#অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট-৭
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
সবার থেকে বেশি অবাক হয় আদি,মেঘ আর মিতু। কারণ মেয়ে আর কেউ নয় মেয়েটা তানিশা।
মেঘা- কেমন আছিস নিশা।
তানিশা- তোমাদের নিশা সবসময় ভালো থাকে।
রুহি তানিশাকে জড়িয়ে ধরে।
রুহি- ওও কিউটি তোমাকে হেভি লাগছে।
তানিশা- তাই।
রুহি- হুম।
তানিশা- ভেতরে ঢুকবেনা নাকি।
অভিক- তোদের জন্য ওয়েট করছিলাম।
তানিশা- ওওও। এবার চলো।
মিতু- ওটা তানিশা।
মেঘ- হুম । কিন্তু অনেক আলাদা।
মিতু- তানিশা কে এত ফর্সা ছিল না।
মেঘ- বুঝছিনা কিছু।
সবাই ভেতরে ঢুকলো।
ম্যানেজার আসলেন- ম্যাম আপনার আসতে কোন প্রব্লেম হয়নি তো।
তানিশা- না। কেমন চলছে সব ।
ম্যানেজার- সব ভালো।
তানিশা- আচ্ছা আপনি সবাই কে রুম বুঝিয়ে দিন।
রিসোর্টটা ৩তলা।যে যার মত রুম নিয়ে নাও।
বিকেলবেলা-
অভিক- এই তোরা যে বারো দিন আগে আনলি ।বসে থাকার জন্য।
তানিশা- না বসে থাকার জন্য কেন হবে এনেছি তো প্রেম করার জন্য।
রাজ তানিশার মাথায় চাটি মারে।
তানিশা- মারলে কেন।
রাজ- বড়োদের সামনে এভাবে কেউ কথা বলে।
তানিশা- আমি সব বলি।
নীল- রাইট ইশা সব বলে তাই বলে রাজ তুই ওকে মারবি।
রাজ- কেন রে তোর ইশার গায়ে কি ফোস্কা পড়ে যাবে নাকি।( ভেংচি কেটে)
নিরব- এই তোরা চুপ করবি।
নীল- চুপ করেই আছি।
অভিক- তোমরা মোটামুটি সবাই সবাইকে চেনো।ওটা মিতু মেঘ এর বউ।আর ওটা রোহিত নীলার বর।
রাজ- হাই ভাবিজান।
নিঝুম- ও আমাদের ফ্রেন্ড হয়।
নিরব- তাই নাকি। মিতুর মতো এত ভালো মেয়ে তোদের মতো বজ্জাত মেয়েদের বন্ধু কীভাবে হলো।( শয়তানি করে)
নীলা- নিরদা আমরা শয়তান।( কোমড়ে হাত দিয়ে)
নিরব- কোন সন্দেহ নেই ।
নীলা- এই নিশা কিছু বলবি না।
তানিশা- কী বলবো।
নীলা- আমাদের শয়তান বলছে।
তানিশা- শয়তানদের শয়তান বলছে এতে অসুবিধার কী আছে।
নিঝুম- তোকেও শয়তান বলছে কিন্তু।
তানিশা- আরে আমি তো শয়তান আমাকে শয়তান বলছে এতে অসুবিধার কী আছে।
সবাই হাসছে।
রূদ্ধি- এই নিশা ১২ দিন আগে আনলি। কেনাকাটা করতে ও দিলি না। বল তো মাথায় কী ঘুরছে।
তানিশা- আপাতত কিছু না।এখন ৫ দিন দমে
ঘুরবো , কেনাকাটা করবো ।আর
মেঘা- কী
তানিশা- বিল গুলো মেটাবে ছেলে গুলো।
অনিক- তাহলে তো ভিখারি বানিয়ে দিবি।
তানিশা- তো তোমাদের কী অভাব পড়েছে নাকি।
অনিক- না অভাব নেই।
তানিশা- রিত দার কী মুখে ডেপ দিয়ে দিয়েছিস । না কিস করে আটকে দিয়েছিস।
তানিশার কথা শুনে রোহিত, নীলা সহ সকলে হা হয়ে যায়।
নীল- বড়োদের পাশাপাশি এখানে ছোটোরাও আছে
