#অনুভূতিহীন,পর্ব ৬,০৭
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
০৬
এতো মানুষের ভিড়ের মাঝে খেয়াল করলাম দুর থেকে দুটু ভয়ঙ্ক চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে আমার।
রিদ ভাইয়া আমায় এক হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে ভিড় পার হচ্ছেন। আমি চুপচাপ তার সাথে হাটছি। আর চার দিকে তাকাতে লাগলাম। আমার দৃষ্টি ওই ভয়ঙ্কর চোখ দুটি খুজতে ব্যস্ত। সে এখানেও চলে এসেছি ভাবতেই হৃদপিন্ড টা জোড়ে জোড়ে লাফাতে লাগলো আমার। কিন্তু হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলো সে? এতো মানুষের ভিড়ে তাকে দৃষ্টি দিয়ে খুজে বের করাটাও মুশকিল।
এতো মানুষের মাঝে আমার গায়ে অন্যদের ধাক্কা লাগছে দেখে রিদ ভাই হুট করেই এক হাত দিয়ে আমায় নিজের সাথে চেপে ধরলো। যেন আর কারো সাথে ধাক্কা না লাগে আমার। এতো মানুষের সামনে বিষয় টা লজ্জা জনক মনে হলো আমার কাছে। তাই চোক্ষু যুগল নিচের দিকে স্থির রেখে হাটতে লাগলাম।
আজ রাস্তায় অনেক জ্যাম। মানুষেরও ভির বেশি। সে ভির থেকে বেড়িয়েই আমায় ছেড়ে দিলো। তার পর টিসু বের করে কপালের ঘাম মুছে নিলো। সাথে আরেকটা টিসু নিয়ে আমার ঘামও মুছে দিতে লাগলো। আমি এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি জানি সে আমায় ভালোবাসে৷ কিন্তু প্রকাশ করে না। তাই বলে তার এতো ভালোবাসার জন্য মোটেও আনন্দ লাগছে না আমার। ভয় হচ্ছে খুব। তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। এই পাঁচ ছয় দিনে খুব আপন হয়ে গেছে মানুষ টা।
আমার দৃষ্টি এখনো চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই বুঝি আসিফ চলে আসবে এখানে। রিদ ভাইয়াকে মারবে খুব। মুখ দিয়ে র*ক্ত ঝড়ে রিদ ভাইয়া লুটিয়ে পরবে মাটিতে। আমি কাঁন্না করে দিবো। তার কাছে আকুতি মিনতি করবো রিদ ভাইয়াকে ছেরে দিতে। আমার এমন পাগলের মতো কাঁন্না দেখে চার পাশে মানুষের ভির জমে যাবে। আর রিদ ভাইয়া রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকবে মাটিতে।
কেন যে এসব আজে-বাজে চিন্তা আমার মাথায় ঘুরছে তা আমি নিজেও জানিনা। তবে ভয় হচ্ছে খুব। চার দিকে দৃষ্টি মেলেও ওই ভয়ঙ্কর চাহোনির চোখ দেখতে পাইনি আমি।
হুট করে রিদ ভাইয়ার কথায় আমার ভাবনার জগতের ইতি ঘটলো। আামার দিকে সে অপরাধী চোখে চেয়ে বললো,
– সরি, তোমাকে এভাবে টার্চ করার জন্য। আমি ইচ্ছে করে করিনি। ভিড়ের মাঝে মানুষদের সাথে তোমার ধাক্কা লাগছিলো এটা আমার সহ্য হচ্ছিলো না। তাই নিজের সাথে ধরে ভিড় পার করলাম তোমায়। রাগ করো না প্লিজ। আ’ম রিয়েলি সরি।
ওনি এক প্রকার কান ধরেই কথাটা বললেন। মনে হচ্ছে খুব অপরাধ করে ফেলেছন আমায় এভাবে ধরে। আমার এখন তাকে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে, ‘নিজের স্ত্রী’কেই তো টার্চ করেছেন। এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে কেন?’
