#অনুভূতিহীন,পর্ব ১০,১১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১১
কথায় আছে সুখের সময় গুলো খুব তারাতারি চলে যায়। ঠিক আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এই কয়টা দিন যেনো চোখের পলকেই কেটে গেলো।
আজকের পর আবার সব পূর্বের মতো হয়ে যাবে। শূধূ পরিচয় টা থাকবে ভিন্ন।
হালকা বাতাস বইছে। হাত দুটি মেলে দিয়ে তাকে নিয়ে উড়ে কোথাও হাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। যখানে থাকবো শুধু আমি আর সে। ওটা হবে আমাদের ভিন্ন এক পৃথিবী।
হুট করেই সামনে একটা বাইক এসে থামলো। হুট করে এমন হওয়ায় চমকে উঠলাম আমি। রিদ ভাইয়া গেলো ঝালমুড়ি আনতে।
আমি শাড়ির আচল গুছিয়ে রাগি দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকালাম। এভাবে হুট করে কেও এসে সামনে ব্রেক করে? আরেকটু হলেই আমার পরান পাখি টা উড়াল দিচ্ছিলো।
– এভাবে শাড়ি পড়া পরীর মতো একটা রমনি একা রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে থাকা টা কি ঠিক ম্যাডাম?
ছেলেটার কথায় আমি তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম। ছোট্ট করে বললাম,
– সরি।
সে আবার বললো,
– আকাশে প্রায় মেঘ জমে আছে। হয়তো বৃষ্টি আসবে। তো আপনি এভাবে একা দাড়িয়ে আছেন কেন, কোথাও যাবেন?
এর মাঝেই ঝাল মুড়ি হাতে রিদ ভাইয়া এসে দাড়ালো। আর ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো,
– আরে সাগর তুমি?
আমি একটু অবাক হলাম। রাস্তায় যাকে দেখে সেই তার পরিচিত নাকি আজব। ছেলেটাও আমার দিকে ইশারা করে হেসে বললো,
– ভাবি নাকি ভাইয়া?
– আরে না, আমার কাজিন।
– ভাইয়া আপনার কাজিন তো দেখছি একধম পরীর মতো। যেন একধম নীল পরী।
– ধন্যবাদ।
– নাম কি ভাইয়া?
উনি আমার হাত ধরে সেখান থেকে চলে যেতে প্রস্তুত হলো। আর ছেলেটাকে বললো,
– আচ্ছা তোমার সাথে আমি পরে কথা বলছি, এখন আসি।
বলেই আমাকে নিয়ে একটু দুড়ে চলে গেলো। আমি তার দিকে চেয়ে অভিমানি চোখে বললাম,
– বৌ বলে পরিচয় দিলে কি মান সম্মান কমে যেতো?
সে কিছু বললো না। তার নিরবতায় রাগ হলো আমার। তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আমি বাসায় যাবো।
– আচ্ছা চলো,
আমি আবার থেমে বললাম,
– চলো মানে, আপনি না বললেন আজ সারা বিকেল আমায় সময় দিবেন?
– তুমিই তো বলছো বাসায় চলে যাবে।
আমি কপালে হাত দিয়ে বললাম,
– কোনটা বলা আর কোনটা অভিমান তা বুঝেন না? হায়রে কপাল আমার।
তিনি হাসলেন, আর বললো,
– হুম বুঝছি আমি। শুনো আমাদের ফ্যামিলির একটা নাম ডাক আছে। তো ওই ফ্যামিলির ছেলে হয়ে যদি আমি সবাইকে বলি আমি বিয়ে করে ফেলেছি তাও ফ্যামিলি ছারা কাউকে না জানিয়ে। তাহলে সম্মান টা কোথায় দাড়াবে বলো। যখন তোমাকে একেবারে এখানে নিয়ে আসবো, তখন সবাই জানবে। এখন না, বুঝছো?
