অনুভূতিটা_অদ্ভুত “শেষাংশ”

0
2512

অনুভূতিটা_অদ্ভুত “শেষাংশ”
#লাবিবা_ওয়াহিদ

——————————–

যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজের পাশে আযানকে দেখি। সাথে সাথে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি আর চারদিকটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখি আমাদের ঘরেই আছি। আমি কাঁপা কাঁপা গলা বলি,”আপনি কে আযান আপনার কি পরিচয়?”

আযান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”বলবো আজ সব বলবো তোমায়।”

তারপর আযান কিছুক্ষণ চুপ থাকে এবং বলা শুরু করে,”আমি একজন জ্বীন যাকে তুমি এতোদিন ভালোবেসে এসেছো।”

আমি তার দিকে অবাক চোখে তাকালাম। আযান আবার বলা শুরু করে,”তুমি যখন ১৭বছর বয়সী ছিলে তখনই আমি তোমায় প্রথম দেখি এবং তোমায় ভালোবেসে ফেলি। এই কথা আমার নিজ জাতি জেনে যায় এবং আমাকে তাদের রাজ্য থেকে বরখাস্ত করে এবং আমাকে অভিশাপ দেয় আমি এক পিপড়ার ন্যয় জীবনযাপন করবো। বিষয়টা আমার জন্য কঠিন হলেও আমি আল্লাহর উপর ভরসা রাখি। পিপড়া হওয়ার পরেও মাঝে মধ্যে আমি আমার রূপ ফিরে পেতাম আবার ফজরের আযানের সাথে সাথে আবার পিপড়া হয়ে যেতাম। তুমি যখন ২০ বছরে পা রাখলে তখন আমি সেই পিপড়া হয়েই তোমার আশেপাশে থাকার চেষ্টা করতাম। একদিন তোমার বারান্দায় ছিলাম হঠাৎই আমি আমার রূপ পাই আর সেদিনের কথা মনে আছে তুমি পর্দার আড়ালে কোনো ছায়া দেখেছিলে? ওইটা আর কেউ না আমি ছিলাম। এরপরের দিন তুমি যখন হাটছিলে তখন আমিও তোমার পাশে হাটছিলাম হঠাৎই তুমি ভুল করে আমায় পাড়া দিয়ে ফেলো। আমি তো ভেবে নিয়েছিলাম এই বুঝি আমার রক্ষা আর হলো না। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তোমার সেই পাড়ার কারণেই আমি একদম আগের মতো হয়ে যাই কিন্তু কিভাবে আমি জানিনা। পরে জ্বীনরাজ্যে মায়ের গিয়ে সবটা জানতে চাই। সেদিন মা আমায় স-শরীরে দেখে অনেক কেঁদেছিলো এবং তোমার কৃজ্ঞগতা জ্ঞাপন করছিলো। আমি মাকে বলি যেনো আমাদের বিয়ে দেয় তিনি আমার কথায় রাজি হলেও আমার সম্মানীয় হুজুর রাজি হননি। তিনি বলেছেন যদি তুমি আমায় না দেখে না চিনে ভালোবাসো তাহলেই নাকি আমাদের মিলন সম্ভব। আমিও তার কথায় রাজি হই কারণ আমার তোমার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ছিলো। সেইদিন থেকেই তোমার ধারেকাছে থাকতাম তবে সেই জঙ্গলে তোমার উপর নজর লাগায় এক ইফরিত জ্বীন এবং তার সাঙ্গপাঙ্গের। সেদিন জঙ্গল থেকে খুব কষ্টে তোমায় সেভ করি। আর তোমার দাদীম্মির কাছে তোমার রূপে পাঠাই আমার বোনকে। এরপর থেকে নানাভাবে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে তারা আমি-ই তোমায় তাদের হাত থেকে রক্ষা করি। অবস্থা গুরুতর দেখে আমি তোমার ফুপিকে পাঠাই তোমার…..

