#অনুভূতিহীন,পর্ব ২২,২৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আরিশা আপুর ছেলে হলো গতকাল। সেই খুশিতে গ্রামের বাড়িতে একশ কেজি মিষ্টি পাঠিয়েছে দুলাভাই। আমিও গত কাল থেকেই আরিশা আপুর সাথেই হসপিটালেই ছিলাম। রিদ ভাইয়া খাবার নিয়ে এসেছিলো।
আরিশা আপুর সাথেই বসে আছি আমি। সেলাইন চলাকালিন অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে আরিশা আপু। আর আমি ব্যাস্ত আরিশা আপুর ছেলেকে নিয়ে। ছোট বেলা থেকেই বাচ্চা খুব পছন্দ আমার। বাচ্চা দেখলেই কোলে নিয়ে গাল ভর্তি চুমু দিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে। আরিশা আপুও ছিলো এমন। এই নিয়ে আমাদের দুই বোনের মাঝে ছোট বেলায় প্রায়ই ঝগড়া হতো। বাড়িতে কোনো মেহমান আসলে আর তাদের বাচ্চা থাকলে, আমার আর আরিশা আপুর মাঝে কাড়াকাড়ি চলতো।
এক সময় আরিশা আপু পরাজিত হয়ে দাত কিড়মিড় করে বলতো,
– এক সময় আমারও কিউট কিউট বেবি হবে দেখিস। তখন তোকে ধরতেও দিবো না, হুহ্,,,
ঝগড়ার সময় প্রতি উত্তরে আমি বলতাম,
– তোর একটা হলে আমার দুইটা কিউট বেবি হবে। আর তোর দুইটা হলে, আমার চার টা হবে। আর আমার গুলো হবে কিউট কিউট। আর তোর গুলো হবে সব উগান্ডার মতো।
এর মাঝে আমার দাদি আবার পোড়ন কাটতো,
– আজকাল কার ছেড়ি গুলা লাজ লজ্জার মাথা খাইছে। এই বয়সে বাচ্চা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে দিছে। আচ্ছা মেনে নিলাম তোগো ডজন ডজন বাচ্চা হইবো,,, কিন্তু বাচ্চা কেমনে হয় তা তোরে দুজন মিলে আমারে বুঝা।
তবে ছোট বেলায় আরিশা আপুকে ঝগড়ার সময় যেই অভিশাপ টা দিতাম তা পুরন হয় নি। কারণ অরিশা আপুর বেবি উগান্ডার মতো হওয়ার বিপরিতে কতো কিউট হয়েছে। ইচ্ছে করছে আরিশা আপুর সাথে এটা নিয়েও কাড়াকাড়ি শুরু করে দিই। কিন্তু এখন তো আর ছোট নেই।
ছোট বেবিটার হাত গুলো বার বার ছুয়ে দিচ্ছি আমি। কি সুন্দর ছোট ছোট দুইটা হাত। মাঝে মাঝে চুমুও দিচ্ছি ওই হাত গুলো তে।
এর মাঝে খেয়ালই করিনি দুলাভাই আর রিদ ভাইয়া কখন কেবিনে ঢুকে গেলো। কিছু ফ্রুটস হাতে এক পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে রিদ ভাই। আার তার পাশে দুলাভাই আমার কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। তা খেয়াল করে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে এক পাশে দাড়িয়ে গেলাম। দুলাভাই হেসে রিদ ভাইকে বললো,
– আরিশার মুখে অনেক কাহিনি শুনছি দুই বোনের। সেই হিসেবে এবার আমার শালিকাকে খুশি করার দায়িত্বটা নিয়ে নাও।
লজ্জায় মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো আমার। আমার টা নাহয় মানা যায় আমি মেয়ে মানুষ লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রিদ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি সে ফ্রুটস গুলো রেখে ওখান থেকে হাওয়া।
দুলাভাই দুষ্টুমি করে একটা কথা বললো। আর রিদ ভাই প্রতি উত্তরে কিছু বলবে তা না, লজ্জায় সেখান থেকেই কে/টে পরলো। ব্যাটা নিজেকে যতই রোমান্টিক প্রমান করতে চায়না কেন? বেচারা দিন শেষে আস্ত একটা নিরামিষ।
আরিশা আপুকে আজ নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। আমি আরিশা আপুর ছেলেকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছি। রিদ ভাই পাশে এসে বললো,
– এবার দিয়ে দাও। আমরা নাম রাখার দিন আবার যাবো৷ কিছু সময় অপেক্ষা করো এর পর নিজের বাচ্চা সামলাতেই বাচ্চার স্বাদ মিটে যাবে তোমার।
,
,
হসপিটাল থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতেই মামি বললেন ফ্রেশ হয়ে নিতে। তার মুখ ও কথা বার্তা কেমন গম্ভির মনে হচ্ছে আমার কাছে। কারণ টা আমার অজানা।
রুমে এসে কাপর চেন্জ করে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম আমি। হসপিটাল থেকে ফিরে আসায় গরম ও অস্বস্থি লাগছিলো খুব। ওরনা ফেলে শাওয়ার টা অন করে চোখ বন্ধ করে নিচে দাড়িয়ে রইলাম আমি। ভিজে ধিরে ধিরে ঠান্ডা হচ্ছে শরির টা।
তখনই হুট করে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো রিদ ভাই। পরনে একটা টাওয়াল ব্যাতিত আর কিছুই ছিলো না। তাকে দেখে ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম আমি। আমি কোমরে হাত রেখে বললাম,
– আপনি না একটু আগে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছেন, এখন আবার ঢুকলেন কেন?