তানিশা- চুপ করে থাকো। রিতদা তুমি বলো।
রোহিত- না গো শালিকা তোমার বান্ধবী কিছু করেনি( নীলার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে) নীলা মাথা নিচু করে আছে।
তানিশা- তাহলে কেন চুপচাপ অন্য সময় বকবক করে পাগল বানিয়ে দাও।
রোহিত- তোমার থেকে বেশি বকি না।
তানিশা- আচ্ছা আমি না হয় একটু বেশিই কথা বলি তা বলে এভাবে বলবে।একটা কথা কেনাকাটা সব কাল থেকে শুরু করবো।তিনটে বিয়ের কথা বলে কথা।
আদি- তিনটে বিয়ের মানে।
নিরব- ঝুম,নীলা আর মেঘ এর।
মিতু- নীলার ও বিয়ে।
নীল- হুম।
নীলা- আমার বিয়েতে কী দেবে বলো।( নীলকে উদ্দেশ্য করে)
নীল- রোহিত কে দিচ্ছি।অত টাকা খরচ করে বিয়ে দিচ্ছি আবার কি দেবো।
নীলা- এই তুমি টাকা খরচ করছো। তোমার টাকা নাকি সবটা আমার পাপার টাকা ( ভেংচি কেটে)
নীল- আমারই তো।
নীলা- ওটা আমার ও টাকা।
নীল- তুই কী চাস আমার কাছে বল। তুই চাইলে তোর দাদা নিজের প্রাণ টাও তোকে দিয়ে দেবে।
নীলা নীলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো- দাদাভাই আমি তোদের ছেড়ে থাকবো কীভাবে।
নীল- সব ঠিক হবে কান্না করিস না।( নীলের ও চোখে জল)
নিঝুম- নীলা কান্না থামা আমি ও কেঁদে ফেলবো।বলতে বলতে কেঁদে উঠলো নিরব ওর কাছে যাই
নিরব- আরে পাগলী তোরা কাঁদছিস কেন ।
নিঝুম কিছু না বলে নিরব কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।সবার চোখে পানি।
তানিশা- সবাই কান্না থামাও ( চেঁচিয়ে উঠে)
সবাই তানিশার হঠাৎ চিৎকারে কান্না থামিয়ে তানিশার দিকে তাকায়। তানিশার চোখ ছলছল করছে।
তানিশা- এই তোদের এতই যখন কস্ট হচ্ছে তাহলে তোরা বিয়ে করিস না ।( রাগ দেখিয়ে,)
নীলা- তোর বিয়ের সময় তুই কাঁদলে তোর কি করি দেখিস।( চোখ মুছে)
তানিশা- আমি কাঁদবো না। দেখিস
নিঝুম- তুমি কাঁদবে না দেখা যাবে।
তানিশা- সব কটা মুখের অবস্থা খারাপ করেছে যাও রুমে যাও।
সবাই যে যার রুমে গেল শুধু মাত্র আদি,মেঘ,মিতু বাদে।
মেঘ- কী হচ্ছে বলতো আদি।
আদি- জানিনা। কিছুই বুঝতে পারছি না। তানিশাকেও অনেক চেঞ্জ লাগলো।
মিতু- হুম।
পরেরদিন —
সবাই রেডি হয়ে নিচে নামে। নিঝুম আর নীলা আসে।
মেঘা- বা আমার ননদটাকে হেভি লাগছে।
মেঘ- দিদিভাই ননদ মানে। তোর ননদ এখানে কোথায়।
মেঘা- ওও সরি তোদের পরিচয় করানো হয় নি। নিঝুম আমার ননদ,আর ঝুম ওটা আমার ভাই মেঘ।আর নীলা হলো নীলের বোন।
আদি,মেঘ,মিতু অবাক হয় এটা শুনে কারণ নিরব বা নীল কেউই সাধারণ পরিবারের ছেলে নয় ওরা ধনী পরিবারের ছেলে সেখানে ওদের বোন হয়ে ওরা সাধারণ পরিবারের মেয়েদের মত চলাফেরা করতো কেন এটাই ওদের ভাবাচ্ছে।
