অনুভূতিটা_অদ্ভুত “পার্ট ০৭”
#লাবিবা_ওয়াহিদ
————————–
– জ্বি বলুন।
– আপনার নাম?
– আযান!
তার কন্ঠে ‘আযান’ শব্দ টা যেনো বুকে তীরের মতো লাগলো। এক শীতল অনুভূতি হতে লাগলো কিন্তু কেন? এর মানে কি তার নাম আমার ভালো লেগেছে? হ্যাঁ লাগতেই পারে। হঠাৎ উনি বলে উঠলেন,”আপনার নাম নিশ্চয়ই আয়াত?”
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,”জ্বি।”
তারপর উনি আল্লাহ হাফেজ বলে চলে গেলেন। তার এমন অস্বাভাবিক ভঙ্গি আমায় অবাক না করে পারেনা। এভাবে প্রায় দুইদিন কেটে যায় এই দুইদিনে আযান নামক অদ্ভুত মানুষটাকে আর দেখতে পাইনি। তার বাসার সামনে দিয়ে কয়েকবার পাইচারিও করে এসেছি কিন্তু দরজায় কড়া দেওয়ার মতো সাহস হয়ে উঠেনি। কে জানে কি করছে এই ছেলে ঘরে বসে বসে। আচ্ছা কোনো ছেলে টানা দুইদিন একনাগাড়ে বাসায় আসলেই থাকতে পারে? আমিই তো পারিনা তাদের কি বলবো। কমবেশী বাইরে বের না হলেও ছাদে গিয়েও তো সময় কাটাই। এদিকে মনের মধ্যে কেমন খচখচ করেই যাচ্ছে তাকে একবার দেখার জন্য। অবশেষে হয়তোবা আমার খচখচানি টা দূর হবে তাও ফুপির কারণে।
– আয়াত এদিকে আয় তো..
– জ্বি ফুপি আসছি।
বলেই রান্নাঘরে এলাম। ফুপি হাতে প্লেট ভর্তি কিছু খাবার এবং মিষ্টান্ন ঢেকে দিয়ে বললো,” এগুলো আযান নামের ছেলেটাকে দিয়ে আয় তো। অনেক দিন তো হলো আমাদের এখানে আছে এখন কিছু না দিলে সম্মান কই গিয়ে দাঁড়াবে।”
ফুপির কথায় আমি আর এক মুহূর্তও দেরি না করে খাবার নিয়ে ছুটে যেতে লাগলাম। এতোদিন যেই অপেক্ষা ছিলো আজ তার অবসান ঘটতে চললো। ফুপি পেছন থেকে কয়েকবার বলে উঠে,”আরে সাবধানে যা পড়ে যাবি তো আজিব মেয়ে তোহ!”
আমি খুব উৎসুক হয়ে আযানের ফ্লাটের সামনে আসলাম এবং দরজায় কড়া নাড়লাম। কিছু সেকেন্ডের মাঝেই সে দরজা খুললো। আমি তার চেহারার দিকে তাকিয়ে তাকে সালাম জানালাম। উনি সালামের উত্তর নিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করে,”কিছু কি প্রয়োজন?”
আমি তাকে বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম। একটা কালো ফুল হাতার শাট পড়েছে, চুলগুলো কিছুটা বাতাসে উড়ছে এবং মুখে চাপদাড়ি! উফফফ ওনার সৌন্দর্যের তারিফ না করে পারিনা। সে আমায় আনমনে দেখে গলা ঝেড়ে বলে,”আপনি বারবার কোথায় হারিয়ে যান বলুন তো।”
আমি ধ্যান থেকে ফিরতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম এবিং হাতে থাকা ট্রে টা তার দিকে এগিয়ে বললাম,”ফুপি আপনার জন্য কিছু খাবার পাঠিয়েছে।”
সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর আমার হাতের থেকে ট্রে টা নিয়ে বলে,”ধন্যবাদ”
তারপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার মুখের উপর ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। বিষয়টা আমায় রাগান্বিত করে তুললো। কেউ কারো সাথে এমন আচরণ করে? কাইন্ডলি এটা তো মানুষ বলে যে ‘আসুন ভেতরে আসুন বসুন কি নিবেন চা না কফি ব্লা ব্লা ব্লা!’ কিন্তু এ তো পুরোই উলটো। ইনি কোন গ্রহের এলিয়েন ভাই? যাক গে আর কখনোই এই মুখো হবো না আমি হুহ!
