অনুভবে ৮ম পর্ব

0
3540

অনুভবে
৮ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– এখন আমি কি করবো! নিশ্চয় মিস্টার হিমেল এসেছেন। আমি ভেজা গায়ে ওনার সামনে দরজা খুলতে পারবোনা। তার থেকে বরং দরজাটা হালকা খুলে হাত বাড়িয়ে ড্রেসগুলো নিয়ে নেবো। কিন্তু যদি বাই চান্স দরজা সম্পুর্ন খুলে যায়!
,
দরজায় আবার টোকা পড়লো মিহি একটুও সাহস পাচ্ছেনা দরজা খুলতে। অবশেষে দরজা হালকা খুলে হাত বাড়িয়ে বলল,
,
– ড্রেস গুলো আমার হাতে দিন।
,
বলার সাথে সাথেই ড্রেসগুলো কেও একজন মিহির হাতে দিয়ে চলে যেতে থাকলো। মিহি আসলেই জানেনা ড্রেস গুলো কি হিমেল এনেছিলো নাকি অন্য কেও। দরজাটা আরেকটু খুলল দেখার জন্য যে আসলেই এ ঘরে কে এসেছিলো।
,
পিছন থেকে হিমেলকে দেখা যাচ্ছে।
,
“মিস্টার হিমেল আপনি কেমন মানুষ? আপনার সাথে যে খারাপ ব্যবহার করে তাকেই কেয়ার করেন! আপনার প্রতি সম্মান দিনে দিনে বাড়তেই আছে। আশাকরি আপনার জীবন সঙ্গিনী সুখে থাকবে।”
,
“ইশ! ওনার জীবন সঙ্গিনী তো আমিই হবো। হয়তো যত দিন বেচে থাকবো ততদিন। নাকি তার আগেই আমাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে? হলেই বা কি আমার মেয়েটা প্রতিষ্ঠিত হলেও তো আমার দ্বায়িত্ব শেষ। তখন আর হিমেলকে তো আমার লাগবেনা। আমি নিজেই নিজের রাস্তা দেখতে পারবো।”
,
“আসলেই আমি যেন দিন দিন কেমন স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। যে আমার জন্য নিজের সুখ ত্যাগ করতে রাজি ছিলো তাকে বারবার ব্যবহার করতে চাচ্ছি। মাঝে মাঝে নিজের উপরেই ঘৃণা হচ্ছে।”
,
,
কিছুক্ষণ পর মিহি গোসল শেষে ঘর থেকে বের হয়। আরোহী খাবার নিয়ে প্রবেশ করে। একটু পর হিমেল আসে।
আরোহী হিমেলকে দেখে বলে,
,
– আয়, মিহি আর তুই পাশাপাশি বসে যা। আমি নিজ হাতে তোদেরকে খাইয়ে দেবো।
,
মিহি বিছানায় উঠে বাবু হয়ে বসে পড়ে। আরোহী হিমেলকে ইঙ্গিত করে যে মিহি যেভাবে বসেছে ওভাবে বসতে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিহির পাশেই বাবু হয়ে বসে মিহি।
,
আরোহী খাবার মাখিয়ে একবার হিমেলের গালে আর একবার মিহির গালে তুলে দেয়।
,
– তোদেরকে আমি একই প্লেটে খাইয়ে দিচ্ছি কেন জানিস?
,
হিমেল কথা না নে চুপচাপ বসেই থাকলো।।মিহি জবাব দিলো,
,
– আপু আমার জানা নেই।
,
– তোদেরকে এক প্লেটে খাওয়াচ্ছি এর জন্য যে তোদের যেন একে অপরের প্রতি ভালোবাসাটা বাড়ে।
,
হিমেল একটু বিরক্তি নিয়ে বলল,
,
– আপু তুই এধরণের কুসংস্কারে কবে থেকে বিশ্বাস করা শুরু করলি?
,
– এটাই কুসংস্কারের কি দেখলি তুই?
,
– এক প্লেটে খেলে কিভাবে ভালোবাসা হয়? তোর সঙ্গা মতে তাহলে এক পুকুরে সবাই গোসল করলে সবার মধ্যে ভালোবাসা হবে তাইতো?
,
– আমাকে মাফ কর ভাই। এতো প্যাচ আমার মাথার মধ্যে নেই। এখন আমার ইচ্ছা হয়েছে তোদের দুইজনকে খাওয়ানোর তাই খাওয়াচ্ছি। এবার হয়েছে?
,
– হ্যা এবার হয়েছে। ওসব আজাইরা কথা আর বলবিনা। ভালোবাসা ভাতের সাথে সম্পর্কিত না আপু। ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি যার সম্পর্ক মনের সাথে। একজন না চাইতেও আরেকজন ভালোবেসে ফেলে, তার জন্য নিনের জিবন বাজী রাখতেও দ্বিধা করেনা। সর্বদাই তার ছোয়া চায়। মনে হয় সারাক্ষণ তার কাছি থাকি।
,
হিমেল ভালোবাসার সঙ্গা দিতে গিয়ে ভুলেই গেছে যে ও ওর বোনকে এটা বলছে। মিহি মুখ চেপে হাসতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু একটু আগেই তো হিমেলের সাথে ওর মনোমালিন্য হলো এখন আবার হাসিটা হিমেল দেখে ফেললে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে। কিন্তু ওর দেওয়া ভালোবাসার সঙ্গা শুনে খুব কষ্ট করে হাসি আটকে রেখেছে।।
,
আরোহী হঠাৎ ফিক করে হাসি দিয়ে ফেলে। ব্যাস! আর কে আটকে রাখে মিহিকে হো হো করে হাসতে থাকে মিহি। আজকে হাসির বাধ ভেঙেছে।
,
এই প্রথম হিমেল মিহির হাসি মাখা মুখটা দেখছে। ইচ্ছা করছে ওর হাসিটার সাথে মিশে যেতে। ওকে বারবার ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এটাকি ভালোবাসা নাকি জাস্ট চাহিদা?