নীল- সবাই আছে ইশা কোথায়।
তানিশা- আমি এই তো।
আদি তানিশার দিকে তাকায়- তানিশা একটা সাদা টপ পরেছে তার উপর কালো লেডিস জ্যাকেট।ব্ল্যাক জিন্স,ব্ল্যাক বুট। চুলটা পনিটেল করা ।হাতে ঘড়ি। মুখে কোন সাজ নেই।
ম্যানেজার- ম্যাম কটা গাড়ি নেবেন।
তানিশা- গাড়ি লাগবেনা আমি গাড়ি আনিয়েছি।
ম্যানেজার- ওওও।
নিরব-মেঘা- মেহরাব।অভিক- রূদ্ধি- আরুশী। একটা গাড়িতে।নীল,রাজ,মেঘ,অনিক,আদি আর রোহিত একটা গাড়িতে।আর একটা গাড়িতে তানিশা, নিঝুম, নীলা, মিতু,রুহি,আর ইরা।ওরা যেতে লাগলো। আদি দের গাড়ি প্রথমে ছিল তারপর তানিশার তারপর নিরব দের।
ইরা- তানিশা দি তোমার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে।
তানিশা- হুম।
ওরা শপিং মলে চলে যায়।অনেক কেনাকাটা করে।বিয়ের শাড়ি কিনতে যাই।
নিঝুম- এটা নেবো না এটা ।
তানিশা- আমি কি জানি তোর বর কে বল আমার একটা কাজ আছে আসছি।
তানিশা যাচ্ছিলো আদি ওকে টেনে নিয়ে আড়ালে চলে যায়।
তানিশা- আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসার মানে কী?
আদি- আমার সাথে তুমি কথা বলোনা কেন?
তানিশা- আপনার প্রেমিকা রিয়া কোথায়।
আদি তানিশার হাত ধরে ওর আরো কাছে নিয়ে আসে তানিশার মুখে আদির নিঃশ্বাস পড়ছে।এতে তানিশার সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তানিশা মাথা নীচু করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।
আদি- তাকাও আমার দিকে।
তানিশা তাকাই না। আদি এবার একটু জোরে বলে উঠে । তানিশা তাকাই। তানিশার চোখ আদির চোখে আটকে গেছে।
আদি- ভালোবাসো আমায় ( তানিশার দিকে তাকিয়ে)
তানিশা চোখ সরিয়ে নেয়।কারণ আদির চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলতে পারবেনা ওও।
তানিশা- না আমি আপনাকে ভালবাসি না।
আদি- তাহলে চোখ সরিয়ে নিলে কেন।
তানিশা- ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে।
আদি- কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবো না।বলো।
তানিশা- আপনি যেনে কী করবেন আপনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসেন।
আদি কিছু বলতে যাচ্ছিল তানিশা বললো- আই হেট ইউ( আদিকে ধাক্বা দিয়ে)
তানিশা চলে যায় আদি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।এই সবটা কেউ না খেয়াল করলেও একজন করেছে। তানিশা আর আদিকে এতো কাছে দেখে তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। সে বড্ড ভালোবাসে যে তানিশাকে।
শপিং শেষে সবাই রেস্টুরেন্টে খেতে গেলো।আগে থেকে টেবিল বুক করা ছিল।