আমার কথার কোনে উত্তর না দিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো সে। আমার দুই পাশে দুই হাত দেওয়ালে রেখে নিজের মাঝে বন্ধি করে বললো,
– নিজের বৌ এর সাথেই তো আছি। অন্য নারীর কাছে তো যাই নি। তাহলে প্রব্লেম কোথায়?
আমি তার দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে ছিলাম। তার কথা শেষ হয়েই বললাম,
– আমি কি বলেছি কোনো প্রব্লেম হয়েছে? আমি তো যাস্ট জিজ্ঞেস করলাম।
ওনি একটু মুচকি হেসে বললো,
– আচ্ছা প্রব্লেম যেহেতু নেই তাহলে আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি।
বলেই সে আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমার মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে আনতেই আমি হাত দিয়ে তার ঠোঁট চেপে ধরে মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বললাম,
– এখন না,,,
– কেন,,,
– আমার ইচ্ছা,, আর আপনি সুজুগ নিতে এসেছেন তাই না?
আমার কথায় মুহুর্তেই তিনি দেওয়ালে ভর থেকে সোজা হয়ে দাড়ালো। পাশে রাখা তার ধোয়া পেন্ট ও টি-শার্ট নিয়ে বললো,
– একটা ফোনের আওয়াজ শুনে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আর এখন এখানে এসেছি পেন্ট আর টি-শার্ট ধুয়ে রেখেছিলাম ওগুলো নিয়ে ছাদে শুকাতে দিবো তাই। জানতাম না তুমি ভেতরে ঢুকেছো। আর এমন অসময়ে আর বেজায়গায় সুজুগ নেওয়ার মতো লো মেন্টালিটির মানুষ আমি না। আমি যাস্ট তোমায় একটু বাজিয়ে দেখছিলাম, এর চেয়ে বেশি কিছু না।
বলেই ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সে। আমি ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইলাম। কিছুই মাথায় ঢুকছে না৷
রাতে খাওয়ার সময়ও খেয়াল করলাম মামির মুখ টা গম্ভির হয়ে আছে। আমি আবার অস্বস্থি বেশিক্ষন চেপে রাখতে পারি না। মামির পাশে গিয়ে করুন শুরে বললাম,
– কোনো বিষয়ে আমার উপর রাগ করেছো মামুনি?
মামি খেতে খেতে স্বাভাবিক গলায় বললো,
– আমি কারো উপর রাগ করিনি।
এর মাঝে মামা পোড়ন কেটে বললো,
– আমিও খেয়াল করছি এই দুই একদিন তোমার মুখটা বাংলা পাঁচ এর মতো করে রেখেছো। আরে বাবা কি হয়েছে না বললে আমরা বুঝবো কিবাবে?
