#অনুভূতিহীন,পর্ব ৪,০৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
০৪
সকালে উঠে দেখি রিদ ভাই সোফায় বসে লেপটপে কি যেন করছে। আমার চোখে এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি। তাই দেরি না করে ওয়াশ রুমে গেলাম ফ্রেশ হতে।
একটু আগে মামি ডেকে গেছে নাস্তা করার জন্য। আমি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখলাম উনি এখনো বসে আছে ওইভাবে।
আমি ওর সামনে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– নাস্তা করবেন না?
কিন্তু আমার কথা যেন সে কানের এই পাশ দিয়ে নিয়ে ওই পাশ দিয়ে বের করে দিলো। আমার রাগ হলো প্রচুর। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো লাগে না আমার। আমি রাগে ওর থেকে লেপটপ টা নিয়ে নিলাম এক টানে।
– এই যে খাম্বা মহাশয়, আমার কথা কি আপনার কানে যায় না? এতো ভাব দেখান কেন আমার সাথে? একটু আগে মামি ডাকলো শুনতে পান নি।
সে আমার দিকে চেয়ে বললো,
– তুমি যাও আমি আসছি। লেপটপ টা দাও এখন।
– দেব একটা শর্তে।
সে আমার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বললো,
– কি শর্ত?
– আমার গালে একটা ছোট্ট আপ্পা দিতে হবে?
সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– তোমার কি মনে হয় এতো সহজেই,,,
এর মাঝে আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– এতো কিছু মনে হওয়ার প্রয়োজন নেই, আমার সাথে ভাব দেখানোর অপরাধে এটা আপনার শাস্তি।
– এতো ঠেকা পরেনি আমার।
বলেই উনি উঠে নিচে চলে গেলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঘুমের মাঝে লুকিয়ে চুমু খেতে দোষ নেই। আর সরাসরি দিতেই তার দোষ?
শিলা টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দিচ্ছে। আমরা সবাই একসাথে বসলাম নাস্তা করতে। মামা চলে যাবে তার অফিসে আর কিছুক্ষন পর রিদ ভাই চলে যাবে হসপিটালে। এর পর বাসায় আমি আর মামি। শিলাও থাকবে।
তখন সকাল ৮ টা। রুমে এসে দেখি রিদ ভাই চুপচাপ বসে আছে। তার সাথে কথা বলায় বাহনা খুজতে লাগলাম। কিন্তু খুজে পাচ্ছি না।
হুট করেই সে আমায় বললো,
– এক কাপ চা এনে দাও তো আরশি।
আমি একটু ভ্রু কুচকে তাকালাম তার দিকে।
– একটু আগে না চা খেলেন?
– এখন আবার খাবো প্রব্লেম কি? কোথাও কি লেখা আছে, দুই বার চা খাওয়া অপরাধ?
– আচ্ছা আনছি।
বলেই রুম থেকে বের হওয়ার জন্য হাটা ধরলাম। ওনি এতো লেপটপ নিয়ে কি করছে তা নিয়ে রিতিমত চিন্তা হচ্ছে আমার। কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে না তো আবার? দরজায় আসতেই উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ও আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকাতেই আমি চলে গেলাম।
আমি দুই কাপ চা বানালাম। দুইজন মিলে একসাথে খাবো আর আড্ডা দিবো। কিন্তু আমার ভাবনাকে জলে ফেলে তিনি বললো,
– চায়ে চিনি বেশি হয়েছে। আর বেশি চিনি খেলে ডায়বেটিস হয়। যাও এটা চেন্জ করে নিয়ে আসো।
একটু রাগ হলো আমার। তাও জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে চলে গেলাম আবার। এবার একেবারে ওনার মতো পার্ফেক্ট করে বানিয়ে নিলাম।
ওর কাছে এসে চা এগিয়ে দিয়ে বললাম,
এবার একধম ঠিকঠাক আছে।
এবার উনি আমার দিকে চেয়ে দাত কেলিয়ে বললো,
– একটু আগেই তো চা খেলাম, এখন ইচ্ছে করছে না। এক কাপ কফি এনে দিবে?