কিন্তু আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। সব কিছু যেন কেমন অস্থির লাগছে আমার করলো সেই ভয়ঙ্কর চাহোনির উপর দৃষ্টি পড়ার পর থেকেই। আমি ঘামতে লাগলাম।
হয়তো তিনিও বুঝতে পারছেন আমার নার্ভাস ফিল হচ্ছে। হয়তো কারণ টা জানেনা। তবে এটা বুঝতে পারছে যে, আমার খুব অস্থি হচ্ছে।
আমাকে নিয়ে আরেকটু হেটেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো সে। আর দুজনের জন্যই কোল্ড ড্রিংক্স এর অর্ডার দিলো। শরির টা একটু ঠান্ডা হবে এতে।
ফাহিম ভাইয়ার বিয়ে। কালকে গায়ে হলুদ আর পরশু বিয়ে। ওখানে যাওয়ার জন্যই শপিং করতে এলাম দুই জন। গত কাল ভাইয়ার বিয়ের কেনাকাটা হয়ে গেছে। রিদ ভাইয়া তাদের সাথে গিয়েছিলো, আমি যাইনি। আর আজ আমাকে নিয়ে বের হলো। আমাদের আরো আগে আশার কথা ছিলো, কিন্তু তার পা মচকে যাওয়ার পর দুই দিন আর আশা হয়নি।
শপিং মলে ঢুকতেই একটা মেয়ে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো। রিদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাস্যজ্জল মুখে বললো,
– হাই রিদ কেমন আছো?
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?
– হুম ভালো,
আমি একটু অবাক হলাম তাদের কথা শুনে। মেয়েটা বয়সে রিদ ভাইয়ের চেয়ে ছোটই হবে। আর সে রিদ ভাইয়াকে তুমি করে বলছে। আর রিদ ভাইয়া তুমি বলার বিপরীতে আপনি করে বলছে। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে আমার। তবে তাদের এমন হেসে হেসে কথা বলার ধরণ দেখে প্রচুর রাগ হচ্ছে আমার।
– হুম, আমার আপাততো তেমন একটা ব্যস্ততা নেই। তোমরা চাইলে তোমাদের হেল্প করতে পারি সমস্যা নেই।
এবার আমার আরো রাগ হলো। চিনিনা জানিনা, আমাদের মাঝে আসছে কাবাবের হাড্ডি হতে।
রিদ ভাইয়া কিছু বললো না, শুধু বললো,
– আপনার কষ্ট হবে না?
– আরে না, কি বলো। তোমার সাথে থাকলে সময়টা তো আরো ইনজয়ে কাটবে। কষ্ট হতে যাবে কেন।
প্রায় দুই ঘন্টা আরশির পেছন পেছনে ঘুরলো রিদ। এখন প্রায় ক্লান্ত সে। আরশির এটা পছন্দ হলে ওটা হয় না, আবার এটা এদিকটা ঠিক থাকলে ওদিক টা তার পছন্দ হয় না। এভাবে একটার পর একটা ঘুরতেই থাকে।
এজন্যই বাবা কখনো মাকে নিয়ে শপিং এ আসতে চায় না। আগে বুঝতো না সে। কিন্তু আজ মানতে বাধ্য যে, মহিলাদের সাথে শপিংএ আসা মানে স্ব-ইচ্ছায় নিজের পা দুটু গাড়ির পেছনে একটা দড়ি দিয়ে বেধে দেওয়া। এর পর গাড়ি যেদিকে ছুটবে তাকেও টেনে হিছড়ে পেছন পেছন নিয়ে যাবে। ভাবতেই একটা দির্ঘশ্বাস ছারলো রিদ।
অনেক কষ্টে ম্যাচিং করে চয়েস করতে সক্ষম হলাম আমি। কিন্তু তাতে ঘোর বিরোধিতা আমাদের সাথে থাকা মেয়েটার। বলছে, আমাদের দুজনকে কিছুতেই মানাবে না এটায়। এর পর সে একটা চয়েস করে প্যাক করে দিতে বললো। রিদ ভাইয়াও কিছু বলছে না, চুপচাপ বসে আছে।
প্রচুর রাগ হচ্ছে আমার। আমরা দুইজন এসেছি ভালো কথা তোকে এর মাঝে ঢুকতে কে বললো?
