#অনুভূতিহীন,পর্ব ১২,১৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১২
মাথায় অনেক চিন্তা নিয়ে ঘুমিয়েছি। অনেক রাত করে। রিদ ভাই বলেছিলো রাত না জাগতে। তবুও ঘুম না আসলে আমার দোষ কি?
সকাল হতেই কে যেন দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করতে লাগলো। এই সাত সকালে আবার কে আসলো? মাকে তো বললামই সকাল সকাল না ডাকতে।
বাইরে বাতাস বইছে খুব। মনে হচ্ছে সকাল সকালই বৃষ্টি হবে আজ। একটু শীতল ভাব নিয়ে কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়ে আছি আমি। কে ডাকছে তা দেখারও সময় নেই। কম্বল টা আরো টেনে আরাম করে শুয়ে রইলাম। ওদিকে দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ বেড়েই চললো। মা অথবা বাবা হলে এতোক্ষনে মুখে ডাকতো। এই কোন ননসেন্স কে জানে।
এক রাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজার কাছে গেলাম। দরজা খুলতেই সাবিহা এসে রুমে ঢুকেই একটু জয়ি ভঙ্গি নিয়ে বললো,
– ”’সারপ্রাইজ”’
কিন্তু আমার মাঝে তেমন একটা প্রতিক্রিয়া না দেখে সে বললো,
– কি হলো, আমি এসেছি দেখেও খুশি হস নি?
– এটা বলতেই এই সকাল সকাল এসে ডেকে তুললি?
– বাহ্ জামাইর বাড়ি থেকে এসে এতো পরিবর্তন? আচ্ছা ভালো এখন আর আমাদের চোখে লাগেনা? থাক তুই আমি গেলাম।
আমি একটা হাই তুলে বললাম,
– এতো ঢং না করে রুমে আয়।
সাবিহা আর কিছু না বলে রুমে এসে বসলো। আমি ব্রাশ আর পেষ্ট নিতে নিতে তাকে বললাম,
– এতো সকাল সকাল কাহিনি কি?
– বললাম না সারপ্রাইজ,,,
– আচ্ছা,,,,
– তবে একটা ঝামেলায় পরে গেলাম রে আরু,,,
– কি হলো আবার? সাব্বিরের সাথে ঝগড়া হয়েছে আবার?
– না তা না, বাবা আমার বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে। আর তুই তো জানিস, সাব্বির এখনো ব্যাকার। নিজের পায়ে দাড়াতে পারেনি। তাই সাব্বিরের কথাও বাসায় বলে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।
– কি বলিস, তের তো এখনো পরিক্ষাটাও শেষ হয় নি।
– কি করবো বল, অভাবের সলসার। বাবার কাছে একটু সময় চাইছি তাও দিতে রাজি না। এখন আমি কি করবো?
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম,
– রাজি হয়ে যা।
সে একটু অবাক হয়ে বললো,
– তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমি কিভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করবো? আর তুই তো জানিস ই আমি সাব্বিরকে কতো ভালোবাসি।
আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আমার কথাটা তো আগে শুন।
সাবিহা শান্ত হয়ে বললো,
– আচ্ছা বল।
– তুই তো সিলাইয়ের কাজ করিস তাই না? তো তুই তোর বাবাকে বলবি তুই রাজি আছিস তবে একটা শর্তে।
– কি শর্ত?
– তুই তোর বাবাকে বলবি যে তুই একটা কাঁথা সেলাই করবি। আর এই কাঁথা টা সেলাই শেষ হলেই তোর বিয়ের কথা বার্তা বলতে।
সাবিহা একটু মন খারাপ করে বললো,
– তাতে আর কয়দিনই বা সময় পাবো? অল্প অল্প করে সেলাই করলেও খুব জোড়ে এক মাস।
– না অনেক দিন সময় পাবি। তুই যত দিন চাস ততোদিন সময় পাবি।
সাবিহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– কিভাবে?
– দিনে যেটুকু সেলাই করবি রাতে বসে তা আবার খুলে ফেলবি। এভাবে কম করে হলে কয়েক মাস প্যারা মুক্ত থাকতে পারবি। আর সাব্বির ভাই তো চাকরির জন্য ট্রাই করছে তাতে সেও একটু সময় পেলো। হতে পারে এই দুই এক মাসেই সাব্বির ভাইয়ের চাকরি হয়ে গেলো, আর তোর বাসায় ও প্রস্তাব পাঠিয়ে দিলো।
আমার কথা শেষ হতেই হুট করে সাবিহা আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
– এই জন্যই তো বুদ্ধির জন্য সব সময় তোর কাছে আসি।
– আচ্ছা এখন একটু বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
– শুন,
আমি ঘুরে তাকিয়ে বললাম,
– আবার কি?