তখনই মামি মামার দিকে চেয়ে বললো,
– আমার কি ইচ্ছে করে না, নাতি-নাতনির মুখ দেখতে? আমার কি ইচ্ছে করে না, আমার নাতি-নাতনি নিয়ে খেলতে? দুই দিন আগেই তো আমার ভাইয়ের আরেকটা মেয়ের কি সুন্দর ফুটফুটে একটা বাচ্চা হলো। আর এদিকে আমি ছেলে বিয়ে করিয়েছি আজ কতো দিন হলো, এখনো সু-খবরটা পর্যন্ত পেলাম না।
আচমকাই মামির এমন কথায় বিষম উঠে গেলো রিদ ভাইয়ের। মামা তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে পিঠে মেসেজ করে দিচ্ছে। কাজের মেয়েটাও দাত কেলিয়ে হাসছে। সব মিলিয়ে একটা লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে পরে গেলাম আমি। ব্যাপার টা সত্যিই লজ্জার। খুব লজ্জার।
,
,
এর মাঝে আরো দুই দিন কেটে গেলো। মানিক চাচাকে দিয়ে বড় বক্সে একটা জিনিস নিয়ে আসলাম আমি। ভেতরে কি আছে তা এখন বলা যাবে না৷ বিষয় টা সারপ্রাইজ।
সেই সন্ধা থেকে রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ করে রেখেছি। মামুনি তখন বসে বসে টিভি দেখছিলো। এর মাঝে রিদ ভাই বাসায় এলো। রুমের সামনে আসতেই দেখে দরজা ভেতর থেকে লক করা। কিছুটা সাইডে গিয়ে গ্লাস ভেদ করে দেখার চেষ্টা করছে ভেতরে কি চলছে। কিন্তু পর্দা টেনে রাখায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
দরজায় হাত দিয়ে দুইবার টোকা দিয়ে আমায় ডাক দিলো রিদ ভাই। আমি সোজাসুজি ভাবে বললাম, এখন রুমে আশা যাবে না।
ওনি একটু উচু গলায় বললো,
– আরে আমি ফ্রেশ হবো, দরজা খোল বলছি।
আমিও উচু গলায় জবাব দিলাম,
– খুলবো না, অন্য কোথাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি বাইরে জামা কাপর সব রেডি করে রেখেছি।
নিরাশ হয়ে মায়ের কাছে এসে বসলো রিদ। তারপর বললো,
– আরশি কি শুরু করেছে দেখেছো মা?
মা চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বললো,
– বাসায় কিসের একটা বড় বাক্স নিয়ে আসলো। এর পর সেই সন্ধা থেকেই রুমের ভেতর কি যেন করছে। কাউকে যেতে নিষেধ করেছে।
রাতে খাওয়ার সময় রুমের লাইট অফ করে দরজা লাগিয়ে খাবার টেবিলে এসে বসলাম। রিদ ভাইকে ফিসফিস করে বললাম,
– আমি না বলা অব্দি রুমে ঢুকবেন না।
এর পর খাওয়া শেষে রুমে ঢুকেই আবার দরজা লক করে দিলাম। আজ অদ্ভুত এক ইতিহাস রচনা করতে চলেছি আমি।
প্রায় এক ঘন্টা পর রিদ ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম, এবার রুমে আসতে পারেন।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় সারে এগারো টা বাজে। আর এই সময়ে রুমে ঢুকার অনুমতি মিললো। বুকে হাত দিয়ে একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো রিদ। না জানি মহারানী আজ কি কান্ড ঘটিয়েছে।
দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই একটা ঝাটকা খেলো রিদ। সারা রুম জুড়ে কাঁচা ফুলের সুবাস বিচরন করছে। আর রুমের মেইন লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করে রাখলো। সেই ডিম লাইটের লাল আলোয় বুঝা যাচ্ছে রুমটা নানান রকম ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আর ঠিক খাটের মাঝখানে হালকা সাজে বসে আছে আরশি।
রিদ ভাইয়া হেটে আমার সামনে এসে দাড়ালেন। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি খাটের মাঝখানে। আমার ধারণা এখন সে আমার পাশে এসে বসে থুতনিতে হাত রেখে আমার মুখটা একটু দেখে নিয়ে প্রশংসা করবে। আর তার জন্য অধিক আগ্রহ নিয়ে বসে আছি আমি।
কিন্তু আমার সব ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে রিদ ভাই বললো,
– বাহ্, শুনলাম ছোট বেলায় নাকি আরিশা’র সাথে বেবি নিয়ে ঝগরার সময়ও প্রতিযোগিতার কথা বলতে। তার একটা হলে তোমার দুইটা হবে। তার দুইটা হলে তোমার চার টা হবে। এখন তো দেখছি সত্যি সত্যি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার জনয় রেডি হয়ে গেছো।
বলেই হাসতে লাগলেন উনি। রাগে আমার দুই কান জুড়ে যেন আগুনের ধোয়া বের হচ্ছে। প্রতিযোগিতার কথা তো তাকে কখনো বলিনি। তাহলে সে কিভাবে জানলো?
