#অনুভূতিহীন,পর্ব ২০,২১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
২০
রিদ ভাইয়ের কাধে মাথা রেখে বসে আছি আমি। গাড়ি ছুটে চলছে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। মাথা তুলে কতটুকু এসেছি, তা দেখার শক্তি টুকু নেই আমার। ঢলে পরা লতার মতো নুইয়ে আছি আমি।
সাবিহা আমার বান্ধবি না। আপন বোন সে। হুট করে এমন একটা ঘটনা শুনায় নিজেকে কিছুতেই মানাতে পারছি না।
সাবিহাদের বারিতে এসে দেখি অনেক মানুষের কোলাহল। তবে সাবিহার লা/শ বাসায় নেই। সকালো পোস-মার্টামের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। হয়তো কিছুক্ষন পরই নিয়ে আসবে।
একজনকে দেখলাম বাড়ির সামনে বরই গাছ টা থেকে বরই পাতা ছিড়ছে। পোস মার্টাম করা লা/শ বেশিক্ষন রাখবে না। আনলেই গোসল দিয়ে দাফনের জন্য নিয়ে যাবে।
বাড়ির সামনে ছোট বারান্দাটায় ফ্লোরে বসে আছি আমি। মুখে নেই কোনো হাসি কান্নার ছাপ। চুপচাপ বসে আছি।
কিছুক্ষন পরই এম্বুলেন্স এর আওয়াজ শোনা গেলো। সামনে পিলার টা ধরে উঠে দাড়ালাম। দেখি সাবিহার লা/শ বাড়ির উঠানে এনে একটা মাদুরের উপর রাখা হলো। অনেকেই চার পাশে ভির করে দাড়িয়েছে।
লা/শ শব্দটা শুনতেই ছোট বেলা থেকে ভয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতো আমার। কিন্তু আজ সকলের ভির সরিয়ে সাবিহার মাথার কাছে বসে হাুমাউ করে কাঁদছি। আজ এতো সুন্দর মেয়েটার মুখের দিকেই তাকানো যাচ্ছে না সব কা/টা-ছেরার দাগ। আমার কাঁন্নার ব্যাগ বেড়ে যাওয়ায়। কয়েকজন মহিলা আমাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে ওখান থেকে। এর পর রিদ ভাইয়া আমাকে ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। আর বাকি সবাইকে ছাড়িয়ে সাবিহাকে গোসল দেওয়ার জন্য নিয়ে চলে গেলো।
চাচি তো সেই সকাল থেকেই নাকি একবার জ্ঞান হারাচ্ছে, আরেক বার জ্ঞান ফিরছে। একটু আগে মেয়ের কা/টা-ছেরা লা/শ দেখে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। আর চাচাকে দেখছি বরই গাছটার সাথে হেলান দিয়ে মাটিয়ে বসে আছে চুপচাপ।
আসরের পর সাবিহাকে দাফন করে আসা হলো। ততোক্ষনে বাড়ির সবার কাঁন্না প্রায় থেমে এখন নিশ্চুপ।
আমিও বসে আছি চুপচাপ। পাশে বসে আছে রিদ ভাই, আর তার পাশে সাব্বির ভাই।
রিদ ভাই গম্ভির ভাবে সাব্বির ভাইকে প্রশ্ন করলো,
– কিভাবে হয়েছে এতো কিছু? যদিও আমি কিছুটা শুনেছি, তবুও বিস্তারিত শুনতে চাইছি।
– আমি কিছু জানিনা,,
বলেই হাটা ধরলো সাব্বির ভাই। রিদ ভাই খপ করে তার হাট টা ধরে উঠে দাড়ালো। সাব্বির ভাইকে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
– সেই শুরু থেকেই আপনার চোখে মুখে লুকুচুরি ছাপ ভেষে আছে।
সাব্বির ভাই এবার গম্ভির ভাবে বললো,
– গত কাল সন্ধায় আমার সাথে বের হয়েছিলো সাবিহা। বাড়িতে কেও জানতো না। সবাইকে বলে গেলো সে তার বান্ধবি সামিয়ার বাসায় গিয়েছে। গুরাঘুরি শেষে নাস্তা করার জন্য একটা রেষ্টুরেন্টে ঢুকেছিলাম। আর বের হয়েই দেখি একটা গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাড়িয়ে সূর্য আর আসিফ মিলে সাবিহাকে তু/লে নিয়ে গেলো।
এর মাঝে রিদ ভাই বললো,
– আর আপনি চেয়ে চেয়ে দেখেছিলেনসব?
