অনুভবে_তুমি,পর্বঃ২

0
2691

অনুভবে_তুমি,পর্বঃ২
ফারজানা_আক্তার

কি ভাবছো? এতোই আনরোমান্টিক ভাবছো আমায়?
রাহিলের কথায় ভাবনার জগত থেকে বের হয় আদিবা।
~নাহ আসলে আমি।
কি বলবে বুঝতে পারছেনা আদিবা।
~থাক আর কিছু বলতে হবেনা, চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো, ঠিকই ভাবছো বিয়ে আমি তুলির জন্যই করেছি। আমার সময় লাগবে তোমাকে মেনে নিতে কারণ আমি এখনো রেশমাকে ভালেবাসি, রেশমা নেই হয়তো আজ তবুও সে আছে আমার অনুভবে।
কথাগুলো বলেই রাহিল সোফায় গিয়ে শুয়ে পরে।
শক্ত হয়ে বসে আছে আদিবা, তবে এতক্ষণ কি ছিলো? রেশমা কে? উনার আগের স্ত্রী নয় তো? আদিবার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। সে লাইট অফ করে জড়োসড়ো হয়ে খাটের এক কোণে শুয়ে পরে। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই জল গড়িয়ে পরে আদিবার। রাত গভীর হয়েছে, সারাদিনের ক্লান্তি, তাই আর চোখে ঘুম আসতে দেরি হলোনা আদিবার।

রাহিলের ঘুম আসছেনা। রেশমা তার আগের স্ত্রী। আজ খুব মনে পরছে রেশমার কথা, তিন মাস হয়েছে রেশমার মৃত্যুর, এখনো রেশমাকে ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাসটা করতে পারেনি রাহিল, রেশমার শেষ কথা রাখার জন্যই এই বিয়েটা করা রাহিলের, পাঁচবছর আগে ছয়মাস প্রেম করেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো দুজন, কিন্তু ভাগ্য তাদের কে সারাজীবন একসাথে থাকার সুযোগটা আর দিলোনা, অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার সময় রেশমার শেষ কথা ছিলো “আজকে আমার যদি কিছু হয়ে যায় তবে আমার মেয়েটাকে একটা মিষ্টি মা এনে দিও, মায়ের বুক ছাড়া ঘুম আসেনা আমার মেয়েটার,প্লিজ এটা আমার শেষ চাওয়া, যে করেই হোক এই শেষ চাওয়াটা আমার পূরণ করিও।”

ঢুকরে কেঁদে উঠেছিলো সেদিন রাহিল, কিছু বলতে পারেনি রেশমাকে, শুধু একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো।

এসব ভাবতেই চোখজোড়া ভিজে উঠেছে রাহিলের, আসলেই তো রেশমার কথা সত্যি হলো, এতোদিন তুলিকে ঘুম পারাতে খুবই কষ্ট হতো, সহজে ঘুমাতো না তুলি কিন্তু আজ আদিবা আদর করে একটু বুকে নিতেই সে ঘুমিয়ে পরলো। “আদিবা কি সারাজীবন আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের চোখে দেখবে”?

চিন্তার ভাজ পরলো রাহিলের কপালে। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় রাহিলও ঘুমিয়ে পরে।



কাক ডাকা ভোর, চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির, রোদের আলো ঝিকঝিক করছে পুরো রুম জুড়ে, রাহিলের চোখে আলো পরতেই নড়েচড়ে উঠে সে, বিরক্ত হচ্ছে বেশ। ঘুম ঘুম কন্ঠে বন্ধ চোখেই রাহিল বলে উঠলো “সকাল সকাল জানালা কে খুলেছে? বন্ধ করো জানালা।”

চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে রুমে পা রাখতেই রাহিলের কথাটি শুনে দাঁড়িয়ে যায় আদিবা, আশ্চর্য ঘুমন্ত কন্ঠও কি এতো মধুর হয় কারো? জানা ছিলোনা তো।
আনমনা হয়ে কথাটি বলে আদিবা।