তানিশা- কে কী খাবে অর্ডার করো।
সবাই যে যার মতো অর্ডার করলো।
মেঘ- তানিশা তুমি কবে বিয়ে করবে।
তানিশা পানি খাচ্ছিল কথাটা শুনে ও বিষম খেয়ে যায়।
অভিক- আসতে খাবি তো।
তানিশা- হুম,মেঘদা কেন ।
মেঘ- সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই বললাম।
রুহি- কিউটি তো মেরিড।
কথাটা শুনে সবাই আকাশ থেকে পড়ল।
আদি- তানিশা মেরিড মানে।( হতবাক হয়ে)
নিরব- রুহির কথা বাদ দাও তো।
আদি- না বাদ দেবো কেন। সত্যি কী তানিশা বিবাহিত।( উত্তেজিত হয়ে)
নিঝুম- না। তেমন কিছু নয়।আসলে ওর দাদুকে ও ওর বর বলতো।আর রুহি ওই টার কথাই বলেছে তাই না ( তানিশার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে)
রুহি- হুম। আসলো সবসময় ওটা নিয়ে মজা করি তো তাই বেড়িয়ে গেছে।সরি( আমতা আমতা করে)
আদি-ওওও।
সব খাবার চলে আসে ওরা খাওয়া চালু করে। তানিশা শুধু নাড়ছে খাচ্ছে না।
মিতু- কীরে খাচ্ছিস না কেন।
তানিশা- এই তো খাচ্ছি।
খাওয়া শেষে-
রোহিত- শালিকা।
তানিশা- হুম
রোহিত- বিলটা তুমি দাও( হেসে)
আদি – বিল তো অনেক এসেছে তানিশা এত টাকা পাবে কোথায় । ( মনে মনে)
তানিশা- কত এসেছে।
রোহিত- বেশি নয়। উনিশ হাজার টাকা মাত্র।
আদি ঠিক করে বিলটা ও দেবে তার আগে তানিশা বলে- এতে আছে পুরোটা দিয়ে দাও।
আদি অবাক হয় তানিশার কাছে এত টাকা দেখে।
ওরা রিসোর্টে চলে যায়।
রাত্রি বেলা-
তানিশা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।আদি আসে।
আদি- তানিশা আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।
তানিশা – আপনার কথা শোনার কোন ইচ্ছা নেই আমার।
আদি- প্লিজ।
তানিশা- ওকে।
আদি- ধন্যবাদ।
আদি বলতে চালু করবে ওর ফোন আসে ফোনটা করে রিয়া সেটা দেখে তানিশা প্রচুর পরিমাণে রেগে যায় আর ছাদ থেকে চলে যায়।আদি রিয়ার সাথে কথা বলে ।রিয়ার ফোন কাটার পর আদি একটা রহস্যময় হাসি দিল ।
অন্যদিকে—
রিয়া – ড্যাড সবটা আমাদের প্ল্যান মতো হচ্ছো।আদি আমার সাথে জড়িয়ে গেছে এবার আমাদের এতদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে।
রিয়ার ড্যাড- আরমান চৌধুরীর চোখের মণি আদিয়াত চৌধুরী।আদি যদি বলে ও তোকে বিয়ে করতে চাই তাহলে কেউ কিছু বলবে না।
রিয়া- হুম তারপর আদি অনেক বেশী কস্ট পেয়েছে
ওর প্রাক্তনকে নিয়ে।( পৈশাচিক হাসি দিয়ে)
রিয়ার ড্যাড- তার আগে একটা কাজ আছে ।
রিয়া- কী কাজ।
রিয়ার ড্যাড-ওই কুইন কে শেষ করতে হবে।ওর জন্য আমার সব কারবার লাটে উঠেছে।ওকে আমি ছাড়বো না।( রেগে)
রিয়া- ওই কুইন টা কে?
