিভোর্স লেটার হাতে নিয়ে বসে আছে আর কেদে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর হিমেল এসে এটা দেখে। তাড়াতাড়ি মিহির হাত থেকে লেটার নিয়ে ছিড়ে ফেলে।
,
– হিমেল এটা কোথা থেকে আসলো। কেন ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো আমাকে?
,
হিমেল আর কোনো কথা না বলে মিহিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
,
– তোমাকে আর কষ্ট দেবোনা মিহি। বুকের পাজরে আগলে রাখবো।
,
মিহি ১ মাস পর তার প্রিয় স্থান ফিরে পেয়েছে। এই সুখটাই যে সে চায় বারবার।
,
,
১০ দিন পর,
,
রিতা বাংলাদেশে থাকবেনা। মালয়েশিয়ায় থাকবে ঠিক করেছে। কেন সে নিজেও জানেনা। মুহিত তাকে এয়ারপোর্টে এগিয়ে দিতে যাচ্ছে।
,
দুইজন গাড়ির মধ্যে পাশাপাশি সিটে বসে আছে। মুহিত বারবার কিছু বলতে চাচ্ছে রিতাকে কিন্তু বলে উঠতে পারছেনা।
,
রিতা এটা দেখে বলল,
,
– কিছু বলবে মুহিত?
,
– ইয়ে মানে, না।
,
– বলে ফেলো মুহিত, আর কোনোদিন সুযোগ পাবেনা হয়তো।
,
-কেও থাক অনুভবে কেও থাক ভালোবেসে।
রিতা আমাদের অতীতকে অনুভবে রেখে কি আমরা একে অপরকে ভালোবাসতে পারিনা?
,
মুহিতের কথা শুনে রিতা ড্রাইভারকে বলল,
,
– ভাইয়া বান্দরবান যাবেন?
,
– হঠাৎ এয়ারপোর্টে থেকে বান্দরবান?
,
-জ্বি?
,
-হ্যা যাবো।
,
– চলুন তাহলে।
,
,
রিতা নিজের মাথাটা মুহিতের কাধে রাখলো। ভালোবাসার শুরু হোক এখান থেকেই। অনুভবে রয়ে যাক অতীত গুলো।
,
গাড়ি চলতে লাগলো বান্দরবানের পথে।
,
কেও রবে অনুভবে
কেওবা রবে অস্তিত্বে,
কেও হাত ধরে পূর্ণতা দেবে
কেওবা হাত ছেড়ে চলে যাবে,
কেও চোখে হারাবে
কেওবা মনে লুকাবে,
কেও ছুয়ে দেবে,
কেওবা অনুভবে।
,
সমাপ্ত
,
#অনুভবে
#রাফিজা_আখতার_সাথী
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
Ata ki Youtube voice version diben plz
Jani na kivabe bojhabo, golpo ta khub valo legeche. Thank you so much for the story.