অনুভূতিটা_অদ্ভুত “পার্ট ০২”

0
2049

অনুভূতিটা_অদ্ভুত “পার্ট ০২”
লাবিবা_ওয়াহিদ

,
,
তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে মুনের বাড়িতে এসে পৌঁছলাম। আল্লাহর শোকরানা যে তেমন দেরি হয়নি। তারপর বাড়িতে ঢুকে পড়ালাম মুনকে। মুনকে পড়ানো শেষ হতেই চলে এলাম আরেক স্টুডেন্ট এর বাসায়। মুনদের বাসায় বিস্কিট আর চা খাইয়েছে যার জন্য পেট একটু হলেও ভরেছে। সায়ন কে পড়ানো শুরু করি এমন সময়ই জানালা দিয়ে বাইরে নজর গেলো। দেখি একজন মেয়ে তার বাবার হাত ধরে খেলা করছে কতোই না হাসাহাসি লাফালাফি করছে। আর তার বাবা অতি যত্নে তার সাথে খেলছে আইসক্রিম এনে খাওয়াচ্ছে।

এসব দেখে চোখে জল চলে আসলো আমার আর টপটপ করে পড়তে শুরু করলো। আজ বাবার কথা বড্ড মনে পড়ছে। বাবা ও বাবা তোমার কি আমার কথা মনে পড়ছে না? দেখো কি সুন্দর ওরা খেলা করছে। আমি কি আর পারবো না এভাবে তোমার সাথে খেলা করতে দুস্টুমি করতে? দিবে না ঘুমানোর আগে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতে?

এসবই ভাবছিলাম আর কাঁদছিলাম হঠাৎ সায়নের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে এবং চোখ মুছে মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে সায়নকে বলি,”কিছু বলবে?”

– ম্যাডাম তুমি কান্না করছিলে কেন?

– কই কাঁদিনি তো। আসলে হয়েছে কি চোখ জ্বলছিলো তো তাই হয়তো চোখ দিয়ে পানি পড়েছে।

– ওওও আচ্ছা।

– হুম এখন এটা মুখস্থ করে শুনাও তো।

এভাবেই সায়নকে পড়ানো শেষ করে বেরিয়ে পড়ি বাসার উদ্দেশ্যে। এখন সন্ধ্যা মাগরিবের আযান দিচ্ছে।

– ইসসসস কতো দেরি হয়ে গেলো। এখান থেকে বাসাও তো প্রায় ৪০মিনিটের পথ কি করে যাই? ধুর ফোন টাও আজ আনিনি আনলেও ফ্লাস অন করে আলো পেতাম। একটু পর তো ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসবে নাহ আয়াত তুই পারবি যেতে।

এসব বিড়বিড় করতে করতেই বাজারে পৌঁছে গেলাম। বাজার ছাড়ার পরপরই আসে বড় বড় গাছের মাঝে সরু রাস্তা। অনেকেই সন্ধ্যার পর এইদিক দিয়ে একা আসতে ভয় পায়। তাদের ধারণা এই জায়গায় ভূত প্রেতের উপদ্রব বেশি। আমি এসবে বিশ্বাসী নই তাই ভয় জিনিসটা আমার মাঝে নেই। আমি আমার কুরআনকে বিশ্বাস করি। কুরআনে স্পষ্ট লেখা আছে যা আছে সবই মানুষ এবং জ্বিন মিলিয়ে। হ্যাঁ জ্বীন বিশ্বাস করি কিন্তু ভূত টূত না। মরার পর যদি কোনো মানুষ আত্না হয়ে জীবিত হতো তাহলে পৃথিবীতে মানুষ নয় আত্নারই বসবাস চলতো।

এসবই ভাবছি আর সেই পথ ধরে যাচ্ছি। চাঁদের আলোয় রাস্তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাই কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোনো মানুষই দেখা যাচ্ছে না। কিছুদূর যেতেই পাশে থাকা বাশবন থেকে একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ পেলাম। কান্নার আওয়াজ কানে আসতেই আমি থেমে গেলাম তারপর এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলাম “নাহ কোনো মানুষই তো চোখে পড়ছে না আশেপাশে তাহলে এভাবে কে কাঁদছে?”

