#অনুভূতিহীন,পর্ব ১৪,১৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১৪
– বাবা আমি আরশিকে বিয়ে করবো, সব কিছুর আয়োজন করেন আপনি।
বাবার সামনে দাড়িয়ে সোজাসুজি ভাবে কথাটা বললো আসিফ।
তার বাবা চেয়ার ছেরে উঠে বসে বললো,
– মানে কি এইসবের? তোর বুদ্ধি সুদ্ধি কি দিন দিন হাওয়া হয়ে যাচ্ছে? আর দুই দিন গেলে তিন দিনের দিন ইলেকশন। আর তুই এখনও এসব নিয়ে পরে আছিস? এই দুই একদিন আপাততো ওসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। সব কিছুরই একটা সময় আছে।
আসিফ রাগে গ্লাস আছড়ে মে*রে বললো,
– তোমার না অনেক ক্ষমতা? আমি আরশিকে তুলে নিয়ে আসবো, বাকিটা তুমিই সামলে নিবে।
চেয়ারম্যান সাহেব তার গালে একটা চ*র বসিয়ে বলে,
– বয়স হয়েছে ঠিকই বুদ্ধি এখনো হাটুর নিচে। দুই দিন পর ইলেকশন এর পর শপথ গ্রহন করতেও কম করে ১-২ মাস লেগে যাবে। এই সময়টাকে কোনো ঝামেলা হলে বুঝছিস না কি হবে? এখন এখান থেকে যা, সব কিছুরই একটা সময় আছে। আর দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছে? বিয়ে হয়ে গেছে শুনেও ওই মেয়েটার পেছন পেছন ঘুরছিস? এর আগেও তো দুইটা রে*প কেস ছিলো তোর। সব ধামা চাপা দিয়ে রেখেছি দেখে সাহস খুব বেড়ে গেছে না?
– এই কয়েক গ্রামে ওর মতো মেয়ে আমার চোখে দ্বিতীয় টা পড়েনি। আমার তো ওকেই চাই।
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো আসিফ।
,
,
আমি আর সাবিহা তখন বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে আসিফ এসে একটা বাইক নিয়ে রিক্সার সামনে দাড়ালো। ভুয়ে বুকটা ধুক ধুক করতে লাগলো আমার। আসিফের পেছনে আরেকটা ছেলে বসা। হুট করে আসিফ এসে আমার হাত ধরে রিক্সা থেকে নামিয়ে নিলো। হাতটা মুচড়ে তার থেকে ছাড়িয়ে নিলাম আমি। তেজস্ব গলায় বললাম,
– আপনার কারণে কি আমি পরিক্ষাটাও দিতে পারবো না? কি শুরু করেছেন আপনি? বাবার পাওয়ার আছে দেখে কি যা ইচ্ছা তাই করবেন? এসব কে ভালোবাসা বলে না। এর আগেও তো দুইটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে প্রমান লুকিয়ে বাবার পাওয়ারে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই বলে আমাকেও ওসব মেয়েদের মতো ভেবেছেন? যে যা ইচ্ছা করে বেচে যাবেন? আমার স্বামী, শশুর এদের কিছু বলছি না তার মানে এই না যে আমি ভয়ে বলছি না। আমি বাবার বাড়ি, শশুর বাড়ি সবার সম্মানের কথা ভেবে চুপ আছি। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন তো, দুই পা উপর করে ঝুলিয়ে মাঝখান দিয়ে উপর নিচে ফে*রে ফেলবো একধম।
আসিফ কিছু না বলে চুপচাপ বাইকে গিয়ে বসলো। আরশির কথা গুলো শুনে না। আমজাদ চৌধুরির গাড়ি দেখে চলে যাচ্ছে সে। আমজাদ চৌধুরি তাদের বিপক্ষ দলের পার্থী। এই সময়ে বিপক্ষ দলের কাছে কোনো বিষয়ে হার মানতে চায় না সে। তাই চুপচাপ বাইক নিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