এবার রাগে নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছে করছে আমার। কেন যে কথা বলায় বাহানা খুজতে ওর সামনে ঘুর ঘুর করতে গেলাম।
নিজেকে নিজে হাজার বার গালি দিতে দিতে আবার কিচেনের দিকে গেলাম। এক কাপ কফি বানিয়ে তার কাছে এসে এবার তাকে কিছু বলার সুজুগ না দিয়ে আমি বলে দিলাম,
– এবার এটা না খেলে একধম মাথার উপর ঢেলে দিবো।
ভেবেছিলাম আমার কথায় ভয় পেয়ে এবার কাপ হাতে তুলে নিবে। কিন্তু তিনি তা না করে লেপটপ রেখে উঠে দাড়িয়ে বললো,
– আমি তো অলরেডি তোমার টা খেয়ে নিয়েছি।
এবার রাগে আমি তাকে বললাম,
– আপনি কি সত্যিই কফি খাবেন নাকি আমার সাথে মজা নিচ্ছেন? আপনাকে এখন আমি,,,
ওনি আমার দিকে ফিরে বললো,
– কি, আমাকে কি?
আমি একটু ঘাবড়ে গেলেও সাহস নিয়ে তাকে বললাম,
– মাথায় তুলে আছাড় দিতে ইচ্ছে করছে।
তিনি আর কিছু বললো না, আমার দিকে হালকা এগিয়ে আসতেই আমি দুই পা পিছিয়ে যাই। পেছনে একটা কাবার্ড রাখা। ওটার সাথে পিঠ ঠেকে গেলো আমার। তিনি আমার দুই পাশে দুই হাত রাখতেই চোক বন্ধ করে নিলাম আমি। কি করতে চাইছে সে? আর এখন আমার কি প্রতিক্রিয়া করা উচিৎ তাও ভেবে পাচ্ছি না। মাথা শুন্য হয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রিলাম পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টায়।
আমায় একটু তার দিকে সরিয়ে পেছনের কাবার্ড থেকে একটা টাওয়া নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। বুকে হাত দিয়ে একটা বড় শ্বাস নিলাম আমি। আরেকটু হলেই দম টা বেড়িয়ে আসতো। লোকটা আসলেই সুবিধার না। ভেবেছিলাম এই বাড়িতে যেই কয়দিন আছি, তাকে জ্বালিয়ে মারবো। আর হলো কি? সে নিজেই আমাকে গড়াগড়ি খাওয়াচ্ছে।
মামা অনেক আগেই চলে গেছে। রিদ ভাইয়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে রেডি হচ্ছিলো। দরজার পাশ থেকে আমি তার দিকে চেয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। মানুষ টাকে এতো কিছুক্ষয় ভয় লাগে, আবার কিছুক্ষন বিরক্ত লাগে, আবার কিছুক্ষন মনে হয় জ্বালিয়ে মারি, আবার এখন ভালো লাগছে। যাই হোক স্বামীর দিকেই তো তাকিয়ে আছি দোষ কোথায়। আমি এখন বিবাহিত এটা ভাবতেই মাঝে মাঝে আমার নিজেরই বিশ্বাস হতে চায় না। তবে অনুভুতি গুলো পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
সে চলে যাওয়ার সময় মামি ডেকে বললো,
– বিকেলে সময় নিয়ে তারাতারি আসবি। আরশিকে নিয়ে শপিং এ যেতে হবে। এখন থেকে ওর সব দায়িত্ব তো তোরই। আর এই কয়েকদিন ওর পড়ার জন্যও তো জামা লাগবে।
– আচ্ছা মা আমি আসি।
বলেই বেড়িয়ে গেল রিদ ভাই। আমার মনে হলো সে বিরক্ত বোধ করেছে। যাই হোক ওসব না ভেবে মামিকে বললাম,
– আচ্ছা মামি, সে বিয়ে করেছে, আর দুই দিন সময় বের করতে পারেনি?
আমার কথায় মামি কোনো উত্তর দিলো না। শুধু মুখ টিপে হেসে চলে গেলো ভেতরে।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম, হাসির মতো কি বললাম আমি? আমি তো শুধু জানতে চেয়েছি, আজব।
,
,
সন্ধায় বাড়ি ফিরলো রিদ। গাড়ির শব্দ শুনতেই আমি বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। দেখি সে গাড়ি রেখে ভেতরে আসলো।
রুমে এসে সোফায় বসে আমায় উদ্দেশ্য করে বললো,
– এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিবে আরশি?
– সকালের মতো করবেন না তো আবার?
– মানুষ কি সব সময় ফানি মুডে থাকে?
– বাহ্ আপনি ফানি মুডেও থাকতে পারেন? জানতাম না তো। সব সময় তো গম্ভির হয়ে থাকেন।
রিদ ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বললো,
– আমায় ভয় পাও না?
