অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট- ৯( অন্তিম পার্ট)

0
1007

#অনুভবে_ভালোবাসি,পার্ট- ৯( অন্তিম পার্ট)
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

রিয়ার ড্যাড- কী বলছো এসব আমি সব সত্যি কথা বলেছি রিয়াকে।

তানিশা- আচ্ছা আপনি আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো।

রিয়ার ড্যাড- কী প্রশ্ন?

তানিশা- ১.আপনি হঠাৎ করে রিয়া আর ওর মাকে নিয়ে চলে গেলেন কেন।

রিয়ার ড্যাড- আমি বিদেশে সেটেল হতে চেয়েছিলাম ।তাই জন্য।

তানিশা- আপনি এই দেশের বাইরেই জাননি কেন মিথ্যা বলছেন।

রিয়ার ড্যাড- কী সব বলছো( অবাক হয়)

তানিশা- নাটক করবেন না। ২.রিয়ার মনটা কেন বিষিয়ে দিয়েছিলেন।৩. রিয়ার মা সিঁড়ি থেকে পড়ল কীভাবে? ৪. কেন আপনার প্রানের বন্ধু মারা গেছে শুনে আপনি একবারো আসেননি।এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিন।( চিৎকার করে)

রিয়া ও ওর ড্যাডের দিকে তাকিয়ে আছে।

রিয়ার ড্যাড- কিসব বলছো তুমি ( ঘাবড়ে গিয়ে)

তানিশা- কী ব্যাপার ঘাবড়াচ্ছেন কেন( বাঁকা হেসে)

রিয়ার ড্যাড- ঘাবড়াবো কেন কীসব বলছো।( মেকি হাসি দিয়ে)

তানিশা- রিয়া তুমি এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাও না।

রিয়া- হুম চাই‌।

রিয়ার বাবা- আমি বলছি তোকে সব।

রিয়ার ড্যাড- কী বলবি তুই।( চমকে গিয়ে)

রিয়ার বাবা– যেটা সত্যি সেটাই।

রিয়া- কি সত্যি।বলো আমায়।

রিয়ার বাবা- এই লোকটা তোর মাকে জোর করে বিয়ে করেছিল। শুধু মাত্র আমার আব্বুর সম্পত্তির জন্য।

রিয়া- ড্যাড মমের লাভ ম্যারেজ নয়( অবাক হয়ে)

রিয়ার বাবা- না। সেদিন আসিফদাকে মিথ্যা কথা বলে তোদের নিয়ে অন্য শহরে নিয়ে আসে সাথে আমাকেও নিয়ে আসে। তারপর মনির নামে তোর মন বিষিয়ে দিতে থাকে দিদি তোর ড্যাড পরিকল্পনা বুঝতে পারে।আর ওকে বাঁধা দেবার চেষ্টা করায় তোর মাকে এই লোকটা সিঁড়ি থেকে ফেলে দেই।তারপর ও শান্তি হয়নি অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে দিদিকে মেরে ফেলে( কেঁদে উঠলো)

রিয়া অবাক হয়ে যায়।তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।রিয়ার বাবা আবার বলতে শুরু করল।

রিয়ার বাবা-সেদিন আসিফ দার সাথে যেটা হয়েছিল সেটা রাকেশের প্ল্যান।

সবাই চমকে উঠে।

অনিকের বাবা- রাকেশ কেন করলি তুই এটা।

তানিশা- লোভ যে মানুষকে কতটা নীচে নামিয়ে দেই সেটা ওনাকে না দেখলে জানতাম না। সামান্য কিছু টাকার জন্য এতদিনর বন্ধুর সাথে বেইমানি করতে হাত কাঁপলো না ( রেগে)

রিয়ার ড্যাড- সোহান তুই বেইমানি করলি এর ফল তুই পাবি।( রেগে)

রিয়ার বাবা-ফল তুমি পাবে আমি নয়।আর বেইমান তুমি আমি নয় ।কারন আমি তোমার মতো বেইমানি করি নি । শুধু সত্যিটা সবাইকে বলেছি।

রিয়া- ড্যাড তুমি এত খারাপ ( কাঁদতে কাঁদতে)

রিয়ার ড্যাড- আমি যা করেছি সব তোর জন্য করেছি ।( অনুরোধ কন্ঠে)

তানিশা- মিস্টার রাকেশ তাহলে আপনার রোশন এর কি হবে?