– আমার কিছু করার ছিলো না। ওরা বললো, চুপ থাকতে।
– বাহ্ কি গভির প্রেম আপনাদের। তো এখনো কি চুপ থাকবেন?
সাব্বির ভাই সোজাসুজি ভাবে বললো,
– আমি চাই না বাড়তি ঝামেলা করতে। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। যে ম/রার সে ম/রে গেছে। এখন বাড়তি ঝামেলা করলেও সে আর ফিরে আসবে না। আর আমারও একটা ভবিষ্যৎ পরে আছে। এসব নিয়ে কিছু বলে নিজেকে কোনো ঝামেলায় জরাতে চাই না আমি।
সাব্বির ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে এবার আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম। ওনি কতো সুন্দরেই বলে দিলো, যে মরার সে মরে গেছে, বাহ্। তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আপনার মুখে এমন কথা শুনবো তা আমার ধারনার বাইরে ছিলো সাব্বির ভাই। সাবিহা আপনার জন্য কি করেনি। কয়েকবার তার বাবার হাতে মা/র খেয়েছে শুধু আপনার জন্য। কতো সম্মন্ধ ফিরিয়ে দিয়েছে শুধু আপনার জন্য। ফ্যামিলির এতো কথা শুনেও চুপচাপ সহ্য করে পরেছিলো শুধু কখন আপনার একটা চাকরি হবে এই আসায়। শেষে ওই মেয়েটাই আপনাকে একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে দিয়েছে শুধু আপনাকে পাওয়ার জন্য। আর আপনি বলছেন যে ম/রার সে ম/রে গেছে। বাহ্,,,,
আমার কথায় সাব্বির ভাই উঠে দুই হাত জোড় করে বললো,
– প্লিজ, আপনাদের যা ইচ্ছা করুন, তবে আমাকে এসব ঝামেলায় টানবেন না।
তৎক্ষনাৎ রিদ ভাই ঠাস করে একটা চ/ড় মে/রে তাকে আবার চেয়ারে বসিয়ে দেয়। কলার ধরে মুখের সামনে মুখ নিয়ে বললো,
– আপনার ভালোবাসা কতটুকু ছিলো তা বুঝাই যাচ্ছে। বেশি সাধু সাজার চেষ্টা করবেন তো, ওদের জায়গায় আপনাকেই ফাঁ/সিয়ে দিবো। যা সত্য চুপচাপ সময় মতো তাই স্বীকার করবেন। আর কোন রেস্টুরেন্টের কাছ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে ওখানে আমায় নিয়ে চলুন। নিশ্চই সি’সি টিভির ফুটেজ পাওয়া যাবে। কোনো চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।
,
,
সব কিছু স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন লেগে গেলো। অভিযুক্ত প্রধান আসামী সূর্য ও আসিফ কেও এর মাঝে ধরে ফেলেছে। দুই দিন পলাতক থাকলেও রেব এর সাহায্যে মাটিরাঙা থেকে গ্রেপতার করেছে তাদের। শাক্ষি, সি’সি টিভি ফুটেজ সবই স্পষ্ট প্রমান। সারা দেশে একটা খবর ছড়িয়ে পরলো, উপজেলা চেয়ারময়ার এর ছেলে ও তার এক সহযোগি মিলে ধ/র্ষণের পর হ/ত্যা করে নদীর ধারে ফেলে এসেছিলো সাবিহা নামের এক তরুনিকে।
এই কেস ঘাটতে গিয়ে আসিফের পুরোনো কেস গুলোও জেগে উঠলো।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে আরিফ সাবের বার বার এদিক ওদিক ফোন দিয়ে পরিস্থিতি হাতে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু নানার প্রমান সহ আটক হওয়ায় পরিস্থিতি আরো হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এম’পি কে ফোন দিলেও উল্টো গালি গালাজ শুনতে হলো। ‘হা/রাম/জাদা তোকে আগেই সাবধান করেছিলাম নিজের ছেলেকে সামলা। রাজনীতির পাওয়ার খাটিয়ে মা**বাজি করে বেড়াবে তোমরা আর পরে ভাববে আমরা পাশে আছি? তুমি ভালো হলে আমিও ভালো, আর নাম ভেঙে মা*বাজি করে বেড়ালে আমি তোমার পাশে নাই,,,, কথা ক্লিয়ার?