আচ্ছা শুনছে ভালো কথা, তাই বলে কি এভাবে ইনসাল্ট করতে হবে? ধুর এক কথায় আমার সব ফিলিংস নষ্ট করে দিলো এই নিরামিষের বাচ্চা।
To be continue…..
#অনুভূতিহীন (পর্ব ২৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
সারা রুম খুজেও ওই দিনের আঁকা নির্জনের স্কেচ টা খুজে পাচ্ছি না। মাথা পুরাই হ্যাং হয়ে যাচ্ছে আমার। আর অন্য মানুষের পিকচার নিয়ে আমার মাঝেই বা কিসের এতো উত্তেজনা তা নিজেও বুঝতে পারছি না। তবে এতটুকু বুঝতে পারছি, ছবিটা আমার লাগবেই।
হুট করে মনে হলো ছবিটা একটা উপন্যাসের বইয়ের মাঝে রেখেছিলাম। তৎক্ষনাৎ গিয়ে বইটা খুলে দেখি ছবিটা এখনো সুরক্ষিত আছে। ছবিটা বাধিয়ে নিতে হবে। নাহলে কয়দিন পর রং ছড়িয়ে যাবে।
এর মাঝে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। মায়ের ফোন পেয়ে ছুটে বাসায় আসে রিদ। বুকের ভেতর ধুকধুক করছে৷ সারা শরির জুড়ে বিচরন করছে অস্থির উত্তেজনা। দেখে মা চুপচাপ বসে আছে সোফায়। আরশির কথা জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর দিচ্ছে না। একটু আগে ফোন দিয়ে বললো, আরশির কি যেন হয়েছে। তাইতো পাগলের মতো ছুটে এসেছে রিদ।
মায়ের এমন নিরবতা দেখে ছুটে রুমের দিকে হাটা ধরে সে। দরজা খোলাই ছিলো। রুমে ঢুকতেই চোখ পরলো বিছানায় পরে থাকা একটা রিপোর্টের উপর।
তা হাতে নিয়ে চোখ বুলাতেই স্তব্দ হয়ে যায় সে। উত্তেজিত সারা শরির মুহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে যেতে শুরু করে।
বেলকনির দিকে এগিয়ে দেখে আরশি ময়না পাখি দুটিকে কথা শিখাচ্ছে। কয়দিন আগে তার এক্সামের রেজাল্ট দিলো। এ+ পাওয়ার খুশিতে আরশি বায়না ধরলো তাকে নিয়ে সারা শহর ঘুরাতে হবে।
তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে ফেরার সময় চোখে পরে একটা মানুষ পাখি বিক্রি করছে। তখনি আরশি বায়না ধরে তার ময়না পাখি পোষার অনেক ইচ্ছে। তাখন দুইটা ময়না নিলো একসাথে। একটা ছেলে ময়না আরেকটা মেয়ে ময়না। তার উপমা অনুযায়ি ছেলে ময়না টা রিদ আর মেয়ে ময়না টা সে। একটা খাচার মাঝে দুই জনের ছোট্ট সংসার।
ময়না পাখি নিয়ে ব্যস্ত আরশি। হুট করে পেছন থেকে আরশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিদ। কোনো কথা বলছে না, একধম নিশ্চুপ হয়ে আছে।
আরশি তার দিকে ঘুরে বললো,
– কেমন দিলাম ধোকা টা?
– খুব বাজে,, আর একটু হলেই হার্টবিট বেরিয়ে আসছিলো।
রিদের কথায় মন খুলে হাসতে থাকে আরশি। রিদ পূনরায় আরশিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আলহামদুলিল্লাহ, আ’ম সো হ্যাপি। থ্যাংক ইউ সো মাচ মাই হার্ট।
আরশিকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতেই দেখে মা ও মিঠি মিঠি হাসছে। রিদ একটু অভিমান নিয়ে বললো,
– এমন একটা বিষয় নিয়ে আমার সাথে মজা করতে পারলে মা? জানো আমি কতোটা টেনশনে ছিলাম? আর প্র্যাগনেন্সির মতো একটা সিরিয়াস বিষয় তোমরা লুকিয়ে রেখেছিলে? নিজেরা নিজেরা কখন টেস্ট করালে, কখন কি করলে আমায় একটিবারও জানালে না?