আমি একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
– আরশি কাউকে ভয় পায় না।
– সাহসি মেয়ে?
– বলতে পারেন।
– আচ্ছা দেখা যাবে।
সন্ধার পর আমরা বের হলাম। আজ নিজের স্বামীর সাথে শপিং করতে যাচ্ছি ভাবতেই কেমন অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে।
তিনি গাড়ি নিতে গেলেই আমি বললাম,
– গাড়ি কেন?
– তাহলে কি আমার কাধে করে যাবে?
– নিতে পারবেন? আচ্ছা থাক লাগবে না, রিক্সায় যাব চলুন। রাতের আকাশের নিচে রিক্সায় করে চড়ায় অনুভুতিই অন্যরকম। চড়েছেন কখনো?
– হুম অনেক, তবে আমার কাছে তেমন একটা গভির অনুভুতি কাজ করেনি।
আমি বিড়বিড় করে বললাম,
– অনুভূতিহীন মানুষের আবার গভির অনুভূতি, হুহ্।
ওনি ভ্রু-কুচকে আমার দিকে চেয়ে বললো,
– কিছু বললে?
আমি একটু হেসে বললাম,
– না কিছু বলিনি, কখনো গভির অনুভূতি পান নি তাই তো? আজ পাবেন চলুন।
ওনি আর কথা বাড়ালেন না, চুপচাপ আমাকে নিয়ে হাটা শুরু করলো।
সে একটা রিক্সা ডেকে উঠে বসলো। আমিও পাশে উঠে বসলাম। রিক্সার সিট এতোটা বড় না। তবুও আমাদের মাঝখানে দুরুত্ব রয়েছে অনেক। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন, আমার সাথে তার শরির লাগলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে তার। মানুষটার দিকে যতবারই তাকাই ততোবারই অবাক হই। হুট করে খুব কাছে চলে আসে আবার কিছু সময় তার হাব ভাব দেখলে মনে হয় জীবনে মেয়ে মানুষ চোখেও দেখেনি। নিজেকে যতটা সাধু প্রমান করতে চায়, ততোটাও সাধু নয়। তা এই দুই দিনে ভালোই বুঝতে পেরেছি আমি।
ব্যাটা বৌ নিয়ে রিক্সায় উটেছিস, এতো ঢং করার কি আছে?
আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আগে কখনো মেয়ে নিয়ে রিক্সায় উঠেন নি?
তার সোজা উত্তর।
– আসতাগফিরুল্লাহ্ তওবা তওবা,আমাকে তোমার ওই টাইপের ছেলে মনে হয়? পড়াশুনা করেই কুল পেতাম না এসব আলগা পিরিত করার সময় কই?
খোলা আকাশের নিচে চাঁদের কিরণ ছড়িয়ে পরেছে চার দিকে। এর মাঝে নির্জন রাস্তায় রিক্সায় করে একটা ক্যাপল যাচ্ছে। অনুভুতিটাই অন্য রকম। আমাকে কেন যানি ইচ্ছে করছে মাঝখানের দুরুত্বটা দুর করে হাত এক হাত জরিয়ে কাধে মাথা রাখতে। আচ্ছা, রাখলে কি খুব বেশি অপরাধ হয়ে যাবে? সে কি রেগে যাবে, নাকি লজ্জা পাবে? আচ্ছা ছেলেদের লজ্জা পাওয়া মুখ দেখতে কেমন হয়?
জড়তা কাটিয়ে একটু তার দিকে ঘেষে বসার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে আরেকটু দুরে সরে গেল। একটু বিরক্ত লাগলো আমার। রাগও হলো প্রচুর। এবার ইচ্ছে করেই ওর গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসলাম। হুট করে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে আমার। ভালো লাগায় আসলে সময় লাগে না। একটা মুহুর্তই যথেষ্ট। এটা আগে বিশ্বাস হতো না আমার। ভাবতাম হুটহাট একজনকে কিভাবে ভালো লাগবে? এটাও কি সম্ভব?