একটা রিক্সা ডেকে উঠে বসলাম আমি আর রিদ ভাই। মুখটা গোমড়া করে বসে আছি। মামা মামি আমি ও তার জন্য সবার জন্যই শপিং করলো। অথচ আমাদের জন্য আমার চয়েস করা গুলোই নিলো না। মেয়েটার ফোন আসলে সে চলে গেলো। যাওয়ার সময় রিদ ভাই একটা শাড়ি গিপ্ট করলো তাকে। প্রচুর রাগ হলো তখনও। কারণ আমি খুব জেলাস।
– মন খারাপ?
আমার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো রিদ ভাই। আমি চুপ রইলাম। এর পর সে হেসে আমার দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো। এর পর বললো,
– কি ভেবেছো, তুমি পছন্দ করবে আর আমি তা ফেলে আসবো?
মুহুর্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আমি রিদ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। আমার রাগ এখনো কমেনি। আমি ওই ব্যাগ টা হাতে নিলাম, যেটা মেয়েটার পছন্দে কেনা হয়েছিলো। রিদ ভাইয়া কারণ জানতে চাইলেও আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ বসে রইলাম।
বাড়ির সামনে এসে নামিয়ে দিলো আমাদের। রিদ ভাই ভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার পর আমি রিক্সা ওয়ালা মামাকে বললাম,
– বাসায় আপনার স্ত্রী আছে না?
সে হেসে বললো,
– জ্বি আপু,,,
– এই নিন, এটা নিয়ে তাকে দিবেন। আর এটা আপনার জন্য। আর এই নিন টাকা, বাসায় যাওয়ার সময় কিছু ফুল কিনে নিবেন। তার পর বাড়িতে গিয়ে সব মামির হাতে দিবেন। দেখবেন খুব খুশি হবে সে।
রিক্সা ওয়ালা মামা প্রথমে নিতে না চাইলেও পরে নিলো। তার চোখে মুখে আনন্দে খুশির ঝিলিক দিয়ে উঠলো। এর পর চলে গেলো। পুরো সময় টায় আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো রিদ ভাই। আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– এবার ভেতরে চলুন। এগুলো ওকে দিয়ে দিলাম কারণ, অন্য কোনো মেয়ের পছন্দ করা জিনিস আমি পড়বো না, আর আপনাকেও পড়তে দেবো না। আর অন্য কোনো মেয়ের সাথে এতোটা ফ্রি হওয়ার দরকার নেই। আমার সহ্য হয় না এসব।
বাসায় ঢুকে মামিকে ডাক দিলো তিনি। মামা এখন অফিসে। আর শিলা দুপুরের রান্না করছে। দুজনই এগিয়ে এলো আমাদের সামনে। মামা মামির জন্য নিয়ে আসা কাপর গুলো তাদের দিকে এগিয়ে দিলাম। আর শিলার টাও শিলাকে দিলাম।
মামি একটু হেসে বললো,
– বাহ্ আমার বৌ মার তো পছন্দ আছে?
আমার একটু অন্যরকম ফিল হলো। কারণ আমাদের বিয়ের আগে মামি আমাকে আরশি মা বলেই ডাকতো। আর এখন হুটহাট তার এই বৌ মা ডাকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরে যাই। এর মাঝখানে শিলা বললো,
– ভাবি, মোর লাইগা আমনে এক কাম হরতেন। ওই যে ওয়েস্টার্ন ড্রেস আছেনা, ওই যে হাতা কাটা তার পর পেট দেখা যায় টিভিতে দেখি। মোর লাইগা ওইগুলা নিয়া আইতেন।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
– তুমি ওগুলো দিয়ে কি করবে?
– ওম্মা আফায় কি কয়? মুই কামের বেডি হইলে কি হইবে, মোর কি শখ আহ্লাদ নাই নাকি? আমনে কি জানেন, মোগো বরিশালে কতো মাইয়া এইসব ড্রেস পরে নদীকে গোছল গোসল করে।
আমি একটু হেসে বললাম,
– আচ্ছা পরের বার নিয়ে আসবো।
পর মাঝেই মামি আমাদের দুজনের হাত ধরে একসাথে দাড় করালেন। তার পর বললো,
– মা’শা আল্লাহ্ দুজনকে খুব মানিয়েছে। দাড়া কয়েকটা ছবি তুলে নিই। এর পর যখন তুই চলে যাবি আর আমার ছেলেটা একা হয়ে যাবে, তখন ছবি গুলো দেখে হলেও নিজেকে শান্তনা দিতে পারবো যে হুট করে আমার কিছু হয়ে গেলেও আমার ছেলেটাকে দেখে রাখার জন্য কেউ একজন আছে।
হুট করে কোনো এক অজানা কারণে আমি মামিকে জড়িয়ে ধরে বললাম যে,
– ওকে আমি কখনোই ছেড়ে যাবো না মামি।
To be continue…..