,
,
এই ঘটনার বেশ কয়েক দিন কেটে গেলো। তবুও আমি নিজেকে মানাতে পারছি না যে সাবিহার সাথে আর দেখা হবে না আমার। অথচ তাকে বলেছিলাম তার বিয়ের দিন যাবো। তার বিয়ে হবে, সাব্বির ভাইয়ের সাথেই ধুম ধাম করে হবে। কতো কথা বলতাম তাকে। ওসব সময় গুলোই বার বার মনে উঠে আমার। আমার জন্যই মেয়েটার এই অবস্থা। ওই দিন সাবিহার কারণে ওরা আমায় কিছু করতে পারেনি। সেই জেদ আর সূর্য সাবিহাকে পছন্দ করতো কিন্তু সাব্বির ভাইয়ের সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছিলো। এই সব মিলিয়ে শেষে মেয়েটার জীবনই চলে গেলো। আর ভয়ে চুপ করে ছিলো তার ভালোবাসা নামের সেই মানুষ টা। সাবিহাকে তার সামনে দিয়ে নিয়ে গেলো তার চুপচাপ তাকিয়ে ছিলো সে।
,
,
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে আরশি। তখন সন্ধা পেড়িয়ে গেলো। হালকা বাতাশ বইছে। চুল গুলো বার বার এলোমেলো হয়ে মুখে এসে পরছে। আরশি কাঁদছে, চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তবে তা অজান্তে। যাকে বলে নিরব কান্না। সে তো চুপচাপ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কিছু স্মৃতি মনে হতেই চোখ বেয়ে জল পরছে তার।
ওদিকে শাওয়ার নিয়ে বের হলো রিদ। ট্রাউজার পরে খালি গায়ে, টাওয়াল দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে বেলকনির সামনে এসে দাড়ালো। ওখানে দাড়িয়ে কিছুক্ষন মুগ্ধ নয়নে আরশির দিকে তাকিয়ে রইলো। বার বার এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুল গুলো কানের পেছনে গুজে নিচ্ছে সে। নিরবতায় থাকলে স্মতি গুলো মনে পরে বার বার। আরশিকে একটু ব্যস্ত রাখা দরকার। তাহলে হয়তো ব্যস্ততায় অল্প অল্প করে ভুলে যাবে সব।
রিদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক করে দাড়ালো সে। রিদ শান্ত ভাবে বললো,
– এক কাপ কপি বানিয়ে দিবে আরশি?
আরশি খুব শান্ত ভাবে বললো,
– আচ্ছা আপনি বসুন আমি আনছি।
রুম থেকে বেড়িয়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে কেও একজন খুব তারাহুরা করে ছাদের দিকে উঠে গেলো। মামাও এখনো বাসায় নেই। আর রিদ ভাইয়াও রুমে। তাহলে এটা কে?