– গত কয়েকদিন ধরে লক্ষ করছি সূর্য নামের ছেলেটা আমার বাসার সামনে এসে ঘুর ঘুর করে। আমি কোথাও গেলে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকে।
আমি সাবিহার পাশে বসে বললাম,
– কোন সূর্য আসিফের সাথে থাকে যে ওই সূর্য?
– হুম,
আমি একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়ালাম, এই ছেলে গুলো পেয়েছে টা কি? আমাকে ছেড়ে এখন আমার বান্ধবির দিকেও নজর দিচ্ছে?
সাবিহা পেছন থেকে বললো,
– আচ্ছা আমি এখন আসি, তুই রেডি থাকিস কলেজে যাওয়ার সময় রাক দিবো।
আমি সাবিহার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– এখন যাবি না। নাস্তা করে যাবি।
বলেই আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।
,
,
বাড়ির সামনেই কলেজ। রিক্সা দিয়ে গেলে ৫ মিনিটের রাস্তা। আমি আর সাবিহা রওনা দিলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। সাবিহা শুধু বার বার রিদ ভাইর সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। যেতে যেতে নিরামিষের কাহিনি গুলো বলতে শুরু করলাম। বিশেষ করে ওই দিনের ওই রিক্সা থেকে পরে যাওয়ার কাহিনি টা। এদিকে সাবিহা তো হাসতে হাসতে শেষ।
একটু যেতেই চোখ পরলো সামনে থাকা ছেলেটার উপর। আসিফ দাড়িয়ে আছে সামনে। সে হাত দিয়ে রিক্সা টা থামিয়ে আমার কাছে এসে বললো,
– অনেক সাহস দেখিয়েছিস তুই। পরিনাম ফল ভোগ করতে হবে তোকে।
বলেই বাইক নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো সে। আমি একটু অবাক হলাম তার আচরণ দেখে। আগের থেকে অনেক পরিবর্তণ দেখা যাচ্ছে। আগের মতো থাকলে হয়তো এখানেই একটা গন্ডগোল পাকিয়ে দিতো।
,
,
ক্লাস ও প্রাইভেট শেষে বিকেলে বাসায় ফেরার সময় আসিফকে আর দেখলাম না। একটা স্বস্থির নিশ্বাস ছেরে বাসায় চলে এলাম। এই লোকটা সব কিছু ভালো ভাবে মেনে নিলেই বাচি।
সন্ধার সময় পড়তে বসে রিদ ভাইয়াকে ফোন দিলাম। কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো খুব। কিন্তু তা আর হলো না। বেটা এমনিই নিরামিষ, তার উপর আরো ছিলো হসপিটালে। কথা বলার বিপরিতে আরো উল্টো পড়া সম্পর্কে কিছু মোহান মোহান জ্ঞান দিয়ে ফোন রেখে দিলো।
রাতে খেতে বসলে মাকে আজকের কাহিনিটা বললাম। যে আসিফ হয়তো কিছুটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। নাহলে ওই দিন ফোন দিয়ে যেভাবে কথা বললো, সেটা আর আজকের বিষয় টা পুরোপুরিই ভিন্ন। হয়তো অনেক পাল্টে গেছে সে।
মা খেতে খেতে বললো,
– সামনের মাসে চেয়ারম্যান ইলেকশন। আর গত কাল ওসব বিষয়েই ভির জমেছিলো রাস্তায়। এই সময়টায় সবার মনোরঞ্জন করতে হবে। তাই হয়তো বিহেবিয়ার চেঞ্জ হয়েছে। তবে ককুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। ওদের থেকে দুরে থাকাই ভালো।
আমি কিছু না বলে মাথা নাড়ালাম। আর চুপচাপ খেতে লাগলাম।
,
,
তখন গভির রাত। প্রায় ২ টা বাজে। বাইরে বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই কয়দিন প্রচুর গরম পরেছিলো তাই এখন ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে এখন। তবে এতো ভাড়ি বর্ষণ নয়। থেমে থেমে বৃষ্টি।
আমি বিছানায় এক কাত হয়ে শুয়ে আছি। ঘুম আসছে না। রাত হলেই শুধু সুন্দর মুহুর্ত গুলো মনে পরে। গত কাল রাতেও এই কারণে ঘুম হয় নি। ডান কাত থেকে বাম কাত হলাম।
ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি ২ টা ১০ মিনিট। ওয়েল প্যাপারে রিদ ভাইয়ের পিক সেট করা। ফোন আনলক করে কল অপশনে ঢুকে গেলাম। তবে একটা জড়তা কাজ করছে, এতো রাতে ফোন করা কি ঠিক হবে? নাকি তার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে?