কিন্তু তাকে দেখে তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম। তাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো,
– আপনাকে আমার ভালো লাগে।
হটাৎ ভাবনার ঘোর কাটতেই দেখি সে পাশে নেই। রাস্তায় পড়ে আছে পা ধরে। আমার গা ঘেষে বসা থেকে সরতে গিয়েই টুপ করে নিচে পরে গেলো সে। হাসি পাচ্ছে খুব আমার। অদ্ভুত এই মুহুর্তটা ভিডিও করে রেখে দিতে ইচ্ছে করছে। ভবিষ্যতে কাজে দেবে।
আমার খুব হাসি পাচ্ছে আজ। কারণ রিদ ভাইয়ের মুখটা একেবারে দেখার মতো হয়েছিলো লজ্জায়।
To be continue……
#অনুভূতিহীন (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আমি রিক্সা থেকে নেমে হাসতে লাগলাম। আর সে মুখটা গম্ভির করে বসে আছে এখনো। উঠে দাড়াতে পারছে না। হয়তো পায়ে চোট লেগেছে। ওনার চোট লাগায় আমার খারাপ লাগলেও আমি সময়ের সৎ ব্যবহার করার সুজুগ টা কখনো ছারি না। এখন নিশ্চই বাড়ি ফিরে যাবে। আর একা একা তো মোটেও যেতে পারবে না।
সো সে না চাইলেও আমার হেল্প লাগবে তার। আর আশে পাশেও তেমন মানুষ চোখে পরছে না। সো আমার হেল্প চাইতে সে বাধ্য।
পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেনি রিক্সা চালক চাচাও। হয়তো সে নিজের দোষ ভোবে ভয় পেয়েছে তাই তো আমি ইশারা দেওয়ার সাথে সাথেই চলে গেলো সেখান থেকে।
এবার কোথায় যাবে আমার জামাই টা। এখন আমার হেল্প ছারা তুমি শুন্য। যতই দুড়ে থাকতে চেয়েছো, এখন তার চেয়েও বেশি কাছে আসতে হবে তোমায়।
যখনই আমি রিদ ভাইয়াকে তোলার জন্য হাত বাড়ালাম তখনই একটা বাইক এসে হুট করে থামে আমাদের সামনে। বাইকে দুইটা ছেলে।
আরে এটা তো ফাহিম ভাই। রিদ ভাইয়ের ফ্রেন্ড।
রিদ ভাইয়ের কথায় যা বুঝলাম, সামনে বাইক চালাচ্ছে ওটা ফাহিম ভাইয়ের ছোট ভাই।
হুট করে এমন সময় ফাহিম ভাইকে দেখে খুব রাগ হলো আমার। হুট করে কোথায় থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের রোমান্টিক টাইম টা নষ্ট করে দিলো। রাগে একটার মাথার সাথে আরেকটার মাথা পিটাতে ইচ্ছে করছে আমার।
– কি রে ব্যাটা, এতো জায়গা থাকতে তুই রাস্তার মাঝে পা ধরে বসে রইলি কেন?
ফাহিম ভাইয়ের কথায় রিদ ভাই রেগে বললো,
– আগে তো আমায় তুলবি নাকি?
রিদ ভাইয়ের কথায় হাত বাড়ায় ফাহিম ভাই। ফাহিম ভাইয়ের হাত ধরে ভর করে উঠে দাড়ায় সে। এই মুহুর্তে আমার রাগ হলো খুব। কোথায় ফাহিম ভাইয়ের জায়গায় এখন আমি থাকতাম। আর সারা রাস্তা সে আমায় ধরে ধরে বাসায় যেতো। কিছুই হলো না ধেৎ।
– তোর ভাবি কে নিয়ে হাটতে বের হয়েছিলাম। হুট করে পা মচকে পরে যাই, আর এর পরই তুই আসলি। থ্যাংক্স রে দোস্ত। এবার আমায় কষ্ট করে বাড়ি অব্দি পৌছে দে।
রিদ ভাইয়ের এমন ডাহা মিথ্যা কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি। নিরামিশ বেডা এখন নিজেকে রোমান্টিক প্রমান করতে চাইছে। শপিং করতে বের হয়েছে তাও আবার মায়ের চাপে পড়ে। আর এখন বলছে আমায় নিয়ে রাতে হাটতে বের হয়েছে।
এর মাঝেই ফাহিম ভাইয়া বললো,
– আচ্ছা রিদ এক কাজ কর, তুই নাঈমের পেছনে উঠে বস। সে তোকে বাড়ি পৌছে দিবে। আর ভাবিকে আমি নিয়ে আসছি।
রিদ ভাই একটু ভেবে বললো,
– আরশি কেন তোর সাথে আলাদা যাবে?