কান্নার শব্দ টা যেনো আরও অনেকটা তীব্র হচ্ছে। এতোটাই তীব্র যে আমার কান টা ফেটে যাচ্ছে। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা করছে সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে সেখানেই বসে পড়ি। তারপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমি আমার রুমে এবং আমারই বিছানায়। পায় নাড়াতেই পায়ে গুরুতর ব্যথা অনুভব করলাম। পা এর দিকে তাকাতেই দেখলাম পায়ে ব্যান্ডেজ করা। কিন্তু আমার পায়ে কি হলো আর আমি তো রাস্তায় ছিলাম বাসায় ফিরলাম কখন আর আমার রুমের বিছানাতেই বা কি করে এলাম? কি হচ্ছে এসব আমার সাথে? আল্লাহ আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি রাত ১০টা বাজে। তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াতেই পায়ের ব্যথা বেড়ে গেলো। “আহ” করে চিল্লিয়ে বসে পড়লাম। এই পা নিয়ে কি করে রান্নাঘর পর্যন্ত কি করে যাবো তার উপর দাদিম্মি তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে। না জানি না খেতে পেয়ে কি চিল্লানো টাই না চিল্লাবে। এক মিনিট পরিবেশ এরকম নিরব কি করে? দাদিম্মির তো এমন নিরব থাকার কথা না আর আমি শুয়ে থাকলেও আমার গায়ে পানি ঢেলে উঠাতো কিন্তু আজ দেখছি সবকিছুর বিপরীত।

এসব আকাশ পাতাল ভাবছিলাম হঠাৎ পরিবেশ টা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেলো। জানালা ভেদ করে খুব জোরে বাতাস বইছে আর রুমটাকে পুরো ঠান্ডা করে দিচ্ছে। তার সাথে রয়েছে এক অন্যরকম সুভাষ! চোখ বন্ধ করে সুগন্ধ টা নিতে থাকলাম। এমন সময়ই চোখে মনে হলো ঘুম ঝেঁকে বসলো। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেলাম না চাইতেও।

গভীররাতে অনুভব হলো পায়ে ঠান্ডা কিছু স্পর্ষ যা আমাকে কিছুক্ষণ পরপরই শিহরিত করে তুলছে। চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করেও পারলাম না শেষে ব্যর্থ হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে,

প্রতিদিনের মতোই আযানের সুরেই ঘুম ভাঙ্গলো। ওযু করতে গিয়ে খেয়াল করলাম রাতের মতো পায়ের ব্যথা টা নেই আর ব্যান্ডেজও উধাও। বিষয় টা দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। এমন অদ্ভুত কান্ড হচ্ছে কি করে? এসব কি আদৌও সম্ভব? কাল সেই জঙ্গলের পথ থেকে কিসব ঘটে চলেছে আমার সাথে। সেখান থেকে কি করে রুমে ফিরলাম জানিনা আবার পায়ে ব্যান্ডেজ দেখলাম কিন্তু কেন তাও জানিনা। তার উপর রাতে ওইরকম ঠান্ডা অনুভুতি আর সকালে…. নাহ মাথায় আর প্রেশার দিতে পারছি না।

বেশি না ভেবে ওযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। শেষে মোনাজাতে প্রার্থনা করলাম,

-” হে মাবুদ তুমি তো সবকিছুর মালিক তুমি সবই জানো আমার সাথে কি হচ্ছে না হচ্ছে। আমায় পথ দেখাও তুমি মাবুদ আমার সাথে কি হচ্ছে না হচ্ছে সবটা বোঝার তৌফিক দান করো আমিন।”