হলে হোক, আমার ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে সে শান্তিতে ঘুমাবে? তার ঘুমও হারাম করবো আমি।
আর কিছু না ভেবে ফোন করেই ফেললাম। একবার কল হতেই রিসিভ করলো সে। যাক তাহলে এখনো জেগে আছে। কিন্তু কেন জেগে আছে? সেও কি আমার মতো কারো শুন্যতা অনুভব করছে?
ওপাশ থেকে তার কন্ঠস্বর ভেষে আসলো,
– প্রিয় গ্রাহক আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে, আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে ভয়েস এস’এম’এস পাঠাতে চাইলে তার এগারো ডিজিটের মোবাইল নাম্বারটি ডায়াল করুন। আর অনুগ্রহ করে কিছুক্ষন পর আবার চেষ্টা করুন।
এটুকু বলেই হেসে দিলো সে। এক্টিন টা পুরোপুরি ভাবে করতে পারলো না।
তার এমন ফাজলামিতে আমার কি রাগ করা দরকার নাকি হাসা দরকার ওটাও বুঝে উঠতে পারছি না। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,
– এতো রাত জেগে আছেন কেন?
– এমনি কাজ ছিলো তাই?
– এতো রাতে আপনার আবার কিসের কাজ?
– ছিলো তুমি বুঝবে না।
– বুঝছি, আমাকে মিস করছিলেন তাই না?
– হুম, আমার তো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই। তোমাকে মিস করতে যাবো?
– সত্যিই মিস করেন নি?
– রাতে খেয়েছো?
– আপনি কিন্তু কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছেন।
– কখন?
– যেটা বলছি সেটার উত্তর দেন, আপনি আমার মিস করছিলেন?
– হুম,,,
– কতটুকু?
– একটুও না।
– আপনার থেকে কখনোই সোজা উত্তর পাই না আমি।
– হিহিহি,,,,
– আপনি আসলেই একটা খবিস,,, ফোন রাখলাম আমি, বায়।
To be continue……
#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
সকাল ৮ টা। নাস্তা শেষে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রিদ। রিদের বাবা এখনো অফিসে যায় নি। সোফায় বসে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছে। আজকাল পত্রিকা খুললেই খুন, ধর্ষণ, অপহরনের নিউজ ভেষে উঠে।
বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হওয়ার সময় বাবা পেছন থেকে ডেকে বললো,
– রিদ শোন, তোর সাথে কথা আছে।
রিদ এসে বাবার পাশে বসে বললো,
– জ্বি বাবা বলো।
– আরশির পরিক্ষার আর কয়দিন বাকি আছে?
– মাস খানেক আছে বাবা।
উনি পত্রিকা টা রেখে বললো,
– শুনলাম তোকে নাকি আজকাল কারা যেন হুমকি-ধামকি দেয়?
বাবার মুখে এমন কথায় চমকে উঠে রিদ। হুমকি-ধামকির বিষয় গুলো তো তার আর অগন্তুকের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। বাবা এতো কিছু জানলো কিভাবে।
রিদ আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– ক কই না তো বাবা, তোমাকে কে বললো এসব।
কিন্তু উনি ছেলের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বললো,
– কোনো সমস্যা হলে নির্জনকে বলবি সে সব সামলে নিবে। নিজে আগ বাড়িয়ে কোনো ঝামেলায় জড়াতে যাস না। যা এখন।
বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রিদ। মাথায় ঢুকছে না এতো কিছু বাবা জানলো কিভাবে?