রিয়ার ড্যাড চমকে উঠে।

রিয়ার ড্যাড- কে রোশন( আমতা আমতা করে)

তানিশা- আরে ভুলে গেছেন। আপনার ছেলে যে আপনার সমস্ত কালো বাজারের ব্যবসা সামলায়।

রিয়ার ড্যাড- তুমি জানলে কি করে।

তানিশা- সব জানি আমি ( হেসে)

রিয়ার ড্যাড- কে তুমি তোমার সাথে তো আমার কোন শত্রুতা নেই। তুমি আমার একজন ক্লাইন্ট মাএ।

তানিশা- শত্রুতা নেই কে বললো।আছে তো অনেক শত্রুতা।( দাঁতে দাঁত চেপে)

রিয়ার ড্যাড- কে তুমি।

তানিশা- আমি কে সেটা আপনার না জানলেও চলবে। অফিসার আসুন।

পুলিশ আসে।

পুলিশ- এদের সবাইকে নিয়ে চলো।

রিয়া-আদি আমি যাবো না।

আদি- রিয়া তুমি ওনার মেয়ের।তার থেকেও বড়ো কথা তুমি ওনার অনেক বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত।

রিয়া- তুমি জানলে কী করে।( অবাক হয়ে)

আদি- রিয়া তোমার সাথে আমি রিলেশনশিপে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র তোমার ড্যাড কে ধরার জন্য।( হেসে)

রিয়া- ধরার জন্য মানে ?

তানিশা- আদির পুরো নাম কী জানো।

রিয়া- আদিয়াত চৌধুরী।

তানিশা – নো আদিয়াত আয়মান চৌধুরী।আর ও একজন সিনিয়র সিবিআই অফিসার।
আদি সহ সকলে অবাক হয়।

আদি – তানিশা জানালো কি করে ( মনে মনে)

রিয়া- আদি এসব সত্যি।( চমকে গিয়ে)

আদি- হুম।

তানিশা সোহান অর্থাৎ রিয়ার বাবার সামনে গেল।

তানিশা- থ্যাক্স আঙ্কেল। আপনি না থাকলে আমি কখনোই সত্যি গুলো সামনে আনতে পারতাম না।

সোহান- থ্যাক্স দেবার প্রয়োজন নেই।

পুলিশ- ম্যাম আমাদের এবার যেতে হবে।

তানিশা- ওকে।

পুলিশ- সোহন সাহেব আপনাকেও একবার আমাদের সাথে যেতে হবে।

সোহান- ওকে চলুন।

ওদের সবাইকে নিয়ে চলে গেল।

আদির মা- তারমানে আদির মনি আর আসিফ দার মেয়ে একজনই তাইতো।

রাজের মা- হুম।

আরমান- ভাবি আর মনি কোথায়?

রাজের বাবা- দিদির প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয় ডাক্তাররা কিছু করতে পারে নি।

আদি- আর মনি?

রাজ- ডাক্তার রা হাল ছেড়ে দিয়ে ছিল । সেদিন হয়তো আল্লাহ আমাদের সহায় ছিলেন সেজন্য বনু আবার আমাদের কাছে ফিরে এসেছিল।

আদি- মনি বেঁচে আছে এটা তুই জানতিস অনিক।

অনিক- হুম তবে অনেক পরে জেনেছি।

রাজের বাবা- সেদিন আসিফ আমাকে ফোন করে বলে

– আমার মনে হচ্ছে আমার শত্রুরা এই কাজটা করেছে ।ওরা যদি জানে মনি বেঁচে আছে তাহলে আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দেবে না। প্লিজ তুই আমার মেয়েটাকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখিস।এজন্য আমি সেদিন কাউকে কিছু বলেনি আর না আসিফ আর দিদির ডেটবডি কারোর সামনে নিয়ে গেছি‌।আমি মনি কে নিয়ে লন্ডন চলে যায় তারপর ও আমার সাথে থাকতে লাগে।

ইরা- মনি দি এখন কোথায়?