রিয়ার ড্যাড-ওর কিছু আমি জানি না ও সবার কাছে কুইন নামে পরিচিত।ওও আমার কালো বাজারের অনেক ক্ষতি করেছে।
রিয়া- ওও তুমি এদিকটা সামলাও আমি কালকেই ইন্ডিয়া ব্যাক করবো।
রিয়ার ড্যাড- ওকে।
কয়েকদিন তানিশাদের হইচই করে কাটাই।কালকে হলুদের অনুষ্ঠান সমস্ত গেস্ট চলে এসেছে।আদি তানিশার সাথে যতবার কথা বলতে গেছে তানিশা এড়িয়ে গেছে নয়তো কোন বাঁধা পড়ে গেছে।
তানিশা- সব কমপ্লিট ।
অনিক- হুম।
আদি- দারুন হয়েছে প্ল্যানটা কার।
অনিক- তানিশার।
রুহি – আচ্ছা ট্রুথ আর ডেয়ার খেললে হয় না।
নিঝুম-ওকে সবাই চলো।
ছাদে সবাই গোল হয়ে বসে ।আদি তানিশার সোজাসুজি বসেছে।প্রথমে রুহি ঘোরায় নীলার কাছে গিয়ে থামে।
নীলা- ট্রুথ।
নিঝুম- তোর জীবনের সবথেকে হাসির ঘটনা ।
নীলা- আগের বার ইন্ডিয়া এসে আমি গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিলাম।সেখানে একদিন আমি লাল কালারের সালোয়ার কামিজ পড়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম আর একটা ষাঁড় বাঁধা অবস্থায় ছিল। আমি যখনই পাশ কাটাতে যাচ্ছি ঠিক তখনই ষাঁড়টা তেড়ে আসছে।অনেক কস্টে পাশ কাটিয়ে চলে যায় তারপর আবার একটা কুকুর দৌড় করেছিল সেই থেকে আমি আর লাল পরিনা।
সবাই মন দিয়ে শুনছিল নীলা বলা শেষ করে দেখে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।তারপর সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
অনিক- প্রথমে ষাঁড় তারপর কুকুর।( হাসতে হাসতে)
নীলা- ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম। খেলা চালু করো।
এভাবে নিঝুম।মিতুর পড়লো তারপর পড়লো রাজের কাছে।
রাজ- ডেয়ার।
তানিশা- প্রপোস কর।
অনিক- কাকে প্রোপস করবে।( অবাক হয়ে)
তানিশা- প্রোপস কর।
রাজ রুহির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রুহি দাঁড় করিয়ে নিজে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে চালু করে- তুমি কী আমার সারাজীবনের সঙ্গি হবে।( হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
রূদ্ধি হা করে তাকিয়ে আছে।তানিশা রুহির কাঁধে হাত রাখে রুহি কাঁপা কাঁপা হাতটা রাজের হাতের উপর রাখে।
সবাই চেঁচিয়ে উঠল।
রূদ্ধি- কী হচ্ছে এসব ।
তানিশা- যেটা দেখেছো সেটাই।
অভিক- আমার কোন আপত্তি নেই।
রূদ্ধি- আমার ও আপত্তি নেই।
খাওয়ার জন্য ডাক পড়ায় ওদের আর খেলা হলো না।
পরেরদিন-
আজকে হলুদ সবাই জোগাড় করতে ব্যস্ত।ছেলেরা সব কাজে ব্যস্ত।
নিঝুমের মা- নিশা মামুণি।
তানিশা- হুম ভালো মামণি
নিঝুমের মা- ফুলের গহনা লাগবে তো।
তানিশা- যা এটা তো মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
নিঝুমের মা-কাউকে বল এনে দিতে।
তানিশা- কাউকে বলতে হবে না আমি যাচ্ছি।
নিঝুমের মা- ওকে সাবধানে যাবি।
তানিশা বেড়িয়ে যেতে দেখে আদি নিঝুমের মাকে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে উনি সবটা বলেন ।আদি দৌড়ে বাইরে আসে।
আদি- তানিশা দাঁড়াও।
তানিশা- কেন।( পেছন ঘুরে)
আদি- ড্রাইভার নিতে হবে না আমি যাবো তোমার সাথে।
তানিশা- আমি একাই যাবো।
আদি- গাড়ি চালাতে পারবেনা আমি চালাই।
তানিশা হাসলো।
আদি- হাসছো কেন।
তানিশা- আমি ড্রাইভিং পারি আর আমার লাইসেন্স ও আছে।
তানিশা গাড়ি তে উঠে চলে যায় ।পেছনে আদি গাড়ি নিয়ে যেতে থাকে।
১ ঘন্টা পর….