সাবিহা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। হুট করে আমার এমন রেগে যাওয়াটা হয়তো মানিয়ে নিতে পারছে না সে। সে কি মানিয়ে নিবে? আমার নিজেরই তো হাত পা কাঁপছে। হুট করে রেগে কি থেকে কি বলে ফেললাম তা নিজেই বুঝতে পারছি না। এই জন্যই বুঝি সবাই বলে,
“সোজা মানুষেরর খারা কো*প। এরা সহজে রাগে না,
আর রেগে গেলে কাউকে খু*ন করে ফেলতেও দুই বার ভাবে না। ”
,
,
রাত ৯ টা। গাড়ি নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে ছুটে চললো আসিফের বাবা আরিফ সাহেব। হাত পা ভাঙা অবস্থায় হসপিটালে শুয়ে আছে আসিফ। আরিফ সাহেব উত্তেজিত হয়ে তার পাশে গিয়ে বসে বললো,
– এমন কি করে হলো আমার ছেলের? কে করেছে এই কাজ? কার এতো বড় সাহস।
ওনার মাঝে পুরোপুরি উত্তেজনা ভাব।
আসিফ বেডে শুয়ে থাকা অবস্থায় বাবাকে বললো,
– কে মে*রেছে দেখতে পাইনি বাবা। হুট করে জ্বিনের মতো এসে ধাবা মেরে ধরে, মে*রে চলে গেলো বুঝতেই পারিনি।
আারিফ সাহেব একটু রেগে ছেলেকে ঝাড়ি মেরে বললো,
– তোর শুধু মাথাটাই আছে, মাথার ভিতরে যে কিছু থাকা দরকার তা একটুওু নেই।
মাথায় হুডি পরা একটা ছেলে। হসপিটালে গ্লাস ভেদ করে আসিফের দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। এর পর চুপচাপ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালো। আসিফ কে মুখে ঘুষি মারার সময় তার দাতের আঘাতে হাতও কে*টে গেছে কিছুটা। তাই হাত বেন্ডেজ করতে হসপিটালে এসেছিলো সেই অগন্তুক। মাথায় হুডি পরা মুখে মাক্স। চেহারা টা দেখতে পায়নি কেও। হাত দিয়ে একটা গাড়ি দার করিয়ে চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো, অচেনা।
,
,
পড়ায় মন বসছেনা, সারা শরির জুড়ে একটা অস্থিরতা ভাব আমার। বিকেলে আসিফের সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো তার। আর সন্ধার পর আসিফকে কারা মেরে হাত পা ভেঙে হসপিটালে তুললো। ব্যাপার টা কিছুতেই মাথায় ঢুকছেনা আমার। আচ্ছা রিদ ভাইয়ে এমন টা করেনি তো? ধুর কিসব ভাবছি আমি। ওর মতো একটা মানুষ কি করে এমনটা করবে? আর এখানেই বা কি করে আসবে?
মুহুর্তেই ফোনটা বের করে একটা কল দিলাম তাকে। মন টা উত্তেজিত হয়ে আছে খুব।
ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতেই বললাম,
– কোথায় আপনি?
সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– এতোক্ষন হসপিটালে ছিলাম, এখন বাসায় ফিরলাম।
– আপনি সত্যিই এখন বাসায়?
– তো তোমাকে মিথ্যা বলতে যাবো কেন?
– আচ্ছা আমি ভিডিও কল দিচ্ছি। সবাইকে দেখবো আমি।
ওনি কিছু বলার আগেই আমি কল কে*টে ভিডিও কল দিলাম। ওনি রিসিভ করে বললো,
– কি হয়েচ্ছে হটাৎ, তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন? এ্যানি প্রব্লেম?