রিদের কথায় মা হেসে বললো,
– এটাও তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিলো। তাই কেও কিছু বলিনি।
রিদ একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– তোমরা সবাই আমার ইমোশন নিয়ে মজা নিতে পছন্দ করো।
তার কথায় মা আর আরশি দুজনই হেসে উঠলো।
,
,
দুই দিন হয়নি খবর শুনেছে। এর মাঝেই বাসায় আরশির জন্য একজন পার্সনাল নার্স রেখে দিলো রিদ। আর বাসায় কাজের লোক আরো বাড়িয়ে নিলো। আরশি কতো বার বুঝালো যে সে এখনো স্বাবাবিক, এখন এসব কিছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
দিন যতই যাচ্ছিলো তার পাগলামি যেন ততোই বারছিলো। টাইমলি ফোন দিয়ে আমি খেয়েছি কি না, কি করছি এইসব নিয়ে ব্যাস্ত। প্রতি ঘন্টায় কম করে একবার ফোন দিতেই হবে তার।
ইদানিং অত্যাচারও বেড়েছে তার। আমার প্রিয় হলো ভাজাপোড়া, আর সে তা এখন আমার কাছেও আনতে দেয় না। ফল মুল দুধ ডিম এগুলোই এখন আমার নিত্য দিনের খাবার।
ওই দিন রাতে খেয়ে শুয়ে পরেছিলাম আমি। আমার পাশের ফ্রিচে ঢাকা এক গ্লাস দুধ পরে আছে।
যার জন্য সে আমায় টেনে বসি বললো ঘুমানোর আগে দুধ খেয়ে নিতে। কিন্তু আমি খাচ্ছিনা দেখে সে দুই আঙুল দিয়ে আমার গাল টিপে ধরে গ্লাস টা মুখের সামনে চেপে ধরে রাখলো। যতক্ষন তা শেষ হলো না ততোক্ষন ধরে রাখলো। ওটা ছিলো সব চেয়ে চরম লেভেলের একটা অত্যচার।
ও যখনই আমার সামনে আসতো তখনই কিছু ফ্রুটস কেটে নিয়ে আসলো। একদিন আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
– এতো খেলে তো আমি অল্প কয়দিনে মুটি হয়ে যাবো।
প্রতি উত্তরে সে বললো,
– মোটা হলেও কোনো প্রব্লেম নেই। এই সময়টায় তো আমার রং ঢং করার সময় না। আর কাউকে গিয়ে বলে বেড়াবো না যে, ভাই দেখেন এটা আমার বৌ। এখন তুমি কেমন তা দেখার বিষয় না। প্রয়োজন হলো তোমার শক্তির। হসপিটালে আমি কতো জনকে দেখেছি এই সময়টায় শক্তির অভাবে,,,,,
ওনি আর কিছু না বলেই থেমে গেলো। আমি একটু আগ্রহ নিয়ে বললাম, কি?
