অনুভূতিটা_অদ্ভুত “পার্ট ০৮”

0
2345

অনুভূতিটা_অদ্ভুত “পার্ট ০৮”
#লাবিবা_ওয়াহিদ

——————————

আজ আমার বিয়ে তাও ওই আযানের সাথে! আযানের জায়গায় আমার সেই ভালোবাসা থাকলে খুব বেশি কি ক্ষতি হয়ে যেতো? আমি যে তাকে না দেখে ভালোবেসেছি এমনকি তিনি একজন জ্বিন বুঝেও। আমার ভালোবাসায় তো কমতি ছিলো না সে কি করে এতোটা কষ্ট দিতে পারলো?

বধু সাজে সজ্জিত হয়ে নিজের ঘরে বসে আছি। তবে আমি বরকা নিকাব পড়েছি। আযান নাকি চান না আমায় কেউ দেখুক তাই। কিছুক্ষণ পর ফুপিসহ আরও কিছু মহিলা আর মেয়েরা রুমে ঢুকলো। ফুপি বলে,”আয়াত উনি তোমার শাশুড়ি মা!”(একজন মহিলাকে দেখিয়ে)

আমি একপলক তার দিকে তাকালাম এবং অবাক হয়ে তাকালাম। ওনাকে দেখে মনেই হচ্ছে না উনি আমার শাশুড়ী। মনে হচ্ছে যেনো ওনার ছোট বোন। এতোকিছু না ভেবে সালাম দিলাম। তিনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে সালামের উত্তর দিলেন। হঠাৎ পাশ থেকে এক মেয়ে বলে উঠে,”মাহশাআল্লাহ ভাবি তো খুব কিউট তাইনা আম্মা?”

আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম। দেখে মনে হচ্ছে ১৮ বছর বয়সী তবুও যথেষ্ট সুন্দর। আচ্ছা এরা কোথা থেকে এতো রূপ নিয়ে উদয় হলো বুঝলাম না। এতোটা নম্র ভদ্র পরিবারও হয় তার উপর তাদের যা সুন্দর্য! আরও বেশ কিছুক্ষণ তাদের সাথে কথা বললাম। মনটা যেনো ফ্রেশ হয়ে গেলো। তারা সবাই-ই বেশ ফ্রি মাইন্ডেড। কিন্তু তাদের ছেলে এমন বজ্জাত টাইপের কেন হলো সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর তারা ফুপিকে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তখনই ফুপি আমার পাশে বসে বলে,”দেখেছিস আয়াত তারা কতোটা ভালো। আমার নেয়া ডিসিশন ভুল হয়নি তুই সত্যিই সুখী হবি।”

বলেই আমায় জড়িয়ে ধরলো। আমি চোখ বন্ধ করে শুধু ভাবলাম,”পরিবার ভালো হয়ে কি হবে ফুপি একজনকে যে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি তাকে কি করে মুছে ফেলবো?”

কিছুক্ষণ পর ফুপি আমাকে নিয়ে বাইরে আসলেন। একটা রুমে নিয়ে পর্দার এপাশে বসালো আর অপরপাশে হয়তো ছেলেরা। তবে পর্দাটা কিছুটা হালকা দেখে অপর পাশের কিছু কিছু ঝাপসা বোঝা যাচ্ছে। আমি ওদিকে না তাকিয়ে এক মনে নিচে দিকে তাকিয়ে আছি। আমার পাশে দাদিম্মি আর ফুপি আরও কিছু মেয়েরাও আছে। এতোদিনে দাদিম্মির সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে আমার।আচ্ছা একটা মিরাক্কেল হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? আযানের জায়গায় সে থাকলে কি হতো মাবুদ? হঠাৎ পেছন থেকে এক মেয়ে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,”আপু তোর বর টা কিন্তু সেই আমার তো তাকে বেশ পছন্দ হয়েছে ইশশশশ একটা ছেলে কি সত্যিই এতোটা সুন্দর হতে পারে? একটা রাজপুত্রই তো কপালে জুটিয়ে ফেলেছিস।”

আমার রাগ চরম মাত্রায় উঠে গেলো। কেমন লুচি মেয়েরে বাবা অন্যের জামাইর দিকে নজর দেয়। উফফফ এদের নিয়ে পারিনা। এখন তো আমার মন চাচ্ছে আযান কে বরকা নিকাব পড়িয়ে রাখি। হে আল্লাহ আমি এসব কি ভাবছি ছি!