রাজের বাবা- এবার সবাই বাড়ি চলো।

সবাই যে যার বাড়ি চলে গেল।আদি নিজের রুমে যায়।

আদি- আমি কি করবো কাকে বেছে নেবো তানিশা না মনি।

ওদিকে-

রোশন- না এটা হতে পারে না আমি কিছুতেই হেরে যেতে পারিনা। যেএটা করেছে আমি তাকে ছাড়বো না।আমি কালকেই দেশে ফিরবো।

পরেরদিন-

আদি রেডি হয়ে নিচে নামে।

আদির মা- কিরে কোথায় যাবি।

আদি- একটা কাজ আছে আসছি।

আদির মা-শোন না ইরার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।

আদি- মা এত তাড়াতাড়ি ইরার বিয়ে দেবো না।

আদির মা- এত তাড়াতাড়ি কে দেবে।কথা বলা থাকবে তারপর বিয়ে।

আদি- দ্যাখো যা ভালো মনে করো।আমার কাজ আছে আমি আসছি।

আদি চলে যায়। আদি একটা পার্কে আসে।

আদি- তানিশা।

তানিশা পেছন ফিরে তাকায়।

তানিশা- বলুন কেন ডাকলেন।

আদি- সত্যি করে বলো তুমি কে?

তানিশা- আমি কে মানে আমি তানিশা।

আদি- মিথ্যে বলছো তুমি আমার মনি।

তানিশা চমকায়।

তানিশা- কীসব বলছো।

আদি- আমি জানি তুমিই আমার মনি আর সেটা আজকে থেকে নয়

তানিশা- আজকে থেকে নয় মানে।

আদি- যেদিন জানলাম তুমি কুইন ঠিক সেদিন থেকে.

তানিশা- কীভাবে?( অবাক হয়ে)

আদি তানিশাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর ওর ঘাড়ের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে আলতো করে ঘাড়ে থাকা একটা চিহ্নের উপর চুমু খায়। তানিশা কেঁপে উঠে আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

কিছুক্ষন পর আদি তানিশাকে ছেড়ে দেয়।

আদি- আর কিছু প্রমাণ লাগবে ( বাঁকা হেসে)

তানিশা মাথা নীচু করে হাসে।

আদি- তা তুমি কীভাবে জানলে আমিই আয়মান।

তানিশা- বলা যাবে না সিক্রেট।

আদি- মানে?

তানিশা- পড়ে একদিন বলবো।

আদি- ওকে।

সন্ধ্যা বেলা-

আরমান- ইরা মা তুমি কালকে একটা ছেলের সাথে মিট করতে যাবে।

ইরা- কেন‌

আরমান- তোমাদের বিয়ে ফাইনাল হয়েছে আমরা চাই তোমরা নিজেদের ভালো করে চেনো।জানো।

ইরা- ওও ( হতাশ কন্ঠে)

ইরা নিজের রুমে গিয়ে। রুহিকে ফোন করে।

ইরা- হ্যালো।

রুহি- বল ।

ইরা- আমার সব শেষ হয়ে গেল।

রুহি- মানে?

ইরা- বাপি আমার বিয়ে ঠিক করেছে।

রুহি- ভালো তো তোর তো কোন সমস্যা হবার কথা নেই। তুই তো প্রেম- টেম করিস না তাহলে।

ইরা- আমি একজনকে ভালবাসি।

রুহি- কাকে।( অবাক হয়ে)

ইরা- নীলকে

রুহি- কী?

ইরা- হুম এবার কি হবে।

রুহি – তুই তোর দাদাভাইকে বল ।

ইরা- দাদাভাইকে কেন?

রুহি- তোর দাদাভাই ঠিক ম্যানেজ করে নেবে বলে দ্যাখ।

ইরা- পারবোনা।

রুহি- তাহলে এক কাজ কর।

ইরা- কী কাজ?