সে আমার মুখের সামনে আপেল ধরে বললো,
– তুমি বাচ্চা মেয়ে ওসব বুঝবে না। ওগুলো বড়দের বিষয়। তুমি চুপচাপ খেয়ে নাও।
,
,
শুধু সে পাগলামি করছে তা না। আমার শশুর রুদ্র চৌধুরী এর চেয়েও বেশি করছে। তার বংশে প্রথম নাতি/নাতনির আগমন। তার খুশির মাত্রাও যেন আকাশ ছোয়া। তার প্রথম নাতি/নাতনি যেই হবে, তাকে সে নিজস্ব হেলিকপ্টারে বাড়ি নিয়ে আসবে। যার জন্য কয়দিন আগে বড় একটা হেলিকপ্টার কিনেছে সে।
এই বাড়ির সবার পাগলামি দেখে আমার মাথা পুরাই হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। সবাই আমায় নিয়ে কি শুরু করেছে? যেমন বাবা তেমন তার ছেলে।
মাঝ রাতে চোখ পিট পিট তাকিয়ে দেখি আমার হাতের তালু পায়ের তালু মালিশ করে দিচ্ছে সে। আমি তৎক্ষনাৎ পা টেনে সরিয়ে নিয়ে বললাম,
– ছি ছি, কি করছেন আপনি।
সে দুই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারায় বলে,
– চুপ কোনো কথা না। ঘুমাও তুমি।
তবুও আমি নাছোর বান্দার মতো বললাম,
– এমন পাগলামি করেন কেন? সারা দিন যেমন করেন মনে হয় যেন দুনিয়াতে শুধু এক মাত্র আপনার বৌ এর ই বেবি হবে।
সে আমার হাত মালিস করে দিতে দিতে বললো,
– তুমি কি বুঝবে বাচ্চা মেয়ে? আমার বৌ এর ই তো বেবি হবে, তাই টেনশন টা আমার বেশি। তোমার বৌ এর হলে তুমি বুঝতে।
তার কথায় আমি ভ্যাবলার মতো হা করে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– এ্যা,,,, মেয়েদের বৌ হয় কিভাবে? ওদের তো হয় স্বামী।
সে নিজের বোকামি বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো। একটু হাসি পেলো আমার।
,
,
দিন যত যাচ্ছে শরিরটা ততো ভারি হতে লাগলো আরশি’র। রিদের গুরুত্বটাও বেড়ে গেছে আগের থেকে। আরশি আর রিদের মা বসে আছে সোফায়। টেনশনে এদিক ওদিন পায়চারি করছে রিদ।
রাত প্রায় ১ টা বাজে তখন। বাবার এখনো কোনো খবর নেই। ফোন দিলেও দেখে ফোন বন্ধ। রিদ সোফায় বসে মাকে বললো,
– বাবা কি কিছু বলেছিলো মা? যেমন, কোথাও যাবে বা আসতে দেরি হবে?
মায়ের মুখে টেনশনের ছাপ। সে বললো,
– না তেমন কিছু বলেনি। বললো, নির্জনকে অফিসে রেখে আজ সে তারাতারি ফিরে আসবে। কাল রাতে অনেক কিছুই বলেছিলো, যে আজ নিজে গিয়ে বাবুর জন্য খেলনা কিনে সারা ঘর ভরিয়ে রাখবে। কিন্তু এখন ১ টা বাজে এখনো কোনো খবর নেই।
চিন্তার ছাপ নিয়ে সবাই বসে আছে ঘরে। আর কিছুক্ষন পার হওয়ার পরই ফোন টা বেজে উঠলো তার। আন-নোন নাম্বার থেকে ফোন। রিদ ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে নির্জনের গলার আওয়াজ ভেসে আসে। রিদ উত্তেজিত হয়ে বললো,
– হ্যা নির্জন বাবা কোথায়? বাসায় ফিরেনি এখনো। ফোনটাও বন্ধ তার।
ওপাশ থেকে নির্জন বললো,
– বাবা তো কিছুক্ষন আগে গাড়ি এ/ক্সি/ডেন্ট করেছে। অবস্থা খুব খারাপ।
রিদ উত্তেজিত হয়ে বললো,
– কিভাবে হলো, আর হসপিটালে নিয়ে যাও নি?
নির্জন আবারও স্বাভাবিক ভাবে বললো,
– অবস্থা খুব খারাপ, আপনিও আসুন। আমি আপনাকে লোকেশন টেক্সট করে দিচ্ছি।
মা আর আরশি বার বার প্রশ্ন করলেও কথা ঘুরিয়ে নিলো রিদ। বললো, অফিসের এক কর্মচারি এ/ক্সি/ডেন্ট করেছে। বাবা ওখানেই গেছে।
রিদের কথায় কিছুটা টেনশন মুক্ত হলো তারা।
রিদ দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,
‘ এতো রাতে বাবা কোথায় এ/ক্সি/ডেন্ট করবে? আর এ/ক্সি/ডেন্ট করলেও নির্জন তো কখনো কারো হ্যাল্প চায় না। নিজেই সব সামলে নেয়। কিন্তু আজ এমন কি হলো, যে নিজে কিছু না করে, আমাকেই ডেকে নিয়ে যাচ্ছে ওখানে? যাই হোক, এখন এতো কিছু ভাবার সময় নেই। বাবাকে বাচাতে হবে।
To be continue……