ভেবেই সেখানে কিছুক্ষণ রাগ ঝেড়ে নিচে চলে আসলাম।
রাতে কাপড় গুছিয়ে আলমারিতে রাখছিলাম ওমনি হুট করে আমার রুমের বালব বন্ধ হয়ে গেলো। মনের মধ্যে এক ভয় কাজ করলো। ভয়ে অধিক পরিমাণে কাঁপতে লাগলাম হাতে থাকা কাপড়টাও আমার হাতের সাথে কাঁপছে। হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে গেলো পুরো রুমটা এবং খুব চেনা একটা সুগন্ধ নাকে আসলো। সুগন্ধিতে নিমিষেই মনের সকল ভয় কেটে গেলো। এই #অনুভূতিটা অদ্ভুত অনেকটাই অদ্ভুত। মনে হয় যেনো আমার সকল বিপদ কেটে গেছে। হঠাৎই সেই চেনা কন্ঠসর। আমি কিছুটা শিউরে উঠলাম।
– আসসালামু ওয়ালাইকুম।
তার কন্ঠসর শুনে নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। কতো আশা আকাঙ্ক্ষা এবং দোয়ার পর তার কন্ঠ শুনলাম। হ্যাঁ সে আজ এসেছে। আমি কাপা কাপা গলায় বললাম, “আ…আ..আপনিই ক…ক…কি সেই?”
– হুম আমিই সেই মনে আছে আমার কথা?
আমি অনেকটা অভিমানী কন্ঠ নিয়ে বললাম,”না নেই! আপনি এখানে কেন এসেছেন?”
– বাব্বাহ আপনি দেখছি অভিমান করে আছেন।
– করলে করলাম তাতে আপনার কি? আপনি তো শুধু পারেন কষ্ট দিতে।
– আরে আরে আপনি কাঁদছেন কেন বলুন তো? আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম আপনার আমাকে মনে পড়ে কিনা।
আমি কিছু বললাম না। আমার চুপ থাকা দেখে সে বলে,”ঠিক আছে আপনার যদি আমাকে পছন্দ না হয় আমি তাহলে চলে যাচ্ছি।”
তার শেষের কথায় আমার বুক কেঁপে উঠে। কস্ট এবং রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলি,”খবরদার আপনি যাবেন না নইলে আপনাকে খুন করে দিবো।”
আমার কথায় সে বলে,”আল্লাহ আপনি কবে থেকে এমন গুন্ডি হয়ে গেলেন?”
– দেখুন আমার মস্করা একদম ভালো লাগছে না। কেন আপনি এতোদিন আসেন নি জানেন আপনার জন্য আমার কি অবস্থা হয়েছিলো? কতোটা সময় অপেক্ষা করেছি আমি জানেন? কতো নির্ঘুম রাত পার করেছি জানেন? নাহ আপনি জানেন না কিছুই জানেন না তাইতো সেই আমাকে একা ফেলে চলে গিয়েছিলেন। আপনি না বলেছিলেন আমায় সঙ্গ দিতে এসেছিলেন? এই আপনার সঙ্গ দেয়া? এভাবেই যদি চলে যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে কেন এসেছিলেন আমায় সঙ্গ দিতে কেন আমায় মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে আপনার মায়ায় গভীরভাবে জড়ালেন?(কাঁদতে কাঁদতে)
– দেখুন দয়া করে এভাবে কাঁদবেন না। আমি সত্যিই অনুতপ্ত আপনাকে এতোটা কষ্ট দেওয়ার জন্য। আল্লাহ আমায় ক্ষমা করুক যে আমি আপনাকে অনিচ্ছায় অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমি আমাকে যা শাস্তি দেয়ার দিন আমি মাথা পেতে নিবো তবুও এভাবে কাঁদবেন না দয়া করে এতে যে আমার নিজের প্রতিই অনেক নির্দয় লাগছে।
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলি,”তাহলে আমি যেসব প্রশ্ন করবো সেগুলোর উত্তর দিবেন?”