আমি একটু অভিমানি ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম বুঝছি। এবার আমার অভিমান ভা*ঙাতে হবে আপনার।
তিনি আমার দিকে চেয়ে বললো,
– ন্যাকামি তো ভালোই জানো, এখন চলো কোথাও বসি, নাহলে এক্ষুনি বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিবে।
-দিলে দিবে, আমি এতো কিছু বুঝিনা। প্রয়োজনে বৃষ্টিতে ভিজে কাক হয়ে যাবো তবুও এখান থেকে সরবো না।
– না গেলে তুমি ভিজো আমি গেলাম। কালকে যাওয়ার মুহুর্তে জ্বর উঠলে তখন বুঝবে।
– উঠলে তো আমি আরো হ্যাপি। জ্বরের বায়না ধরে আপনার সাথে আরো দুই দিন থাকতে পারবো।
আমার কথায় উনি কপালে হাত দিয়ে ‘চ’ সূচক একটা শব্দ করলেন। আর আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আশে পাশে খুজে দেখো তো একটা বাশ বা লাঠি পাও কি না।
আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– কেন!
– তোমার অভিমান গুলো ভা*ঙবো তাই।
আমার হা করা গাল বন্ধ করে এবার বললাম,
– থাক, আমার অভিমান ভা*ঙা হয়ে গেছে, আপনাকে আর এতো কষ্ট করতে হবে না।
মুহুর্তেই বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। আমি হাত দুটু মেলে দিয়ে উপরের দিকে তাকালাম। বৃষ্টি ফোটা কয়েকটা আমার মুখের উপর ছিটকে পারলো।
তিনি আমাকে তাড়া দিচ্ছে তারাতারি কোথায় গিয়ে বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য। কিন্তু আমি জায়গা থেকেও নড়ছিনা। প্রায় কেছুটা ভিজে গেলাম। তখনই সে এসে আমায় কোলে তুলে হাটা শুরু করলো। সামনেই একটা স্কুল। আর রাস্তার পাশে একটা ছাউনি। ওখানে নিয়ে গিয়ে আমাকে ধপাশ করে নামিয়ে দিলো সে। আর বললো,
– তোমাকে দেখতে শুটকি মনে হলেও ওজনে একটা জল জেন্ত বোয়াল।
আমি আমি ভ্রু-কুচকে তাকে বললাম,
– কেলে নিয়ে আবার আপনি কি আমায় অপমান করলেন?
কিন্তু সে আর উত্তর দিলো না। পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার হাত ও মুখ মুছে দিতে লাগলো। আমি তার দিকে চেয়ে আছি। অপমান করলেও লোকটা কিন্তু খুব কেয়ারিং।
আকাশে গুরুম গুরুম শব্দ হলো। আমি আচমকাই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। যদিও আমি এসব গুরুম আওয়াজে ভয় পাওয়ার মেয়ে না, তবুও আজ ভয় পাওয়া অভিনয় করতেও ভালো লাগছে আমার।
,
,
সবাই মিলে রাতের খাবার শেষ করে রুমে আসলাম। রিদ ভাইয়া কি জরুরি ফোন এর কথা বলে বাইরে চলে গেলো। এখন প্রায় রাত ১২ টা বাজে। এখনো আসার খবর নেই। আমার বিষণ্ন মন আরো বিষণ্ন হয়ে গেলো। আজকে শেষ দিন টা তার সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। তার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চেয়েছিলাম। আজকের পর তো আর চাইলেও পারবো না। তাকে এভাবে জ্বালাবেও না কেও।
আজ রাতে বোধ হয় ঘুম হবে না আমার। বেলকনিতে বসে আছি চুপচাপ।
,
,
হসিপালে একটা মানুষ রিদকে ধরে অঝরে কাঁদছে। বয়স তার ৩০ কি ৩২ এর মতো হবে। জীবনের ৩০ টা বছর কাটিয়ে দিলো নিজের লাইফ টা গোছাতে। যেন বিয়ের পর সংসারে যেন টান না পরে। স্ত্রীকে যেন ন কষ্ট চোখে না দেখতে হয়। খুব সুখি ছোট্ট একটা সংসার হবে তাদের।
বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেছিলো। তাদের এই দুই বছরের সংসার জীবন কতটা সুখের ছিলো তারা নিজেরাই তার শাক্ষি।
আজ সকালে স্ত্রীকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে। অন্তঃসত্ত্বা ছিলো তার স্ত্রী। সারাটা দিন স্ত্রীর পাশে বসে কাটিয়ে দিলো সে। আর কিছুক্ষন আগেই তার সব স্বপ্ন হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো ছোয়া মাত্রই হারিয়ে গেলো। তার ছেলে বাচলেও স্ত্রীকে বাচাতে পারেনি। তাই তো এতো হাউমাউ করে কান্না।
রিদও চুপচাপ দাড়িয়ে। বার বার চোখের সামনে আরশির মুখটা ভেষে উঠছে। কখনো এ পরিস্থিতিতে সে করলে হয়তো মরেই যাবে।
হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সে। রাত তখন ৩ টা পেরিয়ে গেলো। আরশিকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। হয়তো কোনো এক অজানা ভয়, নয়তো মাথার মাঝে ঘুরতে থাকা একটু পাগলামি।
ঘরে এসে রুমে ঢুকতেই দেখে আরশি নেই। বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। রিদ একটু এগিয়ে এসে দেখে আরশি দাড়িয়ে। হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো। তারপর আরশির পাশে গিয়ে দাড়ালো।
– কি ব্যাপার এতো রাত হলো এখনো ঘুমাও নি কেন? রাত জাগা শরিরের জন্য ক্ষতিকর যানো না?