রুহি- কাল দ্যাখা করে তাকে বল আমি একজনকে ভালবাসি।

ইরা – ওকে।

পরেরদিন

ইরা রেডি হয়ে কফিশপে যায় সেখানে নীলকে দেখে চমকে উঠে।

নীল- তুমি এখানে।

ইরা- আমার ও তো এক প্রশ্ন।তাহলে কী আপনার সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

নীল- জানিনা।মনে তো তাই হচ্ছে।

ইরা- ওওও( খুশি হয়ে)

নীল- তুমি এসেছো ভালো হয়েছে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।

ইরা- কি বলবেন।

নীল- মানে এই বিয়ে করতে পারবোনা কারন আমি একজনকে ভালবাসি।( শান্ত কন্ঠে)

ইরার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।

নীল- প্লিজ বিয়েটা ভেঙ্গে দাও।

নীল কথাটা বলে চলে গেল।ইরা থম মেরে বসে থাকলো। তারপর ইরা পার্কে গিয়ে কাঁদতে লাগলো। তখন ওর কাঁধে কেউ হাত রাখলো তাকে দেখে ইরা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

চৌধুরী বাড়িতে সবাই চিন্তিত আদি কাল থেকে বাড়ি আসেনি ।না ফোন করেছে।আর না এসেছে।

ওদিকে –

সিবিআই অফিসার- স্যার কে কারা কিডন্যাপ
করলো।

অন্য অফিসার- সেটাই বুঝতে পারছি না। আমাদের ম্যাম কে জানানো উচিত।

অফিসার- হুম।

ম্যাম অর্থাৎ আন্ড্যারকভার সিনিয়র হেড অফিসার

অফিসার- হ্যালো ম্যাম

ম্যাম- ইয়েস।

অফিসার- আয়মান স্যারকে কে বা কারা যেন কিডন্যাপ করেছে।

ম্যাম- হোয়াট( রেগে)ওকে আমি দেখছি।

ফোনটা কেটে।

ম্যাম- গাড়ি বার করতে বলো।

ওদিকে-

আদিকে একটা বন্ধ ঘরে আটকে রাখা হয়েছে।ওকে প্রচুর মারধর করা হয় তার সাথে ওকে ড্রাগ দেওয়া হয়।

রোশন- আয়মান চৌধুরী এখন ও সময় আছে বলে দে কে এই সব করেছে ।কে রাকেশ রায়হানকে সামনে নিয়ে এসেছে বল।

আয়মান- আমি জানি না আর জানলেও বলবো না।

একটা লোক- বস গন্ডগোল হয়ে গেছে পুলিশ গোটা বাড়িটা ঘেরে ফেলেছে।

রোশন- কী।( রেগে)

ম্যাম- যা শুনেছিস সেটাই।

রোশন আর আয়মান ওদিকে তাকায়।আয়মান প্রচুর দূবল হওয়ায় অজ্ঞান হয়ে যায়।

ম্যাম- অফিসার তাড়াতাড়ি আয়মানকে হসপিটালে নিয়ে যান।

আদি কে নিয়ে চলে যায়।রোশনকে নিয়ে ম্যাম কোথাও চলে যায় ।সেখানে ওকে একটা চেয়ারে বাঁধা হলো ।ম্যাম রোশনের সামনে গিয়ে একটা
চেয়ারে বসে।

ম্যাম- তুই এত বোকা সেটা আমার জানা ছিলো না।

রোশন- তুই কে ?