,
অবশ্যই এটা ভালোবাসা নাহলে মিহির থেকেও অনেক ভালো ভালো মেয়ে আছে তাদেরকে কেন ভালোলাগেনি। কারণ তাদের দেখে হিমেলের মনের টান আসেনি যেটা মিহিকে দেখে এসেছে। ওর এতো বড় অতীত থাকা সত্ত্বেও ওকে ভালোবেসেছে।
,
,
হাসিটা বেশ ভালো লাগলেও কারণটা যখন হিমেল তখন একটু বিরক্ত লাগবেই।
,
গ্লাসের পানিটা শেষ করে হনহন করে ঘরের বাইরে চলে গেলো।
এটা দেখে আরোহী আরো জোরে হাসতে লাগলো কিন্তু মিহির হাসি একদম বন্ধ হয়েগেলো।
,
আরোহী মিহির হাসি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলো,
,
– হিমেল রাগ করেছে বলে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো?
,
– জ্বি আপু, আমি চাইনা আমার জন্য উনি কষ্ট পাক।
,
আরোহী চোখ বড় বড় করে বলল,
,
-স্বামীর জন্য এতো ভালোবাসা? তোমাদের এই ভালোবাসাতো ইতিহাসের পাতায় লেখা উচিৎ।
,
হঠাৎ করে আরোহী আবার হাসতে লাগলো।
,
– যাও যাও স্বামীর মন খারাপ কমিয়ে দিয়ে আসো। শোনো মিহি যদি দেখো রাগ কমছে না তাহলে তুই গালে দুইটা পাপ্পি দিবে দেখবে আমাদের হিমেল সাহেব গলে পানি হয়ে গেছে।
,
,
হিমেলের ঘরে গিয়ে মিহি হিমেলকে পেলো না। তাই আরোহীর কাছে এসে বলে,
,
– আপু ওতো ঘরে নেই।
,
– উমম, তাহলে ছাদে থাকতে পারে ও। চলো আমি তোমাকে ছাদে দিয়ে আসি।
,
এরপর আরোহী মিহিকে ছাদে উঠিয়ে দিয়ে আসে কারণ মিহির দেহে ছাদে একা ওঠার মত অবস্থায় এখনো আসেনি।
,
সকালের রোদে হিমেল ব্যস্ত শহর দেখছে। গাড়ি গুলো কেমন এদিক সেদিক দিয়ে চলছে। যেন কোনো এক নদীর ভিতর উথাল-পাতাল ঢেউ খেলে চলেছে। হিমেলের মনটাও এমন যেন উথাল-পাতাল ঢেউ চলেছে। চেষ্টা করেও মনকে শান্ত করতে পারছেনা হিমেল।
,
গলা ঝাড়া দেওয়া শব্দে পিছনে তাকালো হিমেল। মিহিকে দেখে আবার চোখ ঘুরিয়ে নিলো।
,
মিহির এবার খুব কান্না পাচ্ছে,
,
– আপনি আমাকে মাফ করে দিন। আমি আর আপনাকে কষ্ট দেওয়ার কাজ করবো না কখনো।
,
তবুও কোনো উত্তর নেই।
,
-দেখুন আমার সাথে কথা বলুন। আপনি আমার সাথে কথা না বললে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
,
হিমেল এবার ঘুরে মিহির দিকে ফিরে বলল,
,
– কেন কষ্ট হচ্ছে? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো যে আমি ইগনোর করলে কষ্ট হবে?
,
– দেখুন ভালোবাসার সাথেই সব কিছু জড়িতো না আপনি আমাকে সাহায্য করেছে তার কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে বলছি আপনার কষ্ট লাগলে নিজেকে খুব বাজে মানুষ মনে হয়।
,
– মিহি আমি তোমাকে ভালোবাসি। জানিনা কখন, কিভাবে, কেন। শুধু জানি ভালোবাসি। ভাবতে পারো এতো দ্রুতই সব হয়ে গেলো! অনুভূতির আত্মসমর্পণ করতে সময় লাগেনা। আজকে তুমি কৃতজ্ঞতা থেকে আমার কষ্টে কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু দুইদিন পর ভালোবাসবে তখন ভালোবাসার অনুভূতি থেকে আমার কষ্টে তোমার কষ্ট হবে।
,
“আমি আপনাকে ভালোবাসবো না কোনোদিন। আমি শুধুমাত্র মুহিতকেই ভালোবাসি। শুধু মুহিতকেই ভালোবাসি। ”
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here