,
,
বাড়িতে বড় চাচি এসেছে। উনি একটু এক রোগা প্রকৃতির মানুষ। নিজে যা বুঝে তাই। আমি ওকে সালাম দিয়ে কথা বলে মাকে ডাকতে গেলাম। এতোটুকু পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিলো। তবে ওই যে এক রোগা প্রকৃতির। আগের মতো পায়ে ধরে সালাম না করার ঘোর বিরোধ তার।
মায়ের সাথে বসে বসে গল্প করছে। আর আমাকে পাঠানো হয়েছে তাদের জন্য চা বানাতে।
বড় চাচি সোফার এক পাশে আরাম করে বসে মাকে বললো,
– আরুকে দেখতে এলাম। গত কাল রাতে খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি আরুকে নিয়ে। তার মানে এটা নিশ্চিত সামনে আরুর একটা বিপদ ঘটতে চললো।
আমি চা বানাতে বানাতে তাদের কথা গুলো শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো। বড় চাচির এই একটা কথা সত্যি। তিনি কাউকে নিয়ে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখলে তা সত্যি হয়ে যায়। প্রথমে আমি এটা বিশ্বাস করতাম না।
কয়েক বছর আগেও তিনি ঠিক এই ভাবে বলেছিলেন। আমার মেঝো কাকার ছেলে অভি ভাইয়া। তাকে নিয়ে নাকি কি খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্নে দেখেছিলেন, রাস্তা পার পওয়ার সময় অভি ভাইয়াকে বড় একটা ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়েছে।
অভি ভাইয়া এসবে বিশ্বাস করতো না। মেঝো চাচি অনেক বারণ করেছিলো কয়েকদিন ঘর থেকে রের না হতে। কিন্তু অভি ভাই শুনলো না। বাইক দিয়ে চলে গেলো তার কোন বন্ধু ফোন করেছিলো ওখানে। ঠিক ওই দিনই বড় একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মেরেছিলো অভি ভাইয়াকে। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় সে।
যার কারণে মেঝো চাচা তিন রাত গাছের সাথে বেধে রেখেছিলো চাচিকে। আর বলছিলো, তুই আর কোনো দিন ঘুমাবি না।
তারপর থেকেই অলক্ষুনে মহিলা বললে এলাকার সবাই তাকে এক নামে চিনে।
আমি তাদের সামনে চা রেখে চুপচাপ সেখান থেকে সরে গেলাম। স্বপ্নের বর্ণনা শুনার ইচ্ছা নেই আমার। যদি তার স্বপ্ন টা খুব ভয়ঙ্কর হয় তাহলে আমার ঘুমটাই হারাম হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং না শোনাই ভালো। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
,
,
আপুকে আজ এই বাড়িতে নিয়ে আসছে বাবা। আপু অন্তঃসত্ত্বা, ৭ মাস হতে চললো। মা বললো, এখানে এসে কয়দিন থেকে যেতে। আপুর নাম আর আমার নাম মিলিয়ে রাখা হয়েছিলো। আরশি আর আপুর নাম আরিশা। আবার দুজনকে ডাকা হতো এক নামে, আরু। আরু বললে আমরা দুজনই সাড়া দিতাম। তাই পরবর্তিতে আপুকে পুরো নাম ধরেই ডাকতো। আর আমাকে আরু বলে।
আপুকে নিয়ে আসছে, এতে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি আমি৷ কতো দিন দুই বোন মিলে এক সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না। আজ অনেক রাত অব্দি আড্ডা দিবো দুজন।
মা রান্না করছিলো। আমি রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের পাশে দাড়ালাম। মা আমার আমার দিকে চেয়ে বললো,
– কিরে কিছু বলবি?
– আমাকে রান্না শিখাও মা।
– তোর না কয়দিন পর এক্সাম? এখন পড়ায় মন দে। এসব পরেও শিখতে পারবি। সারা জীবনই তো তোকে বলে এসেছি রান্নাটা শিখতে কিন্তু তখন তো শুনলি না আমার কথা।
আমি চুপচাপ মায়ের পাশে দাড়িয়ে আছি। মা আমার দিকে চেলে বললো,
– চেয়ারম্যান এর ছেলে এখন তোকে ডিস্টার্ব করে?