ওনি হয়তো একটু আগে গোসল করেছে তাই একটু ভেজা টাইপের আগোছালো। আর একটু পরই মামিকে দেখে একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম আমি। তার মানে সে সত্যিই বাসায়। ওহ্, থ্যাংক গড। সে এমনটা করেনি। কারণ সে করলে এতো দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারতো না। কারণ এখান থেকে তার বাড়ি কম করে হলেও ৫-৬ ঘন্টার রাস্তা৷ তাহলে কে করেছে এমন? মনে প্রশ্ন জাগছে।
তবে যেই করুক। রিদ ভাইয়া এসবে নাই এটাই অনেক।
,
,
নির্বাচন শেষ হলো। পূর্বের মতো এবারও আরিফ সাহেব হলো চেয়ারম্যান। তবে ছেলের অবস্থা করুন। গত দশ দিন ধরে শোয়া থেকেই উঠতে পারেনি। হয়তো ঠিক হতে আরো কয়েকদিন লেগে যেতে পারে।
দেখতে দেখতে আমাদের এক্সাম শুরু হয়ে গেলো। এই এক দেড় মাসে আসিফ এখন পুরোপুরি সুস্থ।
আমার সাইড ম্যানও ছিলো একটা ছেলে। কি আজিব। ছেলেটা প্রথমদিনই পরিক্ষার হলে আমার সামনে কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছিলো। তার মা নাকি অসুস্থ, মৃত্যুর পথযাত্রি। আর তার মায়ের শেষ ইচ্ছে হলো ছেলেকে ইন্টার পাশ করানো। ছেলেটা আমার কাছে কান্নাকাটি করে বললো,
– আপনি কি চান না আপু আমার মায়ের শেষ ইচ্ছে টা পুরন হোক।
আমার একটু মায়া হলো। নিজে যা লিখতাম, ছেলেটাকেও তা দেখাতাম। ছেলেটা দেরি না করে দ্রুত লিখে ফেলতো। ব্যাপার টা আমার একটু ভালো লেগেছিলো যে ছেলেটা খুব দ্রুত আমার সাথে সাথে লিখে খেলতে পারে।
কিন্তু আমার রাগ হলো পরিক্ষার শেষ দিন। যখন বের হল থেকে বের হতেই ছেলেটার কথা গুলো শুনলাম।
– আরে দোস্ত পরিক্ষা তো এবার একধম ফাটিয়ে দিয়েছি, দেখিস এ+ এবার কেও থামাতে পারবে না।
আমরা পাশ দিয়ে যেতে সাবিহা বললো,
– খুব ভালো ভাইয়া, অন্তত আপনার মায়ের শেষ ইচ্ছেটা তো পুরণ হবে। মৃ*ত্যুর পথযাত্রি মা কে খুশি করতে পারবেন এটাই তো অনেক।
পাশ থেকে ছেলেটার এক বন্ধু বললো,
– কিসের মৃ*ত্যুর পথযাত্রি কিসের শেষ ইচ্ছে?
এতটুকু বলতেই ছেলেটা তার বন্ধুর মুক চে*পে ধরে অন্য দিকে নিয়ে গেলো। ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম আমি৷ সেদিন কতো ন্যাকা কান্নাই না কাঁদছিলো।
,
,
আজকে হেটে হেটে বাসায় যাবো আমরা। আর কখনো হয়তো এভাবে এক সাথে কলেজে আসা হবে না আমাদের। হয়তো কাল কিংবা পরশু আমাকে নিয়ে চলে যাবে শশুর বাড়ি। বাবার মাঝে তো আজকে থেকেই অত্তেজনা দেখতে পেয়েছি। কালকে থেকে আয়োজন শুরু করে দিবে। পরিক্ষা শেষ এখানে আর রাখতে চায় না আমাকে। ভয় হয় খুব।
রাস্তার পাশে দাড়িয়ে রইলো সাবিহা। আমি গেলাম আইসক্রিম নিয়ে আসতে। গীষ্ম পেড়িয়ে বর্ষা চলছে। তবুও রোদ উঠতে তাপ থাকে অনেক। রোদ থেকে আড়াল করতে চাইছি নিজেকে বার বার। কপালের উপর হাত রেখে সাবিহার দিকে তাকালাম। আইসক্রিম নিয়ে রাস্তা পার হতেই হুট করে একটা গাড়ি এসে ব্রেক করে আমার সামনে। ভয়ে আইসক্রিম দুইটা নিচে পরে গেলো। কলিজা শুকিয়ে গেলো মুহুর্তেই। কিছু বুঝে উঠার আগেই। কয়েকটা ছেলে নেমে আমায় গাড়িতে তুলে নিলো। আবার চলে গেলো। মুখ চে*পে ধরার চিৎকারও করতে পারলাম না।
হুট করে এমন একটা কান্ড ঘটে যাওয়ায় ঠায় দাড়িয়ে আছে সাবিহা। কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। যাই হোক আরশিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আর কারা নিয়ে যাচ্ছে এটা আগে দেখতে হবে।
খেয়াল করলো সামনে দিয়ে একটা খালি সি’এন’জি যাচ্ছে। সাবিহা ওটাকে থামিয়ে উটে গেলো। বললো, সামনে চলা মাইক্রো টাকে ফলো করতে।
যতই যাচ্ছে ততোই রাস্তা টা অচেনা মনে হচ্ছে। তবুও সাবিহা বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে রাস্তার পাশে থাকা বোর্ড গুলো দেখে জায়গার নাম মনে রাখছে।
একটা নির্জন জায়গায় একটা ছোট বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামে। আরশিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো তারা।
তখন প্রায় বিকেল হয়ে এলো। আজ শেষ দিন ভেবে আড্ডা দিতে দিতে অনেক টা সময় পার হয়ে গেছে। এর পর এই ঘটনা।
মাথা কাজ করছে না সাবিহা’র। আশে পাশে তাকিয়ে তেমন কিছু চোখে পরছে না। একটু দুরেই একটা মরা ঢাল ভেঙে পরে আছে। সাবিহা এগিয়ে গিয়ে ওটা তুলে নেয়। পা দিয়ে চেপে ধরে ভে*ঙে ওটাকে একটা লাঠির মতো করে নেয়। তার একটাই চিন্তা, যে করেই হোক আরশিকে বাচাতে হবে। ম*রলে দুজন এক সাথেই ম*রবো।
এই ছোট লাঠি দিয়ে কি বা হবে? না সে নিজেও আজ তাদের শিকার হবে?