ম্যাম- আমি হলাম সে যাকে ধরতে এসে তুই নিজেই ধরা পড়ে গেলি( বাঁকা হেসে)

রোশন- তারমানে তুই সব কিছুর মাস্টার মাইন্ড।

ম্যাম- ইয়েস।

রোশন- তোকে তো আমি

ম্যাম – কিছু করতে পারবি না‌। তুই হলি আন্ড্যারওয়াল্ড কিং খান যাকে সারা দেশে র পুলিশ খুঁজছে।

রোশন- কোনো জেল কিং খান কে আটকে রাখার ক্ষমতা রাখে না‌ আমি তো বেরোবোই তারপর তোকে শেষ করবো।( হেসে)

ম্যাম- হেসে নে যত ইচ্ছা হেসে নে। কারন এই হাসিটা তোর মুখে বেশিক্ষন থাকবেনা। ( বন্দুক তাক করে)

রোশন- কি করছো ।( ভয় পেয়ে) তুমি এটা করতে পারবোনা কারন গুলি করার আইন তোমার নেই।

ম্যাম- আমি আইনের লোক কে বললো ।

রোশন- তাহলে তুমি কে।

ম্যাম মাস্কটা খুললো।রোশন শক খেল।

ম্যাম- তোর কাছে ২ টো রাস্তা।১.আমার হাতে মরা।
২. নিজে নিজেকে মারা। কোনটা নিবি বল।

রোশন ঘামচ্ছে।

ম্যাম- কোনটা নিবি বল।

ম্যাম- কী হলো বলো। আমার হাতে মরার এত শখ তোমার( বাঁকা হেসে)

রোশন-না আমি নিজেই করবো( ভয়ে)

রোশনের হাত খুলে দেই।রোশন কাঁপা কাঁপা হাতে বন্দুকটা তুলে নিজের মাথায় গুলি করে।ম্যাম বাঁকা হাসে।

ওদিকে –

আদি কে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।আদি কে প্রচুর মারধর করা হয় তার উপর আবার ড্রাগ দেবার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ে । ডাক্তাররা বলেছে চিন্তার কিছু নেই ঠিক হয়ে যাবে।

তানিশা- আদি

আদি- হুম

তানিশা- কেমন লাগছে এখন।

আদি- ভালো।

তানিশা- তুমি রেস্ট নাও আমি আসছি।

আদি- থাকো না একটু।

তানিশা- ওকে।আদিল পাশের টুলে বসে আদির মাথায় হাত বোলাতে থাকে।

কেটে যায় কয়েকদিন-

আদি এখন সুস্থ। তানিশা আদির দেখাশোনা করেছে।আর ইরা নীলকে প্রতিদিন ফোনে করে জ্বালায়।

আদি আজ অফিসে গিয়ে রোশনের কেসটা ব্যাপারে কথা বলছিল।

অফিসার- স্যার আমরা ম্যাম কে কল করে ছিলাম।কারন ম্যাম রোশনের কেসটা নিজে হ্যান্ডেল করছিলেন।

আদি- ওওওওও। আপনারা এখন আসুন আমি পড়ে কথা বলছি।

ওনারা চলে গেল।

আদি- সেদিন তো ওটা তানিশা ছিল। তাহলে ম্যাম টা কে ?

আদি তানিশার বাড়িতে যায়।কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিল।

আদি- তানিশা আছে।

মেয়েটা- হুম। রুমে আছে আমি ডেকে দিচ্ছি আপনি বসুন।

আদি- না থাক আমি যাচ্ছি।

আদি তানিশার রুমে গেল।ও দেখলো তানিশা বিছানাতে আধ শোয়া হয়ে কিছু ফাইল দেখতেছে।

আদি- তানিশা আসবো।

তানিশা- কে ( খানিকটা অবাক হয়ে )

আদি- আমি ( ভেতরে ঢুকে)

তানিশা আদিকে দেখে উঠে বসে।

তানিশা- আপনি।

আদি- তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।

তানিশা- কি কথা?

আদি- রোশনকে কেন পুলিশের হাতে না দিয়ে তুমি ওকে মারলে কেন ( গম্ভীর গলায়)

তানিশা চুপ করে আছে।

আদি- বলো তানিশা চুপ করে থেকো না। আমি জানি সেদিন তুমিই গিয়েছিলে।

তানিশা- এগুলো দ্যাখো( ওর হাতে থাকা ফাইল গুলো আদির হাতে দিয়ে)