রিদ ভাইয়ার কথায় আমি ঘুরে তার দিকে তাকালাম। সারা রাত পার করে এখন শেষ রাতে আসছে হুকুম দিতে। কেন এসেছে এখন?
আমি তার দিয়ে চেয়ে বললাম,
– কেন এসেছেন এখন? রাত তো শেষই হয়ে গেলো। আর কিছুক্ষন বাইরে থাকতেন। এর পর আমি চলে গেলে তারপর আাসতেন। কেন এসেছেন এখন? আমার কাউকে দরকার নেই। আমি চলে গেলে আর কেও জ্বালাবে না আপনাকে। নিজের মতো থাকতে পারবেন।
কথা গুলো খুব অভিমান নিয়ে বললাম। ইমোশন ধরে রাখতে পারলাম না, চোখ দুটু ভিজে উঠেছে এখনই। ভেবেছিলাম সে আমার চোখ দুটু মুছে দিয়ে বলবে, সরি।
কিন্তু সে তা করলো না। হুট করেই খুব শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে এক্ষুনি আমার দম বেড়িয়ে যাবে।
আজ প্রথম ও আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ হয়ে আছে। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। সব অভিমান দুরে ঠেলে দিয়ে আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে এবার কেঁদে দিলাম।
– আমি আপনাকে ছারা থাকতে পারবো না,,,,,
To be continue……
#অনুভূতিহীন (পর্ব ১১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
সকাল ৮ টার গাড়িতে রওনা দিবো আমরা। গতকাল থেকেই মনটা বিষণ্ন আমার। আজ যেন মনাকাশ জুড়ে শ্রাবনের কালো মেঘ ভেষে উঠেছে।
বেলকনিতে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে রিদ ভাই। আর তার কাধে মাথা রেখে চুপটি করে বসে আছি আমি। চার দিকে আজানের ধ্বনি ভেষে উঠলো। আকাশ টাও ধিরে ধিরে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।
পাশে বসে থাকা রিদ ভাই ঘুমিয়ে আছে। আর আমি তার বাম হাত টা আকড়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে আছি। আজ সারা রাত এক মুহুর্তের জন্যও ঘুম হয়নি আমার। মনে হচ্ছিলো এই ঘুমিয়ে গেলেই সকাল হয়ে যাবে আর বাবা মা আমায় নিয়ে চলে যাবে। আর থাকা হবে না তার পাশে।
নিজের মাঝে একটা প্রশ্ন জাগে বার বার। আমি মেয়েটা তো এতোটাও আবেগি ছিলাম না। নিজের মতো থাকতাম সব সময়। এতো ছেলে পেছন ঘুরেছে, লাভ লেটার দিয়েছে, কিন্তু কারো প্রতি’ই কখনো বিশেষ কোনো অনুভূতি কাজ করেনি আমার।
তাহলে এই ১০-১২ দিনে আমার মাঝে কি হয়ে গেলো, যে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে?
