অনুভূতিটা_অদ্ভুত “পার্ট ০৪”
#লাবিবা_ওয়াহিদ
———————
আমাকে দাদিম্মি যেই আরেকটা চড় দিতে যাবে ওমনি কেউ দাদিম্মির হাত কেউ ধরে ফেলে। আমি তাকিয়ে দেখি একজন মহিলা এবিং দাদিম্মিও তার দিকে তাকালো। তাকে দেখতেই দাদিম্মির মুখ টা কোমল হিয়ে গেলো। আমার মহিলাটিকে কেমন চেনা চেনা লাগছে কিন্তু আমি তাকে ঠিকভাবে চিনতে পারছি না। মহিলাটি ঝাঝালো কন্ঠে বলে,”ছিহ মা ছিহ তুমি এতোটা নিচে নামতে পারো আমার জানা ছিলো না। আমাদের বংশের উত্তরাধিকারী ও একা! ভাবির উপর অত্যাচার চালিয়েছো এখন ওর সাথে শুরু করেছো? সত্যিই কি তুমি আমাদের মা? কি করে পারলে মেয়ে হয়ে এভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দিতে?”
– নিলু মা তুই ফিরে এসেছিস? এতো বছর তুই ক….
– এনাফ মা তোমার ওই নোংরা মুখে মা” ডাক টা মানায় না। আর বুঝো না কেন এতোদিন তোমার থেকে দূরে থেকেছি? সত্যিই কি বুঝতে পারো না?
তাদের কথোপকথনে যা বুঝলাম উনিই আমার একমাত্র ফুপ্পি। সে দেখতেও বেশ সুন্দর বয়সের ছাপ এখনো তার মুখে পড়েনি। এতো কিউট ফুপি আমার আছে তা আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না।
– এসব কি বলছিস আমিতো….
– ব্যাস মা যতো যাই বলো তোমার কথায় আমি ভুলছি না। যখন ছোট ছিলাম তখন দিনের পর দিন চোখের সামনে দেখতাম কি করে তুমি ভাবিকে অপমান করতে, অত্যাচার করতে। কি ভেবেছিলে রুমে বন্দি করে রাখলেই তোমার কার্যকলাপ সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝতে পারবো না? আচ্ছা বলো তো ভাবির কি দোষ ছিলো? কারণ সে গরিব ছিলো? তার জন্য কিভাবে পারলে এভাবে ভাবিকে অত্যাচার করতে??
মায়ের সম্পর্কে এসব শুনে আমার চোখ বেয়ে দু এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি আমার মা এতোকিছু সহ্য করেছে? মায়ের কষ্টের কাছে তো আমার কষ্ট সুতার সমানও না। মা কি করে এতো কষ্ট সহ্য করেছো তুমি?
দাদিম্মি কিছু বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ফুপি দাদিম্মিকে চুপ থাকতে দেখে একটা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,”জানি তোমার কাছে উত্তর পাবো না। তবে মা একটু হলেও বিবেক দিয়ে ভেবে দেখতে তোমারও মেয়ে আছে, তার সাথেও যদি সেই একই কাজ করতো তখন কি পারতে নিজেকে ক্ষমা করতে? না পারতে না! তাইতো তোমাদের কিছু না বলেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। সে যাইহোক এখন তুমি তোমার রুমে যাও তোমায় আমার একদমই সহ্য হচ্ছে না।”
ফুপ্পির কথায় দাদিম্মি চুপচাপ চলে গেলো। দাদিম্মি চলে যেতেই ফুপ্পি আমার দিকে তাকালো। তারপর কি একটা ভেবে তার ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করলো। বক্সটাতে কি আছে আমি বুঝতে পারলাম না। বক্সের ঢাকনা টা খুলতেই দেখলাম হরেক মেডিসিন আর তুলো। ফুপ্পি আমার সামনে বসে এক হাতে হেক্সিক্সল নিয়ে আরেক হাতে তুলো নিলো তারপর অতি যত্নে আমার ঠোঁটের কোণায় জমে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে দিতে লাগলো। দাদিম্মির চড় টা এতোই জোরে ছিলো যে ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে গেছিলো। ফুপ্পি খুব যত্ন সহকারে মেডিসিন দিয়ে বলে,”জ্বালা করছে?”
আমি মাথা নাড়িয়ে “না” বুঝালাম। ফুপি কিছুটা হেসে তার ইয়া বড় ব্যাগ থেকে আরেকট বক্স বের করে এবং আমায় সেটা দিয়ে বলে,”খাও।”
আমি তার দিকে অদ্ভুত নয়নে তাকিয়ে আছি।
– কি আছে এটাতে?
– কিছু মিষ্টান্ন। খেয়ে দেখতে পারো।
আমি নিলাম না চুপচাপ বসে আছি। ফুপি কিছুটা মুচকি হেসে বলে,”আমায় কি চিনতে পারছো না?”