আদিবা গিয়ে জানালার পর্দা টেনে দিলো, রোদের ঝিকঝিক কমে যায় মুহুর্তেই। ছোট্ট বাচ্চার মতো ফেইস করে ঘুমাচ্ছে রাহিল, আদিবা একনজর রাহিলের দিকে তাকিয়ে তৈরি হয়ে নিলো। হলুদ রঙের একটা থ্রি পিচ পরেছে আদিবা, শ্যামলা গায়ের রঙের সাথে বেশ মানিয়েছে হলুদ জামাটা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটেখুঁটে দেখছিলো আদিবা, এমন সময় দরজার ঠকঠক শব্দে ভয় পেয়ে যায় আদিবা।
কে আসলো এই সময়? উনি তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন তাও আবার সোফায়, কেউ দেখলে কী মনে করবে? নাহ নাহ উনাকে ডাকতে হবে কিন্তু কিভাবে?
সাতপাঁচ ভেবে আদিবা রাহিলের কাছে গেলো একদম ধীর পায়ে,
এই যে শুনছেন, উঠুন
আদিবা মিনমিনিয়ে ডাকে রাহিলকে,
রাহিলের কোনো রেস্পন্স না পেয়ে আদিবা ওড়নার কোণা ধরে কচলাতে থাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।এইদিকে দরজার ঠকঠক হঠাৎ বুদ্ধি এলো আদিবার মাথায়, সে চট করে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো, রাহিল বেশ নড়েচড়ে উঠে। মিটিমিটি করে চোখ মেলে দেখে পাশে আদিবা দাঁড়িয়ে।

~সকাল সকাল কি শুরু করছো? পর্দা টেনে দাও
ঘুমঘুম কন্ঠে বলে রাহিল।
~আ আসলে দরজার বাহিরে কে জানি আছে, তাই বলছিলাম কি আপনি বিছানায় গিয়ে ঘুমান।
আমতাআমতা করে বলে আদিবা।
রাহিল কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। আদিবা ওড়না টা মাথায় ঘোমটা করে নেই সুন্দর করে, তারপর দরজা খুলে দেয়।

~আরে ভাবি এতক্ষণ লাগে নাকি দরজা খুলতে? উফ্ ৩০মিনিট ধরে দরজায় ঠুকা দিতে দিতে হাঁপিয়ে গেছি আমি।
কোমরে হাত রেখে কথাগুলো বলে শোভা।
~আসলে বোন আমি ওয়াশরুমে ছিলাম তাই আসতে একটু দেরি হলো, কিছু মনে করো না তুমি।
~আচ্ছা নিচে চলো, সবাই খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে।

আদিবা পা বাড়াবে তখনই শোভা বলে উঠে “এমা ভাবি তুমি কি এভাবে নিচে যাবে?
আদিবা নিজেকে একবার দেখে বলে, হ্যাঁ কেন?
~ নাহ নাহ, নতুন বউ তো এভাবে যাওয়া যাবেনা, শাড়ী পরতে হবে।
~কিন্তু আমি যে শাড়ী পরতে পারিনা।
মন খারাপ করে বলে আদিবা।
~আরে চিল,চিন্তা করো না, ভাইয়া খুব ভালো শাড়ী পরাতে পারে, রেশমা ভাবিকে তো ভাইয়ায় শাড়ী পরাতো সবসময়।
আদিবা চুপ হয়ে আছে, কিছু বলছেনা। শোভা গিয়ে ডেকে দেয় রাহিলকে আর বলে আদিবাকে শাড়ী পরিয়ে নিচে নিয়ে যেতে, এটা বলেই চলে যায় শোভা, মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আদিবা। রাহিল বিরক্তিকর নয়নে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। আদিবা একটা টি-শার্ট রাহিলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে পরে নিন, খালি গায়ে ভালো দেখায় না। রাহিল টি-শার্ট টা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়,আর দাঁতে দাঁত চেপে বলে ” কাপড়ের ব্যাগটা কে এনে দিয়েছে তোমায়?