#অনুভূতিহীন (পর্ব ৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আজ রাতে ফাহিম ভাইয়ার গায়ে হলুদ। আর কালকে বিয়ে। আজ সন্ধায় বের হবো আমরা। ফাহিম ভাইয়ারা ভাড়া বাসায় থাকে। যেখানে বড় বিয়ের আয়োজন করা কঠিন। তাই গায়ে হলুদ আর বিয়ে কোনোটাই বাড়িতে হবে না। কমিউনিটি সেন্টারে হবে সব।
আমরা প্রথমে যাবো ফাহিম ভাইয়াদের বাসায়। সন্ধার পর ওখান তেকে সবাই বের হয়ে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।
একটা লাল পাঞ্জাবি পরেছে সে। আমি একটা হলুদ রংয়ের শাড়ি। গায়ে হলুদ বলে কথা। আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করা ঘড়ি ঠিক করা কত ঢং করছে সে। এদিকে আমি রেডি হয়ে বসে আছি। সব সময় শুনতাম মেয়েরা রেডি হতে সময় লাগে। অথচ আমি রেডি হয়ে দেখলাম সে এখনো রেডিই হলো না। আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,
– এতোক্ষন লাগে আপনার রেডি হতে?
সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে রইলো। তার পর বললো,
– কতোক্ষন লাগছে, এই পাঁচ মিনিটেই তো আমি রেডি হয়ে গেলাম।
– তো এর আগে আমাকে রেডি করিয়ে রাখলেন কেন? সেই বিকেল থেকে রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন।
– কারণ তো নিশ্চই আছে। এই ধরো তোমাকে যদি আমি এখন রেডি হতে বলতাম, তাহলে তুমি রেডি হতে লাগিয়ে দিতে কম করে হলেও এক ঘন্টা। বা আরো বেশিও লাগতে পারে। আর আমি রেডি হয়ে তোমার জন্য বসে থাকবো। যা একধমই বিরক্তিকর। তাই বের হওয়ার দুই ঘন্টা আগে থেকেই তোমায় রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছিলাম।
ওনার এমন অদ্ভুত যুক্তি দেখে মাথা গরম হলো আমার তাও চুপচাপ দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিশেষ করে তার মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ইচ্ছে করছে তার ওই ছোট ছোট দাড়ি গুলোতে গিয়ে নিজের গাল ঘসতে। ইশ ভাবতেই লজ্জায় গাঁ শিউরে উঠে। নিজেকে নিজে বকতে লাগলাম আমি।
‘তোর নজর এতো খারাপ কেন আরু?
তখনি আবার মনে হলো,
‘ধুরু খারাপ হতে যাবে কেন? আমি কি পর পুরুষের দিকে তাকাচ্ছি? আমি নিজের স্বামীর দিকেই তাকিয়ে আছি। আজব।
এর মাঝেই রিদ ভাই আমার মুখের সামনে দুই আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজাতেই আমি চমকে উঠলাম। তার পর তিনি চোখের দৃষ্টি আমার দিকে রেখে একটু হাসলো। এর পর ইশারায় বললো, ‘এবার চলো’।
একটা শ্বাস নিলাম আমি। এই ব্যাটা হটাৎ হটাৎ এমন অদ্ভুত কান্ড ঘটায় যা দেখলে অযথাই বুকটা কেঁপে উঠে।
আমি আর সে যখন সিড়ি দিয়ে নামছিলাম, তখন মামি দেখি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। হয়তো অবাক দৃষ্টি, নয়তো মুগ্ধ দৃষ্টি এটা।
এর পর এগিয়ে এসে আমার এক হাত রিদ ভাইয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– ফিরে আসার আগ পর্যন্ত এই হাত ছারবি না।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। হুট হাত তার এমন স্পর্শ গুলোয় যেন সারা শরির জুড়ে শীতল শিহরণ বয়ে যায়।
এর পর মামির থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম আমি। আর সে ড্রাইভিং সিটে। আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আমায় ড্রাইভিং শিখাবেন?
তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– তুমি ড্রাইভিং শিখে কি করবে?
– এই ধরেন আমরা কখনো এভাবে বের হলাম। তখন বেশিক্ষন চালানোর পর আপনার শক্তি শেষ হয়ে গেলে আমি চালাবো।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– এতো অল্পতেই দম ফুড়িয়ে যাওয়ার চান্স নেই।
তার দৃষ্টির মুখোমুখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে ফেললাম। চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
,
,
ওদের বাড়ি এসে সবার সাথে চলে গেলাম কমিউনিটি সেন্টারে। ওদিক থেকে মেয়ে পক্ষ আসবে। একসাথেই হবে সব। ফাহিম ভাই আজ অনেক খুশি। ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাচ্ছে সারা জীবনের জন্য। ভাবতেই কেমন একটা অদ্ভুত ফিল হচ্ছে আমার। আমি ঠিক তার উল্টো। সারা জীবনের জন্য কাছে পাওয়ার পর তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। আচ্ছা, আমি কি সত্যিই তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি? নাকি এটা মাত্রই একটু মোহ। বাড়ি ফিরে গেলে যখন ওর থেকে দুরে চলে যাবো, তখন এই মোহ কেটে যাবেনা তো?
মনকে প্রশ্ন করলাম, প্রেম আর মোহের মাঝে পার্থক্য কি?
মন উত্তর দিলো,
‘বাস্তবে যা প্রেম, তা কোনো মোহ নয়। প্রেমের জন্ম করুনা থেকে হয়। আর মোহের জন্ম, লোভ থেকে। প্রেম মুক্তি দেয়। আর মোহ আবদ্ধ করে। তাই প্রেম আত্মাত্বিক যা আত্মার সাথে মিশে যায়। আর মোহ একটা ঘোর, যা একটু পর কেটে যায়।
দুরুত্বই বলে দিবে, কে কাকে কতটুকু ভালোবাসি?
এখানেও রিদ ভাইয়ার সেই মেয়ে ফ্রেন্ড টাকে দেখে খুব রাগ হলো আমার। রিদ ভাইয়ার সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে। তা মোটেও সহ্য হচ্ছে না আমার।
গায়ে হলুদের পার্ট শুরু হবে ১০ টার পর। এখন কয়েকজন মেহেদী লাগাতে বয়াস্ত আর কয়েকজন ছবি তুলতে।
আর নিরব ভাইয়া সেই কখন থেকে একটা মেয়েকে ফলো করছে। রিদ ভাইয়ার কাছে শুনলাম এই নিরব ভাইয়া নাকি খুব ফাজিল, সাক্ষন মাথায় মেয়ে পটানোর চিন্তা ঘুরে।
হটাৎ ঠাস করে একটা চরের শব্দে আমি পেছনে তাকালাম। দেখি নিরব ভাইয়া গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে আর সামনে মেয়েটা।
আমার বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে। নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম আমি। নিরব ভাই হুট করে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
– ভাবি যা দেখেছেন প্লিজ কাউকে বলবেন না৷ বিশেষ করে রিদকে তো বলবেন ই না। কারণ এটা তারা শুনলে আমাকে নিয়ে সারা দিন মজা নিবে।
আমি একটু হেসে বললাম,
– কিন্তু আমি তো কিছু দেখিনি।
নিরব ভাই বুকে হাত দিয়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
আমিও হাতে মেহেদী দিলাম। মেহেদীর মাঝখানে হাতের তালুতে বড় করে লিখলাম ‘R’।
যা রিদ ভাইয়ার নামকে বুঝায়। আমি হাত একটু শুকানোর পর ধুয়ে নিলাম। এর পর রিদ ভাইয়ার সামনে গিয়ে ঘুর ঘুর করতে লাগলাম। হাতটা বার বাট ওর সামনে ধরতে লাগলাম। যাতে আমার হাতের দিকে তার চোখ পড়ে। কিন্তু ব্যাটা তো কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। খুব রাগ হলো আমার।
এবার নিজে গিয়েই তাকে বললাম,
– আমি হাতে মেহেদী দিয়েছি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না?