মন ভর্তি সন্দেহ নিয়ে পিছু নিলো আরশি। চুপচাপ ছাদে উঠে দাড়ালো সে। দেখে নির্জন দাড়িয়ে সিগারেট টানছে ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে। হুডি খোলা আর মুখে মাস্কও নেই। ছাদে লাইটে আলোয় মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার।
হুট করে আরশি সামনে এসে দাড়ানোতে বিব্রত কর অবস্থায় পরে যায় নির্জন। কোমর থেকে পিস্তল টা বের করে আরশির দিকে তাক করে দাড়ায়। নির্জনের খুব ভয়/ঙ্কর রুপ। ভয়ে বুকটা ধুকধুক করে কাঁপতে থাকে আরশির।
To be continue….
#অনুভূতিহীন (পর্ব ২১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
নির্জনের এমন ভয়ঙ্কর চাহুনিতে রীতিমতো সারা শরির কাপতে লাগলো আমার। এক পা এক পা করে পিছিয়ে আমি দৌড়ে নিচে চলে আসলাম। ভয় ও কাঁপুনি তে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা আমার।
লেপটপ হাতে সোফায় বসে ছিলো রিদ ভাই। লেপটপ টা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। দৌড়ে নিচে নামে হুট করে সে সামনে পরায় জড়িয়ে ধরলাম তাকে। সারা শরির কাঁপছে আমার। কথাও বলতে পারছিনা ঠোঁট দুটুও কাঁপছে খুব।
আমার এমন অবস্থায় সে কপির টপিক বাদ দিয়ে আমায় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। আমায় নিজের থেকে ছাড়িয়ে দুই গালে হাত রেখে বললো,
– এমন করছো কেন, কি হয়েছে তোমার?
আমি হাত দিয়ে ছাদের দিকে ইশারায় দেখিয়ে বললাম,,
– ছা ছা ছাদে,,,
সে আরো উত্তেজিত হয়ে বললো,
– ছাদে কি?
– স স সে আমাকে মে/রে ফেলতে চেয়েছিলো।
সে এবার আমার দুই কাধে হাত রেখে ঝাকিয়ে বললো,
– আগে শান্ত হও তুমি। দেখ আমি তোমার সামনে, কেও কিচ্ছু করতে পারবে না তোমাকে।
তার এমন আশ্বাসে একটু ভরসা পেলাম আমি। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও সারা শরির এখনো কাঁপছে। এর মাঝে গর গর করে তাকে বলে দিলাম,
– নি নির্জন ভাই আমাকে ছাদে গু/লি করে মে/রে ফেলতে চেয়েছিলো।
আমার কথায় এবার ভুবন কাপিয়ে হো হো করে হেসে উঠে তিনি। হাসতে হাসতে আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আর ইউ সিরিয়াস? কিন্তু কিভাবে? গত দুই দিন ধরে তো নির্জন ঢাকার বাইরে। মানে তুমি দিনেও জেগে জেগে দুঃস্বপ্ন দেখ আরশি?
বলেই ওনি আবারও হাসতে লাগলেন।
আমি আবারও তাকে করুন গলায় বলতে লাগলাম,
– বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার? আমি নিজ চোখে তাকে দেখেছি। মাথায় লম্বা লম্বা কালো চুল, গালে খোচা খোচা দাড়ি, চোখ দুটু হালকা নীলচে রঙের আর ডান চোখের নিচ বরাবর গালে একটা কা/টা দাগ আছে। ও এখনো ছাদে আছে, বিশ্বাস না হলে চলুন আমার সাথে।
আমার এমন বর্ণনায় ওনার হাসি মুখ টায় এবার একটু চিন্তার ছাপ ভেষে উঠলো। আমার হাত ধরে ছাদের দিকে হাটা ধরলো সে। আমিও তার সাথে যাচ্ছি ভয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে। ছাদে আসতেই আমি ওনার পেছনে লুকিয়ে লুকিয়ে হাটতে লাগলাম।
কিন্তু ছাদ পুরোপুরি স্বাভাবিক। রিদ ভাই আমায় নিয়ে পুরোটা ছাট হেটে দেখালো। কারো কোনো অস্তিত্ব নেই ছাদে।
আমার সন্দেহ ভাঙছে না দেখে রিদ ভাই ফোন বের করে নির্জনকে ফোন দিলো। একবার রিং হতেই রিসিভ করলো। আর রিদ ভাইয়া স্পিকার অন করে দিলো যেন আমিও শুনতে পাই।
– হ্যা নির্জন কোথায় তুমি?