– না না তা নয় আমি জানি তুমিই আমার সেই ফুপি।
– তাই? তুমি জানো প্রায় ভাবির মতোই দেখতে।।
– আমি দেখেছিলাম আম্মিকে ছবিতে। সামনাসামনি দেখার ভাগ্য হয়তো আল্লাহ করে দেননি।
আমার কথায় ফুপি নিমিষেই মুখ ভার করে ফেলে। এভাবে কিছুক্ষণ দুজন মিলে কথা বললাম। ফুপির সাথে বেশ ক্লোজ আর ফ্রি হয়ে গেছি। কথা শেষে দুজন মিলে রান্নাঘরে চলে আসি নাস্তা বানাতে। চটপট নাস্তা বানিয়ে এক প্লেটে নাস্তা নিয়ে দাদিম্মির রুমে চলে আসি। দাদিম্মি বিছানায় বসে আছে আর কিছুক্ষণ পরপরই চোখের চশমা কিছুটা সরিয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে। বিষয়টা খারাপ লাগলো তবুও নিজেকে সামলে হাসিমুখে দাদিম্মির সামনে নাস্তা নিয়ে গেলাম।
– দাদিম্মি এখন আসো তো খেয়ে ফেলো চটপট এমনিতেই অনেকক্ষণ না খেয়ে আছো ওষুধ গুলো তো খেতে হবে নাকি?
দাদিম্মি আমায় নাস্তা নিয়ে আসা দেখে অনেকটা অবাক হলো সেটা তার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি। আমার কথায় যেনো আরও চমকে উঠলো। আমি তাকে স্বাভাবিক ভাবেই নাস্তা খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে রেস্টে রেখে রুম থেকে যেই বের হবো ওমনি দেখলাম ফুপি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি হাসি দিয়ে তার পাশ কেটে রান্নাঘরে চলে আসি আর বাসন গুলো ধোঁয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফুপি রান্নাঘরে এসে জিজ্ঞেস করে,”যে আজ তোমার সাথে এতো অন্যায় করলো, ছোট থেকে তোমাকে এতো কষ্ট দিলো তার এভাবে কি করে যত্ন নিচ্ছো তুমি? আজ আমি সময়মতো না আসলে কি হতপ ভাবতে পারছো?”
আমি মুচকি হেসে বললাম,”সে আমার দাদিম্মি হয়, তার রক্ত আমার শরীরে বিদ্যমান। কি করে তাকে ছুড়ে ফেলে দেই তুমিই বলো? হ্যাঁ মানছি আমায় কারণে অকারণে নির্যাতন করে তবুও তো সে আমার থেকে অনেক বড়। তার অধিকার আছে আমার উপর। আর যাইহোক দাদিম্মির প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। হয়তো আল্লাহ এসব আমার কপালে লিখে রেখেছেন তাই ঘটছে। আল্লাহর উপর ভরসা আছে ফুপি আমি মন থেকে বিশ্বাস করি আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন।”
ফুপি এখনো আমার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। হয়তো আমার কথায় অবাক হয়েছেন। কিন্তু আমার মন যা বললো আমিতো তাই বললাম। আর কাল ওই ছেলেটার কথায় আমি যে অনেকটা আশ্বাস পাই। তাকে পেলে একবার ধন্যবাদ জানিয়ে দিতে হবে। তার কথাতেই তো আমি আজ এতো নির্যাতনের পরেও হাসিখুশি। সত্যি সে না চাইতেও আমায় অনেক সাহায্য করেছেন। সেই যে আমার অনুপ্রেরণার কারণ!
কাজ সেরে প্রতিদিনের মতো পাড়ার বাচ্চাদের পড়ানো শেষ করে আবার রান্নাঘরে চলে গেলাম। হঠাৎ হালকা খুদা পেলো কিন্তু খাওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই। ভাত বসিয়েছি হতেও অনেক সময় লাগবে। ফুপি গোসে গেছে আর দাদিম্মি নিজের রুমে চোখ বুজে আছে। এমন সময়ই ফুপির দেওয়া মিষ্টান্নের কথা মনে পড়ে। তাড়াতাড়ি রুমে এসে আলমারি থেকে বক্স টা নিলাম। বএক্স টা খুলে দেখি হরেক রকমের মিষ্টি আর সন্দেশ। মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো সুগন্ধ। লোভ সামলাতে না পেরে একটা সন্দেশ খেলাম। আহহ কি স্বাধ! কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার একটা খেতেই পেট ভরে গেলো। যাক বেশি ভেবে কাজ নেই পেট ভরেছে এটাই অনেক।
খাওয়া শেষেই বক্স টা আগের জায়গাতেই রেখে দিলাম। হঠাৎ নজর গেলো সেই জানালার দিকে যেটা কাল প্রথমে খোলা দেখলেও পরে বক্নধ হয়ে গেছিলো। রাতের কথা ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো ভয়ে। আস্তে ধীরে সেদিকে এগোতে লাগি। এগোতে এগোতে জানালার কাছে চলে আসি। তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে জানালা টা খুলি। জানালা দিয়ে শুধু একটা তেঁতুল গাছই দেখা যাচ্ছে এর বেশি কিছু আশেপাশে নজর পড়ছে না। কিছুক্ষণ এভাবে ভেবে জানালা টা লাগিয়ে দিলাম ভালোভাবে যাতে করে বাতাসেও যেন না খুলে।
ফুপি গোসল করে আসলেই আমি ভাত নামিয়ে গোসলে ঢুকে যাই। তারপর গোসল সেরে নামাজ সেরে নিলাম।
সারাদিন দাদিম্মি রুম থেকে বের হলো না। তবে আমি সময় মতো খাবার ঠিকই খাইয়ে দিয়ে আসি। সে আমার কাজে অবাক হলেও মুখ ফুটে কিছু বলে না। আমিও আর তাকে জোর করিনি কথা বলার জন্য।
রাতে,,
,
,
,
,
,
চলবে!!!