নামাজ শেষে কুরআন তিলাওয়াত করলাম কিছুক্ষণ। বাইরে তাকিয়ে দেখি আলো ফুটেছে। কুরআন যথাস্থান এ রেখে রুম থেকে বেরিয়ে চলে এলাম রান্না ঘরে। ঝটপট চা করে দাদিম্মির রুমে এলাম। এসে দেখি সে শোয়া থেকে উঠে চশমা চোখে পড়ছেন। আমায় দেখে কোনোরকম রিয়েক্ট করলেন না শুধু বললেন যে চা টা টেবিলের উপর রেখে দিতে। আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। আমি তাকে কাল রাতে খাবার দিতে পারিনি তার জন্য না বকে এমন আচরণ কেন করছে?

চা রাখতেই দাদিম্মি চা নিয়ে চায়ে চুমুক দিলো। আমি নিজের কনফিউশন না আটকিয়ে রাখতে পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,”দাদিম্মি কাল তো আমার জন্য খেতে পারোনি তার জন্য আমায় যে কিছু বলছো না?”

দাদিম্মি চা খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে রাগি দৃষ্টি নিয়ে বলে,”তোর মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে আয়াত কিসব উল্টা পাল্টা বকছিস? রাতে তো তুই আমি দুজন একসাথে বসেই খাবার খেলাম সব কি ভিলে গেছিস??”

দাদিম্মির কথায় যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। বলছে কি দাদিম্মি এসব আমার নাকি ওনার মাথা খারাপ। আমি তো রুমেই ছিলাম যখন সেন্স ফিরে আর না খেয়েই তো ঘুমিয়েছি আমি আবার দাদিম্মির সাথে বসে কখন খেলাম? এসব কেমন রহস্য আল্লাহ? এসব কি হচ্ছে আমার সাথে কিছুই বুঝতে পারছি না। কাল থেকে একেকটা রহস্যের স্বীকার হয়েই চলেছি। আচ্ছা দাদিম্মি কি আমায় মিথ্যা বলছে?

– কিসব বলছো দাদিম্মি আমি তোমার সাথে বসে কখন খেলাম?

– তোর তো দেখছি দিনদিন স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে। কাল রাতে এখানে বসে আমি আর তুই একসাথে খেয়েছি। তুই বলছিস তোর কোন ছাত্র নাকি ছাত্রীর বাসা থেকে পায়েস মিষ্টি দিয়েছে সেটা খেয়েই ডিনার সারবি আর আমাকেও খাইয়েছিলি বেশ তৃপ্তি ছিলো। এমন তৃপ্তিময় পায়েস মিষ্টি আমি কখনোই খাইনি ইসস এখনো মুখেই লেগে আছে যেনো।

– দেখো দাদিম্মি তুমি হয়তো স্বপ্ন দেখছো কাল তো….

– আবার আজেবাজে বকছিস? তোর কি মনে হচ্ছে আমি মিথ্যে বলছি? স্বপ্ন আমি নই তুই দেখেছিস এখন যা সামনে থেকে আজেবাজে কথা বলে মাথা ব্যথা উঠাস না যত্তোসব।(বিরক্তি নিয়ে)

প্রতিবার দাদিম্মির কথায় কষ্ট পেলেও এবার বিন্দুমাত্র কষ্ট লাগলো না। মনের মধ্যে যে হাজার প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। যেখানে রাতে আমি আমার রুমেই ছিলাম সেখানে কি করে আমি দাদিম্মির সাথে বসে মিষ্টি পায়েস খাবো। আর মিষ্টি পায়েস দেওয়া তো দূরে থাক কেউ একটা ফল পর্যন্ত সেধে দেখেনি। এসব কিসের রহস্য? কি করে আমি দুই জায়গায় থাকলাম। আবার সেই কাল রাতের সেই কান্নার শব্দ। নাহ সব প্রশ্নের উত্তর আমায় জানতেই হবে কিন্তু কি করে?
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!

(কেমন লেগেছে জানাবেন। আজ অনেক দিন পর গল্প টা দিলাম তার জন্য ভিষণ ভাবে দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here