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
– কেন আপনি জানেন না? দুই দিন আগে অফিসের কাজে চট্টগ্রাম এসেছি আমি। আগামি কাল সকালেই ঢাকায় ব্যাক করবো।
রিদ ভাইয়া আমার দিয়ে চেয়ে চোখ নাচিয়ে উঠলো, যার অর্থ ‘কি বুঝলে?’
কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি বিশ্বাস যোগ্য নয়। কারণ নির্জনকে আমি নিজের চোখে দেখেছি ছাদে। আমি এগিয়ে গেলাম যেখানে নির্জন দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো। নিশ্চই ওখানে সিগারেটের কোনো ছাই পাওয়া যাবে।
ওই কর্নারে গিয়ে পায়ের উপর ভর করে বসলাম আমি। তৃক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করতে লাগলাম, কোনো ছাইয়ের চিহ্ন পাওয়া যায় কি না। কিন্তু না, আশে পাশে এমন কোনো চিহ্ন চোখে পরেনি আমার। নিরাশ হলাম আমি। তৃক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন একজন মানুষ নির্জন। গেলো গেলো সব প্রমান মুছে দিয়ে গেলো।
আমার কানের পাশে ভাও সুচক একটা শব্দ হতেই ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম আমি। আর বিপরিতে ভুবন কাপিয়ে হাসছে রিদ ভাই। মনে হচ্ছে হাসির শ্রষ্ঠ কৌতুক টি পড়েছে সে। আমি আবারও রিদ ভাইয়ের দিকে চেয়ে করুন গলায় বললাম,
– বিশ্বাস করুন, আমি ভুল কিছু দেখিনি। স্পষ্ট দেখেছি আমি।
আমার কথা শুনে রিদ ভাই আবারও হাসিতে গরাগড়ি খাচ্ছে। আমি এবার হাল ছেরে দিলাম। কারণ এখন একশ টা প্রমান তার সামনে হাজির করলেও সে বিশ্বাস করবে না। তবে আমি যা দেখেছি সেটাই সত্যি।
এর মাঝে রিদ ভাই এসে আমার দুই গালে আলতো করে হাত রেখে বললো,
– দেখো আরশি আমি বুঝতে পারছি যে খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্য দিয়ে তুমি সময় কাটাচ্ছে। তোমার উপর দিয়ে পর পর দুইটা ঝড় বয়ে যাওয়ায় নিজের মানসিক ভারসাম্যের ব্যঘাত ঘটছে। আর তুমি যা মনে মনে ভাবছো, তোমার মনে হচ্ছে সেগুলোই তোমার চোখের সামনে ভেষে উঠছে। এগুলো সবই তোমার দুঃশ্চিন্তার ফল। এখন তোমার এসব দুঃশ্চিতায় ভেঙে পরার সময় নয়। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়। যারা অন্যায় করেছে তারা অবশ্যই শাস্তি পাবে। তুমি এখন তোমার মাঝে নেই, তোমার মাইন্ড রিফ্রেশ এর প্রয়োজন। এই কয়েকদিনের মাঝে আমি সময় বের করে তোমার পছন্দের জায়গায়ই ঘুরতে যাবো। তোমাকে এমন বিষণ্ন একধম মানায় না। আমি আমার সেই আগের দুষ্ট হাসিখুশি আরশিকেই চাই। সব সময় হাশিখুশি থেকে আমাকেও ভালো রেখো।
বলেই আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলেন সে। আমি এখনো নিজের দেখাকে অবিশ্বাস করতে পারিনি। যা দেখেছি একটুও ভুল দেখিনি আমি।
কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক। আমি নিজে বিশ্বাস করি, নির্জনের ভিতর নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে। তা না হলে ওর চেহারা দেখায় ও আমাকে মে/রে ফেলতে চাইবে কেন?