-(বলতে না দিয়ে) আপনি ফুপিকে পাঠান মানে?(ভ্রু কুচকে)

– তুমি জানলে অবাক হবে যে তোমার ফুপিও একজন জ্বীন কে বিয়ে করেছেন আর সেই জ্বীন আর কেউ নয় আমারই সুসম্পর্কের আত্নীয়! তোমার ফুপি আমার ব্যাপারে সবটা জানতো তাই তাকে তোমার কাছে পাঠাই। অবস্থা বেশি খারাও হওয়ার কারণে আমি মানুষরূপে তোমার বাসায় দোতলায় থাকা শুরু করি কিন্তু সেটা আমার পরিকল্পনার মাঝে ছিলো না একমাত্র সেই সর্দারের জন্য-ই। শেষে তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমি আবার যাই অদৃশ্য হয়ে কিন্তু কখনো ভাবিনি তুমি এতোটা আমায় ভালোবাসবে। সেদিনই আমি বিয়ের সব কাজ শেষ করি আব্বা আম্মা বোনকে খবর দেই। তারাও আসেন এবং তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেন। আর তাড়াতাড়ি করার কারণ তোমাকে যতো দ্রুত বিয়ে করতে পারতাম ততোই তোমার বিপদ কেটে যেতো। তুমি যখন অবিবাহিত ছিলে তখন তারা তোমায় ভোগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু যখন বিবাহিত হলে তখন থেকে তাদের আর তোমায় কাজে লাগলো না তাই তারা এখন তোমায় মারতে উঠেপরে লেগেছে। তখন যদি ঠিক সময়ে না যেতাম তাহলে হয়তো তোমায় চিরজীবনের মতো হারিয়ে ফেলতাম।

শেষে দিয়ে আযানের গলা ভেঙ্গে আসছিলো এবং সে অলরেডি কেঁদেও দিয়েছে। আমি ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি একজন ছেলে জ্বীন কতোটা ভালোবাসলে আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে এভাবে চোখের জল ফেলে? সত্যি-ই আজ নিজেকে অনেকটা ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। আদৌ কি এতোটা সুখ আমার কপালে লিখা ছিলো? আমি আযানের চোখ মুখ তার বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে বললাম,”আপনার এই বুকেই নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পাই জানেন? আমার সবচেয়ে শান্তির স্থানটা আপনি আমায় দিয়েছেন কি করে ভাবলেন এতো বাধা বিপত্তির পর বিচ্ছেদ হবে? আল্লাহ যখন আমাদের রক্ষা করে এসেছেন ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও করবেন এই নিয়ে আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে তার উপর। আর আপনি আমার জীবন রঙিনময় করেছেন নতুনভাবে বাচতে শিখেছেন আমি নিশ্চয়ই এতোটা স্বার্থপর নই যে আপনার আসল পরিচয় জেনে আপনাকে দূরে ঠেলে দিবো। হ্যাঁ কষ্ট লেগেছে তবে আপনার কষ্টের কাছে যে আমার এই ক্ষুদ্র সময়ের কষ্টকে হার মানিয়েছে। ভালোবাসি আপনাকে আযান অনেকটা ভালোবাসি! আপনি যে আমার অস্তিত্বে মিশে গেছেন চাইলেও আপনার থেকে দূরে যেতে পারবো না। রাখবেন তো আগলে আপনার বুকে সারাজীবন?”

আযান আমায় ভিষণ শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার এই বুকের গহীনে লুকিয়ে রাখবো সবসময়! আমিও তোমায় অনেকটা ভালোবাসি আয়াত অনেকটা!”
দুজনে ডুব দিলো ভালোবাসার গভীরতায় যেখান থেকে তারা চায়না ফিরে আসতে। যুগ যুগ তাদের ভালোবাসা বেচে থাকুক।

———————————-

“সমাপ্ত”

(অবশেষে শেষ করলাম আলহামদুলিল্লাহ। পুরো গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন ধন্যবাদ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here