To be continue…….
#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আরশিকে বন্ধি করে রাখা হয়েছে ছোট একটা ঘরে। ওটা তিন জন ছেলে ছিলো। আসিফ আর দুইজন তার সহযোগি। আরশিকে বন্ধি করে বিকেলেই সেখান থেকে চলে গেলো আসিফ। আর বাকি দুই জন সেই বিকেল থেকে বাড়ির সামনে হাটাহাটি করছে। এখন একজন বসে সিগারেট টানছে।
তখন প্রায় সন্ধা নেমে এলো। দুপুরের ফকফকা রোদের পর সেই বিকেল থেকেই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। আর এখন ঝড়ো হাওহা বইতে শুরু করলো। সাবিহা একটা ঝোপের আড়ালে বসে আছে আর উঁকি মেরে ওদের কর্ম কান্ড দেখছে।
বিকেলে যখন সে লাঠি নিয়ে ওই ঘরে যাবে ভেবেছিলো, তখন হটাৎ মনে হলো আরশি আইসক্রিম আনতে যাওয়ার সময় ফাইল টা তার কাছে দিয়েছিলো। আর ওটার ভিতর আরশির ফোনও ছিলো। যদিও পরিক্ষার হলে ফোন নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। তবুও প্রায় স্টুডেন্টই ফোন নিয়ে যায়, তবে লুকিয়ে রাখে।
সাবিহা দ্রত ফোন টা হাতে নেয়। দেখে লক করা নেই। কল লিষ্টে যেতেই প্রথমে একটা নাম্বার আসে যেটা সেভ করা, My niramish নামে।
আরশির কাছে এই নিরামিষের গল্প অনেক শুনেছে সে। তাই চিনতে ভুল হলো না নাম্বার টা কার। আর দেরি না করে কল করে সব কিছু খুলে বলে সে। আর সেই বিকেল থেকে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আছে।
ক্ষুদায় পেট টায় যেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সেই সকালে খেয়ে বেড়িয়েছিলো, এখন অব্দি আর কিছু খায় নি।
সন্ধা পেরিয়ে আধার নেমে এলো। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে। ছেলে দুটি বাড়ির সামনে চালের নিচে গিয়ে দাড়িয়ে আছি।
সাবিহা লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির পেছনের দিক টায় চলে গেলো। দেখে বাতাসের ঝাপটায় ঘরের জানালা গুলো একবার খুলছে আরেকবার বন্ধ হচ্ছে। ঘরটা অন্ধকার, একেবারা ভিন্ন সাইডে ঘর। এদিকটায় কারেন্টের কোনো খাম চোখে পরছে না৷ বিজলির আলোয় বুঝা যাচ্ছে আরশি জানার পাশে দাড়িয়ে জানালা টা ঝাকাচ্ছে। সাবিহা গুটি গুটি পায়ে তার কাছে এগিয়ে গেলো।
আমার ভেতর ছিলো তখন শুধু এখান থেকে মুক্ত হওয়ার পথ খোজা। হুট করে সাবিহাকে দেখে চমকে উঠলাম আমি। ও এখানে কি করে এলো? সারা শরির ভিজে একাকার অবস্থা। এভাবে আর কিছুক্ষন থাকলে নির্ঘাত জ্বর উঠবে। সাবিহা জানালার পাশে এসে দাড়ালো। সারা শরির কাপছে তার। দেওয়াল ঘরের উপরে টিন সেট। সেই টিনেড় ঝড়ঝড়ে পানি এখনো তার গায়ের উপর পরছে। আমি অবাক হয়ে বললাম,
– তুই এখানে কি করে এলি? তোকেও কি ওরা তুলে নিয়ে এসেছে?