তানিশার জ্ঞান ফেরে ও দেখে ওও বাঁধা অবস্থায় আছে।
তানিশা- কে আছেন এখানে আমাকে খুলে দিন কেন আটকে রেখেছেন আমায়।
কোন আওয়াজ শোনা গেল না । তানিশা হতাশ হয়ে আগের কথা ভাবতে লাগলো।
ফ্ল্যাশব্যাক-
তানিশা ফুলের গহনা কিনে।গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টাট্ দেবে তখনই ওর মুখে কেউ কিছু একটা দেই আর ও অজ্ঞান হয়ে যায়।
( কে কিডন্যাপ করলো তানিশাকে)
তারপর কয়েকজন ঢুকলো।
তানিশা- কারা আপনারা কেন আমাকে এখানে তুলে নিয়ে এসেছেন।
একটা মেয়ে- আমরা কে সেটা তোর না জানলেও চলবে । কিন্তু তুই কে সেটা আমার জানা লাগবে।
তানিশা- আমি তানিশা কেন।
মেয়েটা- এটা নয় তোর আসল পরিচয় আমাদের জানা লাগবে।
তানিশা- আরে ভাই বললাম তো।
মেয়েটা এক থাপ্পর মারে তানিশাকে।
তানিশা- মারছো কেন সত্যিটা তো বললাম।
মেয়েটা- মিথ্যা বলবি না সত্যি করে বল তুই কে( আবার থাপ্পর মেরে)
তানিশা- আমি কে জানতে চাস তাহলে আমার হাতটা খুলে দে।( রেগে গর্জন করে)
মেয়েটা আবার মারতে যাই তখনই একজন আসে।
মেয়েটা- তুই কে?
লোকটা- তোদের জম।
তানিশা- আয়মান ( অস্পস্ট করে)
মেয়েটা- যা মার।
আয়মান লোকগুলোকে মারতে থাকে।মারার ফাঁকে তানিশাকে খুলে দেই।তানিশা মেয়েটার সামনে গিয়ে একটা জোরে থাপ্পর মারে।
তানিশা- তোর সাহস দেখে আমি অবাক তুই আমাকে ২ বার থাপ্পর মেরেছিস।( আবার মেরে)
মেয়েটা- ভুল হয়ে গেছে ছেড়ে দাও।
তানিশা- বল তুইকে কে তোকে পাঠিয়েছে।
মেয়েটা- জানিনা।
তানিশা- সত্যি বল।
পুলিশ আসে আর সবাইকে নিয়ে চলে যায়। তানিশা গিয়ে আয়মান কে জড়িয়ে ধরে। আয়মান এক মিনিটের জন্য থমকে গিয়েছিল আকস্মিক ঘটনায়।
তানিশা- ধন্যবাদ।
সরে দাঁড়িয়ে এসে।
তানিশা খেয়াল করে আয়মানের কনুইয়ের কাছে একটু আঘাত লেগেছে।
তানিশা- আপনার ওখানে লেগে গেছে।।
আয়মান- ওটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা কেন আপনাকে তুলে নিয়ে এসেছে।
তানিশা- জানিনা।
আয়মান-জানেন না মানে।
তানিশা- এই এক মিনিট আপনি কী আমাকে চিনতে পারছেন না।
আয়মান- কেন।
তানিশা এবার হাসতে লাগলো।
আয়মান – হাসছেন কেন।
তানিশা- একমিনিট( তানিশা মুখে মাস্কটা পড়ে )
তানিশা- দেখুন।
আয়মান তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।
আয়মান-কুইন( অবাক হয়ে)
তানিশা- হুম আপনি তো আমাকে দেখেই ফেললেন কি আর করার।
আয়মান এখন ও হা করে তাকিয়ে আছে ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
তানিশা- আচ্ছা আমি আসি।
তানিশা রিসোর্টে ফিরে আসে।
সন্ধ্যা বেলা-
হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য সবাই সেজেছে আজকের ড্রেস থিম হলুদ।
নীলা, নিঝুম আর মিতু হলুদ শাড়ি আর ফুলের গহনা পড়েছে। তানিশা একটা হলুদ লেহেঙ্গা পড়েছে।হালকা সাজ।চুলটা খোঁপা করা।
কনেদের একদিকে আর বরদের একদিকে বসানো হয়েছে মাঝখানে কাপড় দেওয়া। প্রথমের ছেলেদের গায়ে হলুদ হয় তারপর মেয়েদের হয়।
তানিশা সবাইকে হলুদ মাখিয়ে নিজে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।বিছানায় বসে আছে চোখ বন্ধ করে। রুমে কোন কিছুর আওয়াজ শুনে তানিশা চটপট চোখ খোলে যা দেখে তাতে ও হা হয়ে যায়।
#চলবে…..