আমার পাশে বসে থাকা মানুষটার মাঝে তো বিশেষ কোনো কারণ ও নেই। অন্য আট দশটা মানুষের মতোই তো মানুষ। তবুও কেন আমার কাছে মনে হয় সে আমার কাছে সবার চেয়ে আলাদা? কেন তাকে আমার এতো ভালো লাগে? কেন তাকে আমি এতো ভালোবাসি? এই কারণ টা খুজতে খুজতে হয়তো আমার বাকি জীবনটাই কেটে যাবে।
ভালোবাসা হয়তো এমনই হয়। কেও পরে রুপের মায়ায়, কেও পরে হাসির মায়ায়। কিন্তু এই মায়া কতোদিন থাকে? আজ রুপে এসিড পরুক কাল ভালোবাসা শেষ। আজ তার হাসির সৌন্দর্যটা চলে যাক কাল ভালোবাসা শেষ। সৌন্দর্যের মায়ায় পরে ভালোবাসা গুলো অনেক সময় সৌন্দর্যের সাথে সাথেই ক্ষয় হতে শুরু করে।
তবে কিছু ভালোবাসা এমনও হয় যে, আমি মানুষটাকে ভালোবাসি। তবে কেন বাসি তা আমি জানিনা। সারাক্ষন শুধু কারণ খুজে যাই। আর এই কারণ খুজতে খুজতে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি। তারপর ওই কারণ খুজতে খুজতে মানুষটার সাথে সারা জীবন ফুরিয়ে যায়, তবে ভালোবাসা থেকে যায় আগের মতোই। বৃদ্ধ বয়সে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি মানুষটাকে কেন এতো ভালোবেসেছো? তার মাঝে এমন বিশেষ কিছু কি ছিলো?
উত্তর টা তখন পাওয়া যায়, মানুষ টার মাঝে বিশেষ কিছু না থাকলেও ব্যক্তিত্বটা ভালো ছিলো। বিশেষ কিছু না থাকলেও মানুষ টা বড্ড ভালো ছিলো। হয়তো এটাই তার প্রতি ভালোবাসার কারণ।
তেমনই আমার প্রিয় মানুষটাকে আমি কারণে নয়, অকারনেই ভালোবাসবো।
,
,
সকালে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। দু’চোখ লাল হয়ে আছে আমার। রাতে ঘুম না হওয়ায় শরির টাও ক্লান্ত দেখাচ্ছে খুব। ওয়াশ রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম শরির টা একটু হালকা হতে।
তখন ৭ টা বাজে। কাপর গোছাচ্ছি আমি। বাবা-মা, মামা-মামি তারা নাস্তা শেষে এখন গল্পে মেতে উঠলো।
কাপর গোছালো শেষ হলেই অনুভব করি কেও একজন এসে আমার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। তার স্পর্শে বার বার সারা শরির কেঁপে উঠে আমার।
আমিও চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। কিছুক্ষন পর আবার কি মনে করে আমার ছেরে একটু দুরে গিয়ে দাড়ালো। আমি তার দিকে ঘুরে তাকালাম। তার কাছাকাছি গিয়ে বললাম,
– আমায় মিস করবেন?
সে কিছু বললো না চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। আমিও বুঝে নিলাম, কারণ কখনো কখনো নিরবতাই সম্মতির লক্ষন।
আমি আবার বললাম,
– আমিও খুব মিস করবো আপনাকে। কষ্টও হবে আমার। চলেন না আমার সাথে ওখানে গিয়ে কয়েকদিন থেকে আসবেন।
আরশি আর রিদের মাঝে এই একটাই পার্থক্য। রিদ ভালোবাসলেও নিজের আবেগ কন্ট্রোল করতে পারে। আর আরশি একটুতেই নিজের সব আবেগ এলোমেলো করে ফেলে। খুবই আবেগি মেয়েটা।
– আজ থেকে আপনাকে আর কেও জ্বালাবে না। কেও বিরক্ত করবে না। খুব স্বাধিন ভাবে আগের মতো করে থাকতে পারবেন।
আমার কথা শুনে সে কিছু বললো না, চুপচাপ রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আমি তার হাত ধরে নিলাম। তার দিকে চেয়ে বললাম,
– গত কালকেরে মতো আমার একটু জড়িয়ে ধরবেন প্লিজ।
সে এখনো কিছু বললো না চুপচাপ এসে আমার জড়িয়ে ধরলো। কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
– নিজের যত্ন নিও। আর হ্যা আবেগ গুলো একটু কন্ট্রোলে রাখতে শিখো। নাহলে এতো আবেগ তোমাকে শুধু ডিপ্রশনের দিকেই নিয়ে যাবে। পরিক্ষা টা ভালোভাবে দিও। এর পর একেবারে নিয়ে আসবো সারা জীবনের জন্য।