ফাহিম ভাই একটু হাসলো। তার পর বললো,
– আচ্ছা তাহলে ভাবি আপনি নাঈমের সাথে বাড়ি চলে যান, আমি রিদকে নিয়ে আসছি।
আমিও যেন একটা সুজুগ পেলাম। আগেই বলেছি আমি সুজুগের সৎ ব্যবহার ছারতে চাইনা। আমি চট করে বললাম,
– আইডিয়া টা মন্দ না ভাইয়া। আমি বরং চলে যাচ্ছি আপনি ওকে নিয়ে আসুন।
এর মাঝেই রিদ ভাইয়াও চট করে উত্তর দিলো,
– একধম না,,,
আমি ভ্রু-কুচকে বললাম,
– কেন?
ওনি আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে বললো,
– আমি বলছি তাই।
এখন আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে আমাকে নিয়ে কত জেলাস সে।
– এই ফাহিম তুই একটা গাড়ি ডাকতো ভাই, সবাই এক সাথেই যাবো।
ফাহিম ভাইয়ার কাধে ভর করে বাসায় ঢুকলো রিদ ভাই। তখনই মামি ভুত দেখার মতো চমকে এগিয়ে আসে আমাদের দিকে। অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে,
– কিরে কি হয়েছে তোর? এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো?
ফাহিম ভাইয়া বললো,
– না আন্টি এক্সিডেন্ট হয় নি, হাটার সময় একটু পা মচকে গেছে।
এর পর রিদ ভাইয়াকে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো ফাহিম ভাই। আমি গিয়ে তার পাশে বসতেই সে বললো,
– ওয়াড্রবের ভিতর একটা বক্স আছে ওই বক্সে একটা মলম আছে, একটু পায়ে মালিশ করে দাও তো আরশি।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো উঠে মলম এনে তার পায়ে আস্তে আস্তে মালিশ করে দিচ্ছিলাম।
ফাহিম ভাইয়া তাকে আধ সোয়া করে বসিয়ে তার পাশে বসলো।
রিদ ভাই ফাহিম ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,
– তো দুই ভাই কোথায় থেকে আসছিলি?
হটাৎ ই ফাহিম মাথা নিচু করে ফেললো। একটা লজ্জা ভাব প্রকাশ পেলো তার মাঝে। এর পর আমার দিকে আড় চোখে চেয়ে রিদ ভাইকে বললো,
– তোকে একটা সু-খবর জানানো হয় নি।
– কি?
– বাবা আমার আর আদিবার সম্পর্ক টা মেনে নিয়েছে। হয়তো দুই এক দিনের মাঝেই আদিবাকে দেখতে যাবে। এর পর সব ঠিকঠাক থাকলে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলবো।
হুট করে রিদ ভাই রেগে বললো,
– তুই এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হ।
– আরে ভাই রাগ করছিস কেন,,
– তো কি করবো? তোকে মাথায় তুলে নাচবো? এতোকিছু হয়ে গেছে, অথচ আমায় জানালি না তুই। তোর সাথে আমার এই ফ্রেন্ডশিপ?
– আচ্ছা আমার সাথে ঘটে গেছে, আর তা আমি তোর সাথে শেয়ার করিনি। এমন টা কি হয়েছে কখনো? আমার সব কিছুই তোর সাথে শেয়ার করি। আর এটা করতে পারিনি, কারণ বাবা মত জানালো আজ সন্ধায়। হুটহাট, তোকে জানানোর সময় পেলাম কই? তোকে এখন সবার আগে জানালাম, আর তুই রাগ দেখাচ্ছিস?
রিদ উৎসাহ নিয়ে বললো,
– আর আদিবার ফ্যামিলি?
– সে বললো, তার ফ্যামিলিকেও সে রাজি করিয়েছে। এবার বাকিটা উপর ওয়ালার হাতে। দোয়া করিস ভাই। আচ্ছা আমি এখন গেলাম, বাসায় পৌছে তোকে ফোন দিবো।
– খেয়ে যাবি না?
– না রে ভাই, আজ সম্ভব না। রাত হয়েছে, বাসায় মা অপেক্ষা করছে। আজ আসি।
– আচ্ছা শুন, নিরব কোথায় রে? ওইদিন বিয়ের পর যে হাওয়া হলো আর খবর নেই।
– আর বলিস না ভাই, সালা এখন দেবদাস হয়ে আছে।
– কেন ছ্যাকা ট্যাকা খাইছে নাকি?
– ওরোকমই,,,,
– কাহিনি কি বলতো,
– তুই তো জানতি নিরব গত এক বছর ধরে ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করতো।
– হুম, ওদের না এই কয়েক দিনের মাঝে দেখা করার কথা?