আমি দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বললাম, আগের মতো না।
মা রান্না করায় মনোযোগ দিয়ে বললো,
– তবুও সাবধানে থাকবি। দুই দিন পর চেয়ারম্যান ইলেকশন। হয়তো এই কারণে চুপ আছে। আর রিদকে কিছু বলিস না। এতে আরো ঝামেলা বাড়বে। সুন্দর ভাবে এক্সাম টা শেষ করে নে। এর পর আর কোনো চিন্তা নেই।
আমি মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম। রুমে আপু বসে আছে। আমি ছোট একটা প্লেটে আপেল কেটে আপুর কাছে নিয়ে গেলাম। আপুর পাশে বসে প্লেট টা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম। তুই কিন্তু আগের থেকে মুটি হয়ে যাচ্ছিস আপু।
আমার কথায় একটু হাসলো আপু। সাথে আমিও হেসে দিলাম। আমি খুব আগ্রহ দৃষ্টিতে আপুর দিকে চেয়ে বললাম,
– এই সময়টায় কেমন লাগে আপু? মানে অনুভুতিটা কেমন? আমার না খুব জানতে ইচ্ছে করে।
আপু পেটে হাত রেখে বললো,
– সব অনুভুতি মুখে বলে প্রকাশ করা যায় না রে। অনুভুতি টা আমি অনুভব করতে পারি প্রকাশ করতে পারি না। তুই কখনো আমার যায়গায় আসলে তার পর বুঝবি।
আমি মনে মনে বললাম, আমার আর তোমার যায়গায় আসা হবেনা। যেই নিরামিষের কাছে তুলে দিয়েছো, একবার হাত ধরলে তিন বার সরি বলে।
আপু আপেল খেতে খেতে বললো,
– কিছু বললি?
আমি কথা খুজে না পেয়ে বললাম,
– নাহ্ কিছু না।
,
,
এখন আর আগের মতো প্রতিদিন কলেজে যাওয়া হয় না। সত্যি বলতে ভয়েই যাই না। তবে আজ যাবো। একটা কারণ আছে। খুব জরুরি কারণ। আজ রেডি হয়ে নিজেই সাবিহাদের বারি চলে গেলাম। গিয়ে দেখি কল পাড়ে বসে কাপ প্রিচ পরিষ্কার করছে সে। আমাকে দেখে খুশি হয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কারণ শেষ কবে ওদের বাসায় এসেছিলাম জানা নেই।
বারির সামনে একটা বড় বড়ই গাছ। বারো মাস বড়ই ধরে। আর অপর পাশে তাদের ঘর। চার পাশে ইটের দেওয়াল আর উপরে টিনের চান। আর ঘরের সামনেই একটা খোলা মেলা বারান্দা। মাঝে মধ্যে ওখানে বসে আড্ডা দেয় সবাই।
ওখানে একটা চেয়ার টেনে বসে আছি আমি। সাবিহা কিছু বড়ই আমার সামনে দিয়ে গেলো। আমি খেতে খেতে সে রেডি হয়ে যাবে।
দুজনই একসাথে চললাম কলেজের উদ্দেশ্যে। সাবিহা আমায় তাড়া দিতে দিতে কতোবার বললো,
– আজকে কি এমন গুরুত্ব পূর্ণ কাজ? যে জোর করে হলেও কলেজে নিয়ে যাচ্ছিস?
আমি চুপচাপ রইলাম কিছু বললাম না। রিক্সা থামাতে বললাম একটা রেস্টুরেন্টের সামনে।
– চল ক্ষুদা লাগছে কিছু খাই।
সাবিহা মাথা নিচু করে বললো,
– আমার কাছে টাকা নেই তো।
আমি একটু হেসে বললাম,
– আমার কাছে আছে চল।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে সাবিহাকে বললাম,
– চোখ বন্ধ কর।
– কেন?
– কর না,,,,
– আচ্ছা,,,,,
– আমি না বলা অব্দি খুলবি না।
আমি সব কিছু আগে থেকেই রেডি করে সাবিহাদের বাসায় গিয়েছিলাম। কিছুক্ষন পর বললাম, চোখ খোল বান্ধবি।
সাবিহা চোখ খুলতেই অবাক হয়ে গেলো। তার সামনে রাখা একটি কেক। আর তার মাঝে লেখা,, Happy birthday too Kolixa…..
হুট করেই সাবিহা আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কারণ লাইফে ফাস্ট টাইম এমন সারপ্রাইজ পেয়েছে সে। কখনো কখনো তার জন্মদিনের কথা তার নিজেরও মনে ছিলো না।
আজ হটাৎ এমন সারপ্রাইজ পাবে তা হয়তো ভাবতেও পারেনি সে।
– তোর সাথে থাকলে আমার প্রতিটা সময়ই ভালো কাটে দোস্ত। কেন যে আমাদের মেয়েদের ফ্রেন্ডশিপ গুলোতে বিবাহ নামক শব্দটায় দেয়াল তৈরি করে ফেলে? সারা জীবন এক সাথে থাকতে পারলে কি এমন ক্ষতি হতো?
To be continue…..