ফুপি কথাগুলো শুনতে পেয়ে মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে বলে,”আমাদের আয়াতও যেমন রাজকন্যা তেমনই সে রাজপুত্র পেয়েছে সোজা হিসেব টা বুঝতে পারোনি?”

ফুপির কথায় আমার কেমন যেনো লজ্জা লজ্জা লাগছে কিন্তু কেন ঠাহর হচ্ছে না। অবশেষে সব ইসলামি রীতি মেনে আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো৷ তবে ‘কবুল’ বলার সময় অনেক কান্না পাচ্ছিলো। এখন আর কান্না আটকাতে পারলাম না ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। ফুপি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,”দেখো পাগলি মেয়ের কান্ড এভাবে কাঁদছিস কেন? মেয়েদের একদিন যে যেতেই হয় মা এভাবে কাঁদিস না। আরে পাগলি আমরা তো পালিয়ে যাচ্ছি না আমরা তো তোর পাশেই আছি নাকি।”

দাদিম্মি আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বলে,”কাঁদিস না আয়ু এভাবে কাঁদা ঠিক না।”

সকলে ভাবছে তাদের থেকে বিচ্ছেদ হওয়ার জন্য কাঁদছি। আদৌ কি তাই?

শেষে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসলাম। আযান আগেই বসে ছিলো। গাড়িতে বসতেই গাড়ি অজানা পথে রওনা হলো। কাচের জানালা দিয়ে যতোদূর পরিবারকে দেখা যায় ততোক্ষণ পর্যন্ত তাকুয়ে রইলাম। হঠাৎ খুব কান্না পাচ্ছে এবং কেঁদেও দিলাম। আযান আমার মাথাটা টেনে নিয়ে তার বুকে রাখলো আর আমার খেয়াল পর্যন্ত নেই। হঠাৎ তার বুকেই ঘুমিয়ে পড়ি কারণ তার বুকে অজানা এক সুখ পাচ্ছিলাম। চোখ খুলে দেখি আমি আযানের বুকে আর গাড়ি থামানো। আমি চট করে মাথা উঠিয়ে ফেলি। আমার আচরণে তিনি রিয়েক্ট করলেন না হয়তো আগে থেকেই জানতেন আমি এমন কিছু করবো।

– ঘুম ভেঙেছে?

তার কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে নম্র সুরে বললাম,”জ্বি আমরা কোথায় আছি?”

– আমাদের বাড়ির সামনে।

– তাহলে আপনি ভেতরে না গিয়ে এখানে বসে ছিলেন কেন? আর আমায় কেন ডাকেননি?

– আপনাকে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি তাই এভাবেই ছিলাম। তবে আমি কিন্তু একদমই বিরক্ত হইনি আমার ভালো লেগেছে।

আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। মানুষ এতোটা দায়িত্ববান আবার বলছে তার ভালো লেগেছে? যে এতোদিন আমায় দুচোখে সহ্যই করতে পারতো না আর আজ তার এতো কেয়ারিং?

– আপনি তো আগে আমাকে সহ্যই করতে পারতেন না এখন বিরক্ত হননি?

– উমম… সেটা অতীত আর অতীতে আপনি আমার কেউ ছিলেন না কিন্তু বর্তমানে আপনি আমার বউ। আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ তো আপনি।

আমি মুগ্ধ হলেও কিছুটা লজ্জা পেলাম। উনি আমাকে লজ্জা পেতে দেখে মুচকি হেসে বললেন,”আর লজ্জা পেতে হবে না চলুন বাড়িতে সকলে অপেক্ষা করছে।”

আমি মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে বের হলাম সাথে উনিও। বাড়িটা দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। এতো বড় বাড়ি!! তাও তিনি কোন দুঃখে আমাদের বাড়িতে ভাড়াতে ছিলো? অদ্ভুত ব্যাপার তো। কেউ আমার হাত ধরাতে ধ্যান ভাঙে। আমি একপ্রকার শিউরে উঠলাম। এই ছেলের হাত বরফের মতো ঠান্ডা কেন আল্লাহ গো আমার হাত যেনো ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,”হাত ধরলেন কেন?”