গভির রাত, একপাশে কিছু রং পেন্সিল আর সামনে কিছু সাদা কাগজ নিয়ে বসে আছি। নির্জনের চেহারা টা এখনো চোখের সামনে ভাসছে। হাতের পেন্সিন টা ঘুরাচ্ছি আর চেহারা মনে করে একটু একটু করে আঁকছি। আজ সারা রাত জেগে হলেও স্কেচ টা কমপ্লিট করবো আমি।
—————-
– আমার বয়স যখন ২০ বছর ছিলো তখন নির্জনকে বাবা আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছিলো। ইন্টার পাশ করেচিলো তখন সে। বাবাকে একদিন অফিস শেষে বাসায় আসছিলো। তখন কিছু চিনতাই কারি ধরে তার থেকে সব কিছু নিয়ে গিয়েছিলো। গাড়িটা অব্দি নিয়ে গেলো। আমাদের ড্রাইভারটাও ওই ছিনতাই কারিদের দলের একজন ছিলো। এর পর ওদের সাথে তাকেও আর খুজে পাওয়া যায় নি। বাবাকে মে/রে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলো। আর ওই দিন নির্জন বাবাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।
ওখানেই তাদের পরিচয়। নির্জনের কেউ ছিলো না। এতিম সে, এর ওর কাজ করে ইন্টার অব্দি পড়েছে সে। এর পর নিজে চলার মতো সামর্থ ছিলো না। তাই বাবা তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে। নির্জন আমার সমবয়সি ছিলো, বাট কখনো তার সাথে বন্ধু সুলভ সম্পর্ক তৈরি হয় নি। কারণ সে একা থাকতো খুব গম্ভির। এখনের মতো নিজেকে লুকিয়ে রাখতো আগে থেকেই। বাবা চেয়েছিলো তার পর আমি তার বিজনেসের হাল ধরি। বাট আমার ওসবে কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো না। আমার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হয়ে মানুষদের সেবা করা।
ধিরে ধিরে নির্জনকেও বাবা নিজের ছেলের মতো দেখতে শুরু করলো। বাবা নিজেই তাকে ভার্সিটি ভর্তি করালো। তার পড়ািলেখা শেষ করালো। ধিরে ধিরে নির্জন বাবার সাথে ব্যবসায় জড়িত হয়। বাবাও এখন মনে করে তার দুইটা ছেলে। এক ছেলে ডাক্তার আরেক ছিলে বিজনেস করে। নির্জনও আমার বাবাকে এখন মাঝে মাঝে বাবা বলে ডাকে।
এক নাগারে কথা গুলো বলে গেলো রিদ ভাই। আমি চুপচাপ বসে শুনছিলাম। তারপর আগ্রহ নিয়ে বললাম,
– আচ্ছা সে সব সময় নিজের চেহারা লুকিয়ে রাখে কেন?
– এটা আমিও জানিনা, অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিছু বলেনি। এর পর আমি ভাবলাম হয়তো এটা তার একটা অভ্যাস।
আমি স্বাভাবিক ভাবে বললাম,
– কিন্তু আমার তো তাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না।
আমার কথায় একটু হাসলো রিদ ভাই। তারপর বললো,
– এটা তোমার মনের ভুল। প্রথম প্রথম এমন দেখছো তো, তাই তোমার এমনটা মনে হচ্ছে। পরে দেখবে সব মানিয়ে নিতে পারবে।
আমি কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম। এই মানুষটাকে আমি যাই বলি কিচ্ছু বিশ্বাস করবে না সে। তাই চুপচাপ উঠে গেলাম, রুম থেকে বের হতে হতে বললাম,
– পথের যেদিন পথ শেষ হয়ে যায়, বি-পথ সেদিন হাসে।
তেমনি করে কিছু বিপদ ঘড়ির কাটার ন্যায় একই পথে ফিরে আসে।
To be continue……