– যদি উত্তর দেয়ার মতো প্রশ্ন হয় তাহলে নিশ্চয়ই আমি উত্তর দিবো।
– আপনাকে আমি কেন দেখতে পাইনা?
আমার হঠাৎ এমন প্রশ্নে মনে হলো তিনি কিছুটা কবাক হয় কারণ এই পরিস্থিতিতে এসব প্রশ্নের কথা নয়। তিনি নিজেকে সংগত রেখে বলেন,”দুঃখিত আমি বলতে পারবো না।”
– কেন বলতে পারবেন না।
সে কোনো উত্তর দিলো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে খুবই মলিন সুরে বলে,”আমায় ভালোবাসেন?”
তার এমন কথায় কিছুটা শিউরে উঠলাম। নিজেই হিসাব মেলাতে পারছি না। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,”এএএমন প্রশ্নের কারণ?”
তিনি মৃদু হেসে বলেন, ” একজন মানুষ তখনই কাউকে ভালোবাসে যখন তাকে না দেখলে ছটফট করে, তার বিচ্ছেদ কোনোরকম সহ্য করতে পারে না, তাকে না দেখলে সবকিছুই ধোয়াশার মতো লাগে, তার অপেক্ষায় সবসময় থাকে, তার প্রতি অজানা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। এখন নিজেই হিসেব মিলিয়ে দেখুন।”
তার প্রতিটা কথার সাথে আমার হিসেব সব মিলে যাচ্ছে। তাকে ফিল করা, তাকে ভেবে ভেবে নির্ঘুম রাত পার করা, ছাদে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা তার জন্য অপেক্ষা করা, তার কন্ঠা শুনলে অদ্ভুত অনুভব হওয়া সব সব! তার মানে কি এটাই ভালোবাসা? আমি কি তাহলে তাকে ভালোবাসি? আসলেই তাকে ভালোবাসি? আচ্ছা এটাই কি ভালোবাসা?
এসব নানা প্রশ্ন ভাবতে ভাবতে নিজেই লজ্জায় পরে গেলাম। তিনি আবারও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন,” আমায় ভালোবাসেন?”
আমি কিছু না ভেবে চোখ বন্ধ মনে সাহস জুগিয়ে একটানে বলে দেই, “হ্যাঁ ভালোবাসি আমি আপনায়। জানিনা ভালোবাসার অনুভূতি কেমন? তবে সত্যিই #অনুভূতি টা অদ্ভুত তাও আপনাকে ঘিরে। জানিনা আমি এমন কোন মায়ায় আবদ্ধ হলাম তবুও বিশ্বাস করুন আপনাকে ছাড়া নিজেকে বড়ই অস্তিত্বহীন মনে হয়। যখন আপনি আমার আশেপাশে থাকেন তখন নিজেকে সকল বিপদ থেকে মুক্ত মনে করি। যেনো আপনিই আমার সুরক্ষার মূল কারণ।
আমার কথায় তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকেন তারপর আবার জিজ্ঞেস করেন,” আপনি তো আমায় কখনো দেখেন নি আমার পরিচয় জানেন না তাহলে কি করে ভালোবাসলেন?”
– ভালোবাসা কি দেখেই হয়? যদি আপনার পরিচয় এবং আপনাকে দেখে ভালোবাসতাম হয়তো এটা স্বল্প সময়ের আবেগ ধরে নিতাম। কিন্তু এমন টা নয়… আপনি আমার নিশ্বাসে মিশে গেছেন। আপনাকে ছাড়া নিজেকে খুব মূল্যহীন মনে হয়। আপনার পরিচয় রূপ নিয়ে আমার কিছুই যায় আসেনা। আমি শুধু আপনি নামক মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য চাই।
– আর আমি যদি বলি আমি মানুষ নই?
আমি অবাক হয়ে বললাম,”মানে?”
সে আবার বলে,”হ্যাঁ যা শুনেছেন ঠিক শুনেছেন আমি মানুষ নই, আমি একজন জ্বীন!”
তার কথায় আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। সে আমার চুপ থাকা দেখে সে আবার বলে,
—————————–
চলবে!!!