তিনি কোনরকম উত্তর না দিয়ে আমার হাত ধরে বাড়িতে নিয়ে গেলেন।

হাজারো ফুলের মাঝে চুপচাপ বসে আছি। চারপাশে মোমবাতির নিভু নিভু আলো। এতেই যেনো ঘরটা সুন্দর ভাবে আলোকিত হয়ে আছে। কিছুক্ষণের মাঝেই আযান ঘরে প্রবেশ করলো। আমি ফুপির কথামতো তাকে সালাম করতে গেলেই তিনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,”একজনের সামনেই মাথানত করবেন আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা। ফের যেনো না দেখি আমার পায়ে সালাম করতে এসেছেন। মুখে সালাম দিন এভাবে দেয়া লাগবে না।”

তার কথামতো মুখে সালাম দিলাম তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বলেন,”এইসব পালটে সাধারণ জামা পড়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসুন একসাথে নামাজ পড়বো।”

আমি তার কথামতো একটা মুচকি হাসি দিয়ে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম। চেঞ্জ করে ওযু করে রুমে আসলাম। এসে দেখি আযান ততোক্ষণে শেওরানি বদলে পাঞ্জাবি পড়েছেন। আমি আসতেই একসাথে নামাজে দাড়ালাম এবং নামাজ শেষও করলাম। শেষ করতেই আমি বিছানায় গিয়ে বসলাম এবং আমার থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসলো।

– আপনার হাত টা এগিয়ে দিবেন?

আমি কোনোরকম কথা না বলে হাত টা এগিয়ে দিলাম। তিনি পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করে একটা রিং আঙুলে পড়িয়ে দিলো। রিংটা মন কারার মতো এত্তো সুন্দর রিংয়ের মাঝে থাকা স্টোন টা। আমি অবাক হিয়ে তাকিয়ে আছি। তিনি বললেন,”এইটা খুবই মূল্যবার হিরা যা আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি। এটা শুধুই তোমার জন্য। জানিনা তোমার কতোটা দায়িত্ব নিতে করবো তবে কথা দিচ্ছি জীবনের শেষ নিশ্বাস অবদি পাশে থাকবো ইন শা আল্লাহ।”

সেদিন থেকে আমার বেশ ভালোই হচ্ছে আমি অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি সকলের সাথে এমন কি আযানের সাথেও। তিনি সবসময় আমার পাশে থাকেন, সঠিক পরামর্শ দেন, আমায় বোঝার চেষ্টা করেন। সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবতী যে এমন একজন স্বামী পেয়েছি সত্যিই আমি অনেক আনন্দিত।

একদিন রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে কেমন শব্দ শুনলাম আর সাথে পিছে তাকালাম। একটা বড় ধারালো নখ আর একজন কুৎসিত অবয়ক যেটা আমাকে তার ধারালো বিষাক্ত নখ দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করছিলো। আমি ভয়ে সেটার দিকে তাকালাম এতোটাই ভয় পেয়ে আছি যেনো কথা বলাই ভুলে গেছি। তার চেয়েও বেশি ভয় পেলাম এটা দেখে যে আযান সেই অবয়কটা হাত ধরে আছে। উনি সেটাকে না আটকালে আজ আমার মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো। কিন্তু তিনি সাধারণ মানুষ হয়ে কি করে ওইটার হাত ধরলো? আযানের চোখ দুটো ভয়ংকর লাল হয়ে আছে যেনো তার সেই চোখ দু’টো দিয়েই সবকিছু তচনচ করে দিবে। আযান হুংকার ছেড়ে বলে,”তোর সাহস কি করে আমার বউকে মারতে আসার।”

বলতেই আযানের হাত থেকে বিদ্যুৎ এর মতো কিছু বেরোলো আর সেটা অবয়কটার পুরো গায়ে ছড়িয়ে পড়ে। অবয়কটা ছটফট করতে করতে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি সবটা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে সেখানেই সেন্সলেস হয়ে গেলাম।

———————————

চলবে!!!

(আগামী পর্বে রহস্য ফাস হবে এবং এই গল্পটির সমাপ্তি ঘটবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here