ফাহিম একটা দির্ঘশ্বাস নহয়ে বললো,
– আর বলিস না ভাই, ওই আইডির মালিক ছিলো এক বিচি ওয়ালা আপু।
– মানে?
– আমাদের ফ্রেন্ড সাগর আছে না? গত বছর বিদেশ গেলো। ওই সাগরই ফেইক আইডি দিয়ে নিরবের সাথে বছর খানেক প্রেম করলো। এখন দুই দিন আগে নিরব ধরে ফেললো যে এটা সাগর, এর পর আর কি? বেচারা নিরব দেবদাস হয়ে বাসায় বসে আছে।
ফাহিম ভাইয়ের কথা আমি না হেসে আর থাকতে পারলাম না। ফাহিম ভাইও হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মামি অনেক জোরাজুড়ি করলো খেয়ে যেতে কিন্তু চলে গেলো সে।
কিছুক্ষন পর আমি খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রিদ ভাইয়ার সামনে এসে বসলাম।
– হা করেন?
– কেন আমার হাত নেই?
– সব সময় ত্যারামি করেন কেন? আমি খাইয়ে দিলে প্রব্লেম কোথায়?
– তুমি কি ইনডিরেক্টলি আমায় ত্যারা বললা?
– কথার মাঝে এতো প্যাচ ধরেন কেন? কথার পিঠে কথা বুঝেন না?
– তো মেয়েদের হাতে আমি কেন খেতে যাবো?
– কারণ আমি এখন আপনার স্ত্রী।
কথাটা বলতেই কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভুতি তৈরি হলো আমার। ওনি আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলেন।
রাত তখন প্রায় এগারো টা। সে এখনো বিছানায় আধসোয়া হয়ে বসে আছে। পা টা ফুলে আছে, হয়তো ব্যাথাও করছে প্রচুর। আমি তার পাশে গিয়ে বললাম,
– আজকে কিভাবে সোফায় ঘুমাবেন?
– আজ মনে হয় আর ঘুম হবে না পায়ের ব্যাথায়। তুমি এক কাজ করো, ঘুমিয়ে পড়ো। ট্রাস্ট মি. আমার সাথে তোমার স্পর্শও লাগবে না।
– আপনি ঘুমাবেন না?
– এক কাজ করো, ওখান থেকে হলুদ কালারের উপন্যাসের বই টা এনে দাও। ওটা একনো পড়া হয়নি। রাত টা সুন্দরে পার করা যাবে।
আমি চুপচাপ গিয়ে দুইটা উপন্যাসের বই নিয়ে এলাম। আমিও তার সাথে উপন্যাস পড়বো। দুজন মিলে এক সাথে কিছু করার অনুভুতিটাই অন্য রকম।
সে চট করেই আমার হাত থেকে দুইটা বই ই নিয়ে নিলো। আমি ভ্রু-কুচকে বললাম,
– একটা আমায় দিন, আমিও আপনার সাথে পড়বো।
– পড়বে ভালো কথা, প্রেমাতাল ছারা বাকি গুলো পড়ো। ওখানে একটা রুপকথার গল্পের বই আছে। তুমি বরং রুপ কথার গল্প পড়ো। ওগুলোই তোমার জন্য ঠিক আছে। এসব রোমান্টিক গল্প তোমার মতো পিচ্চির জন্য প্রযোজ্য নয়।
– দেখেন আমি মোটেও পিচ্চি না। আমি রোমান্টিক গল্পই গড়বো।
– আমি বলছি না, পড়বে না তুমি।
– আচ্ছা পড়বো না। তবে একটা শর্ত আছে।
– আবার কি শর্ত?
– শর্ত নয়, অপশন,,
– কি?
– হয়তো আমি এই বই পড়বো, নয়তো আপনি আমাকে একটা চুমু দিতে হবে।
রিদ ভাই একটু ভ্রু-কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– বয়স কতো তোমার?
আমার ঝটপট উত্তর,
– ১৭ ক্রস করে ১৮ তে পা দিয়েছি। আর কয়েক মাস পরেই আমি এডাল্ট।
আমার কথায় তিনি হু হু করে হেসে দিলো।
– এডাল্ট হতে পারলে তখন এভাবে আপ্পা চাইতে এসো। তোমার এখনো হর্লিক্স খাওয়ার বয়স, চুম্মা খাওয়ার না।
বলেই তিনি হাসতে হাসতে উপন্যাসের বই খুললেন। আমি হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বুঝে উঠতে পারছি না, উনি কি কি আমায় এতোটাই বাচ্চা মনে করে?
To be continue…..