~সকালে দরজা খুলে দেখি দরজার সামনেই ব্যাগ।
মাথা নিচু করে বলে আদিবা।
~ও, শোভা রেখে গিয়েছিলো মনে হয়।

আদিবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু করছে, রাহিল বেশ বুঝতে পারছে আদিবা কেন এমন করছে।
~শাড়ী পরে নাও দ্রুত, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি, তারপর নিচে যাবো।
রাহিল ওয়াশরুমে চলে যায়, আদিবা লাল খয়েরী আর গোল্ডেন রঙের একটা শাড়ী বের করে ব্যাগ থেকে, ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে শাড়ী হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদিবা, কীভাবে শাড়ী পরা শুরু করবে বুঝতে পারছেনা। কোনোমতে শাড়ীটা গায়ে পেছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদিবা। রাহিল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আদিবাকে দেখে কুটকুট করে হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পরে। আদিবা অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রাহিলের দিকে। রাহিল হাসতে হাসতেই বলে “এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? গিলে খাবে নাকি আমায়? একবার আয়নার দিকে তাকাও আর নিজেকে গিলে খাও। বলেই হাসতে লাগে রাহিল।

আদিবা আয়নার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে যায়, কারণ এতক্ষণে সে বুঝতে পারছে রাহিলের হাসির কারণ টা। ছি ছি কি লজ্জা কি লজ্জা। কি করবো এখন? উনার থেকে শাড়ী পরা তো অসম্ভব, শেষ পর্যন্ত কিনা একজন BB আমায় শাড়ী পরাবে, ভাগ আদি ভাগ,
মনে মনে বকবক করছে আর নখ কামড়াচ্ছে আদিবা। রাহিল সব লক্ষ করছে বসে বসে।
রাহিল বসা থেকে উঠে আদিবার সামনে গিয়ে বলে খুলো
~ হ্যাঁ?
চোখ বড় বড় করে বলে আদিবা।
~আরে শাড়ী খুলতে বলছি।
~ক কে কেন?
কিছুটা থেমে থেমে বলে আদিবা।
~কেন মানে? এভাবে যাবে নাকি নিচে? শাড়ী ঠিক করে পরতে হবে তো।
শান্তভাবেই বলে রাহিল।
~থাক, আ আমি নিজে নিজে পারবো।
~দেখলাম তো নিজে নিজে কত পারো।
মুখ টিপপ হেসে বলে রাহিল।

আদিবা ঘামতেছে, অথচ মাথার উপরে ভন ভন করে পাখা চলতেছে। রাহিল বেশ বুঝতে পারতেছে আদিবার অবস্থা, সে আদিবাকে আস্তে করে বলে “সমস্যা নেই, বুইড়া হলেও আমি তোমার বর, আর এক বাচ্চার বাবা হলে তো মানুষ বুইড়া হয়না, হুম। বয়স এখনো ৪০হয়নি আমার,”
কথাগুলো বলে চোখ টিপ মারে রাহিল, আদিবা চোখ ঘুরিয়ে নেই।
রাহিল ধীরে ধীরে আদিবার শাড়ী খুলতে থাকে, আদিবা চোখ বন্ধ করে নেই, রাহিলও চোখে একটা কাপড় বেঁধে নেই।

~নাও এবার কুঁচি টা গুঁজে নাও, নাকি সেটাও পারো না।
ধীরে ধীরে মিটিমিটি করে চোখ খুলে আদিবা। তারপর চট করে রাহিলের হাত থেকে কুঁচি নিয়ে গুঁজে নেই।
শাড়ী পরানো শেষ হলে আদিবা বলে “আপনি এবার চোখ খুলতে পারেন।”
রাহিল চোখ খুলে আদিবার দিকে তাকাতেই অবাক, চোখ বড় বড় করে তাকায় আদিবার দিকে।।।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here