আদি – কি এগুলো।

তানিশা- দ্যাখো।

আদি ওগুলো দেখে অবাক হলো।

তানিশা- এখানেই শেষ নয় আরো অনেক কিছু আছে।রোশন হলো মাফিয়া কিং খান। তুমি ভাবলে কি করে ওকে আটকে রাখা যাবে।
আদি- তা বলে তুমি এতবড়ো আইন হাতে তুলে নেবে।

তানিশা- আদি আমি তোমার থেকে আইনটা কম জানি।এটা ভেবো না।( উঠে দাঁড়িয়ে)

আদি- মানে।

তানিশা- ১. আমি রোশনকে মারিনি।ও নিজেই নিজেকে সুট করেছে।আর ২. আমি মারলেও কেউ আমাকে কিছু করতো না।

আদি- বুঝলাম না।

তানিশা- আদি আমি কুইন আইনের চোখে একজন বড়ো অপরাধি তাইনা। তারপরও আমার নামে কোনোদিনো কোনো কেস হয়নি এমনি এমনি নাকি।

আদি- কে তুমি?

তানিশা- আমি সেই সিনিয়র অফিসার।

আদি- ও মাই গড।

তানিশা- সব কনফিউশন গেছে।

আদি- হুম।

১ সপ্তাহ পর-

আজকে আদি আর তানিশার বিয়ে হলো।
তানিশা বাসর ঘরে বসে আছে।একটু নার্ভাস।আদি দরজাটা খুলে ঘরে প্রবেশ করলো। তানিশা কাঁপা গলায় সালাম দেই।

আদি মুচকি হেসে তার উওর দেই।তারপর দুজনে মিলে নামাজ আদায় করে।

আদি তানিশাকে টেনে নিয়ে বারান্দায় থাকা চেয়ারে বসায়।

আদি- তানু তুমি নার্ভাস তাই না ( বাঁকা হেসে)

তানিশা কিছু বলে‌না।

আদি- আমার ভাবতে অবাক লাগছে এটা ভেবে যে
তানিশা আমাকে দেখে নার্ভাস।যাকে ভয় করে ।

তানিশা- ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম ।

আদি- ওকে আর মজা করবো না।

দুজনে চুপচাপ। নিরবতা ভেঙ্গে আদি বললো।

আদি- জানো প্রথম যেদিন তোমাকে পার্কে দেখি আমার মনে হয়েছিল আমার সামনে একটা পরী দাঁড়িয়ে আছে। তারপর তখন তুমি হারিয়ে গেলে আমি বুঝতে পারলাম ওই পরিটাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।তখন অনিক আমাকে বলেছিল তুমি আর নেই আমি বিশ্বাস করেনি। তোমার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে এতগুলো বছর পার করেছি।আবার এতবছর পর যখন তোমার সাথে দেখা হয় তখন মনে হতো তুমি আমার অনেক কাছের কেউ তখন তো আর বুঝতে পারেনি তুমিই আমার মনি।এতদিন তোমাকে অনুভবে ভালোবেসে এসেছি। এবার তোমাকে নিজের করে পেতে চাই তুমি দেবে কী সেই অধিকার।
তানিশা কিছু বলেনা।

আদি- আমি জোড় করবো না।চলো ঘুমাবে চলো

( আদি চলে যেতে গেলে তানিশা হাত ধরে আটকেই আদি তার উওর পেয়ে গেছে। তানিশাকে কোলে তুলে নিয়ে যায় বিছানায়)

৫ বছর পর-

আজকে আদি আর তানিশার একমাত্র ছেলে আনিস এর জন্মদিন।তানিশা রেডি হচ্ছে।আদি ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

তানিশা- কি হলো টা কি?