সাবিহা কাঁপতে কাঁপতে বললো,
– তোকে তুলে আনার সময় আমি অন্য একটা গাড়ি নিয়ে ফলো করতে করতে এখানে এসেছি। তুই কোনো চিন্তা করিস না আরু। আমি ফোন করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। আসিফ এখনো আসেনি হয়তো ঝড় থামলে আসবে। ততোক্ষনে আমি দেখছি কি করা যায়।
আমার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। জানিনা কি হবে আমার সাথে? সাবিহাকে বললাম,
– তুই এভাবে ভিজছিস, তোর তো জ্বর উঠে যাবে।
– উঠলে উঠুক, তোকে চারা এখান থেকে যাবো না আমি। মরলে এক সাথেই মরবো। আর আশে পাশেও কোনো বাড়ি ঘর নেই যে তাদের কাছে গিয়ে আমি সাহায্য চাইবো। আর শোন, একধম৷ কাঁদবি না। আমি দেখছি কি করা যায়। আর কিছুক্ষন দেখি। এর পর বাইরে থাকা ছেলে গুলোর উপর এটাক করবো। ওদের সাথে পারবো কি না জানি না। কিন্তু পারলে তোকে বের করে নিয়ে দুজন পালিয়ে যাবো। একধম ভয় পাশ না।
এর মাঝেই দরজা খোলার খট খট শব্দ হয়। আমি দ্রুত জানালা বন্ধ করে দিলাম। আর সাবিহাও লুকিয়ে পরলো। একটু পরই আসিফ ঢুকলো ভেতরে। সাথে ছেলে দুটিও। তারা রুমের কোনায় কোনায় মোম বাতি সেট করছে। আমি জড়সড় হয়ে এক পাশে বসে আছি। সারা শরির কাঁপছে আমার।
সব শেষ হলে আসিফ একটা টোন টেনে আমার সামনে এসে বসলো। আমার মুখটা উচু করেতেই আমি এক ঝাটকায় তার হাত সরিয়ে নিলাম। সে ভুবন কাঁপানো হাসি দিয়ে বললো,
– তেজ দেখছি এখনো কমেনি। ওই দিন কি বলেছিলি, আমায় দুই পায়ের মাঝ বরাবর ফেরে ফেলবি? হা হা হা,,,,,,
তার বিশ্রি হাসি তে আমার সারা শরির জুড়ে ঘৃনা জাগ্রত হতে থাকলো।
সে আবারও হাসতে হাসতে বললো,
– লাভ নেই, এখানে এমন কেও নেই যে তোকে বাচাতে আসবে। আর তোর সাথে যা যা হবে তারও কোনো প্রমান থাকবে না। কারণ আমার শিকারের কোনো প্রমান রাখি না আমি। বাইরে আরো দুজন আছে। সব মিলিয়ে আমাদের তিন জনেরই জমিয়ে একটা পার্টি হবে। এর পর তোর স্থান হবে কোনো নদী তে। হা হা হা,,,,,,
আবারও হাসতে লাগলো আসিফ।
আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। আর বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। মনে মনে ভাবছি, আমার জীবনের আয়ু কি এতো টুকুই?
রিদ ভাইয়ের চেয়ারাটা চোখের সামনে ভেষে উঠছে বার বার। আর চোখ গড়িয়ে পানি পরছে৷ আমার কাঁন্নায় যেন পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে আসিফ।
কিছুক্ষণ পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ ভেষে উঠলো। আসিফ পেছন ফিরে বললো,
– কি হয়েছে?
দরজার ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ ভেষে উঠলো,
– দরজা খোল আসিফ।
আসিফের বুঝতে বাকি রইলো না লোক টা তার বাবা আরিফ সাহেব। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে বললো,
– হটাৎ এখানে কেন এলেন বাবা?