ওনি সোজা সুজি বললো,
– তো হাতে মেহেদী দিয়েছো এটা দেখার কি আছে?
– আচ্ছা দেখেন তো কেমন হয়েছে?
– হুম ভালো।
বলেই তিনি আবার ফাহিম ভাইয়ার কাছে চলে গেলেন। ওনার এমন ব্যবহারে পরচুর রাগ হচ্ছে আমার।
আমার মেহেদী রাঙা হাত দেখে প্রশংসা তো করলোই না। আচ্ছা প্রশংসা না হয় বাদ দিলাম। হাতে যে তার নামের প্রথম অক্ষর লিখলাম তা চোখে পড়েনি? একটুও বোঝার চেষ্টা করেনি এটার মানে টা?
মনে মনে তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম।
‘সালা নিরামিষের বাচ্ছা, আবেগ অনুভুতি বলতে কিচ্ছু নাই।’
রাগে সেখান থেকে চলে গেলাম। হাতে পানি দিয়ে ঘসতে লাগলাম জোড়ে জোড়ে। আর মনে মনে বলতে লাগলাম,
‘আমার কপাল এটা। আল্লায় আমারে এমন নিরামিষ একটা জামাই দিছে। ভালোবাসা দুরে থাক, আবেগ অনুভুতিও কিচ্ছু নাই। আজকেই তুলে পেলবো এই অক্ষর।
তখনই পেছন থেকে রিদ ভাইয়ের গলার আওয়াজ কানে এলো,
– এতো ঘসে লাভ নেই। ওটা এতো সহজে উঠবে না। বরং আরো ছরিয়া গিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করবে।
এটা যেন কাটা গায়ে লবনের ছিটার মতো লাগলো।
,
,
কিছুক্ষন পর সকলের উদ্দেশ্যে নিরব ভাইয়া বলে উঠলো,
– হ্যালো এভরিওয়ান। বিয়ে মানেই হাসি-খুশি, আনন্দ, আর দুটি মানুষের জীবন একই সূত্র পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। চার দিকে এমন ঝাক ঝমক পূর্ণ পরিবেশ টা দেখতেই সুন্দর লাগছে খুব তাই না? হ্যা, আর এই ঝাক ঝমক পূর্ণ পরিবেশটা আরো মধুময় করে তুলতে, এখন সকলের মাঝে গান নিয়ে আসছে আমাদের প্রান প্রিয় বন্ধু রিদ।
আমার যেন খুশিতে হাত তালি দিতে ইচ্ছে করছে। এইবার বুঝো ঠেলা। নিরব ভাইকে আমার হাজার বার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে।
আমি নিশ্চিত, এই অনুভূতিহীন মানুষ টা কখনোই এতো মানুষের সামনে গান গাইতে পারবে না। আর সে গান পারে এটাও কখনো শুনিনি। যাই হোক পরের সিন দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি রিদ ভাইয়ের দিকে।
তখনই ফাহিম ভাইয়ের ছোট ভাই নাঈম একটা গিটার নিয়ে রিদ ভাইয়ের হাতে দিলো।
রিদ ভাইয়া ভ্রু-কুচলে বললো,
– গিটারও রেডি রেখেছো? তার মানে আগে থেকেই প্লেন করেই আমায় এই চিপায় আটকানো হয়েছে?
নাঈম হেসে রিদ ভাইয়ের দিকে গিটার টা দিয়ে সরে গেলো।
গিটার টা নিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে বসলো রিদ ভাই। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তিনি কি এখন সত্যি সত্যিই গান গাইবে?
গিটারের শব্দ কানে আসতেই আমার মনে হলো এটা নতুন নয়। যেন আগে থেকেই প্রেক্টিস করা এই সুর।
আমার দিকে তাকিয়ে রইলো রিদ ভাই। আর গাইতে শুরু করলো,
‘তুমি না ডাকলে আসবো না,
কাছে না এসে ভালোবাসবো না,,,,,
দুরুত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়,,,?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়,,,,,,,
দুরের আকাশ নীল থেকে লাল, গল্পটা পুরোনো,,,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি, তুমি না বাসলেও আমি বাসি,,,,,,,,,,,
To be continue…..