আর কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সে। আমি তার দিকে চেয়ে আছি। ইচ্ছে করছে জীবন টা এখানেই থামিয়ে দিতে।
,
,
আমার বাবা মায়ের কোনো পার্সনাল গাড়ি নেই। দুর রাস্তা বাসেই চলাচল করে তারা। তাই আগেই বাসের টিকেট কেটে রেখেছে। মামা বলেছিলো ড্রাইভারকে বলে বাড়ি অব্দি পৌছে দিতে। বাবা নিলো না। আর টিকেট আগেই কেটে রেখে এসেছে।
বাসা থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম আমরা। রিদ ভাই গাড়ি করে বাসস্টপ পর্যন্ত নিয়ে গেলো।
বাবা রিদ ভাইয়ের সাথে কি যেন বলছে। আমি মায়ের সাথে দাড়িয়ে ছিলাম। বোরকা, হিজাব, হাতে মুজা পরা। শুধু চোখ দুটু দেখা যাচ্ছিলো। আগে হাতে মুজা পরতাম না। গরমে বিরক্ত লাগতো আমার। কিন্তু সকালে রিদ ভাই আমার হাতে দিয়ে বললো, আমার হাতও যেন কেও না দেখে। নিজেকে হেফাজত রাখতে।
আমি শুরু থেকেই নিজের আবেগের কন্ট্রোট হারিয়ে ফেলেছি। কার কাছে আবেগ লুকিয়ে রাখবো? এই মানুষটাই তো এখন আমার সব।
আর কিছু ভাবতে পারছি না, তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। যে যা ভাববে ভাবুক। কষ্ট টা তো আর কেও বুঝবে না।
বাবা মা গাড়িতে উঠে গেলো। তার থেকে বিদায় নিয়ে আমিও উঠে গেলাম গাড়িতে। একটু পরই গাড়ি ছেড়ে দিলো। জানালার পাশে সিট আমার। জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
তিনি একটু মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে আমায় বিদায় জানালো। সোজা রাস্তা, গাড়ি কিছুটা দুরে চলে এসেছে। আমি জানালা দিয়ে মাথা বের করে তাকিয়ে আছি, যতক্ষন না তাকে দেখা যাচ্ছে। পাশ থেকে মা বলল,
– এবার মাথাটা ভিতরে নিয়ে আয়, না হলে অপর পাশ থেকে গাড়ি এসে মেরে দিবে।
আমি মাথা ভিতরে এনে বসে রইলাম চুপচাপ। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। এই কয়দিনে খুব আপন হয়ে গেছে এই বাড়ির প্রতিটা মানুষ।
,
,
বাস থেকে নেমে একটা সি’এন জি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চললাম। গ্রামিন রাস্তা, দুই পাশে সারি সারি গাছ। দুই পাশেই সবুজ ধান ক্ষেত।
মেইন রোড, তীব্র গতিতে গাড়ি চলছে, মনে হচ্ছে বাতাস বইছে খুব জোড়ে। আজ দশ-বারো দিন পর নিজ এলাকায় ফিরে এসেছি।
একটু দুড়েই একটা ছোট খাটো মার্কেট। ওই মার্কেট পার হলেই কলেজ। আর কলেজের একটু পাশেই তার বাড়ি।
কিছুটা আসতেই দেখি কিছু মানুষের ভির। রাস্তার পাশে অনেক গুলো মানুষ ভির করে চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলছে। তার একটু দুরেই বাইকের উপর বসে কার সাথে ফোনে কথা বলছে আসিফ। তার সাথে আরো অনেক গুলো ছেলে। অনেক গুলো বাইক দিয়ে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে ছেলেগুলো। আর একটু দুরেই চেয়ারম্যান চাচা কথা বলছে অন্যান্য মানুষদের সাথে।
আসিফ কে দেখেই আমার বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করলো। আমি সি’এন জি এর মাঝে মাথাটা লুকিয়ে নিজেকে একটু আড়াল করার চেষ্টা করলাম। সারা শরির কাপছে আমার। হয়তো আমার এমন ভয়ের কারণ টা বাবা বুঝতে পেরেছে। আমার একটা হাত ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আশ্বাস দিলো কিছু হবে না। বাবা আমার হাত টা ধরতেই আমি যেন একটু ভরসা পেলাম। তবুও ভয় হচ্ছে খুব।
To be continue….