আরিফ সাহেব আমার দিকে একবার চেয়ে আসিফকে বললো,
– মেয়েটাকে কেন তুলে এনেছিস এখানে? মেয়েটার পরিচয় জানিস তুই?
আসিফ একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো,
– এতো কিছু জানার সময় নেই আমার, আপনি চলে যান এখান থেকে।
– কুমিল্লা থেকে এম’পি সাহেব ফোন করেছিলো। মেয়েটার কিছু হলে আমাদের বাপ ছেলের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। অলরেডি পদ ত্যাগ এর নির্দেষ দিয়ে ছে সে। এখন মেয়েটাকে ছেরে দে। হয়তো হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে এম’পি কে বুঝাতে পারবো.
আসিফ অবাক ভঙ্গিতে বললো,
– হোয়াট? এই খবর বাইরে গেলো কিভাবে? আর এম’পি এর সাথে মেয়েটার কি সম্পর্ক? ও মেয়েটার জন্য এতো কিছু করছে কেন?
আরিফ সাহেব টান্ডা মাথায় বললো,
– মেয়েটা কে তুই জানিস? ঢাকায় খুব বড় বিজনেস ম্যান রুদ্র চৌধুরির ছেলের বৌ। ঢাকা থেকে এম’পি সাহেবের কাছে খবর এলো। আর এম’পি ফোন দিয়ে আমায় এসব বললো। আর এটাও বললো, মেয়েটার গায়ে একটা টোকা পরলেও আগামি কাল সকালের সূর্য আমাদের বাপ ছেলের দেখতে হবে না। দেখ বাবা, এম’পি কখনো নিজে থেকে ফোন দিয়ে এভাবে রেগে কথা বলেনি। তুই পরিস্থিতিটা বুঝার চেষ্টা কর।
আসিফ বাবার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,
– এতো কিছু বুঝার সময় নেই আমার। গত এক বছর ধরে আরশি আমার শিকার।
কিন্তু আরিফ সাহেব ছেলেকে কিছু না বলে আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আমাদের ক্ষমা করে দিও মা, তোমার সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি আমরা। তুমি এখন এখান তেকে চলে যাও, কেও কিছু করবে না তোমায়।
বাচার পথ পেয়ে আর এক মুহুর্তও দেরি করলাম না আমি। দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলাম আমি। ছুটে বাড়ির পেছনের দিকটায় চলে গেলাম। বুঝতে পারছি অনেক রাত হয়ে গেছে।
আসিফ রাগ সামলাতে না পেরে বাবার গালে সর্ব শক্তি দিয়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো। বিশ্রি ভাষায় গালাগাল করতে শুরু করলো,
– কু*বাচ্চা সামান্য একটা বিষয় হ্যান্ডেল করতে পারিস না তুই?
ছেলের এমন ব্যবহারে নিচে পরে থম মেরে তাকিয়ে আছে আরিফ সাহেব। রাগে কটমট করতে করতে বিছানায় বসে পরে আসিফ।
আমি বাড়ির পেছনে এসে দেখি একটা গাছের আড়ালে চুপচাপ বসে আছে সাবিকহা। সারা শরিরর ভেজা থর থর করে কাপছে সে। ঝড় একটু আগে থেমে গেছে। গাছের পাতা চুইয়ে পানি পরছে টপ টপ করে। সাবিহার হাত ধরে দেখলাম সারা শরির গরম হয়ে আছে। থাকবেনাই বা কেন? পুরোটা ঝড়ে ভিজেছে সে।
আমি সাবিহাকে ধরে তুললাম। সে কাঁপা গলায় বললো,
– তোর কিছু হয় নি তো? ওরা কিছু করেনি তো তোকে?
– না কিছু করেনি।
– কিভাবে বের হলি?