আদি- কিছু না ( ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে)

তানিশা- ছেলে চলে আসবে ছাড়ো।

আদি তানিশাকে ছেড়ে দেয়।

আদি- শাড়ী পড়ে দারুন লাগছে।

তানিশা- থাক বলতে হবে না।রেডি হয়ে নিচে এসো।

আদি ওয়াশরুমে ঢুকলো।আর তানিশা শাড়িটা ঠিক করে নীচে গেল। তানিশা শাড়ি পড়তে আর সামলাতে শিখে গেছে।আদি প্রথম প্রথম ওকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।এখন ও পড়ায়।

তানিশা নীচে নেমে দেখলো প্রায় সকলে চলে এসেছে।নিঝুম, মিতু আর নীলা তানিশাকে জড়িয়ে ধরে।ওদের বন্ধুত্বটা এখন ও আগের মতো আছে।

অনিক- এই আমাদেরো কেউ জড়িয়ে ধর।

তানিশা- কেমন আছেন সবাই।

রাজ- বাবা আপনিতে চলে গেলি।

তানিশা- হুম।

ইরা- দিভাই কেমন আছো ( জড়িয়ে ধরে)

তানিশা- ভালো তুমি।

ইরা- ভালো।

তানিশা নীলের কোলে থাকা মেয়েটাকে নেই নীল আর ইরার মেয়ে ২বছর বয়স।ওকে কোলে নেবার পর ই আনিস কোথা থেকে এসে পড়ে।

আনিস- মম বনুকে দাও।

তানিশা- আচ্ছা সাবধানে নেবে।

আনিস ওকে কোলে নেই।

ওদের অনুষ্ঠান ভালো করে শেষ হয়।

রাত্রি বেলা-

নীল- কী ভাবছো।

ইরা- কিছু না।

নীল- তোমায় খুব কস্ট দিয়ে ছিলাম তাই না।

ইরা কিছু বলে না।

নীল- সেদিন তানিশা না বললে। নীল আগের কথা ভাবতে থাকে.

তানিশা- নীল তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।

নীল- কী।

তানিশা- তুমি তো ইরাকে বিয়ে করতে চাও না । সেজন্য আদি ওর বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করেছে।কালকে ওদের এনগেজমেন্ট।

তানিশা চলে যায় নীল চিন্তায় পড়ে গেল।ও কি করবে ইরা যে অন্যকারোর হয়ে যাবে এটা মেনে নিতে পারছে না। নীল কোনো রকমে রাতটা পার করে। পরেরদিন সকাল এ আদিদের বাড়ি তে গিয়ে কাউকে কিছু না বলে ইরাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

ইরা- ছাড়ো সবাই আছে।

নীল ছেড়ে দেয়।

আদি- কী হলো এটা ।

তানিশা- বাবা ওদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিন ।
এখনি যা অবস্থা।

ইরার ডাকে নীল অতীত থেকে বেরিয়ে আসে।

ইরা- এখন ও দিভাইকে ভালোবাসো তাইনা।

নীল কিছু বলে না কি বলবে এটা তো সত্যি তানিশাকে ও পুরোপুরি মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি এখন ও অনুভবে ভালোবাসে।

ইরা- আমি জানি তুমি ভুলতে পারোনি। তাতে আমার কস্ট হয়না কারন আমি জানি তুমি আমাকে কস্ট দেবার কাজ কখনো করবে না।

নীল ইরা বুকে জড়িয়ে নেয়।

ওদিকে-

আনিস- মম আমার একটা বোন চাই।

আদি তানিশার দিকে তাকায়।

তানিশা- এখন ঘুমাও।

আনিস ঘুমিয়ে যেতে তানিশা বারান্দায় গিয়ে বসে।
আদিও পেছন পেছন আসে।

আদি- তুমি কী কোন কারনে চিন্তিত।

তানিশা- নতুন কেস নিয়ে।

আদি- চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার বউ ঠিক পারবে( পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে)

তানিশা- তাই

আদি- হুম তাই।এখন চলো আমাদের ছেলের কথাটা সত্যি করে দেই

তানিশা- ছাড়ো খালি উল্টো পাল্টা কথা।

আদি ছাড়ে না আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তানিশা ও আর কিছু বলে না।

এত দিনের অপেক্ষার পর দুজন একত্রিত হয়েছে। এখন আর ওদেরকে দূরত্বে ভালোবাসতে হবে না। তবে দুজন-দুজনকে অনুভবে ভালোবেসে যাবে সারা জীবন। এভাবেই বেঁচে থাকুক সকল ভালোবাসা।

——সমাপ্ত——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here