– পরে বলবো তোকে, এখন এখানে থাকা ঠিক হবে না। চল দ্রুত।
সাবিহাকে ধরে ধরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলাম আমরা দুজন। মেয়েটা না থাকলে হয়তো আজ অনেক কিছুই হয়ে যেত আমার।
একটু হাটতেই মেইন রোড দেখতে পেলাম। এদিকে সাবিহা প্রায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। তবুও তাকে ধরে অনেক কষ্টে মেইন রোডে গিয়ে দাড়ামাম। গাড়ি তেমন চোখে পরছে না। ভেবে পাচ্ছিনা কিভাবে যাবো। এদিকের রাস্তা ঘাট কিছুই চিনিনা।
সাবিহার হাতের মুঠোয় আমার ফোনটা এখনো আছে। বাকি সব কোথায় ফেলে এসেছে কে জানে। একটু আশার আলো দেখতে পেলাম আমি। কিন্তু ফোনটা হাতে নিতেই সেই আশা টাও হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি বন্ধ হয়ে আছে। একটা শ্বাস নিলাম আমি। এখন এই মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবো কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। লাইফে কখনো ভাবতেও পারিনি, সৃষ্টি কর্তা কখনো আমায় এমন পরিক্ষায় ফেলবে।
কিছুক্ষন পর একটা কার এসে দাড়ায় আমাদের সামনে। ভয়ে বুকটা আবারও ধুক ধুক করতে লাগলো। ওরা আবার এসেছে কি না? কিন্তু গ্লাস নামাতেই দেখলাম ওরা কেও না। অপরিচিত একটা ছেলে। মাথায় হুডি আর মুখে মাস্ক পরায় চেনা যাচ্ছে না তাকে। হাতের কব্জিতে ব্যান্ডেজ করা। ছেলেটা বললো,
– গাড়িতে উঠুন। ভয় পাবেন না। আপনাকে চিনি আমি। আরফিন স্যার এর মেয়ে আপনি। বিপদে পরে এখানে দাড়িয়ে আছেন। গাড়িতে উঠে বসুন বাড়িতে ড্রপ করে দিচ্ছি আপনাদের।
তবুও আমার ভয় কাটছে না। অপরিচিত ছেলে, অপরিচিত কন্ঠস্বর। ছেলেটা আবারও বললো,
– ভয় পাবেন না। নির্ভয়ে উঠতে পারেন। আর আপনার বান্ধবির অবস্তা তো খুবই খারাপ। হয়তো আবারও বৃষ্টি আসতে পারে।
আমি বুকে হাত দিয়ে একটা নিশ্বাস নিলাম। কপালে যা আছে তাই হবে আজ। সাবিহাকে দরে গাড়িতে বসিয়ে দিলাম। আর আমিও উঠে বসলাম।
,
,
আমাদের বাড়ির সামনে এসে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো ছেলেটা। এতোক্ষনে ভয়টা একটু কাটলো আমার। ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম, মোটেও এতো খারাপ না। তবে ছেলেটা কে তাও বুঝতে পারছি না।
যাই হোক এতো ভাবার সময় নেই আমার। সাবিহাকে ধরে ধরে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলাম আমি।
দেখি বাবা মা বসে আছে ভেতরে। আমাকে দেখেই তারা দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো,
– ঠিক আছিস তো মা? কিছু হয়নি তো তোর?
– তোমাদের পরে সব বলছি মা। আগে সাবিহাকে রুমে নিয়ে যাও। আমি জামা নিয়ে আসছি তার জন্য।
সাবিহাকে নিয়ে খালি রুমটায় চলে গেলো মা। আমি আমার রুমের দিকে হাটা দরলাম। রুমে আসতেই আরো অবাক হলাম আমি। ফ্লোরে দুই পা ছড়িয়ে খাটের উপর বসে আছে রিদ ভাই। আমি চুপচাপ অপরাধির ন্যয় মাথা নিচু করে তার কাছে এগিয়ে যেতেই, সে উঠে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো আমার গালে।
ফ্লোরে ছিটকে পরে আমি আহত চোখে তার দিকে চেয়ে রইলাম। সে রাগি স্বরে বললো,
– এতো কিছু হয়ে গেলো অথচ আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না তুমি? আমায় একটা বার বলতে যে, কোনো ছেলে তোমায় বিরক্ত করতো। একটি বার বলার প্রয়োজন মনে করলে না আমায়?
আমি চুপচাপ ফ্লোরে বসে আছি। হুট করে সে আমার পাশে বসে আমাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। কপালে অজশ্র চুমু দিয়ে বললো,
– কেন এমন করলে তুমি? আজ তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাচতাম বলো? সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোমায় ভালোবাসি আমি। আমার যে বেচে থাকার অক্সিজেন টাই তুমি।
To be continue,,,,,